তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব -৪৫

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৪৫

সকালে ঘুম ভা*ঙা*র পর আবরার কে আর খুঁজে পেলো না আরশি। বুঝতে পারলো আবরার চলে গেছে।বি*র*ক্তিতে কপাল কুঁ*চ*কে আসলো তার। লোক টা একদিন ও যাওয়ার আগে তাকে ডেকে দেয় না। রা*গে গ*জ*গ*জ করতে করতে ফ্রেশ হতে চলে গেলো সে।

—–

নাস্তা করে মিসেস বন্যার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো আরশি। আজ থেকে ভার্সিটি তে যাবে সে। এমনিতেই অনেক বড় গ্যাপ গিয়েছে। যদিও প্রতিদিনের লেকচার আরশির বন্ধুরা পাঠিয়ে দিতো। অনেকদিন পর বন্ধুদের সাথে দেখা হবে। তাই ভীষণ ভীষণ খুশি আরশি।

ভার্সিটি তে পৌঁছে সোজা ক্যান্টিনে চলে গেলো আরশি। গিয়ে দেখলো তার বন্ধুরা আগে থেকেই বসে আছে। আরশি কে দেখে মোহনা চি*ৎ*কা*র করে বললো,

— দোস্তওওওওও তুই আইসোস!

মোহনার চি*ৎ*কা*রে কানে হাত দিলো সবাই। আবির মোহনার মাথায় চা*টি মে*রে বললো,

— চোখে কম দেখস নাকি তুই? ও আইছে বলেই তো দেখলি। আবার ষাঁড়ের মতো চি*ল্লা*য় জিজ্ঞাসা করিস কেন ও আইছে কিনা…

মাথায় চা*টি মা*রা*য় আর ষাঁড় বলায় রে*গে গেলো মোহনা। আবিরের চুল খা*ম*চে ধরে বললো,

— আমার গলা আমি চি*ল্লা*মু, তোর কি? তোর যদি এতোই স*ম*স্যা তো তুই যা গা এখান থিকা। কিন্তু আমারে মা*র*লি কেন? আজকে তোর সব চুল ছিঁ*ড়ে ফেলমু আবিরের বাচ্চা।

চুল জো*রে টা*ন দেয়ায় ব্য*থা*য় চোখ মুখ কুঁ*চ*কে আসলো আবিরের। সে ব্য*থা*তুর কণ্ঠে বললো,

— ছাড় আমার আম্মা। আর মা*র*মু না। আমি তো একটাই মা*র*লাম। আর তুই আমার কয়টা চুল ছিঁ*ড়*লি? ছাড় পে*ত্নী*র নানী দাদি।

পে*ত্নী*র নানী দাদি বলায় আরও শ*ক্ত করে আবিরের চুল টে*নে দিলো মোহনা। ক্যান্টিনের সবাই হা*ব*লার মতো তাকিয়ে আছে আবির আর মোহনার দিকে। আরশি অবস্থা বে*গ*তি*ক দেখে দ্রুত এগিয়ে এসে মোহনার হাত থেকে আবিরের চুল ছাড়ালো। মেকি রা*গ দেখিয়ে বললো,

— কত গুলো দিন পর আসলাম। কই একটু জড়িয়ে ধরবি, ভালো ম*ন্দ জিগাবি তা না তোরা দুইজন ঝ*গ*ড়া, মা*রা*মা*রি লাগাইছোস!

মুহূর্তেই আরশি কে ঝা*প্টে ধরলো মোহনা। আহ্লাদি কণ্ঠে বললো,

— সরি জানু। দেখ না সব এই আবিরের বাচ্চার জন্য হইছে। ওই আগে শুরু করছে। আমি তো ভালো একটা বাচ্চা তোরা তো সবাই জানিস ই!

মোহনার কথায় আবির বাদে সবাই ফিক করে হেসে দিলো। আরশি মোহনার গাল টে*নে বললো,

— সত্যিই বলসোস। তুই একটা বাচ্চা, ভালো বাচ্চা।

আরশির কথায় শব্দ করে হাসলো সবাই। যেনো কোনো জোক্স শুনলো তারা। আবির মুখ বাঁ*কা করে বললো,

— এই বুড়ি মাইয়া নাকি আবার বাচ্চা। শা*ক*চু*ন্নি কোথাকার।

আবার রে*গে গেলো মোহনা। দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,

— দেখলি এই আবিরের বাচ্চা আমাকে কি বললো? আমি নাকি শা*ক*চু*ন্নি? আবিরের বাচ্চা দেখে নিস তোর বউ হবে শা*ক*চু*ন্নি, মিলিয়ে নিস তুই।

আবির মাছি তা*ড়া*নোর ভঙ্গিমায় হাত নাড়িয়ে বললো,

— আরে যা যা। শ*কু*নের দোয়ায় গরু ম*রে না। হুহ।

মোহনা শ*য়*তা*নি হাসি দিয়ে বললো,

— তার মানে তুই স্বীকার করতেসোস তুই একটা গরু?

আবির ও ঠোঁট বা*কি*য়ে বললো,

— আমি গরু হলে তুই ও শ*কু*নি।

গাল ফু*লা*লো মোহনা। কথায় না পেরে চোখে পানি চলে আসতে চাইলো তার। আরশি পরিস্থিতি সামাল দিতে আদুরে কণ্ঠে মোহনা কে বললো,

— থাক ছুনা ক*ষ্ট পায় না, পিচ্চি বাবু টা। এই আবির একটা ব*দ, শ*য়*তা*ন। ওর কথা কানে নিবি না বুঝলি!

আরশি এভাবে বলায় মোহনা ও হেসে ফেললো। মাথা ঝাঁ*কি*য়ে ‘হ্যা’ বোঝালো। আরশির দৃষ্টি গেলো এবার মুন আর আহির দিকে। ওদের উদ্দেশ্য করে বললো,

— কিরে তোদের কি আলাদা করে নিমন্ত্রণ দিতে হবে। আয় এদিকে। কতদিন পর দেখা হলো।

মুন আর আহি যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো। দুইজনই চেয়ার ছেড়ে উঠে আসলো। ঝা*প্টে ধরলো আরশি কে। রাহুল আবির কে খোঁ*চা দিয়ে বললো,

— আয় দোস্ত বুকে আয়। আমরা কেন বাদ যামু। ওরা ঝা*প্টা*ঝা*প্টি করতে পারলে আমরাও পারি। তাই না ক?

বি*র*ক্ত হলো আবির। রাহুলের হাতে এক ঘা বসিয়ে দিয়ে বললো,

— দূরে যা শা*লা। নিজের বউ রে গিয়ে জড়ায় ধর। যাহঃ…

রাহুল মুখ টা অন্ধকার করে বললো,

— আজ একটা বউ নাই বইলা…

আরশিরা সবাই নিজেদের চেয়ার দ*খ*ল করে বসে পড়লো। আহি রাহুল কে জিজ্ঞাসা করলো,

— কিরে মুখ টা এমন বানায় রাখসোস কেন?

রাহুল ঠোঁট উ*ল্টে বললো,

— ভাল্লাগে না আর এই ব*দ*না মার্কা জীবন। তুই আর আরু শ*লা*র ঝা*ড়ু দুইটা তো মিঙ্গেল হয়ে গেলি। আমি যে কবে মিঙ্গেল হমু রে…

আরশি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,

— তোর তো আগে থেকে ঠিক। এতোই শখ হলে বিয়ে টা করে নে!

রাহুল গালে হাত ঠেকিয়ে বললো,

— সেই কপাল কি আর আছে? জ*ল্লা*দ মার্কা শ্বশুর আমার। বিয়ের প্রস্তাব পাঠাইলাম আব্বা আম্মা রে দিয়া। কিন্তু উনার এক কথা ছেলে মেয়ে দুইজন ই এখন ছোট। আরও বড় হোক। অনেক বুঝানোর পর আকদ টা করাতে রাজী হইছে কিন্তু সেটাও আমার অনার্স শেষ হওয়ার পর। আর আকদ হইলেও উনি মেয়ে দিবে না এখন। কি জ্বা*লা বল? বউ রে ঘরে তু*লতে তু*লতে তো আমি মনে হয় বুড়াই হইয়া যামু।

রাহুলের অবস্থা দেখে মুখ টি*পে হাসতে লাগলো সবাই। মোহনা দুঃ*খী দুঃ*খী কণ্ঠে বললো,

— তোর তো তাও বিয়া ঠিক। কিন্তু আমার? যাও একটা ক্রাশ ছিলো, সেই ক্রাশটারেও এই আরু, ঝা*ড়ু টা বিয়া কইরা নিলো। আর আমার আব্বা আম্মার ও মেয়ের বিয়া নিয়ে কোনোওওওও মাথা ব্য*থা নাই। সামনে পড়লেই বলবে “আম্মাজান ভালো মতো পড়াশোনা করেন। ফাইনালে যেনো রেজাল্ট ভালো হয়”। বলি আমার কি বিয়া সাদি হইবো না নাকি! সিঙ্গেল ই ম*র*তে হইবো মনে হয়!

মোহনার কথা শেষ হতেই শব্দ করে হেসে উঠলো সবাই। অনেকদিন পর সবাই এক জায়গায় হওয়ার ওদের বন্ধুমহলে যেনো প্রাণ ফিরে এসেছে। বেশ অনেক সময় নিয়ে গল্প করলো ওরা। ক্লাসের টাইম হয়ে এসেছে দেখে উঠে পড়লো সবাই। ক্লাসে যাওয়ার পথে হুট করে কল আসলো আরশির ফোনে। সে ফোন বের করে দেখলো রিফা কল দিচ্ছে। আরশি রিসিভ করে কথা বলতে বলতে আস্তে ধীরে যেতে লাগলো ক্লাসে। ততক্ষনে ওর ফ্রেন্ডরা বেশ দূরে চলে গেছে। আরশি কথা শেষে ফোন ব্যাগে ঢুকাচ্ছিলো এমন সময় কেউ একজন ধা*ক্কা দিলো তাকে। পড়তে পড়তে কোনোমতে নিজেকে সামলে নিলো আরশি। তবে র*ক্ষা হলো না তার ফোনটার। রা*গ হলো আরশির। সেই ব্যক্তি কে কিছু ক*ড়া কথা শোনানোর জন্য পেছন ফিরে চাইলো। কিন্তু কে ধা*ক্কা দিয়েছে তা ঠাহর করতে পারলো না। অনেকেই ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে ছি*টি*য়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরশি বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে খোঁজার চেষ্টা করলো। কিন্তু কে এমন করেছে বুঝতে পারলো না। ক্লাস শুরু হতে আর বেশি সময় নেই। তাই আরশি সেই ব্যক্তিকে খোজা বাদ দিয়ে নিজের ফোন টা তু*লে উঠে দাঁড়াবে এমন সময় তার চোখ আ*ট*কে গেলো একটা ছোট্ট কাগজের টুকরোর উপর। তার পায়ের কাছেই পড়ে আছে। কিছু একটা লেখাও আছে কাগজে যা কিছু টা দেখা যাচ্ছে। কেমন যেনো স*ন্দে*হ হলো আরশির। সে আলতো হাতে কাগজ টা তু*লে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আগে নিজের ফোন টা চেক করলো। কিন্তু ফোনের তেমন কিছু হয় নি। গ্লাসে এক কোণে সামান্য ফা*ট*ল ধরেছে। তাই দেখে স্ব*স্তি*র নিঃশ্বাস ফেললো সে। ফোন টা কে ব্যাগে রেখে কাগজের টুকরো টা খুললো আরশি। কিন্তু কাজের টুকরোর লেখা টা পড়ে আশ্চর্যান্বিত হলো সে। নিঃশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো তার। কারণ কাগজের টুকরো তে গুটিগুটি অক্ষরে লেখা আছে “আরশি রহমান, যদি নিজের বাবার খু*নী কে তা জানতে চাও তবে নিচের নাম্বারে যোগাযোগ করবে। আর অবশ্যই সেটা গো*প*নে। কারণ তোমার আপন জনেরাই তোমার শ*ত্রু। ওরা যদি কোনোভাবে জেনে যায় তবে তোমাকেও বাঁচতে দেবে না আর আমিও বি*প*দে পড়বো।” এতটুকু লেখা আছে কাগজে। আর নিচে একটা নাম্বার ও দেয়া আছে। আরশি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কাগজের দিকে। সে জানতো তার বাবা খু*ন হয়েছে। সেটা নরমাল কোনো এ*ক্সি*ডে*ন্ট ছিলো না। কিন্তু এতো বছর পর কে সেই খু*নী*র খবর দিতে চাচ্ছে? কেনোই বা দিতে চাচ্ছে? এতো বছরে কেনো দেয় নি? সত্যিই তাকে তার বাবার খু*নী*র সন্ধান দেয়া হবে? নাকি এটা কোনো ষ*ড়*য*ন্ত্র? আর কিছু ভাবতে পারছে না আরশি। তার মাথায় কেমন যেনো য*ন্ত্র*না শুরু হয়েছে, মাথা ঝি*ম*ঝি*ম করছে। ক্লাসের কথা যেনো মাথা থেকে বেরিয়েই গেছে। সে সবসময় ই চাইতো নিজের বাবার খু*নী কে খুঁজে বের করতে, তাকে শা*স্তি দিতে। কিন্তু সেটা তার মতো সাধারণ একটা মেয়ের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। আরশি কি করবে বুঝতে পারছে না। কেউ ঘাড়ে হাত রাখায় চ*ম*কে উঠলো আরশি। দ্রুত কাগজের টুকরো টা হাতের মুঠোর মধ্যে পুরে নিলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো আবির দাঁড়িয়ে আছে। আবির কপালে ভাঁ*জ ফেলে জিজ্ঞাসা করলো,

— কিরে কি হয়েছে? এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো আর এতো চ*ম*কা*লি ই বা কেনো? কোনো স*ম*স্যা? আমাকে বলতে পারিস।

আরশি হাসার চেষ্টা করে বললো,

— আরে না না, কোনো স*ম*স্যা নেই। ওই রিফা কল দিয়েছিলো। তাই কথা বলছিলাম ওর সাথে।

আবির কপালে হাত ঘ*ষে বললো,

— ওহঃ। আচ্ছা চল ক্লাসে যাই। ক্লাস তো শুরু হয়ে গেলো বলে।

আরশি মাথা ঝাঁ*কি*য়ে বললো,

— হ্যা, হ্যা চল…

ক্লাসে গিয়েও পড়ায় মন বসাতে পারলো না আরশি। সারাক্ষন তার মাথায় ওই লেখাগুলোই ঘুরেছে। আরশি কে যেটা সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে সেটা হলো, যে চিরকুট টা লিখেছে সে আরশি কে কারোর সাথে ব্যাপার টা শেয়ার করতে নিষেধ করেছে। এমন কি তার আপনজনেরা তার শ*ত্রু এমনটাও উল্লেখ করেছে। আরশি কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। একবার ভাবছে বাড়িতে গিয়েই আবরার কে সব টা জানাবে আবার ভাবছে জানানো ঠিক হবে কিনা!

চলবে,

(লেখার মধ্যে ভু*ল-ত্রু*টি থাকতে পারে। ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখার অ*নু*রো*ধ রইলো। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here