খড়কুটোর বাসা ২ পর্ব -২১

#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ২১
#Jhorna_Islam

কয়েকদিনের মধ্যেই যুথির ভিসা হয়ে যায়। ইরহানের কাছে যাওয়ার তারিখ ও ঠিক হয়ে যায়। এখন শুধু ইরহানের কাছে যাওয়ার পালা।

সবকিছু গোছগাছ করে নিয়েছে যুথি।যদিও কিছুটা খারাপ লাগছে সকলকে ছেড়ে যেতে হবে বলে।তাও নিজেকে সামলে নিয়েছে। দুই দিন গিয়ে মামা মামির কাছে থেকে এসেছে। এরমধ্যে সীমার ও বিয়ে হয়ে গেছে। যুথি অবশ্য ইরহানের অনুমতি নিয়ে ইশান কে সাথে নিয়ে সীমার বিয়েতে গিয়েছিল। ইরহান কে একবার বলার পরই বলেছিল যাওয়ার জন্য। টাকা ও পাঠিয়েছে সীমা আর তার বর কে উপহার দেওয়ার জন্য।

বাড়িতে যুথির যাওয়া নিয়ে তুমুল ঝগড়া বিবাদ লেগেছিলো। এই মেয়ে কে কেন নিয়ে যেতে হবে? ওরা নানান ভাবে কথা শুনিয়েছে যুথি কে। যুথি ও কম যায় না। ওদের প্রতিটি কথার প্রতিবাদ করেছে। ইশান ও ওর মা,ভাবি(লিমা) কে কম কথা শুনায় নি।এর জন্য ইশান কে তাছলিমা বানুর হাতে চ’ড় ও খেতে হয়েছে।

নিজের পরিবারের এরকম বাড়াবাড়ি সহ্য হয় নি ইশানের। বড় ভাবিকে তার ভাই নিজের কাছে নিয়ে যেতে চাইছে এতে তাদের কি সমস্যা? ওরা কেন এমন করছে। তাই এদিকটার সব কথা ইরহান কে জানায়। ইরহান ই এদের আটকাতে পারবে। এরা অতিরিক্ত শুরু করেছে। নয়তো কোনো ভাবে যুথি কে ইরহানের কাছে যাওয়া থেকে আঁটকে দিবে।

ইরহান সব কিছু শুনে অনেক খে/পে যায়। এমনিতেই ওদের উপর রা’গ আর ঘৃ’ণা জমে আছে। তার উপর ওদের এসব ব্যবহার আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে।

ইশান কে বলেছে সকল কে ডেকে আনার জন্য। ইশান ভাইয়ের কথা মতো সবাই কে ডেকে আনে। তারপর ফোনের স্পিকার বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। ফোনের স্পিকার বাড়িয়ে দিলে সকল কে ইচ্ছে মতো কথা শোনায় ইরহান। ভিতরের রাগের সব ঝাড়ে। খুব বাড় বেড়েছে এরা।

ইরহানের কথার প্রেক্ষিতে ওরা ও অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলো।বলেছে ও অনেক ত’র্কা’ত’র্কি ও হয়েছে ।কিন্তু কেউ ই ইরহানের কাছে টিকতে পারেনি।
————————-
ইশান আর যুথির মামা যুথিকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে যাবে।যদিও বা উনার ইচ্ছে ছিলো না ইশানের সাথে যাওয়ার। তবুও এসব ঝামেলার জন্য ভাগ্নি কে তো আর একা ছেড়ে দিতে পারেন না। তার উপর আবার কবে দেখা হবে কে জানে। দিনা ও সাথে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু ইশান আর দিনার ব্যাপারটার জন্য তার মা দেয় নি। দিনা তো কেঁদে কেটে শেষ বোনের জন্য।

এইদিকে এয়ারপোর্টে গিয়ে যুথিও নিজেকে আর সামলাতে পারে না কেঁদে দেয়। ইরহান তখন ফোন কলেই ছিলো বউয়ের কান্না নীরবে অপর পাশ থেকে সহ্য করে গেছে। বাঁধা দেয় নি কাঁদুক কাঁদলে মন হালকা হবে। নিজের সব চেনা পরিচিত ছেড়ে চলে যাওয়ার কষ্ট টা ইরহান খুব ভালো করে বুঝে।

সকল কে বিদায় দিয়ে যুথি ও পাড়ি জমায় অচেনা দেশে।যেখানে তার আপন নিজের কাছের মানুষ টা আছে। ইরহান এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করবে তার যুথি রানী কে গ্রহন করার জন্য।

সঠিক টাইমে গিয়ে বিমান টা থামে।যুথির মনে তখন কি চলছিল সে নিজেও জানে না। কেন যেনো হাত পা প্রচন্ড ভাবে কাঁপছিলো।গলা শুকিয়ে কাঠ। ভিতরে ভিতরে খুব অস্থির হয়ে পরেছিলো যুথি।

এয়ারপোর্টে গিয়ে ইরহান কে চোখের সামনে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারে না। দিকবিদিকশুন্য হয়ে পরে।আশেপাশের মানুষের তো’য়াক্কা না করে ঐ নিজের একান্ত বুকটার উপর ঝাপিয়ে পড়ে।

মরুর বুক যেন বৃষ্টির সন্ধান পেলো। ইরহান ও তার যুথি রানী কে নিজের সাথে ঝাপটে ধরে। যুথি তো সেই কখন থেকে ফুপিয়ে কেঁদে চলেছে। ইরহানের চোখ দুটো ও ছলছল করে উঠেছে। ইরহান যুথিকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে চুপটি করে রয়। যুথি তার মানুষ টার বুক ভাসাচ্ছে।

অনেকটা সময় যাওয়ার পর ইরহান যুথির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,হয়েছে তো বউ আর কতো কাঁদবে? দেখো আমার শার্ট ভিজিয়ে দিয়েছো।

— ভালো করেছি ভিজুক।

ইরহান যুথির মাথা টা নিজের বুক থেকে তুলে।সারা মুখে অগণিত অধরের ছোঁয়া একে দেয়।

যুথি চুপটি করে সেই ছোয়া উপভোগ করে।কতোদিন পর পাচ্ছে? দিন না তো কতোগুলো মাস পর সেই চেনা পরিচিত ছোঁয়া পাচ্ছে।

আশেপাশে অবশ্য অনেক মানুষ আছে।থাকলেই বা কি? ওরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।যদিও বা কয়েকজন তাকাচ্ছে মুচকি হেসে চলে যাচ্ছে।

ইরহান গাড়ি আগে থেকেই ঠিকঠাক করে রেখেছে। যুথির হাত এক হাত দিয়ে আবদ্ধ করে নিয়ে আরেক হাত দিয়ে লাগেজ নেয়। লাগেজ টা গাড়িতে রেখে যুথিকে নিয়ে বসে পরে। যুথি গাড়িতে উঠেই ইরহানের বুকে মাথা রাখে। ইরহান মুচকি হেসে বউকে আগলে ধরে রাখে।

বুকটা তে কি যে শান্তি লাগছে ইরহানের। এই মেয়ে টা কি বুঝতে পারে ইরহান তার জন্য বুকের ভিতর কি পরিমাণ ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছে?

যুথি তার মানুষ টা কে পেয়ে আশেপাশের সব কিছু ভুলে গেছে। এই মানুষ টা এমনিতেই নিজের কাছে থাকলে সব কিছু শান্তি আর সুখময়। মন বলে আর কিছু চাই না।

ইরহান কিছু সময়ের মাঝেই পৌঁছে যায়। ৩০ মিনিটের রাস্তা। এয়ারপোর্টের কাছাকাছি ই।নতুন চার রুমের একটা ফ্লাট নিয়েছে ইরহান। সবকিছু গোছগাছ করে রেখেছে।নিজের বউ কে যেন কিছু না করতে হয়।

যুথি সব কিছুর দিকে চোখ বোলায়। বেশ অবাক হয় এতো পরিপাটি দেখে। সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ইরহান গুছিয়ে রেখেছে।

যুথির জন্য ইরহান রান্না ও করে গিয়েছিল। যুথি কে বলে ফ্রেশ হয়ে আসার জন্য। যুথি ইরহানের কথা মতো ফ্রেশ হয়ে আসে।

ইরহান নিজের হাতে তার যুথি রানী কে খাইয়ে দেয়। যুথি তৃপ্তি নিয়ে ইরহানের রান্না করা খাবার খায়। ইরহান কে ও বলে খাওয়ার জন্য। ইরহান খেতে না চাইলে জোর করে। অগত্যা নিজের বউয়ের সাথে না পেরে খেয়ে নেয় ইরহান।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইরহান যুথিকে বলে ঘুমানোর জন্য নয়তো শরীর খারাপ করবে। যুথি শুয়ে দুই হাত প্রসারিত করে ইরহান কে নিজের কাছে আসার আহ্বান জানায়। ইরহান ও বউয়ের করা আবদার সাদরে গ্রহণ করে। বউয়ের কাছে নিজের সুখ আছে। এই মেয়েটা যে তার একমাত্র কারণ নিজেকে ঠিক রাখার।

ইরহান যুথিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে ঘুমানোর জন্য।

ঘুমাও পাখি। নয়তো পরে মাথা ব্যাথা করবে,অসুস্থ হয়ে যাবে।

— আমার তো ঘুম আসছে না।

–” এইতো আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তুমি চোখ বন্ধ করো।”

— না চোখ বন্ধ করা যাবে না। আমিতো আপনাকে দেখবো। কতোদিন হয়ে গেলো আপনাকে এতোটা কাছ থেকে দেখি না।

— এখন থেকে সব সময় দেখতে পারবে। একটু ঘুমাও।

ইরহানের কথা শুনে না যুথি সে ইরহান কে দেখবে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় ইরহানের দিকে। ইরহান খুব যত্ন সহকারে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। কিছু সময় পর এমনিতেই ক্লান্তি তে যুথির চোখে ঘুম নেমে আসে। তার,উপর ইরহানের আদুরে স্পর্শ। বেশি সময় লাগেনি যুথির ঘুমিয়ে যেতে।

যুথি ঘুমিয়ে গেছে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস নেয় ইরহান। পরোক্ষনে মুচকি হাসে। কিছু সময় যুথির দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে পরে। যুথির লাগেজ নিয়ে গোছাতে থাকে সব কিছু। ইরহানের বস তাকে এক সপ্তাহ ছুটি দিয়েছে সংসার টা ভালো করে সাজানোর জন্য। ইরহান সব কিছু প্লেন করে রেখেছে। যুথি কে নিয়ে এই কয়দিন দেশ টা ঘুরে ও দেখাবে বলে ঠিক করে নিয়েছে।

—————————
দুই টুনা-টুনির সংসার খুব ভালো ভাবে চলছে। ইরহান বিকেল হলে যুথিকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে। আশে পাশে টা ভালো করে চিনিয়ে ও দিয়েছে। এর মধ্যে আরেকটা বাঙালি মেয়ের সাথে পরিচয় ও হয়ে গেছে যুথির। সব মিলিয়ে খুব ভালো দিন কাটছে তার। যদিও বা নিজের দেশের জন্য আর মানুষ গুলোর জন্য খারাপ লাগে তাও নিজেকে সামলে নেয়।

এরমধ্যে একদিন হুট করেই ইরহানের বাবার কল আসে।এটা ইরহান কখনো চায় নি। কল টা দেখেই নিজের ভিতর জমিয়ে রাখা রা’গ টা যেন বাড়তে থাকে। যুথির সামনে থাকায় প্রকাশ করতে পারে না। ঐ ঘটনা গুলো জানলে যুথি খুব কষ্ট পাবে।যদিও বা ইরহান ঠিক করেছিলো যুথিকে কিছু বলবে না। পরবর্তী তে ঠিক করে সব বলে দিবে।যুথির কাছে কিছু লোকাবে না।

ইচ্ছা না থাকা সত্যে ও তাকে তার বাবা নামক মানুষ টার কল রিসিভ করতে হয়।

–হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।

— ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভালো আছিস ইরহান?

— জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। ইরহান আর পাল্টা জিজ্ঞেস করে নি উনি কেমন আছে। এতে ইরহানের বাবার কিছু যায় আসে ও না।

— কিছু বলবেন?

— হ্যা,, বলার জন্যই তো কল করলাম।

— বলেন।

— আসলে হয়েছে কি অনেক দিন তো হয়ে গেলো টাকা পাঠাস না।না মানে আমার হাত খরচের টাকা দিস না। টাকা দরকার আমার কিছু টাকা পাঠিয়ে দে।

— কিসের টাকা? আমিতো সংসারের খরচের জন্য টাকা দিয়েছি।

— আমার জন্য কিছু টাকা দে।

— আমার কাছে কোনো টাকা নেই।আমি আপনাকে কোনো টাকা দিতে পারবো না।

এমনিতেই অনেক দিন হয়ে গেছে পেটে মা/ল পানি পরে না।তার উপর ইরহানের দায়সারা কথা শুনে মে’জা’জ প্রচন্ড রকমের চ/টে যায়। রা’গে হিসহিসিয়ে বলে,, তুই টাকা দিবি না? ভেবে বল এমন কিছু করবো পরে কেঁদে ও কোল পাবিনা।

কি করবেন আপনি? যা করার করেন।আমি আপনাকে টাকা দিবো না। আপনার যে কিসের জন্য টাকা প্রয়োজন সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। একটা টাকা ও দিবো না।

ঠিক আছে আমি ইমনের থেকেই টাকা নিবো। আর সব সম্পত্তি ওর নামে লিখে দিবো।

ইরহান বাবার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য। তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।হাহ্।

ঠিক আছে দিয়ে দিন।দরকার নেই আমার আপনার সম্পত্তির। তবে মনে রাখবেন আজ থেকে ইরহান নামক কোনো ছেলে আপনার নেই।

ইরহানের বাবা রা’গে সত্যি সত্যি ইমনের নামে সকল সম্পত্তি দিয়ে দেয়।ইমন খুশিতে লাফিয়ে উঠে। শ্বশুর বাড়ি থেকে কিছু আর নিজের থেকে কিছু টাকা এনে বাবা কে দেয়। শুধু ইরহান কে না ইশান কে ও ঠকিয়ে দিলেন উনি।তাছলিমা বানু ও এই ব্যাপারে কিছু জানতে পারলো না।

#চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here