বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ৪৫

#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৪৫
.
বর্ষা শেষ তবে বৃষ্টি এখনো হয় মঝেমাঝে। চারপাশে ভ্যাঁপসা গরম পরেছে, পরিবেশটা একটু বেশিই নিস্তব্ধ। রাতে আদ্রিয়ান সেই লেক পার্কের লেকের পাশে বসে একদৃষ্টিতে পানির দিকে তাকিয়ে আছে। প্রথম যেদিন অনিকে নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছিলো সেদিন এখানেই এসছিলো। কতো কথা বলেছিলো ও অনিমাকে আর অনিমা একদৃষ্টিতে অবাক হয়ে ওর কথা শুনছিলো, কিছু কিছু কথায় ব্লাস ও করছিলো। সেইদিনের কথা খুব বেশি মনে পরছে ওর। লেকের পানির দিকে তাকিয়ে একমনে অনিমার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোকে মনে করছিলো। হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান খেয়াল করলো ওর পেছনে কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে পেছনের দিকে না তাকিয়ে বলল,

— ” এই মুহূর্তে তোদের সাথে কোনো খেলা খেলার ধৈর্য বা ইচ্ছা কোনোটাই আমার নেই। তাই চলে যা।”

লোকগুলো হেসে দিয়ে বলল,

— ” দেখ রকস্টার এখন দেবদাস হয়ে গেছে। ”

আদ্রিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রল করতে করতে বলল,

— ” এখনো বলছি চলে যা। আমি এখন একদমি এসবের মুডে নেই।”

ওদের মধ্যে একজন বলল,

— ” ওই? তোর কী মনে হচ্ছে? আমরা এফ এম রেডিওতে পাবলিক ডিমান্ড শো চালাচ্ছি যে তোর মুড অনুযায়ী গান শোনাবো?”

আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপচাপ ফোন টিপতে লাগলো। ওদের মধ্যে একজন রেগে সোজা এসে আদ্রিয়ানের পিঠে হকিস্টিক দিয়ে একটা বাড়ি মারলো। আঘাতটা জোর‍ে হলেও, আদ্রিয়ানের সহ্যশক্তির মধ্যেই ছিলো। আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে ফোনটা পকেটে রেখে পাশে তাকালো। কতোগুলো সাড়ে তিন ফিট রড রাখা আছে হয়তো এখানকার কোনো কাজে লাগবে। আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে ওখান থেকে একটা রড হাতে নিলো। যেই লোকটা আদ্রিয়ানকে বাড়ি মারতে এসছে সেই লোকটা ওর দিকে দৌড়ে তেড়ে আসতে নিলে আদ্রিয়ান প্রথমে লোকটার হাতে বাড়ি মারলো যার ফলে হকিস্টিক টা পরে গেলো, পরে শরীরে এমন জোরে বাড়ি মারলো যে অার উঠতেই পারলোনা। আদ্রিয়ান এবার ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আব্বে তোদের কী আমাকে দেখে মেলায় টানানো বেলুন মনে হচ্ছে যে ইচ্ছে মতো গুলি ছুড়ে এক এক করে ফাটাবি আর আমি ফেটে যাবো? তোদেরকে বললাম চলে যা কিন্তু শুনলি না। এখন যেটা হবে সেটার জন্যে আমি না তোরা দায়ী।”

ওরা পেছন থেকে গান বের করে বলল,

— ” তোকে তো এখানেই ঝাজরা করে দেবো।”

আদ্রিয়ান অপর হাতে নিজের থুতনি চুলকে বিড়বিড় করে বললো,

— ” এরা শুধরাবে না।”

ওদের একজন রাগী কন্ঠে বলল,

— ” কী বিড়বিড় করছিস হ্যাঁ ?”

ওদের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখে বাঁকা হেসে বলল,

— ” পেছনে তাকা।”

ওরা সবাই বিরক্তি নিয়ে পেছেনে তাকিয়ে দেখে অনেকগুলো বন্দুকধারী লোক ওদের ঘিরে আছে তাও বন্দুক তাক করে। আদ্রিয়ান পকেটে হাত দিয়ে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” তোদের ক্লাস টা আমিই নিতাম কিন্তু ঐ যে বললাম মুডে নেই, তাই যা করার ওরাই করুক। ওল দা বেস্ট। ”

বলে ইশারা করতেই আদ্রিয়ানের লোকগুলো ওদের নিয়ে চলে গেলো। আদ্রিয়ান ওখানকার বেঞ্চে পায়ের ওপর পা তুলে বসে নিজে নিজেই বলল,

— ” আপনি খুব চালাক মানুষ কবির শেখ কিন্তু আমার ব্যাপারে আপনি কিছুই জানেননা। দুদিনে দুবার শুট করানোর চেষ্টা করলেন। বন্দুক তাক করার আগেই তারা পালিয়েছে। এখন আবার মারতেও লোক পাঠালেন তারাও এখন…হুমহ। ওনেস্টলি কষ্ট হয় আপনার জন্যে খুব কষ্ট হয়।”

_____________________

স্নিগ্ধা এয়ারপোর্টে সামনে বসে আছে। রিকের বলা দেশেই এসছে ও। হঠাৎ ফোন বাজতেই স্নিগ্ধা রিসিভ বলল,

— ” হ্যাঁ এসে গেছি আমি। লেফ্ট সাইডের বেঞ্চের ওখানে আছি। তুমি কোথায়?”

রিক হাটতে হাটতে বলল,

— ” ওখানেই থাক আমি অাসছি। ”

বলে ফোন রেখে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রিক এসে দাঁড়ালো ওর সামনে। স্নিগ্ধা হেসে কিছু বলবে তার আগেই ওর হাত ধরে ওখান থেকে হাটা দিলো। স্নিগ্ধা তো অবাক। পেছন থেকে একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে কিন্তু কোনো উত্তর আসছে না, রিক একবার পেছন ঘুরে তাকাতেই রিকের চেহারা দেখে স্নিগ্ধা চুপ হয়ে গেলো। ভাবলো এই মুহুর্তে পাগল খেপিয়ে দিয়ে লাভ নেই। রিক স্নিগ্ধাকে একটা গাড়ির ফন্ট সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে একটা কাপড় দিয়ে স্নিগ্ধার চোখ বেধে দিলো। সিগ্ধা অবাক হয়ে বলল,

— ” আরেহ কী করছো কী এসব?”

রিক স্নিগ্ধার হাত বাধতে বাধতে ধমকি দিয়ে বলল,

— ” চুপ করে বসে থাক। ঠিক জায়গায় ঠিক সময় খুলে দেবো।”

সিগ্ধা আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো। আর রিক গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে ভাবছে যে আদ্রিয়ানকে বিশ্বাস করা যায়না ও সব করতে পারে। রিক জানে যে আদ্রিয়ান আজ হোক কাল এই দেশের খবর পেয়ে যাবে। কিন্তু এই দেশের কোন জায়গায় রেখেছে ওকে সেটা যেনো আদ্রিয়ান সহজে জানতে না পারে সেই ব্যবস্হাই করছে ও। আর ওর মামাই বা কী করছে? এখোনো অবধি আদ্রিয়ানের মৃত্যুর সংবাদ পর্যন্ত দিতে পারছেনা ওকে। এসব চিন্তা করতে করতে স্নিগ্ধাকে নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে রওনা দিলো রিক।

______________________

অরুমিতা আশিসের সাথে কথা বলার জন্যে এসছে। আশিসের হঠাৎ এরকম ইগনোরেন্স জাস্ট সহ্য হচ্ছেনা ওর। তাই এসেছিলো আশিসের সাথে এই ব্যাপারে ঠিকভাবে কথা বলতে। কিন্তু এসে যা দেখলো তাতে অরুমিতার থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। আশিস অন্য একটা মেয়ের সাথে খুব ক্লোস হয়ে বসে আছে। দুজনেই কথা বলছে আর খুব বেশি হাসাহাসি করছে, একেবারে একে ওপরের গায়ের ওপর ঢলে পরছে এরকম অবস্হা। অরুমিতা প্রথমে ছলছলে চোখ নিয়ে কিছুক্ষণ ওদের দেখছিলো। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর হাত ভাজ করে বলল,

— ” ওহ তো এইজন্যেই আমাকে দেওয়ার মতো সময় হচ্ছেনা আপনার?”

অরুমিতার গলার আওয়াজ পেয়ে আশিস চমকে গেলো। তাকিয়ে অরুমিতাকে দেখে আমতা আমতা গলায় বললো,

— ” তুমি? এখানে?”

অরুমিতা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” কেনো? আশা করেননি তাইনা? ভাগ্যিস এসছিলাম। নাহলে আপনার এই রুপটা দেখা হতোনা।”

পাশ থেকে মেয়েটা বলল,

— ” কে এ বেইবি?”

আশিস মেয়েটার দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” তুমি এখন যাও এখান থেকে।”

মেয়েটা কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো ওখান থেকে। আশিস অরুমিতার দিকে তাকিয়ে ইতস্তত কন্ঠে বলল,

— ” অরু..”

কিন্তু আশিসকে থামিয়ে দিয়ে অরু বলল,

— ” ডোন্ট কল মি অরু ওকে? ওই নামে ডাকার যোগ্যতা নেই আপনার। এই জন্যেই আমাকে ইগনোর করছিলেন? কারণ আমার সাথে প্রেম প্রেম নাটক করে মন ভরে গেছে আপনার? তাই এখন দূরে সরে যাচ্ছেন? এতোটা চিফ মেন্টালিটি আপনার? ”

আশিস এবার উঠে দাঁড়িয়ে চেচিয়ে বলল,

— ” এতো ওভার রিঅ‍্যাক্ট করার কী আছে হ্যাঁ? আমি কীরকম সেটা কী তুমি জানতে না? রিলেশন করলেই যে সেটা আজীবণ টিকিয়ে রাখতে হবে এমন কোনো কথা আছে নাকি? আমি বলেছিলাম তোমাকে এতো সিরিয়াস হতে? বলো? বলেছিলাম?”

অরুমিতা কান্নাজরিত কন্ঠে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী বলছেন আপনি?”

আশিস একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি। দেখো এসব ন্যাকামো প্রেম আমার কাছ থেকে আশা করোনা। কারো জন্যে আমি নিজেকে বদলাতে পারবোনা।”

অরুমিতা কিছুক্ষণ আশিসের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ মুছে বলল,

— ” হবেনা আপনাকে বদলাতে। আমিই চলে যাচ্ছি আপনাকে ছেড়ে। আমাদের মধ্যে যা কিছু ছিলো সব এখানেই শেষ করে দিচ্ছি। আজ থেকে আপনিও মুক্ত আর আমিও। করুণ অাপনার যা খুশি তাই করুণ। কেউ বাধা দেবেনা আপনাকে।”

তারপর ওর হাতের রিংটা খুলে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” সরাসরি ভালোবাসার কথা বলে এটাই পড়িয়ে দিয়েছিলেন আমাকে তাইনা? আপনার ঐসব মিথ্যের কোনো চিহ্নই আমি আমার কাছে রাখবোনা।”

শক্ত কন্ঠে এসব বলে রিং আশিসের দিকে ছুড়ে মেরে ওখান থেকে নিরবে কাঁদতে কাঁদে চলে গেলো অরুমিতা। আশিসের ভেতরে এক অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে কিন্তু এরকম তো হওয়ার কথা না। ও তো কোনোকালেই সিরিয়াস ছিলোনা অরুমিতাকে নিয়ে তবুও এতো ফাঁকা কেনো লাগছে? সেই কারণটা অজানা ওর। আর অজানা কারণেই রিং টা তুলে নিজের পকেটে রেখে দিলো আশিস।

______________________

বেডে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে অনিমার আর পাশে বসে স্নিগ্ধা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। একদৃষ্টিতে অনিমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধা। ঠোঁটে মুচকি হাসি।এতোদিন শুধু ভাবতো যে কী এমন আছে অনিমার মধ্যে যে রিক ওর জন্যে এতো পাগল? কিন্তু আজ সামনাসামনি দেখে বুঝতে পারছে যে কেনো রিক অনিমা বলতে পাগল। এতো সুন্দর এতো মায়া মাখানো একটা মুখ যে, যে কেউ ওর মায়ায় পরে যাবে। কিন্তু ওর কপালের হালকা কাটা দাগ, ঠোটের কোণ ফেটে যাওয়ার চিহ্ন দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো স্নিগ্ধা। নিজে নিজেই বলল,

— ” অতিরিক্ত রাগ খুব ভয়ংকর জিনিস রিক দা। এটা কাছের মানুষগুলোকেও দূরে সরিয়ে দেয়। তুমি যদি রাগকে প্রায়োরিটি না দিয়ে শুধু ভেতরের আবেগ নিয়ে মেয়েটার দিকে একটু গভীরভাবে তাকাতে তাহলে ওর গায়ে হাত তুলতে পারতেনা তুমি।”

এসব নানা কথা ভাবতে ভাবতেই অনিমার মাথায় হাত বুলাচ্ছিলো স্নিগ্ধা। কিছুক্ষণ পর অনিমা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো। আর ওর চোখ সরাসরি স্নিগ্ধার দিকেই গেলো। স্নিগ্ধা মুচকি হাসলো, স্নিগ্ধার দিকে পিটপিটে চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর অনিমা আস্তে আস্তে উঠে বসলো স্নিগ্ধাও হেল্প করলো ওকে বসতে। অনিমা বেশ অবাক হয়েই তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধার দিকে। স্নিগ্ধা হাসি মুখেই বলল,

— ” চিন্তে পারছোনা তাইতো? আসলে আজকেই এসছি এখানে। আমাকে নিজের বন্ধু ভাবতে পারো। ”

অনিমা ভাঙ্গা গলায় বলল,

— ” আপনি?”

স্নিগ্ধা আসাম করে বসে বলল,

— ” আমি রিকে দার বন্ধু, স্নিগ্ধা । আর এসব অাপনি ঠাপনি কী বলছো হ্যাঁ ? রিক দার কাছে তোমার ডেট অফ বার্থ যা জেনেছি সে অনুযায়ী আমি তোমার থেকে অনলি দেড় বছরের বড়। সো প্রায় সমবয়সী। তাই এসব আপনি আগ্গে বাদ দেও।”

বলেই মিষ্টি একটা হাসি দিলো স্নিগ্ধা। অনিমা তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধার দিকে আর ভাবছে কতো মিষ্টি করে কথা বলে মেয়েটা। বোঝাই যাচ্ছে খুব ভালো। ওরকম একটা রাক্ষসের এতো মিষ্টি একটা বন্ধু থাকতে পারে? কীভাবে সম্ভব? এসব ভাবতে ভাবতেই স্নিগ্ধা বলল,

— ” কী হলো করবেনা আমার সাথে বন্ধুত্ব?”

উত্তরে অনিমাও একটা মুচকি হাসি দিলো। স্নিগ্ধা বলল,

— ” ওকে দেন ফ্রেন্ডশিপে কিন্তু তুমি শব্দটাও মানানসই নয় তাইনা?”

অনিমা বেশ অবাক হলো। মেয়েটা যতোটা মিষ্টি ততোটাই মিশুক ও। কতো তাড়াতাড়ি সম্পর্কটাকে তুইতে নিয়ে গেলো। অনিমা হাসি মুখেই নিচু কন্ঠে বলল,

— ” হুম।”

এরপর দুজনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ ছিলো। নিরবতা ভেঙ্গে স্নিগ্ধা নিজেই বলল,

— ” দেখ আমি জানি যে তোকে রিক দা এখানে জোর করেই আটকে রেখে দিয়েছে । আর আমি একা চাইলেও তোকে বের করতে পারবোনা। চারপাশে করা সিকিউরিটি। কিন্তু রিক দা লোকটা কিন্তু মনের দিক একেবারেই খারাপ না। শুধু একটু রাগী। তারওপর ঐ শুকুনী মামা তো আছেই। সারাক্ষণ কান ভাঙ্গানী দিয়ে রাখে ছেলেটার।”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” শকুনী মামা কে?”

স্নিগ্ধা কিছু বলবে তার আগেই রিক ঢুকে পরলো রুমে। রিক কে দেখেই অনিমা একটু গুটিয়ে বসলো। রিক ওদের দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— ” ওকে নিয়ে ডাইনিং এ আয়। খাবার সার্ভ করা হয়ে গেছে।”

এটুকু বলেই রিক চলে গেলো। অনিমা বেশ অবাক হলো। এই কয়দিন অনিমাকে রুমেই খাবার দিয়ে যেতো রিক। আজ হঠাৎ ডাইনিং এ? স্নিগ্ধা অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” চল।”

অনিমা উঠে দাঁড়াতেই স্নিগ্ধা ওকে ধরে ধরে ডাইনিং এ নিয়ে গেলো। খাবার সময় কেউ কোনো কথা বলেনি। অনিমাও মাথা নিচু করে চুপচাপ যতোটা পেরেছে খেয়েছে। খাওয়া শেষে রিক অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তুমি এখন রুমে যাও।”

অনিমা স্নিগ্ধার দিকে তাকাতেই স্নিগ্ধা মুচকি হেসে বলল,

— ” তুই যা আমি আসছি।”

অনিমা কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ উঠে চলে গেলো। রিক হালকা হেসে বলল,

— ” বাহবা? একদিনেই তুই তে চলে গেছিস?”

স্নিগ্ধা ভাব নিয়ে বলল,

— ” দিস ইজ মাই ক্যালমা ওকে?”

রিক বিরক্তিকর এক দৃষ্টি দিয়ে বলল,

— ” ওয়ে ড্রামাকুইন। ড্রামা ছাড় আর আমার কথা শোন। অনিমার ব্যবহার গুলোর ব্যাপারে সবটাই বলেছি তোকে। যদিও আমি আমার মতো চেকআপ করেছি বাট মারাত্মক কোনো ফিজিক্যাল প্রবলেম আছে বলে মনে হয়নি, ব্যাপারটা সাইকোলজিক্যাল মনে হয়েছে। যদিও আমার অনেক দিন যাবত প্রাকটিজ নেই তাই ভুল হতেই পারে। তুই তো প্রাকটিসিং এ আছিস তোর কী মনে হলো?”

স্নিগ্ধা হেসে বলল,

— ” প্রাকটিজ না থাকলেও ভুলে যাওয়ার ছেলে তুমি নও। এন্ড ইউ আর রাইট ওর প্রবলেম টা মে বি সাইকোলজিক্যাল। আর আমার মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি তোমার ওকে একজন সাইক্রাটিস্ট কে দেখানো উচিত।”

রিক টেবিলে দুই হাতের কুনুই রেখে মুখে হাত দিয়ে বলল,

— ” হুমম এস সুন এস পসিবল কথা বলছি আমি। যা তুই ওর কাছে যা।”

সিগ্ধা চলে গেলো আর রিক ভাবতে শুরু করলো যে কী এমন কারণ হতে পারে অনিমার এরকম একটা প্রবলেপ হওয়ার? কারণটা কী শুধু ও? নাকি অন্য আরো কিছু আছে?

_______________________

আদ্রিয়ান নিজের লাগেজ গোছাচ্ছে। কারণ আজকেই সকালে জানতে পেরে গেছে যে কোন এয়ারপোর্ট থেকে অনিমাকে নিয়ে গেছে। পরে ওখানে গিয়ে ওদের চাপ দিতেই ওরা জানিয়ে দিয়েছে সব। রিক অনিমাকে নিয়ে সুইডেন গেছে। ভাগ্যক্রমে যে কয়েকটা দেশের সিটিজেনশিপ আদ্রিয়ানের পাওয়া আছে তার মধ্যে সুইডেন ও একটা তাই ওর যেতে খুব বেশি দেরী লাগবে না। কালকে সকালেই ওর ফ্লাইট। সুইডেনের কোথায় আছে সেটা যদিও আদ্রিয়ান এখোনো জানে না তবে ও ঠিক খুজে নেবে। যেভাবেই হোক ও ওর জনপাখিকে ঠিকই খুজে নেবে। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎই ফোন বেজে উঠলো আদ্রিয়ানের। ফোনের স্ক্রিণে নাম্বারটা দেখে বাঁকা হাসলো আদ্রিয়ান। তারপর ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,

— ” একজন রকস্টার হয়ে সামান্য একজন নেতাকে হুমকি চিঠি দেওয়াটা কী ঠিক জুহায়ের বাবু?”

আদ্রিয়ান ইনোসেন্ট কন্ঠে বলল,

— ” আমি কখন আপনাকে হুমকি চিঠি দিলাম মা…মা?”

আদ্রিয়ানের মুখে মামা ডাক শুনে কবির শেখ চমকে গেলেন। ঘাম বেড়োতে শুরু করলো ওনার। নাকের কাছের ঘামটা কোনোরকমে মুছে ত্ তোতলানো কন্ঠে বললেন,

— ” ম্ মামা মানে?”

আদ্রিয়ান এবার শব্দ করেই হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বলল,

— ” আরে এতো ভয় কেনো পাচ্ছেন? দেখুন রিক চৌধুরী আমার ভাইয়ের মতোই। তো আপনি যদি ওর মামা হন তাহলে আমিও তো মামা বলতেই পারি। তাইনা মা.. মা? তবে এই প্রথম কাউকে মামা ডাক শুনে এতো ভয় পেতে দেখলাম।”

কবির শেখ কিছু বলছেননা, ওনার বুকে ভয় বাসা বাধছে। আদ্রিয়ান নিজেই বলল,

— ” কী জেনো বলছিলেন? হুমকি চিঠি? আমি আপনাকে কোনো হুমকি দেইনি মামা। শুধু একটু সতর্ক করেছি। এইযে লোক, প্রফেশনাল কিলার এসব পাঠিয়ে আমার মতো এক সুইট লিটল ভোলাভালা ভাগ্নেকে মারতে চাইছেন।তাতে কোনো লাভ তো হচ্ছেই না উল্টে আপনার পকেট ফাঁকা হচ্ছে। তাই বলছি এসব থামান। ”

কবির শেখ দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

— ” খুব বেশি কনফিডেন্স তোমার?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” কনফিডেন্স তো থাকা উচিত মামা। কিন্তু ওভার কনফিডেন্স না। এই ওভার কনফিডেন্সেই কেউ কেউ ভাবে যে তার কুকির্তী গুলো সে সবার আড়ালে করে যাবে, কাছের লোক হওয়ার নাম করে পিঠে ছুড়ি মারবে আর কেউ টেরও পাবেনা তাইনা মা…মা?”

আদ্রিয়ানের কথায় কবির শেখ অনেকটাই ঘাবড়ে গেলেন, কাঁপতে শুরু করলেন উনি। আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” এখন একটু বিজি আছি মামা পরে কথা বলবো। বাই।”

বলে ফোন রেখে দিলো আদ্রিয়ান অার ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে হালকা হেসে বলল,

— ” ভয় পান আরো ভয় পান। একবার অনিকে খুজে আনি এরপর আপনাদের সবাইকে নিজেদের উপযুক্ত জায়গা দেখাবো আমি। আপনার পাপ তো ঘড়া ভর্তি হয়ে গেছে। এবার আপনার সময় শেষ হয়ে আসছে। কাউন্ট ডাউন শুরু করে দিন মা…মা।”

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here