#কাঞ্জি
#পর্ব-১৬
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
“বাবা মায়ের রক্ত নিজের শরীরে বইছে। তোর বাবা রত্নাকে ঠকিয়েছিল।মরে গিয়েও একটা ঝামেলা তোর মায়ের ঘাড়ে দিয়ে গেল।আর তুই? সেই পথেই হাঁটছিস। হাত ঘড়িটা খুলে দে আবৃতি। ওটার যোগ্যতা তোর নেই।ওটা ওয়াজিফার হক।অন্যের হক নষ্ট করে নিজের ভালো কোনো দিন হতে পারে না। তাছাড়া তোদের ত্যানা প্যাঁচানো জীবনে আমি আমার ছেলেকে জড়াতে দিবো না।প্রয়োজন বিষ খাইয়ে মেরে ফেলবো।না হলে তোর মাকে বলবো তোকে মেরে ফেলতে।এমন মেয়ে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই যার জন্য অন্যের মেয়ে কষ্ট পাবে।”
“মহিষের শিং এর বোঝা মহিষের কাছে ভারী লাগে না ভাবী।আমার মেয়ে নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।আর কোন রক্তের দোহাই দিচ্ছো?ও কথা বললে আমি বলবো দোষ তবে তোমার ছেলের। চাচার গুণ যে পেয়েছে। ওর যদি বিয়ে ঠিক থেকেই থাকে তবে আমার মেয়ের পিছনে পড়ে আছে কেন?”
” তোর মেয়েই পিছনে ঘুরেছে।তুই কি অতীত ভুলেছিস?এমন একজন মেয়ের জন্যই কিন্তু তোর নিজের সংসারটাও শেষ হয়েছে।”
“এমন একটা মেয়ের জন্য না।তোমার দেবরের জন্য।যদি কোনো স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি লয়্যাল থাকে তবে পরনারী কখনো তাদের সম্পর্কে ঢুকতে পারে না।না স্পর্শ করতে পারে মনে আর না পারে পুরুষের শরীরে।”
“মেয়ের সাফাই গাইছিস?”
“দশ মাস পেটে ধরলাম,এতো কষ্ট করে মানুষ করলাম।জীবনের প্রতিটি প্রতিকূল মুহূর্তের জন্য যাকে তৈরী করেছি তার হয়ে সাফাই গাওয়ার প্রয়োজন আমার নেই।তুমি আসতে পারো।আর হ্যাঁ আমার মেয়ের ব্যবহৃত জিনিসগুলো তুমি তোমার ভাইজি কে দিতে পারো।আপত্তি নেই।হোক সেটা ঘড়ি কিংবা তোমার ছেলে।”
রত্না বেগমের কথা শুনে তেলে জ্বলে উঠলো শাহানা। নিজের ছেলের প্রতি একটা বাজে কথা শুনতে নারাজ।আবৃতির হাত থেকে ঘড়িটা নিয়ে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে।রত্না বেগম মেয়ের হাত ধরে রুমের ভিতরে নিয়ে এসে দরজা আটকে দিলেন।কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেয়েকে বললেন,
“শাহরিয়ারের সাথে তুমি কি শারিরীক মেলামেশা করেছো?”
মায়ের এমন প্রশ্নে লজ্জায় নুইয়ে গেল আবৃতি। দু দিকে মাথা দুলিয়ে না করলো।রত্না বেগম যেন প্রাণ ফিরে পেলেন।টলমলে পায়ে মেয়ের পাশে এসে বসে রইলেন। এক হাতে মেয়ে কে জড়িয়ে নিয়ে বললেন,
“এই সমাজ, পুরুষের দোষ দেখে না মা।মেয়েরাও পুরুষের দোষ দেখে না।কেবল মেয়ে মেয়ে আর মেয়ের দোষ। মেয়ে এটা করলো, মেয়ে ওটা করলো এসব কথা।তোমার বাবা আমার সাথে বেঈমানী করেছিল।মারা যাওয়ার আগে অদিতির দায়িত্ব দিয়ে গেল।অদিতির মাকে তার ভাইয়েরা নিয়ে গেল অথচ সে মেয়েকে নিলো না।নতুন করে সংসার করছে।একদিন তোমার দাদা বলল অদিতিকে না হয় বোর্ডিং এ পাঠিয়ে দিবে। এটুক একটা মেয়ে সে কী করে বাঁচবে? নিজের মেয়ের মতো ওকে মানুষ করেছি।কিন্তু তোমাকে আমি মেয়ের মতো মানুষ করিনি।পৃথিবীতে সংসার করার জন্য যতোটা কাটা রয়েছে সব কাটা আমি নিজ হাতে বিছিয়েছি তোমার পায়ের নিচে।তোমার কষ্ট হোক তবুও তুমি পুরো জীবনের জন্য প্রস্তুত হতে পারো। তোমাকে আমি খাবার কম দিতাম কারণ তুমি যেন শিখতে জানো ক্ষুধার জ্বালাটা কেমন। স্বল্প টাকা বা ব্যথা সহ্য করতে দিয়েছি কারণ যাতে তুমি শিক্ষা নিয়ে জীবনে কখনো বাধাগ্রস্ত না হও।যেটা আমি আমার জীবনে বার বার হয়েছি।তোমার বাবা আমাকে ঠকিয়েছিল সাথে ঠকিয়েছিল আমার নিয়তিও। আজমীর ব্যবসা শুরুর দিকে কিন্তু বুঝতে পারেনি।তখন আমরা অনেকটা তোমার দাদা চাচার উপর নির্ভর ছিলাম।বাজার করে দিলে আমি তোমাদের খাওয়াতে পারতাম। না হলে নাই।তখন তোমার চাচীদের বাড়িতে ভালো মন্দ রান্না হলে এ অবধি আসতো না।তোমার দাদা দাদী কিন্তু যথেষ্ট দিয়েছে তবুও একটা ভালো কিছু রান্না হলে ভালোটা তোমাদের সব ভাই বোন অবধি পৌঁছাতে পারতো না। আমি মনের মাঝে অনেক কষ্ট নিয়ে তোমাকে বড় করেছি এই দিন দেখার জন্য না। একজন মেয়েকে কম কষ্ট দিলে সে এমন হয় না। অথচ তুমি আমার সামনে বসে কাঁদছো। যে ভয়টা পেয়েছিলাম সেটাই হলো।তুমিও আমার মতো দুর্বল হয়ে গেলে? আমিও ভালোবেসেছিলাম তোমার বাবাকে৷ তোমার বাবা আমার সাথে সংসার করেও মন দিলো অদিতির মাকে। এখানে অদিতির কোনো দোষ নেই তো।বাবা মায়ের কৃতকর্মের দোষ সন্তানকে দিতে হয় না বলেই আমি ওকে এতো আদরে আগলে রাখছি।আর তোমাকে মরুভূমির ক্যাকটাসের ন্যায় তৈরি করেছি।”
“বাবা মায়ের কৃতকর্মের ফল সন্তান পায় মা। তারা ভালো করলে সন্তানকে ভালো বলেই সবাই জানে।”
“কমতি আমার মাঝেই ছিল। কিন্তু তুমি কিছুতেই কম নও আবৃতি। আমি চোখের পানি দেখতে চাই না। পারলে নিজেকে এমন ভাবে গড়ে তোলো যেন এই শাহরিয়ারের মতো দশ শাহরিয়ার তোমার পিছনে লাইন ধরে থাকে।পারবে?”
হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পথে অথচ আবৃতিকে না দেখতে পেয়ে অবাক হলো শাহরিয়ার।আজ সব ভাই বোনেরা দাদার ফ্ল্যাটে নিচে ফ্লোরিং করে ঘুমাবে।অথচ সেখানেও আবৃতিকে দেখা গেল না।ভোজবাজীর মতো মেয়েটা যেন উবে গেল সবার মাঝে থেকে। মধ্য রাতে যখন সবাই বার্গার খাওয়ার প্ল্যান করলো তখন ওয়াজিফার হাতে ঘড়িটা নজরে এলো শাহরিয়ারের। ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“এটা তোমার কাছে কেন?”
“ফুপু দিয়ে বলল তুমি আমার জন্য এনেছো। ধন্যবাদ, আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।”
শাহরিয়ার কথা বাড়ায় না।চুপচাপ তাকিয়ে থাকে সদর দরজার দিকে। সকালবেলা নাস্তার টেবিলে দেখা গেল আবৃতিকে। রত্না বেগম তাকে ধমকে দিচ্ছেন মাছের কাটা বাছতে না পারার জন্য।আজমীর মাঝে বসে মাছ বেছে দুই বোনের প্লেটে দিচ্ছিলো।তাদের তিন জনের কথা বার্তা শুনে মনে হলো গম্ভীর কিছু আলোচনা চলছে।খাবার শেষে আজমীর সাথে নিয়ে গেল দুই বোনকে। যার যার কলেজে ছেড়ে সে নিজ কাজে যাবে।
পুরোটা ক্লাসে আবৃতি উপেক্ষা করেছে শাহরিয়ারকে।এমনকি মেহেদী অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা গেল না। না কল রিসিভ করেছে না ম্যাসেজের রিপ্লাই।জেদ চেপে গেল শাহরিয়ারের। ভালোবাসলে এতো জ্বলতে হয় কেন?
চলবে( এডিট ছাড়া, যারা পড়বেন রেসপন্স করবেন।)।
#ছবিয়ালঃফারিহা তাবাসসুম