ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ গলায় কারোর গরম নিঃশ্বাস পড়তেই আস্তে আস্তে ঘুমের ঘোর কেটে গেলো আমার। পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলাম, সাদি ভাই খুব সুন্দর করে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে মাত্র বাসায় ফিরেছেন। ঘর্মাক্ত মুখ অনবরত ঘষে চলেছেন গলায়। কেঁপে উঠলাম আমি। ঘুম ঘুম গলায় বললাম,
___” ডক্টর আপনি?”
সাদি ভাই চোখ খুললেন না। গলায় মুখ গুঁজে বললেন,
___” ঘুমাবো।”
ওনার এমন কথায় কিছুক্ষণ থম মেরে শুয়ে রইলাম। তারপর ওনাকে উঠানোর চেষ্টায় লেগে গেলাম। সাদি ভাই বিরক্ত হয়ে চোখ খুললেন।কিন্তু উঠলেন না। ভ্রু কুঁচকে বললেন,
___” কি হইছে?কি সমস্যা তোমার?”
আমি উনাকে সরিয়ে উঠতে উঠতে বললাম,
___” যান গিয়ে ফ্রেশ হন। মাত্রই এলেন।কাপড় ছেড়েছেন?এসেই শুয়ে পড়েছেন।”
সাদি ভাই অসহায় গলায় বললেন,
___”ক্লান্ত লাগছিলো খুব।”
আমি হাই তুলতে তুলতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত ১ টা পার হয়েছে। আমি ওনার চুলগুলো ঠিক করতে করতে বললাম,
___” হ্যা জানি ক্লান্ত আপনি।”
সাদি ভাই আমার কোলে মাথা রাখতে রাখতে বললেন,
___” তাহলে ঘুম পাড়াও।”
আমি ওনার চুলে হাত দিয়ে বললাম,
___” মোটেও না।যান ফ্রেশ হোন।এপ্রোন খোলেন। ফিনায়েলের গন্ধ আসছে।”
সাদি ভাই মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
___” হসপিটালে তো ফিনায়েলের গন্ধই থাকবে।তোমার নেশাক্ত গন্ধ তো আর থাকবে না।”
___” আচ্ছা। যান শাওয়ার নিন।”
___” পরে।”
___” এক্ষুণি। খেতে হবে তো।ক্ষুধা লাগেনি?সেই কখন থেকে বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছি। ফুপিকে জোর করে রুমে পাঠিয়েছি।”
___”হু!”
উনার জবাবে আমি ওনার মুখপানে তাকিয়ে রইলাম।এতগুলো কথা বলার পরও একটা মানুষের উত্তর কি শুধু ‘হু’ হয়?এটা শুধুমাত্র এই পাগল ডাক্তার দ্বারাই সম্ভব। ওনার ক্লান্ত চোখে ঘুম দেখে বোঝা যাচ্ছে যে,কতকাল ঘুমান না। আমি ওনাকে কোল থেকে সরিয়ে দিলাম। উঠে বসলেন উনি। ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন তারপর বললেন,
___” ধানিলংকা! সরিয়ে দিলি কেনো?”
আমি উঠে দাড়িয়ে চুড়িগুলো ঠিক করে বললাম,
___” আমি খাবারগুলো আনছি, গোসল করে আসুন।”
বলেই যেতে লাগলাম আমি। হঠাৎ পিছন থেকে শাড়ির আঁচলে টান পড়লো। আমি পিছনে ফিরে ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম,
___”কি?”
সাদি ভাই কিছু না বলে শাড়ির আঁচল পেচিয়ে একটু কাছে চলে আসলেন। বসা অবস্থাতেই একটু এগিয়ে বুকে মাথা ঠেকিয়ে বললেন,
___” কতদিন খাইয়ে দিস না বল তো!”
আমি হেসে ফেললাম। ওনার মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
___” হাতে খেতে ইচ্ছে করছে? ”
সাদি ভাই বুকে থুতনি ঠেকিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালেন। ঠোঁট উল্টে বললেন,
___” হু। রোজ বলতে হয় কেনো তোকে?”
___” কতদিন খাইয়ে দিই না?”
আমার করা প্রশ্নে ভেংচি কাটলেন সাদি ভাই। আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
___” প্রায় তিনদিন। ”
___” বাপরে অনেকদিন।” (মুখ চেপে হেসে)
___” হাসার কি হলো? সবসময় এমন করিস কেনো?”
আমি ওনাকে টেনে চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললাম,
___” আপনিই তো ব্যস্ত হয়ে গেছিলেন।”
___” এখন তো ফ্রী।”
___” আচ্ছা ঠিকাছে।এখন খাইয়ে দিবো।”
সাদি ভাই মিষ্টি হেসে বললেন,
___”এক্ষুণি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
গালভর্তি করে হাসলাম আমি। রুম থেকে বের হতে হতে সাদি ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
___”ওয়াশরুমে টি-শার্ট আর টাউজার রেখে দিয়েছি।”
___” ওকে বউ।”
আমি রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম।খাবারগুলো ঠান্ডা হয়ে গেছে। তাই এগুলো গরম করতে লাগলাম।উনি বেশ ক্লান্ত।ওনাকে ঠান্ডাগুলো কিভাবে খেতে দিই?রাত ২ টা বাজতে চললো।খাবারগুলো গরম করে রুমের দিকে পা বাড়ালাম আমি।
.
.
রুমে আসতেই সাদি ভাইকে বিছানায় বসে থাকতে দেখলাম আমি। চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। খাবারগুলো টি-টেবিলে সাজিয়ে ওনার সামনে যেতেই টাওয়াল এগিয়ে দিয়ে বললেন,
___”মুছে দাও।”
আমি আর কিছু না বলে ওনার চুলগুলো মুছতে লাগলাম। হঠাৎ ওনার ঠান্ডা হাতের স্পর্শ আমার কোমড়ে পড়তেই কেঁপে উঠলাম আমি।কাঁপা গলায় শুধালাম,
___”ক-কি ক-করছেন?”
উনি আমাকে আরেকটু কাছে টেনে নিলেন। পেটে আলতো নাক ঘষতেই হাত থেকে টাওয়াল পড়ে গেলো আমার। চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম।সাদি ভাই আমাকে টেনে বিছানায় শুইয়ে দিতেই চোখ খুললাম আমি। ওনার কাঁধে হাত রেখে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় তাড়াহুড়ো করে বললাম,
___” একি! আপনি খাবেন না?”
আমার ঠোঁটে নিজের হাত চেপে ধরলেন সাদি ভাই।
___”হুশশশশ!”
আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম ওনার মাতাল চোখজোড়ায়।উনি আস্তে করে উনার ঠোঁট আমার কপাল স্পর্শ করলেন। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি। ওনার কাঁধে রাখা হাতটা আস্তে আস্তে আরো জোড়ালো হলো। উনি আমার ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে উদর স্পর্শ করলেন।আরো সিটিয়ে গেলাম যেনো। ওনার টি-শার্ট খামচে ধরলাম। সাদি ভাই মনে হয় বাঁকা হাসলেন। অধরজোড়া চেপে ধরলেন পরম আবেশে। কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে ওনার মাথার পিছনের চুল খামচে ধরলাম আমি।
কিছুক্ষণ পর ওনাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলাম আমি। জোরে শ্বাস নিয়ে বললাম,
___” ছি!”
সাদি ভাই ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট মুছতে মুছতে বললেন,
___” হোয়াট ছি?”
আমি ওনার দিকে তাকাচ্ছি না পর্যন্ত। অন্যদিকে তাকিয়েই বললাম,
___” এসব কি ছিলো?”
সাদি ভাই ভ্রু উঁচু করে বললেন,
___”কোনটা?”
আমি রেগে বললাম,
___” একটু আগের লুচ্চামির কথা বললাম।”
সাদি ভাই আমাকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দিলেন। পিছন থেকে কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বললেন,
___” এটা তো ছি এর কাজ না বউ।আমি তো টেস্ট করছিলাম।”
আমি দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললাম। এই অসভ্য লোকের সাথে কথা বলাই বৃথা।কখন কি বলে দেয়। উনার থেকে সরতে সরতে বললাম,
___”ধ্যাত ছাড়ুন আমায়।”
উনি আরো চেপে ধরলেন আমায়।আবারো হাত রাখলেন পেটে। কানে আলতো কামড় দিয়ে বললেন,
___” আরে আমি তো টেস্ট করছিলাম যে সব ঠিকঠাক আছে কিনা। ”
আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,
___” ছাড়ুন আমায়! শাড়ি খুলে যাচ্ছে কিন্তু! খাবেন চলুন। তারপর চেঞ্জ করে ঘুমাবো।”
সাদি ভাই আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,
___” চলো!”
আমি ওনাকে বসিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলাম। আর উনি আমাকে ফোন থেকে ওনার ছোটবেলায় করা আমার সাথে দুষ্টুমির ছবিগুলো দেখাচ্ছেন।
আর হেসে চলেছেন। আমি নিজেও খেয়ে হাত ধুয়ে ফেললাম।ওনাকে বলে প্লেটগুলো রেখে আসলাম। ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলাম উনি বসে বসে হাসছেন তখনো। আমি এগিয়ে গেলাম ওনার দিকে।উনি আমাকে দিকে তাকিয়ে বললেন,
___”কি?”
___”কিছু না।”
___”তাকিয়ে আছিস কেনো?”
বলেই আবারো হাসতে লাগলেন। ওনার হাসির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ওনার গালে হাত রেখে উঁচু করে ফেললাম।উনি অবাক হলেন মনে হয়। আমি ওনার কপালে গভীরভাবে চুমু দিলাম।তাটপর আর সময় নষ্ট না করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।সাদি ভাই থম মেরে বসে আছেন। আর আমি মিটিমিটি হাসছি।আচমকা ঘাড়ে কারোর গভীর নিঃশ্বাস অনুভব করলাম। ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগলাম আমি। স্পর্শটা গভীর হচ্ছে ক্রমশ।উনি হাত এলিয়ে পেটে রাখলেন। ঘাড়ে নাক ঘষে বললেন,
___” এখন তুই যে আদর দিলি ওটাকে লুচ্চামি বলি যদি?”
আমি কিছু বললাম না।চোখ বন্ধ করে রাখলাম। উনি আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। চোখে চোখ রেখে বললেন,
___” তুই এতো ভালোবাডিস কেনো আমাকে?”
আমি চোখ খুললাম। মুচকি হেসে বললাম,
___”ভালোবাসার তো কোনো সংগা হয় না। শুধু জানি যে ভালোবাসি আপনাকে।যেমনটা আপনি আমাকে বাসেন।”
সাদি ভাই আমার দিকে এগিয়ে এসে গলায় মুখ গুঁজলেন। নাক ঘষতে ঘষতে বললেন,
___” তুই আমার অভ্যাস। আর মানুষ অভ্যাসের দাস। আমি আমার অনুপাখিকে ছাড়া একমুহূর্তও ভাবতে পারি না। যখন তুই আমার জন্য রাত জেগে, না খেয়ে বসে থাকিস তখন আমার রাগ হয় এটা ভেবে যে তুই কেনো নিজেকে কষ্ট দিস! আবার কেমন যেনো ভালোও লাগে।তুই আমার ভালো থাকার কারণ অনুপাখি।”
এতটুকু বলেই থামলেন সাদি ভাই। গলা থেকে মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে জোরে ফু দিলেন। চোখ খুললাম আমি। উনি আমার দিকে বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছেন। এতক্ষণ ওনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম আমি।কেমন যেনো নেশা লেগে যাচ্ছিলো। আমি মুচকি হেসে বলে উঠলাম,
___”ডাক্তার সাহেব?শেষমেশ প্রেমিক পুরুষ হতে হলো?”
উনি আমার কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেললেন। গালে ঠোঁট বুলিয়ে বলতে লাগলেন,
___” এই অনুপাখির জন্য তার ডাক্তার সাহেব সব হতে পারবে।”
বলতে বলতে বুকে মাথা এলিয়ে দিলেন উনি। ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে গেলেন। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবলাম,
___” ইশশশ! এই #ডাক্তার সাহেব তবে আসলেই আমার?”
ভাবতেই নিমেষেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো চোখ-মুখ। কারণ সাদি ভাই এর মতো গম্ভীর লোক যে এমন রোমান্টিক পারসন হবে তা আমি কখনোই ভাবিনি। বাপরে!কম তো জ্বালাননি ছোটবেলায়।
এখন দেখা যাক আর কতো জ্বালায়!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
❤️❤️সমাপ্ত❤️❤️
#ডাক্তার সাহেব
#অনুগল্প
#লেখনীতেঃঅনুসা রাত
(