রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব -০৯

#রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৯
#গল্পের নতুন মোড়

কনে সেজে বাসর ঘরে বসে আছি আমি।
কপালের চিন্তার ভাজ। তখন আচমকা আমাকে টেনে নিয়ে কাজী অফিসে চলে গিয়েছিলেন সাদি ভাই। ওহ এখন তো ভাই বললে পাপ হবে! ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তো উনি আমাকে নিয়ে গিয়ে প্রায় জোর করেই বিয়ে করলেন। আমি তখনো কাঁদতে কাঁদতে বলছিলাম,

___” আপনি রাগের জন্য এমন করছেন। হুশ আসলে আমাকে মেরেও ফেলতে পারেন।”

উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিলেন শুধু। আর আমি আমার মত বকবক করেই যাচ্ছিলাম গাড়িতে বসে,

___” আপনার সাথে কি আমার যায়? আপনি আমাকে দুচোখে সহ্য করতে পারেন না! শুধু রাগ দেখান। আর আপনি আমার সাথে নিজের জীবন জুড়ে দিলেন? পরিবার জানলে কি হবে?

উনি শুধু শান্ত গলায় বলেছিলেন,

___” আমি সামলে নিবো।”

হ্যা নিয়েছেন সামলে। উনি বাসায় এসে সবটা সামলে নিয়েছেন। এবং সন্ধ্যায় ৭:৪৫ মিনিটে আমাদের পুনরায় বিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আপাতত আমি ফুপির বাসায় সাদির রুমে রয়েছি। আমার বাসায় সবাই অবশ্য বলেছিল যে আমাকে যেন পরে অনুষ্ঠান করে একেবারে তুলে দেওয়া হয়।কিন্তু সাদি মানতে নারাজ। উনি এখনই ঘরে বউ তুলে নিতে চান। এটা দেখে আর কেউ কিছু বলেননি। পূর্বের ঘটনাগুলো ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। এ কোন নতুন মোড়ে এনে ফেললো বিধাতা আমায়? ভালোবাসতাম অয়নকে।আর জীবন জুড়লো এমন একজনের সাথে যাকে কখনো আমার স্বামী হিসেবে কল্পনাও করিনি।চিন্তায় আসেওনি। দরজা খোলার শব্দে ধ্যান ভাঙলো আমার। সাদি দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলেন। হালকা কেশে বললেন,

___” সালাম করবি না আমায়?”

আমি কেঁপে উঠলাম। এহ কি শখ!ওনাকে সালাম করবো!তবুও কথাটা মনে চেপে রেখে টুকটুক পায়ে নিচে নেমে ওনার পা ধরে সালাম করতে যাব তখনই উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

___” থাক থাক! আর সালাম করতে হবে না।এমনিতেই তোকে একটু পর আমার পা টিপতে হবে।”

আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম। রাক্ষসটা তারমানে আমার উপর অত্যাচার করার জন্য আমাকে বিয়ে করেছে?আমি আরো ভাবলাম মন থেকেই করেছে। সাদি বাঁকা হেসে আমার ঘোমটাটা সরিয়ে দিলেন। আচমকা এমন হওয়ায় চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম আমি। উনি আমার খালি পেটে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নিলেন।মুখে হালকা ফু দিয়ে বললেন,

___” তুই আমার বউ। তোর কি মনে হয় তোকে দিয়ে আমি পা টেপাবো?”

আমি চোখ খুলে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। টিপাবি না তাহলে বললি কেন? কথাটা মনেই চেপে রেখে মুখে বললাম,

___” ম..মানে?”

উনি আমার দুগালে হাত রেখে আমার কপাল বরাবর চুমু খেলেন। চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি। উনি আমার দুগালে চুমু দিতেই লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেলো। এটা উনি কি করছেন। আমার কাপাকাপি বেড়ে যাচ্ছে। গলায় থাকা তিলটায় চুমু দিয়ে বললেন,

___” মানে হলো এখন তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। এতটুকুই।”(দাঁত কেলিয়ে)

আমি মাথা নাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে হাঁপাতে লাগলাম। উনি আমাকে মেরেই ফেলতেন আরেকটু হলে।কোনরকমে একটা শাড়ি জড়িয়ে বেড়িয়ে এলাম। উনি শেরওয়ানি পাল্টে টি-শার্ট পরে বিছানায় ফুলের পাপড়ির উপর শুয়ে আছেন। আমাকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন,

___” এদিকে আয়।”

আমি ওনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। উনি আমার হাত ধরে পাশে বসিয়ে দিলেন। কোলে মাথা রেখে বললেন,

___” মাথায় হাত বুলিয়ে দে।

৪২০ ভোল্টের ঝটকার মত কেঁপে উঠলাম আমি। এমন পরিস্থিতিতে কখনো পড়িনি।তাও আবার সাদি ভাইয়ের সাথে তো কখনোই না। কল্পনারও বাহিরে। আমাকে চোখ বড় করে বসে থাকতে দেখে পেটে চিমটি কাটলেন উনি। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,

___” আউ!!”

___” এই চুপ! এত জোরে চেচাচ্ছিস কেন! তোকে তো কিছুই করলাম না।”(বাঁকা হেসে)

আমি কিছু না বলে চোখ-মুখ কুঁচকে পেটে হাত বুলাতে লাগলাম। উনি আমার হাতটা পেট থেকে সরিয়ে দিলেন। ওখানে মুখ গুঁজে বললেন,

___” সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে আমার। উফ বেচারা আমি! এখন একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দে।”

আমি কিছু না বলে মাথার চুল টানতে লাগলাম। এহ! মামা বাড়ির আবদার। কি ধকলটা গিয়েছে ওনার! ঢং! বিপদে তো পড়লাম আমি। এই রাক্ষস টা আমাকে দিয়ে কি কি করাবে আল্লাহ মালুম। তবুও এখন যে শান্ত আছে এটাই তো অনেক।এগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম টেরই পেলাম না।

.

সকালে ঘুম ভাঙলো কোমড়ে টান পড়ায়। কোমরটা মনে হচ্ছে ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। চোখ খুলে দেখলাম সাদি এখনো ওভাবে শুয়ে। আর সারারাত এভাবে বসে থাকায় আমার কোমড় ব্যাথা করছে।ওনার ঠোঁট জোড়া এখনো আমার পেট স্পর্শ করে আছে।রাক্ষসটা এত কিউটভাবে ঘুমাচ্ছে দেখে বকতেও তো পারছি না।আমি পাশ থেকে বালিশ নিয়ে ওনার মাথার নিচে দিয়ে দিলাম। তারপর উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।

আমাকে নিচে নামতে দেখে মিষ্টি হাসলো ফুপি। বলে উঠলো,

___” এত জলদি উঠলি যে?”

___” ঘুম ভেঙে গেল ফুপি। ”

ফুপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

___” এখনো ফুপি? আম্মু বল।”

আমি ফুপিকে জড়িয়ে ধরে বললাম,

___” তুমি আমার ফুপিই থাকবা।”

ফুপি হাসলো। আমাকে জোর করে টেবিলে বসিয়ে বললো,

___” সাদি এই কাজ করবে এটা জানতাম কিন্তু এত জলদি করবে তা তো জানতাম না।”

ফুপির কথায় অবাক হলাম আমি। অবাক হয়েই বললাম,

___” মানে? কিসের কথা বলছো ফুপি?”

ফুপি আমাকে নাস্তা দিতে দিতে বললো,

___” এইযে সাদি তোকে বিয়ে করলো। এই কাজটা তো আরো আগে করার কথা ছিল। যে পাগল ও তোর জন্যে! ”

আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলাম। সাদি পাগল? তাও আমার জন্য? আমি বিস্ময় নিয়ে বললাম,

___” কি বললা ফুপি? তোমার ছেলে আমার জন্য পাগল?”

___” তা নয়তো কি! এইযে তোর বার্থেডেতেই তো তোর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিতাম আমি। সাদি তো পাগলই করে দিচ্ছিলো। লন্ডন গিয়ে তাও আরামে ছিল।এখানে এসে নাকি তোকে দেখে পাগল হয়ে গেছে। ”

আমি উঠে দাঁড়ালাম। গালগুলো লাল হচ্ছে।কি লজ্জা কি লজ্জা! এই লোকটা মাকে এসব বলেছে? ফুপির সামনে আর দাঁড়ানো যাচ্ছে না।আমাকে দাঁড়াতে দেখে ফুপি বললো,

___” কিরে!দাঁড়িয়ে পড়লি কেন? বোস।”

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি। মিটমিটি হেসে বললাম,

___” পরে খাবো ফুপি।”

বলেই দৌড় দিলাম রুমের দিকে। পিছন থেকে ফুপি বলছে,

___” কিরে মা? লজ্জা পেলি নাকি?”

আমি রুমের দিকে এগোচ্ছি আর বিরবির করে বলছি,

___” তারমানে রাক্ষস টা আমাকে আগের থেকেই পছন্দ করে? আর আমি জানতেও পারিনি? ইশশ! কখনো মনেই হয়নি। এখন ওনার সামনে যাবো কি করে? লজ্জা লাগছে তো খুব। আচ্ছা উনি কখনো মুখ ফুটে বলেননি কেন যে উনি আমাকে ভালোবাসেন? ”

কথাগুলো বলে গালে হাত দিলাম আমি।গালগুলো লাল হয়ে যাচ্ছে। পরক্ষনেই ভাবলাম,

___” উনি বললেই বা কি? আমি তো কখনো ওনাকে তেমনভাবে দেখিওনি। আমি তো অয়নকে ভালোবাসতাম আর বাসিও। হয়তো এখন ও আমার অতীত। আর আজ তো ওর এঙ্গেজমেন্ট। আমি কি কখনো সাদি ভাই কে অয়নের জায়গাটা দিতে পারবো? ওনাকে ভালোবাসতে পারবো? উনি তো আমার স্বামী। ওনাকে ভালোবাসাটাই যে আমার ভাগ্যের লিখন। অয়ন তো পরপুরুষ! অন্যের হবু স্বামী। ”

ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। রুমে ঢু্কেই দেখি সাদি উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন। আমি ওনার পাশে গিয়ে বসলাম। কি সুন্দর মুখশ্রী!যে কেউ প্রেমে পড়তে বাধ্য।নিজের অজান্তেই ওনার সামনে পড়ে থাকা সিল্কি চুলগুলো নেড়ে দিলাম আমি।আর ভাবলাম,

___” আপনিই আমার কপালে ছিলেন। আমার ডেস্টিনি।”

ভেবেই উঠতে যাবো এমন সময় উনি আমার হাত ধরে ফেললেন। আমি কাঁপা গলায় বললাম,

___” আপনি জেগে ছিলেন?”

উনি কিছু না বলে আমার হাতটা নিজের গালের নিচে নিয়ে আবারো চোখ বন্ধ করে ফেললেন। আমি কিছু বলতেও পারছি না। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠতেই দেখি প্রান্তি কল করেছে।কোনোমতে রিসিভ করে বললাম,

___” হ্যা বল!”

___” একটা জিনিস বলার জন্য কল দিলাম।”

___” হুম বল।”

আমার কথা শেষ হতেই সাদি আমার হাতের পিঠে চুমু খেলেন।আমি কেঁপে উঠে বললাম,

___” কি করছেন!”

সাদির কোনো ভাবান্তর না হলেও প্রান্তি অবাক হয়ে বললো,

___” আমি তো কিছু বললামই না। কি করবো।”

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,

___” আরে তোকে বলছি না। তুই বল কি বলবি।”

___” না মানে তোকে বলাটা ঠিক হবে কি না জানি না। তুই মন খারাপও করতে পারিস।”

এদিকে সাদি চুমু খেয়েই যাচ্ছে। আর আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি।তাও কোনোমতে বললাম,

___” এই বলবি তুই?”

___” বলছি তো।রাগছিস কেন?আসলে আজকে অয়নের এঙ্গেজমেন্ট। আসবি তো?যদিও অয়ন তোকে ইনভাইট করেনি। তুই নাকি সব ভেস্তে দিবি। তবুও আমরা বলেছি যে তুই না গেলে আমরা যাবো না। তাই ও তোকেও ইনভাইট করেছে।তবে তেমন ভাবে না। বলেছে, আসলে আসবি না আসলে নাই। আমি তো জানিই যে এটা জানার পর তুই আসবিই না।”(ঢোক গিলে)

আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। তারপর সাদির থেকে হাতটা ছাড়িয়ে বললাম,

___” আসবো।”

বলেই মুচকি হেসে কলটা কেটে দিলাম। এখানে বসে থেকেও ভালোই বুঝতে পারছি যে প্রান্তি বেশ অবাকই হয়েছে। হলে হোক!এদিকে সাদি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে হাতটা টেনে নিলো আবার। আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

___” কি হচ্ছে! ”

___” চুপ কর!!”

চলবে……❤️

(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। গঠণমূলক মন্তব্য আশা করছি☺️❤️)

(এবার অনু-সাদির জবাবের পালা😊।আমার এক্সাম গতকাল বলেছিলাম। সো আজ অন্তত ছোট ছোট করবেন না।)

1 COMMENT

  1. Vai etodin holo kintu onno porbo gulo dilen na keno!
    wait korchi… kbub sundor hoyeche lekhata…ek dekhay 9ta porbo shesh kore felechi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here