ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব -১২+১৩

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-১২

শাফিনের ব্যপারে তার ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে শাফিন সম্পর্কে শুধু নুহাস জানে। আর কেই জানেনা।নুহাস শাফিনের হয়ে কাজ করে। শাফিন নিজের কাজ কম্পিলিট করে। ল্যাপটপটা ডেক্সে রেখে। চলে আসলো স্টোর রুমে, সেখান থেকে চলে গেলো নিজের গোপন রুমে। মিহি সাথী বেগমের সাথে কথা শেষ করে রুমে আসার সময় শাফিনকে স্টোর রুমে যেতে দেখে। মিহিও সেদিকে গেলো। কিন্তু স্টোর রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। রুমে এসে এক্সট্রা চাবি নিয়ে চলে আসলো।দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই শাফিনের সাথে ধাক্কা লেগে পরে যাওয়ার আগেই শাফিন নিজের বাহুতে মিহিকে আবদ্ধ করে নিলো। মিহি শাফিনের চেহারা দিকে তাকিয়ে আছে। দ্বিতীয় বার ভার্সিটিতে যখন তাদের দেখা হয়েছিলো সেই কথা মনে পরে গেলো।

ফ্লাশব্যাক……..

মিহি, আর বর্ষা ভার্সিটিতে এসে ক্লাস শেষ করে বেড় হতেই,বর্ষা বললো,কিরে আগামীকালের ওই ব্লাক ড্রাকুলাকে দেখছিনা যে?

– ড্রাকুলা তো তাই হয়তো র*ক্ত খাওয়ার শিকারে বের হয়েছে। পেছন থেকে একজন বলে উঠলো, এই ড্রকাুলা যার তার র*ক্ত পান করেনা। তার জন্য অবশ্য ব্লাক কুইনের রক্ত প্রয়োজন। আর সেটা শুধু তোমার কাছেই আছে মিস আকাশী পরি।

মিহি পিছনে ঘুরে বিড়বিড় করে বললো, শয়তানকা নাম লিয়া নেহি শয়তান হাজির।

– আরেহহহ, এতো দেখছি সত্যি সত্যি পরি। নিশ্চয়ই তোমার পরি সম্রাজের কারো সাথে কথা বলছো।

– দেখুন ভার্সিটিতে পড়া লেখা করতে এসেছেন, সেটাই করুণ ফ্লাটিং করতে হবে না।

– এক সুন্দরী মাইয়া আমার মন নিলো কারিয়া। পারো যদি তোমরা তারে দাও গো আনিয়া।

মিহি কিছু বলতে যেয়ে থেমে গেলো। বর্ষাকে বললো, তুই যাবি আমার সাথে নাকি থেকে যাবি।

মিহি ঘুরে চলে যেতে নিলে মিহির খোলা চুলগুলো যেয়ে শাফিনের চেহারা স্পর্শ করলো।

শাফিন বললো,ও সুন্দরী। তুমি চলে গেলে যাও তোমার চুল কেটে আমাকে দিয়ে যাও। এতো মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।

মিহি সামনের দিকে ঘুরে বলে,বাসায় যাওয়ার সময় একটা ডাভ শ্যাম্পু, ডাভ কন্ডিশনার, আর একটা ভালো ব্রান্ডের হেয়ার সিরাম নিয়ে যান। আপনার যে চুল তাতে নিজের চুলের ঘ্রাণে দ্রুত পাগল হবেন।

– মুখ থেকে কথা নয় যেন খই ফুটচ্ছে। তা ঠিক করেই এসেছো পটবে না। নাকি কেউ আছে?

মিহি শুনেও না শোনার অভিনয় করে চলে যেতে নিলে। কিছু চুল শাফিনের শার্টের বাটনে আটকে পড়ে যেতে নিলে শাফিন নিজের বাহুতে আগলে নেয়। মিহি না বুঝেই ঠাসসসসস করে শাফিনের গালে চড় বসিয়ে দেয়।

মিহিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শাফিন বলে, ফের যদি উল্টো পাল্টা চিন্তা মাথায় এনেছো তবে এবার হাত আর আস্ত রাখবো না। মিহিকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কথাগুলো বলে শাফিন।

– তোমার এখনো মনে আছে সেদিনের থাপ্পড়ের কথা।

– জীবনে প্রথম কোন মেয়ের হাতে থাপ্পড় খেয়েছিলাম সেটা ভুলে যাই কি করে?

– তুমি কি আমাকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিয়ে করেছো।

– মিহিকে দেয়ালের সাথে হাত চেপে দিয়ে বলে, তোমার এটা মনে হলো এতো বছর পর।

– ছাড়ুন আমাকে পুরুষ হয়েছেন বলে জোড় খাটাবেন। ভুলে যাবেন না আমাকে টাচ করার কোন অধিকার আপনার নেই।

শাফিন মিহিকে নিজের আরো,কাছে এনে বলে, তুমি শতবার জন্মালেও সেই অধিকার শুধু আমার থাকবে।

– না থাকবে না। তোমার মতো মানুষের সাথে আমি থাকবো না।

– ওহহহ রিয়েলি!যদি এতোই আমাকে ছাড়ার শখ ছিলো তবে ডিভোর্স না দিয়ে সো কল্ড মিউচুয়াল ব্রেকআপের আইডিয়া কেন দিলে? নাকি তখন হ্যাসবেন্ডের দরকার ছিলো। এখন আর নেই। এখন ফাহিন কে দেখে লোভ সামলাতে পারছো না।

– একদম বাজে কথা বলবেন না।ভাবতেও ঘৃণা হয় কোন সময়ে তোমার মতো নোংরা মনের মানুষকে ভালোবেসেছিলাম।

– এখন তো নোংরা লাগবেই কারণ মনে যে ফাহিনের রং লেগেছে। বলেই মিহিকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো।

মিহি সেখানেই বসে পরলো। চোখ বেয়ে বেহায়া অশ্রু গুলো ঝরতে লাগলো। বেশ কিছু সময় বসে থেকে উঠে আসবে এমন সময় পায়ের কাছে একটা ছবি দেখতে পেলো।

______________________________________________
অন্ধকার রুমে ইজি চেয়ারে বসে একজন বলছে,তুই শিউর ওর বউয়ের সাথে কোন সম্পর্ক নেই?

একটা মেয়ে বলছে জ্বি স্যার আমি কনফার্ম। প্রেম করে বিয়ে করলে কি হবে। আমি ওই বাড়িতে যতদিন কাজ করেছি।কখনো ওদের মধ্যে মিল দেখিনি।ঝগড়াঝাঁটি অশান্তি লেগেই থাকতো। এমনকি সাহেব তো ম্যাডামের গায়ে হাত পর্যন্ত তুলতেন।

-তাহলে এখন ওরা আবার এক বাসায় কি করে?

– আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি। ম্যাডামের বাবা, মা এসেছে। তাই আমার মনে হয় তারা-যে আলাদা হয়েছে। সেই কথাটা গোপন করতেই আবার এক সাথে থাকছে।

চেয়ারে বসে থাকা লোকটি,নিজের পকেট থেকে টাকার বান্ডিল ছুড়ে মারলো সালমার দিকে। তারপর কর্কশ কন্ঠে বলল,তোর কাজ শেষ। যা চলে যা।

লোকটি চেয়ার ছেড়ে উঠে বলে, আমাকে ধরা এতো সহজ না এসিপি শাফিন মাহমুদ।তুমি কি ভেবেছিলে ছদ্মবেশে থাকলে তোমাকে আমি খুঁজে পাবোনা। এবার দেখো তোমার আমি কি অবস্থা করি। আমার ব্যবসায় বাধা দেওয়ার ফল-তো তোমাকে ভোগ করতেই হবে। বলেই অট্টহাসিতে কেঁপে উঠলো রুমটা।

______________________________________________
শাফিন নুহাসের সাথে কথা বলে সব ডিটেইলস জেনে নিলো। আজ রাতে বড় একটা চালান চোরাই পথে ঢাকা প্রবেশ করবে।শাফিন বললো,যারা আমার বাসায় গিয়েছিল ওদের আটকে রেখেছিস তো?

– হ্যা আমাদের গোপন আস্তানায় বন্দী করে রেখেছি ওদের।

– ঠিক আছে ওদের তো আমি পরে দেখে নেবো। তুই ফোর্স রেডি কর আজ রাতের মিশনের জন্য।

– আচ্ছা সেসব না হয় করলাম। কিন্তু তুই আর কতদিন মিহির কাছ থেকে সত্যটা লুকাবি?

– যতদিন না মিস্টার এম,কে, কে ধরতে না পারছি ততদিন। জানিস তো আমার ছোট একটা ভুল মিহির জীবনের রেড সিগনাল।

– কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে সম্পর্কটা তো সত্যি শেষ হয়ে যাবে।

– কিছু হবেনা। দুই বছরের যেহেতু শেষ হয়নি সামনেও হবে না। আর মিহিকে কষ্ট দিতে বুঝি আমার ভালো লাগে?কিন্তু এছাড়া কোন উপায় নেই। আজ যা ব্যবহার করেছি এরপর আর হয়তো আমার থেকে কোন আশা রাখবে না। সকালে বেঁচে ফিরলে হয়তো বাসায় যেয়ে মিহির চেহারাটা দেখা হবে না।

– আচ্ছা আমি ফোর্স রেডি করছি। তুই নিজেকে তৈরি কর। আজকে বাঁচা ম*রা*র লড়াই।

শাফিন নুহাসকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমার যদি কিছু হয়ে যায়, তুই মিহিকে দেখে রাখতে পারবি না নুহাস?

– এসব কি বলছিস তোর কিছু হবে না। আর দেখবি খুব শীগ্রই এম, কে গ্রেফতার হবে।

নুহাস কে ছেড়ে দিয়ে বলে,ঠিক আছে তুই যা। নুহাস চলে যেতেই শাফিন একটা সি*গা*রে*ট ধরিয়ে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে লাগলো। এটাই যেন এখন একমাত্র সঙ্গী শাফিনের। মোবাইল বের করে, গ্যালারীতে মিহির হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,আমি চাই তুমি সব সময় এভাবে হাসিমুখে থাকো। আমি যে আটকে গেছি। না পারছি ছাড়তে না পারছি ধরতে। দ্বায়িত্বের বেড়া জালে আটকে আছি। আমাকে ক্ষাম করবে তো প্রেয়সী?নিজের মনে মনে কথা গুলো বলছে আর সি*গা*রে*টে*র ধোঁয়ায় দুঃখগুলো উড়িয়ে দেয়ার বৃথা চেষ্টা করছে।ভালোবাসা বড় অদ্ভুত, না দেয় ভালো থাকতে না দেয় ভুলে থাকতে। শুধু তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়।এই যে মিহিকে দেখলে কিছু সময় জড়িয়ে ধরে রাখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু না পারার কষ্ট কতখানি ক্ষত সৃষ্টি করে সে খবর কি মিহি রাখে? নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে। হাতের আধ খাওয়া সি*গা*রে*ট*টা পা’দিযে পিশে নিয়ে বলে, তোকে শুধু একবার পাই, এম,কে সব কষ্টের হিসেব নেবো গুনেগুনে।

______________________________________________
মিহি এক ধ্যানে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না। চোখের নোনা জল গুলো গড়িয়ে কয়েক ফোটা পরলো ছবিটার উপরে। এতোদিনের এতো অত্যাচার, এতো অশান্তি মিহির হৃদয়ে এতোটা আঘাত করেনি। হাতে থাকা ছবিটা যত আঘাত করছে। ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের পেটে হাত রেখে বলে,তুই বড় অবেলায় এলি। জানিনা তোর ভাগ্যে কি আছে?

#চলবে#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -১৩

হাতে থাকা ছবিটা ড্রয়ারে রেখে দিলো। ওয়াশরুমে যেয়ে চোখেমুখে পানি দিয়ে আসলো, তোয়ালে দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে। ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে ফাহিনকে কল করলো। ফাহিন রিসিভ করে বললো, কিরে কই তুই?

-এইতো আছি শাফিনের বাসায়।

– জানতাম সব কিছু মিটমাট হয়ে যাবে। এভাবেই ভালো থাক।

– আগে আমার কথাটা তো শুনবি-তো নাকি?

– হ্যা বল।

– ফাহিন আমি এখন যে কথাটা বলবো। তুই কোন প্রশ্ন করা ছাড়া আমার কাজটা করে দিবি।ওয়াদা কর।

– আরে এভাবে বলছিস কেন, তুই যা বলবি তা অবশ্যই করে দেবো। কথা দিচ্ছি।

– ফাহিন তুই ভালো কোন উকিলের সাথে কথা বলে, আমার আর শাফিনের ডিভোর্স পেপার রেডি করে পাঠাবি,কাল সকালের মধ্যেই। এখন কিন্তু না করতে পারবি না।

– তুই এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত কেন নিচ্ছিস। তুই পারবি শাফিনকে ছাড়া থাকতে? আর একটু ভেবে দেখ।

– আর কিছু ভাবার নেই। ভেবেই বলছি। তোকে যেটা বলছি তুই তোর কাজটা করে দে।

– তা না হয় দিলাম তবুও যদি আর একটু ভেবে দেখতি?

– আমি কেমন তোরা জানিস হুটহাট কোন কাজ আমি করিনা। আর চব্বিশ বছরের একজন এডাল্ট পার্সন ষোল বছরের বাচ্চাদের মতো আবেগে-তো আর এই সিদ্ধান্ত নেইনি। যথেষ্ট বুঝে শুনেই নিয়েছি। আচ্ছা কাজটা করে দিস এখন রাখি।

ফাহিন কিছু বলবে তার আগেই ফোন কেটে দিলো মিহি। ফাহিন সব ব্যবস্থা করে রাখলো।ফাহিন নিজের ফোন থেকে সুমু কে কল করলো। দু’বার রিং হয়ে কেটে গেলো, তৃতীয় বারের সময় রিসিভ হলো।
ফোন তুলেই সুমু বলে, আমাকে ডিস্টার্ব করার অভ্যাস ছেড়ে দে। আজ বাদে কাল আমার বিয়ে।

– তোকে ডিস্টার্ব করা তো সেই কবেই ছেড়ে দিয়েছি। একটা প্রয়োজন কল করেছিলাম। কিন্তু আমি ভুলেই গিয়েছি। এখন এতোটুকু তেও তুই ডিস্টার্ব হবি সেটা জানা ছিলো না। আচ্ছা রাখি।

– একদম ফোন কাটবি না ফাহিন।ডিস্টার্ব যখন করেই ফেলেছিস এখন বলে ফেল কেন কল করেছিস?

– তুই তো এখন চট্রগ্রামে থাকিস?

– হুম। কিন্তু কেন?

– মিহিকে আমি তোর কাছে পাঠাচ্ছি কিছুদিন ওকে দেখে রাখিস। মেয়েটার পাশে এখন আমাদের থাকা উচিৎ।

– কিন্তু মিহি শাফিন ভাইকে ছেড়ে চট্রগ্রামে কেন আসবে? মাথা ঠিক আছে তোর।

ফাহিন সুমুকে সব সংক্ষিপ্ত আকারে সব বুঝিয়ে বলে দিলে।

সব শুনে সুমু বললো,দেখলি তো এতো গভীর ভালোবাসা, এতো কেয়ার বিয়ের পর সব শেষ।

– সব সম্পর্ক কিন্তু এক হবে না। সবাই কিন্তু সমান না।
– বুঝবো কি করে?

– এখন আর তোকে বুঝতে হবে না।

– বিয়ে করবি না তুই?

– আমার মতো ছেলেকে কে বিয়ে করবে?

– যদি বলি আমি করবো।

ফাহিন সুমুর কথাটা শুনে মনে হয় এক মিনিটের জন্য জ্ঞান শুন্য হয়ে পরলো।
ফাহিনকে চুপ থাকতে দেখে সুমু বলে কিরে উত্তর দে। পরে কিন্তু এই সুযোগ আর পাবিনা।

কিছু না বলে ফাহিন কল কেটে দিলো। ফোনটা প্যান্টের পকেটে রেখে বলে, যেদিন শুন্য পকেটে ছিলো। তখন তুইও পাশে ছিলিনা। আজ পূর্ণ পকেটে তুই ফিরতে চাইছিস? পৃথিবীতে সব মানুষ স্বার্থপর। সবাই টাকা চায়। কেউ স্বচ্ছ মন আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বোঝেনা। টাকার কাছে ভালোবাসা ফিকে পরে যায়। আমি যে আর সেই বোকা ফাহিন নেই। আমার মনটা যে এখন ইট,পাথরে বাঁধা। সেখানে কোন স্বার্থপর মানুষের জন্য ভালোবাসা নেই। আছে শুধু এক আকাশ সম অভিমান। যে পথ ছেড়ে এসেছি সে পথে আর পা বাড়াতে চাইনা।

সুমু ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবে, তুমি হয়তো অবাক হচ্ছ! আমি হঠাৎ বিয়ের কথা বলায়। বিয়ে তো আমি তোমাকেই করবো।
______________________________________________
রাত বারোটা, মিহির চোখে ঘুম নেই। দশটার গাড়িতে করে মিহির বাবান,মা চলে গেছে গ্রামে। তারা অমত করলেো মিহি তাদের টিকিট বুকে করে নিজ দ্বায়িত্বে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। পুরো বাসায় একা। সকালের ছবিটা যেনো বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মনে মনে বলছে,সব মেনে নিয়ে থেকে যেতাম কিন্তু তোমার পাশে অন্য মেয়েকে সহ্য করে থাকতে পারবো না।আমি চেয়েছিলাম বেবির জন্য হলেও আমরা আবার এক হবো,।কিন্তু সেটা আর সম্ভব হলো না। শাফিন আর মিহির ভালোবাসা এখানেই সমাপ্ত।কিন্তু সমাপ্ত হয়েও তো হলো না। এই যে একটু একটু করে আমার গর্ভে তোমার ভালোবাসার চিহ্ন বেড়ে উঠছে? তুমি তো জানতেও পারবে না। তোমার আমার ভালোবাসার চিহ্ন এই পৃথিবীতে আসতে চলেছে।এমন সময় কলিং বেল বেজেই চলেছে বেজেই চলেছে। কেউ এক নাগাড়ে কলিং বেল চাপ দিয়েয় যাচ্ছে। মিহি ভয়ে, ভয়ে ছোট ছিদ্রটা দিয়ে উঁকি দিতেই। চার পাঁচজন কালো পোশাক পরা মানুষ দেখতে পেলো। দ্রুত সেখান থেকে সরে এসে প্রথমে উদয়কে কল করে। কিন্তু ফোন বন্ধ। তারপর শাফিনকে কল করে শাফিনের ফোন ও বন্ধ। উপায় না পেয়ে ফাহিনকে কল করে। রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে কেউ রিসিভ করছে না। এক পর্যায়ে কলিং বেলের আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। মোবাইল সাইলেন্ট করে মিহি ততক্ষণে স্টোর রুমে পুরোনো সোফার পিছনে লুকিয়ে পরে।ভয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার। কি করবে বুঝতে পারছে না। নিরব রাতে একা বাসায়। এখন শুধু কানে ভেসে আসছে কিছু পায়ের শব্দ। মিহি নিজের নিশ্বাস ধিরে ধিরে নিতে লাগলো। হাত দিয়ে মুখ চেপে বসে আছে। ধীরে ধীরে, পায়ের আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্র হতে লাগলো। ভয়ে মিহির হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।

______________________________________________
এদিকে দুই দলের তুমুল লড়াই চলছে।শাফিনের সহকারী আয়রা বললো, স্যার আজ হয়তো আমরা জীবিত ফিরবো নয়তো মৃত তবুও এই বিষাক্ত ড্রা*গ*স সাপ্লাইয়ার কে ধরেই ছাড়বো।

– তবে আমরা মনে হচ্ছে ওরা আগে থেকেই এলার্ট ছিলো নয়তো লড়াই করার জন্য প্রস্তুত থাকতো না। আর যদি দেখো বিপদ বেশি বেড়ে যাচ্ছে। তবে তুমি আর নুহাস চলে যাবে।

– না,স্যার এটা হয়না। এই দু’বছর আপনার সাথে কাজ করছি। আমি আপনাকে একা কিছুতেই ছাড়বো না।তোমাদের আমাকে একা ছাড়তেই হবে।আমি মা*রা গেলেও যাতে তোমরা এম,কে, কে খুঁজে বেড় করে শাস্তি দিতে পারো সেই ব্যবস্থা করবে। সবাই এক সাথে মা*রা পরলে চলবে না। ইট’স মাই অর্ডার। আমি এখন যাচ্ছি। অলরেডি আমাদের দু’জন কর্মকর্তা নি*হ*ত আর আটজন আ*হ*ত হয়েছে। নুহাস তুই আরো ফোর্স আনার ব্যবস্থা কর।

নুহাস বললো,চল আমরা আজ কেটে পরি। অন্যকোন দিন এদের ব্যবস্থা করবো।

– লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে কাপুরুষেরা পালিয়ে যায়। যখন ট্রেনিং নিয়েছি তখন কিন্তু বড় মুখ করে শপথ গ্রহণ করেছিলাম। প্রয়োজন দেশের জন্য জীবন দেবো। আজ যখন সুযোগ এসেছে তখন পিছপা হবো না।

নুহাস আর আয়রা আর কিছু বললো না জানে বলে লাভ নেই।

তিন ঘন্টা ধরে লাড়াই চলছে। উভয় পক্ষে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই। এক পর্যায়ে বাকিরা পিছু হটে। সেই সুযোগে শত্রু পক্ষের পরপর তিনটা গু*লি লাগে শাফিনের শরীরের তিন জায়গায়।

আয়রা দৌড়ে যেতে চাইলে নুহাস থাকে আটকে রাখে।
ফিসফিসেয়ে বলে, স্যার বেঁচে থাকুক আর না থাকুক তার অসম্পূর্ণ কাজ আমাদেরকে করতে হবে। তাই ভুলেও এখন শত্রু পক্ষের কাছে ধরা পরলে চলবে না।

– কিন্তু তাই বলে চোখের সামনে স্যারকে এভাবে শেষ হতে দেখবো।
– এই মূহুর্তে ধৈর্য ধরে দেখা ছাড়া কিছু করার নেই।

পরিবেশ এখন কিছুটা শান্ত, বেশ কিছু অফিসার, আ*হ*ত হয়েছে। আর চারজন নি*হ*ত হয়েছে। সবাই বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে আছে। এখন প্রায় রাত চারটা বাজে।

______________________________________________
ক্রমশ পায়ের শব্দগুলো কাছে আসতে লাগলো। মিহি সোজা হয়ে শুয়ে পরলো সোফার নিচে।নিজেকে শেষ রক্ষা করার একটা প্রচেষ্টা। তবে ইঁদুর গুলোর যেনো অসুবিধা হলো। তার শব্দ করতে লাগলো। হেটে, হেঁটে মিহির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিচরণ করতে লাগলো। চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে মুখে কোন শব্দ করছে না। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ মিহির আন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here