ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব -১০+১১

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -১০

মিহি চোখ খুলে নিজেকে বেডে আবিষ্কার করলো।মিহি উঠতে চাইলে শাফিন বললো, তুমি রেস্ট নাও আমি শ্বাশুড়ি আম্মুকে ডেকে দিচ্ছি। মিহি উঠে বসলো, শাফিনকে উদ্দেশ্য করে বললো,আমি এখানে কি করে আসলাম?

– তুমি মাথা ঘুরিয়ে পরে গিয়েছিলে। আমি তোমাকে নিয়ে এসেছি রুমে। ডক্টর শফিক আঙ্কেল কে কল করেছি। উনি আসছেন।

-ডক্টর আঙ্কেলকে আসতে নিষেধ করে দাও।আমি একদম ঠিক আছি।

– তুমি বললেই তো আর তুমি ঠিক নেই। ডক্টর আসছেন তার কাজ তিনি করবেন।

– আমি তো বলছি আমি সুস্থ।

– আজ পর্যন্ত কোন পাগল স্বীকার করছে সে পাগল?

– তুমি আমাকে পাগল বলছো।

– না আমার ঘরে সেওরা গাছের পেত্নী আছে তাকে বলেছি।

– তোমার সাহস তো কম না তুমি আমাকে পেত্নী বলছো।

– এই কিছুক্ষণ আগেই না তুমি মাথা ঘুরিয়ে পরে অজ্ঞান হয়ে গেলে। আর উঠেই ঝগড়া শুরু করছো। কোথায় ধন্যবাদ দেবে তা-না উল্টো চটাং চটাং কথা বলছো।

– তা মিস্টার মাহমুদ আপনাকে আমি কোন সুখে ধন্যবাদ দেবো?

– থাক মিসেস মাহমুদ আপনাকে ধন্যবাদ দিতে হবে। আপনি জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পরে যেতেন আপনার মাথা ফে*টে র*ক্ত পরতো। এসব থেকে হিরোদের মতো আপনাকে ধরে কোলে নিয়ে এসব দূর্ঘটনা থেকে বাঁচালাম এরজন্য কেউ ধন্যবাদ দেয়!

মিহি মলিন কন্ঠে বললো,ঠিক বলেছেন এই উপকার টুকু না করলেও পারতেন। বেঁচে থাকার ইচ্ছে যেখানে ম*রে গেছে। সেখানে বেঁচে আছি সেটা কতটা যন্ত্রণার আপনি বুঝবেন না।

শাফিন রুম থেকে বেড় হয়ে গেলো কোন উত্তর দিলো না মিহির কথার।

মিহি ভেবে পাচ্ছে না যেই মানুষটা এক সময় ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখতো। সামান্য আঁচ লাগতে দিতো না। সে এতোটা পরিবর্তন কি ভাবে হয়ে গেলো। মনে মনে বলছে, তুমি তো সব সময় বলতে তুমি এক নারীতে আসক্ত। সেই কথা কি মিথ্যে ছিলো! তুমি কি এখন অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে গেছো।তোমার হৃদয় থেকে কি মিহি নামটা মুছে গেছে? মিহির ভাবনার মাঝেই মিহির মোবাইল বেজে উঠলো। বর্ষা নামটা দেখে মিহি সাথে সাথে রিসিভ করলো। বর্ষা বললো,কিরে কোথায় তুই?

-তোকে না বললাম শাফিনের বাসায় যাবো।

– সব সমস্যা কি শে? এখনি আবার এক হলি তোরা।

– নারে এবার মনে হয় আর আমাদের এক হওয়া হবে না। আমার এক বছর আলাদা থাকার প্লানটা বৃথা যাবে মনে হচ্ছে।

– আমি ঠিক বুঝতে পারছি না শাফিন ভাই এতো পাল্টে গেলো কিরে। তোকে ছাড়া যার চলতোই না। সে আজ তোকে এতোটা অবহেলা করছে?

– সেটা তো আমিও বুঝতে পারছিনা। কি থেকে কি হয়ে গেলো।

– আচ্ছা শাফিন ভাইয়ের কোন রিলেশন আছে নাকি অন্য কারো সাথে।?

-আমি জানিনা। বুঝতেও পারছিনা। সব তো ঠিক ছিলো হুট করেই সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো।

– থাক মন খারাপ করিস না। ফিরবি কবে?

– বাবা,মা এসেছে ওনারা চলে গেলেই ফিরে আসবো।

– আচ্ছা বেশি টেনশন করিস না যা হওয়ার তা-তো হবেই।

ফোন কেটে দিয়ে মিহি ভাবতে বসলো সত্যি কি শাফিন কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে? এটাও কি সম্ভব।

বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে ডায়েরি আর কলম বের করে কিছু লিখলো,,,,
অবেলায় যেমন মেঘ করে হুট করেই আলোকিত শহরটাকে আধারে ঢেকে দেয়। ঠিক সেরকম ভাবেই হুট করে মনের আকাশে মেঘ জমে ঝড়ের মতো ভেতরটাকে মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিলো। তোমার প্রতি কোন অভিযোগ নেই শুধু চাই
ভালো থাকো ভালোবাসা।

সময়ে সাথে সাথে ভালোবাসার মানুষটাও কেমন পাল্টে যায়। তারা বুঝতেও পারে না তাদের এই পাল্টে যাওয়াতে বিপরীত পাশের মানুষটা কতটা বিধ্বস্ত হয়ে পরে। বেঁচে থেকেও জেনে মৃত লাশ। কেন ভালোবাসা বদলে যায়। কেন ভালোবাসা রং বদলায়। আমার কেনর উত্তর হয়তো কখন তুমি দিতে পারবে না শাফিন। তবে এমন একটা দিন আসবে, যেদিন তুমি আমাকে পাগলের মতো খুঁজবে। বুঝবে যেদিন তুমি কি পেয়ে কি হারিয়েছো সেদিন খুঁজবে। তবে সেদিন আর আমাকে খুঁজে পাবে না। অবহেলায় তো লোহাতেও জং ধরে আর আমি তো মানুষ। আমার হৃদয় তো পাথর হয়ে যাচ্ছে। আরো কিছু লিখবে তার আগেই ডক্টর শফিক আর শাফিনের কন্ঠ শুনে দরজার পানে চাইলো। দ্রুত হাতে থাকা ডায়েরিটা বালিশের নিচে রেখে দিলো। শাফিন আর ডক্টর ভেতরে আসলো। মিহিকে চেকাপ করে বললো, আমার তো মনে হচ্ছে, আর কিছু বলবে তার আগেই মিহি বললো,সামন্য দূর্বলতা ঠিক হয়ে যাবে তাইতো।

– হ্যাঁ আমি যা ভাবছি তা হলে এই সময়ে এতটুকু দূর্বলতা স্বাভাবিক।

মিহি শাফিনকে বললো, তুমি একটু বাহিরে যাবে ডক্টর আঙ্কেলের সাথে আমার কথা ছিলো।মিহি সাথী বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,মা তোমরাও যাও।

শাফিন চলে গেলো সাথে, সাথী বেগম আর রুবের সাহেবও।

মিহি ডক্টর শাফিকে উদ্দেশ্য করে বললো,এবার আমাকে বলুন আঙ্কেল তখন কি বলতে চেয়েছিলেন?

– আমার যতটুকু অভিজ্ঞতা আছে আর চেকাপ করে যা বুঝলাম মনে হচ্ছে তুমি সন্তান সম্ভবা।আমি তোমাকে কিছু টেস্ট আর ঔষদ প্রেসক্রাইব করে দিচ্ছি। তুমি টেস্টগুলো করিয়ে শিউর হয়ে নিবা।

মিহির চোখ থেকে দু’ফোটা অশ্রু গরিয়ে পরলো। মিহি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলো।

ডক্টর শফিক বললেন,তোমার চোখে জল কেন মা? তুমি কি এখন বাচ্চা চাওনি?

– তেমন কিছুনা আঙ্কেল। আঙ্কেল একটা কথা রাখবেন?

– কি কথা বলো রাখার মতে হলে রাখবো।

– এই সংবাদটা আপনি আর আমি ছাড়া আর কেউ যেনো জানতে না পারে। বিশেষ করে শাফিনের কানে যেনো কথাটা না পৌঁছে।

– তুমি না চাইলে আমি কাউকে বলবো না। তবে আগামীকাল একবার চেম্বারে এসে টেস্টগুল করিয়ে নিও।

– আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো আঙ্কেল।

– আচ্ছা নিজের যত্ন নিও আমি আজ উঠি।

শফিক সাহেব বাহিরে আসতেই শাফিন তাকে জিজ্ঞেস করলো, কি সমস্যা হয়েছে ওর?

– তেমন কিছু না। মনে হয় কোন বিষয় নিয়ে ভিষণ ডিপ্রেশনে আছে। আর শরীর দূর্বল। ঠিক মতো যত্ন নিলে ঠিক হয়ে যাবে।

– শাফিন ডক্টর শফিকের পিছু পিছু নিজ অব্দি আসলো। ডক্টর শফিক যখন গাড়িতে বসছে তখন শাফিন জিজ্ঞেস করলো, আঙ্কেল তখন যে বললেন, এই সময় এমন হয় এটার কি মানে ছিলো?

– ডক্টর শফিক বিচক্ষণ মানুষ তিনি অত্যান্ত স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলেন,আমি বলতে চেয়েছি শরীর দূর্বল থাকলে এমন হওয়াটা স্বাভাবিক।

শাফিন ডক্টর শফিক কে বিদায় জানিয়ে সোজা চলে গেলো ছাদে। মনের সাথে একা একা যু*দ্ধ করতে করতে ক্লান্ত। না পারছে কাউকে কিছু বলতে আর না পারছে সইতে। পকেট থেকে সি*গা*রে*ট বেড় করে। একটার পর একটা টান দিচ্ছে আর ধোয়া ছাড়ছে। সি*গা*রে*টে*র ধোঁয়ায় হৃদয় পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। তবুও মনে হচ্ছে এই ধোয়াগুলো হৃদয় থেকে দুঃখগুলো বেড় করে নিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছু সময় ছাদে দাঁড়িয়ে থেকে নিচে আসলো। বাসায় ঢুকতেই দেখে মিহিকে সাথী বেগম নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে। শাফিন একপলক তাকালো। তারপর নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতেই। সাথী বেগম ডেকে বললেন। বাবা তুমিও আসো। কিছু খেয়ে নাও। তুমিও তো না খাওয়া।
শাফিন টেবিলের সামনে এসে চেয়ার টেনে বসলো। মিহি আড় চোখে শাফিনকে দেখছে। সুন্দর ঠোঁট দুটো কেমন কালছে হয়ে আছে। চেহারায় কেমন বিষন্নতার ছাপ। মিহি চোখ ফিরিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
সাথী বেগম বললেন, জানো বাবা। কত চিন্তা ছিলো মেয়েটাকে নিয়ে। নিজের ইচ্ছে তে বিয়ে করছে ছেলে কেমন না কেমন। তবে আজ নিজের চোখে মিহির প্রতি তোমার ভালোবাসা দেখে আমি কতটা আনন্দিত বোঝাতে পারবো না।সাথী বেগম আরো কিছু বলবে তার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো।শাফিন উঠতে চাইলে। সাথী বেগম বলেন, তুমি খাও বাবা। আমি দেখছি কে এসেছে। দরজা খুলে দিতেই চার পাঁচজন পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করলো। সবে মাত্র মুখের সামনে খাবারের লোকমা তুলেছিলো শাফিন। খাবার আর মুখে দেয়া হলো না। এরমধ্যেই একজন পুলিশ বলে, মিস্টার শাফিন মাহমুদ আপনাকে আমাদের সাথে একবার থানায় যেতে হবে।
#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-১১

শাফিন বললো, যেতে- তো সমস্যা নেই কিন্তু আমাকে ঘটা করে বাড়ি বয়ে ইনভিটেশন দিয়ে নিতে আসার কারণ জানতে পারি?

– কেন নয় অবশ্যই জানতে পারেন। তবে এভাবে না বলে চলুন আমাদের সাথে দু’প্লেট নাস্তা দিলে আপনার বুঝতে সু্বিধে হবে মিস্টার মাহমুদ।

– আপনি হয়তে আমার সম্পর্কে অত ভালো জানেন না। যা-তা খাবার শাফিন স্পর্শ করেও দেখেনে, খাওয়া তো দূরের কথা।

– আপনি নতুন জামাই তো তাই জানিনা তবে আমাদের সাথে চলুন আস্তে ধীরে জেনে নেবো।

শাফীন নিজের রাগকে সংযত করে, মিহিকে বললো,মিহি আম্মুকে নিয়ে ভেতরে যাও।

মিহি আর সাথী বেগম চলে গেলেন রুমে। সাথী বেগম বললেন, আমার ভয় করছে মিহি পুলিশ কেন আসলো?

– আহা মা টেনশন নিওনা তোমার জামাই ঠিক মেনেজ করে নেবে।

মিহি আর সাথী বেগম চলে যেতেই। শাফিন বলে,তো শ্বশুর মশাইরা এবার বলুন কি বরতে এসেছেন।

ইন্সপেক্টর সজিব বললো, তোর সাহস তো কম না। তুই আমাদের সামনে পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে কথা বলছিস।

-হে ইউ সাহসের কি দেখেছিস? আর একবারও উগ্র কথা বললে তোর আর দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থা থাকবে না।

ইন্সপেক্টর সজিব শাফিনের কলার ধরতে চাইলে শাফিন পা দিয়ে জোড়ে লাথি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একজন কনেস্টবলকে ইশারা করে মিহিরা যে রুমে আছে সে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসতে বলে,ইন্সপেক্টর সজিব ফ্লোরে মুখ থুবড়ে পরলো। নাক দিয়ে র*ক্ত পরতে লাগলো। শাফিন বললো, একে নিয়ে সোজা হসপিটালে যাবি। আর রাত দশটার পর আমি আসছি তোদের কাছে। তোদের আমাকে নিতে আসতে হবে না। বলেই কাউকে একটা কল করে এক পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, কথা বল।কথা শেষ করে পুলিশ অফিসারা সব চলে যেতে নিলে,নুহাস নামের একজন অফিসারকে ডেকে শাফিন বলে,তোদের র*ক্ত তোরাই পরিস্কার করে রেখে যা। আমার বউ দেখলে ভয় পাবে।নুহাস র*ক্ত পরিস্কার করার বাহানায় এখানে থেকে গেলো। শাফিন নুহাশ কে জিজ্ঞেস করলো৷ কিরে কাহিনিটা কি? এরা আমার বাসায় আসার সাহস পেলো কি করে?
নুহাস শাফিনের কানে মুখে কিছু বললো, ফ্লোরের র*ক্তটুকু নিজের রুমাল দিয়ে মুছে নিয়ে চলে গেলো নুহাস।

শাফিন মিহির রুমের দরজা খুলে দিতেই মিহি দ্রুত বের হয়ে বলে, তুমি ঠিক আছো তো? ওরা কেন এসেছিল? তোমাকে কিছু করেনি তো?

– রিলাক্স মিহি তেমন কিছুই না। তারা ভুল ঠিকানায় চলে এসেছিলো। এখন ভুল বুঝতে পেরে চলে গেছে।

– তুমি কি আমাকে মিথ্যে বলছো শাফিন?কারণ পুলিশ তোমার ফুল নেইম বলেছিলো, ভুল করে শাফিন মাহমুদ বলে ফেললো কি করে?

– সন্দেহ করছো? আমি সত্যি বলছি ওনারা যাকে ধরতে এসেছিল তার নামও শাফিন মাহমুদ। তাইতে ভুল হয়েছে। রোড নাম্বার তিনশো দশ।ওনারা ভুল করে তিনশো পনেরোতে চলে আসছে।

যদিও শাফিনের কথা মিহি বিশ্বাস করলো না। তবুও চুপ করে রইলো। শাফিন হাত ধুয়ে আবার খেতে বসল।খাবার খেয়ে স্বাভাবিক ভাবে নিজের রুমে চলে গেলো।
মিহি আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাফিনের দিকে এমন গা ছাড়া ভাব দেখে মিহি সত্যি আবাক না হয়ে পারলো না। শাফিনের পিছু পিছু রুমে গেলো। শাফিন বেডের উপর অর্ধ শোয়া অবস্থায় ল্যাপটপে কিছু করছিলো। মিহি সোফায় বসে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো শাফিনের দিকে। শাফিন এখন নিজের কাজে ব্যস্ত তাই মিহিকে খেয়াল করছে না।মিহি শাফিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে পরলো শাফিনের সাথে প্রথম দেখা হওয়ার ঘটনা।

ফ্লাশব্যাক……

ভার্সিটির প্রথম দিন। তার উপরে এ শহরে নতুন। একটা সাদা টপস আর ব্লক কালারের সলোয়ার ওড়না পড়া ছিল মিহি সাথে ছিলো বর্ষা। ভার্সিটিতে র্যাগ হয় সেটা শুনেছিল কিন্তু ওদের সাথে এমন কিছুই হলো না। মিহি বললো, বর্ষা আমাদের ভাগ্য ভালো দেখলি কেউ আমাদের কিছুই বললো না। ক্লাস শেষ করে বাহিরে এসে ভার্সিটি ঘুরে ঘুরে দেখছে দু’জনে এমন সময় পেছন থেকে একজন ডেকে বললো,এই যে ব্লক কুইন, মিহি ডাক শুনেও থামলো না। নিজের মতো হাঁটতে লাগলো। বর্ষা বললো, আমার মনে হচ্ছে ব্লাক কুইন তোকে ডেকেছে।

– দূর আমাকে কে বলবে?ভার্সিটিতে আরো কত মেয়ে আছে কাকে না কাকে ডাকছে। মিহির কথার মাঝেই সামনে থেকে একজন বলল,ব্লাক কুইন তোমাকেই ডেকেছি। হঠাৎ অপরিচিত পুরুষ কন্ঠ শুনে মিহি চমকে যায়। সামনে তাকিয়ে দেখে। ব্লাক হুটি আর হোয়াইট প্যান্ট, হোয়াইট জুতো, কালো ঘড়ি,আর একটা কালো সান গ্লাস পড়া সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে, তার আশে পাশে আরো দু’তিনজন ছেলে মেয়ে। মিহি বোকার মতো সামনে তাকিয়ে আছে। মিহিকে তাকিয়ে থাকতে থেকে শাফিন বললো,তোমার আমাকে দেখা শেষ হলে বলবা, তোমার নামটা কি?

মিহির কর্ণকুহরে যেন কোন আওয়াজ পৌঁছচ্ছে না। বর্ষা মিহিকে হাত দিয়ে চিমটি কাটতেই মিহি বলে,আউচ, রাগী চোখে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলে বর্ষু এতো জোড়ে কেউ চিমটি দেয়?

বর্ষা বলে, তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছে। বর্ষার কথা শুনে মিহি বলে ওহহহ সরি।

শাফিন বলল,অভিনয় শেষ হলে নিজের নামটা বলুন মিস ব্লাক কুইন।

– মার্শিয়া জাহান মিহি।

– নাইস নেইম

মিহি আর কিছু না বলে বর্ষার হাত ধরে সামনে এগোতেই শাফিন পেছন থেকে ডেকে বললো,মিস মার্শিয়া জাহান মিহি, তুমি কি ছোট থেকেই সুন্দরী নাকি বড় হয়ে এতো,সুন্দরী হয়েছো।

মিহি পিছনে ফিরে বলে, ও হ্যালো মিস্টার ব্লাক ড্রাকুলা। না আমি রাশি খান্না। আর না আপনি বিজয় দেবরাকুন্ডা। সো এসব ফ্লাটিং অন্য কোথাও কাজে লাগান।

– আমি তো জানতাম সুন্দরী মেয়েরা বোকা হয়। তুমি দেখছি বেশ বুদ্ধিমতী।বাট তুমি রাশি খান্না না হলেও ব্লাক কুইন আর আমি বিজয় না হলেও ব্লাক ড্রাকুলা। সো আমাদের মধ্যে কিছু হওয়ার চান্স আছে।

– আমিতো কুইন আপনার ভাষ্যমতে আর কুইন অবশ্যই কোন ড্রাকুলা পছন্দ করবে না।তার জন্য হয়তো কোন রুপকথার রাজকুমার আসবে।

উদয় বললো তোকে কি করতে বলা হইছে আর তুই কি করছিস।

শাফিন বললো, মিস কুইন,” উইল ইউ ম্যারি মি”?

– মিহি জোড়ে হেসে হেসে বলে, হাউ ফানি, এভাবে প্রপোজ করলে আমি কেন কোন কাকও রাজি হবে না। মিস্টার ড্রাকুলা। বলেই হাসতে হাসতে বেড় হয়ে যায় ভার্সিটি থেকে। রাস্তায় এসে রিকশা নিয়ে দু’জনে উঠে বসে,বর্ষা বলে ছেলেটা কিন্তু হ্যান্ডসাম ছিলো। কি বলিস।

– হু পুরোই বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলের মতো এই আরকি।

– তোকে আমি কি বললাম আর তুই কি বলছিস।

– তোর যেটা মনে হয়েছে তুই সেটা বলেছিস আমার যেটা মনে হয়েছে আমি বলেছি।

– আরে মিহি কি বাচ্চি। একটু সিরিয়াসলি নে বিষয়টা। দেখ হতেই পারে প্রথম দেখায় তোর প্রেমে পরেছে। তাই ডিরেক্ট বিয়ের জন্য প্রপোজ করেছে।

– তোর মাথা। দেখ এও হয়তো ভার্সিটিতে নতুন সিনিয়রের চাপে পরে এসব করেছে। বাদদে তো।

– আজকের মতো বাদ দিলাম তবে কাল ভার্সিটিতে এসে আবার শুরু করবো। গোয়েন্দা গিন্নির মতো গোয়েন্দা গিরি।

– তুই আর তোর সিরিয়াল দু’টোই ফালতু।

______________________________________________
উদয়,ইরা তিন্নি,নুহাস সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। উদয় বলে, এতো মেয়েকে রিজেক্ট করে শেষে কিনা দ্যা মোস্ট হ্যান্ডসাম বয় নিজেই রিজেক্ট হলো। মাজা য়্যা গ্যায়া।

শাফিন, ইরার কান ধরে বলে, তোর জন্য হয়েছে এসব তোর ফালতু ট্রুথ, ডেরায় খেলার জন্য শেষে কিনা জুনিয়রের কাছে রিজেক্ট হলাম।

– কান ছাড় ব্যাথা পাচ্ছি তো। তুই তো বলে ছিলে, এই ডেয়ার তোর জন্য দুধ,ভাত। আর এখন সব দোষ আমার।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।

শাফিন বললো থামবি তোরা। নাকি সব ক’টার দাঁত খুলে দেবো।

সাথী বেগমের ডাকে ভাবনার জগত থেকে বের হয় মিহি। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, কিছু বলবে মা।

-একটু এদিকটায় আয় তো মা।

#চলব
#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here