#দুঃখগুলো_নির্বাসিত_হোক(০৭)
#সুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি(লেখনীতে)
__________________________
মালিহার মনে বিষণ্ণতা জায়গা করে নিয়েছে। অবশ্যই তা জাওয়াদের অদ্ভুত কর্মকাণ্ডে। কাল রাতে যখন নতুন মোবাইল ফোন সেট করা হলো তখন জাওয়াদ নিজেই আগ বাড়িয়ে বলল, “তোমার ফেসবুক একাউন্ট থেকে আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দাও। তারপর আমরা ম্যারিড স্টাটাশ দেয়!”
মালিহা জাওয়াদের এহেন প্রস্তাবে সানন্দে রাজি হয়ে যায়। তারপর তারা ফেসবুক ফ্রেন্ড হয়ে আইডি ম্যানশন করে ম্যারিড স্টটাশ দেয়। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। এশার নামাজ পড়তে স্বাভাবিক ভাবেই গিয়েছিল। কিন্তু ফিরলো অস্বাভাবিক ভাবে। মালিহা জাওয়াদের এমন অস্বাভাবিক আচারণের সাথে পরিচিত না।
বাড়িতে এসে সোজা ছাঁদে চলে গেল। তারপর এলো বেশ রাত করে। মালিহা র্নিঘুম স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিল। যখন রুমে ফিরলো শরীর থেকে সিগারেটের বা’জে গন্ধ ছড়াচ্ছিল। মালিহার বমি আসার উপক্রম। তারপর ওয়াশরুম থেকে কোনরকম ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে গিয়ে সেখানে কতক্ষণ ছিল মালিহার ঠিক জানা নেই। পুরোপুরি সময়টা মালিহাকে সে ইগনোর করে গিয়েছে। এতে মালিহার মনটাও বড্ড খারাপ হলো। বেলকনির দরজার কাছে গিয়ে মুখ বাড়িয়ে জাওয়াদকে উদ্দেশ্যে করে বলল, “ঘুমাবেন না? রাত অনেক হলো।”
“তুমি ঘুমাও। সময় হলে ঘুমাবো।”
জাওয়াদের কন্ঠে কি যেন ছিল। মালিহা আর দ্বিতীয় প্রশ্ন করার সাহস করলো না। সময় হলে জাওয়াদ নিজেই বলবে। মনকে এমন সান্ত্বনা দিয়ে সে ঘুমানোর উদ্দেশ্য বিছানায় গেল। মিনিট খানিক পরে গভীর নিদ্রায় তলিয়ে গেল। সারাদিন রোজা রেখে রাতে তারাবির নামাজ শেষ শরীর মন দুটোই চাই বিশ্রাম নিতে। তাই মালিহাও বিছানায় যাওয়া সাথে সাথেই ঘুমিয়ে গিয়েছে।
সম্পর্কে দুজনকে স্পেস দেওয়া প্রয়োজন। চেনা নতুবা অচেনা দুজন মানুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তার মানে এই না তাদের ব্যক্তিগত কোন বিষয় থাকতে পারে না। মানুষ ভেদে তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাদা মতামত থাকতেই পারে। তাই বলে এমন না কেউ কাউকে বুঝবে না। সম্পর্ক ঠিক রাখতে হলে অবশ্যই পার্টনার তার ব্যক্তিগত বিষয় নিজ থেকে না বলতে চাইলে জোর করা ঠিক হয় না। তাকে সময় দেওেয়া উচিত। সে যদি মনে করে বলার তবে নিজ থেকেই বলবে। এমনটাই ভাবে মালিহা।
সাহরীতে উঠবার সময় মালিহা নিজেকে আবিষ্কার করলো জাওয়াদের বু’কে। মুহূর্তেই মন একরাশ ভালোলাগার বাতাসে বয়ে গেল। মানুষটা যেমনই হোক দিনশেষে মালিহাকে নিজের বক্ষপিঞ্জরে ঠাই দিবে এটুকুই চাই মালিহা। তার অতশত আসা আকাঙ্খা নেই। শুধু স্বামীর ভালোবাসা পেলেই সে নিজেকে সর্বসুখি হিসাবে মেনে নিবে।
পরদিন মালিহার ননদীনি ও শাশুড়ি বড় ননাসের বাড়ি থেকে ঠিক দুপুরের আগে ফিরে এলো। রিপ্তির মেয়েও অনেকটা সুস্থ।
জাওয়াদ অফিস থেকে ফিরে মালিহার মুখোমুখি দুয়েক বার হলেও নিজ থেকে কোন কথা বলল না। মালিহা নিজেই আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “কেমন আছেন?”
জাওয়াদের রাশভারী কন্ঠস্বর। বলল, “ভালো।”
“রোজায় বেশি খারাপ লাগছে কি?”
“না। আমি ঠিক আছি।”
এবারও মালিহা পরবর্তী প্রশ্ন করার সাহস করে উঠতে পারলো না। ব্যস্ত ভঙ্গিতে কিচেনের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো।
আজ রিপ্তিও রান্নাবান্নার কাজ হাত লাগিয়েছে। বেশ সময় ধরে খেয়াল করছে মালিহার মুখখানা কেমন পাংসুটে বর্ণ ধারন করেছে। আগের মত মন খুলে কথাও বলছে না। প্রথমে ভাবলো থাক কিছু জিজ্ঞাসা করবে না। পরবর্তীতে ভাবলো জিজ্ঞাসা করে দেখি। মনের মধ্যে কেমন খচখচ করছে। আশেপাশে সর্তক দৃষ্টিতে অবলোকন করলো কেউ আছে কি না। নাহ্ সে আর মালিহা ছাড়া কিচেনে কেউ নেই। যদিও এ সময় কেউ থাকে না। স্বস্তির শ্বাস ফেলে মালিহাকে উদ্দেশ্য করে শুধালো, “কি হয়েছে মালিহা? মন খারাপ না রোজায় ধরেছে?”
“না ঠিক আছি ভাবি। কিছু হয়নি।”
“কিছু হয়নি বললে তো হবে না। বেশ বুঝতে পারছি কিছু হয়েছে। মনের মধ্যে কথা আটকে রেখো না মেয়ে। গুমরে মর’বে। আমাকে যদি বিশ্বস্ত বা বড় বোনের নজরে দেখো বলে ফেলো। নতুবা থাক। জোর করবো না।”
চিবুক গড়িয়ে নেত্রযুগল হতে ফোটায় ফোটায় পড়ছে। মুখখানা পানিতে ভিজে জবজবে হয়ে গেছে মালিহার। রিপ্তির বুক ধ্বক করে উঠলো। ব্যাগ্র কন্ঠে বলল, “কি হয়েছে মালিহা? বল আমাকে? জাওয়াদ কিছু বলেছে?”
মালিহা কাল রাত থেকে এ পর্যন্ত জাওয়াদের সব কর্মকাণ্ড খুলে বলল রিপ্তিকে। রিপ্তি বেশ মন দিয়ে শুনলো সব কথা। কপালে চিন্তার ভাজ ফুটে উঠেছে তার। চিন্তিত কন্ঠে মালিহাকে বলল, “কারো সাথে ঝামেলা হয়েছে জাওয়াদের?”
“সেসব কিছু বলেনি সে আমাকে। টোটালি ইগনোর করছে । আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতেও দ্বিধা লাগছে।”
“আচ্ছা। হয়েছে আর কাঁদতে হবে না। রান্নায় মনোযোগ দে। সব ঠিক ইনশাআল্লাহ।”
“জানিনা ঠিক হবে কিনা। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে আমি বাপের বাড়ি চলে যাব। সে কি হাতের পুতুল মনে করে? যেভাবে চালনা করবে সেভাবে চলবো। আগের অবহেলা তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভুলে ভেবেছি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কোথায় কি! সেই তো আগের গোমড়ামুখো জাওয়াদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি। সে কি মনে করে ইচ্ছে হলো দুদিন ভালো ব্যবহার করবে। আবার ইচ্ছা হলো দুরে ঠেলে দিবে। এসবের মানে কি ভাবি? সম্ভব হলে আমি কালকেই বাপের বাড়ি চলে যাব। এত রঙঢঙ দেখতে ইচ্ছে করে না। আমি সত্যি এবার ক্লান্ত এসব দেখতে দেখতে।”
মালিহার কথার পিঠে বলার মতো কিছুই পেল না রিপ্তি। কিইবা বলার থাকতে পারে তার? জাওয়াদ যা শুরু করেছে তাতে সহ্য করা আসলেই অসহনীয়। শুধু বলল, “ভরসা রাখ আল্লাহর ওপর।”
“সে ভরসাতেই বেঁ’চে আছি।”
কিচেনে পিনপতন নিরাবতা। দুজনেই রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কোন কথাবার্তা বলছে না। শাশুড়ি মা জার্নি করে এসে ক্লান্ত। তাই রুমে শুয়ে বসে বিশ্রাম করছে। ছোট্ট আলিয়াকে নিয়ে শশুর বাবা গিয়েছেন বাড়ির সামনে তার করা ছোট্ট বাগানটা পরিদর্শন করতে। জাকিয়া হয়তো রুমে। নতুবা ছাঁদে আছে। তার খেয়াল বাড়ির বউয়েরা কমই রাখে। পাছে কোন দোষ অতটুকু মেয়ের আবার চোখে পড়বে।
“আসতে পারি?”
বড় ভাবির পদচারনা জাওয়াদের রুমে পড়ে না খুব একটা। আজ হঠাৎ তার উপস্থিতিতে অবাক হলো জাওয়াদ। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো মালিহা রুমে নেই। তবে ভাবি কিজন্য এসেছেন তার কাছে? জাওয়াদের অপ্রস্তুত মুখভঙ্গি দেখে রিপ্তি বলল, “এমনি আসলাম। তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।”
“জি ভাবি বলেন?”
“কি শুরু করেছো তুমি?”
“মানে? বুঝলাম না কিছুই!”
“না বোঝার মত কিছু বলিনি। দুদিন দেখলাম তোমাদের মধ্যে সব ঠিকঠাক। এখন আবার কি হলো? মেয়েটার চোখমুখ শুকিয়ে গেছে। কি হয়েছে?”
“কিছু হয়নি ভাবি। রোজা তো তাই হয়তো ওরকম লাগছে। তাছাড়া ওর সমস্যা ওর থেকেই জেনে নিয়েন।”
“তুমি ওর স্বামী কেন জানবে না বউয়ের কখন কি হয়? শোন জাওয়াদ অনেক অবহেলা করেছো মেয়েটাকে আর করো না। আল্লাহ্ সইবে না। মেয়েটা তোমার থেকে একটু ভালোবাসা আর সময় চাই। এটুকু দিতে পারছো না। তোমাদের ভালো চাই। তাই বলছি ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নাও। আমি যায় তাহলে!”
“আচ্ছা। যান তবে। আমি দেখব বিষয়টা। এত চিন্তা করিয়েন না।”
“তাই হোক। একটু পরে টেবিলে এসো। ইফতার সময় হয়ে গিয়েছে।”
“আচ্ছা।”
রিপ্তি চলে গিয়েছে। জাওয়াদ আদোও কিছু বুঝলো কিনা কে জানে! সে র্নিলিপ্ত ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ বেসে থেকে কি যেন ভাবলো। তারপর ওজু করে টুপি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ইফতারের উদ্দেশ্য ডাইনিংয়ে।
জাওয়াদের মনে চলছে বিশার রহস্য। এ রহস্যের জ্বাল সে ছাড়া কেউ ছাড়াতে পারবে না। সবশেষে মালিহা জাওয়াদ সুখি হোক এটাই সবার কাম্য। তবে আদোও সেটা সফল হবে কিনা এ নিয়ে আছে হাজারো সন্দেহ।
ইনশাআল্লাহ চলবে…….
রিচেক দেওেয়া হয়নি।