#মন_বিনিময়
#পর্বঃ২৪ (১ম অংশ)
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা
নানিবাড়িতে আসার বেশ কিছুক্ষণ অতিক্রম হয়েছে। সকলে গল্পগুজব করে শেষবিকেলে রেস্ট নিতে চলেও যার যার রুমে। শুধু ঘুম নেই স্বপ্নিলের চোখে। ওদের জন্য নির্ধারিত কক্ষে বিশ্রামের জন্য পাঠানো হয়েছে দুজনকে৷ রাহিতা চিন্তাভাবনা ভুলে শুয়েও পড়েছে কিন্তু স্বপ্নিল জেগেই আছে। বিছানায় পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে বসে আছে চুপচাপ৷ বেশ কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক করে ঘুমোনোর চেস্টা করছিলো রাহিতা। কিন্তু স্বপ্নিলের এমন শান্তশিষ্ট ভাবভঙ্গি বেশিক্ষণ শান্তিতে ঘুমোতে দিলোনা তাকে। হঠাৎই শোয়া থেকে উঠে স্বপ্নিলের পাশে বসলো রাহিতা। আলস্য ভংগীতে চোখ ডলতে ডলতে বললো,
—কি হয়েছে আপনার? এভাবে বসে আছেন কেন? সারা রাস্তা ড্রাইভ করে এসেছেন, রেস্ট নিন একটু!
—কিছু না৷ তুমি ঘুমাও।
—আমি অনেকক্ষণ থেকে লক্ষ্য করছি, স্বপ্নিল। আপনি ঠিক নেই। কিছু একটা তো অবশ্যই হয়েছে। বলুন না?
স্বপ্নিল নিশ্চুপ রয়। এবার রাহিতা বুঝে বিষয়টা অবশ্যই ছোট কিছু নয় তাই স্বপ্নিলের এমন গম্ভীর ভাব। খানিকবাদে ধীরগতিতে স্বপ্নিলের হাতের পিঠে হাত রেখে বলে,
—আমাকে বলবেন না? প্লিজ বলুন।
—এ বিষয়ে আমি কথা বলতে চাইছিনা, রাহি৷ সত্যি বলতে আমার ভালো লাগছেনা।
—কিন্তু কেন? আর ওই মহিলাটা কে? মানে দীপ্ত ভাই যে সীমা ফুপ্পির কথা বলছিলো৷ তার কথা শুনে আপনারা সবাই এমন করলেন কেন?
কথা বলার মাঝেই রাহিতা খেয়াল করলো এই সীমা আন্টির কথা শুনে স্বপ্নিলের মুখভঙ্গি পুনরায় বদলে যাচ্ছে। রাহিতার নজর উপলব্ধি করতেই স্বপ্নিল নিজেকে সামলে নিলো। স্বপ্নিলকে দেখে রাহিতা আবারো বললো,
—আপনিই তো বলেছিলেন আমাদের সম্পর্কটা সবার আগে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। যেখানে দুজন নির্দ্বিধায় একে-অপরের সাথে সবকিছু শেয়ার করতে পারবো, তাই না? তবে আপনি আমায় বলছেন না কেন? আপনি কি আমাকে বিশ্বাস করেন না?
রাহিতার কথায় চোখ তুলে ওর দিক তাকায় স্বপ্নিল। মাথা নাড়িয়ে বুঝায় সে ওকে বিশ্বাস করে৷ অতঃপর মুখ ফুটে বললো,
—সীমা খালামনি মোটেও সুবিধার মানুষ নন। আমি চাইনা সে তোমায় কোনো কথা শুনাক। উনার থেকে সবসময় দূরে থাকবে, রাহি।
—কিন্তু উনি আমায় কথা শুনাবেন কেন? আমি কি করেছি তার?
—আসলে উনি..
স্বপ্নিল আর কিছু বলবে তার আগেই কর্কশ শব্দে ওর ফোন বেজে উঠলো। হাত বাড়িয়ে সাইড টেবিল থেকে ফোন তুলে নিয়ে কানে দিতেই ওপাশ থেকে জোরেশোরে কয়েকজনের কণ্ঠস্বর ভেসে উঠলো। স্বপ্নিলের ঠিক পাশে বসে থাকায় সে শব্দ কানে এলো রাহিতার নিজেরও।
—স্বপ্নিল ভাই, তুমি নাকি বগুড়া আসছো? দীপ্ত বলে গেলো একটু আগেই। তাড়াতাড়ি টং এ আসো। আমরা সব বসে আছি। অপেক্ষা করছি তোমার জন্য৷
স্বপ্নিল কিছু বলবে তার আগেই আশেপাশে থেকে কয়েকটা ছেলে একসাথে স্বপ্নিলকে ডেকে উঠলো। সবার চাপে পড়ে স্বপ্নিল “আসছি” বলে ফোন কেটে দেয়। ফোন রেখে আঁড়চোখে রাহিতার দিক তাকালো স্বপ্নিল। ওর চাহনি বুঝে ইশারায় মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো রাহিতা। তা দেখে স্বপ্নিল উঠে যেতে যেতে বলে,
—আমি এখন বাহিরে যাই। এসে বলবোনি তোমায়?
—আচ্ছা!
—তুমি মন খারাপ করলেনা তো? আমি সত্যিই তোমায় বলতে চেয়েছিলাম এখন কিন্তু শুনলেই তো ওরা কিভাবে জোরাজুরি করছে ফোনে…
—আমি মন খারাপ করিনি। আপনি এতদিন পর এসেছেন এদিকে। স্বাভাবিক আপনার বন্ধুরা অপেক্ষা করছে। আপনি ঘুরে আসুন। তারপর না হয় বলেন আমায়। আমি অপেক্ষা করবো।
রাহিতার কথায় মুচকি হাসলো স্বপ্নিল। রুম ছেড়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হচ্ছিলো। রাহিতাও বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে যাচ্ছিলো। ঠিক সে সময় স্বপ্নিলের কথায় পা জোড়া থেমে ওর।
—তুমি এত ভালো কেন, রাহিতা? প্রত্যেকবার আমার বুঝানোর আগেই নিজে থেকে আমার সবকিছু কিভাবে বুঝে যাও?
স্বপ্নিলের কথার তৎক্ষণাত উত্তর দিলোনা রাহিতা। ওর কথার বিনিময়ে নম্র চোখে মিস্টি হাসি উপহার দিলো শুধু। ওর পক্ষ থেকে জবাব না পেয়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে পড়লো স্বপ্নিল। সে চলে যেতেই কক্ষজুড়ে প্রতিধ্বনিত হলো রাহিতার অস্ফুট কণ্ঠস্বর,
“ভালোবাসি যে তাই!”
#চলবে
এটা ২৪ পর্বের ১ম অংশ। এ পর্বের ২য় অংশ শীঘ্রই আসবে। পরীক্ষার জন্য লিখার সময় পাচ্ছিনা। আপনারা অপেক্ষায় আছেন বলে ছোট করে এটুকু পোস্ট করা৷ পরের অংশটুকু জলদি দেবো।