বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ৫১

#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫১
.
টেবিলে ফাইল আর প্যাকেটটা দেখে মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেখ রিকের দিকে তাকালেন। মিস্টার রঞ্জিত ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” এগুলো কী?”

রিক ওনাদের বারবর চেয়ারে বসতে বসতে বলল,

— ” রাখাতো টেবিলেই আছে দেখে নাও।”

মিস্টার রঞ্জিত ফাইলটা হাতে নিলেন আর কবির শেখ ছবির প্যাকেটটা, সব ভালোভাবে দেখে দুজনেই অবাক হয়ে গেলেন।

কবির শেখ মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” এগুলো তো সাত বছর আগের গোডাউনের ছবিগুলো।”

মিস্টার রঞ্জিত ও ফাইলটা পড়ে চমকে গিয়ে বললেন,

— ” আরে এটাও তো হাসান আমার এগেইন্সস্টে যেই আর্টিকেল টা করছিল তার কিছু অংশ।”

কবির শেখ রিকের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” এগুলো তুমি কোথায় পেলে?”

রিক এতক্ষণ দুজনের কথা শুনছিলো কবির শেখ এর প্রশ্ন শুনে ওনাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” যাক মনে পড়লো তাহলে? আমিতো ভাবতাম তোমরা খুব বুদ্ধিমান। অথচ তোমাদের বিরুদ্ধে এতো গুরত্বপূর্ণ দুটোএভিডেন্স বাইরে অন্যের হাতে পরে আছে তোমরা জানোই না? বাহ!”

মিস্টার রঞ্জিত অবাক হয়ে বললেন,

— ” কোথায় ছিলো এগুলো?”

রিক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” রাইট! এটাও জানোনা। অনিমা আর আদ্রিয়ান এর কাছে ছিলো।”

রিকের কথা শুনে দুজনেই চমকে গেলেন। কবির শেখ চিন্তিত গলায় বললেন,

— ” কিন্তু এটা কীকরে সম্ভব? এই ছবিগুলোতো মিতা তুলেছিলে আর এগুলো তুলে নিয়ে যাওয়ার আগেই তো মিতাকে আমারা মেরে ফেলেছিলাম।”

রিক আবারও হাসলো, তারপর কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ও তারমানে জার্নালিস্ট মিতাকে তোমরাই খুন করেছো?”

মিস্টার রঞ্জিত বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” আরে হ্যাঁ। ঐ মেয়েটা আমাদের গোডাউনের স্মাগলিং এর ছবি তুলেছিলো কাউকে যাতে দিতে না পারে সেইজন্যেই তো ওখান থেকে পালানোর আগেই আমাদের লোক দিয়ে খুন করিয়েছি।”

রিক ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” শুনেছিলাম ওনাকে নাকি রেইপ ও করা হয়েছিল।”

কবির শেখ হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে ইতস্তত করে বললেন,

— ” হ্যাঁ ঐ জোয়ান ছেলেপেলে তো তাই..”

রিক একটা মলিন হাসি দিয়ে বলল,

— ” হুমম। তারমানে সেটাও তোমাদের লোকই করেছে?”

রঞ্জিত চৌধুরী বললেন,

— ” হুমম হঠাৎ এগুলো জ্ঞিজ্ঞেস করছো?”

রিক এবার একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসে ওনাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” এবার বুঝতে পারছো আমি ওদের টিমে জয়েন না করলে কী হতো? আজ প্রমাণ গুলো সব ওদের হাতে থাকতো, ঠিক সময় পাবলিস্ট ও করতো, আর তোমরা থাকতে জেলে।”

কবির শেখ টেবিলে দুইহাত রেখে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

— ” হুম এটা ঠিক। এখন আমারও মনে হচ্ছে যে রিকের ওদের সাথেই থাকা উচিত। সবে দুটো প্রমাণ উদ্ধার হয়েছে আর কী কী প্রমাণ ওদের হাতে আসে তার কোন ঠিক নেই।”

রিক হালকা হেসে দিয়ে বলল,

— ” এক্সাক্টলি! এইজন্যেই আগে ভালো সাজার নাটক করলাম এরপর ওদের বিশ্বাস অর্জন করলাম আর ওরাও আমাকে বিশ্বাস করে দিয়ে দিলো এগুলো রাখতে। এন্ড আ’ম ড্যাম সিউর এই ভুল ওরা বারবার করবে। আর ওরা যেদিন সবটা এক্সপোস করতে যাবে সেদিন আমি আসল বোমা ফাটাবো। এবার এগুলো নষ্ট করে ফেলো।”

কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী ফাইল আর ছবিগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলো। আর রিক বাঁকা হেসে জলন্ত আগুনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

______________________

দুটো দিন কেটে গেছে। অনিমাও নতুন করে অফিস জয়েন করেছে। আদ্রিয়ানের বাবা মায়ের স্নেহ যত্ন আর আদ্রিয়ানের ভালোবাসায় বেশ ভালোই দিন কাটছে অনিমার।

এরমধ্যে আদ্রিয়ানের বিয়ে ঠিক হচ্ছে আর মেয়ে আদ্রিয়ানের বাড়িতেই আছে শুনে আদ্রিয়ানের ফুপি চলে এলেন ওদের বাড়িতে বউ দেখতে। এসে অনিমাকে বাড়িতে না পেয়ে, মিসেস আবরারের কাছ থেকে ইনিয়ে বিনিয়ে অনিমা সম্পর্কে ছোটখাটো পি এইচ ডি ও করে নিলেন আরকি।অনিমা অফিস করে আদ্রিয়ানদের বাড়িতে আসতে আসতে প্রায় আটটা বেজে গেলো। এসে কলিং বেল চাপতেই মিসেস আবরার দরজা খুলে অনিমাকে দেখে মুচকি হেসে বলল,

— ” এসে গেছিস। আয় ভেতরে আয়।”

অনিমা হেসে ভেতরে ঢুকতেই সোফায় একজন মহিলাকে বসে থাকতে দেখে মিসেস আবরারের দিকে তাকালো, মিসেস আবরার বললেন,

— ” ইনি আমার বড় ননদ। আদ্রিয়ানের ফুপি।”

অনিমা মুখে হাসি ফুটিয়ে ওনাকে সালাম দিলো, উনি সালাম নিলেন তবে মুখভঙ্গি দেখে মনে হলো অনিমার ওপর খুব বিরক্ত। অনিমা বুঝতে পেরেও কিছু বললনা। মিসেস আবরার অনিমাকে বললেন,

— ” যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। ক্লান্ত হয়ে এসছিস নিশ্চয়ই?”

অনিমা চুপচাপ ওপরে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ভ্যাপসা গরম পরেছে তাই এক্কেবারে সাওয়ার নিয়ে, চুল শুকিয়ে তারপরেই নিচে গেলো। নিচে গিয়ে দেখে মানিক আবরার, মিসেস আবরার, আর আদ্রিয়ানের ফুপি সোফায় বসে আছে। অনিমা গিয়ে দাঁড়াতেই মিসেস আবরার বললেন,

— ” আয় বস তোর জন্যে চা রেখে দিয়েছি। ঠান্ডা হয়ে যাবে খেয়ে নে।”

অনিমা বসতে নেবে তখনি ফুপি চড়া গলায় বললেন,

— ” এ কেমন মেয়ে সেটাই ভাবছি আমি। কোথায় সন্ধ্যায় সবাইকে চা করে খাওয়াবে তা নয় উল্টে হবু শাশুড়ি মায়ের করে দেওয়া চা টা পায়ের ওপর পা তুলে বসে খাবে।”

অনিমা আর বসলোনা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। মানিক আবরার কিছু বলবে তার আগেই মিসেস আবরার বললেন,

— ” কী সব বলছো আপা? মেয়েটা এতো পরিশ্রম করে অফিস থেকে এসছে। আর আমি তো সারাদিন বাড়িতেই ছিলাম। একটু চা করে ওকে খাওয়ালে ক্ষতি কী?”

ফুপি বিরক্ত হয়ে বললেন,

— ” হুহ। বিয়ের আগেই এই মেয়েকে মাথায় তুলছিস তো? দেখবি একদিন তোরই মাথার ওপর ছুড়ি ঘোরাবে সেদিন বুঝবি।”

মানিক আবরার ও এবার বড় বোনের কথায় বিরক্ত হয়ে বললেন,

— ” ছুড়ি ঘোরালে আমাদের ওপর ঘোরাবে তোর এতো সমস্যা কী সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।?”

অনিমা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফুপির ব্যবহারে সামান্য মন খারাপও হচ্ছে ওর। মিসেস আবরার ওকে বসতে বলবেন তার আগেই ফুপি বলে উঠলেন,

— ” আচ্ছা আমাদের আদ্রিয়ানের জন্যে কী মেয়ের অভাব পরেছিলো নাকি বলতো যে এরকম একটা মেয়েকে ওর বউ বানাচ্ছিস?”

মিসেস আবরার ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” এরকম মানে কী? কী বলতে চাইছো তুমি?”

ফুপি মুখ বাকিয়ে বললেন,

— ” বুঝতে পারছিস না নাকি? বাপ মা নেই। তারওপর একা একটা ফ্লাটে থাকতো। এই যুগে যা সব হয় কীসব কুকীর্তি করে বেড়িয়েছে তা বলতে পারবি? আর দেখ রাত আট টা বাজে বাড়ি ফিরলো, বিয়ের পর কী এসবই করবে নাকি?”

এতোক্ষণ কিছু মনে না বললেও এবার অনিমার বেশ খারাপ লাগলো ব্যপারটা কারণ ওর এবার উনি ওর চরিত্র নিয়ে কথা বলছে। মানিক আবরার এবার রাগী গলায় বললেন,

— ” কী করেছিস বলতো আপা? মেয়েটার কেউ ছিলোনা বলেই তো একা থাকতে হয়েছে তাইনা? এতে ওর কী দোষ? আর ওর কাজ থাকলে দেরী তো হতেই পারে এতে সমস্যা কী?”

ফুপি ভ্রু কুচকে তাকালেন নিজের ভাইয়ের দিকে। অনিমা একদৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে চোখ দুটো ছলছল করছে ওর। মিস্টার মিসেস আবরারও বেশ বিরক্ত হচ্ছে এসব কথা শুনে। যথেষ্ট ভদ্রভাষায় থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু থামছে না। ফুপি অনিমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” আর এসব যদি বাদও দেই। ঐ মন্ত্রীর ছেলেটা ওকে তুলে নিয়ে গেছে, বিদেশে নিয়ে গিয়ে কয়েকটা দিন রেখেছিলো। একটা পরপুরুষের কাছে এতোদিন ছিলো, তোমাদের কী মনে হয় ছেলেটা ওকে নিয়ে বসিয়ে পুজো করছিলো? আমাদের দেখে কী মনে হয় ঘাসে মুখ দিয়ে চলি?”

অনিমা এবার চোখের জল আটকাতে পারলো না, নিজের সম্পর্কে এরকম কথা শুনতে কোনো মেয়েরই ভালো লাগে না। আর উনি রিতীমত ওকে চরম অপমান করছেন। অন্যকেউ হলে নিশ্চয়ই কটা শুনিয়ে দিতো কিন্তু আদ্রিয়ানের ফুপি আর সামনে বাবা মা আছে তাই চুপচাপ সহ্য করছে। মিসেস আবরার এবার উঠে দাঁড়িয়ে রেগে বললেন,

— ” আপা এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো।”

ফুপি পাত্তা না দিয়ে বললেন,

— ” ভুল কী বললাম? কী এমন যোগ্যতা আছে এই মেয়ের আদ্রিয়ানের বউ হওয়ার? কেনো ওকে আদ্রিয়ানের বউ বানাতে উঠে পরে লাগছো হ্যাঁ ? ”

— ” কারণ অাদ্রিয়ান নিজে ওকে ভালোবাসে। শুধু ভালোই বাসেনা সারাজীবন ওর সাথেই কাটাতে চায়।”

এই কথা শুনে সকলেই তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হ্যাঁ আদ্রিয়ান প্রথম থেকেই সব শুনছিলো কিন্তু কিছু বলেনি কারণ ও শুনতে চাইছিলো এই মহিলা আর কী কী বলতে পারে। যখন দেকলো মুখ খোলা জরুরী তখনই খুললো। ওনারাও কেউ খেয়াল করেনি ওকে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে ওর ফুপির দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আমার তো মনে হয়না এর চেয়ে বড় কোনো কারণ থাকতে পারে বা থাকার দরকার আছে।”

ফুপি মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলেন। উনি খুব ভালোকরেই জানেন আদ্রিয়ান কী বলতে পারে। মিস্টার আর মিসেস আবরার এবার একটু আয়েশ করে সোফায় বসল, ওনারাও জানেন এখন কী হবে তাই প্রস্তুতি নিয়ে বসল আরকি। অনিমা এখনো মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান সিঙ্গেল সোফায় বসে ফুপির দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী যেনো বলছিলে ফুপিমনি? যে চা টা মাকে কেনো করতে হলো তাইতো? আচ্ছা এটা কোথায় লেখা আছে যে বাড়ির সব কাজ শুধু ঘরের বউরাই করবে?”

ফুপি ভ্রু কুচকে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” তো তুই কী বলতে চাইছিস তোর মা হাত পুরিয়ে রান্না করবে আর তোর বউ বসে বসে খাবে?”

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” আমি সেটা কখন বললাম। এটা ডিপেন্ড করবে কে কতোটা ফ্রি এবং সুস্হ আছে তার ওপর। আজ অনিমা লেট করে ফিরেছে, মা ফ্রি ও ছিলো সুস্হ ও ছিলো তাই নিজেই চা করেছে। অনিমা ফ্রি থাকলে ও নিজেই সব করবে ওকে বলতে হবেনা, এটুকু চিনি আমি ওকে। ইনফ্যাক্ট ও যদি এসে দেখতো যে চা করা হয়নি তাহলে ও নিজেই যেতো করতে । কিন্তু আমার মা তো আর তোমার মতো না তাইনা যে পায়ের ওপর পা তুলে বসে ঘরের বউকে ওর্ডার করবে। কারণ উনি মা তোমার মতো সো কলড শাশুড়ি না।”

ফুপি মাথা নিচু করে আছে। আর অনিমা এবার মাথা তুলে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান আবার বলল,

— ” আর কী বলছিলে? ও এতোদিন একা একটা ফ্লাটে থাকতো কোথায় কী কুকীর্তি করে বেড়িয়েছে তার ঠিক নেই। সেটা বললে তো আমিও এতোদিন একা একটা এপার্টমেন্টে ছিলাম তারওপর একজন সেলিব্রিটি, তো আমিও কোথায় কী কুকীর্তি করে বেড়িয়েছি তারও তো কোনো ঠিক নেই তাইনা?
ও রাত আটটায় এসেছে বলে তোমার প্রবলেম হচ্ছে , আর আমিতো রাত সাড়ে নটায় বাড়িতে এলাম, মাঝেমাঝে আরো রাত হয় তাহলেতো তোমার আমাকে নিয়েও সমস্যা থাকার কথা, রাইট?”

ফুপি এবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তুই আর ও কী এক নাকি? তুই হলি ছেলেমানুষ। তোর সাথে ওর তুলনা হয়?”

আদ্রিয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” কেনো পার্থক্য কোথায় আমাদের? আমার দুটো হাত, দুটো পা, দুটো চোখ আছে ওরও আছে। আমারে হার্ট বিট করে ওরটাও করে। আমাকে একটা একটা আঘাত করলে আমি যতটা ব্যাথা পাবো ওকে করলে ওও ততোটাই ব্যাথা পাবে। কেটে গেলো দুজনের শরীর থেকে রক্তই বেড়োবে। তাহলে? পার্থক্য কোথায়? আমার স্বাধীন ভাবে নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার যতোটা আছে ততোটাই ওর আছে। তাহলে যেটা ভুল সেটা দুজনের জন্যেই ভুল। ছেলে বা মেয়ে হওয়াতে ভুলটা ঠিক আর ঠিকটা ভুল হয়ে যায় না। তোমাদের মতো এইরকম চিন্তা ধারার মানুষদের জন্যেই ছেলেরা এটা মনে করে যে ওরা যা খুশি তাই করতে পারে আর মেয়েরা ওদের ইচ্ছেমতো ওদের কাঠপুতুল হয়ে থাকবে।”

ফুপি এবার চুপ করে আছে, কী বলবে সেটাই জানেনা উনি। আর অনিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অাদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” আর ও কোনো অন্য ছেলের কাছে এতদিন ছিলো এতে যদি আমার কোনো সমস্যা না হয় তাহলে তুমি বলার কে এখানে? ওর সাথে সংসার কী তুমি করবে? যাই হোক আমার হবু বউ দেখতে এসছিলে দেখা হয়ে গেছে। আশা করি কালকে সূর্য ওঠার পরেই নিজের বাড়ি চলে যাবে।”

ফুপি রেগে প্লাস অবাক হয়ে বললেন,

— ” আদ্রিয়ান এটা কিন্তু আমারও বাড়ি।”

আদ্রিয়ান ওনার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” মোটেও না। দাদু মারা যাওয়ার পর তুমি তোমার পাওনা প্রপার্টির টাকা চেয়ে নিয়ে গেছো। সো এই বাড়ির ওপর তোমার কোনো অধিকার আইনত নেই। তবুও আত্মীয় হিসেবে যেটুকু সম্মান দেওয়া হয় নিজের দোষে নিজের সেই সম্মানটুকুও হারাচ্ছো। তোমার জন্যে অকারণে আমার বউয়ের চোখ দিয়ে জল বেড়োবে সেটা অন্তত আমি মেনে নেবোনা।”

ফুপি রাগী কন্ঠে বললেন,

— ” বউ হয়ে না আসতেই শাসন না করে এভাবে আল্লাদ দিচ্ছিস তো পরে বুঝবি। বউয়ের নিজের হাতে রাখতে পারিসনা কেমন পুরুষ মানুষ তুই?”

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” কে বলেছে শাসণ করিনা? খেতে না চাইলে ধমকে জোর করে খাওয়াই, অনিয়ম করলে বকি, নিজের অযন্ত করলেও বকাবকি করি। এছাড়া ও আর তেমন কিছু করেনা যার জন্যে শাসন করতে হবে। আর আল্লাদের কথা বলছো? আমারই তো বউ আমি আল্লাদ না দিলে কে দেবে? আর হ্যাঁ বউ কোনো প্রপার্টি বা গৃহপালিত পশু না যে ওকে হাতে রাখতে হবে, ও আমার লাইফ পার্টনার আমার সহধর্মিনী, ওকে হাতে না পাশে রাখাটাই সবচেয়ে জরুরি। আর ও সেটা সবসময় আছে। আর যারা নিজের বউয়ের পায়ে শিকল পরিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখাকে পুরুষত্ব মনে করে তাদের চেয়ে বড় লুজার আর কাওয়ার্ড দুনিয়াতে দুটো নেই। এন্ড আ’ম নট আ লুজার ওর কাওয়ার্ড।”

বলে উঠে অনিমার হাত ধরে ওখান থেকে সিড়ি দিয়ে সোজা ওপরে নিয়ে গেলো। অনিমার সেদিকে ধ্যান নেই ও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আজ আরেকবার নতুন করে প্রেমে পরে গেল ওর। এরকম করে কজন ছেলে চিন্তা করতে পারে। সত্যিই ও খুব লাকি যে ওর কাছে আদ্রিয়ান আছে, এরকম একজন মানুষ যার পাশে থাকে তার আর কিছু চাওয়ার থাকতেই পারেনা।”

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here