রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব -০১

“তোমাকে এত্তগুলা থ্যাংক ইউ আমাকে এত সময় দেয়ার জন্য। কালকের সারাটা সময় আমি খুব এনজয় করেছি মাই লাভ।”

নিজের প্রিয় মানুষটার ফো নে এ ধরণের মেসেজ দেখে পায়ের তলার মাটি সরে গেলো আমার। হাত-পা কেমন করে কাঁপতে শুরু করলো।মেসেজগুলোর উপরেই বড় বড় করে নিকনেম দেয়া
‘বউজান’। চোখটা কেমন ঝাপসা হয়ে এলো আমার। ঠিক তখনই আমার থেকে ফোনটা টেনে নিলো অয়ন ফোন দেখতে দেখতে বললো,

___” কিরে!আমার মেসেঞ্জারে ঢুকে কি দেখিস। ”

আমি তখন মাথা নিচু করে নিজের ভাবনা ভাবতে ব্যস্ত।অয়ন তো কখনো এই মেয়ের কথা বলেনি। ইভেন আমি ছাড়া কারোর সাথেই তেমন কথা বলে না ও। আর আমার সাথে সব শেয়ারও করে।তাহলে এই মেয়ে কে?কেনো লুকালো ওকে আমার থেকে? আমার থেকে জবাব না পেয়ে অয়ন বললো,

___” কিরে!চুপ কেনো? ”

আমি আড়চোখে ছলছল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম। ওর দৃষ্টি তখন ফোনের সেই মেসেজটিতে। মুখে লেগে আছে মুচকি হাসি। হাসিটা ধীরে ধীরে বাড়ছে।হ্যা!ও কিছু রিপ্লাই করছে। এটা যেন আমার মনটাকে আরো দুমড়ে মুচড়ে দিলো।আমি আটকে আসা গলায় বললাম,

___” সরি রে।তোকে না বলে তোর ফোন নিলাম।”

উপলব্ধি করলাম, অয়ন আমার দিকে বিস্ময়কর দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। আমি কিছু বললাম না।জোর পায়ে হেটে সেখান থেকে চলে এলাম। অয়নের এই ধোঁকাটা আমি মেনে নিতে পারছি না। সোজা অটো ধরে বাসায় এসেই দরজা লাগিয়ে বসে পড়লাম বিছানায়। মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে ভাবলাম অয়নের সাথে কাটানো সেই মুহুর্তগুলো।যা কিছুক্ষন আগেই হয়েছিল।অতীতের কথাগুলো কানে কেমন বাজতে লাগলো।যখন ও আমাকে বলতো,

___”অনুপাখি,তুই আমার বউ হবি?”

ওর কথায় হাসতাম আমি।হাসতে হাসতে বলতাম,

___” তোর বউ হব আমি?আহ কি শখ রে তোর।”

আর ও মুখ ফুলিয়ে বলতো,

___”খুব শখ। তোকে হতেই হবে।”

___” হবো না।সর তো।”

আর তখন অয়ন আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতো,

___” তুই ই তো আমার সব। তোকে নিয়ে শখ থাকবে না তো কাকে নিয়ে থাকবে বলতো অনুপাখি।”

কেমন যেনো ভালোলাগা কাজ করতো মনে। মুখে যা-ই বলি। আমিও তো কম ভালোবাসি না ওকে। মুচকি হেসে বলতাম,

___” হুম জানি।”

___” কি জানিস?”(দুষ্টু হেসে)

___” তুই কত খারাপ সেটা।”

বলেই পিঠে চড়-থাপড়া বসাতাম। আর ও আমার হাত চেপে ধরে বলতো,

___” আরে আরে তুই এমন পেত্নীদের মত করছিস কেন!আমি তো সহজ একটা প্রশ্ন করলাম শুধু।”

___” হইছে থাক।তলে তলে যে কি কি করিস সবই জানি। হুহ।”

অয়ন সর্বোচ্চ অবাক হয়ে বলতো,

___” ওহ মাই গড অনুপাখি!আমি আবার কি করলাম।”

আমি মুখ ভেংচি কেটে ওর চুল টানতাম। তারপর বলতাম,

___” সেটা তুই জানিস। আমি কি করে বলবো।”

___” তাই না?”

আমি ওর দিকে তাকিয়ে ভেঙাতাম। আর বলতাম,

___” তোকে আমি একটুও ভালোবাসি না।”

___” আমি তোকে ভালোবাসি তো অনুপাখি।এতেই হবে।”

___” সর!”

___” এমন করিস কেন!তুই না আমার বউ?”(মুখ ফুলিয়ে)

___” বউ না। একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড। মনে টনে আছে কিছু? নাকি সেই স্বপ্নে এখনো ভাসছিস।”

___” তোকে নিয়ে স্বপ্ন কখনো শেষ হবার নয়।”

হাসতাম আমি। এভাবেই গল্প করতে করতে কাটিয়ে দিলাম এতগুলো বছর। একসাথে কলেজ শেষ করে মেডিকেলে উঠলাম। আজই আমাদের প্রথম ক্লাস ছিলো মেডিকেল কলেজে। আর আজই এমন ঘটনা কেন ঘটালো অয়ন?ওর যদি প্রিয় মানুষ থেকেই থাকে তাহলে আমাকে কেন এতদিন স্বপ্ন দেখালো ও? মেসেজের টুংটাং শব্দে ধ্যান ভাঙলো আমার। চোখ মুছে ফোনটা হাতে নিতেই দেখি অয়নের মেসেজ। স্পষ্ট করে লেখা,

___” চলে এলি যে?আমি তোকে পৌঁছে দিতাম অনুপাখি। তোকে বাসায় না পৌঁছিয়ে কখনো নিশ্চিন্ত হয়েছি আমি?”

আমি কোনো রিপ্লাই করলাম না। ওর সাথে কথা বলতে কেন যেন ইচ্ছে হচ্ছে না। বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে এলাম।

🌼

,
,

ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম। আমি সবকিছু কেমন যেন বিষাদ লাগছে। বিছানায় বসতেই দরজা খুলে ভিতরে এলেন আম্মু। ব্যস্ত গলায় বললেন,

___” তোর ফুপি তোকে কল করেছিল?”

___” না আম্মু।”

___” আমাকে করেছে। গতকাল সাদি এসেছে শুনেছিস তো?”

আমি মাথা নাড়ালাম। এই লোককে নিয়ে কিছু বলা মানেই কথা বাড়ানো।তাই কিছু বললাম না। আম্মু নিজেই বললো,

___” সাদির সাথে কোনো প্রকার বেয়াদবি করবি না ঠিকাছে?তোর ফুপি তোকে কতটা ভালোবাসে বল তো। আর তুই কি না তার ছেলেটার সাথে ঝগড়া করিস।”

আমি বিরক্ত হলাম। ভ্রু কুঁচকে বললাম,

___” উফফ আম্মু!সেটা ৪ বছর আগের কথা। আগে উনি আমাকে খুঁচাতেন। তাই ঝগড়া হত। পরে বিদেশে যাওয়ার পর তো কথাই হয়নি। জাস্ট ফেবুতে পিক দেখেছি। তাহলে ঝগড়াটা করলাম কই আমি।”

আম্মু চোখ রাঙালেন। মাথায় গাট্টা মেরে বললেন,

___” তোর থেকে ৬ বছরের বড় ছেলে তোকে খুঁচাবে? তাইনা?”ভন্ডামি আলাপটা নিজের কাছেই রাখ। নিচে আয়। ঘর গুছাতে হেল্প কর।”

আমি মাথায় হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে বললাম,

___” কেন? আমাকে কেউ দেখতে আসবে?”

___” চুপ কর নির্লজ্জ মেয়ে। তোর সাদি ভাই আর ফুপি আসবে আজ। চার বছর পর ছেলেটা আসলো। তাই ছোটখাটো খাওয়া-আড্ডা। ”

আমি মুখ ভেঙালাম।আর বললাম,

___” আসছি যাও।”

আম্মু চলে গেলো। আমি মনে মনে ভাবলাম,

___” এহ মহান কাজ করে আসছে বিদেশ থেকে।দেখো গিয়ে কার সাথে কি করতো। গুনধর ভাগিনা।”

আরোও নানান কথা ভাবতে ভাবতে আমার মাথা থেকে অয়নের কথাটা বেড়িয়ে গেলো। আমি নিচে নেমে এসে টেবিল গুছাতে লাগলাম। দাদীও হেল্প করছেন। আর পান চিবুতে চিবুতে বলছেন,

___” আহা!কতদিন পর আমার সাদিটা আসছে। ওর পছন্দের রান্না করে রাখছি আমি। নিজের হাতে খাওয়াবো।”

গা জ্বলে উঠলো আমার। ঝাঁঝালো গলায় বললাম,

___” আমাকেও তো কখনো এভাবে খাওয়াতে পারো বুড়ি!”

___” চুপ কর ছুড়ি।ছোট থেকে আমার সাদিটার সাথে শুধু হিংসা।”

আমি কিছু বলতে যাবো তখনই দেখলাম আব্বু সিঁড়ি দিয়ে নামছে।তাই আর কিছু বললাম না।মুখ ফুলিয়ে কাজ করতে লাগলাম। ফোনে কল আসতেই দেখলাম অয়ন কল করেছে। আমি সাইলেন্ট করে রাখলাম।কিন্তু মন মানলো না।বারবার ফোন আসছে।আব্বুর সামনে রিসিভ করা যাবে না। তাই ফোনটা নিয়ে বাগানের দিকে চলে গেলাম।রিসিভ করে কানে দিতেই অয়নের ব্যস্ত কন্ঠ,

___” তুই ঠিক আছিস অনু?”

আমি অভিমানী গলায় বললাম,

___” হ্যা!আমার আবার কি হবে।”

___” তাহলে তখন ওভাবে চলে গেলি কেন?”

___” এমনি!বাসা থেকে কল এসেছিল তাই।”

___” কই আমি তো দেখলাম না বাসা থেকে কল আসতে।”

আমি কিছু না বলে কলটা কেটে দিলাম।কিভাবে বলি ওকে যে আমি ওকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি?যেখানে ও অন্য একজনকে ভালোবাসে। ভাবতে ভাবতে বাগানের একটা টকটকে লাল গোলাপ ছিঁড়ে ফেললাম আমি।আপন মনেই বলতে লাগলাম,

___” আমার মধ্যে কি কমতি ছিল অয়ন?কেন করলি তুই আমার সাথে এমন!আমি কি তোর কথা ফেলে দিয়েছি?ভালোবাসার কথাটা তো তুই ই বলেছিলি। তাহলে আজকে কেন এমন করলি তুই? তোর এই আমার খোঁজ নেয়া, ব্যস্ত হওয়া,এইসব কেন? এইসব তো তোর প্রেমিকার জন্য হওয়া উচিত। তাই না? তাহলে আমার সাথে কেন? ”

কথাগুলো বলেই ফুলটা আমাদের বাসার গেইটে ছুঁড়ে মারলাম আমি। কাঁদতে কাঁদতে পিছনে ফিরে দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই পেছন থেকে শোনা গেলো পুরুষালি কন্ঠ,

___” এক্সকিউজ মি? ফুলটা কি আপনার?”

আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।লোকটি আবারো বললো,

___” হ্যালো? শুনতে পাননা নাকি? এভাবে ফুল ছুড়লেন কেন? এত রাগ ভালো না। এক্ষুণি আমার চোখে পড়তো ফুলটা।”

আমি তখনো চুপচাপ দাড়িয়ে আছি।লোকটা আবার বললো,

___” বয়রা নাকি? নাকি নিজ থেকেই চুপ করে আছেন? বেয়াদব কোথাকার।”

এবার রাগ যেন আকাশ ছুলো আমার।চোখটা মুছে পিছনে ফিরেই দৌড়ে গিয়ে লোকটার কলার চেপে ধরে বলে উঠলাম,

___” হাউ ডেয়ার ইউ? আপনি জানেন আমি কে? এই বাড়ির মেয়েকে এসব বলার সাহস হয় কিভাবে আপনার?”

লোকটা সানগ্লাসটা খুলে ফেললো। ভালো করে তাকাতেই হাতটা আলগা হয়ে এলো আমার। ঢোক গিলে কয়েক পা পিছনে চলে গেলাম।এবার সাদি ভাই কে ভালো করে খেয়াল করলাম।ব্ল্যাক শার্ট আর হোয়াইট রঙের জিন্স পড়ে সানগ্লাস লাগিয়ে দাড়িয়ে আছেন। বুঝলাম না!দাওয়াত খেতে এসে এমন নায়ক মার্কা লুক দেয়ার মানে কি!ছোট খাটো ক্রাশ খেলেও সেটাকে প্রকাশ না করে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। আমাকে দেখেই ওনার মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেলো। পরিনত হলো বাঁকা হাসিতে। আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,

___” ধানিলংকা!এখনো তেজ নিয়ে ঘুরছিস? আর তো হবে না সোনা। আ’ম ব্যাক নাউ।”

.
.
.
.

চলবে……

#রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#সূচনা পর্ব

( অনেকদিন পর লিখছি তাই ভিন্ন কিছু লিখলাম☺️। ভুলক্রটি ধরিয়ে দিবেন। বাজে মন্তব্য করবেন না। অবশ্যই উৎসাহমূলক মন্তব্য আশা করবো।রেসপন্স পেলে চলবে নাহলে এখানেই সমাপ্তি😌)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here