খড়কুটোর বাসা ২ পর্ব -২০

#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ২০
#Jhorna_Islam

তুমি কি আমার সাথে থাকতে চাও না যুথি রানী? আমাকে একা ফেলে চলে যেতে চাও?

ছেলে মানুষ নাকি সহজে কাঁদে না। প্রচন্ড আ’ঘাতে কষ্টে তাদের চোখে পানি আসে।তাও আবার সবার কাছে তা প্রকাশ পায় না, অথবা তারা করে না।নিজের খুব কাছের একান্ত নিজের মানুষটার কাছে তা প্রকাশ করে। ইরহান এতোদিনের জমিয়ে রাখা দুঃখ কষ্ট আর যুথির অকারণে করে যাওয়া অবহেলা বা বদলে যাওয়া টা মেনে নিতে পারছে না। তার জীবনে যে এই নিজের নারী টি ছাড়া আর কেউ আপন না। ইরহান যে বড্ড একা।

এইযে ইরহান কাঁদছে তার বউটা কি বুঝতে পারছে না তার কতো টা কষ্ট হচ্ছে? তার যে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।

যুথি চুপচাপ শুধু শুনে গেলো ইরহানের কথা। ইরহানের কান্নার শব্দ পেয়ে সে কি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে? কখনো না। এতো সময় নীরবে চোখের পানি ঝড়ালেও এবার সে নিজেও শব্দ করে কেঁদে উঠে।

ইরহান যুথির কান্নার আওয়াজে নিজের কান্না থামিয়ে দেয়। তড়িঘড়ি করে জানতে চায়,,,,

কি হয়েছে তোমার?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

কেনো কাঁদছো তুমি? কান্না বন্ধ করো।তোমার কান্না আমার সহ্য হয় না। আমি কিছু অন্যায় করে থাকলে আমাকে শাস্তি দেও। তবুও কেঁদো না। শান্ত হও।

আ-আমি,,,,কান্নার জন্য কিছু বলতে পারে না যুথি।গলায় সব যেমন আঁটকে আছে।

তুমি আগে শান্ত হও প্লিজ। কষ্ট হচ্ছে তো তোমার। পানি খাও আগে।

যুথি ইরহানের কথা মতো টেবিল থেকে পানি নিয়ে তারাতাড়ি পান করে নেয়।

ইরহান যুথিকে সময় দেয় নিজেকে ঠিক করার জন্য।
এখন ফোনের দুইপাশেই নীরবতা। শুধু নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।

অনেক টা সময় দুই পাশেই নীরবতা ছেয়ে আছে। ইরহান ই সেই নীরবতার অবসান ঘটায়। খুব আদুরে ভাবে ডেকে উঠে তার প্রিয়তমা কে।

যুথি রানী,,, এই যুথি রানী।

” হুু?”

ঠিক আছো?

হুম।

ভিডিও কল দিচ্ছি ধরো। কথাটা বলে ইরহান কল কেটে সাথে সাথে ভিডিও কল দেয়।

যুথি নিজেকে ঠিক করে রিসিভ করে। কিছু সময় দুইজন দুইজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। দু-জনের বুকের ভিতর টা ধ’ক করে উঠে। দুইজনের চেহারার অবস্থা ই খারাপ’ হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ। মুখটা শুকিয়ে গেছে।

যুথি ইরহানের অবস্থা দেখে আবার কেঁদে দেয়।

কি- কি করেছেন নিজের অবস্থা? আল্লাহ।

ইরহান মলিন হাসে। বেঁচে আছি এই অনেক।

“একদম বাজে কথা বলবেন না। খাওয়া দাওয়া ঘুম কিছু করেন নি ঠিকঠাক মতো?”

— আমার কথা বাদ দাও। তুমিও তো নিজের কি অবস্থা করেছো।

— কেন বাদ দিবো? আপনাকে আমার এমন ভাবে দেখতে একটু ও ভালো লাগছে না। আপনার শরীর ঠিক আছে?

— এই দুই- তিন দিন ঠিক ছিলো না। বিশ্বাস করো একদম ঠিক ছিলো না। শ্বাস নিতেও যেনো কষ্ট হতো। কিন্তু এখন আমি একদম ঠিক আছি।

— যুথি ইরহানের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়। সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে লোকটা কে সে কতোখানি কষ্ট দিলো। নিজেও কষ্ট পেলো।

— আমাকে আপনি মাফ করে দিয়েন।আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো এমন হবে না।

— কি হয়েছিলো তোমার? আমি কি কোনো ভুল করেছি?

— না।

— তাহলে?

যুথি আমতা আমতা করে আসল কাহিনী টা বলে দেয় ইরহান কে। ইরহানদের বাড়ির পাশেই একজন প্রবাস থাকে। বিয়ে করে চলে গিয়েছিল আবার প্রবাস। কিন্তু কিছু দিন আগে ঐ লোক প্রবাস থেকে বিয়ে করে সাথে করে বউ নিয়ে আসে। এই নিয়ে কতো ঝামেলা। ঐ বউ নাকি এখানে থাকতে আসেনি।ঘুরে চলে যাবে।সে যাই হোক নিজের স্বামী আরেক টা বিয়ে করলে কোন মেয়ে মেনে নিতে পারে? এটা শুনে যুথির মন খারাপ ছিলো।

এরমধ্যে যুথির স্কুলের এক বান্ধবী ফোন দেয়।কথায় কথায় অনেক কিছু বলে দুইজনে। যুথির স্বামী বিদেশ শুনে বলে উঠে,, ওর এক কাকা নাকি দেশে বউ রেখেও ঐ দেশে বিয়ে করেছে। জিজ্ঞেস করলে জানায় দুই বউ দুই দেশে থাকবে সমস্যা কি?

যুথি কে বলে যেনো সাবধান হয়।

যুথি হেসে বলে,, আমার সাবধান হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমার মানুষ টা কে আমি নিজের থেকে ও বেশি বিশ্বাস করি।সে এসব করা তো দূর কল্পনা ও করতে পারবে না।

সব কথা হেসে উড়িয়ে দিস না। পুরুষ মানুষ কে এতো বিশ্বাস করতে নেই। এরা বছরের পর বছর গড়ে উঠা বিশ্বাস আর ভরসা দুই মিনিটে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। আমার চাচা কে দেখ। দুইজন ছেলে মেয়ে তারপর ও তো এমন করলো।ওরা তো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো।আর তোর তো কয়েকদিন আগে মাত্র বিয়ে হয়েছে। না আছে ছেলে মেয়ে এতো বিশ্বাস করিস না। বলে ফোন রাখে যুথির বান্ধবী।

যুথি তখন চুপ ছিল। মাথায় যেনো চিন্তা ঢুকলো। কিসের চিন্তা যুথি জানে না। মন একটা কথাই বলছে ইরহান জীবনে ও এমন কাজ করবে না। কিন্তু তার বান্ধবীর বলা কথা টা তার মাথার উপর খুবই বা’জে ভাবে প্রভাব বিস্তার করে। মাঝে মাঝে আমরা যেটা বিশ্বাস করি না কোনো দিন হওয়ার সম্ভাবনা ও নেই, কিন্তু অপরজনের কথায় মাথায় তা প্রভাব বিস্তার করে। নিজের মন থেকে মাথার কথা টা বেশি ঘুরঘুর করে। যুথিও কেমন হয়ে গেলো।

মাথায় ঘুরতে থাকলো এতো করে বিদেশ যেতে না করার পর ও ইরহান গেছে কেন গেলো? যুথির কথা কেন শুনলো না? এরমধ্যে ইরহান প্রথম কয়েকদিন যুথি কে ভালো করে সময় দিতে পারে নি। সব মিলিয়ে যুথি নিজের মাঝেই ছিল না। মনে হচ্ছিল ইরহান তার থেকে দূরে সরে গেছে।

সবকিছু ইরহান কে খুলে বলে যুথি।

ইরহান খুব মনোযোগ দিয়ে তা শুনে।

যুথি কাঁদতে কাঁদতে বলে,,আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।আমার কি হয়ে গিয়েছিল আমি নিজেও জানি না। আমি আপনা কে এতোটা বিশ্বাস করে ও কেন আপনার সাথে এমন ব্যবহার করলাম। আমি খুব খারাপ। আপনার ভালোবাসার যোগ্য না। খুব কষ্ট দিয়েছি আমি আপনাকে।

ইরহান সবই বুঝতে পারছে।ঐ ঘটনা গুলোর প্রভাব পরেছিলো যুথির মস্তিষ্কে।

যুথি অনবরত কেঁদেই চলেছে।

হুসস,, আর কাঁদে না বউ।আমি ভুল বুঝিনি তোমায়।আমি ব্যাপার টা বুঝতে পেরেছি। শান্ত হও তুমি।

যুথি তবুও মানতে নারাজ। অনেক বুঝিয়ে শান্ত করেছে। তারপর যুথির মন ভালো করার জন্য কয়েকদিন পরে দেওয়া সারপ্রাইজ টা আগেই দিয়ে দেয়।

খুব শিঘ্রই যুথিকে ইরহান তার কাছে নিয়ে যাবে।তার ব্যবস্থা করছে। ইরহানের বস সব কিছু ঠিক করছে।

যুথি শুনে পুরাই অবাক। সত্যি আমাকে আপনার কাছে নিয়ে যাবেন?

না।

তাহলে যে বললেন নিয়ে যাবেন। মন খারাপ করে বলে যুথি।

বলেছিই তো নিয়ে যাবো তবে তোমাকে না।

কাকে?

আমার বউ কে নিয়ে আসবো আমার কাছে।

ইরহানের কথায় যুথির মুখে হাসি ফোটে উঠে। বলে উঠে,, কবে নিয়ে যাবেন আমায়? তারাতাড়ি নিয়ে যান প্লিজ। আমি আপনার কাছে যাবো।আপনাকে ছাড়া আমার একদম ভালো লাগে না।

আর মাত্র কয়েক দিন বউ। তারপর আমার কাছে নিয়ে আসবো। আমার বস সব খুব তারাতাড়ি করে দিবে।উনি আমায় খুব স্নেহ করেন। নিজের ছেলের মতো দেখেন। উনি নিজে থেকেই বলেছে উনি সব ব্যবস্থা করে দিবে।

আমার হয়ে উনাকে একটা ধন্যবাদ জানিয়ে দিয়েন তো।

ধন্যবাদে কাজ হবে না। আপনার হাতের বাঙালি রান্না খাওয়ার জন্য আবদার করে বসে আছে আগে থেকেই।

আচ্ছা সব রকম খাবার রান্না করে খাওয়াবো।
কবে যে আপনার কাছে যাবো। আমার তো আর ত’র সইছে না।

ইরহান মন ভরে যুথির আনন্দিত মুখ খানা দেখছে।

আপনাকে জানেন কতো মিস করি আমি?

হ্যা এইজন্যই তো এই কয়দিন আমাকে এমন কষ্ট দিলে।

ইরহানের কথায় যুথির চোখে আবার অশ্রু জমে।

এই একদম কাঁদবে না।আমি মজা করে বলেছি। আমি তো জানি তুমি আমায় কতো মিস করো। যুথি তাও মন খারাপ করে বসে আছে। তাই ইরহান দুষ্টুমি করে বলে উঠে,, আচ্ছা তুমি কি আমায় মিস করছো? নাকি আমার আদর গুলো মিস করছো?

মুহূর্তের মাঝেই ইরহানের কথা শুনে যুথির চোখ মুখে লজ্জা এসে ভিড় করে। চোখ নিচে দিয়ে চুপটি করে বসে থাকে।

ইরহান নীরবে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। যাক মন খারাপের রে’শ টা কাটাতে পেরেছে।
ঐদিন সারারাত দুইজন মিলে কথা বলে। এতোদিনের মান অভিমান সব শেষ হয়। সব জমানো কথা বলতে থাকে। যুথি তো খুশি ইরহানের কাছে যেতে পারবে বলে। দুইজন কথা বলতে বলতে হাসে। আবার চোখ দিয়ে পানিও আসে উহুু দুঃখের জন্য নয়। দুইজনের ভালোবাসার আর সুখের জন্য। এমন জীবন সঙ্গী পাওয়া জন্য।

#চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here