প্রেম পিয়াসী পর্ব -৩৭+৩৮+৩৯

#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব______৩৭.

ইলহামের শারিরীক কন্ডিশন অনুযায়ী ডক্টররা প্রেসক্রাইব করে দিলেন, ইলহামের ডেলিভারি হতে হয়তো বেশি সময় লাগবেনা। বেশি হলে দেড় মাস। এরকম পেসেন্টদের জন্য ডেলিভারির সময়টা যত বেশি হয় ততই অবস্থা ক্রি/টিকাল হতে থাকে। তাই কোনো রকম রি//স্ক না বাড়ানোটাই শ্রেয়।

এদিকে রাদ ভেবে দিশেহারা ইলহামের এমন অবস্থায় সে ইলহামকে সঙ্গ দিবে নাকি নিজের কাজকে। অবশ্যই ইলহামকে। কিন্তু ওদিকের কাজটাও যে সমান গুরুত্বপূর্ণ। ইলহামের বাবা এবং সৎমাকে অনেক কায়দা করে দেশে এনেছে রাদ। প্রায় ৩বছর যাবত তারা ইংল্যান্ডে সেটেল্ড। হয়তো দেশে আসার তেমন কোনো প্রয়োজনও পড়েনা তাদের। এমতাবস্থায়, রাদ তাদের বেশিদিন এখানে আঁটকে রাখতে পারবেনা। তারা এখনই পালাই পালাই শুরু করে দিয়েছে। বড়জোর আর পনেরো দিন তারা থাকবেন এখানে। এরমধ্যেই যা করার করতে হবে। কিন্তু কিভাবে?

তার এতো এতো চিন্তার একমাত্র সমাধান হয়ে হাজির হলো অন্তু। হ্যাঁ, রাদ অন্তুকেই এই মুহুর্তে নিজের বাহক করেছে। অন্যথায় তার একুলও যাবে আবার ওকুলও। অর্থাৎ না পারবে ইলহামকে সামলাতে আর না পারবে ইলহামের মায়ের মৃ/ত্যু/র রহস্য উদঘাটন করতে।

—-” তুই এতো টেনশন কেন নিচ্ছিস বলবি একটু? আমি আছি তো নাকি! তাছাড়া, বেশি প্রবলেম হলে আমি প্রণয়কে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো। আমরা দু’জন মিলে ঠিক কোনো না কোনো ক্লু জোগাড় করবোই।”

—-” কথা সেটা নয় অন্তু। কথা হলো, লাবনী খানকে নিয়ে। উনাকে তুই এখনও বুঝে উঠতে পারিসনি। উনি কিন্তু ভীষণ গভীর জলের মাছ। আমি যদি ভুল না করি, তবে কুহেলিকা ম্যামের মৃ//ত্যু//র পেছনে উনারই হাত আছে। ক্যান ইউ জাস্ট ইমাজিন, ঐ সময়ে কতটা নিখুঁত পরিকল্পনায় একটা মানুষকে সরিয়ে ফেলেছে ওরা। আর সে কোনো আম লোক নয়। একজন নামকরা সঙ্গীত শিল্পী!”

—-“ভাই আমারও এটাই মনে হচ্ছে। কোনো না কোনো ভাবে তারা দু’জনেই যুক্ত এসবের পেছনে। জানিস তো, সেদিন যখন আমি মিস্টার খানের সামনে ইলহামের নামটা তুললাম, উনি কেমন অদ্ভুত রিয়াক্ট করছিলেন। মনে হচ্ছিলো কোনো রহস্য ফাঁস করে দিয়েছি আমি! যেন, উনার কোনো কালো অতীত উনার মনে পড়েছে..”

—-” রসহ্য ফাঁস তো বটেই! এবার যে আরও কত রহস্য ফাঁস হবে রেজা সাহেব, ইউ কান্ট ইমাজিন!”

বলতে বলতে ডেভিল হাসলো রাদ। অন্তুও বাঁকা হাসলো। এবার দুই ভাই মিলেই কীর্তি ফাঁস করবে বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী রেজা খানের।

___________

তিনদিন আগে রেজা সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে তার অফিসে গেলেও আজ অন্তুর ডাক পড়েছে রেজা সাহেবের নিজ বাড়িতে। বাড়িটা যে সে বাড়ি নয়। একরকম প্রাসাদ বলা যায়। বাইরেটা, ভেতরটা কোনো দিকেই বাদ নেই। অসংখ্য সিকিউরিটি গার্ডদের মধ্যে ছোট্ট একটা প্রাসাদ। আর এই প্রাসাদের একমাত্র উত্তরাধিকারী হলো ইলহাম। কিন্তু সে এসব অধিকার থেকে চিরকালই বঞ্চিত। বেচারি! কথাটা ভাবতেই বুক চিঁড়ে তপ্ত দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো অন্তুর। ওকে অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে কিছুদূর এগিয়ে গিয়েও আবার ফিরে এলো প্রণয়। প্রণয়কে সঙ্গে নিয়ে এসেছে অন্তু। আর এখন প্রণয়ও সবটা জানে। প্রণয় ফিরে এসে অন্তুর কাঁধে হালকা করে চাপড় দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—-” দাঁড়িয়ে পড়লি কেন? ভেতরে যাবি না!”

অন্তুর ঘোর কাটে। প্রণয়ের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে একটা দীর্ঘশ্বাস আওড়ে বলে,

—-” ভাবছি মানুষের ভাগ্য ঠিক কতটা খা/রাপ হতে পারে!”

—-” হ্যাঁ রে! ইলহামের সঙ্গে কত অ/ন্যা/য় হয়েছে। ভাবতেই ভীষণ খা/রাপ লাগে।”

—-” ভেতরটা কেমন করে আমার। তবে কি জানিস, রাদের সঙ্গে ওর বিয়েটা হওয়াতে সত্যিই ও এসবের থেকে মুক্তি পেয়েছিলো। উপরওয়ালা হয়তো মুখ তুলে চেয়েছিলো ওর প্রতি।”

—-” একদম। আর দেখিস আমরা গোটা পরিবার মিলে ইলহামকে আর কোনো দুঃখ স্পর্শ করতেই দিবোনা। এবার থেকে ও আমাদের সবার মাঝে একসাথে অনেক অনেক ভালো থাকবে।”

—-” ইয়েস। চল, লেট হয়ে যাচ্ছে।”

—-” হ্যাঁ, চল।”

বাসার কলিং বেল চাপতেই একজন সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দিলো। অন্তু এবং প্রণয় ওদের পরিচয় দেওয়াতে সার্ভেন্ট ওদের ভেতরে নিয়ে এসে বসতে যায়। “স্যার এবং ম্যাম’ একটু বাইরে গেছেন হয়তো কিছুক্ষনের মধ্যে চলেও আসবেন” এই বলে কাজের লোকটি ওদের অপেক্ষা করতে বলে সন্ধ্যার নাস্তা দিয়ে যায়। খাবারের আইটের গুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করে অন্তু আর প্রণয় কেবল কফিটা খায়। ইতিমধ্যে এসে উপস্থিত হয় রেজা সাহেবের পিএ মিমি। মিমি ওদের দেখে ভদ্রতা সূচক হাসে। এগিয়ে এসে ‘গুড ইভিনিং’ জানিয়ে কাজের ব্যাপারে কথা শুরু করে। প্রণয় বারবার খেয়াল করছিলো, মেয়েটা কথা বলতে বলতে বারবার কেমন অদ্ভুত করে তাকায় অন্তুর পানে। একা একাই লজ্জা পায়, মুচকি হাসে।

—-” ওকে। থ্যাঙ্কস্ ফর দ্য ইফোর্ট। বাই দ্য ওয়ে, স্যার কি আসতে পারবেন না?”

আজকের কাজটুকু দু’জনের প্রচেষ্টায় সফল করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো অন্তু। ফের শেষোক্ত প্রশ্নে জানতে চাইলো রেজা সাহেবের কথা। মিমি ঘড়িতে একবার দৃষ্টিপাত করে বলল,

—-” আসতে আরও একটু লেট হবে, আই থিংক সো। স্যারই আমাকে ফোন করে আসতে বলেছেন এখানে। উনি এসে পৌঁছাতে না পারলে আমি যেন আপনাকে হেল্প করি। কাজ তো অলমোস্ট ডান। আরেক কাপ কফি হবে?”

—-” নো নো! আমাদেরও উঠতে হবে। অনেক সময় চলে গেছে।”

কথাটা বলতে বলতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়লো অন্তু। মনেমনে ভাবতে লাগলো, আসল কাজই তো হলোনা।

—-” এক্ষনি চলে যাবেন?”

মিমি একটু মন খারাপের সুরেই প্রশ্নটা করলো অন্তুকে। অন্তু খেয়াল করেনি ওর কথাটা। পাশ থেকে প্রণয় জবাব দিলো,

—-” হ্যাঁ, এক্ষনি বের হবো ভাবছি।”

—-” আহ্ ওকে।”

অন্তু আর প্রণয় উঠে দাঁড়ালো। অন্তু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে চারপাশটা। কিভাবে যে সব রহস্যের সমাধান করবে জানেনা সে। টেনশন হচ্ছে খুব। আর তারউপর আজ ভেবে এলো, লাবনী খানের সঙ্গে দেখা হবে! কিন্তু সেটাও হলোনা। কিছুই যে প্ল্যান মোতাবেক এগোচ্ছে না।

—-” এক্সকিউজ মি, মিস্টার অন্তু?”

ওরা গাড়িতে উঠবে ঠিক এমন মুহুর্তে পিছু ডাকলো একটা মেয়েলী কন্ঠ। অন্তু এবং প্রণয় একসাথেই পেছন মুড়ে তাকালো। একটু অদূরে মিমি দাঁড়িয়ে আছে। তখন কাজের ফাঁকে খেয়ালই করা হয়নি আজ মেয়েটাকে সেদিনের চেয়ে ভিন্ন লাগছে। কারন, সেদিন তার সমান চুল গুলো খোলা থাকলেও আজ বেঁধে রেখেছে। তাতেও বেশ ভালো দেখাচ্ছে।

—-” ইয়েস! কিছু বলবেন?”

—-” আপনি যদি কিছু মনে না করেন, আপনার সঙ্গে দু’মিনিট বসতে পারি?”

—-” আব.. বসবেন? কিন্তু কোথায়?”

আধঘন্টা পর, ওদের গাড়িটা একটা কফিশপের সামনে এসে থামলো। অন্তু গাড়ি পার্ক করতে প্রথমে মিমি অতঃপর প্রণয় নেমে আসে গাড়ি থেকে। এবং অবশেষে অন্তু। ওরা ভেতরে এসে বসে কফি অর্ডার করে বসলো চুপচাপ। কয়েক মুহুর্ত নিরবতা বিরাজ করলে অবশেষে নিরবতা ভাঙে অন্তু। মিমির উদ্দেশ্য পরিস্কার গলায় জিজ্ঞেস করে,

—-” জি, এবার বলুন?”

মিমি একটু নড়েচড়ে বসে। নিজেকে ধাতস্থ করে। অতঃপর, এতো বছরেও যে সাহস হয়নি আজ সেই সাহস সঞ্চয় করে হঠাৎ প্রশ্ন করে অন্তুকে,

—-” আপনি সেদিন স্যারের থেকে জানতে চেয়েছিলেন, স্যারের মেয়ে কেমন আছে? কিন্তু আমাদের জানামতে স্যার নিঃসন্তান। লাবনী ম্যামের কখনোও কোনো বেবিই হয়নি। হ্যাঁ, কুহেলিকা ম্যামের ব্যাপারে অনেক রটনা আছে। কিন্তু, স্যার তো সবাইকে বলে বেড়ান কুহেলিকা ম্যামের যদি কোনো মেয়ে থেকে থাকে তার বাবা নাকি উনি নন। তবে, আপনি এতো জোর গলায় কি করে বলেছিলেন ঐ কথা গুলো! আপনি যার কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি কি আসলেই স্যারের মেয়ে?”

মিমির প্রশ্নগুলো কয়েক মুহুর্তের জন্য ঘটনাস্থলকে নিস্তব্ধ করে তুললো। কেননা, অন্তু কোনোভাবেই আশা করেনি এই মেয়েটি তাকে ডেকে এনে এসব প্রশ্ন করবে। কেননা, মেয়েটা রেজা খানের পার্সোনাল এসিসট্যান্ট। যে কিনা,নিজের বসের সম্মন্ধে এসব খবর বের হলেও ধামাচাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। কিন্তু তা না করে এতো কৌতুহল নিয়ে ওকে ডেকে আনলো কফিশপে।

—-” সে যাই হোক, তবে এসব কথা আমি আপনাকে কেন বলবো? আর আপনি যে আমাদের জাসুসি করছেন না, আমাদের থেকে ইনফরমেশন নিয়ে রেজা খানকে জানাবেন না এর কি নিশ্চয়তা আছে?”

—-” নো নো! এমন কিছুই নয়। আমি এমন করবোনা। ট্রাস্ট মি! আমি রেজা স্যারের হয়ে কাজ করলেও…”

—-” আই কান্ট ট্রাস্ট ইউ!”

—-” মিস্টার অন্তু, প্লিজ ট্রাস্ট মি! আমি কুহেলিকা ম্যামকে..”

—-” নো ওয়ে। আপনি আমাদের সাথে কফি খেতে চেয়েছেন। কেবল কফিই খাবেন। যা কথা বলার সব হয়ে গেছে। দয়াকরে এসব বিষয়ে আর নাক গলাবেন না!”

অন্তু একটু রা/গী গলায় ঝাড়লো কথাগুলো। মিমি মন খারাপ করে ফেললো। কারন অন্তু ওকে ভুল বুঝছে। ও এমন মেয়ে নয়। ওর রেজা খানের পার্সোনাল এসিসট্যান্ট হওয়ার পেছনে অনেক বড় একটা গল্প আছে। সেটা কেউ জানেনা। আর জানেনা বলেই অন্তু ওকে মুখের উপর না করে দিতে পারলো।

—-” প্লিজ অন্তু…”

—-” আই স্যেইড নো! নো মিনস্ নো!”

মিমি মাথা নীচু করে নিলো। না, এভাবে কিছু হবেনা। আর কোনো কথা বাড়ালো না মিমি। চুপটি করে উঠে গেলো ওদের সামনে থেকে। ওর দুই মিনিট ব্রেক লাগবে। নিজেকে পূণরায় ধাতস্থ করতে। মিমি চলে গেলে প্রণয় অন্তুর হাত ঝাঁকিয়ে বলল,

—-” এটা কি করলি? মেয়েটা তো সত্যি বলছিলো! ওর চোখমুখ দেখে বুঝতে পারলিনা?”

—-” বুঝতে পারবোনা কেন! বুঝতে পেরেছি। আর বুঝতে পেরেছি বলেই ঘাঁটিয়েছি। এবার ঘুঘু কেমন করে ধরা দেয় দেখ। আমরা যে উদ্দেশ্যে আজ ও বাড়ি গিয়েছিলাম সেই উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পালা। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।”

দুই মিনিট বাদে পূণরায় ফিরে এলো মিমি। চোখ দুটো ফোলা লাগছে কিঞ্চিৎ। অন্তু অবাক হলো। অবাক হলো প্রণয়ও। মেয়েটা কি কেঁদেছে? কিন্তু কেন! অন্তু কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পেরে প্রশ্ন করেই ফেললো,

—-” হোয়াটস গোয়িং অন মিমি? ডিড ইউ ক্রাই?”

অন্তুর প্রশ্নে মিমি পূণরায় কেঁদে দিলো। ভড়কে গেলো অন্তু আর প্রণয়। দু’জনে বোবা দৃষ্টিতে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। প্রণয় অবাক কন্ঠে বলল,

—-” কি হয়েছে মিমি? আপনি ঠিকাছেন তো!”

—-” মিমি, লিসেন টু মি? প্লিজ স্টপ ক্রায়িং! মিমি, সবাই দেখছে.. প্লিজ।”

মিমি ফুঁপিয়ে কাঁদছে। যখন বুঝলো সবাই তাকেই বাঁকা চোখে দেখছে তখন নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। অন্তু খানিক টিস্যু মিমির হাতে ধরিয়ে দিলে মিমি চোখ মুখ মুছে শান্ত হয়ে বসে। কয়েক লহমা কেটে যায় স্তব্ধতায়। অতঃপর মিমি নিজেই নিরবতা ভাঙে,

—-” আমি অনেক গরীব ফ্যামিলি থেকে বিলং করি। আমার বাবা-মা কেউই নেই। অনেক ছোট বেলায় বাবা মাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে আর মা তার প্রাক্তনকে বিয়ে করে চলে যায়। আমি আমার মামার কাছে বড় হই। মামা ছোটখাটো একটা কাজ করতেন। মামার পেশাও আমার মতোই ছিলো। ঐ সময়কার বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী কুহেলিকা ম্যামের পার্সোনাল এসিসট্যান্ট ছিলো আমার মামা।”

এটুকু বলতেই ওর মুখের কথা কেঁড়ে নেয় অন্তু। আশ্চর্যান্বিত কন্ঠে বলে,

—-” হোয়াট! কুহেলিকা ম্যামের পার্সোনাল এসিসট্যান্ট?”

—-” হুম। আমি ম্যামকে ছোট থেকেই চিনি। উনার গান আমার ভীষণ পছন্দের ছিলো। মামার সঙ্গে আসা-যাওয়া করতে করতে কুহেলিকা ম্যাম আমাকেও চিনে নিলো খুব ভালো ভাবেই। উনার প্রায় অনেক কাজেই মামার মতো আমিও হেল্প করার চেষ্টা করতাম। উনি বলতেন, আমি নাকি ঠিক উনার মেয়ের মতো। তখন আমি অনেক ছোট। উনার মেয়ে, উনার হাসবেন্ড এতকিছুর সম্মন্ধে আমার জ্ঞান সীমিত। যখন আমি একটু বড় হই, আমি জানতে পারি কুহেলিকা ম্যামের একজন শ//ত্রু আছে। আর সে রেজা খান। মাঝেমধ্যে সেটে রেজা খান কুহেলিকা ম্যামের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। ঠিক দেখা নয়, এসেই ঝগড়া শুরু করতেন উনার সাথে। খুব অকথ্য ভাষায় গা/লিগা/লাজও করতেন। উনি শুধু একটা কথাই বারবার বলতেন, ঐ সন্তান আমার নয়। কুহেলিকা ম্যাম নাকি উনার পাপের সন্তান জন্ম দিয়েছেন।”

—-” পাপের সন্তান মানে?” জিজ্ঞেস করলো অন্তু।

—-” পাপের সন্তান বলতে আপনি যার কথা বলেছিলেন রেজা খানও তার কথাই বলতেন! ঐ সন্তান নাকি তার নয়। সে নাকি অবৈধ! এসব বলতেন। আমি আস্তেধীরে আরও বড় হলাম। কুহেলিকা ম্যামের আরও ঘনিষ্ঠ হলাম। একবার বোধহয় তার মেয়েকে আমি দেখেছিলাম! তারপর তো হুট করে মৃ//ত্যু হয় কুহেলিকা ম্যামের! আর খুব র/হস্য জনক ভাবে উনার মৃ//ত্যুর ঠিক সাত দিনের মাথায় কেউ বা কারা আমার মামাকেও মেরে ফেলে। আর তারপর থেকেই আমার মূখ্য উদ্দেশ্য ছিলো রেজা খান এবং কুহেলিকা ম্যামের মেয়ে। জানিনা, সে এখন কোথায় আছে বা আদৌও বেঁচে আছে কিনা…”

—-” বেঁচে আছে! বেঁচে আছে আর ভীষণ ভালোও আছে। আই এম সরি মিমি! আমি আপনাকে কথাগুলো ওভাবে না বললেও পারতাম। আই এম রিয়েলি সরি।”

—-” ইট’স ওকে মিস্টার অন্তু। কুহেলিকা ম্যাম আমার মায়ের মতো ছিলো। আর আমি চাই, উনার মৃ//ত্যুর রহস্য সবার সামনে আসুক। একই ভাবে আমার মামাকেও যারা মে//রে ফেলেছে তাদেরও শা/স্তি হোক।”

—-” থ্যাংক্স ফর ইওর ইনফরমেশন। ইউ কান্ট ইমাজিন আপনার এই ইনফরমেশন গুলো কতটা কাজে আসবে আমাদের।”

—-” এবার তো বলুন, ম্যামের মেয়ে কোথায় আছে? আর আপনার কথা গুলো আদৌও সত্যি কিনা?”

—-” হ্যাঁ! সবটাই সত্যি। আর আপনার ম্যামের মেয়ে যেখানেই আছে খুব ভালো আছে। সরি টু স্যে, আমি এই মুহুর্তে তার গোটা ইনফরমেশন আপনাকে পাস করতে পারবোনা। আমাদের আগে রেজা খানের পর্দা ফাঁ/স করতে হবে। আর তার জন্য আপনার অনেক হেল্প প্রয়োজন আমাদের। আপনি কি পারবেন?”

—-” অবশ্যই পারবো। প্রসঙ্গ যখন কুহেলিকা ম্যামের, তখন এই মিমি ম/র/তেও রাজি।”

#চলবে#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব______৩৮.

সকাল ৭টা। ভোরের দিকের পাখিদের কিচিরমিচির কলরব আর শোনা যাচ্ছে না। ঘরময় বিচরণ করছে গা পো/ড়া/নো গরম। ইলহাম শুয়ে আছে বিছানায়। ক’টা দিন যাবত ওর শু’তে, বসতে কিংবা হাঁটতে একটু স’ম’স্যা হচ্ছে। এসময়ে নাকি এসব নর্মাল। মা বলেছে। খানিকক্ষণ বাদে উঠে বসলো ইলহাম। আর শুয়ে থাকতে পারছেনা। অস্থির অস্থির করছে শরীরটা। রাদ কোথায়? ঘরে নেই! আধঘন্টা আগে, দশ মিনিটের কথা বলে কোথাও বেরিয়েছে। দশ মিনিট পেরিয়ে আধঘন্টা হয়ে এলো। দেখা নেই বান্দার। শিরিনটাই বা কোথায়? এক্ষনি তো এখানে ছিলো?”

—-” শিরিন? শিরিন?”

অস্থির গলাতেই দু’বার ডাকলো শিরিনকে। ডাক পেয়ে ব্যালকনি থেকে ছুটে এলো শিরিন।

—-” জে ভাবি? কিছু লাগবে?”

—-” তোমার ভাইজান কোথায় গেছে?”

—-” বইলা যায়নাই তো ভাবি।”

—-” আচ্ছা, মা কোথায়? মাকে একবার ডাকবে!”

—-” ভাবি খালাম্মায় আর বাকিরাও তো নাই! অন্তু ভাইজানের বাপে অসুস্থ হইয়া পরছেনা? তারে নিয়া ডাক্তারের কাছে গেছে নাকি। খালাম্মায় আর বাকিরা তো ওনেই গেলো।”

—-” ওহ্।”

ইলহাম ঘামছে। বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,

—-” আমার শরীরটা ভালো লাগছেনা। ত..তুমি আমাকে একটু পানি দাও। আচ্ছা থাক.. তুমি তোমার ভাইজানকে একটা কল দাও!”

ইলহামের শরীর ঠিক লাগছেনা শুনে চিন্তায় শিরিনের কপালে ভাজ পড়লো। ইতিমধ্যেই ব্যস্ত হয়ে উঠলো শিরিন। ব্যস্ত গলায় বলল,

—-” আল্লাহ কি কইতাছেন ভাবি! আচ্ছা, খারান আমি আগে আফনেরে পানি খাওয়াই। হ্যাসে ভাইজানরে কল দেই!”

—-” আ..আচ্ছাহ্! তাই দাও।”

শিরিন চটজলদি পানি এনে খাওয়ালো ইলহামকে। ইলহাম তখনও ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে যাচ্ছে। ওর যে বেশ ক*ষ্ট হচ্ছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

—-” হেলো ভাইজান? তারাতাড়ি বাসায় আসেন। ভাবি জানি কেমন করতাছে!”

ওপাশ থেকে শিরিনের গলা শুনতে পেলো ইলহাম। কিন্তু রাদ কি বলল আর শোনা হলো না।

___________

ডাক্তার চেকআপ করছে ইলহামকে। ইলহাম চোখ বুঁজে শুয়ে আছে। পাশেই ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বসে আছে রাদ। ডাক্তারের পেছনে প্রণয়, অনন্যা আর অন্তু। আর তাদের থেকে খানিক দূরে শিরিন। সবার মুখেই দুশ্চিন্তার ছাপ। প্রেগন্যান্সিতে একটু বেশিই ক/ষ্ট পাচ্ছে ইলহাম। রাদ বারেবারে ভাবে এরচেয়ে ওরা নিঃসন্তান থাকতো। তবুও মেয়েটাকে এতোটা ক/ষ্ট পেতে দিতোনা।

—-” উনার প্রতি ডাবল কেয়ার নিন। আশাকরি ঠিক হয়ে যাবে। আর এখানে স্বল্প কিছু ঔষধ দিয়েছি। নিয়ম করে খাওয়াতে থাকুন। আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা! এই মুহুর্তে উনার কোনো মেন্টাল প্রেশার নেওয়া বারন। অন্যায়ই বলতে পারেন। সেই দিকটা একটু খেয়াল রাখবেন।”

ডক্টর একটা প্রেসক্রিপশন রাদের দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল কথাগুলো। রাদ মলিন চাহনিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে থাকা তার ইলহামকে একবার দেখলো। অতঃপর প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে অন্তুর দিকে এগিয়ে দিয়ে ডক্টরের উদ্দেশ্যে বলল,

—-” ক’টা দিন আপনাকে একটু ক/ষ্ট করে আসতে হবে ডক্টর। এছাড়া আর ওয়ে দেখছিনা।”

—-” সে না হয় আসবো। আমি রেগুলার এসে উনার চেকআপ করে যাবো। আপনি টেনশন মুক্ত থাকুন।”

—-” থ্যাঙ্কিউ ডক্টর।”

—-” মাই প্লেজার।”

ডক্টর চলে গেলেন। রাদ ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইলহামের মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। অনন্যা এসে বসলো ইলহামের পাশে। সবার মুখেই মন খারাপের ছাপ স্পষ্ট। ভবিষ্যত ভেবে সকলেই ভীত। কি হবে জানেনা কেউ।

—-” ভাইয়া, ভাবিকে আর এমন অবস্থায় দেখতে ভালো লাগছেনা। কিছু একটা করো প্লিজ!”

—-” কি করি বল! আমি নিজেই ভেবে পাচ্ছি না এসব কেন হচ্ছে।”

কথাটা বলে আবারও দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রাদ। প্রেগন্যান্সির সকল নর্মাল সিচুয়েশন পেরিয়ে গিয়েছে ইলহাম। এখন যা হচ্ছে সবটাই বাড়াবাড়ি।

—-” আমার মনে হয়, ইলহাম একটু বেশিই প্রেশার নিচ্ছে মাথায়। ওর এই প্রেশার কি কোনো ভাবে কম করা যায়না?”

—-” হ্যাঁ, আমিও একই কথা বলতাম। আমাদের উচিৎ ভাবির জন্য কিছু করা।”

অন্তুর কথার পিঠে বলল প্রণয়। রাদ ভাবনায় ডুব দিলো। কি এমন করা যায়, যাতে ওর মেন্টাল প্রেশার গুলো একদম ঝেড়ে পড়ে?

—-” ভাইয়া, ছোটখাটো একটা বনভোজন করলে কেমন হয়! আই মিন, পিকনিক? সেখানে আমরা আমাদের সবার ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করবো। ইলহামও ওর ফ্রেন্ডদের ডাকবে। সবাই একটা সন্ধ্যা কাটালাম। কি দারুণ হবে তাইনা?”

উৎসাহী গলায় নিজের বক্তব্য রাখলো অনন্যা। আইডিয়াটা মন্দ নয়। এই মুহুর্তে ইলহামের মন ঘুরাতে ওকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া তো সম্ভব নয়। কিন্তু সবাই মিলে বাসায় এই আয়োজনটা তো দিব্যি করা যাবে।

—-” গ্রেট ছোটি! তোর মাথায় তো ভালো বুদ্ধি আছে। আগে জানতাম না কিন্তু!”

খোঁচা মে/রে বলল অন্তু। প্রণয় হেসে ফেললো। প্রণয়ের হাসি এবং অন্তুর কথায় তেতে উঠলো অনন্যা। নাকের ডগায় রা/গ এনে বলল,

—-” মানে কি? আমার মাথায় কি গোবর থাকে বলে তোমাদের ধারণা?”

—-” হ্যাঁ, ওমনই ভাবতাম রে!”

বলে ফিক করে হেসে দিলো অন্তু। তাল দিলো প্রণয়। অনন্যা নাক ফুলিয়ে বলল,

—-” দু’জনের খুব জমেছে তাইনা?”

—-“আচ্ছা আচ্ছা চুপ কর তোরা। আগে প্ল্যান কর পিকনিকের আয়োজন কবে হবে? আর কিভাবে কি করবি?”

রাদের কথায় রা/গ-মজা বাদ দিয়ে সবাই আবার সিরিয়াস হয়ে গেলো। সিরিয়াস ভঙ্গিতে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলো আজই পিকনিক হবে এবং সন্ধ্যার পরে। তাই এখনি শুরু হলো ইনভাইটেশন প্রসেস।

____________

বাসার ছাঁদ আর ছাঁদ নেই। ওটাকে রাদ অনেক পূর্বেই একটা ছোট খাটো গার্ডেনে পরিনত করেছে। তাই রান্না-বান্নার সকল কার্যক্রম নীচে থেকেই হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। বিকেলের মধ্যে ইনভাইট করা যাত্রীদের আগমন সম্পন্ন হয়েছে। ইলহাম দুই ফ্রেন্ড উপমা আর আলভিও এসেছে। আর তাদের সঙ্গে এসেছে উপমার বর রিহানও। তবে সবার মাঝে একজন স্পেশাল গেস্টও এসেছে। আর সে হলো মিমি। মিমির সাথে এ’কদিনে অন্তুর বেশ ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ তৈরী হয়ে গেছে। আর যেহেতু সব ফ্রেন্ডদেরই ইনভাইট করা হয়েছে তাই অন্তু মিমিকেও স্পেশালি ইনভাইটেশন পাঠালো। এবং সেই সাথে জানালো আজ তাকে একজন স্পেশাল মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে।

বিকেল হতেই বাড়ি ভরে গেলো জনগনে। হঠাৎ এতো মানুষের সমাগম দেখে ইলহাম বিহ্বলিত হয়ে বসে আছে। কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে, এরা কারা কিংবা ওর ফ্রেন্ডরা হঠাৎ এলো কেন সবটাই ওর মস্তিষ্ক অতিক্রম করে বেরিয়ে যাচ্ছে। তবে অবশেষে যখন জানতে পারলো আজ বাসায় পিকনিক হচ্ছে, তখন তার আনন্দ আর দেখে কে। আপাতত, রাদের সামনে মুখ ভার করে বসে আছে, রেডি হয়ে ছাদে যাওয়ার তীব্র বাসনা নিয়ে।

—-” কি হয়েছে সুইটহার্ট? মুখটা এমন করে রেখেছো কেন বলবে তো? কিছু হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে না তো আবার?”

—-” না!”(মুখ ভার করে)

—-” তবে? কি হলো আমার পাখিটার? এই পাখি? মিষ্টিপাখি? কি হয়েছে বলো আমাকে?”

—-” কিছু হয়নি।”

রাদ সরু চোখে তাকালো ইলহামের পানে। অতঃপর বরাবরের ন্যায় হাঁটু মুড়ে বসলো ওর সামনে। ওর হাত দুটো হাতের মুঠোয় আগলে নিয়ে বলল,

—-” রাদ কি কিছু করেছে? তার প্রিয়দর্শিনীকে হার্ট করেছে? সুইটহার্ট কি হার্ট হয়েছে?”

—-” বললাম তো না!”

—-” তাহলে কি? কি হয়েছে! না বললে আমি কি করে বুঝবো বলো?”

—-” কি হবে! হয়েছে আমার কপাল। আমার কপাল পু-ড়ে গেছে। ফুটো হয়ে গেছে। এই দেখুন!”

ইলহাম কপালে আঙ্গুল ঘষে দেখালো। রাদ বেশ সিরিয়াস হয়ে দেখছে ওর ফুটো কপাল। যা দেখে ইলহাম ধুম করে একটা মা/র বসিয়ে দিলো রাদের কাঁধে। মা/র খেয়ে রাদের সিরিয়াস ভঙ্গিমা ছুটে গেলো। না পেরে হেসে উঠলো সে। নিজেকে আর আঁটকে রাখতে পারলোনা ইলহামও। হাসলো রাদের সঙ্গে। অতঃপর পূণরায় পূর্বের ভাবমূর্তি। রাদ এবার অসহায় চোখে তাকালো। বলল,

—-” আবার কি হলো?”

—-” আমার একটাও ভালো জামা নেই! যা আছে সব জিরো ফিগার। এখন আপনিই বলুন আমি কি এখনোও সেই জিরো ফিগার আছি? আমি তো এখন মাম্মা ফিগারে আপডেট হয়েছি। আমার একটাও ভালো জামা নেই। এএএ এএএএ!”

এই বলেই কান্না জুড়লো ইলহাম। রাদ ওর কথা ও কান্ডে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। মুহুর্তেই কোনো কথা খুঁজে পেলোনা ইলহাম কে বলার জন্য। আসলেই তো। কথা তো ঠিক।

—-” আ..আ আচ্ছা! আচ্ছা বাবা কাঁদতে হবেনা। তাকাও আমার দিকে, শুনো? আহা শুনোনা?”

—-” কি?”(একচোখে তাকিয়ে)

—-” তোমার কি ড্রেস চাই বলো? আমি এক্ষনি সব আনিয়ে দিচ্ছি। কত ড্রেস লাগবে। তুমি শুধু বলো?

ইলহাম গালে হাত দিয়ে ভাবছে। চোখ মুখ কুঁচকে, সরু করেছে ভেবেই যাচ্ছে। কিন্তু ভেবে আর কূলকিনারা হচ্ছে না। তাই রাদ ওর ভাবনা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল,

—-” আপাতত একটা ড্রেসে চলবে? নাকি অনেকগুলো চাই?”

—-“আপাতত একটা ড্রেসই কাফি হ্যায়।”

—-” ওকে। তাহলে তুমি চোখটা বন্ধ করো। আমি এক্ষনি তোমার একটা ড্রেস হাজির করছি।”

—-” সত্যি?”

—-” হু। চোখ বন্ধ.. বন্ধ! একদম খুলবেনা।”

—-” হুম।”

ইলহাম চোখ বুঁজে মাথা কাত করলো। অর্থাৎ সে একদমই চোখ খুলবেনা। রাদ মুচকি হেসে ওর গাল টেনে উঠে গেলো। ড্রয়ার খুলে একটা শপিং ব্যাগ বের করে এনে আবার বসলো ওর সামনে। শপিং ব্যাগটা ওর সামনে তুলে ধরে বলল,

—-” নাও, এবার চোখ খুলো!”

ইলহাম ফট করে চোখ মেললো। চোখ মেলে তাকাতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো অদ্ভুত সুন্দর একটা শপিং ব্যাগ। ইলহামের মুখে হাসির ঝিলিক খেলে গেলো। প্রসন্ন চোখ জোড়া বার কয়েক ঝাপটে আমোদিত গলায় বলল,

—-” নতুন ড্রেস?”

—-” ইয়েস! খুলে দেখো।”

ইলহাম ঝটপট ব্যাগ থেকে বের করে আনলো। লেভেন্ডার কালারের ভীষণ মিষ্টি একটা থ্রিপিছ। ইলহামের চোখ জোড়া ফের ঝলমলিয়ে উঠলো। আনন্দ যেন ঝেকে বসলো সমস্ত শরীরে। হুট করে জড়িয়ে ধরলো রাদকে। আহ্লাদে বিদিশা হয়ে রাদের গালে টাইট একটা চুমু খেয়ে তবেই ক্ষান্ত হলো। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় রাদ। মানে কোথা থেকে কি ঘটে গেলো বুঝে উঠতে পারলোনা সে।

—-” আপনি কত্ত ভালো একটা বর। আই লাভ ইউ!”

রাদ পূণরায় শকড। প্রেগন্যান্সিতে মেয়েদের মুড সুয়িং কি মা/রাত্মক হয়, বুঝতে আর বাকি রইলোনা রাদের। হাসলো সে মনেমনে। অতঃপর ইলহামের কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে বলল,

—-” ভালোবাসি। এসো, রেডি হয়ে নাও। তারপর ছাদে যাবে। সবাই আমার কুইনকে দেখবে বলে অপেক্ষা করে আছে তো।”

—-” আমি কুইন? ইশশ! কি যে বলেন না!”

—-” অবশ্যই তুমি কুইন। আমার কুইন।”

—-” ধ্যাৎ।”

#চলবে#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব________৩৯.

ছাদে সবাই ইলহামের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে এসে হাজির হলো সকলের কাঙ্ক্ষিত মানুষটি। লেভেন্ডার কালারটা হয়তো সবার উপরই ভীষণ মানায়। কিন্তু সেই দিক থেকে বিবেচনা করা দেখা গেলো, এই রঙে ইলহামকে চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাগছে। ওর হাঁটু অব্দি চুল গুলো ইতিমধ্যে যেন আরও কয়েকগুন লম্বা হয়ে গেছে। হাঁটু থেকে বেশ খানিকটা নীচে নেমেছে। চুলগুলো খোলাই রেখেছে আজ। মুখে প্রসাধনীর কোনোরূপ ব্যবহার হয়নি। কেবল একটা পাথরের টিপ আর সামান্য লিপবাম। দু’হাতে স্বর্ণের দুটো মোটা বালা। মান্নাত বেগমের দেওয়া উপহার। গলায় ছোট্ট একটা লকেট। নাকে ছোট্ট পাথরের নসপিন। কানেও পাথরের একজোড়া দুল। নিজ হাতে ওকে সাজিয়ে দিয়েছে রাদ। ওর এই সামান্য সাজই মন কাঁড়লো সকলের।

—-” ওমা! দেখি দেখি.. কি সুন্দর লাগছেরে তোকে!”

উপমার আমোদিত গলাটা ভেসে এলো সামনে থেকে। ইলহামের দৃষ্টি সেদিক পানেই ছিলো। মুখে চমৎকার হাসি লেপ্টে আছে। উপমা এসে ওকে আলিঙ্গন করলো কোমল ভাবে। অতঃপর ওকে আপাদমস্তক দেখতে দেখতে বলল,

—-” মাশা-আল্লাহ। ভীষণ মিষ্টি লাগছে তোকে। কারোর নজর না লাগে!”

সবার মুগ্ধ দৃষ্টি ইলহামকে ঘিরে। সবাই ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। প্রশংসা করতে আজ কেউ আলসেমি করেনি। সবার হাস্যোজ্জ্বল মুখ যখন ইলহামের প্রশংসায় মুখরিত, তখন আড়াল থেকে কেউ একজন তপ্ত দীর্ঘশ্বাসের জোয়ার ঠেলে দিতে ব্যস্ত। অন্তু চায়না ওর এই খারাপ লাগা গুলোকে কোনো ভাবে প্রশ্রয় দিতে। তবুও কোনো এক অদ্ভুত কারনে, নিজের খারাপ লাগা গুলোকে চাইলেও আবদ্ধ রাখতে পারেনা।

—-” কি হয়েছে আপনার? মুখটা কেমন শুঁকনো লাগছে! সব ঠিকাছে তো?”

একটু সামনের দাঁড়িয়ে ছিলো মিমি। সেও দূর থেকে ঐ মায়াবী মেয়েটাকে দেখছিলো। হঠাৎ অন্তুর দিকে চোখ পড়তেই চিন্তা ভর করলো। সবার মুখে হাসি, কেবল উনার মুখেই মলিনতার ছাপ! কেন?

—-” ইয়াহ ইয়াহ! আই এম ফাইন।”

—-” উঁহু! দেখে তো মনে হচ্ছে না। সত্যি করে বলুন তো?”

—-” সত্যি বলতে কিছু নেই মিমি। আপনার সঙ্গে একজনের পরিচয় করাবো বলে ছিলাম। সে এসে গেছে। আসুন।”

এটুকু বলেই সামনে এগিয়ে গেলো অন্তু। মিমিকে আর দ্বিতীয় বাক্য উচ্চারণ করার ফুরসত দিলোনা। মিমি আর কথা বাড়ালোনা। সেও পিছু পিছু গেলো অন্তুর।

রাদ ইলহামকে বসালো একটা চেয়ারে। অতঃপর কিছু মুখে তোলার আগে অল্প কিছু জুস খেতে দিলো। সেটাই ও খাচ্ছে আপাতত বাচ্চাদের মতো করে।

—-” ভাই, তোর চয়েজ আছে বলতে হবে। ভীষণ মানিয়েছে ইলহামকে এই ড্রেসটাতে।”

অন্তুর কথায় মিষ্টি হাসলো ইলহাম। রাদ ইলহামের তৃপ্তিময় হাসিতে প্রশান্তির হাসি দিলো। মাথা নেড়ে বলল,

—-” টেনশনে ছিলাম বল? ওর পছন্দ হয় কিনা!”

—-” তুই চুজ করবি আর তোর বউয়ের পছন্দ হবেনা। ইম্পসিবল। বাই দ্য ওয়ে, দেখ কাকে নিয়ে এসেছি।”

এই বলে অন্তু মিমির দিকে ইশারা করে দেখতে বলল রাদকে। রাদ মিমিকে ইতিপূর্বে দেখেনি। আজই প্রথম। ঘাড়টা হাল্কা বাঁকা করে একজন সুন্দরী নারীকে অন্তুর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাদ চোখ সরু করে তাকালো। অতঃপর নাকি সুরে বলল,

—-” এতো কিউট মেয়েটাকে পটালি কেমন করে?”

রাদের এহেম প্রশ্নে বিষম খেলো অন্তু। পটালো মানে? রাদ কি ভাবছে? ও কি ওর নতুন গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে রাদের পরিচয় করাতে এনেছে? ও গড!

মিমি কঠিন আকারে লজ্জা পেলো। লজ্জায় ওর মাথাটা মিশে গেলো জমিনের দিকে। অন্তু নিজেকে কোনোমতে সামলাতে সামলাতে বলল,

—-” ক..কি যা-তা বলছিস! পটাবো কেন? উনি মিমি।

রাদ বুঝলো, ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। তাই লজ্জিত হেসে পরিস্থিতি সামাল দিতে উঠে দাঁড়ালো। মাথা চুলকে মিমির উদ্দেশ্যে বলল,

—-” মিস মিমি, প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড। আমরা ভাই, বন্ধুরা অলওয়েজ এমন করেই মজা করতে থাকি। সরি!”

—-” ইট’স ওকে। আমি মাইন্ড করিনি।”

মিমি লজ্জায় বারকয়েক নজর এদিক সেদিক করে কোনো মতে বলল কথাটা। রাদ স্মিত হেসে বলল,

—-” থ্যাংক্স। আপনি দাঁড়িয়ে কেন, বসুন প্লিজ।”

—-” ইট’স ওকে। আপনারা সবাই তো দাঁড়িয়েই আছেন।”

মিমির শেষোক্ত উক্তিকে ইলহাম বলে উঠলো,

—-” কই সবাই দাঁড়িয়ে আছে! আমিতো তো বসেই আছি।”

ইলহামের কথায় মিমি মুচকি হাসলো। বলল,

—-” আচ্ছা, তবে আমিও বসছি!”

এই বলে ইলহামের পাশের চেয়ারটায় বসলো মিমি। অন্তু ওদের দু’জনের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,

—-” বাহ্, পরিচয় করানোর পূর্বেই যে খাতির হয়ে গেলো। আচ্ছা, তবুও পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি, ইলহাম উনি হলো মিমি। আমার ফ্রেন্ড বলতে পারো। আর মিমি, ও হলো ইলহাম। আব.. সেদিন স্যারের অফিসে বসে যার কথা বলেছিলাম! এই সেই ইলহাম।”

অন্তুর কথায় মিমি কয়েক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো। ও যেন নিজের কানে ভুল শুনেছে! কে ও? ইলহাম।

—-” স্যারের অফিসে আমাকে নিয়ে কি বলেছিলে অন্তু? তোমরা কি কলিগ?” ইলহাম কৌতুহল হয়ে প্রশ্ন করলো।

এর জবাবে রাদ বলল,

—-” হ্যাঁ, কলিগই বলা যায়। কি বলিস ভাই?”

—-” হ্যাঁ, কলিগই আমরা।” বলল অন্তু।

—-” বাহ। তো আমার ব্যাপারে কি কথা বলেছিলে তোমার বন্ধুকে?”

ইলহাম কথাটা বলতে বলতে মিমির দিকে তাকালো। মিমি এখনও কেমন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। যেন বাহ্যিক কোনো আলাপচারিতা ঢুকছে না ওর মাথায়। ও আছে এক ঘোরের দুনিয়ায়।

—-” আব.. তেমন কিছু নয়। আমাদের চ্যাম্প অর প্রিন্সেস আসার টপিক নিয়েই কথা হচ্ছিলো। তখন বলেছিলাম ইনফিউচারে পসিবল হলে ওর সঙ্গে তোমার পরিচয় করিয়ে দিবো। দ্যাটস ইট।”

—-” হ্যাঁ, তা খুব ভালোই করেছো। আচ্ছা ভাই, বলো কি খাবে? ওদিকে রান্না তো শেষ পর্যায়ে বোধহয়। তার আগে একটু নাস্তা করা যাক?”

এই বলে ইলহাম উঠতে নিলে রাদ ওকে ধরে আঁটকায়। পূণরায় জায়গায় বসিয়ে দিয়ে ধমকের সুরে বলে,

—-” এই তুমি কোথায় উঠছো? বসো এখানে। নিজের জুসটা শেষ করো। আমি দেখছি।”

—-” সরি!”

রাদের রাগ দেখে ইলহাম দাঁত বের করে হেসে সরি বলল। সে ভুলেই গিয়েছিল তার শরীরের অবস্থা ঠিক নেই। যেটাই তার সবচেয়ে বড় সমস্যা।

—-” মিমি, আপনি কি নিবেন? কফি অর জুস?”

মিমি এখনও ঘোরে তলিয়ে আছে। এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেখেই যাচ্ছে ইলহামকে। এতক্ষণ ইলহাম সেটা খেয়াল না করলেও এবার করলো। অন্তুর ডাকে মিমির কোনো হেলদোল না দেখে পাশ ফিরে তাকালো ইলহাম। দু’জনের চোখাচোখি হলো তখন। ইলহাম স্মিত হেসে মিমির কাঁধে হাত রেখে নরম গলায় ডাকলো। মিমি কাঁধে কারোর স্পর্শ পেতে খানিক চমকালো। ওর ঘোর কাটলো। তাই এতক্ষণ বুঝতে না পারা কথাগুলো পূণরায় জিজ্ঞেস করতে অন্তু আচমকা ওর হাত ধরে উঠিয়ে আনলো। ইলহাম এবং রাদের উদ্দেশ্যে বলল,

—-” ভাই, দু’মিনিট, আসছি।”

বলেই মিমিকে নিয়ে চলে গেলো অন্তু। রাদ স্বাভাবিক থাকলেও ইলহাম হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে রইলো ওদের যাওয়ার পানে। যা দেখে রাদ চোখ জোড়া সরু করে বসলো ইলহামের পাশ ঘেঁষে। হঠাৎ কেউ পাশ ঘেঁষে বসায় ইলহামের ঘোর কাটলো। পাশ ফিরে রাদকে দেখে আর কিছু বলল না। রাদ হয়তো বুঝতে পারছে ইলহামের মনের কৌতুহল। তাই নিজেই বলে উঠলো,

—-” কি, দেখে কি বুঝলে?”

—-” হুম? কি বুঝবো?”

—-” মিমিকে তোমার ভালো লাগেনি?” অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো রাদ।

ইলহাম রাদের প্রশ্ন শুনে দিগুন অবাক হলো। বলল,

—-” ভালো লাগবে মানে?”

—-” ইশশ বোকা মেয়ে! মিমিকে অন্তু লাইক করে। দেখে বুঝলে না? আর কখনোও শুনেছো অন্তু নিজের কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড কিংবা কলিগকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছে? নিশ্চয়ই ঘটনা সিরিয়াস।”

রাদ কথাগুলো সম্পূর্ণ বানিয়ে বলছে। হয়তো মিমিকে নিয়ে ইলহামের কৌতূহল কমানোর জন্য। নাহলে, এই মুহুর্তে ইলহাম যদি সবটা জেনে যায় তবে সেটা পূণরায় ওর মেন্টাল স্ট্রেস বাড়িয়ে তুলবে। আর যেটাই ডক্টর বারবার বারন করে গেছেন। সবটা সামনে এলে ইলহামকে রাদ নিজেই সবটা বুঝিয়ে বলবে। এই মুহুর্তে আধো সত্যি নিয়ে ঘাটাঘাটি করা ইলহামের জন্য মৃ//ত্যু সমতূল্য হতে পারে।

মিমিকে নিয়ে একদম সিঁড়িতে এসে দাঁড়ালো অন্তু। মিমি ওর কান্ড দেখে বোবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কেবল।

—-” আর ইউ ওকে?” চিন্তান্বিত মনে প্রশ্ন করলো অন্তু।

—-” এ্যাঁ?” বোকা গলায় বলে উঠলো মিমি।

অন্তু ওর হাতটা এখনোও ধরে আছে। কিছু না বলে হঠাৎ খানিকটা কাছে টেনে আনলো সে মিমিকে। মিমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো অন্তুর কান্ডে। ওর স্তব্ধ নেত্রজুগল আঁটকে গেলো অন্তুর ফর্সা মসৃণ মুখবিবরে।

—-” মিমি, কি হয়েছে আপনার?”

—-” ক..কি হবে!”

—-” বি নর্মাল। তাকান আমার দিকে? আপনার কি খারাপ লাগছে? অসুস্থ বোধ করছেন?”

—-” ন..না! আমি ঠিকাছি।”

—-” পানি খাবেন?”

—-” হ..হু!”

অন্তু এবার ওকে ছেড়ে দ্রুত চলে গেলো পানি আনতে। মিমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো যেন। ওর হার্টবিট এখনও ধরাক ধরাক করে বাজছে। অন্তু হঠাৎ করে ওকে এভাবে নিজের দিকে টেনে নিবে, কল্পনাতীত ছিলো ওর।

এক গ্লাস পানি এনে মিমির হাতে ধরিয়ে দিলো অন্তু। মিমি পানিটা খেয়ে শেষ করতে বলে ওঠে অন্তু,

—-” আপনাকে একটা কথা বলা হয়নি!”

—-” কি কথা?”

—-” ইলহামের পুরনো কোনো কথা মনে নেই। ওর বাবাকে কিন্তু ও চিনেনা। ইভেন মায়ের মুখটাও ওর মনে আছে কিনা জানিনা আমরা। তাই আপনি হুট করে ওর সামনে এই মুহুর্তে কুহেলিকা ম্যামের টপিক নিয়ে কিছু বলবেন না প্লিজ। আমরা এই সমস্ত রহস্য ফাঁস করে তবেই ওকে সবটা জানাবো। এর পূর্বে নয়। কেমন?”

মিমির কাছে এবার পরিষ্কার হলো অন্তুর ওকে এমন করে টেনে আনার ব্যাপারটা। মিমি ভরসা দিলো অন্তুকে। বলল,

—-” ঠিকাছে। আমি এই টপিকে এক্ষনি ইলহামকে কিছু বলবনা।”

—-” থ্যাংক্স মিমি।”

—-” একটা প্রশ্ন করবো আপনাকে?”

—-” হ্যাঁ, করুন না?”

—-” আপনি কি ইলাহামকে ভালোবাসেন, অন্তু?”

অন্তু চমকে উঠলো। শূন্যদৃষ্টিতে তাকালো মিমির পানে। আচ্ছা, ও কি এতোই বোকা? নিজের অনুভূতি গুলো কি একদমই লুকাতে পারেনা লোকের সামনে? কি বিভ্রান্তি মুলক ঘটনা!

—-” ন..না তো! ইলহাম আমার খুব ভালো বন্ধু।”

—-” সত্যিই কি তাই?”

—-” হ্যাঁ। কেন?”

—-” না না। এমনি। ছাদে যাবেন না?”

—-” হ্যাঁ যাবো। কাম।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here