দুঃখগুলো নির্বাসিত হোক পর্ব -০৬

#দুঃখগুলো_নির্বাসিত_হোক(০৬)
#সুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি(লেখনীতে)
___________________________

সাহরী খেয়ে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে ছিল মালিহা। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করে বিছানায় সে একা ঘুমিয়ে ছিল। জাওয়াদ নেই। মালিহার মনক্ষুন্ন হলো। কেন তাকে জানিয়ে যাওয়া হয়নি? অতঃপর রমাদানের প্রতিদিনকার রুটিন অনুযায়ী ফ্রেশ হয়ে ঘরের কাজে লেগে পড়লো।

শাশুড়ি আম্মা দুদিন পরে বাড়ি ফিরবেন। বাড়িতে আপাতত ছোট বড় মিলিয়ে পাঁচজন আছে। তারমধ‍্যে একদম বাচ্চা একজন। শাশুড়ি বাড়ি না থাকলে অনেকটা র্নিভয়ে চলাফেরা করে মালিহা।

দুপুরের কিছু পরে মালিহা কিচেনে চলে গিয়েছে ইফতার, রাতের খাবার আর সাহরীর রান্নার বন্দোবস্ত করতে। আজও তাকে একা রান্না করতে হবে। যদিও অন‍্যদিনের তুলনায় আজ একটু কম ইফতারের আয়োজন করা হবে। কিচেনের এক কোনায় প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে রিপ্তি বসে আছে। কোলে দু বছরের ছোট্ট আলিয়া। পুরোপুরি সুস্থ হয়নি সে। তাই তাকে রেখে কোন কাজকর্ম করতেও পারছে না রিপ্তি। সে নিয়ে অবশ‍্য মালিহার কোন অনুযোগ নেই।

রান্নাবান্নার ব‍্যস্ততার মাঝেই রিপ্তিকে উদ্দেশ্য করে মালিহা প্রশ্ন করলো, “ভাবি ইফতার আর সাহরীতে কি খাবেন?”

“ধুর বোকা মেয়ে। আমার কাছে জিজ্ঞাসা করছিস কেন? তোর যা ভালো লাগে সেটাই বানা। বসে বসে খাচ্ছি সেটাই বা কম সুযোগ নাকি?”

রিপ্তির উত্তরে মৃদু হাসলো মালিহা। বলল, “কি যে বলেন না ভাবি। বসে আর কোথায় আছেন? এতদিন তো আপনি করে খাইয়েছেন। এখন না হয় আমি করলাম। আল্লাহর কাছে চাওয়া বাবু খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাক।”

রিপ্তির নেত্রযুগল ছলছল করে উঠলো। ভাগ‍্য করে এমন দেবরের বউ পেয়েছে। এ বাড়িতে আসার পর থেকে মেয়েটা কখনও তার সাথে কোন কিছু নিয়ে রেষারেষি করেনি। অথচ আজকাল যুগের মেয়েরা বিয়ের দুদিন পার হতে না হতেই জামাই নিয়ে আলাদা সংসার পাততে চাই। পরিবারের অন‍্য সদ‍স‍্যদের সাথে বনিবনার চেষ্টা টুকুও করে না। মনে মনে শুকরিয়া আদায় করলো সে। আল্লাহ্ মালিহা নামের সরল মেয়েটাকে অনেক অনেক ভালো রাখুন।

“ফি আমানিল্লাহ্। বলছি মালিহা তোরাও বাচ্চা নিয়ে ফেলা। দেরি করার দরকার নেই।”

রিপ্তির মুখ থেকে এমন বাক‍্য শোনার জন্য যেন মোটেও প্রস্তুত ছিল না মালিহা। বিস্ময় নিয়ে বলল, “কি বলছেন ভাবি?”

“অবাক হওয়ার কিছু নেই তো। তোদের মধ্যে এখন সুন্দর সম্পর্ক বিরাজমান। বাবু নিয়ে ফেল। সন্তান আল্লাহর রহমত। দেখবি সে আসলে তোদের বন্ডিং আরও মজবুত হবে ইনশাআল্লাহ।”

“ভাবি সম্পর্ক মজবুত হতে বাচ্চা হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যে বউকে ভালোবাসে বাচ্চা হলেও ভালোবাসে না হলেও বাসে। তবে সন্তান একটা সম্পর্কে পূর্ণতা দান করে। এটা সঠিক।”

“তাও ঠিক। তবে আজকাল মেয়েদের নানাবিধ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। দেশে বন্ধাত্বের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তাই বেশিরভাগ মেয়েরা বিয়ের পর পরই বাবু নিয়ে ফেলছে। ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। এইতো মাস দুয়েক আগে আমার এক বান্ধবীর বাবু না হওয়াই ডিবোর্স হয়ে গেছে। বাপের বাড়িতে মেয়েটা কি কষ্টে দিন পার হচ্ছে।”

মালিহার বুক ধ্বক করে উঠলো। মানুষ এমন কেন হয়? একটা বাচ্চার জন্য এত বছরের সম্পর্ক ভেঙে দেয়। বাচ্চা থাকাই কি সব? বিষণ্ণ গলাই বলল, “এদের কি বুক কাঁ’পে না ভাবি? সন্তানকে ইস‍্যু করে সম্পর্ক ভেঙে দেয়। সন্তান হওয়া না হওয়া যেখানে আল্লাহর হাত সেখানে আমরা মানুষরা কি করতে পারি বলেন? কোন মানুষ কি কখনও চাইবে নিঃসন্তান হয়ে পৃথিবীর বুক বাঁচতে। এ যেন আরেক হৃদয়বিদারক দহন।”

“বোন, আমরা বিষয়টা যত সমজ ভাবে ভাবছি ওরা সেভাবে ভাবে না। তাইতো সম্পর্ক ভেঙে ফেলতে পারে। তবুও তোরা দেরি করিস না।”

“আল্লাহ আমাদের জন্য যা করেন সেটাই উত্তম হিসাবে নিলে হয়তো কত সম্পর্ক ভালো থাকতো। নিঃসন্তান দম্পতি’রাও মন খুলে বাঁচতে পারতো। কিন্তু আমরা মানুষ রা কি করি! যখন নিজেদের সব চেষ্টা বৃথা হয়ে যায় তখনই আল্লাহর সাহায্য কামনা করি। আদোও এটা কি ঠিক? সর্বপ্রথম সবকিছুতেই আল্লাহর ওপর ভরসা করা আমার সর্বপ্রাধান কাজ। কিন্তু আমরা করি ঠিক তার উল্টোটা।”

“ঠিক বলেছিস। আল্লাহর ওপর ভরসা করে চললে হয়তো কতশত মানুষ দীর্ঘশ্বাস না ফেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারতো।”

“হুম।”
___________________

তিনটার কিছু পরে জাওয়াদের অফিস ছুটি হয়। আজ আসরের পরে বাড়িতে এসেছে। সঙ্গে কিছু শপিং ব‍্যাগ। আসরের নামাজ পড়তে মালিহা রুমে গিয়েছিল। তখনই জাওয়াদের প্রবেশ। কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে জাওয়াদকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত একটানা পর্যবেক্ষণ করলো মালিহা। বোঝার চেষ্টা করছে মানুষটাকে। অফিস থেকে ক্লান্ত শরীর নিয়ে কি জন্য মার্কেটে যায় সে?

মালিহার অদ্ভুত দৃষ্টিপাত দেখে ঠোঁট কামরে হেসে ওঠে জাওয়াদ। ভ্রু উচিয়ে বলল, “কি ব‍্যপার ম‍্যাডাম? এমন অশ্লীল ভঙ্গিতে কেন এই নিষ্পাপ যুবকের দিকে তাকিয়ে আছেন? রোজা রমজান মাস তা কি ভুলে গিয়েছেন?”

বিরক্ত হলো মালিহা। এই লোকটা সবকিছুতে রোমান্স খুজে পাই। লু’চু ছেলে। বিরক্তিকর কন্ঠে জবাবে বলল, “ওগুলো আপনার মানা উচিত। আমি ঠিক আছি। যদি নিষ্পাপ আপনি হন তবে নিষ্পাপ কথাটার অবমাননা করা হবে। বুঝলেন? দেখছিলাম হাতে কি নিয়ে এসেছেন। রোজা রেখে এতো এনার্জি কোথায় পান শপিংয়ে যান?”

“কেন তুমি আছো না এনার্জি দেওয়ার জন্য? দরকার ছিল তাই গিয়েছিলাম।”

জাওয়াদ শপিং ব‍্যাগটা মালিহার হাতে দিয়ে বলল, “খুলে দেখো!”

মালিহা সময় ব‍্যায় না করে ব‍্যাগটি খুললো। আবিষ্কার করলো নতুন একটা স্মার্টফোন। প্রশ্নবিদ্ধ নয়নে তাকালো জাওয়াদের দিকে।

স্ত্রীর প্রশ্নবিদ্ধ নয়ন দেখে জাওয়াদ বলল, “তোমার জন্য। পছন্দ হয়নি?”

“পছন্দ হবে না কেন। হয়েছে। কিন্তু ফোনের দরকার ছিল না তো। আমি একটা ব‍্যবহার করছিলাম তো।”

“করছিলে তো ভাঙাচোরা একটা। এটা দেওয়াতে সমস্যা হয়েছে কি?”

“না। সমস্যা নেই।”

“আচ্ছা আমি তাহলে ফ্রেশ হতে যাচ্ছি। ইফতারের পরে সেট করে নিও না পারলে আমাকে দিও। আর শোনো! তুমি নামক পুরো মানুষটাই এই জাওয়াদের। তাহলে ফোন কেন আমার শশুর বাড়ির ইউজ করবে?”

“আমার আব্বু বুঝি আমাকে দারাজ থেকে ডাউনলোড করে এনেছিল?”

“না তা হবে কেন। তবে এখন তো তুমি আমার। নয় কি?”

মালিহা প্রতিত্তোর না করেই কিচেনের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়লো। জাওয়াদ মালিহার এড়িয়ে যাওয়ায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেও ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে।

কে জানে আর কতদিন এই সুন্দর রমনীর মন পেতে অপেক্ষা করতে হবে তাকে। এজন্যই বলে হারামের সল্প সুখ দীর্ঘস্থায়ী সুখকে দুঃখে পরিনত করতে যথেষ্ট। হালাল সর্বদা সুন্দর এবং সুখি।

ইনশাআল্লাহ চলবে….

দুঃখিত দেরিতে দেওয়ার জন্য। গঠনমূলক মন্তব্য আসা করছি। জাযাকাল্লাহ্ খাইরন।
আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here