#মায়াবতী
#পর্ব: বোনাস
#তানিশা সুলতানা
তন্নি তারেকের সাথে কথা বলতে বলতে বাসায় পৌছায়। তামিম দরজার কাছেই অপেক্ষা করছিলো ওদের জন্য। তন্নিকে দেখে দৌড়ে যায় তন্নির কাছে। তন্নি ভাইকে কোলে নিতে যায় ইতি নিতে দেয় না। তন্নির থেকে টেনে সরিয়ে দেয় তামিমকে। তন্নির হাসি মুখটা চুপসে যায়।
“তুমি আপির থেকে সরালে কেনো?
তামিম রেগে বলে।
” তোর আপি অসুর। সুস্থ হোক তারপর কোলে নিবে তোকে।
বলে ছেলেকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। তন্নি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পেছন পেছন যায়।
তন্নি ঘুমচ্ছে। গভীর রাতে মনে হয় কেউ তন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তন্নি এই ছোঁয়া চিনে না। পিটপিট করে একটুখানি চোখ খুলে ইতি বেগমকে দেখে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। মায়ের আদর পেতে চায় তন্নি। খুব ইচ্ছে করে মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে খানিকক্ষণ জাপ্টে ধরে রাখতে। খুব করে ফিল করতে চায় মায়ের শরীর থেকে আসা মা মা গন্ধটা। কিন্তু আজ ওবদি কখনোই মা কাছে টেনে নেয় নি। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নি। ভালোবেসে তন্নি বলে ডাকে নি। অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলেও কখনো এক লোকমা ভাত খাইয়ে দেয় নি। কখনো টিফিন বানিয়ে দেয় নি।
এতে তন্নির আফসোস নেই। আছে এক বুক হতাশা। মা যে তাকে মা বলে ডাকতে দিচ্ছে এটাই তো অনেক।
এতেই সন্তুষ্ট। তবে তন্নি কখনো বাবাকে নিয়ে একা স্বপ্ন দেখে না। সে শুধু বাবার স্বপ্ন গুলো পূরণ করতে চায় না। সে মায়ের ইচ্ছেও পূরণ করতে চায়। মা কখনো মুখ ফুটে কিছু বললে তন্নি জীবন দিয়ে হলেও রাখবে।
কিন্তু ইতি কখনোই তন্নিকে কিছু বলে না। স্বপ্ন দেখায় না। বারবার শুধু স্বপ্ন গুলো ভেঙে দিতে চায়। মনোবল নষ্ট করে দেয়।
ইতি বেগম তন্নির কপালে চুমু দেয়। তন্নির কপালে কপাল ঠেকিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে। তন্নি খুব কষ্ট নিজেকে আটকে রাখে। তারও যে খুব কান্না পাচ্ছে। মাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তন্নি জানে এখন তন্নি চোখ খুললে মা চলে যাবে। আদর করবে না তন্নিকে।
তাই মায়ের আদরটুকু উপভোগ করতে থাকে চোখ বন্ধ করে।
ফজরের আজানের সময় প্রতিদিনকার মতো ঘুম ভেঙে যায় তন্নির। পাশে মাকে পায় না। তবুও মুখে হাসি ফুটে তন্নির। চারদিক থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। তন্নি আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। চটজলদি ওজু করে নামাজটা আদায় করে নেয়।
___
অর্ণব সারা রাত ঘুমতে পারে নি। নিধি অনেকবার কল করেছে অর্ণব রিসিভ করে নি। এতো বছরের সম্পর্ক অর্ণব কখনো আগে আগে নিধিকে কল করেছে কি না মনে নেই। কখনো নিধির হাত ধরেনি। এসবে একদম ইন্টারেস্ট নেই। নিধি মাঝেমধ্যেই অর্ণবের হাত ধরে। অর্ণব কৌশলে ছাড়িয়ে নেয়।
সকাল সকাল অর্ণব রেডি হয়ে গেছে৷ অথৈ এখনো ঘুমচ্ছে। নয়টার আগে তার ঘুম ছোটে না।
অর্ণব রেডি হয়ে অথৈয়ের রুমে চলে যায়।
প্রথমেই জানালা খুলে। এক ফালি রোদ এসে পড়ে অথৈয়ের চোখে মুখে। অথৈ চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। মুখের ওপর হাত দিয়ে রোদ আড়াল করার চেষ্টা করে। অর্ণব মজা পায়। সে এবার রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেয়৷ ফ্যান বন্ধ করে দেয়। তারপর বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে পড়ে অথৈয়ের চিৎকার শোনার জন্য।
বেশিখন দাঁড়াতে হয় না। মিনিট দুয়েক পেরুতেই অথৈ মা বলে এক চিৎকার দিয়ে বসে পড়ে। ঘুম তার ছুটে গেছে।
“দশটায় ক্লাস আছে তোর। জলদি ফ্রেশ হয়ে নে।
বলেই অর্ণব শিষ বাজাতে বাজাতে চলে যায়। অথৈ দাঁত কটমট করে তাকিয়ে থাকে অর্ণবের দিকে।
“এই শয়তানের নানার সাথে আমার তন্নি সারাজীবন থাকবে কি করে? আমার তন্নিকে তো এ
অথৈয়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই অর্ণব দরজায় উঁকি দিয়ে বলে ওঠে
” কোলে তুলে রাখবো।কোল থেকে নামাবোই না। আর তোকে কাজের মেয়ে হিসেবে রেখে দিবো। তুই আমাদের রেধে বেরে খাওয়াবি।
অথৈ বালিশ ফিক্কে মারে অর্ণবের দিকে। অর্ণব চলে যায়।
তন্নি আজকে রিকশা করে এসেছে। বাবা টাকা পাঠিয়েছে অনেকগুলো। মা আজকে তন্নিকে তিন হাজার টাকা দিয়েছে। আর পঞ্চাশ টাকা দিয়েছে খাওয়ার জন্য।
টেইলার্সের কাছে বানাতে দেওয়া থ্রি পিছ দুটো মজুরি দিয়ে আনবে আজ আর দুই জোড়া জুতো কিনবে। এক জোড়া নিজের জন্যই আর আরেক জোড়া মায়ের জন্য।
ইতি বেগমের ভালো জুতো নেই। বাড়িতে পড়ে থাকা স্যান্ডেল পড়েই বেড়াতে যান তিনি। তন্নিরও জুতো নেই ভালো। বাবা থাকতে পাঁচশো টাকা দিয়ে এক জোড়া বাটা স্যান্ডেল কিনে দিয়েছিলো সেইএক জোড়া জুতোই সে পড়ে।
অথৈয়ের বাড়ির সামনে রিকশা মামাকে দাঁড়াতে বলে তন্নি৷ অথৈ আর অর্ণব গাড়িতে বসেছিলো তন্নির জন্যই। তন্নিকে রিকশায় দেখে ভীষণ ভালো লাগে অথৈয়ের। অথৈ রিকশায় উঠতে ভীষণ ভালোবাসে।
অর্ণব মুখটা কালো করে ফেলে। বুঝে যায় অর্ণবের সাথে যেতে চায় না বলে রিকশা করে এসেছে। কিন্তু অর্ণবের সাথেই যে যেতে হবে। কিচ্ছু করার নাই।
অর্ণব গাড়ি থেকে নেমে যায়। অথৈ নামতে গিয়েও পারে না অর্ণবের জন্য।
অর্ণব বড়বড় পা ফেলে ঠাসস করে রিকশায় তন্নির পাশে বসে পড়ে।
এটার জন্যই তন্নি প্রস্তুত ছিলো না। সে তাকিয়ে ছিলো অথৈদের গেইটের দিকে। তার জানা ছিলো না অথৈ আর অর্ণব গাড়িতে অপেক্ষা করছে।
“মামা চলেন।
অর্ণব তন্নির পেছন দিয়ে হাত নিয়ে হুড় টেনে দিয়ে ধরে থাকে। তন্নি হা করে তাকিয়ে আছে।
অথৈ গাড়ি থেকে চেঁচাচ্ছে। নামতে ভূলে গেছে সে।
মামা অর্ণবের কথা মতো চলতে শুরু করে। তন্নিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্ণব তন্নির ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে ফু দেয়। তন্নি কেঁপে ওঠে। মুখটা বন্ধ করে একটু নরেচরে বসতে যেতেই পিঠ ঠেকে অর্ণবের হাতে। আবারও শিউরে ওঠে।
শুকনো ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
” মামা যাচ্ছেন কেনো?
রিনরিনিয়ে বলতে যায় কিন্তু এতো আস্তে কথা বের হয়ে আসে যে মামার কান ওবদি পৌছায়ই না।
“ওয়েদারটা দারুণ না?
হুড় থেকে হাত সরিয়ে তন্নির হাতের ওপর রেখে হালকা করে জড়িয়ে নিয়ে বলে অর্ণব।
তন্নি অর্নবের হাত সরিয়ে দেয়।
” আমি এখানে কেনো?
“তোমার জন্য। আই নো দেট তুমি আমার সাথে পারসোনালি কিছু সময় কাটানোর জন্য রিকশা করে এসেছো। তোমার মনের কথা আমি বুঝতে পারি মায়াবতী।
কলার টেনে বলে অর্ণব।
” দেখুন
“সবে সাইন হলো
আগে কবুল বলো তারপর নাহয় দেখাদেখি হবে।
ঝাঁকড়া চুল গুলো বা হাতে পেছনে ঢেলে বলে অর্নব।
” আপনি একটা যা
“গাঁধার জামাই।
চলবে
Nice