#আবেগময়_সম্পর্ক
#১৭তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া
আশিক আর ঠিক থাকতে পারছিল না। বিশেষ করে পিহুর বিয়ের কথা শোনার পর থেকে সে নিজেকে সামলাতে পারছে না। অনেক ভেবে দীর্ঘ দিনের দূরত্ব ভাঙার পণ করল সে। আশিক নিজে থেকেই ফোন দিল পিহুকে। প্রথম দুই বার রিং হয়ে কে*টে যাওয়ার পর তৃতীয় বারের বেলায় ফোনটা রিসিভ করে পিহু।
পিহু ফোনটা রিসিভ করামাত্রই আশিক বলে, “তুমি কি সত্যিই বিয়ে করে নিচ্ছ পিহু?”
এতদিন পর আশিকের গলা শুনতে পেয়ে অদ্ভুত প্রশান্তি আসে পিহুর মনে। তবে তার মনে বাসা বাধা অভিমানের পাহাড়ের স্তুপ তৈরি হয়েছিল। তাই সে সহসাই বলে, “হ্যাঁ। আমি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিয়ে করবো না তো কি করব আমি বলো? আজীবন তোমার আশায় বসে থাকব। একটা কথা বলো তো, আমার সাথে এই ঘটনাটা ঘটার পর একবারও কি তুমি আমার সাথে যোগাযোগ করেছ? আমি শুধু আর শুধু মাত্র তোমার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঐ অন্তর চৌধুরীর সাথে নাটক করেছিলাম। নিজের সম্ভ্রম হারিয়েছি, ম*রতে ম*রতে বেঁচেছি। আর তুমি কিভাবে পারলে আমার সাথে এমন করতে?”
আশিক এর উত্তর এ কি বলবে সেটা বুঝতে পার ছিল না। সত্যিই তো, তার উচিৎ ছিল পিহুর সাথে একবার দেখা করা। অন্যদিকে আশিককে চুপ থাকতে দেখে পিহু বলে, “তুমি চুপ করে আছ কেন? আমার প্রশ্নের কোন উত্তর কি নেই তোমার কাছে?”
আশিক বলে, “আমি অপরাধবোধ থেকে তোমার সাথে যোগাযোগ রাখিনি। তোমার আপু, তোমার পরিবারের কেউ চায়নি আমি তোমার সাথে যোগাযোগ রাখি আর তাই…”
পিহু তাচ্ছিল্য মিশ্রিত গলায় বলে, “এসব অযুহাত দিয়ে লাভ নেই৷ তুমি চাইলেই আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারতে। কিন্তু তুমি সেটা করো নি। আর আমি কিনা এখনো তোমাকেই ভালোবাসি। চাইলেও ভুলতে পারছি না। যাইহোক, আমি তোমাকে আর একবার সুযোগ দিতে চাই। যদি তুমি আমাকে পেতে চাও, তাহলে আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসো, আর নাহয় পালিয়ে নিয়ে যাও আমাকে। যদি এমন না করো তাহলে আমাকে চির কালের মতো হারাতে হবে তোমায়। এখন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ তোমার হাতে। তুমিই ভেবে দেখ কি করবে।”
আশিককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পিহু কল রেখে দেয়। আশিক কিছু বলতে পারে না। সে শুধু হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে। এমন সময় মেহুল আশিকের রুমের দরজার বাইরে থেকে বলে, “ভেতরে আসতে পারি?”
আশিক বলে, “হ্যাঁ ভাবি এসো।”
মেহুল ভেতরে এসে বলে, “আমি দরজায় দাঁড়িয়ে তোমাদের সব কথা শুনেছি। তুমি পিহুর সাথেই তো ফোনে স্পিকার অন করে কথা বলছিলে। শোন একটা কথা আমি বলে দিতে চাই, পিহু তোমাকে যেসব সাজেশন দিল তার একটাও কাজ করবে না। আমার পরিবারে বিয়ের সম্মন্ধ নিয়ে গেলে তারা সরাসরি না করে দিবে। কারণ একে তো তোমার জন্য আজ আমার বোনের এই অবস্থা হয়েছে, তার উপর তুমি এখনো বেকার। কিসের ভরসায় আমার বোনকে তোমার হাতে তুলে দেবে আমার মা-বাবা? আর পালিয়ে বিয়ে করার কথা একদমই ভাববে না। তুমি নিজে তো চলো নিজের ভাইয়ের টাকায়। আমার বোনের খেয়াল রাখার কোন মুরোদ আছে কি তোমার? না নেই। তাই ভালো হবে যদি তুমি পিহুকে ভুলে যাও। আমার এটুকুই বলার ছিল।”
মেহুল আর না দাঁড়িয়ে থেকে নিজের রুমে চলে যায়। আশিক দাঁড়িয়ে মেহুলের বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে। মেহুলের কথাগুলোই তার ঠিক মনে হয়। তাই আশিক সিদ্ধান্ত নেয় সে ভুলে যাবার চেষ্টা করবে পিহুকে। এটাতেই হয়তো সবার ভালো হবে।
❤️
কয়েকটা দিন সুন্দরভাবেই অতিবাহিত হয়েছে। আজ পিহুর গায়ে হলুদ। গোটা বাড়িতে এই নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে৷ খুশি নেই শুধু পিহুর মনে। কারণ আশিক এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়নি। পিহু তো নিজেই আশিককে সাজেশন দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু আশিক কি করবে সেই ব্যাপারে কিছু স্পষ্ট করে বলে নি। বাড়িতে বিয়ের সম্মন্ধ নিয়েও আসে নি আর নাতো পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেছে। সবকিছু মিলিয়ে তাই হা হুতাশ করছে পিহু। এখন হয়তো আর কিছুই করার নেই৷ তাকে বিয়েটা করে নিতেই হবে।
পিহুর গায়ে হলুদ উপলক্ষে মেহুল, রায়ান, আমিনা আক্তারও এসেছে এই বাড়িতে। পিহুকে গায়ে হলুদের যায়গায় বসানো হয়েছে। একে একে সবাই তার গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে। সবার শেষে মেহুলও পিহুর গায়ে হলুদ মাখিয়ে দিল। তারপর পিহুকে বলল, “আমরা যা করছি তোর ভালোর জন্যই করছি পিহু। আশা করি তুই এই বিয়েতে অনেক সুখী হবি। অতীর আকড়ে বাঁচার চেষ্টা করিস না। আমি জানি, তুই এখনো আশিককেই ভালোবাসিস। কিন্তু বিশ্বাস কর বোন আশিক তোর জন্য ঠিক না। তোর জন্য আমরা যেই পাত্র দেখে রেখেছি তার সাথেই তুই সবথেকে বেশি সুখী হবি দেখে নিস।”
পিহু উত্তরে কিছু বলল না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে নিজের বোনের দিকে তাকিয়ে ছিল। গায়ে হলুদ শেষ হওয়ার পর পিহু মেহুলকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,“আমি জানি আপি তুই আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসিস। তাই আমার কথা অনেক বেশি চিন্তা করিস। আমিও তোকে ভালোবাসি। কিন্তু জানিস এই পৃথিবীতে সবথেকে ভালো আমি আশিককেই ভালোবাসি। তাই যদি আশিককে না পাই, তাহলে আমার বেঁচে থাকারও কোন মানে নেই।”
মেহুল প্রবল উৎকন্ঠা নিয়ে বলে ওঠে,“তুই কিন্তু একদম ভুলভাল কোন কিছু করার কথা ভাববি না।”
পিহু মলিন হেসে বলে, “ভয় নেই আমি আত্ন**হ**ত্যা করব না। এই বিয়েটাই আমার জন্য একটা আত্ন**হ**ত্যা।”
মেহুল বুঝতে পারল পিহু সত্যিই অনেক ভালোবাসে আশিককে। তবে মেহুল চায়না পিহুর সাথে আশিকের মিল হোক। তাই সে আর এই ব্যাপারটা ঘোলা করল না। শুধু বলল,“বিয়ের আগে শুধু এমন মনে হবে। বিয়ের পর দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। তখন নিজের স্বামীকে ছাড়া আর কাউকে ভালো লাগবে না।”
~~~~~~~~
আশিক অনেক ভেবে বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পিহুকে ভুলে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আজ সে পিহুকে নিয়ে পালিয়ে আসবে। এটাই এখন তার হাতে শেষ উপায়। আশিক অনেক ভেবে দেখল আগামীকাল পিহুর বিয়ে হবে। তাই আজকেই তাকে পিহুকে নিয়ে পালাতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ, আশিক সব বন্দোবস্ত করে রাখে। পিহুকেও ফোন করে বলে আজ পালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে।
সেদিন রাতেই আশিক ছুটে যায় পিহুকে নিয়ে পালিয়ে আসতে। পিহুও তৈরি ছিল পালিয়ে যাওয়ার জন্য। আশিক বাড়ির বাইরে এসে পিহুকে ফোন দিয়ে বলে, “আমি এসে গেছি। তুমি তাড়াতাড়ি বাইরে চলে আসো।”
পিহু ঘর থেকে বের হতে যাবে এমন সময় মেহুল এসে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। মেহুল বলে, “কি ভেবেছিলি তোদের পরিকল্পনা আমি কিছু জানব না। দেখ পিহু আমি যা করছি তোর ভালোর জন্যই করছি। তাই তুই আর এই নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি করিস না।”
পিহু বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে অনেক অনুরোধ করে বলতে থাকে, “প্লিজ আপি আমাকে যেতে দে। আশিককে ছাড়া আমি বাঁচবো না। আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।”
মেহুল পিহুর কোন কথা শোনে না। বরঞ্চ সে বাইরে এসে আশিককে বলে, “চলে যাও তুমি এখান থেকে। আমার বোন কোথাও যাবে না তোমার সাথে।”
আশিক এবার আর ফিরে যায়না। সে বলে , “তোমার কথা শুনে এতদিন আমি পিহুর থেকে দূরে ছিলাম কিন্তু আর নয়। এবার আমি পিহুকে আর ছেড়ে থাকতে চাই না।”
মেহুল আমিনা আক্তারকে ডেকে নিয়ে আসে। তাকে সব ঘটনা খুলে বললে আমিনা আক্তার আশিককে একটার পর একটা থা*প্পড় মা*রে। এবং বলেন, “তুই যদি আমাকে মা বলে মেনে থাকিস তাহলে এক্ষুনি চলে যা এখান থেকে। আর নাহলে আমার ম*রা মুখ দেখবি।”
নিজের মায়ের কথা রাখতে ভালোবাসাকে বিদায় জানিয়ে চলে যায় আশিক। অন্যদিকে পিহু বন্ধ ঘরে বসে কাঁদতে থাকে।
#চলবে#আবেগময়_সম্পর্ক
#১৮তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া
বউয়ের সাজে সেজে বসে আছে পিহু। বউ সাজলে নাকি সবাইকে অনেক বেশি সুন্দর লাগে। কিন্তু পিহুকে মোটেও ভালো লাগছে না। কারণ সে মন থেকে এই বিয়েটা কিছু তেই মেনে নিতে পারছিল না। অবশ্য না পারাটাই স্বাভাবিক। কারণ একজনকে ভালোবেসে আরেকজনকে বিয়ে করা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। তাছাড়া পিহুর এখন তার পরিবারের উপর বিশেষ করে মেহুলের উপর অনেক বেশি রাগ হচ্ছে। কারণ তাদের জন্যই এই বিয়েটা করতে হচ্ছে তাকে। পিহুর ইচ্ছে করছে নিজেকে শে-ষ করে দিতে, কিন্তু ভাগ্যের কাছে বড্ড অসহায় সে। ছোটবেলা থেকে জেনে এনেছে আত্ম**হ**ত্যা মহা পাপ। তাই তো আজ এমন পরিস্থিতিতে এসেও মুখ বুজে সব কিছু মানতে হচ্ছে। কিন্তু পিহু মনে মনে ঠিকই সৃষ্টিকর্তাকে বলছে,“ইয়া মাবুদ, আমার জন্য কি আত্ম**হ**ত্যা হালাল করে দেওয়া যায়না? আমি যে পারছি না।”
বুকে পাহাড়সম বোঝা নিয়ে বিয়ের আসরে এসে বসেছে পিহু। তার সামনেই পাত্রকে বসানো হয়েছে। পিহুর কাছে এই পুরো সময়টা নরক যন্ত্রণার মতো মনে হতে থাকে। সে বার বার সৃষ্টিকর্তা কে ডাকছিল আর বলছিল,“প্লিজ তুমি এমন কোন মিরাক্কেল করো, যেন আমাকে এই বিয়েটা না করতে হয়। আশিক ছাড়া অন্য কারো নামে কবুল বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এর থেকে যে আমার মৃত্যুও ভালো।”
সৃষ্টিকর্তা কি শুনবে পিহুর কথা? এসব কিছু নিয়েই ভাবছিল পিহু। এমন সময় কাজি তাকে কবুল বলতে বলে। পিহুর গলায় আটকে যায় কবুল শব্দটি। যেটা কিছুতেই বের হয়ে আসছিল না। ১০ মিনিট যাবৎ সে চুপ থাকে। তখন মেহুল এসে তার কানে কানে বলে,“বেশি কিছু না ভেবে বিয়েটা করে নে পিহু। এটাই তোর জন্য উত্তম হবে। আমি জানি তুই কি ভাবছিস। ভুলে যা আশিককে। দেখ আশিক যদি তোকে ভালোবাসত তাহলে ও আসত এখানে। কিন্তু ও এসেছে? কাল আমরা ওকে চলে যেতে বলেছি ব্যস ও চলেও গেছে। এটাকে কি ভালোবাসা বলে নাকি? ভালোবাসলে সব কিছু অগ্রাহ্য করে ভালোবাসতে হয়। কাউকে পরোয়া করলে চলে না। ভালোবাসার কাছে কিন্তু আশিক হেরে গেছে। এখন তুই ভেবে দেখ কি করবি।”
কথাগুলো বলে দূরে সরে আসে মেহুল। পিহু মেহুলের বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে। তার কাছে মনে হয় মেহুলের কথাগুলোই ঠিক। সত্যিই তো, আশিক যদি তাকে ভালোবাসত তাহলে এই বিয়ে আটকানোর চেষ্টা করত। কিন্তু এমন কিছু তো সে করল না। এসব ভেবেই পিহু সিদ্ধান্ত নেয় সে কবুল বলে দেবে।
মেহুল দূরে দাঁড়িয়ে ভাবে, “আমার ওষুধে মনে হয় কাজ করেছে। পিহুকে দেখে মনে হচ্ছে ও এবার কবুল বলে দেবে। আমার কাছে মনে হয়, এটাই ওর জন্য ঠিক। আশিকের মতো একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করার থেকে, এই ছেলেটাই পিহুর জন্য ভালো হবে। ছেলেটার সাথে পিহু ভালো থাকবে।”
পিহু কবুল বলতে যাবে এমন সময় পাত্রের বাবা এসে বলে, “থামাও এই বিয়ে। কোন বিয়ে হবে না। কায়সার তুই উঠে আয়। এমন মেয়েকে আমি ঘরের বউ করে তুলব না।”
ছেলের বাবার এমন কথায় বিয়ের আসরে সবাই কানাঘুষা শুরু করে দেয়। পিহুর বাবা তার সামনে এসে বলে, “আপনি এভাবে বলছেন কেন? আমাদের কি কোন ভুল হয়েছে?”
“কোন মুখে আপনারা এমন কথা বলছেন? কি ভেবেছেন সবটা লুকিয়ে বিয়ে দিয়ে দেবেন। আপনাদের মেয়ে যে ধ*র্ষি**তা সেই কথা কেন লুকিয়েছেন আমাদের থেকে? এভাবে লোক ঠকিয়ে বিয়ে দিতে চাইছেন। ভাগ্য ভালো আমি সঠিক সময়ে এসেছি। নাহলে কত বড় বিপদ হতো বলুন তো। কায়সার উঠে আয় তুই।”
কায়সার বিয়ের আসর থেকে উঠে আসে। এসে বলে, “আমি এমন ধ*র্ষি**তা মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না। আব্বু চলো এখান থেকে।”
পিহুর বাবা তাদের সামনে হাতজোড় করে বলে, “দয়া করে এমন করবেন না। আমার মেয়ের তো এখানে কোন দোষ নেই। ওকে রে**প করা হয়েছে এখানে ওর কি করার আছে?”
কায়সার পিহুর বাবাকে ধা**ক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে, “ওতো দোষ গুণ আমরা দেখতে চাইনা। আমার একটা ভালো মেয়েকে বউ হিসেবে চাই।”
এমন সময় আশিকের আগমন ঘটে। আশিক এসেই কায়সারকে এলোপাতাড়ি মা*রতে থাকে। আর বলে, “কি বলতে চাইছিস কি তুই? আমার পিহু ভালো মেয়ে নয়? তাহলে শুনে রাখ আমার পিহুর মতো পবিত্র মেয়ে আর হয়না। ও তো ধ*র্ষি**তা হয়েছে, অন্য নষ্টা মেয়েদের মতো বিয়ের আগেই কাউকে নিজের শরীর বিলিয়ে দেয়নি। আমাদের সমাজে কোন মেয়ে ধ*র্ষি**তা হলেই সবাই তার গায়ে কালি ছিটিয়ে দেয়, যেন ধ*র্ষি**তা হওয়া কত বড় অপরাধ, সেই মেয়েকে কত বাজে ঘটনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়,অথচ সে নিজেই ভিকটিম। অন্যদিকে যেই সব মেয়েরা বিয়ের আগে নিজের বয়ফ্রেন্ডকে নিজের শ**রীর ভোগ করতে দেয় তাদের কেউ কিছু বলে না। বলবে কিভাবে তারা তো নিজেদের প্রকাশই করে না। যাইহোক আমার পিহু কিন্তু কোন খারাপ মেয়ে নয়। আমি ওর সাথে রিলেশনে থাকলেও কোনদিন ওর সাথে ইন্টিমেট হইনি। আমাদের সম্পর্ক প্রেম অব্দি সীমিত ছিল। আর আমি এসব সামাজিক নিয়মের কেয়ার করি না। আমি শুধু পিহুকে ভালোবাসি,তাই পিহুর সাথে যাই ঘটে যাক না কেন আমি ওকে সব অবস্থায় মেনে নিতে রাজি আছি।”
আশিক এরপর পিহুর বাবা-মার সামনে এসে তাদের সামনে হাত জোর করে বলে, “আপনারা যদি অনুমতি দেন,তাহলে আমি পিহুকে বিয়ে করতে চাই।”
পিহুর বাবা-মা আর অমত করতে পারে না। এমনকি মেহুলও বলে, “তুমি দয়া করে আমার বোনকে বিয়ে করে নাও। আমি তোমাদের বিয়েটা যাতে নাহয় সেই জন্য অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলাম। আমি নিজের সব ভুল স্বীকার করে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। আসলে কি বলো তো,আমি ভেবেছিলাম কায়সারকে বিয়ে করলে আমার বোনটা ভালো থাকবে। কিন্তু আমার ভাবনায় ভুল ছিল। আমি ভুলে গেছিলাম ভালোবাসা ছাড়া যে কেউ সুখে থাকতে পারে না। ভালোবাসা হলো একটা আবেগ, আর এই আবেগ তৈরি দিয়ে সম্পর্ক সবথেকে দামী। যা ছাড়া জীবন মূল্যহীন।”
আশিক বলে, “আমি জানি তুমি নিজের বোনকে অনেক ভালোবাসো। তাকে নিয়ে চিন্তিত জন্যই এমন করেছ। তবে তোমার কাজটা ভুল ছিল। যাইহোক এখন যখন তুমি নিজের ভুল বুঝেছ সেটাই অনেক। এখন তোমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তো আর আমি পিহুকে বিয়ে করব না এমন বলতে পারব না। কারণ আমি পিহুকে ভালোবাসি।”
কাজি আবার নতুন করে আশিক ও পিহুর বিয়ের আয়োজন করতে থাকে। তিনি বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। এবার কবুল বলতে বলার সাথে সাথেই পিহু কবুল বলে দেয়।
বিয়েটা সম্পন্ন হয়ে যায়। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আশিক পিহুকে নিয়ে নিজের বাড়িতে আসে।
আমিনা আক্তার পিহুকে বরণ করে ঘরে তোলেন। মেহুল পিহুকে বলে, “আজ থেকে আমরা দুই বোন থেকে দুই জা হলাম। কত খুশির ব্যাপার তাই না?”
পিহু তাচ্ছিল্য করে বলে, “এই খুশিটাই তো তুই চাচ্ছিলি না।”
মেহুল আফসোস করে বলে, “তুই কি আমার উপর রাগ করে আছিস?”
“রাগ করাটা কি স্বাভাবিক নয়? তোর জন্য আজ যদি আমি আশিককে হারিয়ে ফেলতাম তাহলে কি হতো? সত্যি বলতে তোকে আমার জাস্ট অসহ্য লাগছে। তোর জন্য আমাকে কত কষ্ট পেতে হয়েছে তুই জানিসও না। তবে তুই আমার বোন। তাই তোর উপর রাগ করে থাকতে পারব না। আমি তোর সাথে মিলে মিশে থাকতে চাই। কিন্তু তার সাথে এটাও চাই, তুই ভালোবাসা হারানোর ব্যাথাটা একবার হলেও অনুভব কর।”
#চলবে