#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_১৪
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা
বিশ্ববিদ্যালয় রোড ধরে তাল মিলিয়ে হাঁটছে তারা। গায়ের সবার লাল সাদা জামা। ছেলেদের গায়ে লাল সাদা পাঞ্জাবি। মেয়েটা তিনটার গায়ে লাল সেলোয়ার-ওড়না আর সাদা কামিজ। তাতেও বাহারি রঙের কাজ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় সড়ক ধরে এগোতে এগোতে দু একটা হাসি ঠাট্টা চলছে তাদের মাঝে। দূরে কোথাও মাইকে বেজে চলেছে শহীদ দিবসের গান…
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারি।
আজকেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস। জাতির বীর সন্তানদের মনে প্রাণে স্মরণ করার দিন। ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে এবং তাদেরকে স্মরণ করতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবি চত্বরে বিশাল জনসভার আয়োজন হয়েছে।
যদিও ওদিকে এখনো পা মাড়ায়নি তারা কেউই। বাদামের ঠোঙায় দু আঙুল ঢুকিয়ে তারপর সেই বাদামের খোসা ছাড়িয়ে মুখে পুরে দিয়ে পায়ে পায়ে তাল মিলিয়ে প্রয়োজনীয় কিংবা উজবুক গল্পে মেতে উঠেছে তারা।
যেতে যেতে হঠাৎ মনে হলো পেছনে একজন নেই। সুজানা চমক গলায় বলল
এরেহ মেহুল কই গেল?
শান্তাও ঘাড় ঘুরালো। আহির নিখিল এদিকওদিক তাকাতেই জায়িন আঙুল দেখিয়ে বলল
ওই যে।
তার আঙুলের ইশারায় সবাই তাকাতেই দেখলো মেহুল থেমে থেমে পা ফেলে এগোচ্ছে বড় গাছতলাটির কাছে। তারা থাকাতেই আঙুলের কাছে ঠোঁট রেখে চুপ থাকতে বলল। আর এগোতে বললো।
গাছতলায় পেছনে ফিরে থাকা চেইক শার্ট পরিহিত ছেলেটাকে দেখে সবাই হেসে আবারও হাঁটা ধরলো। শান্তা বলল
এই মেয়ে ওর মাস্টার বাপের মাথা পাগল করেই ছাড়বে দেখছি।
আহির কথা কেড়ে নিয়ে উপরে বাদাম ছুঁড়ে মেরে গালের ভেতর নিতে নিতে বলল
সাইফ ওয়াহিদের মতো ছেলে তুই সাতবার জন্ম নিলেও পাবিনা। চুপ থাক একদম। ফটরফটর করবিনা।
শান্তা ভুরু উঁচিয়ে বলল
কিন্তু তোর মতো শয়তানকে তো কেউ জন্ম নিতে বলেনাই তারপরও যুগের পর যুগ তুই শয়তানের মানুষের পেছনে কাম কি?
আহির হা হয়ে চাইলো। এই মেয়ের সাথে কথায় পারা যায় না।
শান্তা সামনের চুল পেছনে ফিরিয়ে নাকের নিচে এক আঙুল টেনে ভাব দেখিয়ে বলল
হাহ হাহ আর লাগতে আসবে বাবুসোনা?
সুজানা, নিখিল আর জায়িন হো হো করে হেসে উঠে বলল
তোরা পারিস বটে।
….
গাছতলার কাছাকাছি যেতে না যেতেই পিঠে ব্যাগ চেপে দাঁড়ানো তরুণগুলো সাইফকে পেছনে ইশারা করতেই সাইফ ঘাড় ঘুরালো। মেহুল দূরে দাঁড়িয়েছে। শোল্ডার ব্যাগটা এপাশ ওপাশ দুলাতে দুলাতে অপ্রস্তুত হাসার চেষ্টা করলো সে। সাইফ ঘাড় ঘুরিয়ে নিল। ছেলেগুলোকে বলল
ওকে তোমরা এসো। প্রয়োজনে কল করো কেমন?
ওকে ভাইয়া। আসসালামু আলাইকুম।
সাইফ সালামের জবাব দিয়ে মাথা দুলিয়ে চলে এল মেহুলের কাছে। মেহুল লজ্জিত মুখে একবার তাকিয়ে আবারও মাথা নামিয়ে নিল।
সাইফ তাকে একপলক দেখে কপালের ঘাম মুছে বলল
প্রোগ্রামে এসেছ?
মেহুল ছোট্ট করে জবাব দিল।
হুমম। তুমি এখানে কখন এসেছ?
প্রায় সময় তো আসি।
মেহুল গালফুলিয়ে বলল
আমি দেখিনা।
সাইফ হেসে উঠলো। বলল
আমি দেখি।
মেহুল চোখ বড়বড় করে তাকালো।
সত্যি? কিন্তু ডাকো না কেন?
তোমার বন্ধুরা থাকে। সুজু থাকে। আমি ওর সামনে তোমাকে ডাকব?
তাতে কি? ওরা তো জানে। সুজু আমাকে বলেছে ইউ আর গুড ওয়ান ফর মি।
সাইফ মাথা দুলাতে দুলাতে বলল
আচ্ছা।
মেহুল তার সাথে মৃদুপায়ে হেঁটে যেতে যেতে বলল
আচ্ছা তুমি কতক্ষণ থাকবে এখানে? কত মিনিট কিংবা কত ঘন্টা?
সাইফ মাথা নাড়লো। ছোট্ট করে জবাব দিল।
আমি আছি।
মেহুল মিষ্টি হেসে মাথা নোয়ালো। বলল
আমিও আছি।
____________
শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে সম্মান প্রদর্শনের পরেই দেখা গেল সমাবেশে এক একটি আসন দখল করে বসেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ। তারমধ্যেই একটি আসন দখল করেছে নতুন প্রভাষক । মাথার উপর কড়া রোদের প্রকোপে বিধ্বস্ত প্রায় সকল ছাত্রছাত্রী। তাদের এমন অস্বস্তি আর ফিসফিসানি বেশ ভাবুক দৃষ্টিতে পরখ করছে অভিক। কপালের ভাঁজে জমে উঠা চকচকে ঘামের কণা মুছে নিল ভাঁজ করা টিস্যু দিয়ে।
সাদা অর্ধলিখিত পেপারটাতে কলম চালানোর ফাঁকে চোখ বুলিয়ে নিল ছাত্রছাত্রীদের সারি সারি আসনে। চোখের দৃষ্টি একটাসময় থামলো ঠিক মানুষীর কাছে গিয়ে। লক্ষ্যভেদ করতে পেরে সগর্বে মৃদু হাসলো তার চোখদুটো। ঠোঁটের নড়াচড়া অবিচল, অনঢ়। কিছুটা সময় পার হতেই পাশ থেকে প্রশ্ন করলো সহকর্মী।
ফারদিন সাহেব।
জ্বি।
কি দেখছেন?
দেখছি আগুন।
হেসে উঠলেন সহকর্মী। শুধালেন..
আগুনটা কিসের?
রোদের যা তেজ আগুন বললে বেশি হবে না।
আবারও হেসে উঠলেন নেওয়াজ আহমেদ। বললেন
আমি অন্য কিছু ভেবেছিলাম।
খুব একটা ভুল করেননি।
চোখ পাকিয়ে চাইলেন নেওয়াজ আহমেদ। বললেন
আরেহ আপনি কি ফারদিন সাহেব?
অভিক হেসে দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল
এক্ষুণি আসছি। তারপর হিসাব বুঝিয়ে দিচ্ছি।
বেশ জটিল মনে হচ্ছে।
অভিক হেসে হাঁটা ধরলো।
_________________
কাট পাহাড়ের রাস্তা আর ঝুপড়িগুলো জনপদের কোলাহল আর বেকার বন্ধুমহলের আড্ডায় জমে উঠেছে। মাথার উপর খাঁ খাঁ করা রোদ্দুরের তেজ কমেছে হালকা সাথে পশ্চিমে হালকা মেঘের হাতছানি । ঘেমে ভিজে উঠেছে সবাই। গরমে অসহ্য হয়ে উঠছে মানুষ।
শহীদ দিবসের অনুষ্ঠান উপলক্ষে গায়ে শাড়ি জড়িয়েছিল নিহাত আর দলবলের মেয়েরা। রিকশায় চড়ে ওয়াটারফলে যাবে। তাই জায়িনকে বলেই দিয়েছে সে আজ শাটলে করে বাড়ি ফিরবে না। বাসে করে যাবে। জায়িন আর কোনো দ্বিরুক্তি করেনি।
সুজানা নিখিলরা সবাই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আইসক্রিমে খাচ্ছিল। সুজানাও ভেবেছিল যাবে যেহেতু যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে সাথে আকাশের অবস্থা কেমন সন্দেহজনক তাই সে যাওয়ার কথা মাথা থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে।
নিহাত রিকশায় উঠে রিকশা ছাড়ার আদেশ দেবে। তখনি চোখ পড়লো রিকশার চাকার খুবই নিকটে তার শাড়ির আঁচল। আঁড়চোখে তাকিয়ে আবারও চোখ সরিয়ে নিল নিখিল। আইসক্রিম খেতে খেতে রিকশার নিকটে গিয়ে হ্যাঁচকা টান মেরে নামিয়ে আনলো নিহাতকে। তারপর ছুঁড়ে ফেলার মতো ছেড়ে দিল হাতটা। নিজের হাতটা গায়ের পাঞ্জাবিতে মুছতে মুছতে অন্যদিকে চোখঘুরিয়ে বলল
চাকার তালে তালে নাচতে হলে এমনি নাচা যায়। চাকার সাথে শাড়ি পেঁচিয়ে না। যত্তসব। কে পড়তে বলে এসব ছাইপাঁশ?
আকস্মিক এমন ঘটনায় নিহাত আর দলবল যেমন বিস্মিত তেমন সুজানারাও সবাই। নিহাতের পেছনের মেয়েগুলো বলল
দেখলি কেমন গোঁয়ারের মতো কথা বলে গেল। দূর থেকে বললেই তো হতো যে শাড়ির আঁচল সামলাও। আজব!
অন্যজন বলল
ভাব দেখালো। হাতটা কিভাবে মুছলো দেখেছিস?
নিহাত ধমকে বলল
চুপ করবি তোরা? কোথাও যাব না আর। মুড ভালো নেই। তোরা যাহ। আমি শাটলে করে বাড়ি ফিরব।
কিন্তু।
আমি যাব না বললাম তো।
ওর বন্ধুরা চলে গেল।
শাটলে চলে এলে সবার পিছু পিছু সেও উঠে পড়লো। সুজানাদের সামনের পাশাপাশিই বসলো। চুপচাপ, ফ্যাকাশে মুখে। জায়িন এসে তার পাশে বসলো।
কোনো সমস্যা?
নিহাত তার দিকে ফিরলো। চোখে অপমানের টলমলে জল।
হাত বাড়িয়ে বলল জায়িনকে বলল
ধর।
জায়িন হাতটা ধরলো। বলল
কি হয়ছে?
নাকে শুঁকে বল গন্ধ আছে কিনা।
জায়িন হতাশ হয়ে গলা কাত করলো। বলল
কি হয়েছে বলবি তো।
নিহাত ডান চোখটা মুছে বলল
আমি এই অপমানের যোগ্য জবাব দেব তোর বন্ধুকে।
জায়িন এবার যা বুঝার বুঝে নিল। বলল
আচ্ছা।
_______________
টেবিলের উপর ছোট ল্যাপটপের ভেতর মনোযোগ দিয়ে মাউসটি নড়াতেচড়াতে গিয়ে বিরক্ত মুখ দিয়ে ‘চ’ কারান্ত শব্দ বের করলো সুজানা। সাইফ পেছনে দাঁড়িয়ে তার কাজ দেখে বলল
ওটা কাল রিপেয়ারিংয়ে নিয়ে যাব। সমস্যা দিচ্ছে।
ধুরর এরকম করলে কাজ হয়? তুমি আরেকটা কিনে নাও। এটা দিয়ে কাজ করো কিভাবে?
টুকটাক করি।
আরেকটা কিনে নাও না?
সাইফ হাসলো।
চাকরি হোক।
হুহ শুধু চাকরি হোক। ওসব মেহুলকে বলো আমাকে না।
চাকরি হলে তোকে বিয়েও দেব।
বসে নেই আমি।
কাজে মনোযোগ দে। চাকরিটা পেতে গেলে আমার মতো কাজ দিতে হবে তোকে।
তুমি চাকরিটা ছাড়ছ কেন তাহলে?
বিসিএস পরীক্ষা না?
আমার ভয় হচ্ছে। তোমার মতো আমি পারব? দেখো আমি কিন্তু ডাটা এন্ট্রির সব পারব। কিন্তু ফটোশপটা কঠিন লাগছে কিন্তু ইলাস্ট্রেটর ভালো পারব।
টুলস জানাটা বড় বিষয় নয়। ডিজাইনে ক্রিয়েটিভিটি দেখানোটা বড় বিষয়।
ডেইলী অতগুলো ডিজাইন রেডি করতে পারব আমি?
কেন পারবি না? পাঁচঘন্টা কি কম সময়? দেখ কাজটা আমি ছাড়ছি কিন্তু কাজটা নেয়ার জন্য অনেকে বসে আছে। তোকে সবটা দিয়ে কাজটা পারতে হবে। আমি এজন্যই তোকে এতকিছু শেখালাম। না পারলে এখন আমার ব্যর্থতা। আর তুই ওখানকার পিসিতে কাজ করবি। কোনো সমস্যা না। আমার বন্ধুকে সব বলে রেখেছি। ওখানে কোনো সমস্যা হবেনা তোর। মাসে দশ হাজার টাকা তোর জন্য এনাফ।
হুহ কিন্তু আমার কাজ যদি ভালো না লাগে তাহলে তো বের করে দেবে।
দেবে না। তুই আগে কাজে মনোযোগ দে। অতকিছু চিন্তা করতে হবেনা তোকে।
সুজানা ল্যাপটপের স্ক্রীনে মনোযোগ দিল। রাহেলা বেগম এসে চা বিস্কুট রাখলেন টেবিলে। বললেন
চাকরি নিলে তোকে তো টিউশনি ছাড়তে হবে। ওখানে বলে রেখেছিস?
সুজানা সটান হয়ে বসলো। সাইফের দিকে তাকাতেই সাইফ অভয় দিয়ে বলল
আমি ম্যানেজ করে নেব। অন্য কাউকে দেব।
সুজানা বলল
কিন্তু।
কোনো কিন্তু না।
তুই চার হাজার টাকার টিউশনির জন্য দশ হাজার টাকার চাকরি ছাড়বি?
আমাকে আর না যেতে বলছ?
মাসের আর ক’দিন বা আছে। মাসটা শেষ হোক। আগামী মাসের এক তারিখ থেকে তোর জয়ন।
আচ্ছা।
রাহেলা বেগম তাড়া দিলেন।
চা টা খাহ। ঠান্ডা হয়ে গেল তো।
সুজানা চা টা একটানে খেয়ে তিনতলায় চলে এল। নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। আজ সে টিউশনিতে যায়নি। কিভাবে উনাদেরকে চাকরির কথাটা বলে ম্যানেজ করবে সে জানেনা। অন্যজন কি তার মতো করে অত আন্তরিকতার সাথে পড়াবে? মানুষগুলো যে খুব ভালো।
ভাবতে ভাবতে তন্দ্রা নেমে এল চোখে।
কিছুক্ষণ পর মাথা তুলতেই দেখলো বুকে হাত ভাঁজ করে স্বয়ং অভিক স্যার দাঁড়িয়ে রয়েছে। সুজানার চোখ কপালে উঠলো। বড় বড় চোখে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো। দেখলো স্যার সরু চোখে তাকিয়ে আছে।
সুজানা বিড়বিড়িয়ে বলল
আমি কি করেছি?
আজকে আসেননি কেন?
আজকে খুব ঝড়। আম্মা বেরোতে দেইনি।
আপনি ঝড়কে ভয় পান। আজব!
পাই।
আমি যে আপনি আসবেন বলে বসে থাকি!
সুজানার কান গরম হয়ে উঠলো লজ্জায়। বালিশে মুখ গুঁজলো সে।
পরক্ষণে মায়ের ডাকে ঘুম ছুটে গেল চোখ থেকে। চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো কেউ নেই। আজব! দিনদুপুরে রাতবিরেতে তার শয়নেস্বপনে লোকটা সারাক্ষণ কি করে?
চলবে….…#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_১৫
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা
দেয়ালে মেরুদন্ড ঠেকিয়ে একদৃষ্টে জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল সুজানা। কোলের উপর সাইফের ল্যাপটপটা। অনেকগুলো ডিজাইন শেষ করে সাইফকে দেখাতে হবে আজ। পোর্টফলিও বিল্ড করতে হচ্ছে। সিবিতে পোর্টফলিওসহ দিতে হবে। আজ ক্যাম্পাসেও যায়নি সে। গতরাতের ঝড়ের কবলে পরিবেশ আজ শান্ত। জানালার ফাঁক গলে একমুঠো শান্ত রোদ এসে আঁছড়ে পড়েছে মেঝেতে। অদূরে দূর আকাশে পাখিরা যেন দলছুট খেলছে। ঘরের পর্দাটার দিকে চোখ যেতেই খেয়াল হলো পর্দা ঠেলে ঘরে ঢুকে পড়া ছেলেটিকে। একলাফে পালঙ্কে উঠে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো সুজানার পাশে। সুজানা ভুরু কুঁচকে চেয়ে রইলো।
কি হয়েছে তোর?
সায়েম ফিসফিস করে বলল
চুপ চুপ। আম্মা বেরোনোর সময় দেখে ফেলেছে।
তো এখন।
আমাকে বাঁচাবি।
মানেটা কি?
উফফ চুপ কর না।
সুজানা ল্যাপটপে মনোযোগ দিল। সাজিয়া বেগম নারিকেল শলাকার ঝাড়ুটি নিয়ে দাঁড়ালেন ঘরের পর্দা ঠেলে। বললেন
এই ভরদুপুরে টই টই করার জন্য তোর ভাই বেরিয়ে পড়ছে। ওকে সাবধান করে দে সুজানা। আমি ওকে গার্মেন্টসের চাকরিতে ঢুকিয়ে দেব। বোনে কষ্ট করছে রাতদিন আর ভাই সারাদিন বান্দরগিরি।
সুজানা সায়েমের দিকে তাকালো। বলল
ওটা আমাকে দাও। আজ থেকে মাইর আমি দেব। দেখি কি করে ঘর থেকে বের হয়।
ঝাড়ুটি ছুঁড়ে মেরে চলে গেলেন সাজিয়া বেগম। সুজানা ঝাড়ুটি দিয়ে কাঁথার উপর কয়েক বেত মেরে বলল
তুই কি শান্তিতে থাকতে দিবিনা আমাদের?
সায়েম লাফ দিয়ে বসে পড়লো। বলল
আমি কি ছোট বাচ্চা আপা? এত শাসন ভালো লাগেনা।
আশেপাশে তো শত্রুর অভাব নেই। আম্মা তাই ভয় পায়। তোর বুঝা উচিত ভাই।
আমি তো বলছি সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরব। তাও কথা শোনে না। বন্ধুরা আমাকে মাম্মিস বয় ডাকে।
সুজানা ফিক করে হেসে উঠে তার চুল টেনে দিয়ে বলল
আম্মার একটাই মেয়ে আর একটাই ছেলে। তাই তো এমন করে।
সায়েম বিজ্ঞদের মতো করে বললো
হ্যা যেদিন মা হবি সেদিন বুঝবি মায়ের কেন এত চিন্তা হয়।
বলেই ভাইবোন দু’জনেই একসাথে হেসে উঠলো। পাশের ঘর থেকে আওয়াজ এল
আমি ঘুমোচ্ছি কিন্তু।
দুজনেই ঠোঁটের উপর আঙুল চেপে রাখলো। সায়েম ফিসফিস করে বলল
আপা বিয়ে খাব তোর।
সুজানা ধমকে বলল
চুপ।
আরেহ সত্যি। আম্মা মামাকে বলল তোকে বিয়ে দেয়ার পর আমরা পটিয়া চলে যাব।
ফালতু কথা। মাথা খারাপ করিস না তো।
সায়েম গলায় হাত দিয়ে বলল
তিন সত্যি। আম্মাকে বলতে শুনছি।
আম্মাকে জিজ্ঞেস করব?
না না আমাকে মেরেই ফেলবে। তোকে বলেছি বলে আমাকে মাইর খাওয়াতে হবে?
সুজানা পিঠ ঠেকিয়ে মাথা এলিয়ে দিল। আম্মাটা আজকাল তাকে না জানিয়ে অনেক কিছু করছে।
_______________
বুনো শালিকের দল উড়ে গিয়ে ইউক্যালিপটাস গাছটায় বসলো। কিচিরমিচির কলতানে মুখোরিত হয়ে উঠলো বাড়ির প্রাঙ্গন। পাখির কলতানের সাথে বাচ্চাদের হৈচৈ ও রয়েছে। মালি আর মর্জিনার সাথে কানামাছি খেলছে তারা। ড্রয়িংরুমে সীমাবদ্ধ ছিল এতক্ষণ কিন্তু খেলা জমে না উঠায় তারা বাইরে বেরিয়ে এসেছে।
খেলায় মেতে থাকা অবস্থায় গেইট ঠেলে সুজানাকে আসতে দেখে দুজনেই হৈহৈ উঠলো।
টিচার চলে ইসেছে।
দুজনেই ছুটে এল সুজানার দিকে।
সুজান সুজান আসসালামু আলাইকুম।
সুজানা মিষ্টি হেসে গাল টেনে দিয়ে বলল
ওয়ালাইকুমুস সালাম। খেলছিলেন? হাত পা ময়লা হয়ে গেছে। যান দ্রুত ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসুন।
অনা বলল
ওকে ওকে সুজান। তুমি আসো।
দুজনেই ছুটতে ছুটতে বাড়ির ভেতর চলে গেল। তাদের পেছন পেছন সুজানা। সোফায় মমতাজ বেগম বসা ছিলেন। মর্জিনা পান ধুঁকে দিচ্ছিলো হামান দিস্তায়। সুজানা বৃদ্ধাকে সালাম দিতেই উনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন
এসেছ বোন? তোমার মা ভাই ভালো আছে তো?
জ্বি দাদু। আপনি ভালো আছেন?
এইতো আল্লাহ রেখেছে। যাও আমি বড় নাতবৌকে বলছি।
সুজানা মাথা দুলিয়ে সিঁড়ি ধরতে যাবে তখনি অভিককে দ্রুত পায়ে নেমে আসতে দেখা গেল। সুজানা ওকে নামতে দেখে একপাশে গুটিসুটি মেরে দাঁড়ালো। সে সাদা ভি নেক টি শার্টের লং হাতা গুটিয়ে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করলো
কেমন আছেন সুজানা? আপনি ক্যাম্পাসে যাননি আজ।
কেমন আছে জানতে চাইলো কিন্তু উত্তর শোনার প্রয়োজন মনে করলো না। সদর দরজা পার হয়ে গেল। সুজানা মুখ ফিরিয়ে সিঁড়িতে পা রাখতে যাবে তখনি পেছন থেকে সালমা বেগম বলে উঠলেন
এই মেয়ে দাঁড়াও। শোনো।
সুজানা উনার দিকে ফিরে তাকালেন। মমতাজ বেগমও উৎসুক হয়ে তাকালেন।
অভি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না?
সুজানা মাথা দুলালো।
জ্বি।
ও তোমার স্যার লাগে না?
জ্বি।
তাহলে? স্যারকে যে সালাম দিতে হয় সেটা কি তুমি জানো না?
তন্মধ্যে আনিকা আর আনজুমা বেগম এসে হাজির।
সুজানা বোকাচোখে তাদের দিকে তাকালো।
তুমি সালাম দিলে না সেটা বাদ দিলাম। কিন্তু তুমি উল্টো ওকে কেমন আছেন সেটা জিজ্ঞেস করবে তো দূর কেমন আছেন জিজ্ঞেস করলো সেটার উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করলে না? তুমি তো দেখছি কোনো আদবকায়দা জানো না মেয়ে।
সুজানা এবার লজ্জা পেল। মমতাজ বেগম বললেন
আহা বৌমা কেন মেয়েটার পেছনে লেগেছ?
আনজুমা বেগম বললেন
ছোট মেয়েটা হয়ত অভিকে লজ্জা পায়। অনেকে স্যারের সাথে ফ্রি হয়ে কথা বলতে পারেনা। সুজানা মা তুমি যাও। আন্টির কথায় কিছু মনে করোনা।
সুজানা জোরপূর্বক মাথা দুলিয়ে চলে গেল।
সে যেতেই সালমা বেগম বললেন
আমি মেয়েটাকে ভুল কিছু বলেছি মা? আপনি আর আপনার ছেলে সারাক্ষণ আমার ভুল ধরেন কেন আমি বুঝিনা। আমি তো ভালোর জন্যই বলছি। এসব আদবকায়দা শিখিয়ে রাখা ভালো। বিয়ের পর আপনি তো আমার কম ভুল ধরেননি। বিয়েশাদি ওই মেয়েরও হবে তখন বুঝবে আমি এসব ভালোর জন্য বলেছি নাকি খারাপের জন্য বলেছি।
বৃদ্ধা চোখের চশমা মুছতে মুছতে মুচকি হাসলেন। বললেন
ওর শ্বাশুড়ি ওকে শিখিয়ে পড়িয়ে নেবে বৌমা। তুমি বরং অভি দাদুভাইয়ের বউয়ের কথা ভাবো। তাকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে পারলে ভালো। সবাই তো আনিকা হয় না কিংবা সুজানা।
ওসব আপনাকে ভাবতে হবে না। আমার ছেলের বউ আমি বুঝে নেব।
বৃদ্ধার সাথে সাথে আনিকা আর আনজুমা বেগমও মুচকি হাসলেন।
________________
সুজানা রিডিংরুমের জানালা মেলে চেয়ারে এসে বসলো। ঘেমে উঠেছে সে। উফফ স্যারের সাথে উনার মায়ের কোনোদিকেই মিল নেই। কেমন কাঠখোট্টা মানুষ বাবারে। স্যারের সাথে উনার বাবার মিল আছে।
সুজান চলি আসিছি।
অনা আবিদের গলা শুনে সুজানা তাদের সাথে মিষ্টি হাসলো। দু’জনই দৌড়ে এসে চেয়ারে বসলো। চেয়ারটাতে বসে তাদের লিখতে কষ্ট হয়। তাই তাদের বসার জায়গায় ফোম দেয়া হয়েছে। সেটাতে বসে দুজনেই লাফাতে লাফাতে বলল
সুজান সুজান হোমওয়ার্ক কচচি সুন্দুল করে।
সুজানা মিষ্টি হলে গাল টেনে দিয়ে বলল
ভেরি গুড। আচ্ছা সুজান যদি আর না আসে মন খারাপ হবে?
দুজনেই পিটপিট করে চাইলো তার দিকে। খুশি হলো নাকি নারাজ বুঝা গেল না। সুজানা হেসে কিছু বলতে যাবে তখনি দরজার কাছ থেকে কেউ অনুমতি চাইলো
আসতে পারি?
সুজানা চমকে ঘাড় ঘুরালো। অভিককে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। এইমাত্র কোথায় গেল না? এরমধ্যে চলে এল। উফফ সুজানাকে জ্বালাতে কি বেশি ভালো লাগে উনার। কোথায় ভেবেছে শান্তিতে পড়িয়ে কেটে পড়বে সে। উফফ জ্বালা!
অভিকের হাতে মোটা মোটা দুটো বই। বইদুটো টেবিলে রেখে বলল পাশের চেয়ার টেনে বসে বলল
জুনিয়র আপনারা পড়তে থাকুন। নো হাংকিপাংকি। ওকে?
দুজনেই সমস্বরে বলল
ওকে ওকে।
অভিক একটা বই সুজানার দিকে বাড়িয়ে দিল। বলল
আপনি আজ ক্যাম্পাসে যাননি। কেন?
সুজানা মাথা নেড়ে বলল
কাজ ছিল।
সে যাইহোক। আপনি দেবদাস বইটা পড়েছেন সুজানা?
হুমম।
কার জন্য বেশি খারাপ লেগেছে?
পার্বতীর জন্য।
আর দেবদাস্?
আপনি ইংলিশ ব্যাকগ্রাউন্ডের হয়েও উপন্যাস পড়েন?
হুমম। হলুদ বসন্ত পড়েছিলেন?
সুজানার চোখমুখ প্রফুল্প দেখালো।
হ্যা। ঋজু আমার খুব প্রিয় চরিত্র।
ওই উপন্যাসের কোনো উদ্ধৃতি মনে আছে?
খুব স্পষ্ট মনে আছে।
বলুন।
সুজানা নিসংকোচে বলল,
” ভালোলাগা আর ভালোবাসার পার্থক্য টা কোথায়? ভালো লাগলে মানুষ সেই ভালো লাগাকে তার ইচ্ছাধীন করে রাখতে পারে, কিন্তু ভালবাসলে মানুষ নিজেই সেই ভালোবাসার ইচ্ছাধীন হয়ে থাকে। তার নিজের কোনো নিজস্ব সত্তা থাকে না। ভালোবাসা তাকে যাই বলে পোষা পুষ্যির মতো সে তাই করে।”
অভিক তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বলল
আপনি পুরো উদ্ধৃতিটাই মুখস্ত করে রাখলেন।
না। ওটা তো একদম সত্যি কথা। মুখস্ত করতে হয়নি।
গুড। তাহলে আমি আপনাকে যা বলব আপনি ঠিক তাই তাই করবেন আজ থেকে।
সুজানা তালে তাল মিলিয়ে বলল
আচ্ছা।
অভিক হেসে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
সুজানা তৎক্ষনাৎ চোখতুলে পূর্ণদৃষ্টি মেলে অভিকের দিকে তাকালো বিস্ময় নিয়ে। দরজা ঠেলে তখনি মর্জিনা ঢুকে এল। টেবিলের উপর ট্রে রেখে বলল
বাবু কফি দু মগ দিছি। বাচ্চাদের জন্য চা দিছি।
থ্যাংকস আন্টি।
মর্জিনা হেসে চলে গেল।
সুজানা অপলক অনঢ় হয়ে তাকাতে দেখে অভিক হাসলো। হাত দিয়ে চেয়ার ঘুরিয়ে চায়ের মগ অনা আবিদের দিকে বাড়িয়ে বলল
আজ টিচারের সাথে চা হবে। বই খাতা বন্ধ করুন।
দুজনেই খুশিতে বাকুমবাকুম করে উঠলো। সুজানার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচালো অভিক। মগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল
বইপ্রেমীদের চা কফির প্রেমে পড়তে হয় সুজানা। বর্ষা বিকেলে ধোঁয়া উঠা গরম চা কিংবা কফির সাথে একটা বই। ব্যাপারটা দারুণ না? কালাম স্যারের একটা কথা আছে না? একটি ভালো বই বই যেন কিসের সমান?
সুজানা ছোট্ট করে আওয়াজ করলো।
বন্ধুর।
অভিক চেয়ার টেনে চট করে বসে গেল। বলল
ইয়েস। আর একটা ভালো বন্ধু একটা লাইব্রেরির সমান। আমার প্রশ্নের উত্তর কখন দেবেন?
কোন প্রশ্ন?
এই যাহ ভুলে গেলেন?
সুজানার মনে পড়তেই সে বলল
হ্যা মনে আছে। কিন্তু..
কোনো কিন্তু না সুজানা। আপনি প্রশ্নের উত্তরটা না দিলে তার বদৌলতে একটি লাইব্রেরি দিতে হবে। আমার লাইব্রেরী অথবা উত্তর যেকোনো একটা চাই। আপনার নিস্তার নেই। উত্তর কিংবা লাইব্রেরি দুটোর একটার বিনিময়ে আপনি বাগান পেয়ে যাবেন। একটা পেয়ে গেলে অপরটি পেতে আমার কষ্ট হবে না।
সুজানা কফির মগে ছোট্ট করে চুমুক দিয়ে হাতের উল্টোপিঠে মুখ মুছে নিয়ে ছোট্ট করে বলল
এর চাইতে ফিন্যান্স থিওরিগুলোও অনেক সোজা।
অভিক হেসে ফেলল তার কথায়। বলল
আমি যাচ্ছি আর আসছি। আপনি তারমধ্যেই আঁকিবুঁকি করে হলেও বের করুন তো আমি ঠিক কি চাইছি।
অভিক চলে যেতে উদ্যত হতেই সুজানা বলল
কিন্তু আমাকে এরকম পরীক্ষায় ফেলে লাভটা কি?
অভিক ভাবুক হলো এবার। তারপরেই চমৎকার করে হেসে হালকা ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল
লাইফের পুরো লসপ্রফিট হিসাবের ব্যাপারটা ছোটখাটো বিষয়ের সাথে জড়িত থাকে সুজানা । মেয়েদের সিক্সথ সেন্স অনেকটা প্রখর। আপনি অযথা নিজেকে বোকা সাজাবেন না আমার সামনে। আমি খানিকটা হলেও আমাকে পড়তে পারি সুজানা আফরিদা।
সুজানা শুকনো ঢোক গিলে চেয়ে রইলো। অভিক যেতে যেতে আবার থামলো। বলল
আমি আপনাকে প্রথম দিন বলেছিলাম না? পড়া ভালো হলে আরও একজন স্টুডেন্ট পাবেন। আপনি পেয়ে গেছেন। আপনার স্যালারি আরও বাড়বে এন্ড আপনার নিউ স্টুডেন্টটাও আপনার চাইতে বড়। একটু হোমওয়ার্ক করে আসবেন বাসা থেকে। অনেক থিওরি সলভ করতে হবে তো।
সুজানা কাঁদোকাঁদো মুখ করে বসে থাকলো। কারণ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুবই ভয়ানক কিছু সংকেত দিচ্ছে। খাতা কলমগুলো তার দিকে তাকিয়ে খিকখিক করে যেন হাসছে। সে কিছু আঁকিবুঁকি করতে গেলেই তারা হেসে বলবে সুজানা তুই ফেঁসে গিয়েছিস। বড্ড বাজেভাবে ফেঁসে গিয়েছিস। তোর নিস্তার নেই।
সুজানা বিড়বিড়িয়ে বলল
আমি আর আসবোই না টিউশনি পড়াতে।
কিন্তু অভিকের কথাটা মনে পড়লো।
আপনার নিস্তার নেই সুজানা।
তাই সে ভয়ে ভয়ে খাতা কলম নিল। তাতে লিখলো বাগান, লাইব্রেরী। অন্যটার নাম কি হতে পারে। যেটা উনার কাছে আছে কিন্তু উনি শুধুই সেটা সুজানাকে দেবেন।
লাইব্রেরী – বাগান – ০০
পরক্ষণেই মাথায় বুদ্ধি এল। সে খাতায় এলোমেলো কলম এঁকে বলল
উত্তর দিতে হবেই বা কেন? আমার বাগানটাই চাই না। তাহলে উত্তর কেন দেব?
অভিক কিছুক্ষণ পর এল। বলল
দেখি কি এঁকেছেন?
সুজানা লজ্জিত মুখে খাতাটা দেখালো। অভিক চেয়ার টেনে বসলো। পকেট থেকে দুটো ছবি বের করলো। দুটো মেয়ের ছবি। যথেষ্ট সুন্দরী এবং শিক্ষিতা মনে হচ্ছে।
এরা দুজনেই উত্তরটা জানে সুজানা। কিন্তু ওই জিনিসটাতো শুধু আপনার ওদেরকে কি করে দিই বলুন তো?
সুজানাও এবার চিন্তায় পড়ে গেল। সত্যিই তো তার জিনিস সে অন্যকে দেবে কেন?
সে অভিকের দিকে বোকা চোখে তাকিয়ে থাকলো। বলল
আপনি অন্য কাউকে দেবেন না কেন?
উফফ বললাম না। ওটা শুধুমাত্র আপনাকেই দেওয়া যায় সুজানা।
সুজানা মাথার একপাশে চেপে বলল
আমার মাথায় আসছে আর যাচ্ছে।
খুব দেরী হলে আমি এদের মধ্যে কাউকে দিয়ে দিতে পারি।
না না। আমি পারি ওটা। মুখ দিয়ে আসছেনা। মনে হচ্ছে ওটা আমি জানি। সময় তো লাগবে না?
অভিক গালে হাত ঠেকিয়ে হেসে চেয়ে রইলো ওর দোনোমনা।
চলবে…
🙂🙂