খড়কুটোর বাসা ২ পর্ব -১৯

#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ১৯
#Jhorna_Islam

বড় দাদু ভাই,

চিঠি টা যখন তুমি পরবে তখন হয়তো আমি তোমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবো।পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে বিলীন হয়ে যাবো। সময় হয়ে গেছে হয়তো চলে যাওয়ার। মন আমার জানান দিচ্ছে তা। শরীর টা কয়েক দিন ধরেই ভালো যাচ্ছে না রে ভাই। কিছু অপ্রিয় সত্য তোর জানা খুব দরকার। যা তুই ছোট থেকেই আমার কাছে জানতে চেয়েছিস। বারং বার জিজ্ঞেস করেছিস।আমি বলিনি হয় এড়িয়ে যেতাম নয় চুপ করে যেতাম। মাঝে মাঝে হয়তো মিথ্যা ও বলেছি। আজ আমার মনে হলো তোর বিষয় গুলো জানা দরকার। না বলে গেলে হয়তো আমার মন ও শান্তি পাবে না। তোর দাদা যখন আমায় বিয়ে করে আনে তখন তোর বাবার বয়স ৯ বছর। আমি তখন ১৭ বছরের। পরিবার থেকে জোর করে তোর দাদার সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়।সবকিছু মুখ বুঁজে মেনে নিয়েছিলাম। কিছুদিন পর জানতে পারি তোর দাদার প্রথম বউ কেন তাকে ছেড়ে চলে গেছে। লোকটার মেয়ের নে/শা ছিলো যা তিনি মেনে নিতে পারেন নি।কেউই নিজের স্বামী কে অন্য মেয়ের সাথে মেনে নিতে পারে না। তাই তোর বাবা কে আর তোর দাদা কে ছেড়ে চলে যান।আমি যেতে পারি নি সব কিছু চোখের সামনে দেখেও মুখ বুঁজে পরে রইলাম। তোর বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সংসার টা আ’কড়ে ধরলাম। পরে জানতে পারলাম আমি কখনো মা হতে পারবো না। আফসোস হয়নি আরো এটা ভেবে ভালো লেগেছে যে আর কেউ আসবে না কষ্ট পেতে। তোর বাবা কে আদর দিয়ে বড় করলাম। একদিন হুট করেই তোর দাদা মা’রা গেলো কেন জানি কষ্ট লাগে নি। একটা বিষয়ে খুব কষ্ট লাগতো তোর বাবা কে এতো আদর যত্ন করেও তার আপন হয়ে উঠতে পারলাম না। নিজে পছন্দ করে তাকে বিয়ে করালাম।আমার ঘর আলোকিত করে তোর মা এলো। বছর ঘুরতেই তোর আগমনের সংবাদ। আমার সংসার টা পূর্ণ হয়ে গেলো।সুখী সংসার আমাদের। তোর বাবা ও তোর মা কে অনেক ভালোবাসতো। তুই আস্তে আস্তে আমাদের মাঝে বড় হতে থাকলি। কিন্তু কে জানতো হুট করে এক ঝড় এসে সব ল/ন্ড ভ/ন্ড করে দিয়ে যাবে। তোর মায়ের অসুখ বাঁধলো শোয়া থেকেই উঠতে পারে না খুব কষ্ট হয়। তাই বেশি উঠতে দেই না। আমি এক হাতে সব সামলে উঠতে হিমসিম খাচ্ছিলাম।তাই তোর মা তার বোন তাছলিমার কথা বলল। চাচাতো বোন হলেও তাদের অনেক মিল।সে আসলে তোকে দেখে রাখতে পারবে। কিন্তু এটা জানতো না তার আগমনে সব এলোমেলো হয়ে যাবে। কয়েকদিন যেতেই তোর বাবার সাথে সক্ষতা গড়ে উঠে। ব্যাপার টা আমার ভালো লাগে নি।তোর মা কে জানাতেই বলল তেমন কিছুই না ওদের উপর বিশ্বাস আছে। কিন্তু তোর মা এটা বোঝেনি আগুন আর ঘি কে এক সাথে রাখতে নেই। তাদের ভিতরের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীর হয়ে যায়। চোখের সামনে থেকেও আমাদের চোখে ধুলো দিয়ে পা’পে জড়িয়ে পড়ে। একদিন তোর মা ওদের এক সাথে একই রুমে,,,,লিখতে আমার ঘৃণা লাগছেরে ভাই। তোর মা চোখের সামনে সব দেখে চুপ হয়ে যায়। আমার কাছে এসে হাতে ধরে অনুরোধ করে তোকে যেনো দেখে রাখি।খুব করে কান্না করে।শুধু একটা কথাই বলে আমার সব শেষ আম্মা। আমার সব শেষ। আমাকে অনেক করে অনুরোধ করে তোকে যেনো এসব না বলি তুই কষ্ট পাবি। আমি অনেক বুঝাই এদের শাস্তি দরকার। নিজের ছেলে মনে করে যাকে পেলে বড় করলাম সে তার বাপের ধারাই পেলো।ভালো হলো না। তোর মা বলল আজ কিছু বলবে না সকাল হলে দুইজন কে একসাথে ডেকে কৈফিয়ত চাইবে। কিন্তু পারলো না এতো যন্ত্রনা তার মাথা টা নিতে পারে নি।ঔদিন রাতেই আমাদের ছেড়ে চলে যায়। মানুষ জন স্টো’ক করছে বললে কি হবে আমিতো জানি আসল কারণ টা। কতো যন্ত্রনা ছিলো তার ভিতর। তারপর আমি তোকে লালন পালন করতে থাকি।ওদের অনেক শাসিয়েছি। পুলিশের ভ’য় ও দেখিয়েছি। কিন্তু ওরা তোকে মে/রে ফেলার ভ’য় দেখিয়ে আমাকে চুপ করিয়ে দিতো।

এই সত্যি টা তোর সামনে আনার একটা কারণ আছে ভাই।আমি তোর জন্য সঠিক মানুষ টা পছন্দ করে তোর জীবনে দিয়ে গেলাম। এই কা’ল’সাপ গুলোর থেকে ওরে নিয়ে গিয়ে দূরে কোথাও সংসার করে থাক। এদের থেকে অনেক দূর চলে যা। তোর জীবনে আমি সঠিক মানুষ টা দিয়ে গেলাম ভাই। আমি এখন চিন্তা মুক্ত। সবসময় ভালো থাক এটাই আমার দোয়া।

ইতি তোর দাদি।

চিঠির রহস্য টা ইরহান কে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে। অনেকটাই ভেঙে পরেছে। নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগে। সব কিছু কেমন থমকে আছে। কোনো কিছু তে মন বসে না তার।

—————————–
ইরহান কিছু টা স্বাভাবিক হলেও পুরোপুরি হতে পারে নি। তার মা কষ্ট পেয়েছে ভাবলেই বুক ফেটে কান্না আসে। ঐ দুটো মানুষ কে নিজের হাতে শেষ করতে পারলে শান্তি পেতো।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছে। মাথা গরম করলে চলবে না।

যুথির সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা হয়।এই সত্যি টা যুথি কে বলেনি ইরহান। কাউকে বলবেও না বলে ঠিক করেছে। তবে ওদের কোনোদিন ক্ষমা করবে না।

ইদানীং খুব করে যুথির মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ করছে ইরহান। ভালো করে তার সাথে কথা বলে না। কল দিলে ধরতে চায় না। অনেকবার কল করার পর গিয়ে রিসিভ করে। নিজে থেকে কিছু বলে না। ইরহান জিজ্ঞেস করলে শুধু হুু,হা করে উত্তর দেয়। নানান বাহানায় কল কেটে দেয়। ইরহান কে এড়িয়ে যায়।

ফোন বেশির ভাগ বন্ধ নয়তো বি’জি পায়। ইরহান কয়েকবার প্রশ্ন করলেও উত্তর দেয় না।ইরহান অনেক বলেছে কি হয়েছে যুথি রানী?

তোমার কি কোনো সমস্যা হয়েছে? আমাকে বলো আমি সব সমস্যার সমাধান করে দিবো।

কিছুই বলে না যুথি।

ইরহান ইশান কে ও জিজ্ঞেস করেছে বাড়িতে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না। যুথির কি হয়েছে।

ইশান ও কিছুই বলতে পারছে না। ইশান ও গিয়ে জিজ্ঞেস করেছে যুথি কে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না যুথি জানিয়েছে কিছু হয় নি।

ইরহান সব দিক দিয়ে যেনো দিন দিন ভেঙে পরছে।সব কিছু তার শেষ হয়ে যাচ্ছে। একদিকে মায়ের কথা ভাবলে তার ঘুম আসে না। আরেক দিকে তার ভালোবাসার মানুষ টা একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে।সে কিছুই করতে পারছে না। কষ্টের দা’বা’নলে ভিতর টা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

যার জন্য নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করছে সেই যদি এমন করে দূরে চলে যায় তাহলে তো সব কিছু বৃথা। সবচেয়ে বেশি কষ্টের চোখের সামনে নিজের মানুষ টা বদলে যেতে দেখা।

ইরহান সব দিক দিয়ে ভেঙে পরেছে। খাওয়া দাওয়া, ঘুম কিছুই হচ্ছে না। কাজে মন বসাতে পারছে না। তার যুথি রানী কেন এমন করছে? কি হয়েছে ।

অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুথির থেকে জেনেই ছাড়বে কি হয়েছে। যুথি কে কল করে ইরহান। বার কয়েক কল করার পর রিসিভ হয়। ভালো মন্দ খোঁজ খবর নেওয়ার পর ইরহান জিজ্ঞেস করে,, তোমার কি হয়েছে?
,,,,,,,,,,,,,,,,,

আমাকে প্লিজ বলো।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আমি এসব আর নিতে পারছি না। শেষ হয়ে যাচ্ছি। এক কাজ করো এমন অবহেলা না করে আমাকে একে বারে মে/রে ফেলো প্লিজ। তোমার কাছে আমি হাত জোর করে অনুরোধ করছি। আমাকে কিসের শাস্তি দিচ্ছো তুমি বউ?
তুমি কি আমার সাথে আর থাকতে চাও না? বলেই ইরহান এবার কেঁদে ওঠে।কিছুতেই আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না।

#চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here