মায়াবতী পর্ব -২৮

#মায়াবতী
#পর্ব:২৮
#তানিশা সুলতানা

অথৈ আর সাগর পাশাপাশি হাঁটছে। হাইটে সাগর পারফেক্ট ছয় ফুট। কিন্তু বেশ রোগা পাতলা আর অগোছালো। এই যে সাদা টি শার্ট পড়েছে তারওপর কালো শার্ট। কালো জিন্স। জিন্সের গোড়ালি মুড়িয়ে বেশ খানিকটা উঁচু করে রেখেছে। ফর্সা পায়ের কালো লোম গুলো দৃশ্যমান। স্কিচার জুতো পড়েই বেরিয়েছে সে। চাপ দাঁড়ি গুলো বেশ বড় হয়ে গেছে মুছে ঠোঁট ঢেকে যাচ্ছে।
অথৈ আনমনে হাসে। এই অগোছালো মানুষটার জন্য একটা গোছালো মেয়ে দরকার।
অথৈয়ের হাইট ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। ওয়েট বিয়াল্লিশ। সে সাগরকে ঠিক করে দেখতে পারছে না। তাছাড়া পা মেলাতেও বেশ কষ্টকর হচ্ছে। বিষয়টা সাগর খেয়াল করে। সাগর দাঁড়িয়ে যায়। অথৈ চমকে তাকায় সাগরের দিকে।

“যেভাবে আমাকে দেখছো যেকোনো সময় উষ্ঠা খেয়ে পড়বা।

অথৈ মাথা নিচু করে ফেলে।
তারপর সাগর আস্তে আস্তে হাঁটতে থাকে।

” অথৈ সত্যি করে একটা বলবা?

“আমি মিথ্যে বলি না।

” অর্ণব ভাইয়া পছন্দ করে তন্নিকে?

“হুমমম

সাগর কথা বলে না। চুপচাপ হাঁটতে থাকে। মায়া হয় অথৈয়ের। সাগরের চোখে মুখে তন্নির জন্য ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে অথৈ। বুকটা শান্ত হয় অথৈয়ের।
তন্নি ভালোবাসার কাঙাল। তন্নিকে কেউ ভালোবাসলে অথৈয়ের ভালো লাগে। কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়।

” তন্নিকে ভালোবাসেন?

সাগর দাঁড়িয়ে যায়। তাকায় অথৈয়ের দিকে।
মুচকি হেসে বলে

“হ্যাঁ বাসি। তন্নিকে আমি ভীষণ ভালোবাসি।

কথাটা বলার সময় সাগরের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলো। তাকে পৃথিবীর সব থেকে সুখী ব্যক্তি মনে হচ্ছিলো। ভালোবাসার মানুষটির নাম উচ্চারণ করাতেও সুখ লুকিয়ে থাকে।
অথৈও হাসে।

” আমার থেকে বেশি না।

সাগর হেসে ফেলে৷ অথৈয়ের কপালের সামনে পড়ে থাকা ছোট চুল গুলো একটা আঙুল দিয়ে সরিয়ে দেয়। অথৈ চোখ বন্ধ করে হাসে।

“তুমি হচ্ছো তন্নির জান। তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসার সাহস কি আমার আছে? গ*র্দা*ন যাবে তো।

খিলখিল করে হেসে ওঠে অথৈ। ফাস্ট টাইম সাগরের নজর পড়ে অথৈয়ের ঠোঁটের বা পাশের ছোট্ট টোলটার দিকে।
মেয়েটার হাসি সুন্দর। আচ্ছা তন্নি এভাবে হাসলে তাকে কেমন দেখাবে? এ জীবনে কখনো তন্নির হাসি দেখার সৌভাগ্য হবে?

” অথৈ তন্নি আমার হবে না
তাই না?

অথৈয়ের হাসি থেমে যায়। সাগরের মুখের দিকে তাকায়। বড্ড মায়া হয় অথৈয়ের।

“পাওয়ার আশা করে ভালোবাসতে নেয় সাগর ভাইয়া। ভালোবাসা সুন্দর। ভালোবাসায় চাওয়া পাওয়া থাকতে নেয়।

সাগর মুচকি হাসে।

” ঠিক বলেছো তুমি অথৈ। তন্নি আমার হোক বা হোক আমি তাকে ভালোবেসে যাবো।

অথৈ মনে মনে বলে
“আর আমি আপনাকে।

__

অর্ণব শুকনো ঢোক গিলে। তন্নি ভীষণ সিরিয়াস। মেয়েটা কাঁদছে। অর্ণব থামানোর সাহস পাচ্ছে না।

“অথৈয়ের জাস্ট একটু গ্যাস্টিকে পবলেম হইছিলো। জাস্ট একটুখানি।

আমতা আমতা করে বলে অর্ণব। তন্নি হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে তাকায় অর্ণবের দিকে।

” গড প্রমিজ একটুই।
এখন ঠিক আছে ও। ধরো কথা বলো।

অর্ণব ফোন বের করে তন্নিকে। তন্নি নেয় না। তার হাতে ফোন ছিলো সেটা থেকে কল করে অথৈকে। অথৈ তন্নিকে বোঝায় একটুখানি গ্যাস্টিকে পবলেম হইছিলো।
এখন ঠিক আছে। এটা শুনে তন্নি শান্ত হয়ে যায়। মেজাজটা তার ফুরফুরে হয়ে ওঠে। নানুবাড়ি থাকতে হবে না এটা ভাবতেই মনটা খুশি হয়ে যায়।

অর্ণব বিউটি পার্লারের সামনে গাড়ি থামায়। তন্নি ভ্রু কুচকে তাকায়।

“মাম্মা বলছিলো বিয়ের পর মেয়েদের নাকে নাক ফুল পড়তে হয়।
তুমি তো নাক ফুটো করে নি তাই নিয়ে আসলাম৷

” আমার বিয়ে হয় নি।

“হয়েছে।

” হয় নি

“বড় কে?

” আপনি

“বুদ্ধি কার বেশি

” আপনার

“শক্তি কার বেশি?

” আপনার।

“বেশি বুঝে কে?

” আপনি।

“তাহলে কটামি করছো কেনো? যা বলছি শুনো।

তন্নি ভেংচি কাটে অর্ণবের আড়ালে।
তারপর বলে

” সবাই জিজ্ঞেস করবে তো।

“অথৈ মেনেজ করে নিবে। তুমি চলো

অর্ণব আগে নেমে তন্নির হাত ধরে বের করে৷ অর্ণবের একটা বান্ধবীর পার্লার। সে এসে তন্নিকে নিয়ে যায় অর্ণব গাড়িতেই অপেক্ষা করতে থাকে।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে চলে আসে তন্নি। অর্ণব দরজা খুলে দেয়। তন্নি গুটিগুটি পায়ে বসে পড়ে।
অর্ণব হা করে তাকিয়ে থাকে। নাকফুল পড়লে মানুষকে এতোটা সুন্দর লাগতে পারে? সাদা পাথরের মাঝারি একটা নাক ফুল। নাকের চারপাশ লাল হয়ে গেছে।
একদম অন্য রকম লাগছে তন্নি। অন্যরকম মায়াবতী।

অর্ণব এক টানে তন্নিকে কোলে বসিয়ে নেয়। তন্নি ভয়ে কেঁপে ওঠে। খামচে ধরে অর্ণবের শার্ট।
অর্ণব তন্নির দুই গালে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে বন্ধ চোখের পাতায় ঠোঁট ছোঁয়ায়।
তারপর নাক ফুলের ওপর ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বলে

” নাক ফুলে তোমাকে পার্মানেন্টলি নিজের নিজের লাগবে জানলে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করার সাথে সাথে নাক ফুল পড়িয়ে দিতাম।

তন্নির ঘোর কেটে যায়। ভ্রু কুচকে তাকায় অর্ণবের দিকে। চমকে বলে ওঠে।

“রেজিস্ট্রি?

অর্ণব শার্টের কলার পেছনে ঠেলে ভাব নিয়ে বলে

” তো তোমার কি মনে হয়? বিয়ে ছাড়া তোমাকে টাচ করবো আমি?

তন্নি অর্ণবের চুল টেনে ধরে।

“শয়তান ছেলে আমাকে বোকা বানানো হয়েছে?

অর্ণব চুল ছাড়িয়ে হেসে বলে

” তুমি তো বোকাই।
আস্ত গাঁধা। তোমাকে আর কি বোকা বানাবো?

দূর থেকে এসব দেখে ফেলে আনোয়ার।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here