#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৫২
অর্থীর রোষান্বিত চোখ দুটো দেখে অরিত্রী কিছুটা ভড়কে গেল। বললো,
-ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন? বাংলাদেশে যাওয়ার প্ল্যান আমারও আছে। কিন্তু মা যেতে দেবে না আমায়। আমি বাংলাদেশে যাওয়ার কথা বললেই মা অদ্ভুত রাগ দেখায়। আমি বুঝে উঠতে পারি না ব্যাপারটা।
অর্থী বিরবির করে বললো,
-তুই বিডিতে গেলে তাদের কুকীর্তি সব ফাঁস হয়ে যাবে না? ভয় সবার মনেই কাজ করে।
অর্ণব আর মোহনাকে মনে মনে বকাঝকা করতে করতে অর্থী বেরিয়ে গেল অরিত্রীর ঘর থেকে। বের হতেই মোহনার মুখোমুখি হলো সে। মোহনা কোনো কারণে অরিত্রীর ঘরের দিকেই আসছিল।
অর্থীকে মোহনা মনে মনে অর্থীকে প্রচন্ড অপছন্দ করেন, এটা অর্থী নিজেও বুঝতে পারে। এর কারণটাও ওর জানা। যেদিন মোহনা শুনেছে অর্থী-ই প্রহরের বোন, সেদিন থেকেই মোহনার চোখে নিজের প্রতি অদ্ভুত ক্ষিপ্ততা ও বিরক্ত দেখতে পেয়েছিল অর্থী। সেই বিরক্তি থেকেই অর্থীকে দেখে মোহনা চোখ ছোট ছোট করে তাকালেন। বললেন,
-তুমি কখন এলে? আর এসেই মেয়েটার ঘরে সেঁধিয়ে গেছো? আশ্চর্য!!
অর্থী হাসি হাসি মুখে তাকালো। সপ্রতীভ কন্ঠে বললো,
-আপনি চাইলেও অরিত্রীকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবেন না। আমি ওর একমাত্র বান্ধবী প্লাস বোন, যার সাথে ও ওর মনের সব কিছু শেয়ার করতে পারে। আরনআমার সাথে ওর এতো মাখামাখি যে আপনার নিতান্তই অপছন্দ, সেটাও আমি জানি। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আমি আপনাদের কথা দিয়েছিলাম না? অরিত্রীকে ওর অতীত সম্পর্কে কিছুই বলবো না আমি। আমার দেওয়া কথা আমি রাখবো। কিন্তু আপনারা যা করছেন, তা একদমই ঠিক করছেন না। আপনাদের জন্য দু’টো নিষ্পাপ বাচ্চা আজ মাতৃহীন, একটা ছেলে তার সন্তান দুটো নিয়ে দিনের পর দিন সংগ্রাম করছে। সত্য কখনো চাপা থাকে না। আমার মুখ না-হয় কৌশলে বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু অরিত্রীর যেদিন সবটা মনে পড়বে, সেদিন আপনি আর অর্ণব-ই হবেন ওর চোখে সবচেয়ে বড় অপরাধী।
অর্থী মোহনাকে পাশ কাটিয়ে হন হন করে চলে গেল। মোহনা ওর যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তিনি মনে মনে জানেন, তিনি যা করেছেন তা অন্যায়। কিন্তু নিজের যুক্তিতে তিনি অনড়।
সৌহার্দ্যের জীবন থেকে পৃথক হওয়ার পর থেকেই অরিত্রীর জীবন সুখের হয়েছে। তরী নামের মানবীটা সারাজীবন যতটা কষ্ট অনুভব করেছে, অরিত্রী নামক সেই মেয়েটি ততোটাই সুখের মাঝে দিন কাটিয়েছে। তাই মোহনা মনে প্রাণে চান, তার মেয়ে সারাজীবন অরিত্রী হয়েই থাকুক। কোনো দুঃখের ছিটেফোঁটাও যেন ওকে স্পর্শ করতে না পারে।
অরিত্রী জানালার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে থেকে শো শো করে শীতল হাওয়া ঘরের ভেতর রবেশ করছে।
মোহনা অরিত্রীর পেছনে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলেন। অরিত্রী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। মোহনা ওর মুখের ওপর পড়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে বললেন,
-কী এতো চিন্তা করছিস?
অরিত্রী মলিন হেসে বললো,
-এমনিতেই! আজকে নাইট ডিউটি আছে। সেটা নিয়েই ভাবছিলাম।
-ওহ্! তোর সাথে একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি।
অরিত্রী ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বললো,
-বলো! কী বলবে?
মোহনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-তোর দাদী মারা গেছেন। গ্রামে ছিলেন সবসময়। বেশ কয়েকদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন। একটু আগে তো খবর এলো, উনি মারা গেছেন। এখন তোর বাবাও নিজের মাকে শেষবারের মতো না দেখে থাকতে পারবেন না। তাই আমাদের এইবার বাংলাদেশে না যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
অরিত্রীর চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। সে আগেপিছে না ভেবেই বলে ফেললো,
-দাদীকে আমিও শেষবারের মতো দেখতে চাই। আমিও বাংলাদেশে যাবো তোমাদের সাথে।
মোহনা মুহুর্তেই বিরক্ত হলেন। ঈষৎ ক্রোধান্বিত চোখে তাকিয়ে বললেন,
-তুমি এখানেই থাকবে। শুধু আমি আর তোমার বাবা যাচ্ছি। তোমার ছোট ভাই হোস্টেলে থাকে। ওকে এদেশে একা ফেলে যাওয়া যাবে না।
অরিত্রী ম্লানমুখে তাকিয়ে বললো,
-অর্ণব ভাই তো আছেই! সমস্যা কোথায় তাহলে?
-আমি যা বলেছি, তা-ই হবে। আর কোনো কথা নয়। আজকে রাতের ফ্লাইটে আমরা চলে যাবো। তোকে জানিয়ে দিয়ে গেলাম যেন হসপিটালে চলে না যাস।
মোহনা গুরুতর ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে প্রস্থান করলেন।
অরিত্রী মুখ গোমড়া করে বসে রইলো গালে হাত দিয়ে। কোনো অজানা কারণেই হয়তো বাংলাদেশ তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। সে জানে না, ওখানে কী আছে! তবে তার মন বড্ড টানে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে মনে বেশ ভালো একটা চিন্তা এলো। অরিত্রী সেটা ভেবেই অর্থীকে কল করলো। অর্থী কল রিসিভ করে বললো,
-কী হয়েছে? আবার কল দিলি কেন?
অরিত্রী আমতা আমতা করে বললো,
-আচ্ছা, তুমি যে বললে আমার পাসপোর্ট রেডি করে ফেলেছো তুমি! আসলেই পাসপোর্ট তোমার হাতে পেয়েছো?
-তো? তোর কি মনে হয় আমি এসব সিরিয়াস বিষয় নিয়ে মজা করবো? পাসপোর্ট সাথে নিয়েই তোর কাছে গিয়েছিলাম। ভাবলাম তুই রাজী হবি আমার কথায়!
অরিত্রী কপট অবুঝের মতো করে বললো,
-মানে? কোন কথায় রাজি হওয়ার কথা বলছো?
অর্থী রাগী কন্ঠে বললো,
-তোর বাংলাদেশ যাওয়ার কথা বলেছি। এই সুযোগ আর তুই পাবি না, ইয়ার! হসপিটাল থেকে ডক্টরদের টিম বিডিতে যাচ্ছে। তুই যা, এটা সবাই চায়, কারণ আমাদের হসপিটালে তুই বেস্ট কার্ডিওলজিস্ট। তুই না গেলে অন্য কোনো কার্ডিওলজিস্ট যাবে। সবাই তো মুখিয়ে আছে যাওয়ার জন্য। সব ডিপার্টমেন্ট থেকেই একজন করে ডক্টর যাচ্ছে। তুই জানিস, এটা তোর ক্যারিয়ারের জন্য কতটা ইফেক্টিভ হবে? একমাসের একটা অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে, পাশাপাশি বাংলাদেশ ঘুরে দেখা বোনাস।
অরিত্রী সবটা শুনে মনে মনে খুশিতে টইটম্বুর হয়ে গেল। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না। বললো,
-হসপিটালে আসবে কখন?
-ফ্ল্যাটে ঢুকলাম এখন। ডিনার করে হসপিটালে যাবো।
-আচ্ছা, তাহলে আসার সময় পাসপোর্টটা নিয়ে এসো। আর কাল-পরশুর টিকেট ম্যানেজ করে ফেলো এন্ড আ’ম সিরিয়াস।
অর্থী হতভম্ব হয়ে গেল। কিছু বলার আগেই অরিত্রী ফোন কেটে দিলো। মনে মনে হেসে নিজেই নিজেকে বললো,
-ফাইনালি!! গেট রেডি, বাংলাদেশ। ডক্টর অরিত্রী সেহরীশ ইজ কামিং।
৪৮.
সৌহার্দ্য সর্বশেষ রোগীর এপয়েন্টমেন্ট শেষ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। এখন ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে একবার ঘুরে দেখে আসবে। আজকে রাতে কোনো সার্জারি না থাকায় কিছুটা নিশ্চিন্ত সে। প্রণয়-প্রণয়ীকে সময় দেওয়ার জন্য এখন সে চাতক পাখির মতো অপেক্ষার প্রহর গোনে।
সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে বাইরে আসতেই প্রহরকে পার্কিং এরিয়ায় অপেক্ষারত অবস্থায় দেখতে পেল সৌহার্দ্য। গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নাক-মুখ দিয়ে ফুরফুরে ধোঁয়া নির্গত করতে করতে সিগারেট টানছে প্রহর।
প্রহরের সিগারেট টানার ধরণ দেখে সৌহার্দ্যের নিজের ভেতরটাই কেমন যেন শিরশির করে ওঠে এখন। ভাবতে ভাবতেই সৌহার্দ্য এগিয়ে গেল প্রহরের কাছে।
ঝরঝরে হাসার চেষ্টা করে বললো,
-তুই হঠাৎ এখানে?
প্রহর নির্বিকার চোখে তাকালো,
-কেন? আসতে পারি না?
-সেটা বলিনি। তুই তো কখনো আসিস না! যাই হোক, বাদ দেই।
প্রহর ঈষৎ হাসার চেষ্টা করলো যেন! হাতের সিগারেটটা মাটিতে ফেলে পা দিয়ে ঘষে লালাভ আলোটা নিভিয়ে দিলো। বললো,
-আমার গাড়িতেই চল!
সৌহার্দ্য বিনাবাক্যে গাড়িতে উঠে বসতেই প্রহরও ড্রাইভিং সিটে বসলো। গাড়ি স্টার্ট দিতেই সৌহার্দ্য বললো,
-সিগারেটটা ছেড়ে দেওয়া যায় না?
-ওটা ছাড়া জীবনে আর কিছুই বাকি নেই।
-তোর একটা বোন আছে, জীবনের অনেকগুলো দিন বাকি পড়ে আছে এখনো। সেটা একবার ভাবতে পারিস!
প্রহর ঠোঁট ভেঙে হাসলো। বললো,
-তোর ভাগ্যে যাকে পেয়েছিস, সে হারিয়ে যাওয়ার পরও তোকে বাঁচার মানেটা শিখিয়ে দিয়ে গেছে, তোর বেঁচে থাকার কারণ তোকে দিয়ে গেছে। আর আমি যাকে পেয়েছি, সে নিজে দূরে সরার সাথে সাথে আমার সবকিছু নিয়ে চলে গেছে। আমরা দুজনেই সিগারেট ছেড়ে দিয়েছিলাম শুধু মাত্র আমাদের প্রিয় মানুষের কথা ভেবে। তারা দুজনেই হারিয়ে গেল। অথচ তুই সিগারেট আর ছুঁয়েও দেখলি না, আর আমি ওটাকেই জীবনের পরিপূরক বানিয়ে নিলাম। আমাদের পার্থক্য এখানেই। কিছু ভালোবাসা বাঁচার কারণ হয়ে থাকে সারাজীবন, আর কিছু ভালোবাসা বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই ধ্বংস করে দিয়ে যায়।
সৌহার্দ্য দীর্ঘশ্বাস ফেললো প্রহরের কথা শুনে। ওর মাঝে মাঝে বলতে ইচ্ছে করে, “প্রহর, নিজের জীবনটা গুছিয়ে নে! কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না।” কিন্তু বলতে গিয়ে ও নিজেই কোথাও আঁটকে যায়। কীভাবে বলবে এই কথাটা ও? বলে ফেলাটা যতটা সহজ, করাটা তার থেকে সহস্র গুণ কঠিন। সে নিজেই তো তার জীবনে তার প্রিয় মানবীর জায়গাটা কাওকে দিতে পারেনি! প্রহরকে কীভাবে এই উপদেশ দেবে সে?
সৌহার্দ্যের ভাবনার মাঝেই প্রহরের ফোন বেজে উঠলো। প্রহর ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো,
-অর্থী কল দিয়েছে! এই অসময়ে হঠাৎ কেন?
-চলবে….
(ভুলত্রুটি মার্জনীয়♥️)#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৫৩
প্রহর গাড়ির গতি ক্রমেই কমিয়ে আনল। নীরবে তাকিয়ে রইলো ফোনের স্ক্রিনের দিকে। এই মুহূর্তে মাথায় অনেক কিছু ঘুরঘুর করছে ওর। অর্থীর এই সময়ে কল করাটা অস্বাভাবিক ঠেকছে। সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
-কে কল করেছে? অমন মুখ করে তাকিয়ে আছিস যে!
সৌহার্দ্যের প্রশ্নে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো প্রহর। ইতোমধ্যে ফোনের রিংটোন বন্ধ হয়ে গেছে। তার মানে কলটা কেটে গেছে।
প্রহর ঠোঁট গোল করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আঙুল চালিয়ে দ্রুত ফোনটা সাইলেন্ট করে পকেটে পুরে নিলো যেন ফোনটা পুনরায় বেজে না ওঠে।
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সৌহার্দ্যের দিকে এক পলক তাকালো প্রহর। সৌহার্দ্য এখনো একইভাবে তাকিয়ে আছে। প্রহর কপট হাসার চেষ্টা করে বললো,
-এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তেমন দরকারি কোনো ফোনকল ছিলো না। বাসায় পৌঁছে কথা বলে নেবো আমি।
সৌহার্দ্য নির্বিকার ভঙ্গিতে মুখ ঘুরিয়ে বাইরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। নিষ্প্রভ কন্ঠে বললো,
-সামনের স্টল থেকে প্রণয়ীর জন্য চকোলেট কিনতে হবে। গাড়ি দাঁড় করাস।
বাকিটা সময় নীরবতায় কাটলো। প্রহর নীরবে ড্রাইভিং-এ মনোনিবেশ করলো আর সৌহার্দ্য অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশে দৃষ্টি মেলে দিলো। যেই দু’টি হৃদয় বন্ধুত্ব নামক গভীর বন্ধনে বাঁধা ছিল, তারা আজ দুই প্রান্তে নিজ নিজ শোকতপ্ত মনের সান্ত্বনা খোঁজায় ব্যস্ত। সেই পুরনো হাসাহাসি, মারামারি ও গালাগালি আজ তাদের টানে না। পুরনো স্মৃতি রোমন্থনে মন সায় দেয় না। দুজনেই সুনশান নীরবতায় প্রিয় ব্যক্তির অনুপস্থিতি অনুভব করে।
বাড়ি পৌঁছাতেই প্রণয়-প্রণয়ী ছুটে এলো প্রহরের দিকে। প্রণয়ী এক ছুটে প্রহরের কোলে ওঠে গেল। প্রহর ওর গালে চুমু দিয়ে বললো,
-আজকে এতো এক্সাইটেড কেন লাগছে আপনাকে?
প্রণয়ী উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,
-আজকে আমার রেজাল্ট দিয়েছে। আমি পুরো ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছি।
সৌহার্দ্য প্রসন্নের হাসি দিয়ে প্রণয়ীর মাথায় চুমু দিলো। প্রণয় কোমরে দুই হাত রেখে চোখ ছোট ছোট করে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো। মুখ ফুলিয়ে বললো,
-এখন সব আদর শুধু প্রণয়ীর জন্য? আমাকে সত্যিই কেউ ভালোবাসে না।
সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে প্রণয়ের কান চেপে ধরে বললো,
-আগে আপনার রেজাল্ট বলুন! তারপর আপনার প্রতি আমাদের ভালোবাসার কথা ভাবা যাবে।
প্রণয় ঠোঁট উল্টে বললো,
-আমিও ভালোই করেছি। কিন্তু প্রণয়ীর মতো এতো ভালো না।
প্রণয়ী খিলখিল করে হেসে বললো,
-সারাদিন দুষ্টুমি করে বেড়ালে রেজাল্ট ভালো হবে কীভাবে? আবার আমাকে আসে গাধী বলতে! হুহ্!!
প্রণয় রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-তুই তো গাধীই! ফার্স্ট হলেই গাধী থেকে মানুষ হয়ে যায় নাকি কেউ? এ্যাহহহ!
প্রণয়ী তেড়ে এসে কিছু বলতে যাবে ওমনি প্রহর ওকে আবার কোলে তুলে নিয়ে বললো,
-এখন দুজনের ঝগড়াঝাটি আর চুল ছেঁড়া-ছেঁড়ি বন্ধ! চলো, দু’জনের জন্য অনেক কিছু নিয়ে এসেছি আমরা।
প্রণয়-প্রণয়ীর সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে প্রহর নিজের ঘরে চলে এলো। মন যতই ভারাক্রান্ত থাকুক না কেন? বুকের ভেতর হাজারো বেদনারা সমস্বরে কোলাহল তুলুক না কেন? এখানে এই দু’টো বাচ্চার নিষ্পাপ মুখ দু’টো দেখলেই ভেতরে অদ্ভুত শীতলতা অনুভব করে প্রহর। হয়তো এই শীতল শান্তির মাধ্যমেই সৌহার্দ্য এদের আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে। নয়তো এভাবে একা বাঁচতে পারে নাকি কেউ? প্রতিটা মুহুর্তেই তো দম বন্ধ হয়ে আসার কথা!
ভাবনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে নিজের ভেতরে থাকা দীর্ঘশ্বাস গুলো বের করলো প্রহর। বারান্দায় রাখা দোলনায় বসতেই মধুর কথা মনে পড়লো। এই ঘরটাও মধুর ছিল। কিন্তু প্রহর এখন এই ঘরের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও কোনোকিছুতে কোনো পরিবর্তন আনেনি। এখানে এলে নিজের প্রতিটা নিঃশ্বাসে মধুর অস্তিত্ব অনুভব করে সে। ভালোবাসার অনুভূতি আসলেই অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর।
পকেট থেকে সিগারেট বের করে সেটা জ্বালাতেই ফোনের কথা মাথায় এলো প্রহরের। দ্রুত ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো, অর্থী নয়বার কল করেছে। এই মেয়েটা বরাবরই এমন। কল রিসিভ না করলে বারবার কল দিতেই থাকে। প্রহর শান্ত হয়ে বসে কল ব্যাক করলো। একবার রিং হতেই অর্থীর গলা শোনা গেল,
-কাজের সময় কোথায় থাকো তুমি? এতোবার কেন কল দেওয়া লাগে?
প্রহর গলা ঝেড়ে বললো,
-কী বলবি তাড়াতাড়ি বল! কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি? এই সময়ে তো কখনো কল দিতে দেখি না আমি!
-আসলে কালকের ফ্লাইটে আমি বিডিতে ব্যাক করছি।
প্রহর অবাক হলো। বললো,
-হঠাৎ! কেন? দুই মাস আগেই তো ঘুরে গেলি! আবার কী হলো?
অর্থী হাসার চেষ্টা করে বললো,
-পার্সোনাল কাজে না, প্রফেশনালি আসছি এবার। হসপিটাল থেকে ডক্টরদের টিম আসছে। তাদের সাথে আমিও আসছি। তোমাদের বাড়িতেও উঠবো না, সবার সাথে হোটেলে উঠবো।
প্রহর বিরস কন্ঠে বললো,
-অহ্ আচ্ছা! এসে জানাস আমাকে। এয়ারপোর্টে দেখা করতে যাবো না-হয়!
অর্থী কিছু একটা চিন্তা করতে করতে বললো,
-আচ্ছা, রাখি তাহলে!
-ঠিক আছে।
৪৮.
অরিত্রী বেশ প্রফুল্ল মনে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় করছে। অর্থী সবটা বেশ মনযোগ দিয়ে খেয়াল করছে। দরকারী জিনিস পত্র গোছানোর পর অর্থী বললো,
-এতো কম কাপড় নিয়েছিস কেন?
অরিত্রী অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,
-এগুলো কম? এক মাসের জন্য এর থেকে বেশি কাপড়চোপড় লাগবে বলে মনে হয় না।
অর্থী বিরক্ত হয়ে বললো,
-আরেহ্, গাধা! যা যা দরকার সবই নিয়ে নে। এখানে আর আসা হবে না তোর।
অরিত্রী ভ্রু কুঁচকালো। অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-আসা হবে না মানে?
অর্থী হকচকিয়ে গেল। আমতা আমতা করে বললো,
-মানে বলতে চাচ্ছিলাম যে, বাংলাদেশ তো বারবার যাওয়া হবে না! এবারই হয়তো শেষ বার তোর জন্য। তাই ভালোমতো গোছগাছ করে নিলে ভালো।
অরিত্রী মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। বললো,
-ঠিকই বলেছো তুমি। কিন্তু এবার যদি বাবা, মা আর অর্ণব ভাইয়ের চোখে ধুলো দিতে সাকসেসফুল হই, তাহলে আমি আবারও যাবো। আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। বুঝলে?
অর্থী হেসে বললো,
-বুঝেছি, ম্যাডাম! এবার চলুন। হসপিটালে সবাই আমাদের জন্য ওয়েট করছে।
অরিত্রী লাগেজ গুছিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। অর্ণব প্রায়ই অরিত্রীদের বাসায় এসে দেখা করে যায়। আজকেও এসেছে। যেহেতু মোহনা আর মিস্টার আফনাদ বাসায় নেই, তাই অরিত্রীর খোঁজখবর ওকেই রাখতে হবে। কয়েক মিনিটের মাথায় অর্ণবের গাড়িকে বেরিয়ে যেতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তারা। এরপর অর্থী আর অরিত্রী একসাথে বেরিয়ে গেল।
৪৯.
প্রণয়-প্রণয়ীকে স্কুলে দিয়ে আসায় সৌহার্দ্যের হসপিটালে পৌছাতে বেশ দেরী হয়ে গেল। প্রতিদিনের মতো আজ আর ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে গেল না সে। এপয়েন্টমেন্ট লিস্টটা চেক করতে গিয়ে দেখলো, সেটা ফাঁকা। সৌহার্দ্যের ভ্রু আপনাআপনি কুঁচকে গেল। তার মানে আজকের শিডিউলে কারো কোনো এপয়েন্টমেন্ট নেই? এমনটা তো কখনো হয় না!
সৌহার্দ্য পিয়নকে জিজ্ঞেস করতেই সে বললো,
-স্যার, আজকে আপনার হসপিটালে কোনো ডিউটি নেই। কানাডা থেকে ডক্টরদের টিম আসছে আজ। বেশ বড়মাপের ডাক্তার তারা। আপনাকে আর ডক্টর শাহেদকে ওনাদের রিসিভ করার জন্য এয়ারপোর্টে যেতে বলা হয়েছে।
সৌহার্দ্যের কাছে বেশ অদ্ভুত লাগলো ব্যাপারটা। ডক্টর আসবে ভালো কথা! তাই বলে সে কেন যাবে ওদের রিসিভ করতে? সৌহার্দ্য বিরক্ত হয়ে সিনিয়র ডক্টরকে কল করলো। অপর প্রান্ত থেকে শোনা গেল,
-ইয়েস! সৌহার্দ্য, মাই বয়! এনি প্রব্লেম?
-স্যার, আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার আগে একবার অন্তত জিজ্ঞেস করে নেওয়া উচিত ছিল। আমি তো….
-সৌহার্দ্য, লিসেন! আমি যা করেছি, ভেবেচিন্তে করেছি। তুমি একবার এয়ারপোর্টে গিয়ে সেখান থেকে ডিরেক্ট তোমার বাসায় চলে যেতে পারবে। এতে তোমার ছেলেমেয়েদের আজ সারাদিন সময় দিতে পারবে। ডক্টররা তো ছুটি পায় না বললেই চলে! বাট ইয়র চিলড্রেন নিড ইউ, এটা তো মাথায় রাখতে হবে, তাই না? সব দিক কনসিডার করে ভাবলাম, তোমাকে এই ছোট টাস্ক-টা দিয়ে আজকের মতো ডিউটি শেষ করিয়ে দেই।
সৌহার্দ্যের মাথায় এই ব্যাপারটা আসেনি। তবে আইডিয়া বেশ ভালো লেগেছে ওর। তাই আর কালক্ষেপ না করে বেরিয়ে গেল চেম্বার থেকে। ডক্টর শাহেদকে নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। রাস্তায় তেমন জ্যামজট না থাকায় তারা বেশ তাড়াতাড়ি-ই পৌঁছে গেল। গাড়ি থেকে নেমে সামনে তাকাতেই সৌহার্দ্য চমকে গেল। এমন কিছুর জন্য সে একদমই প্রস্তুত ছিল না হয়তো!…
-চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সাপেক্ষ ❤️)#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৫৪
সৌহার্দ্য বিস্মিত চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার সামনাসামনি একটা গাড়ি থেকে প্রহর বেরিয়ে আসছে। অথচ কিছুক্ষণ আগেও প্রহরের সাথে ওর কথা হয়েছে ফোনে। প্রহর জানিয়েছিল, সে সকাল সকাল শহরের বাইরে গিয়েছে একটা কেইস নিয়ে ইনভেস্টিগেট করার জন্য। তার মানে, প্রহর ওকে মিথ্যে বলেছিল! কিন্তু এর পেছনে কারণ কী? কী এমন কারণে প্রহর মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছে? আর এয়ারপোর্টে-ই বা কেন এসেছে?
ভাবনার মাঝেই সৌহার্দ্য খেয়াল করলো, প্রহর ঘুরে তাকাতেই ওর দৃষ্টি-ও সৌহার্দ্যের ওপর পড়েছে। কপালে ঈষৎ ভাজের রেখা ফুটিয়ে প্রহর সৌহার্দ্যের দিকে এগিয়ে এলো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে প্রশ্ন করলো,
“তুই এখানে হঠাৎ? ”
সৌহার্দ্যও পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“আমারও একই প্রশ্ন! তুই তো আমাকে বলেছিলি…..
সৌহার্দ্যের কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রহর বললো,
“গিয়েছিলাম ঢাকার বাইরে! কাজ শেষ করে ফিরেও এসেছি। মধু আসবে আজ। তাই তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হলো।”
সৌহার্দ্য অবাক হলো। তাড়াতাড়ি হলেও এতোটা দ্রুত আসার তো কথা না! সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
“এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে?”
প্রহর মলিন হেসে বললো,
“আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না? জেরা করছিস? ট্রেনে এসেছি।”
সৌহার্দ্য নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত হলো। এভাবে এতো প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি। প্রহর তো কখনো ওর কাজ নিয়ে মাথা ঘামায় না! তাহলে সে কেন এতো ভাবছে? প্রহরের স্বাভাবিক মুখভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সৌহার্দ্য অহেতুক বেশি বেশি ভাবছে, সন্দেহ করছে। ব্যাপারটা আসলেই দৃষ্টিকটু। প্রহরের ওপর চোখ বন্ধ করে সে ভরসা করতে পারে। হয়তো এটা ভেবেই প্রহর ওকে ভুল বুঝবে না!
চিন্তার জগতে ভাটা পড়লো প্রহরের প্রশ্ন শুনে,
“তুই বললি না তো? কেন এসেছিস?”
সৌহার্দ্য একটু চমকালো। নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
“ডক্টরের টিম আসবে আজকে। তাই তাদের রিসিভ করতে আসতে হলো।”
সৌহার্দ্যের চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। প্রহর ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বললো,
“কোত্থেকে আসবে?”
“কানাডা থেকে আসবে শুনলাম।”
প্রহর হালকা হেসে বললো,
“তাহলে তো ভালোই হয়েছে! অর্থীও সেই টিমের সাথেই আসছে।”
সৌহার্দ্য বিরস মুখে হাসার চেষ্টা করলো। প্রহর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো সেটা। সৌহার্দ্যের এখানে আসার ব্যাপারটা ওর নিজের কাছেও খুব ভালো লাগেনি। তবুও দায়বদ্ধতার জন্য আসা ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল না। তাই সৌহার্দ্যের কাঁধে হাত রেখে বললো,
“মাঝে মাঝে পার্সোনালিটির চেয়ে প্রফেশনালিজমকে বেশি প্রায়োরিটি দিতে হয়। ওদের সাথে একবার দেখা করেই তুই চলে যাস না-হয়! এখন চল এগিয়ে গিয়ে দেখি।”
দু’জনে দুই পা এগিয়ে আসতেই দেখতে পেল, ডক্টর শাহেদ দশ-বারো জন ডক্টরকে সাথে নিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। সৌহার্দ্য মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলানোর চেষ্টা করলো। প্রহর সবার বাদামি চুল ও শুভ্র ফকফকে মুখের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে কাঙ্ক্ষিত মুখটা দেখতে ব্যর্থ হলো। ভ্রু কুঁচকে ভাবলো, তার মানে কি অর্থী আসেনি?
ডক্টর ক্লারা প্রহরকে আগে থেকেই চিনতেন। অর্থী-ই ওনার সাথে প্রহরকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। তিনি এগিয়ে গিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রহরকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন,
“হাও’স গোয়িং অন, মাই বয়? কত বছর পর তোমাকে দেখলাম! কানাডা যাওয়া তো বন্ধ-ই করে দিয়েছো! হোয়াট’স দ্য রিজন?”
প্রহর খানিকটা হাসার চেষ্টা করে বললো,
“এমনিতেই! তেমন কোনো ব্যাপার না, ম্যাম। অর্থীকে দেখতে পাচ্ছি না যে! ও কোথায়?”
“আসলে ও ওর এক ফ্রেন্ডের সাথে আসতে চেয়েছিল। বাট আনফরচুনেটলি ওরা ফ্লাইট মিস করেছে। ওদের সাথে কন্ট্যাক্ট করার অনেক চেষ্টা করেছি। ওরা খুব সম্ভবত নেক্সট ফ্লাইটে চলে আসবে। আমি যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি আবার!”
প্রহরের পাশে সৌহার্দ্যকে দেখে সবাই ওর দিকেই উৎসাহিত চোখে তাকিয়ে রইলো। সৌহার্দ্য প্রথমে ব্যাপারটা খেয়াল না করলেও যখন বুঝতে পারলো যে, সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে, তখন বিব্রত মুখে হাসার চেষ্টা করলো। একটা মেয়ে হাসি মুখে এগিয়ে এসে সৌহার্দ্যের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
“হ্যালো! আ’ম ডক্টর আনফা, স্পেশালাইজড ইন প্যাথলজি। ইউ আর ডক্টর সৌহার্দ্য রায়হান, রাইট?”
সৌহার্দ্য ভ্রুকুটি করে হাসার চেষ্টা করলো। হাত না মিলিয়ে বললো,
“ইয়েস, আই এ্যাম। গ্ল্যাড টু নৌ এবাউট ইউ!”
ডক্টর ক্লারা এগিয়ে এসে সৌহার্দ্যকেও এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন,
“তোমার ব্যাপারে ওরা অনেক গল্প শুনেছে। অর্থী সবসময় তোমাদের নিয়েই বকবক করতো। এজন্য এরা দেখেই চিনে ফেলেছে।”
সৌহার্দ্য মলিন হাসলো। কিন্তু প্রহরের মুখে হাসি নেই। অর্থী ফ্লাইট মিস করার মানুষ না। বাংলাদেশে আসার জন্য সবসময় মুখিয়ে থাকে মেয়েটা। কোনো সমস্যা হয়নি তো!
৪৯.
অর্থীর মুখ জুড়ে বিরক্তি। কপাল কুঁচকে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে সে। অন্য দিকে অরিত্রী ঘর জুড়ে পায়চারি করছে। ওকে একবার পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে অর্থী বিরস মুখে বললো,
“এই ছেলেটা অসহ্য! সব কিছুতে ওর এমন ইন্টারফেয়ারেন্স কেন? তুই ওকে কখনো কিছু বলিসও না!”
অরিত্রী থমথমে মুখে চুপচাপ বেডে বসলো। কালকের আগের দিন এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বের হতেই পার্কিং এরিয়ায় অর্ণব ওদের ধরে ফেলেছিলো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অরিত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেছিলো,
“অর্থীর কথায় লাফালাফি বন্ধ কর। আমি আগেই জেনে ফেলেছি যে, তুই আজকে বাংলাদেশে যাচ্ছিস! কোথাও যাওয়া হচ্ছে না তোর। লাগেজ নিয়ে ভেতরে যা।”
কথাগুলো ভাবতেই রাগে মুখ লালাভ বর্ণ ধারণ করলো অরিত্রীর। বিরবির করে বললো,
“বাংলাদেশে যাওয়া আগে আমার শখ ছিল, কিন্তু এখন সেটা আমার জেদ। আমি তো যাবোই! দেখি আমাকে কে আটকায়?”
অর্থীর দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“আজকে রাতের কোনো ফ্লাইট বুক করে ফেলো। আজকেই আমরা বাংলাদেশ যাচ্ছি!”
অর্থী চমকালো। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“আর ইউ শিয়র? অর্ণব তো তোর এই বাড়ি থেকে বের হওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে!”
“এজন্যই এখান থেকে বের হতে হবে আমায়। অর্ণব ভাই কে আমাকে ঘর বন্ধী করে রাখার। উনি আমার কাজিন, ওনার কোনো রাইট নেই আমাকে কোনোকিছু করা থেকে আটকানোর। সো, আমরা আজই যাচ্ছি।”
অর্থী হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অরিত্রীর এমন রাগী রূপ কখনো দেখেনি ও। সবসময় হাসি-খুশি, প্রাণোচ্ছল একটা মেয়ের এমন রাগী রূপও আছে? ভেবেই অবাক হলো অর্থী। তাই বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললো,
“কিন্তু কীভাবে যাবো?”
অরিত্রী রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,
“তুমি তোমার বাসায় যাও। রাত দশটায় এয়ারপোর্টে থেকো। আমিও পৌঁছে যাবো, ডোন্ট ওয়ারি।”
অর্থী মাথা নাড়িয়ে চলে গেল। রাত একটার ফ্লাইটে টিকিট বুক করে অরিত্রীকে জানিয়ে দিলো সে। অরিত্রী খুশিমনে নিজের দরকারী জিনিসপত্র আরেকদফা গুছিয়ে নিলো। রাত আটটার দিকে অর্ণব এলো। কিন্তু অরিত্রী ওর সাথে দেখাও করলো না। সেদিনের পর থেকে অরিত্রী ওর সাথে একবারও দেখা করেনি, একটা কথাও বলেনি। অর্ণব কষ্ট পেল। কিন্তু অরিত্রীর চাওয়া সে পূরণ করতে পারবে না। তাই দেখা করার চেষ্টা না করেই আবার ফিরে গেল। মোহনাকে এখনো অরিত্রীর এসব কাহিনী জানানো হয়নি। জানানো যাবেও না। এমনি খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য মিস্টার আফনাদকে কল দিলো অর্ণব। এখন তো সেখানে দিন! তেমন ব্যস্ত হয়তো তিনি না!
অরিত্রী দশটা বাজার কিছুক্ষণ আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। কিন্তু গেইটের গার্ড ওকে বাইরে যেতে দিলো না। অর্ণব নাকি নিষেধ করে গেছে। অরিত্রী রাগী চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। হুট করে কাঁধের ব্যাগ থেকে ক্লোরোফোর্ম বের করে গার্ডের মুখে স্প্রে করে দিলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই লোকটা অজ্ঞান অবস্থায় ঢলে নিজের চেয়ারে বসে পড়লো।
এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে অর্থী বারবার অরিত্রীকে কল করছে। দশটায় আসার কথা ছিল। আর এখন এগারোটার ওপরে বাজে। ওর ধারণা, মেয়েটা হয়তো আজ আর আসতেই পারবে না! শুধু শুধু ওকে দিয়ে খাটালো। বিরক্ত হয়ে সামনে তাকাতেই অরিত্রীকে নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে এগিয়ে বসতে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। বললো,
“তুই চলেই এলি! কিন্তু কীভাবে?”
অরিত্রী রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,
“ম্যাজিক!”
-চলবে……
(দেরি হয়ে যাওয়ায় দুঃখিত। স্বেচ্ছায় না, অনেকটা নিরুপায় হয়ে গিয়েছিলাম বলেই লেইট হলো।)#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৫৫
ক্লান্ত অপরাহ্নের শেষ প্রহর আগতপ্রায়! সারাদিনের উত্তপ্ততার শেষে সূর্য তার তেজ কমিয়ে বিদায় নিতে যাচ্ছে। নির্মল আকাশের গায়ে সদ্য সৃষ্টি হওয়া হরিদ্রাভ আভাগুলোর দিকে দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে অরিত্রী। তার চোখ দুটো অজানা কারণে অদ্ভুত প্রাপ্তিতে হাসছে। ফুরফুরে হাওয়ায় গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করলো সে। সামনের চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের ওপর পড়তেই অজানা আনন্দে ভরে গেল মন। সে ভাবতেও পারেনি, এখানে আসার পর তার এতোটা ভালো লাগবে।
অর্থী অরিত্রীর হাবভাব গুলো মনযোগ সহকারে দেখছে। মনে মনে হাসছে আর ভাবছে, মেয়েটা অসম্ভব মায়াবী। জীবনের কাছে ওর অনেক সুখ আজও পাওনা। শুধু মাত্র কাছের মানুষগুলোর বোকামির জন্য ওর জীবন এক অনাকাঙ্ক্ষিত মোড় নিয়েছে। ভাবতে ভাবতেই অর্থী বললো,
“আচ্ছা, তোর ছোটবেলার কোনো কিছু মনে পড়ে না? ছোটকালের কিছু কিছু স্মৃতি তো মানুষ কখনো ভোলে না!”
অরিত্রী অর্থীর দিকে তাকিয়ে চোখে হাসলো। বললো,
“অনেক কথা মনে পড়ে। সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে দাদীর কথা। দাদী আমাকে এত্তো আদর করতো! সেটা দেখে মধু সবসময় রাগ করত আর দাদীর সাথে ঝগড়া করত। বড়আব্বু আর কাকিমনির কথা তো না-ই বলি! তবে অরুণী আমায় সবসময় মারতো। আমিও তখন কিছু বুঝতাম না!”
“সবার থেকে বেশি কে ভালোবাসতো বলে তোর মনে হয়?”
অরিত্রী ভ্রু কুঁচকে চিন্তা করলো কিছুক্ষণ। ভাবুক ভঙ্গিতে বললো,
“সবাই-ই ভালোবাসতো। কিন্তু মায়ের থেকে বেশি তো কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে না। তবে এটাও সত্যি, ঐসময়ে আমার সবচেয়ে বেশি কেয়ার করতো সৌহার্দ্য।”
অর্থী না জানার ভান করে বললো,
“সৌহার্দ্য? এটা কে? বাকি সবার কথা প্রায়ই বললেও এই নামটা তোর মুখে কখনো শুনিনি!”
“আমার কাজিন। আমার অনেক কাছের মানুষ ছিল ও। আমার থেকে বয়সে বেশ বড় হলেও ওকে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুর মতো মনে হতো, যার কাছে ছিল আমার হাজারো আবদার। হয়তো ছোট ছিলাম বলে এমন মনে হতো! এখন অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। সৌহার্দ্য হয়তো এতো বছরে আমাকে ভুলেও গেছে! কিন্তু ওকে তো আমি ভুলিনি! ইন ফ্যাক্ট, আমি কাউকেই ভুলিনি।”
অর্থী মনে মনে হাসলো। ভাবলো, “সারা পৃথিবী তোকে ভুলে গেলেও সৌহার্দ্য তোকে ভুলবে না কোনোদিন। কিন্তু এই মানুষটাকে তো তুই-ই ভুলে গিয়েছিস, তরী! আফসোস!”
অরিত্রীর মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে অর্থী প্রশ্ন তুললো,
“ওদের কথা এতো মনে করিস! ওদের সাথে একবার দেখা করতে ইচ্ছে করছে না তোর?”
অরিত্রী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“কী দরকার! প্রায় দুই যুগ পেরিয়ে গেছে। অনেকটা সময়! বদলে গেছে সবকিছুই। ওরা ওদের জীবনে ভালোই তো আছে! আমিও আমার পৃথিবীতে সুখী। সেখানেই আমি ভালো আছি। এখানে তো আমার প্রতিটা মুহুর্তে সেই সময়টার কথা মনে পড়বে! নিজের বাবার হাতে নিজের মায়ের র*ক্ত দেখার মতো কঠিন দৃশ্য দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার মনে হয় না। এখন যাদেরকে মা-বাবা বলে জানি, তারাই আমার দুনিয়া। এদের ছাড়া আর কিছু ভাবতে চাই না আমি।”
“তাহলে কি এখানে শুধু এই দেশটা ঘুরে দেখার জন্য এসেছিস? আর কোনো উদ্দেশ্য নেই?”
অরিত্রী কিছুক্ষণ নীরব রইলো। আনমনে ভাবলো হয়তো কিছু! নিষ্প্রভ কন্ঠে বললো,
“কিছু কনফিউশান আছে। সেগুলো দূর করার ইচ্ছে আছে। এখন জানি না কী হবে?”
অর্থী অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অরিত্রীর দিকে। মেয়েটার মনে কী চলছে বুঝতে পারছে না ও! যেই সময়টা ও ভুলে গেছে, সেটা মনে করার কি বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ওর মনে নেই? ব্যাপারটা নিয়ে ওর মধ্যে কোনো কৌতুহল-ই দেখতে পাচ্ছে না অর্থী।
হঠাৎ ড্রাইভার সজোরে ব্রেক কষায় চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো অর্থী। দু’জনেই সামনে ঝুঁকে পড়লো। অরিত্রী কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“দেখে গাড়ি চালানো উচিত। এভাবে তো আপনি হুটহাট এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে ফেলবেন। আশ্চর্য!”
ড্রাইভার অসহায় কন্ঠে বললো,
“আমার কী দোষ, ডাক্তার আপা? ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে মা-বাবারা এভাবে রাস্তায় ছেড়ে দিলে তো ওরা গাড়ির সামনে চলে আসবেই!”
অরিত্রী দাঁত কিড়মিড় করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করলো। গাড়ির দরজা খুলে সামনে এগিয়ে যেতেই দেখলো, একটা বাচ্চা মেয়ে একটা বাচ্চা ছেলেকে বকাবকি করছে! দু’জনকে দেখে সমবয়সী-ই মনে হলো অরিত্রীর। মেয়েটা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলছে,
“বলেছিলাম তোকে, ভাই! এভাবে দৌড়াদৌড়ি করতে মানা করেছিলাম। পার্ক থেকে কেন বের হয়েছিস তুই?”
ছেলেটা নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
“প্রণয়ীর বাচ্চা! প্যানপ্যানানি বন্ধ করে আমায় টেনে তোল আগে। পায়ে বেশ জোরে ব্যথা লেগেছে। উফ্!”
প্রণয়ী নিজের সব শক্তি দিয়ে প্রণয়ের হাত ধরে টান দিলো। প্রণয় আহ্ করে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে বললো,
“উফ! আমার হাতটা শেষ করে দিলি, গাধী! হাতেও ছিঁলে গেছে, দেখ!”
প্রণয়ের হাতের কনুইয়ে ক্ষত থেকে রক্ত পড়তে দেখে প্রণয়ী অসহায় চোখে তাকালো। এখন কী করবে সে?
অরিত্রী এগিয়ে গিয়ে প্রণয়কে ধীরে-সুস্থে উঠিয়ে দাঁড় করালো। অর্থী গাড়ি থেকে নেমে ওদেরকে দেখে অবাক কন্ঠে বললো,
“আরেহ্! তোমরা এখানে এই অবস্থায় কেন?”
প্রণয়ী অর্থীকে দেখে ভরসা পেল। ছুটে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“অর্থী আন্টি, ভাই অনেক ব্যথা পেয়েছে। ওর হাত থেকে র*ক্ত পড়ছে। দেখো না!”
অরিত্রী কিছু বুঝতে পারলো না। অর্থীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুই ওদেরকে চিনিস? ওরা কারা?”
অর্থী তড়িৎ গতিতে ওদের পরিচয় বলতে গিয়েও বললো না। কয়েক সেকেন্ড ভেবে বললো,
“ওরা আমার ভাইয়ের বন্ধুর ছেলেমেয়ে। এজন্য চিনি ওদেরকে।”
“অহ্, আচ্ছা! তুই ফার্স্ট এইড বক্সটা আমার লাগেজ থেকে বের করে আনার ব্যবস্থা কর। আমি ওদেরকে নিয়ে পার্কে গিয়ে বসছি।”
অর্থী মাথা নাড়াতেই অরিত্রী ওদেরকে নিয়ে পাশের পার্কে ঢুকে পড়লো। একটা চেয়ারে প্রণয়কে বসিয়ে অরিত্রী ওর সামনে ঘাসের ওপর বসে পড়লো। প্রণয়ী প্রণয়ের পাশে বসে ভাইয়ের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
অরিত্রী ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“রাস্তায় কী করতে গিয়েছিলে তোমরা?”
প্রণয়ী কয়েক বার মাথা নাড়িয়ে বললো,
“আমি যাইনি কোথাও? আমরা তো এখানে খেলতে এসেছিলাম! হঠাৎ দেখি প্রণয় পার্ক থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। আমিও ওকে ডাকতে ডাকতে বাইরে বের হতেই দেখি ও রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গেছে, আর একটা গাড়ি ওর কাছে এসে থেমে গেছে।”
অরিত্রী চোখ ছোট ছোট করে প্রণয়ের দিকে তাকাতেই সে ঠোঁট উল্টে বললো,
“আমার কী দোষ? রাস্তা দিয়ে একটা আইসক্রিম ভ্যান যাচ্ছিলো। আমি তো প্রণয়ীর জন্য আইসক্রিম কিনতে যাচ্ছিলাম। আমি কি জানতাম নাকি যে, ঐভাবে পড়ে যাবো।”
অরিত্রী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“যদি গাড়িটা তোমায় ধাক্কা দিতো? তখন কী হতো একবার ভেবে দেখেছো? তোমার মা-বাবা কতটা কষ্ট পেত কোনো আইডিয়া আছে তোমাদের!”
অরিত্রীর ধমকে প্রণয়ী হালকা কেঁপে উঠল। শুকনো ঢোক গিলে প্রণয়ের দিকে তাকালো। প্রণয়ে শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে অরিত্রীর দিকে। মায়ের কথা শুনলেই রাগে ওর চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। প্রণয় চায় না কেউ ওর মাকে নিয়ে কোনো কথা বলুক! ভালো বা খারাপ কোনো কথাই না। কেউ কিছু বললেই তার সাথে প্রণয় রাগারাগি করে। এখন কি অরিত্রীর সাথেও একই আচরণ করবে? ভেবেই প্রণয়ী ভীত দৃষ্টিতে তাকালো। কিন্তু খেয়াল করে দেখলো, প্রণয়ের চোখ দু’টো আজ বেশ স্বাভাবিক। সেখানে কোনো রাগ বা ক্ষোভ নেই। কেবল অবাকতা আর কিছু খুঁজে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা করছে প্রণয়।
হঠাৎ অর্থী ফার্স্ট এইড বক্সটা এনে অরিত্রীর হাতে দিয়ে বললো,
“সরি, ইয়ার। বক্স খুঁজে বের করতে একটু সময় লাগায় লেইট হয়ে গেল!”
“প্রব্লেম নেই”, বলেই অরিত্রী প্রণয়ের হাত ও পায়ের র*ক্ত গুলো মুছে দিয়ে মেডিসিন লাগিয়ে দিতে লাগলো। অর্থী প্রণয়ের পাশে বসে ওর মাথায় চুমু দিয়ে বললো,
” বেশি ব্যথা লেগেছে, বাবা?”
প্রণয় এক দৃষ্টিতে অরিত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। অর্থীর কথা ওর কানে প্রবেশ করেও করলো না যেন। ব্যান্ডেজ করা শেষে অরিত্রী নিজের মুখের সামনে চলে আসা ছোট ছোট চুলগুলো সরিয়ে ফেললো। সেগুলো কানে গুঁজতেই প্রণয়ী ওর দিকে তাকিয়ে হাসিহাসি মুখে বললো,
“তুমি অনেক সুন্দর!”
অরিত্রী হাসলো। প্রণয়ীর গাল টেনে দিয়ে বললো,
“আপনিও অনেক সুন্দর। একদম প্রিন্সেসের মতো।”
প্রণয়ী খুশি হলো। বললো, “আমার পাপা আর আঙ্কেলও এটা বলে। কিন্তু আমার মা আরো বেশি সুন্দর ছিল। হয়তো আপনার থেকেও বেশি সুন্দর।”
অরিত্রী ভ্রু কুঁচকে তাকালো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“সুন্দর ছিল মানে?”
প্রণয় বিরক্ত হয়ে বললো,
“আমাদের মা নেই। হারিয়ে আমাদের জীবন থেকে। আমাদের পাপা-ই আমাদের মা।”
-চলবে…..