#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৩৯
” এই না না। নাহ্! ”
বরফের বুকে ছুটে বেড়াচ্ছে উচ্ছ্বল রমণী। অধর কোলে তার দুষ্টু হাসির আভাস। পিছু নিয়েছে তূর্ণ। হাতে একমুঠো সফেদ বরফ। নিশানা তার আদুরে মাইরা। দুয়া বারবার পিছু ঘুরে নিষেধ করছে। আপত্তি জানাচ্ছে। মানুষটি তা শুনলে তো? ঠিক তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তাকে বরফে হিম করে পালিয়ে বেড়ানো! অসম্ভব। দুয়া ছুটতে ছুটতে একপর্যায়ে ভারসাম্য হারিয়ে বসে পড়লো শুভ্র বরফের আচ্ছাদনে। রীতিমতো ঘন শ্বাস পড়ছে মেয়েটার। লালাভ রঙে রঙিন মুখশ্রী। হিমবাহের পরশে শীতল গাত্র। হাঁপিয়ে উঠেছে বেশ। তখনই সম্মুখে হাজির হলো তূর্ণ। শ্রান্ত মানুষটির অধরে বক্র হাসির রেখা। তা লক্ষ্য করে দুয়া ঘাবড়ে গেল। অনুধাবন করতে পারলো আজ তো সে খতম! তাই হঠাৎ ভিন্ন এক পন্থা অবলম্বন করলো। মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো,
” মে*রো না। আমি তো গুড গার্ল। তোমার পাঁচটা না দশটা না একটা মাত্র বউ। আমায় তুমি মা”রবে? হাত কাঁপবে না? ”
হাঁটু গেড়ে বিপরীতে বসলো তূর্ণ। মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানালো। মধুরতম স্বরে বললো,
” মা|রবো! অসম্ভব। আমার পাঁচটা না দশটা না একটা মাত্র বউ বলে কথা। আদর সোহাগ বিহীন অন্য কিছুতে মন টানে ই না। ”
কথার তালে তাল মিলিয়ে দুয়া বলে উঠলো,
” হুম। অন্য কিছুর কি দরকার? ”
বক্র হাসলো তূর্ণ। লালিমায় মাখা চেহারায় দৃষ্টি বুলাতে বুলাতে মৃদু স্বরে বলতে লাগলো,
” ঠিক আছে। অন্য কিছুর কি দরকার? তুমি আমি একসাথে। সঙ্গে সুইস আল্পসের বরফ। মাখো মাখো প্রেমপূর্ণ আবহাওয়া। জমে একদম ক্ষীর। তাহলে হয়ে যাক? আদর সোহাগে ভরপুর ওয়ান রাউন্ড? ”
চকিতে চমকালো দুয়া! এতক্ষণে হুঁশ ফিরল মেয়েটির। সে কোন কথার পিঠে কি বলছিল। ওহ্ শিট! লাজে ম’রি ম’রি দুয়া দোনামোনা করে পিছু হটার প্রয়াস চালালো। কিন্তু আরম্ভতেই ব্যর্থ। ডান হাতটি বন্দি হলো পুরুষালি হাতের মাঝে। মায়াবী পল্লব ঝাপটালো দুয়া। তাতে একটুও দরদ দেখালো না তূর্ণ। মুঠো ভর্তি বরফ ধীরগতিতে এগিয়ে নিলো মেয়েটির পানে। আগত শীতলতা অনুভব করে বদ্ধ হলো মেয়েটির নেত্রজোড়া। কেঁপে উঠলো ওষ্ঠাধর। শীতলতা জেঁকে ধরলো আষ্টেপৃষ্ঠে। নীরবে পেরিয়ে গেল কিছু মুহূর্ত। ঠাণ্ডা স্পর্শ না পেয়ে আস্তে ধীরে ভীত চোখে তাকালো দুয়া। ঠিক তখনই ঘটলো কাণ্ড। মাথায় পরিহিত বিয়ানির ওপর এক মুঠো বরফ ছেয়ে গেল। চোখেমুখেও হালকা বরফের শীতল পরশ। শীতে থরথর করে কেঁপে উঠলো মেয়েটি। বুজে গেল অক্ষি। তা দেখে দাঁত কেলিয়ে বিজয়ের হাসি হাসলো তূর্ণ। হাসির শব্দ কর্ণপাত হতেই তাকালো মেয়েটি। ক্ষে পে গেল বেশ।
” তোমাকে তো আমি.. ”
বাহুতে আঘাত করার পূর্বেই পগারপার তূর্ণ। তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালো দুয়া। পোশাক হতে বরফ ঝেড়ে দৌড়ে নিলো পিছু। হু”মকির বার্তা প্রেরণ করতে লাগলো,
” তোমাকে আমি ছাড়বো না। বরফে নাকানিচোবানি গোসল করাবো। দাঁড়াও বলছি। দাঁড়াও। ”
তূর্ণ থামলে তো? বরং পিছু ঘুরে উঁচু স্বরে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলো।
” পারলে ধরে দেখা। ”
সুইস আল্পসের বুকে ছোটাছুটি করছে পা|গলাটে কপোত- কপোতী। কখনো প্রায় ধরে ফেলার মতো সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে। কখনোবা শিকার হাতের নাগালের বাইরে। তাদের এই খুনসুটি উপভোগ করে চলেছে সেথায় উপস্থিত কিছু দর্শনার্থী। মুখে তাদের হাসির রেখা।
•
হিমাংশু’র দ্যুতি ছড়িয়ে ধরনীর বুকে। বিছানায় বসে তৃষা। বুকে জড়িয়ে রাখা তুলতুলে বালিশ। ভিডিও কলে সংযুক্ত তিন সখী। তৃষা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
” আমি নিশাদ ভাইয়াকে দেখার জন্য পা গ ল হয়ে গেছিলাম? ”
পুষ্পি দাঁত কেলিয়ে হাসলো।
” হস নাই? ”
” পুষ্পা রে! তোর কপালে হেব্বি ক্যা লা নি আছে। ভালোয় ভালোয় থাম বলতাছি। ”
পুষ্পি সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
” আমি কি বাস ট্রেন না অটোরিকশা? থামবো কি করে? হাউ? ”
বিন্দু হেসে উঠলো সশব্দে। তৃষা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
” এই মাইয়ারে থামতে কস না ক্যা? উল্টা নিজে দাঁত ক্যালাইয়া যাইতাছোছ। ও কিন্তু বেশি পকপক করতাছে। মা ই র খাবে বলে রাখলাম। ”
বিন্দু বললো,
” আমি অ্যার মধ্যে নাই। তোদের বিষয় তোরা বোঝ। ”
তৃষা গরম চোখে তাকালো পুষ্পির দিকে। টেনে টেনে বললো,
” তোরে একবার খালি বাগে পাই। বোঝাবো মা’ইর কারে কয় এবং তা কত প্রকার কি কি। ”
পুষ্পি মুখ ঝামটা দিয়ে বললো,
” এই হলো বন্ধু নামক শ ত্রু। কোথায় বলেকয়ে নিশু বেপ্পির সাথে দেখা করাই দিলাম। শুকরিয়া আদায় করবো। তা না। বাহুবলী পোজ দিতাছে। ”
তৃষা অবাক!
” নিশু বেপ্পি! হু? নি শা দ ভাইয়া? ”
” তা নয়তো কি? তোমার পরাণের নিশু বেপ্পি। ”
তৃষা চেঁচিয়ে উঠলো,
” পু ষ্পি! ”
তৎক্ষণাৎ দু’জনে কল কেটে উধাও। ঘন শ্বাস পড়ছে তৃষার। রাগে থরথর করে কাঁপছে গাত্র। কত বাজে কথাবার্তা! বলে কিনা তার পরাণের..! ছিঃ! আসতাগফিরুল্লাহ্ মার্কা সব কথা!
” বে দ্দ প মাইয়া! যতসব লেইম কথাবার্তা পারে! ”
আসলেই কি লেইম কথাবার্তা! সে কি সত্যিই নিশাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিল না! অল্প হলেও তো ছিল। মনটা কেন যেন বড্ড আনচান করছিল। অনুভূত হচ্ছিল অস্থিরতা। অসুস্থ মানুষটা কেমন আছে, কি করছে জানার জন্য খুব উশখুশ করছিল হৃদয়। নাম না জানা অনুভূতিতে আবিষ্ট হচ্ছিল অন্তঃপুর। বারবার মনে পড়ছিল সে-ই আহত দুরবস্থা। তাই তো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল কখন যাবে মানুষটির ফ্লাটে। একটিবারের জন্য তাকে দেখবে। শেষমেষ নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হলো। দেখা মিললো কাঙ্ক্ষিত মানুষটির। তার দর্শনে হৃদয়ের অস্থিরতা এখন অনেকাংশে লাঘব! মনটা কিঞ্চিৎ ফুরফুরে! চোখের পাতায় বারংবার ভেসে আসছে অনাকাঙ্ক্ষিত সেই মুখশ্রী। অজান্তেই মেয়েটির অধর প্রসারিত হলো। বুকের সঙ্গে জাপটে ধরলো তুলতুলে বালিশ।
•
বিছানায় ঠাঁই পেয়েছে লাগেজ। সেথায় পোশাকআশাক এর অনেকাংশ স্থান করে নিচ্ছে। ব্যস্ত রমণীর পানে অপলক চাহনিতে তাকিয়ে তূর্ণ। বসে হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে। দুয়া পোশাক গুছগাছ করতে করতে বললো,
” মামণি ফোন করেছিল। তৃষার সাথেও কথা হয়েছে। ও কিন্তু তোমার ওপর রাগ করে আছে। ”
” কেন? ”
” ভাই নাকি বউ পেয়ে বোনকে ভুলে গেছে। খোঁজখবর নিচ্ছে না। ”
সশব্দে হেসে উঠলো তূর্ণ।
” গা ধী বোধহয় ভুলে গেছে গতকাল সকালবেলা ভাই নামক কারো সাথে কথা বলেছে। ”
দুয়া ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।
” বান্ধবী আমার পারেও বটে। এমন ভাব নেয় যেন রায় বাঘিনী ননদিনী। ভাই নাকি বউ পেয়ে বোনকে ভুলে গেছে। ”
তূর্ণ কথা পেঁচিয়ে বললো,
” ভুল কিছু বলেনি অবশ্য। পুরুষ মানুষ অমন একটু আধটু করে। বিয়ের শুরু শুরু বউ ছাড়া কিছুই বোঝে না। চেনে না। দু’দিন গেলে বউ ছাড়া দুনিয়ার সব ই চেনে। জানে। তখন তারা পত্নীদের প্যারায় আধম|রা জনগণ। ”
ব্যস্ত হাতটি থেমে গেল। দুয়া তাকালো সরু চোখে।
” কি বললে তুমি? ইনডাইরেক্টলি বউদের দোষারোপ করছো! বউরা প্যা রা দেয়? তাদের যন্ত্রণায় বিবাহিত পুরুষ আধম’রা? এমন অহেতুক কথাবার্তা কি করে বলছো? ”
” এই না না। আসতাগফিরুল্লাহ্। বউয়ের সামনে বসেই তার দুর্নাম করবো? এতটাও দুঃসাহসী নই আমি। ”
ঠাস করে লাগেজ বদ্ধ করলো দুয়া। তূর্ণ অবাক হয়ে শুধালো,
” কি হলো? ”
” নিজেরটা নিজে গুছাও। আমরা তো খালি প্যা রা দেই। আমাদের যন্ত্রণায় তোমরা পুরুষ জাতি তটস্থ। তাই নিজের চরকায় নিজেই তেল দাও। ”
তূর্ণ বুঝতে পারলো আবহাওয়া গরম। বউ ক্ষে’পেছে। এতে নিজেরই চরম লোকসান। তাই চটাপট বিছানা ত্যাগ করে উঠে দাঁড়ালো। দুয়া অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ানো। তূর্ণ ওর পানে অগ্রসর হতে হতে দুষ্টু কণ্ঠে বলতে লাগলো,
” লক্ষ্মী সোনা রাগ করে না। লা লা লা। ”
নিজের পুরনো দুষ্টুমি কড়া নাড়ছে কর্ণ কুহরে। না চাইতেও নিঃশব্দে হাসলো দুয়া। তবে তা প্রকাশ করলো না। হঠাৎই অনুভব করতে পারলো পেশিবহুল দু হাতের অস্তিত্ব। দু’টো হাত তাকে নিজের সনে বেষ্টন করে নিয়েছে। ডান কাঁধে রেখেছে থুতনি। শিরশির করে উঠলো কায়া। কর্ণ কুহরে অধর ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো তূর্ণ,
” রাগ করে না দুয়া। বউ রাগ করলে এই পত্নীভক্ত পুরুষের কি হাল হবে? হুঁ? ”
দুয়া কিঞ্চিৎ বিরক্তিকর স্বরে বললো,
” রাগ করবো না তো কি করবো? তুমি সবসময় খালি ফাও কথা বলো। জ্বালাতন করো। ”
তূর্ণ এমন ভান করলো যেন সদ্য ধরনীতে আছড়ে পড়লো।
” আ মি জ্বালাতন করি! এতবড় অভিযোগ! বিনা কিছু করেই এত মারাত্মক অভিযোগ? তা তো মানা যায় না। আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ এবার প্রাকটিক্যালি বুঝিয়ে দেবে জ্বালাতন কারে কয়। ইহার স্বাদ কেমনতর। ”
” মানে! ”
মানে খুঁজতে খুঁজতেই হতবিহ্বল দুয়া! তাকে পাঁজাকোলে তুলে নিয়েছে তূর্ণ। ভারসাম্য বজায় রাখতে ভীতসন্ত্রস্ত মেয়েটি দু হাতে আঁকড়ে ধরলো অর্ধাঙ্গের গলা। ক্ষীণ স্বরে বললো,
” কি করছো কি? নামাও। ”
কক্ষের আলো নিভিয়ে বিছানার পানে এগোতে এগোতে তূর্ণ জানালো,
” তা হবে না। তা হবে না। ”
” তাহলে হবেটা কি? ”
” খেল্লা হবে। খেলা। ওয়ানডে, টি টুয়েন্টি, টেস্ট ম্যাচ। স-ব। ”
চোখ টিপে দিলো তূর্ণ। হতভম্ব দুয়া অনুধাবন করতে পারলো পৃষ্ঠদেশ ঠেকে বিছানায়। সম্মুখে অতি নিকটে মানুষটি। তপ্ত শ্বাস আঁকিবুঁকি করে চলেছে মুখশ্রীতে। নে’শালো নয়ন আবদ্ধ দুয়া’তে! লাজুকলতার দৃষ্টি নত হলো। লালাভ আভা ছড়িয়ে পড়লো কপোলে।
” মাইরা! ”
সম্মোহনী সে সম্বোধন! অজানা মোহ’তে দু’জনের অক্ষি মিলন হলো। তৃপ্তির আভা ছড়িয়ে পড়লো তূর্ণ’র মুখ জুড়ে। ডুবে গেল সে মায়াময়ীর নয়ন সাগরে। ললাটে ছুঁয়ে দিলো ওষ্ঠ। ঘোর লাগানো স্বরে বললো,
” আমার হৃদয়ে লুকানো মাইরা। ”
•
দিবাবসুর দীপ্তিতে আলোকিত ধরনী। ব্যস্ত সড়কের ডান লন ধরে হেঁটে চলেছে তূর্ণ, দুয়া যুগল।
বাহনহফস্ট্রাস, জুরিখের একটি ছোট এবং মনোমুগ্ধকর রাস্তা। বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ড, সুইজ-চকোলেটের দোকান, উষ্ণ ক্যাফে, আর্ট গ্যালারী এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে কেন্দ্রীভূত এই বাহনহফস্ট্রাস। জুরিখের এই অসামান্য হাই স্ট্রিটটি ইউরোপের সবচেয়ে একচেটিয়া এবং ব্যয়বহুল শপিং আর্কেড হিসেবে পরিচিত এবং বিশ্বব্যাপী তালিকায় তৃতীয় সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এখানে আগত দর্শনার্থী যদি শপিং বাফ হয় এবং অ্যাপল, চ্যানেল, কার্টিয়ার, গুচি, হেকেট, এইচএন্ডএম, বারবেরি, ডিওর এবং ম্যানর ইত্যাদির মতো বিশ্ব-মানের কিছু ব্র্যান্ডে লিপ্ত হতে চায়, তাহলে এটি তাদের জন্য একদম সঠিক জায়গা। তাই তো তূর্ণ, দুয়া’র আগমন এখানে। তারা আজ এসেছে বিদায়ের আগে পরিবারের সদস্যদের জন্য টুকটাক শপিং, গিফটস্ ক্রয় করতে।
হাই স্ট্রিট এই বাহনহফস্ট্রাস রাস্তাটি মোটামুটি ১.৪ কিমি লম্বা যা পায়ে হেঁটে মাত্র বিশ মিনিটে ঘোরাঘুরি করা যায়। তবে এখানকার অসংখ্য ব্র্যান্ডেড দোকান অপ্রতিরোধ্য রূপে আকৃষ্ট করে থাকে। দর্শনার্থীদের আশেপাশে যাওয়ার তাগিদ ভুলিয়ে কেবল হাঁটতে দেবে না! এছাড়াও দুর্দান্ত ফ্যাশন এবং প্রচলিত সবকিছুর জন্য জনপ্রিয়… জুরিখের এই চাওয়া-পাওয়া রাস্তাটি তার নান্দনিক নির্মাণের জন্যও প্রশংসিত। উনিশ শতকের শৈলী এবং স্থাপত্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, রাস্তাটি খুব কমই আধুনিক বিল্ডিংগুলির কোনো কাস্ট রচনা করে। এইভাবে দূর-দূরান্তের লোকেদের প্রলুব্ধ করার জন্য সত্যিকারের ভিক্টোরিয়ান স্বাদকে বাঁচিয়ে রাখে। এই সুন্দর শহরের রাস্তার জন্য যা কিছু বলা হচ্ছে তা কম, তবে একটি জিনিস যা নিশ্চিত। এখানে সবকিছু একটি চাক্ষুষ আচরণ। এখানে একবার বা দুবার আসলে অবিস্মরণীয় স্বাদ এবং ভাইব সারাজীবনের মতো প্রভাবিত করবে।
প্রধান রেলওয়ে স্টেশন থেকে হ্রদ পর্যন্ত ১.৪ কিলোমিটার প্রসারিত, বাহনহফস্ট্রাস বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত কেনাকাটার রাস্তাগুলির মধ্যে একটি। গলায় মুক্তার মতন এর সাথে জুড়ে রয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বুটিক এবং জুয়েলারির দোকান। দর্শনার্থীরা যতই লেকের দিকে হেঁটে যাবে দোকানগুলি ততই একচেটিয়া হয়ে উঠবে। প্যারাডেপ্লাটজ হলো বাহনহফস্ট্রাসের কেন্দ্রস্থল এবং জুরিখ লেকের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রাম জংশন হিসেবে কাজ করে। যেহেতু প্রধান সুইস ব্যাঙ্কগুলি এখানে তাদের সদর দপ্তর স্থাপন করেছে, প্যারাডেপ্লাটজ সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় মানি-হ্যান্ডলিং সেন্টার হিসাবে নিজের জন্য একটি নাম তৈরি করেছে। পথ ধরে, রেনওয়েগ এবং অগাস্টিনারগ্যাসের মতো গলিগুলি মনোরম ওল্ড টাউনের দিকে নিয়ে যায়।
তূর্ণ, দুয়া লন ধরে এগিয়ে চলেছে। বাম পাশে সুউচ্চ একের পর এক দালান। রাস্তা দিয়ে চলে বেড়াচ্ছে ট্রাম। কিছু প্রাইভেট কার। ডান পাশে অগণিত শো-রুম। নজরকাড়া সেসব শো-রুম। ওরা গিয়ে দ্বার উন্মুক্ত করে একটি শোরুমে প্রবেশ করলো। কৃত্রিম আলোয় ঝলমলে পরিবেশ! দুয়া আশপাশ ঘুরে দেখতে দেখতে তূর্ণ’র পিছু নিলো। ওরা গিয়ে পৌঁছালো রিস্ট ওয়াচের সমারোহের নিকটে। দুজনে দেখতে লাগলো ওয়াচগুলো। একটি ওয়াচ দেখিয়ে দুয়া বললো,
” এটা সুন্দর না? বাবার হাতে খুব মানাবে। ”
” হাঁ এটা সুন্দর আছে। এবার খালু আই মিন শ্বশুর আব্বার জন্য চুজ করো তো। ”
দুয়া ওর পানে তাকালো। মিহি কণ্ঠে বললো,
” সবার জন্য কেনাটা খুব আবশ্যক? মানে..! এখানকার সবকিছু তো ব্র্যান্ডেড। অনেক দামী। ”
” তো? ”
থেমে থেমে দুয়া বললো,
” সবার জন্য শপিং করাটা বেশ ব্যয়বহুল হয়ে যাবে না?”
” হলেও বা কি? তোমার বর যেমন হ্যান্ডসাম স্যালারি ইনকাম করে তেমনি শ্বশুর বাবাও যথেষ্ঠ ধনী। সো চুপচাপ ওয়াচ সিলেক্ট করো। ”
মেয়েটির অধরকোলে সুক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
” আচ্ছা। ”
ওরা দু’টো ওয়াচ ক্রয় করলো দুই বাবার জন্য।
.
নামকরা শো-রুম হতে দুয়া কতগুলো চকলেট ক্রয় করলো ভাইবোনদের জন্য। নিজের জন্য তো অবশ্যই রয়েছে। তূর্ণ দুই মায়ের জন্য হালকা জুয়েলারি এবং সকলের জন্য আরো কিছু উপহার ক্রয় করলো। অতঃপর তারা উপভোগ করলো বাহনহফস্ট্রাসে ট্রাম ভ্রমণ।
•
Le River Gauche. সুইজারল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট। যা অবস্থিত জুরিখে। সুবিশাল দ্বার উন্মুক্ত করে ভেতরে প্রবেশ করলো তূর্ণ, দুয়া। আভিজাত্যে ভরপুর অন্দরমহল। বসার জন্য অসংখ্য দ্বৈত সোফা। উপরিভাগে ঝুলন্ত আলোকবাতি। অপূর্ব পরিবেশ! ওরা ফাঁকা দেখে একটি টেবিল দখল করলো। বসলো একে অপরের বিপরীত দিকে। ব্যস্ত হলো নিজস্ব আলাপণে।
যথাসময়ে ওদের খাবার পৌঁছে গেল। মেনুতে রয়েছে – লিন রোস্ট অন পটেটো ওয়েজেস, সামুদ্রিক শৈবালের সাথে রিসোটো। ডেজার্ট হিসেবে রয়েছে “এল জার্ডিন” চকলেট কেক। দুয়া খুশিমনে বললো,
” ইয়াম্মি লাগছে! ”
” লেটস্ স্টার্ট। ”
ভোজন পর্ব শুরু হলো দু’জনের। উপভোগ করতে লাগলো বিখ্যাত রেস্তোরাঁর অসাধারণ খাদ্য।
#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪০
” গুডবাই সুইজারল্যান্ড! ”
ক্ষুদ্রাকৃতির জানালা গলিয়ে জুরিখ শহরের দেখা মিলছে। তাকেই বিদায় জানালো দুয়া। মলিন বদনে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো সেথা হতে। আটদিন ব্যাপী সুইজারল্যান্ড ট্রিপ আজ সমাপ্ত হলো। জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশ ভ্রমণ। তা-ও একান্ত মানুষটির সঙ্গে মধুচন্দ্রিমা রূপী। অসাধারণ, অনবদ্য, অপূর্ব ছিল! কখনো ভোলার মতো নয়। এই সফরটি চিরকাল তার স্মৃতির পাতায় গেঁথে রইবে। কোনো এক শ্রান্ত অপরাহ্নে এ ভ্রমণ কালীন মুহূর্তগুলো ভেবে স্মৃতি রোমন্থন করবে। তৃপ্তিময় হাসলো দুয়া। তাকালো বাঁ পাশে। মানুষটির হাতে ম্যাগাজিন। দৃষ্টি নিবদ্ধ তাতেই। দুয়া কিচ্ছুটি বললো না। নিঃশব্দে মাথা এলিয়ে দিলো তার কাঁধে। তূর্ণ মিষ্টি করে হাসলো। ডান হাতটি বাড়িয়ে দিলো দুয়া’র পানে। ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে প্রশ্ন করলো,
” খারাপ লাগছে? ”
” একটু একটু। কয়েকদিন এখানে স্বপ্নের মতো কাটিয়েছি। এবার ঘরে ফেরার পালা। স্বাভাবিকভাবেই কেমন যেন লাগছে। ”
” মন খারাপ করো না। ইনশাআল্লাহ্ সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রয়োজনে নাহয় আবার আসবো। তবে দুই নয়। তিন হয়ে। ”
” তিন! ” কিঞ্চিৎ চমকালো দুয়া!
” হাঁ তিন। তুমি, আমি এবং সে। ”
কাঁধ হতে মুখ তুলে তাকালো দুয়া। শুধালো,
” কে সে? ”
কর্ণে উষ্ণ শ্বাস ফেলে জবাব দিলো মানুষটি,
” আমাদের অনাগত বাবুসোনা। ”
সহসা আর’ক্ত আভা ছড়িয়ে পড়লো মেয়েটির মুখশ্রীতে। লাজে নত হলো দৃষ্টি। বাহুতে মৃদু আঘাত করে তারই কাঁধে মুখ লুকালো মাইরা। সশব্দে হেসে উঠলো তূর্ণ। তাতে আরো গুটিয়ে গেল মেয়েটি। ওকে নিজের সনে আগলে নিলো তূর্ণ।
•
সপ্তাহব্যাপী মধুচন্দ্রিমা সেরে দেশে ফিরেছে তূর্ণ, দুয়া যুগল। খুশির আভা ছড়িয়ে পড়লো দুই পরিবারে। কখনো ‘ ছায়াবিথী ‘ কখনোবা নিজের বাসায়। গেট টুগেদার এর আয়োজন করা হলো। আনন্দে কাটলো দিন। আজও তেমনই এক আনন্দমেলা। তাহমিদা’র নিমন্ত্রণে হাজির হয়েছে দুয়া’র শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। নিজ রুমে বসে দুয়া, তানজিনা, নিশি, তৃষা এবং তানু। ওদের মধ্যমণি ল্যাপটপ। সেথায় প্রদর্শিত হচ্ছে সুইজারল্যান্ড ভ্রমণের অসংখ্য মুহূর্ত। লেক জেনেভা’র ফটো দেখতে দেখতে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো তৃষা।
” আরে বাহ্! ইন্টারনেটে লেক জেনেভা যতটা সুন্দর। বাস্তবে তো তার থেকেও কয়েক গুণ বেশি সুন্দর লাগছে! ”
দুয়া সহমত পোষণ করলো।
” একদম ঠিক বলেছিস। ওখানে এত সুন্দর সুন্দর ভিউ যে কোথা থেকে কোথায় যাবো, কি ফটো তুলবো.. আমি তো পুরো কনফিউজড হয়ে পড়েছিলাম। ”
তানজিনা ওর দিকে তাকালো। দুষ্টু হেসে বললো,
” এত কনফিউশন! বর সাহেবকে বলতেই হতো। সে সমস্ত কনফিউশন দূর করে দিতো। ”
” অ্যাহ! সবকিছু তাকে বলতে হবে কেন? ”
” কারণ সে তোর বর সাহেব। ”
” উফ্ আপু। ” দুয়া’র মুখে মধুরতম বিরক্তির ছাপ।
হেসে উঠলো বাকিরা। তানু হাসিমুখে বললো,
” দুয়াপু লজ্জা পাচ্ছে। হি হি হি। ”
” ওরে পুঁচকে মেয়ে! বেশ পেকে গেছিস তাই না? বিয়ে দিতে হবে। হুম। ”
তানু আপত্তি জানালো।
” ইশ্ বললেই হলো? আর আমি কি সিজনাল ফল? যে পেকে গেছি? ”
হেসে উঠলো সবাই। ওর পিঠ চাপড়ে বাহবা জানালো তৃষা।
” একদম কারেক্ট আছে বস। ফাটাফাটি বলেছিস। ”
গর্বিত হলো তানু। তা দেখে দুয়া মিটিমিটি হাসছে। সকলের উদ্দেশ্যে বললো,
” বোন আমাদের বড় হয়ে গেছে। বুঝদার হয়ে গেছে। এর জন্য পাত্র খোঁজা দরকার। এখনই সুসময়। ”
নিশি সুরে সুরে বললো,
” এখন তো সময় কাছে আসার। ”
” এ দুটি হৃদয় ভালোবাসার। ” লাইন সমাপ্ত করলো তৃষা।
সকলের হাসিতে লজ্জা পেল তানু।
” আপু! ”
নিশি বললো,
” হাঁ আপু। বলো। কেমন জামাই চাই? কবির সিং টাইপ প্যাশনেট? নাকি রোমান্টিক পিস? ”
” এটা কিন্তু ঠিক না। তোমরা দুয়াপু’কে নিয়ে দুষ্টুমি করছিলে। এখন আমাকে নিয়ে পড়লে কেন? ”
দুয়া হেসে সুরে সুরে বললো,
” কেননা এখন তো সময় কাছে আসার। ”
তানু ব্যতিত সকলে সমস্বরে,
” এ দুটি হৃদয় ভালোবাসার। ”
এবার সকলেই একত্রে সশব্দে হেসে উঠলো। হঠাৎ দুয়া লক্ষ্য করলো তৃষার নজর ওর দিকেই নিবদ্ধ। কেমন বাজপাখির নজরে তাকিয়ে।
” কি হয়েছে? এমন শকুন চোখে তাকিয়ে আছিস কেন?”
” দেখছি। বোঝার চেষ্টা করছি। ”
” আচ্ছা? কি দেখা বোঝা হচ্ছে? ” ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দুয়া।
” এটাই যে ভিনদেশে আপনেগো কাছে আসা, ভালো পাশাপাশি হয়েছে? ”
বিষয়টি অনুধাবন করতেই লজ্জালু আভা ছড়িয়ে পড়লো দুয়া’র মুখশ্রীতে। নিশি হৈহৈ করে উঠলো।
” হয়ে গেছে। হয়ে গেছে। ভাবিজি’র চেহারাই বলে দিচ্ছে কুচ তো জারুর হুয়া। ”
দুয়া ওর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।
” নিশিপু। পঁচা বকবে না। ভাবি হই কিন্তু। ”
তৃষা ফটাফট দুয়া’র বাঁ কপোলে চুমু এঁকে দিলো।
” আমি জানতাম। ভাইয়া আমার রোমান্টিক পিস। অন্য মাস্টারদের মতো নিরামিষ না। ঠিক মধুচন্দ্রিমা মানিয়েই আসবে। ”
দুয়া ফটাফট ওর পিঠে কয়েকটা আঘাত করলো।
” বে দ্দ প মাইয়া! বড় ভাই ভাবিকে নিয়ে পাকামো হচ্ছে? ”
” নো বেপ্পি। ননদ ভাবী স্পেশাল দুষ্টুমি হচ্ছে। ”
” তবে রে। ”
দুয়া তাড়া করতেই বিছানা ত্যাগ করে ছুটলো তৃষা। ওর পিছু নিলো দুয়া। দু’জনে দৌড়ে যেই না কক্ষ হতে বের হলো ওমনি আকস্মিক ব্রেক কষলো তৃষা। ফলস্বরূপ দুয়া পড়তে গিয়েও পড়লো না। বাঁ হাতে ওকে আগলে নিয়েছে মানুষটি। ডান হাতে তার মোবাইল।
” আস্তে। বি কেয়ারফুল দুয়া। ”
ভাইকে দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসলো তৃষা।
” হায়! টুরু লাভ দেখে আমার তো প্রেম প্রেম পাচ্ছে। আজ একান্ত একজন নেই বলে। ”
দুয়াকে সোজা দাঁড় করিয়ে তৃষার মাথায় গাট্টা মে রে দিলো তূর্ণ।
” খালি পাকনামি! ”
তৃষা নাকমুখ কুঁচকে ফেলল।
” জামাই বউ একই কোম্পানির প্রোডাক্ট। খালি মা রে। হুহ্। ”
সেথা হতে প্রস্থান করলো তৃষা। তূর্ণ, দুয়া মৃদু হেসে উঠলো। তাকালো একে অপরের দিকে। দুয়া জিজ্ঞেস করলো,
” খাবার খেয়েছো? ”
বলতে না বলতেই বাঁ হাতে বন্দিনী করে নিজের সনে মিশিয়ে নিলো তূর্ণ। দুয়া ঘাবড়ে গিয়ে ডান হাতে অর্ধাঙ্গের কাঁধ এবং বাঁ হাতে শার্টের বুকের অংশ আঁকড়ে ধরলো। চোখে চোখ পড়তেই দুষ্টু হাসলো তূর্ণ।
” কি করছো? ছাড়ো। কেউ এসে পড়বে তো। ”
” এখন ছাড়াছাড়ির মুডে নেই বিবিজান। ”
দুয়া আকুল হয়ে বললো,
” ছাড়ো না। ”
” না। প্রেম প্রেম পাচ্ছে। একটা চু মু দাও তো ফটাফট। ”
” কিহ্! ” চোখ বড় বড় করে তাকালো দুয়া।
তূর্ণ বিরক্ত হয়ে বললো,
” রোমান্টিক মোমেন্টে এমন ভুলভাল এক্সপ্রেশন দিচ্ছো কেন? মুডের টাইটাই ফিস হয়ে যাচ্ছে তো। মনে হচ্ছে পাশের বাড়ির ভাবির কাছে চু মু চাইছি। ”
পাশের বাড়ির ভাবি! ক্ষে পে গেল বধূ সাহেবা। ডান হাতে শার্টের কলার মুঠোবন্দী করে তেজস্বীনি রূপ ধারণ করলো,
” কি বললে তুমি? পাশের বাড়ির ভাবি? ”
টুপ করে কোমল ওষ্ঠে আলতো পরশ এঁকে দিলো তূর্ণ। হতবিহ্বল রমণীর পানে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বললো,
” নাহ্! তৃষা, নিশি’র ভাবি। আমার বউ। বাই বাই বিবিজান। দেখা হচ্ছে রাতে। খেলার ময়দানে। ”
চোখ টিপে সেথা হতে প্রস্থান করলো তূর্ণ। অবাক রমণীর মুখনিঃসৃত হলো,
” বেশরম পুরুষ। ইশ্! ”
লালিমায় মাখা চেহারা লুকোতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো দুয়া। কি লজ্জাজনক অবস্থা!
•
সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ শেষে কপোত-কপোতী ফিরেছে এক মাস পূর্ণ হলো। ব্যস্ত কাটছে দিনকাল। দুয়া ব্যস্ত পড়াশোনায়। ভার্সিটি, বন্ধুমহল, শ্বশুরবাড়ি সব মিলিয়ে দারুণ সময় কাটছে। তেমনিভাবে তূর্ণ’ও ব্যস্ত নিজস্ব কর্মে। তবে বলে না, সুসময় সর্বদা থাকে না। দুঃসময় ঠিক হানা দেয়। তছনছ করে দেয় সবটুকু। তেমনিভাবে ঝড় উঠলো তূর্ণয়া’র জীবনেও।
নিশুতি এক রজনী। বিছানায় হেলান দিয়ে বসে তাসলিমা। তার দুই কাঁধে মাথা রেখে বসে দুয়া এবং তৃষা। তাসলিমা পড়ে শোনাচ্ছেন মহানবী তনয়া ফাতেমা’র জীবন কাহিনী। ননদ ভাবী মন দিয়ে শুনছে। সমস্ত মনোযোগ তাসলিমার কণ্ঠে। হঠাৎ ব্যাঘাত ঘটলো। বিপ বিপ শব্দে আলোড়ন সৃষ্টি করলো ক্ষুদ্র যন্ত্রটি। বিরক্ত হয়ে সোজা হয়ে উঠে বসল দুয়া। মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকাতেই সমস্ত বিরক্তি উবে গেল। চেহারায় ফুটে উঠলো লালিমা। তাসলিমা ও তৃষা মুচকি মুচকি হাসছে। দুয়া খুশিমনে ফোন রিসিভ করলো।
” হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। ”
ওপাশ হতে শোনা গেল সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ। থমকে গেল দুয়া। হাত খসে পড়ে গেল ক্ষুদ্র যন্ত্রটি। লুটিয়ে পড়লো বিছানায়। স্তব্ধ রমণীর অক্ষিকোল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো নোনাজল। ক্রমহ্রাসমান হারে স্পন্দিত হচ্ছে হৃদযন্ত্র। খরার ন্যায় ফাটল সৃষ্টি হলো মানসলোকে। তৃষা অবাক স্বরে শুধালো,
” ভাবি! কি হয়েছে? ”
#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪১
” তূর্ণ! ”
ক্রন্দনে লিপ্ত বাড়ির রমণীবৃন্দ। তাসলিমাকে আগলে রাখা হয়ে ওঠেছে মুশকিল। তাহমিদা বড় বোনকে সযতনে আগলে রেখেছে। বারবার শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। তাসলিমা কেঁদেই চলেছে। হসপিটাল লবি দিয়ে চলাচলরত কিছু নার্স, ওয়ার্ড বয় তা দেখে আফসোস করলো। আবারো কারো আপনজন বিপদে। দুঃসময়ে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা। তারা সেথা হতে চলে গেল। এ যে তাদের দৈনন্দিন চিত্র। দুঃখ বিরহে কাতর দুয়া বসে স্টিলের আসনে। আর’ক্ত আভা ছড়িয়ে মুখশ্রীতে। নোনাজলে পূর্ণ অক্ষি। একদম শান্ত স্থির হয়ে বসে মেয়েটি। কোনো নড়চড় নেই। নেই কোনো আহাজারি। তবে তার হৃদ গহীনে চলমান তা.ণ্ডব বাহির হতে অনুধাবন করা অতটাও দুষ্কর নয়। পরিবারের সদস্যরা ঠিক বুঝতে পারছে মেয়েটির ভেতরে কি ঝড় ই না উঠেছে। তার অর্ধেক অংশ-অর্ধাঙ্গ যে শয্যাশায়ী। যন্ত্রণা সয়ে চলেছে শুভ্র চাদরের বুকে। র ক্তে র|ঞ্জিত তার গৌর কায়া। অসহনীয় যাতনা শরীরের আনাচে কানাচে। দুয়া’র কপোল ছুঁয়ে অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়লো।
বেশ কিছুক্ষণ বাদে বেরিয়ে এলো চিকিৎসক। তৎক্ষণাৎ ছুটে গেলেন নিজাম সাহেব, রিশাদ এবং তৃষা।
” ডক্টর? আমার ছেলে..? ও-ও কেমন আছে? ঠিক আছে তো? ”
” পেশেন্ট এর অবস্থা ভালো নয়। মাথায় এবং পায়ে আঘাত পেয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাথা। ব্লাড লস হচ্ছে খুব। আমরা আপাতত র`ক্তপাত বন্ধ করার চেষ্টা করছি। সিটি স্ক্যান করে দেখতে হবে আর কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা। ”
প্রস্থান করলেন চিকিৎসক। তাসলিমা ছোট বোনকে জড়িয়ে আরো কেঁদে উঠলেন। স্তব্ধ দুয়া অনুধাবন করতে পারলো তার বাঁ কাঁধে তানজিনা’র ভরসার হাতখানি।
°
র.ক্তনালীর দেয়ালে চাপ পড়লে তা ফেটে যায়। পালাক্রমে মস্তিষ্কের টিস্যুতে র.ক্ত প্রবাহিত হতে পারে যাকে বলা হয় ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ। বা এটি মস্তিষ্কের চারপাশে অবস্থিত স্থানের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে যাকে সাবরাচনয়েড হেমোরেজ বলা হয়। গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলে মারাত্মক আঘাত পেয়ে তূর্ণ’র মস্তিষ্কের টিস্যুতে র.ক্তক্ষরণ হচ্ছে। দ্রুত সার্জারি করতে হবে। সংবাদটি জানতে পেরে চেতনা হারালেন তাসলিমা। দিশেহারা পরিবারের সদস্যবর্গ। ভারসাম্য হারিয়ে আসনে বসে পড়লো দুয়া। ভোঁ ভোঁ শব্দ সৃষ্টি হচ্ছে মস্তিষ্কে। কম্পিত অন্তঃস্থল।
নিজাম সাহেব দ্রুত হসপিটালে টাকা জমা দিলেন। সার্জারির ব্যবস্থা শুরু করলো চিকিৎসকরা। অপারেশন টেবিলে শুয়ে চেতনাহীন তূর্ণ। চিকিৎসকরা সার্জারি শুরু করলো। বাহিরে অপেক্ষারত সকলে। দুয়া, তৃষা নামাজের কক্ষে নফল ইবাদতে মশগুল। তাসলিমা দ্বিতীয়বারের মতো হুঁশ হারিয়েছেন। নিজাম সাহেবের ঘাম ছুটে গেছে। উনি নিস্তব্ধতায় আচ্ছাদিত হয়ে বসে। তূর্ণ’র বন্ধুমহল খবর পেয়ে খানিক পূর্বেই ছুটে এসেছে। সময় তখন ফজরের আগ মুহূর্ত। ঘন্টাব্যাপী সার্জারি চললো। অবশেষে সমাপ্ত হলো ব্রেন সার্জারি। অপারেশন থিয়েটার হতে বেরিয়ে এলেন চিকিৎসক। মনিকা, রাজীব ছুটে গেল। মনিকা থেমে থেমে জিজ্ঞেস করলো,
” ডক্টর! তূর্ণ? ”
চিকিৎসক ওকে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হলো!
” ডক্টর হক! আপনি এখানে? ”
” জ্বি। পেশেন্ট তূর্ণ আমার ফ্রেন্ড। ও ঠিক আছে তো? ”
” জ্বি অপারেশন সাকসেসফুল। ফেটে যাওয়া র.ক্তনালী রিকোভার করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ্ সকালের মধ্যে পেশেন্টের জ্ঞান ফিরবে। ”
শুকরিয়া আদায় করলো সকলে। এক পশলা স্বস্তির বৃষ্টি নেমে এলো সেথায়। মনিকা খুব করে চিকিৎসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। কৃতজ্ঞতা গ্রহণ করে সেথা হতে প্রস্থান করলেন চিকিৎসক।
•
ভানু’র কিরণে আলোকিত বসুন্ধরা। আস্তে আস্তে করে হসপিটাল হতে পরিবারের সদস্যরা ভিড় কমালো। বলেকয়ে অধিকাংশ সদস্যকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। তবে তাসলিমা এবং দুয়া কিছুতেই গেল না। রয়ে গেল সেথায়। ঘড়ির কাঁটা ধরে সময় অতিবাহিত হতে লাগলো। তূর্ণ অচেতন প্রায় পাঁচ ঘন্টা। এখনো চেতনা ফেরেনি। এজন্য চিন্তিত সকলে। তবে ডক্টর আশ্বস্ত করেছে চিন্তার কারণ নেই। এতবড় আঘাতের পর শরীর জাগ্রত হতে একটু সময় লাগবে।
ভেজানো দ্বার উন্মোচন করে প্রবেশ করলো দুয়া। ফুলো র.ক্তিম দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো শয্যাশায়ী মানবের পানে। চেতনাহীন শুয়ে সে। মাথায় মোড়ানো সফেদ ব্যান্ডেজ। বাঁ পায়েও ব্যান্ডেজ। দেহে জড়ানো পাতলা কাঁথা। কাঁথার অন্তরাল হতে বেরিয়ে দুই পায়ের একাংশ। গুমড়ে উঠলো মেয়েটি। বুকের মধ্যিখানে খা ম চে ধরলো দা.নবীয় কোনো হস্ত। তোলপাড়ে বি ধ্ব স্ত অন্তঃস্থল। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কদম ফেলে অগ্রসর হতে লাগলো মেয়েটি। প্রতিটি কদমে ভেতরকার যাতনা আরো জাগ্রত হতে লাগলো। ক্রন্দনে দিশেহারা হতে চাইছে নেত্র জোড়া। বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো দুয়া। আলতো ছোঁয়ায় পায়ের ওপর কাঁথা জড়িয়ে দিলো। বসে পড়লো পদযুগল সংলগ্ন। সুস্থ ডান পা’টি আঁকড়ে ধরলো। কপোল ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়লো নোনাজল। অস্ফুট স্বরে ডেকে উঠলো,
” শুনছো? ”
ওপাশ হতে সাড়া মিললো না। ভেজা কণ্ঠে একাকী বলতে লাগলো,
” অনেক তো ঘুমালে। আর কত? এবার ওঠো না। সবাই তোমার অপেক্ষায় রয়েছে। মামণি, বাবা, তৃষা। সব্বাই। ত্ তোমার বন্ধুরাও এসেছে। সবাই কষ্ট পাচ্ছে তো। তুমি কি তা বুঝতে পারছো না? কেন আমাদের জেনেশুনে ক্ষ.তবিক্ষত করছো? এবার ওঠো না। চোখ মেলে একবার তাকাও। আমাদের। আমাদের সাথে দু দন্ড কথা বলো। বলো না। ”
কিচ্ছুটি বললো না নি`ষ্ঠুর মানব। শুয়ে রইলো একরোখা রূপে। দুয়া’র সুডৌল নাকের ডগায় যেন র ক্ত জমেছে। এতটাই র.ক্তিম! মেয়েটি আস্তে ধীরে বিছানা ত্যাগ করলো। দাঁড়ালো সোজা হয়ে। এগিয়ে গিয়ে জায়গা করে নিলো শিয়রে। মাথায় মোড়ানো সফেদ ব্যান্ডেজ ছুঁয়ে দেখতে গিয়েও হাত ফিরিয়ে নিলো। কেঁপে উঠল কোমল হাতটি। নিম্ন অধর কা`মড়ে নিজেকে সামাল দেবার প্রয়াস চালিয়ে গেল।
” ওঠো না। ত্ তুমি না তোমার মাইরা’র চোখে অশ্রুবিন্দু সইতে পারো না? আজ যে তোমার মাইরা কাঁদছে। তোমার বিরহে ক্লিষ্ট তার হৃদয়। তুমি কি তা অনুধাবন করতে পারছো না? অ্যাই। ওঠো না। দয়া করে আমাকে আর যন্ত্রণা দিয়ো না। ওঠো। একবার চোখ মেলে তাকাও না। অ্যাই.. ”
উঠলো না তূর্ণ। দিলো না তার মাইরা’র ডাকে সাড়া। অচেতন মানুষটির হাত আঁকড়ে ধরলো দুয়া। আস্তে ধীরে বসে পড়লো বেডের দেহ ঘেঁষে। পুরুষালি শক্তপোক্ত হাতে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে লাগলো দুয়া। চার দেয়ালের মাঝে চাপা পড়লো সে যন্ত্রণা, ক্রন্দন ধ্বনি।
•
ওয়েটিং জোনে বসে তৃষা। থমথমে মুখশ্রী। কপোলে অশ্রুর শুকনো ছাপ। ঠিক তখনই পাশে এসে বসলো কেউ। কারোর উপস্থিতি অনুভব করে বায়ে তাকালো তৃষা। নিশাদ বসে। কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো না মেয়েটি। আস্তে করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। নিশাদ সবটাই বুঝলো। অনুধাবন করতে পারলো। আপনজনের বিপদে কি যে যন্ত্রণা! সে তো অবগত। বছর ছয় পূর্বে এর থেকেও করুণ, ভ.য়ঙ্কর মুহূর্ত সে অতিবাহিত করেছে। হারিয়েছে জন্মদাতা পিতাকে। চিরতরে চলে গেল জন্মদাতা, সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল। ভরসাযোগ্য মানুষটি। সেখানে তৃষা তো ভাইয়ের দুর্ঘটনায় কাতর। ছোট কোমলমতি হৃদয়ের অধিকারিণী মেয়েটার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে সে অবগত। জানে কতটা যন্ত্রণা হচ্ছে। তবে এখন স্রষ্টা ছাড়া কোনো কূলকিনারা নেই। একমাত্র তিনিই ভরসা। মহান স্রষ্টা তিনি, বিপদে রক্ষাকর্তা। বান্দার একমাত্র সাহারা।
” দুঃখে জর্জরিত হোস না তৃষা। আল্লাহ্’কে স্মরণ কর। উনি নিশ্চয়ই মুখ তুলে তাকাবেন। ইনশাআল্লাহ্ সব ঠিক হয়ে যাবে। তূর্ণ আবার.. ”
বাক্য অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। ক্রন্দনে লিপ্ত ললনা ছুটে সেথা হতে প্রস্থান করলো। নিশাদ ব্যথিত চাহনিতে সে পথে তাকিয়ে রইল। ইশ্! বুকের মধ্যিখানে চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। কেমন যন্ত্রণা হচ্ছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
•
” পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। ”
তিন শব্দের এক ইতিবাচক বাক্য। স্বস্তির ছোঁয়ায় আবেশিত হলো পরিবারের সদস্যরা। খুশিতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লো রমণীবৃন্দ। পুরুষরা কেউ কেউ ফোন করে স্বজনদের সুসংবাদ দিচ্ছে। কেউ কেউ খুশিতে আপ্লুত। সে এক চক্ষু জুড়ানো মুহূর্ত! জাবির শুধু অবলোকন করলো সবটা। দুয়া’র চোখে অশ্রু ঠোঁটে হাসির রেখা। স্বামীর জন্য অনবরত ইবাদত বন্দেগী করা, নফল রোজা মানত করা – সবটার সাক্ষী সে রইলো। অনুধাবন করতে পারলো তার হৃদয়ে লুকানো অনুভূতি আজ স্বামীর সনে কতটা খুশি! তারা একে অপরকে কতটা ভালোবাসে! সে আবছা নয়নে তাকিয়ে প্রার্থনা করলো ‘ স্রষ্টার রহমতে ভালো থাকুক এই ভালোবাসা যুগল ‘. দৃষ্টি সরিয়ে মামীর কাছে এগিয়ে গেল জাবির। তাহমিদা আবেগতাড়িত হয়ে ওর বুকে মাথা এলিয়ে দিলো।
.
সফেদ বিছানায় শুয়ে দীর্ঘকায় মানুষটি। নিমীলিত তার অক্ষি জোড়া। হঠাৎ কর্ণ কুহরে পৌঁছালো কারো ফোঁপানি ধ্বনি। আস্তে ধীরে তাকালো তূর্ণ। ক্ষ`তস্থানে চিনচিন ব্যথা অনুভূত হলো। কিঞ্চিৎ বিকৃত হলো মুখমণ্ডল। তা লক্ষ্য করে ছুটে এলো জন্মদাত্রী মা।
” আস্তে আস্তে। খুব লেগেছে? ডাক্তার ডাকবো? ”
অস্থির হয়ে পড়লেন তাসলিমা। মা’কে শান্ত করতে অস্ফুট স্বরে ডেকে উঠলো তূর্ণ,
” আ ম্মু। ”
নাড়িছেঁড়া ধন পুত্রের ডাক শুনে শীতল হলো মাতৃহৃদয়। ওড়নার একাংশে মুখ লুকিয়ে কেঁদে উঠলেন উনি। যন্ত্রণায় চোখ বুজে নিলো মানুষটি। শুকনো ঢোক গিলে ক্ষীণ স্বরে বললো,
” কেঁ-দো না। ”
পুত্রের নিষেধাজ্ঞা মান্য করে জোরপূর্বক থেমে গেলেন তাসলিমা। হাতের উল্টো পিঠে অশ্রু কণা মুছে নিলেন। পুত্রের শিয়রে দাঁড়িয়ে বুকে হাত বুলাতে বুলাতে স্নেহাতুর স্বরে প্রশ্ন করলেন,
” ঠিক আছো আব্বা? ”
চোখ মেলে তাকালো তূর্ণ। আস্তে করে চোখের পলক ঝাপটে সম্মতি জানালো। যদিওবা তা পুরোপুরি সত্য নয়। এখনো বড্ড ব্যথা। তবে তা মা’কে বললো না। মাতৃহৃদয় তো? আরো ব্যাকুল হয়ে উঠতো। আস্তে করে থেমে থেমে তূর্ণ বললো,
” আব্বু কোথায়? ”
” বাইরে। ডাকবো? মানুষটা ভেতরে আসতেই চাইছে না। আবেগী হয়ে পড়ছে। ”
তূর্ণ কিছু বললো না। শুধু তাকিয়ে রইল দরজায়। তার তৃষ্ণার্ত-পীড়িত হৃদয় যে কারোর দর্শনের অপেক্ষায়! মা ঠিক বুঝতে পারলো।
” তুমি বিশ্রাম নাও আব্বা। ঠিক আছে? আমি আসছি। ”
বেরিয়ে গেলেন তাসলিমা। তূর্ণ কিছু বলতে গিয়েও ব্যর্থ হলো। তার যাতনায় পিষ্ট অক্ষি গড়িয়ে পড়লো তপ্ত জল।
.
নামাজ কক্ষে স্রষ্টার শুকরিয়া আদায়ে মশগুল দুয়া। হঠাৎ কর্ণ গহ্বরে পৌঁছালো মামণির কণ্ঠস্বর।
” দুয়া! ”
আবেগী হয়ে পড়লো মেয়েটা। অনুধাবন করতে পারলো এ ডাকের মর্ম। আস্তে করে বাঁ পার্শ্বে দরজায় তাকালো। তাসলিমা শুধু বললেন,
” তূর্ণ তোকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ওর কাছে যা মা। ”
চলবে.
। ]