~ বিয়ে ঠিক হওয়া আর বিয়ে হওয়া এক নয় আব্বু। বিয়ের আগে উনি আমার কাছে পরপুরুষ, নন-মাহরম। তাই হয় আকদ টা জলদি করে ফেলো নয়তো উনার এ বাড়িতে আসা বন্ধ!
নিজের বিয়ের কথা নিজে বলতে খানিক লজ্জা লাগলেও মনে মনে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে তাহুর। পুরো দশদিনের প্ল্যানিংয়ে আজ বলতে সক্ষম হয়েছে। তাহুর বাবা তারেক ইসলাম মেয়ের কথায় চিন্তায় পড়ে গেলেন। একেতো মেয়ের বয়স কম, তারউপর এত তাড়াতাড়ি মেয়েকে কাছ ছাড়া করতে চান না তিনি। মেয়ের কথাও আবার ফেলনা নয়। মেয়ে তার নিজেকে নন-মাহরম থেকে লুকিয়েই রাখে, হঠাৎ করে ছেলেটা চলে আসলে বিব্রত হয়ে পড়ে সে। মুখে কিছু না বললেও মন থেকে যেন সায় পাচ্ছেন। তাহু আবার বললো,
~ আব্বু, খালি আকদ হবে। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরই নাহয় শশুড়বাড়ি যাবো। তেমন কেউ জানবে না, নিকটস্থ আত্মীয় ছাড়া!
তাহুর কথা শেষ হতেই পাশের ঘর থেকে তাহুর মা মিসেস বিথী গর্জে বলে উঠলেন,
~ তোমার লজ্জা করছে না বাবা কে এসব বলতে? এত বড় মেয়ে, এখন তো একটু শরম রাখো!
~ কি আশ্চর্য আম্মু! লজ্জার কি বললাম আমি? সময়ের উপযোগী যা করণীয় তাই করছি!
মিসেস বিথী আর কথা বাড়ালেন না। এই মেয়ে লাগামহীন, দেখা যাবে নিজেই লজ্জা পেয়ে যাবেন। তাহু খোশমেজাজে নিজের ঘরে চললো। কাজ হয়ে গেছে, এবার রিলেক্স মুডে বিয়ে নিয়ে ভাববে। তাহু চলে যেতেই তারেক ইসলাম নিজের স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
~ কি করবো বিথী? বড় মেয়ের বিয়ে হলো না, আগেই ছোট মেয়ের বিয়ে দিলে খারাপ দেখায় না?
~ খারাপ দেখালেই কি? বড় মেয়ে পড়াশোনা করছে, করুক। ছোট করে আকদ করে রাখেন। বিয়ের বয়স ও হয়নি, কাউকে জানানোর দরকার নেই!
তারেক ইসলাম আর কিছু বললেন না, চিন্তিত মুখ নিয়ে শুয়ে পড়লেন। দরজার আড়াল থেকে সবই শুনলো তাহু। এই মুহূর্তে তার খুশিতে মরে যেতে ইচ্ছে করছে! এবার ঠিক জায়গায় খবর টা পৌঁছে দিতে পারলেই হয়ে যায়! নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে সে। ফোন লাগায় পরিচিত এক নম্বরে,
~ আসসালামু আলাইকুম!
~ ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হঠাৎ ফোন দিলেন?
~ আব্বুকে জানিয়ে দিয়েছি, রাজি! আপনার কাজ হলো বাবা কে নিয়ে কালকেই আসা। ডেট পিছিয়ে গেলেই আপনার খবর আছে!
~ আপনার কি একটুও লজ্জা করছে না?
~ লজ্জা করবে কেন? আমি কি চুরি করেছি? নাকি কোনো আকাম করেছি যে লজ্জায় মিনমিন করবো? সাফ সাফ কথা বললেই আপনাদের যত সমস্যা। আপনার সামনে যেতে আমার গাঁ গিনগিন করে, কারণ আমি নন-মাহরমের সামনে যাই না। বিয়ের আগে আপনি নন-মাহরম নন?
তাহুর কথায় ভড়কে যায় তাযিন। সে তো মজা করছিলো। ঝটপট বলে উঠে,
~ আরে রাগছেন কেন? আমি তো মজা করছিলাম। হুটহাট কারণ ছাড়া সিরিয়াস হয়ে যাওয়া কোন ধরনের রোগ আপনার?
~ জন্মগত রোগ, আমার আব্বুও এমন সিরিয়াস হয়ে যায়। এখন রাখছি, তাড়াতাড়ি চলে আসবেন!
ফোন কেটে দিয়েই হেসে উঠে তাহু। ব্যাটাকে ভয় দেখিয়ে মজা পেয়েছে সে! নিজের ঘরটা এমনিই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে তাহু, আজ নতুন করে গোছাতে ইচ্ছে করছে। কি আর করার, লাফিয়ে লাফিয়ে ঘর গোছাতে লাগলো! খুশির বহিঃপ্রকাশ করতে না পারলে যা হয়!
…
সময় টা শেষ রাত। সূর্য উঠতে অনেক দেরী। মিসেস বিথী ঘুম থেকে উঠলেন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের জন্য। তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগা। তাহাজ্জুদ নামাজ বা রাতের নামাজ হচ্ছে একটি নফল ইবাদত, ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নত ও নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফযীলত সবচেয়ে বেশী। শেষ রাতে আল্লাহ’র দরবারে হাজিরা দিতে কার্পণ্য করেন না মিসেস বিথী। এমনকি মেয়েকেও এই ব্যাপারে হেলা করার সুযোগ দেন নি কখনো। পাশে চোখ যেতেই তাহুকে এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে হতাশ হলেন তিনি। এই মেয়ে নাকি বিয়ে করে সংসারী হবে! পরপর কয়েকবার ডাকার পরেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে হাত ধরে বসিয়ে দিলেন ঘুমন্ত তাহুকে। আস্তে আস্তে চোখ খুলে মায়ের রাগী মুখশ্রী দেখে এক ছুটে ঘুম কোথায় গিয়ে পালালো টের পেল না তাহু। এইসব বিষয়ে তার মা ভীষণ সিরিয়াস সে জানে, দুটো থাপ্পড় মারতেও গড়িমসি করবেন না। ওযু করে মা-মেয়ে নামায আদায় করে ঘন্টা খানিক কোরআন তিলাওয়াত করলেন। ফযরের আযান দিতে আরো কিছুটা সময় বাকি, মিসেস বিথী মেয়েকে পাশে বসালেন কথা বলার উদ্দেশ্যে। তাহুও ঘুম ঘুম চোখে মায়ের দিক তাকিয়ে রইলো। হুট করে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে মুখ গুঁজলো মায়ের পেটে! মায়ের বুকের থেকে পেটে মুখ গুঁজলে শান্তি লাগে তাহুর। এই উদরেই তো সে কয়েকটা মাস ছিলো, কতই না কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে! মিসেস বিথী কড়া কন্ঠে বললেন,
~ ঘুমোবে না একদম, ফযর নামাজ আদায় করে তারপর ঘুমোবে।
তাহু চুপ করেই রইলো। মিসেস বিথী আবার বললেন,
~ তোমাকে কিছু কথা বলবো, মন দিয়ে শুনবে!
~ মন দিয়ে কেমন করে শুনে আম্মু? আমি তো জানি কান দিয়ে শুনতে হয়!
রাগ হলেও দেখালেন না মিসেস বিথী। নরম স্বরে বললেন,
~ বিয়ের আগের জীবন আর বিয়ের পরের জীবন আলাদা হয়। তুমি এখনো ছোট, বাইরের দুনিয়া তেমন চিনতে পারো নি। এখন থেকে ছেলেমানুষী টা কমাও। শাশুড়ি তোমার যতই আগে থেকে পরিচিত হোক, ভালোবাসুক; তার তোমার প্রতি আলাদা এক এক্সপেক্টেশন থাকবে। তোমাকে সেভাবেই চলাফেরা করতে হবে। মেয়েরা বিয়ের পর নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেয়, চঞ্চল মেয়েটাও নিজের স্বভাবে পরিবর্তন আনে। কারণ কি জানো? আগে সে মেয়ে ছিলো, বিয়ের পর সে বউ হয়েছে! পার্থক্য শুধু একটা সম্পর্কের অথচ এর পরিধি কত বিশাল বুঝতে পেরেছো?
~ কথাগুলো এখনের জন্য নয়। আরো কয়েকবছর পরের কথা এগুলো। আমি এখনি শশুড়বাড়ি যাচ্ছি না তাই এসব মানার কোনো প্রয়োজন নাই আম্মু।ততদিন আমার মনেও থাকবে না, তাই বছর কয়েক পরে দেখা করো!
মেয়ের হেঁয়ালি তে চোখ মুখ কুঁচকে নিলেন মিসেস বিথী। ধাক্কা দিয়ে কোল থেকে সরিয়ে দিলেন। তাহু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চুপ রইলো। মুয়াজ্জিন নামাযের আহ্ববান করছেন, আযান হচ্ছে। কুরআন ও হাদিসে ছোট-বড় অনেক আমল রয়েছে যেগুলো আমাদের জান্নাতে যাওয়ার পথকে আরও সুগম করে। কিন্তু আমরা সব আমলকে গুরুত্ব দিই না। বিশেষ করে ছোট ছোট আমলগুলো এড়িয়ে যাই। এর মধ্যে আযানের জবাব দেওয়া অন্যতম। আমলটি খুব ছোট এবং পালন করাও সহজ হলেও আমরা অধিকাংশ মানুষ এটি করি না। অধিকাংশ মানুষ হয়তো এর ফজিলত সম্পর্কেও অবগত নয়। এ আমলটি খুবই তাৎপর্যময় ও ফজিলতপূর্ণ। নামাজ মুসলমানের জন্য ফরয করা হলেও আযানের জবাব দেওয়া উচিত তবে বাধ্যতামূলক নয়।এটি না করলে গুনাহ হবে না বরং এটি করলে সওয়াব পাওয়া যাবে।
মহানবী (সা.) বলেছেন,
“মানুষ যদি জানতো আযান দেওয়ার ভেতরে কী মর্যাদা রয়েছে, মুয়াজ্জিনের জন্য কী মর্যাদা রয়েছে, তাহলে লটারি করে মুয়াজ্জিন নিযুক্ত করতো বিনা পয়সায়।” (বুখারী শরীফ)।
এ হাদিস দ্বারা সুস্পষ্ট যে, আযান দিয়ে মুয়াজ্জিন যেমন সওয়াবের অধিকারী হন তেমনি যে ব্যক্তি আযানের জবাব দেবে সেও অনেক সওয়াব পাবে। মুয়াজ্জিন যা যা বলবে তাকে অনুকরণ করলেই হবে। শুধু ‘হাই য়ালাস সালাহ, হাই য়ালাস ফালাহ’ বললে এর জবাবে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়তে হবে। এরপরে আযানের দোয়া আর দুরুদ শরীফ পড়তে পারলে আরও ভালো হয়।
মিসেস বিথী বিড়বিড় করে আযানের জবাব দেওয়ার সাথে তাহুকেও চোখ রাঙালেন। চোখ দিয়েই বুঝিয়ে দিলেন, ‘আযানের জবাব দিতেও হেলা করছো’!
তাহুও চোখ বন্ধ করে মুয়াজ্জিন কে অনুসরণ করে ফরজ নামায আদায় করে নিলো। আর এক দন্ডও অপেক্ষা করলো না সে, ঝটপট শুয়েই চোখ বন্ধ করে নিলো। যেন এই সময়টার জন্যই সে অপেক্ষা করছিলো। মিসেস বিথী মেয়ের কাজে এবারও হতাশ হলেন, মোনাজাত টাও ভালোভাবে করেনি। উপর ওয়ালার কাছে মেয়ের আরো সৎ বুদ্ধির দোয়া করলেন, পরিবার, আত্মীয় স্বজন, দেশ সকলের জন্য দোয়া করে নিজেও নামাজ শেষে ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিলেন। আজ আর হাঁটতে ইচ্ছে করছে না! শরীর টা ভালো ঠেকছে না, মন ভালো থাকলে তো শরীর ভালো থাকবে! মেয়ের জন্য অন্তর পুড়ছে!
…
~ কই গো তামুর মা, এদিকে এসো।
স্বামীর ডাকে ঘর থেকে দৌড়ে বের হলেন মিসেস বিথী। হাত ভর্তি বাজার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তারেক ইসলাম। মিসেস বিথী যেন এক নিমিষেই বুঝে ফেললো এত বাজারের কারণ। হাঁক ছেড়ে তাহুকে ডাকলেন, কাজ হলো না। সে তো অন্য দুনিয়ায় ব্যস্ত। হাতে ফোন থাকলে অন্যদিকে খেয়াল থাকে? তারেক ইসলাম নিজেই হাতে হাতে সাহায্য করলেন স্ত্রীকে। কাজ যখন প্রায় অর্ধেক হয়ে এসেছে তখন তাহু এসে এত কাজ দেখে বললো,
~ আমাকে ডাক দিবে না আম্মু? আব্বুকে খাটাচ্ছো কেন?
মিসেস বিথী রেগে কিছু বলবে তার আগেই তারেক ইসলাম মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
~ তোমাকে ডাক দেওয়া হয়েছিল আম্মা। এখন কাজে সাহায্য করো তো, তোমার মামা’রা প্রায় এসে পড়েছে।
তাহুও আর কথা বাড়ালো না, পাংশুটে মুখ নিয়ে কাজ করে গেল। নিজের বিয়ের কাজ নাকি নিজে করছে? এই কথা কাউকে বলতে পারবে সে? কেউ বিশ্বাস করবে? কিছুক্ষণ কাজ করেই তাহুর মনে হচ্ছে আর কোনো কাজ হাতে নিলেই সে অজ্ঞান হয়ে যাবে। বললো,
~ আপু, দাদু ওরা কখন আসবে আব্বু? আমার বিয়ে আর ওরা আসবে না?
~ কাছাকাছি চলে এসেছে আম্মা।
তারেক ইসলামের কথায় হিহি করে হাসলো তাহু। বললো,
~ তাহলে বাকি কাজ ওরা এসেই করবে, নিজের বিয়ের কাজ কেউ নিজে করে? আমার এখন সেজে বসে থাকার কথা!
কথাটা বলতে দেরী, তাহুর ঘরে ছুটা দেরী হয় নি। কাজ দেখলেই পালাই পালাই স্বভাবের মেয়েটা নাকি সংসারী হবে। মিসেস বিথীর যেন চিন্তারা ঘিরে ধরলো, ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন তো? কিছুক্ষণ পরেই উপস্থিত হলো তামান্না, হোস্টেল থেকে পড়ছে। ব্যাগ রেখেই আগে সে ছুটলো ছোট বোনের কাছে। তাহু তখন আবার ফোনে ডুব দিয়েছে। বিছানায় বসেই বললো,
~ বিয়ের কণে দেখছি রিলেক্স মুডে। বলছিলাম না আমার আগে তোর বিয়েটাই দিবো। মিললো তো!
~ সেটা তুমি দিচ্ছো না, বরং নিজ ইচ্ছায় আমিই করছি!
~ তোর লজ্জা করছে না?
~ লজ্জা করার কথা হলেও আমার একটুও লজ্জা করছে না, বর আসলে হয়তো করবে, তখন ছবি তুলবে লজ্জামাখা মুখে আমাকে কেমন লাগবে! লাইক নায়িকা, নায়িকা!
বোনের সাথে কথাই না পেরে তামু চলে গেল। তাহু নিঃশব্দে হাসলো। সত্যি সত্যিই তার না লজ্জা লাগছে, না খারাপ লাগছে। বরং অন্যান্য দিনের মতোই লাগছে। ফুস করে শ্বাস ফেলে তাহু আবার ফোনে মন দিলো!
অন্যান্য দিন থেকে আলাদা তাহুর তখন মনে হলো যখন কাছের মেহমানে বাড়ি ভর্তি হলো। এ তাকে ডাকছে, সে অন্যকে ডাকছে, কতরকম আওয়াজ ভেসে আসছে বাইরে দেখে। নিজের ঘরে বসে বসে সেসবই শুনছিলো। বরযাত্রী নাকি কয়েককদম দূরে অবস্থান করছে, এই পা রাখলো বলে। বোনের কথামতো ভালো একটা থ্রিপিস পড়ো বোরকায় নিজেকে আবৃত করে নিলো তাহু। গরমে এমনিই ঘেমে একাকার অবস্থা, তারউপর বোরকা। হাঁসফাঁস করার কথা থাকলেও তাহুকে সেরকম দেখাচ্ছিলো না, বরং স্বস্তিতে বসে ছিলো। সময় পেরিয়ে গেল, সবার খাওয়ার পাঠ চুকিয়ে বসলো বিয়ে পড়ানোর জন্য। মিসেস বিথী মেয়ের পাশে এসে বসলেন। ধর্মীয় মতে বিয়েটা হয়ে গেল, কোনো রকম সময় ব্যয় না করে যখন আলহামদুলিল্লাহ তিন কবুল বলে দিলো তাহুর মনে কি একটা মিশ্র অনুভূতি হচ্ছিল তাহু বুঝতে পারছিল না। চুপচাপ বসে ছিল মায়ের কাঁধে মাথা চেপে। বিপত্তি ঘটলো কাবিনের সময়। তাহুর দাদু দাবি করে বসলো দেনমোহর ধার্য হবে ৬ লাখ টাকা! পাত্র পক্ষ মানতে নারাজ, নারাজ স্বয়ং তারেক ইসলাম। মায়ের উপর কথা বলে মা কে অসম্মান করবে না বলেই তাহুর ঘরে নিয়ে এলেন তিনি। বুঝালেন, কাজ হলো না। মধ্যে থেকে তাহু বলে উঠলো,
~ এই দাদু, বিয়ে তুমি করছো না আমি করছি? ৬ লাখ টাকা দিয়ে কি আমাকে বিক্রি করছো নাকি? তুমি চুপচাপ বসো, উনার সাধ্য মতো দেনমোহর দিবে, সংসার টিকিয়ে রাখা উপর ওয়ালার ইচ্ছে। সংসার ভাঙলে নিজের মেয়ে কে খাওয়ানোর সাধ্য আমার আব্বুর আছে, অন্যের ছেলের টাকাই কেন চলতে হবে? নাতনির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, গুণগুনিয়ে কান্না করো।
মিসেস বিথী এসে মেয়ের মুখ চেপে ধরলেন। এই মেয়েকে নিয়ে পারা যায় না।আজও এর মুখের উপর কথা বলতে হবে। তারেক ইসলাম মেয়ের কথাই হেসে বাইরে চলে গেলেন। ঠিক এই কারণেই মেয়েদুটো তার অধিক প্রিয়। স্বামী চলে যেতেই মিসেস বিথী কড়া কন্ঠে বললেন,
~ তোমার লজ্জা না থাকলেও আমার আছে। আল্লাহ’র দোহায় চুপ থাকো। মানুষ কি বলবে?
~ তোমার এই মানুষ কি বলবে কথার জন্যই তোমার শাশুড়ি নামক বুড়ি তোমার উপর হুকুমদারী করতে পারে, আমি থাকলে এমন টাইট দিতাম এই বুড়ি একদম বাঁশের মতো সোজা হয়ে যেত।
~ তাহু, মুখে লাগাম দাও। দাদু হয় তোমার। অযহত হুকুমদারী উনি করেন না। ভাতিজি বলেই একটু বেশী সমিহ করেন, তাই আবদারও আমার কাছে বেশীই করেন। এমন মনোভাব নিয়ে তো সংসার করতে পারবে না মা। বুঝতে শিখো!
~ আমার ওত বুঝে কাজ নেই, খিদে পেয়েছে আব্বুকে বলো খাইয়ে দিতে। আমার শাশুড়ি অনেক ভালো, আমি তাকে মাথায় করে রাখবো।
মিসেস বিথী চলে গেলেন হতাশ হয়ে। মেয়ে তার বুঝেও এমন করে। একটু যে বোঝদারদের মতো করবে তা না, এতে তারও একটু শান্তি লাগতো! সবসময় গা ছাড়া ভাব নিয়ে থাকে বলেই তার চিন্তা হয়। টুং টুং শব্দ করে ঘড়ির কাঁটা সরে যাচ্ছে, সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। বিয়ের সকল কাজ শেষ। গ্রামের বাড়িতে বিয়েটা হওয়ায় বড় গাড়ি আনতে পারেনি। কয়েকজন পুরুষ মটর সাইকেল করেই এসেছে। তাহুও বরের পেছনে বসে পড়ে। সরু রাস্তা হওয়ায় এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে, নাহলে এক ঘন্টার পথ তিনঘন্টাই যাওয়া লাগতো। সবার কাছে বিদায় নিয়ে গাড়ি ছুটতেই তাহু হাত নেড়ে বিদায় জানায়, যেন সে ঘুরতে যাচ্ছে। অথচ মিসেস বিথী যে কান্নায় ভেঙে পড়েছে সে টেরই পেল না। বরং তার শশুড় বাড়িতে যাওয়ার তাড়া বেশী! নতুন জীবনে পা রেখে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও তাহুর ভেতরে অনেক কিছু চলছে। সেই বুঝ হওয়ার পর থেকে মায়ের কাছে হালাল ভালোবাসা, স্বামী, সংসার ইত্যাদির কথা শুনতে শুনতে কখন যে মনকুঠিরে স্বামী নামক মানুষটার জন্য একটা সফট কর্নার তৈরি হয়েছে, আগে হয়তো উপলব্ধি করতে পারে নি তাহু। যতটা এখন করছে। মিসেস বিথী যখন স্বামীর মর্ম বুঝাতে বলতেন,
~ আমাদের প্রিয় নবীজী (সা:) মিরাজের রাত্রিতে উম্মতের নারীদেরকে , জাহান্নামের ভয়ানক আজাবে গ্রেফতার দেখতে পেয়েছিলেন। তারপর নবীজী (সাঃ) নারীদের শাস্তির বর্ণনা করলেন, তার মধ্যে একটি হলো,
“ঐ নারী যে তার স্বামীকে কটুকথার মাধ্যমে কষ্ট দেয় এবং স্বামীকে সম্মান করেনা , এরা স্বীয় জিহ্বায় ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে অর্থাৎ মুখ গহবর থেকে জিহ্বা টেনে বের করে সমস্ত শরীরের ওজন জিহ্বার উপর ছেড়ে দেয়া হবে”।
তাহু তো তখনি কেঁপে উঠতো। একজন স্বামীর গুরুত্ব তাহলে কতটা! মনে মনে শপথ করে নিলো, আর যাই হোক কখনো এমন কাজ করবে না যাতে স্বামী কষ্ট পায়!
চলবে….?
#হালাল_প্রেমের_গল্পকথন – সূচনা পর্ব
Tahrim Muntahana
(