মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব -৪২+৪৩+৪৪

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪২
ভালোবাসাময় একান্ত মুহূর্ত কাটাচ্ছিলো রুদ্রিক আর অথৈ। দুষ্টু মিষ্টি খুনশুটি চলছিলো ওদের মধ্যে।কিন্তু বাধা পরে দরজায় বার বার করাঘাত করার কারনে।অথৈ সাথে সাথেই সরে আসল রুদ্রিকের কাছ থেকে।লাজুক হেসে বলে,’ আমি দেখছি কে এসেছে।’

অথৈ নামতে নিলেই রুদ্রিক ওর হাত টেনে ধরে।অথৈ পিছনে ঘুরে ওর দিকে তাকাতেই রুদ্রিক বলে,’ তুমি গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসো।আমি দেখছি কে এসেছে।’

অথৈ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।তারপর চলে হেলো ওয়াশরুমে।এদিকে রুদ্রিক গিয়ে দরজা খুলে দেখে অনিক আর নীল দাঁড়িয়ে আছে।ওকে দেখেই দাঁত কেলিয়ে হাসি দিলো।রুদ্রিক ভ্রু-কুচকে বলে,’ এমন জঘন্যভাবে হাসার কারন?’

দুজনেই থতমত খেয়ে গেলো।ওদের হেনস্তা করতে পেরে রুদ্রিক ঠোঁট কামড়ে হাসল।অনিক নিজেকে সামলে নিলো।পর পর দুষ্টু হেসে বলে,’ কি ব্যাপার মামা?সেইযে রুমে ঢুকেছ।বের হওয়ার তো নামই নিচ্ছ না।’

নীল ভ্রু-নাচাচ্ছে।
‘ বুঝি, বুঝি সব বুঝি।’

রুদ্রিক বুকে হাত আড়াআড়িভাবে বেঁধে বলে,’ বুঝতেই যখন পারছিস।তো এমন অসভ্যদের মতো করছিস কেন?আর ডিস্টার্ব করছিস কেন?’

অনিক আর নীল প্ল্যান করে এসেছিলো রুদ্রিককে একটু বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলবে।কিন্তু এই ছেলের যে লজ্জা শরম নেই তা তো আগে থেকেই জানা।এখন নিজেরাই বিব্রতবোধ করছে।তাই আর কথা এগোলো না ওরা। অনিক বলে,’ ইহান বলল তোদের ডেকে দিতে।লাঞ্চ করে আশপাশ ঘুড়ে আসব।এটাই বলতে এসেছি।’
‘ হুম বুঝলাম।’
‘ জলদি তৈরি হয়ে আয়।’

নীল আর অনিক চলে গেলো।রুদ্রিক দরজা আটকে রুমে আসতেই দেখে অথৈ মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরোচ্ছে।রুদ্রিক বলে,’ শেষ?’

মুখের উপর থেকে তোয়ালে সরালো অথৈ। মৃদ্যু হেসে বলে,’ হু! আপনি যান ফ্রেস হয়ে আসেন।’

রুদ্রিক প্রশ্ন করল,’ তোমার ক্ষিদে পায়নি?’

অথৈয়ের তেমন একটা ক্ষিদে পায়নি।তাই বলল,,’ নাহ,ওতোটাও পায়নি।’

রুদ্রিক এগিয়ে গেলো রুদ্রিকের কাছে।মাথা নুইয়ে আনলো অথৈয়ের মুখ বরাবর।অথৈ হকচকিয়ে গেলো।পিছাতে নিলেই ওর কোমড় আঁকড়ে ধরে রুদ্রিক ফিসফিস করে সুধায়,’ ক্ষিদে পাবে কিভাবে?আমার এতোগুলো আদর খেলে।তাহলে কি আর ক্ষিদে পায়?’

অথৈয়ের মুখটা হা হয়ে গেলো।পর পর রুদ্রিককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে আওড়ায়,’ অসভ্য কোথাকার।এরকম নির্লজ্জ মানুষ আমি দুটো দেখিনি।’

রুদ্রিক প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ালো।বক্র হাসির রেখা অধর কোণে ফুটিয়ে বলে উঠে,’ সব পুরুষরাই তাদের বউদের কাছে অসভ্য আর নির্লজ্জই হয়।সভ্য হলে তাহলে আর তাদের আর বাচ্চার বাবা হওয়া লাগবে না।আর যারা বউয়ের কাছে সভ্য হয় তাহলে বুঝবে তাদের মাঝে সমস্যা আছে।’

অথৈ তাজ্জব বনে গেলো।মানে কি থেকে কি বলে ফেলল।অথৈ দুয়েকবার পলক ঝাপ্টালো।বলল,’ মানে কি থেকে কি বললেন এসব?আমি বললাম কি?আর আপনি আমাকে কি থেকে কি বুঝিয়ে দিলেন।’

রুদ্রিক অথৈয়ের হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে বলে,’ যা বলেছি আর বুঝিয়েছি ভালোই করেছি।এখন আমি ফ্রেস হতে যাবো।তুমি তো আমার আদর খেয়ে পেট ভড়িয়ে ফেলেছ।কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তো সেটা হয়নি।তাই আমার ক্ষিদে পেয়েছে।লাঞ্চ করব।এরপর আশেপাশে ঘুড়ব সবাই।সো জলদি রেডি হয়ে নেও।আর হ্যা উষ্ণ কাপড় গায়ে দিও।বাহিরে ঠান্ডা লাগবে।’

এই বলে রুদ্রিক ফ্রেস হত চলে গেলো।মিনিট দশেক পর বের হয়ে দেখে অথৈ রেডি হয়ে আছে।কালো টপ্স,উপরে জিন্সের জ্যাকেট,সাথে জিন্স প্যান্ট,আর গলায় কালো স্কার্ফ পরেছে মেয়েটা। ফর্সা গায়ে বেশ মানিয়েছে।রুদ্রিক আলতো হেসে বলে, ‘ লুকিং সো বিউটিফুল মাই ওয়াইফি।’

অথৈ হেসে বলে,’ ধন্যবাদ আপনাকে।’
‘ মাই প্লেসার বিউটিফুল লেইডি।’

অথৈ হেসে দিলো রুদ্রিকের কথায়। রুদ্রিকও হাসল।তারপর রেডি হয়ে নিলো।অথৈয়ের সাথে ম্যাচিং করে কালো টি-শার্ট, উপরে কালো ডেনিম জ্যাকেট আর কালো ডেনিম প্যান্ট পরল।চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে নিলো।পুরো রেডি হয়ে অথৈয়ের দিকে তাকালো।দেখে মেয়েটা ওর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে।রুদ্রিক কাছে এসে তুরি বাজালো অথৈয়ের মুখের সামনে।এতেব হুশ আসে অথৈয়ের।একটু আগে কি করছিলো ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই লজ্জায় নুইয়ে পরল।ইশ,কি বেহায়া ভাবে তাকিয়ে ছিলো ও মানুষটার দিকে।কিন্তু ওর কি দোষ?লোকটা এতো সুন্দর যে অথৈয়ের শুধু তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে।এই নিজেকে ওর সাথে ম্যাচিং করে কালো রঙে মুরিয়েছে।এতে লোকটাকে মারাত্মক হ্যান্ডসাম লাগছে।চোখ ফেরাতে পারছে না অথৈ। এখন দোষটা কার?নিশ্চয়ই অথৈয়ের নাহ?এদিকে রুদ্রিক দুষ্টু হেসে বলে,’ এভাবে লজ্জা পাওয়ার কিছু হয়নি ম্যাডাম।তোমারই বর আমি।আমাকে যতো খুশি দেখতে পারো।’

অথৈ মুখ ভেংচি মারলো রুদ্রিককে।তারপর বলে,’ আমার বয়েই গিয়েছে আপনাকে দেখতে।আমি তো আয়নায় নিজেকে দেখছিলাম।’
‘ আমি জানি আপনি কাকে দেখছিলেন।এখন আর কথা নয় চলুন যাওয়া যাক।’

রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে দিলো অথৈয়ের দিকে।অথৈ রুদ্রিকের বাড়িয়ে দেওয়া হাত আঁকড়ে ধরল।তারপর চলল বাকিদের কাছে।
___________
ইহান দাঁড়িয়ে আছে রিধি আর পিহুর জন্যে বরাদ্দকৃত কটেজে।গলা খাকারি দিয়ে দরজায় টোকা দিলো।এইভাবে পর পর কয়েকবার দিলো।না কোনো সারাশব্দ নেই।এইবার না পেরে জোড়ে করতে লাগল।এইবার শব্দটা বেশ জোড়ালো হওয়ায় পিহু চমকে ঘুম থেকে উঠে।তারপর ইহানের গলার আওয়াজ পেতেই দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে।এদিকে রিধিও উঠে বসেছে।চোখে একরাশ ঘুম এখনো।ট্রেনে ভালোভাবে ঘুমোতে পারেনি।তাই এখনও ওর ঘুম পাচ্ছে।এদিকে পিহু দরজা সম্পূর্ণ খুলে দিয়েছে।ইহানকে দেখে বলে,’ হ্যা ভাইয়া?ডাকছিলেন?’

ইহানের কণ্ঠে খানিকটা বিরক্তির রেশ, ‘ হ্যা।সেই কখন থেকেই।খাওয়া দাওয়া করতে হবে নাহ?ঘুড়তে বেড়োবো খাওয়া দাওয়া করেই।তোমাদের…..’

আর কিছু বলতে পারলো না ইহান।তার আগেই ওর নজর গিয়ে রুমের ভীতরে বিছানার উপরে বসা রিধির দিকে চলে যায়।ঘুম ঘুম চোখ মুখ মেয়েটার,চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।গায়ে ওড়না নেই।ঢিলাঢালা লেডিস টিশার্ট পরেছে।যার একপাশ কাধ থেকে খানিকটা নিচে নেমে গিয়েছে।ফলে ফর্সা কাধটা দেখা যাচ্ছে।প্লাজুটাও পায়ের অনেকটা উপরে উঠে আছে।মেয়েটার পুরাই বিধ্বস্ত অবস্থা।রিধিকে এই অবস্থায় দেখে ইহানের বু পাশটা কেঁপে উঠে।হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় হু হু করে।এলোমেলো রিধিকে দেখে ও নিজেও এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে উলটো দিকে ঘুরে গেলো।আমতা আমতা করে বলে,’ দ্রুত তৈরি হয়ে আসো।আমরা সামনের ওই ফুল গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে আছি।’

ইহান আর এক মুহূর্ত দেরি করল না।দ্রুত পায়ে চলে গেলো।পিহু কিছুই বুঝলো না ইহানের এমন অস্থিরতার কারন।তাই দরজা আটকে রুমের ভীতরে চলে আসল।কিন্তু বিছানার দিকে তাকাতেই ওর চোখজোড়া বড়ো বড়ো হয়ে যায়।প্রায় একপ্রকার চিৎকার করেই বলে,’ তুই কখন উঠলি?’

পিহুর চিৎকারে রিধি চোখ মেলে কপাল কুচকে তাকালো।বলল,’ কখন উঠলাম মানে?তুই উঠার পর পরেই তো উঠলাম।কোন উল্লুকটায় এসে এইযে দরজা ধরাম ধরাম করে বারি দেওয়া শুরু করছিলোরে বাবা।’

পিহু উঁচু কণ্ঠে বলে,’ ওটা ইহান ভাইয়া ছিলো।আর আমি দরজাটা পুরোটা খুলে রেখেছিলাম গাধি।তুই কি উঠে গিয়েছিস আমি জানতাম নাকি?’

রিধি বলে,’ তো?এখানে এমন করার কি আছে?’

পিহু দাঁতে দাঁত চিপে বলে,’ একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ। তোর কি অবস্থা।আমিও তো বলি ইহান ভাইয়া এমন করে চলে গেলো কেন?এখন বুঝলাম বিষয়টা।’

রিধি পিহুর কথা শুনে বিরক্ত হয়ে নিজের দিকে তাকালো।তাকাতেই ওর চোখজোড়া মার্বেল আকার ধারণ করে।এ কি অবস্থা ওর?এমন এলোমেলোভাবে ও বসেছিলো।আর সামনে ইহান ছিলো। লোকটা ওকে এই অবস্থায় দেখে ফেলেছে।লজ্জায়,আতংকে রিধি জোড়েসোড়ে এক চিৎকার দিলো সর্বশক্তি দিয়ে।পর পর মুখটা দুহাতে ঢেকে একদৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।পিহু নাক মুখ কুচকে বলে,’ এখন লজ্জায় মুখ ঢেকে কি হবে?যা হবার তো হয়েই গিয়েছে।’

এদিকে ইহান বাহির থেকে রিধির চিৎকার শুনতে পেয়েছে।হাসতে লাগল।মেয়েটা বড্ড অবুঝ।ভাজ্ঞিস ও ছিলো।অন্য কেউ হলে কি হতো?তবে রিধি যে এই বিষয়টা নিয়েই চিৎকার করেছে বুঝতে বাকি নেই।বাকিরাও শুনেছে।প্রিয়ান বলল,’ রিধি এমন চিৎকার করল কেন?বিষয়টা দেখতে হচ্ছে।’

প্রিয়ান যেতে নিলেই ইহান ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,’ যাওয়ার দরকার নেই।আমিই তো মাত্র আসলাম।দেরি হয়ে গিয়েছে ওদের তাই এমন করছে।ওরা কেমন জানই তো তোমরা।’

আহিদ সম্মতি জানালো,’ হ্যা রে ইহান ভাই ঠিক বলছে।আর ওরা আসলেই নাহয় জিজ্ঞেস করে নেওয়া যাবে।’

সবাই আহিদের কথায় একমত দিলো।এদিকে ইহান এখনও মিটিমিটি হাসছে।বিষয়টা রুদ্রিক ধরতে পারল।ভ্রু-কুচকে বলে,’ কিরে তুই হাসছিস কেন?’

ইহান হাসি থামিয়ে নিয়ে বলে,’ এমনি।কিছু একটা মনে পরে গিয়েছে।তাই হাসছি।’

অথৈ রুদ্রিকের হাত ধরে উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলে,’ শুনুন না ওসব ছাড়ুন।দেখেন না ফুল গাছটা কতো সুন্দর।আসুন কিছু ছবি তুলি।’

রুদ্রিক মুচঁকি হেসে অথৈয়ের সাথে ছবি তুলতে লাগল।অথৈ একেকরকম ভঙিমা করছে।সাথে রুদ্রিককেও বলছে এভাবে করতে। এভাবে দাঁড়াতে।দূর থেকে সাফাত সেসব দেখে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।অথৈ কতোটা সুখী রুদ্রিকের সাথে তা ওকে দেখলেই বোঝা যায়।দুজন একেবারে পার্ফেক্ট ম্যাচ।মেড ফোর ইচ আদার।
সাফাত আনমনা হয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগল।হঠাৎ ওর নজর গেলো দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ওই মেয়েটার দিকে।মেয়েটা এদিকেই তাকিয়ে আছে।সাফাতের কপাল কুচকে আসে।এই মেয়ে ওর দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে কেন?সাফাতকে নিজের দিকে তাকাতে দেখেই আরহা চওড়া হাসলো।আর আরহার হঠাৎ এমন হাসিতে সাফাত থতমত খেয়ে যায়।এমন হাসি দেওয়ার মানে কি?পাগল না-কি মেয়েটা?হঠাৎ ফোনে টুংটাং মেসেজের আওয়াজ আসল সাফাতের।সাফাত ফোন অন করে দেখে আরহাই ওকে মেসেজ করেছে হোয়াইটস এ্যাপে।

‘ আমার দিকে তাকিয়েছিলেন কেন মি.? আমাকে আমার পছন্দ টছন্দ করে ফেলেছেন না-কি?’

সাফাত এইবার পুরোপুরিভাবে বুঝে ফেলেছে এই মেয়ের মাথায় গন্ডগোল আছে।নাহলে এমন করে একটা ছেলেকে কোন মেয়ে মেসেজ পাঠায়।ফের আবারও মেসেজের শব্দ হলো।
‘ এই মি. আবার তাকান না এদিকে।আমার ফ্রেন্ডরা আপনাকে দেখবে।’

সাফাত বিরক্ত হয়ে রিপ্লাই করল,’ বেশি বকছ তুমি।আমাকে মেসেজ করা থেকে বিরত থাকো।’

সাফাত এটা সেন্ড করতেই হঠাৎ ওর খেয়াল আসল।ও এই মেয়েটার সাথে কথাই বলছে কেন?আর এই মেয়েটাকে এখনও এড করে রেখেছে কেন? এখনই ব্লক করতে হবে।সাফাত আরহাকে ব্লক করতে নিবে।তার আগেই আরহা আবার মেসেজ করে।
‘ আমি জানি আপনি এখন বিরক্ত হয়ে আমাকে ব্লক করতে যাচ্ছেন।কিন্তু খবরদার ভুলেও আমাকে ব্লক করবেন না।যদি করেন তাহলে আপনার সাথে যে লোকগুলো আছে তাদের কাছে গিয়ে আপনার নামে উল্টাপাল্টা বলে আপনার প্রেস্টিজের বারোটা বাজিয়ে দিবো।’

সাফাতের রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসল।রাগি চোখে তাকালো আরহার দিকে।যেন এক্ষুণি আরহাকে এই চোখের আগুনে ভষ্ম করে দিবে।আরহা সাফাতের রাগ দেখে মিটিমিটি হেসে আবার মেসেজ করল,’ ইশ,রেগে একেবারে গোলাবারুদ হয়ে গিয়েছে।বলি এতো রাগার কি আছে বলুন?আমার মতো কিউট একটা মেয়েকে আপনি ওমন করে চোখ রাঙানো দিন কিভাবে?’

সাফাত মেসেজটা পড়ে আর রিপ্লাই করল না।না আর তাকালো আরহার দিকে।কিন্তু আরহা দূর থেকে সাফাতকে দেখছে।মন ভরে দেখছে।এ দেখার যেন শেষ নেই।জীবনে অনেক ছেলে ওকে প্রপোজ করেছে।কিন্তু কারোও সাথেই ও রিলেশনে জড়ায়নি।কেন যেন কোনো ওইসব ছেলেদের ভালোই লাগতো না ওর।এসব প্রেম, ভালোবাসা যে ওর জন্যে না তা বেশ ভালো করে বুঝতে পেরে গিয়েছিলো।কিন্তু হঠাৎ করেই যে ও নিজেই কাউকে ভালোবেসে ফেলবে এক দেখায়।এটা ভাবনার বাহিরে ছিলো।এক দেখার ভালোবাসাতেই যেন আরহা ওর দিন রাত সব ভুলে বসেছে।মাথায় শুধু ঘুরপাক খায় সাফাত আর সাফাত।আরহা মনে মনে আওড়ালো বেশ কয়েকবার সাফাতের নাম।পর পর নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে উঠল।
———–
রিধি আর পিহু এসে পরেছে।ওদের দেখেই আহিদ বলে,’ এইতো দুটো এসে পরেছে।এখন যাওয়া যাক ভাইয়া।আর সহ্য হচ্ছে না।ক্ষিদের কারনে মনে হচ্ছে পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।’

সবাই হেসে দিলো আহিদের কথায়।এরপর সবাই রেস্টুরেন্টের দিকে হাটা ধরল।এদিকে রিধি যেন চোখ তুলে তাকাতে পারছে না।লজ্জায় ওর মাথা কাটা যাচ্ছে।ইহান ওকে ওমন একটা অবস্থায় দেখেছে ভাবলেই শরীর শিরশির করে উঠে।কি একটা অবস্থা।হঠাৎ রিধি অনুভব করল ওর পাশে এসে কেউ দাঁড়িয়েছে।তাও আবার গা ঘেষে।রিধি মাথা উঠিয়ে ইহানকে দেখেই লজ্জায় নুইয়ে পরে।ইহান ঝুকে আসল ক্ষানিকটা।কণ্ঠ খাদে নামিয়ে ফিসফিস করে আওড়ায়,’ ওইসময় তোমাকে অনেক আবেদনময়ী লাগছিলো।জাস্ট মাথা খারাপ করে দেওয়া টাইপ।খবরদার মেয়ে আমি দেখেছি বলে ছাড় পেলে।পরেরবার থেকে খেয়াল রাখবে।কারন আমি আমার ব্যক্তিগত সবকিছু আমার একান্তে যত্নে নিবিড়ভাবে রাখতে পছন্দ করি।মাইন্ড ইট?’

ইহান সরে আসল।রিধি বড়ো বড়ো চোখে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে।ইহান যে এমন কিছু বলবে ও জীবনেও ভাবেনি।সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।এদিকে ইহান রিধিকে সুযোগ বুঝে চোখ মেরে দিলো।রিধি থতমত খেয়ে যায়।ইহান ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠে।পর পর বড়ো বড়ো পা ফেলে চলে যায়।পিছনে রেখে যায় স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রিধিকে। যে আপাততো ইহানের কান্ড কারখানা বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৩
মেঘালয় রাজ্যে এসেছে।ঘোরাঘুরি কি থামে এতো সহজে?গতকাল ওরা বিকেল থেকে সন্ধ্যার অনেক পর পর্যন্ত ঘোরাঘুরি করেছে।তারপর কটেজের বাহিরে বোন ফায়ারের আয়োজন করে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়েছে।এবং হ্যা রাতের ডিনারটাও নিজেরাই রান্না করে খেয়েছে।এতে অবশ্য কটেজের ম্যানেজারকে কিছু টাকা দিতে হয়েছে।ম্যানেজারকে এটাও জানালো যে কয়দিন ওরা এখানে আছে।মাঝে মাঝে বোনফায়ারের আয়োজন করবে।এতে যেন সমস্যা না হয়।টাকা যতো লাগবে দেওয়া হবে।আজ সকাল সকাল উঠেছে ওরা।বেশ শীত পরেছে এখানে।অথৈ ঠান্ডা একদম সহ্য করতে পারে না।মেয়েটা উঠতেই চাইছিলো না।তার কথা অনুযায়ী এই ঠান্ডার মধ্যে কোন পাগল কম্বলের উষ্ণতা বাদ দিয়ে ঘোরাঘুরি করবে।রুদ্রিক জোড়াজুড়ি করে এনেছে।তার জন্যে মেয়েটা এখন মুখ ফুলিয়ে আছে।অথৈয়ের এমন অবস্থা দেখে পিহু ওর কাছে আসল।জিজ্ঞেস করে,’ কিরে তোর আবার কি হয়েছে?সকাল সকাল মুখটাকে এমন মিষ্টি কুমড়ার মতো করে রেখেছিস কেন?’

অথৈ রাগি চোখে তাকালো।
‘ তোর আমাকে দেখে মিষ্টি কুমড়ার মতো মনে হচ্ছে?’
‘ ওই মুখটা ফুলিয়ে রেখেছিস।এইজন্যেই তো বললাম।’
‘ তো তুই এটা বলতে পারিস।কিন্তু তাই বলে মিষ্টি কুমড়া বলবি?’

অথৈয়ের সাথে না পেরে পিহু বলে,’ হয়েছে আমার মা।ক্ষমা দে আমাকে।আমি তোকে মিষ্টি কুমড়া বলব নাহ।’
‘ হু!’
‘ তা এখন বল এমন করে আছিস কেন?’

পিহুর প্রশ্নে অথৈ আঁড়চোখে রুদ্রিকের দিকে তাকালো।লোকটা সাফাত আর অনিকের সাথে কি যেন কথা বলছে।অথৈ মুখ ভেঙিয়ে নজর সরিয়ে নিলো।বলল,’ ওই বজ্জাত লোকটা।আমাকে এই ঠান্ডার মাঝে সাত সকালে টেনে তুলে এখানে নিয়ে এসেছে।তুই তো জানিস আমার ঠান্ডা একদম সহ্য হয় না।আমার কথা লোকটা শুনলই নাহ।’

পিহু হা করে শুনল অথৈয়ের কথা।ফের অবাক হয়ে বলে,’ শীত পরেছে এই কারনে তুই ঘুরতে যাবি না। লাইক সিরিয়াসলি?’

অথৈ মাথা দুলালো।পিহু নাক মুখ কুচকে ফেলে বলল,’ তো এখানে এসেছিস কেন তাহলে?যদি ঘুরতেই না যেতে চাস? এখানে আসার আইডিয়া কিন্তু তুই নিজেই দিয়েছিস।’

অথৈ বিরবির করল,’ হ্যা আইডিয়া দিয়ে বড্ড অপরাধ করে ফেলেছি।’

পিহু বুঝতে পারল না অথৈয়ের কথা।কিন্তু কিছু বলতে যাবে।তার আগেই সেখানে প্রিয়ান আসল।এসেই বলে,’ চল যাওয়া যাক।’

‘ কিন্তু আমরা এখন যাচ্ছি কোথায়?’ প্রশ্ন করল পিহু।

জবাবে প্রিয়ান বলে,’ আপাতত লিভিং রুট ব্রিজ দেখতে যাবো।এরপর কোথায় যাবো তার লিস্ট সাফাত ভাইয়ার কাছে।’

সবাই ওরা গিয়ে দাঁড়ালো ভাড়া করা গাড়ির সামনে।একজন একজন করে গাড়িতে উঠছে।রুদ্রিক আর সাফাত গাড়িতে উঠতে যাবে।এমন সময় সেখানে এসে দাঁড়ায় আরহা সাথে আরও ওর পাঁচজন বন্ধু।মোট ছয়জন তারা।আরহাকে দেখেই সাফাতের কপাল কুচকে আসে।এই মেয়ে আবার এখানে কেন এসেছে?আরহা ড্যাবড্যাব করে সাফাতের দিকে তাকিয়ে আছে।তা দেখে সাফাতের বিরক্তি যেন আরও দ্বিগুন বেড়ে গেলো।প্রায় একপ্রকার ধমকের সুরে বলে,’ এই মেয়ে তুমি এখানে এসেছ কেন?’

আরহা দাঁত বের করে হাসি দেয় সাফাতের কথায়।তার বেশ লাগে সাফাতকে রাগাতে।আরহা বলে,’ ভাইয়া আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?’
‘ সেটা তুমি জেনে কি করবে?’

সাফাতকে একটা মেয়েকে এমন ধমকাধমকি করতে দেখে।রুদ্রিক বলে উঠল,’ সাফাত কে এই মেয়ে?আর তুই-ই বা এর সাথে এমন করে কথা বলছিস কেন?’

সাফাত নাক মুখ কুচকে বলে,’ আরে আর বলিস না দোস্ত।কাল তো তোরা সব ঘুমোচ্ছিলি।আমার ঘুম আসছিলো না তাই বাহিরে এসে ওইযে একটা বড় গাছ আছে না আমার কটেজ বরাবর সেখানে বসেছিলাম।কোথা থেকে যেন এই মেয়ে আসল।এসেই বলে তাকে হ্যাল্প করতে।আর হ্যাল্প টা জানিস?বলে কিনা তার একটা ছবি তুলে দিতে।ওইযে বেগুনি রঙের ফুল ফুটেছে গাছটায় সেখানে।আমিও সরল মনে রাজি হলাম।কিন্তু ছবি তুলার জন্যে ফোন চাইলে এই মেয়ে বলে ফোন আনেনি।পরে বলে আমার ফোন দিয়ে ছবি তুলে দিতে।আমি রাজি হতে চায়নি।কিন্তু এই মেয়ে নাছোরবান্দা ছবি তুলবেই তুলবে।শেষে দিলাম ছবি তুলে।এরপর আমার হোয়াইটসএ্যাপে এড হয়ে একে ছবিগুলো পাঠিয়ে দেই।’

সব শুনে রুদ্রিক বলল,’ তো কি হয়েছে?এখানে এমন করার কি আছে?ছবিই তো তুলে দিয়েছিস।’

সাফাত বিরক্ত কণ্ঠে বলে,’ তুই বুঝবি না।গতকালকের থেকে এই মেয়ে আমার পিছু ছাড়ছেই না।’

আরহার এইবার রাগ লাগলো।লোকটা ভাবে কি নিজেকে।কখন থেকে ওকে নিয়ে উল্টাপাল্টা বলছে।আরহা রাগি গলায় বলে,’ থামুন আপনি।এইযে আপনি শুনেন ভাইয়া।আপনি কি আমায় দেখেছেন উনাকে বিরক্ত করতে?’

রুদ্রিক মাথা দুলিয়ে না বোঝালো।আরহা তা দেখে বলে,’ তাহলে প্রমান হয়েই যায় এই লোক মিথ্যে বলছে।আমি কখন আপনাকে বিরক্ত করেছি,হ্যা?’

সাফাত এইবার কি বলবে ভেবে পেলো না।এই মেয়ে তাকে কাল ইশারা দিয়ে দিয়ে কি কি করেছে তা আর কিভাবে বলবে?এমনিতেও এসব বলা ঠিক মনে করল না।মেয়েটা কষ্ট পেতে পারে।তাই সাফাত ওই প্রসঙ্গ পালটে বলে,’ আচ্ছা সেসব বাদ।এখন বলো এখানে কেনো এসেছ?’

আরহার রাগি কণ্ঠ,’ আপনাকে কেন বলব?আমি এই ভাইয়াটাকে বলব।এই ভাইয়াটা ভালো আছে।আপনার মতো খারুস না।যে কথায় কথায় ধমকায়।’

সাফাত আশ্চর্য হয়ে গেলো।এই মেয়ের সাহস কতো বড়ো ওর বন্ধুদের সামনে ওর নামেই উল্টাপাল্টা বকছে।’

সাফাত ধমক দেয়,’ এই মেয়ে?তুমি কাকে কি বলছ মাথা ঠিক আছে?’

আরহা দুঃখী দুঃখী করে নিলো।কাঁদো গলায় বলে,’ দেখেছেন ভাইয়া?দেখেছেন আপনি?আপনার বন্ধু আমার সাথে কিরকম বেহেইব করছে?’

রুদ্রিক সাফাতের দিকে তাকিয়ে বলে,’ এই সাফাত?তুই ওকে ধমকাচ্ছিস কেন?’

‘ উফ! আমি যাচ্ছি।তোর যা করার কর।’

এই বলে সাফাত গাড়িতে উঠে বসল।এদিকে গাড়ির ভীতরে সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে বাহিরের দিকেই তাকিয়ে আছে।ইহান নেমে আসল গাড়ি থেকে। এসেই আরহাকে জিজ্ঞেস করে,’ তোমার কি কোনো হ্যাল্প লাগবে?সরি তুমি করেই বললাম।তুমি বয়সে আমার অনেক ছোটোই হবে। দেখে বোঝা যাচ্ছে।’

আরহা হেসে বলে,’ না না ভাইয়া।সমস্যা নেই।আপনি তুমি করেই বলুন।ইনফেক্ট আপনারা সবাই আমাকে তুমি করেই ডাকুন।’

রুদ্রিক বলে,’ এখন বিষয়টা আমাদের বলো?কোনো সমস্যায় পরেছ কি তুমি?’

আরহা আমতা আমতা করতে লাগল।মুখ উঠিয়ে এখানে চলে তো এসেছে।এখন কথাটা বলতে কেন যেন লজ্জা লাগছে।এভাবে বন্ধুদের মাঝে অন্য মানুষরা এসে জয়েন হলে সবারই বিরক্ত লাগবে।আরহাকে আমতা আমতা করতে দেখে ইহান ওকে আসস্থ করতে বলে,’ তুমি নির্দ্বিধায় আমাদের বলো?ওতো ইতস্ততবোধ করার কিছু হয়নি।’

আরহা যেন ভড়সা পেলো।তাই মনের কথাটাই বলল,’ আসলে ভাইয়া আমরা এখানে ছয়জন ফ্রেন্ডরা এখানে এসেছি একসাথে।এখানে এসে একজন গাইড ভাড়া করেছিলাম।এখন সে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পরেছে।অন্য গাইড ভাড়া করতে চেয়েছিলাম।তাও পায়নি।এখন একা একা এভাবে ঘুরতে পারছি না।আসলে কিছু চিনি না তো?আপনাদের দেখে ভালো মনে হলো।আবার আমরা একই দেশের মানুষ।আপনার ফ্রেন্ডদের সাথে তো কাল কথা হয়েছিলো।তাই বলতে চেয়েছিলাম আপনারা আমাদের এই ছয়জন কে কি আপনারা আপনাদের গ্রুপে নিবেন?মানে আপনাদের সাথে আমরা ঘুরতে চাই।তাহলে একটা ভড়সা পাবো আর কি।’

রুদ্রিক কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।আসলে এখানে সে কি বলবে?তার একার মতামতে তো আর হবে না।এখানে আরও বাকিরাও আছে।রুদ্রিক এইবার গাড়ির ভীতরে সবার দিকে তাকালো।প্রশ্ন করল,’ আমার একার কথায় তো আর হবে না।তোমরা কি বলো?’

অথৈ ভাবল।এখানে তো আর তারা তাদের ঘাড়ে উঠে বসবে না।ব্যস শুধু ওদের সাথে সাথে থাকবে।ওরা যেখানে যাবে এই মেয়ে আর তার বন্ধুরাও সেখানে যাবে।তাছাড়া রুদ্রিক,ইহান,সাফাত,অনিক,নীল,প্রিয়ান আর আহিদ এতোগুলো ভড়সাযোগ্য ছেলে আছে ওদের সাথে।সমস্যা হবে না।আর মেয়েটার সাথে মাত্র দুটো ছেলে।তাই অথৈ বলে,’ আমার কোনো সমস্যা নেই।কিরে তোরা কি বলিস?চলুক আমাদের সাথে।তারা তো নিজেদের মতোই হাটবে।শুধু আমাদের সাথে থাকবে এই।’

সবাই রাজি হয়ে গেলো।ওরা এইবার আরেকটা গাড়ি ভাড়া করল।মোট তিনটে গাড়ি নিয়েছে ওরা।গাড়িগুলো রওনা হলো গন্তব্যের দিকে।
এদিকে গাড়িতে ইহান রিধির পাশেই বসেছে।রিধি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।তার মোটেও ভালোলাগেনি।ইহান মেয়েটার সাথে সেধেসেধে কথা বলেছে এইজন্যে।কেন যাবে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে?রুদ্রিক ভাই তো কথা বলছিলই।সে কেন গেলো গাড়ি থেকে নেমে?
কই তার সাথে তো কোনোদিন আগ বাড়িয়ে কথা বলেনি।রিধির রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।হাতের মুঠোয় ওড়না নিয়ে তা দুমড়েমুচড়ে নিজের রাগ মেটাতে চাইছে।এদিকে ইহান সবটাই খেয়াল করছে।কিন্তু বুঝতে পারছে না।হঠাৎ মেয়েটার হলোটা কি?কেন এমন রাগে লাল হয়ে আছে।ইহান ধীর কণ্ঠে এইবার বলে উঠল,’ রিধি?এনি প্রবলেম?এমন রেগে আছ কেন?’

রিধি এমন দৃষ্টি ছুড়ে মারল ইহানের দিকে।যেন এই চোখের দৃষ্টির আগুনেই ইহানকে ঝলসে দিবে সে।ইহান আমতা আমতা করে বলল,’ আরে?এভাবে তাকাচ্ছ কেন?সমস্যাটা কি বলবে তো?’

রিধি এইবার মুখ খুললে।অগ্নিঝরা কণ্ঠে বলে,’ আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না একদম বলবেন না।কথা বললেই ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিবো আপনার।আর আমার সাথে এইভাবে চিপকে বসেছেন কেন?দূরে সরুন।একমিনিট আপনি আমার পাশেই বা বসেছেন কেন?ওই মেয়েটার পাশে গিয়ে বসেননি কেন?খুব তো গাড়ি থেকে নেমে একেবারে আগ বাড়িয়ে হ্যাল্প করার জন্যে চলে গিয়েছিলেন।তো ফিরে আসলেন কেন?মেয়েটার সাথে একই গাড়িতে একসাথে বসতেন।আমার পাশে কি হ্যা?’

রিধি রাগের মাথায় একনাগাড়ে হরবর করে মনের কথা বলে দিলো।তারপর রাগে ফুসতে ফুসতে জানালার বাহিরে তাকিয়ে থাকলো। ইহান রিধির প্রতিটা কথা শুনে অবাক হলো।পর পর ওর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।আচ্ছা তাহলে এই ব্যাপার?তার প্রিয়তমা হিংসে করছে।আর সেই কারনেই এমন মুখ ফুলিয়ে আছে। ইহান মাথা নুইয়ে রিধির কানে ফিসফিস করল,’ রিধি?আর ইউ ফিলিং জেলাস?’

রিধি থতমত খেয়ে যায়।সে কি এখন ধরা পরে গেলো?রিধি আমতা আমতা করে বলে,’ আমি জেলাস কেন ফিল করব?আশ্চর্য কথাবার্তা।’

ইহান হাত দিয়ে বাতাস করার মতো অভিনয় করল।মুখ টিপে হেসে বলে,’ ইশ,চারপাশ এমন পোড়া পোড়া গন্ধ্যে ভড়ে গিয়েছে কেন?’

রিধি বলে,’ কোথায় পোড়া গন্ধ?আমি তো পাচ্ছি না।’
‘ এই গন্ধ শুধু আমিই পাবো।আর কেউ পায় না।বুঝেছ?ভীষণ স্পেশাল এটা আমার জন্যে।’
‘ পোড়া গন্ধ আবার স্পেশাল হয় কিভাবে আজব?’

ইহান মাথা দুলিয়ে বলে,’ হ্যা হয় হয়। ও তুমি বুঝবে না।’

রিধি মুখ ভেঙিয়ে বলে,’ আমার ওতো বোঝা লাগবে না।আর আপনি আমারও আমার দিকে চেপে আসছেন।দূরে সরুন।’

ইহান সরে যাবে তো দূরের কথা।ও আরও চেপে বসল রিধির সাথে।তারপর সবার অগোচরে হাতটা অথৈয়ের পিঠের পিছন দিয়ে নিয়ে ওর কোমড়ে আঁকড়ে ধরল।আকস্মিক ইহানের অনাকাঙ্ক্ষিত ছোঁয়ায় সর্বাঙ্গ থরথর করে কেঁপে উঠল।খামছে ধরল পরিহিত ওড়নার অংশ।এ কি করছে লোকটা?লোকটার একটুখানি স্পর্শ যে ওকে কতোটা পাগল করে তোলে তা কি লোকটা জানে না?রিধি বুকটা উত্তেজনায় ধরফর করছে। ইহান রিধি শরীরের কম্পন স্পষ্ট টের পেলো।কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,’ এভাবে কাঁপছ কেন?এতো কাঁপাকাঁপি করার মতো তো এখনও আমি কিছুই করিনি।’

রিধি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। গতকাল থেকে ইহান হুটহাট এমন সব কথা বলছে। যা শুনে লজ্জায় নুইয়ে যায় রিধি।এখনও তা হলো।মেয়েটা লজ্জায় একেবারে জড়সড় হয়ে বসে আছে।ইহান মুচঁকি হাসল।বলল,’ লজ্জা পেলে অনেক সুন্দর লাগে তোমাকে রিধি।’

ব্যস,রিধির জন্যে এই একটা কথাই যথেষ্ট ছিলো ওর সব রাগ,অভিমান দূর করে দেওয়ার জন্যে।অভিমানগুলো যেন হাওয়াই মিঠাই মুখে দিলেই যেমনভাবে গলে যায়।ঠিক তেমনভাবেই গলে গেলো।লোকটার কি হলো?এমন কেন করছে?তবে কি লোকটা ওকে ভালোবাসে?ও যে লোকটাকে ভালোবাসে তা কি বুঝতে পেরেছে?ওর অনুভুতিগুলো অনুভব করতে পেরেছে?ভাবতেই সারাশরীর শীতলতায় ছেঁয়ে গেলো।অদ্ভূত প্রশান্তিতে চোখ বুঝে আসল রিধির।চোখ বন্ধ অবস্থাতেই সিটে হেলান দিয়ে দিলো।চোখের কার্ণশ ঘেষে একফোঁটা তপ্ত জল গড়িয়ে পরল।যা ইহান অতি যত্নে নিজ হাতে মুছে দিলো।তবে কিছু বলল না। সে জানে এই চোখের জল দুঃখের না।এই চোখের জল সুখের।

_______________
ওরা গাড়ি থেকে নেমে পরেছে।এখন সেই রুট ব্রিজের উদ্দেশ্যে হাটছে।লিভিং রুট ব্রিজ নামটাই কেমন অদ্ভূত তাই নাহ?এর কারন হলো।মূলত এই সেতু আলাদা করে গাছের গুঁড়ি কেটে তৈরি হয়নি। গাছেদের মোটামোটা শিকড় একে অপরকে জড়িয়ে জাপ্টে ধরে তৈরি করেছে আশ্চর্য ঝুলন্ত সেতু। তলায় বয়ে চলেছে নদী। উপরে গাছের শিকড়ে শিকড়ে পা দিয়ে দিব্যি যাতায়াত করছে মানুষ। একজন-দুজন নয়, কম করে ৫০ জনকে একই সঙ্গে বহন করার ক্ষমতা রয়েছে এই রুটব্রিজের।
তবে রুট ব্রিজের আয়ু বাঁচাতে এখন চলাচলের জন্য লোক সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
মেঘালয়ে এমন ব্রিজ রয়েছে মোট দুটি। একটি সিঙ্গেল রুট ব্রিজ, দ্বিতীয়টি ডবল ডেকার রুট ব্রিজ।
সিঙ্গেল রুট ব্রিজটি রয়েছে শিলংয়ের মাওলিলং-এ। পৃথিবীর সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম বলা হয় এই খাসি গ্রামটিকে। সেখানেই রয়েছে এই সিঙ্গেল রুট ব্রিজ। কয়েকশো সিঁড়ি পেরিয়ে নামতে হয় সেখানে। তলা দিয়ে পাথর কাটিয়ে বয়ে চলেছে ছটফটে নদী। তার উপরেই রয়েছে প্রাকৃতিক এই সেতু।আর সেই উদ্দেশ্যেই যাচ্ছে ওরা।রুদ্রিক এই গ্রাম থেকে একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক ভাড়া করে নিলো।তবে রুদ্রিকের ভয় হচ্ছে।মেয়েরা কিভাবে এমন পিচ্ছিল সিড়ি দিয়ে নামবে।এখন আফসোস করছে ও এখানে আসা ঠিক হয়নি।এদিকে ভাড়া করা লোকটি ওদের নিয়ে জঙলের মাঝ দিয়ে হেটে চলেছে।অথৈ বেশ আনন্দে আছে।ওর সমুদ্র থেকে পাহাড় পর্বত বেশি ভালোলাগে।অথৈয়ের আনন্দ দেখে রুদ্রিকের আর ইচ্ছে করছে না বলতে যে চলো আমরা ফিরে যাই।রাস্তাটা যে অনেক বিপদ্দজনক।রুদ্রিককে চুপচাপ দেখে অথৈ এইবার রুদ্রিকের দিকে তাকালো।তাকাতেই ওর কপালে ভাজ পরল।রুদ্রিককে চিন্তিত দেখাচ্ছে।কিন্তু লোকটা এতো চিন্তা করছে কেন?একটু আগেও তো সব ঠিকঠাক ছিলো।অথৈ রুদ্রিকের হাতের মাঝে হাত গুজে দিলো।অথৈয়ের স্পর্শ টের পেতেই পাশ ফিরে অথৈয়ের দিকে তাকায় রুদ্রিক।অথৈ মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে,’ কি হয়েছে আপনার? আপনাকে এতো চিন্তিত লাগছে কেন?’

রুদ্রিক না নাড়িয়ে না বোঝালো।মানে কিছু হয়নি।অথৈ গোমড়ামুখো হয়ে বলে,’ মিথ্যে বলছেন কেন?আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আপনি কোনো বিষয়ে খুব চিন্তিত।’

রুদ্রিক হতাশার শ্বাস ফেলল।এই মেয়েটা এখন তাকে আপাদমস্তক পুরোটাই বুঝতে পারে।তার থেকে কিছুই লুকোতে পারে না।রুদ্রিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,’ আমাদের এখানে আসাটা বোধহয় ভালো হয়নি।কেমন যে লাগছে আমার।মন বার বার বাধা দিচ্ছে আর যেতে না করছে।’

অথৈ দুহাতে রুদ্রিকের বাহু আঁকড়ে ধরে বলে,’ আরে শুধু শুধু চিন্তা করছেন আপনি।কিছু হবে না।আপনি আছেন তো।আর তাছাড়া আমরা কতোগুলো মানুষ আছি একসাথে।একজন বিপদে পরলে সবাই একসাথে ঝাপিয়ে পরব।’
‘ অথৈ তুমি বিষয়টা যেভাবে সহজভাবে নিচ্ছো পরিস্থিতি সেরকম নাও থাকতে পারে।’
‘ উফ,চুপ করুন তো আপনি। বেশি বেশি ভাবছেন।আমি আপনার পাশে আছি।আপনি আমার পাশে আছেন।এর থেকে আর বেশি কি চাই আপনার?সব চিন্তা ভাবনা বাদ বুঝেছেন।শুধু প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যগুলো মন ভড়ে উপভোগ করুন! দিনশেষে এইগুলোই স্মৃতি পাতায় জমা হয়ে থাকবে।’

অথৈয়ের কথা শুনে রুদ্রিক আলতো হাসলো।তবে ওর চিন্তার পরিমানটা বিন্দু মাত্র কমলো না।কিন্তু তা আর অথৈকে বুঝতে দিলো না।অথৈয়ের হাসিমাখা মুখটা দেখেই সবটা নিজের মধ্যে চেপে নিলো রুদ্রিক।অথৈয়ের ঠোঁটের একটুকরো হাসির জন্যে রুদ্রিক সব করতে পারবে।
____________
পিহু লাফিয়ে লাফিয়ে হাটছে। প্রিয়ান বার বার মানা করছে ওকে এমনভাবে হাটতে না।দেখে শুনে হাটতে।এই মেয়ে শুনলে তো।এমনিতেই বনজঙল জায়গা।তার উপর এখানে প্রায় বারো মাসকালই নাকি বৃষ্টি।সাপ টাপের কথা কি আর বলা যায়?এইযে কতো শতো পাতা পরে আছে এগুলোর মধ্যেই তো লুকিয়ে থাকতে পারে তাই নাহ?
প্রিয়ান এইবার তেড়েমেড়ে গেলো পিহুর কাছে।গিয়েই ওর হাত নিজের হাতের মাঝে শক্ত করে চেপে ধরল।আকস্মিক প্রিয়ানের এহেন কাজে ভড়কে যায় পিহু।পর পর বিষয়টা বুঝতে পেরেই রাগি গলায় বলে,’ কিরে এইভাবে আমাকে ধরে রেখেছিস কেন?’

প্রিয়ান দাঁতেদাঁত চিপে বলে,’ বান্দর যদি কথা না শুনে তাহলে তাহলে তাকে দরি দিয়ে বেধে রাখতে হয়।আর আমি তাই করছি।আমার কাছে তো দরি নেই।তাই আপাততো হাতের সাহায্যেই তাকে আটকে রেখেছি।’

পিহু চোখ রাঙিয়ে বলে,’ তুই আমাকে বান্দর বললি?’
‘ যেভাবে লাফাচ্ছিস হনুমান বা উল্লুক বলিনি এটাতেই শুকরিয়া আদায় কর।’ তাচ্ছিল্য করে বলল প্রিয়ান।

পিহু সব শুনে প্রিয়ানের হাতের থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল।কিন্তু পারছে না।তা দেখে প্রিয়ান হেসে বলে,’ হনুমান বলেছি বলে কি হবে?হনুমানের মতো ওতো শক্তি তোর গায়ে নেই।সো যেটুকু শক্তিই আছে তা অযথা অপচয় করছিস।আমি না চাইলে এই হাত তুই কখনই ছাড়াতে পারবি না।কোনোদিন না।আজীবন আমার সাথে এইভাবে জুড়ে থাকতে হবে তোকে।’

” আজীবন আমার সাথেই এইভাবে জুড়ে থাকতে হবে তোক!” প্রিয়ানের শেষের কথাটায় কি যেন ছিলো।পিহুর ঝটফট করা কমে যায় তৎক্ষনাত।এই একটা বাক্য কি এমন ছিলো?যে পিহুর হৃদস্পন্দনের গতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলো।আর বার বার এই বাক্যটাই ওর চারপাশে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।শরীরে আলাদা ঠান্ডা স্রোতের শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।পিহুকে এমন ধীরে ধীরে হাটতে দেখে কপালকুচকে ফেলে প্রিয়ান।এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা যায় না।এই একটু আগেও গ্যাঙ্গারুর মতো লাফাচ্ছিলো আর এখন?এখন কচ্ছপের গতিতে হাটছে।প্রিয়ান ওকে আবার টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসল।এতে হকচকিয়ে উঠে পিহু।জিজ্ঞাসাসূচক চোখে প্রিয়ানের দিকে তাকালে প্রিয়ান বলে উঠে,’ কি এখন আবার কি হলো তোর?এমন ধীরে ধীরে হাটছিস কেন?সমস্যাটা কি তো?’

পিহু নাক মুখ কুচকে বলে,’ আমি জোড়ে হাটলেও দোষ?আস্তে হাটলেও দোষ।আমি করবটা কি শুনি?’

প্রিয়ান হাটা থামিয়ে দেয়।এমনিতেও ওরা সবার পিছনে ছিলো।বাকিরা ওদের আগে আগে।প্রিয়ানকে থামতে দেখে পিহু বলে,’ আরে থামলি কেন?চল! দেখ ওরা আগে চলে যাচ্ছে।আরে তোর সমস্যা কি?’

পিহু এইবার প্রিয়ানের চোখের দিকে তাকালো।তাকেতেই ওর বুকটা কেঁপে উঠল।এ কোন প্রিয়ান?এটা ওর বেষ্টফ্রেন্ড প্রিয়ান না।প্রিয়ানের চোখে আজ অন্যকিছু দেখতে পাচ্ছে পিহু।কিন্তু ও যেটা ভাবছে সেটা কিভাবে সম্ভব? না, না এটা ওর ভুল ধারনা।এটা হতে পারে না।কিন্তু ওর ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে প্রিয়ান হুস্কি স্বরে বলে উঠল,’ আমার সমস্যা একটাই।আমি তোকে ভালোবাসি পিহু।আর তুই সেটা বুঝেও বুঝতে পারছিস না।কেন বুঝিস না পিহু?আমি তোকে অনেক ভালোবাসি পিহু।সত্যি! একবার আমার ভালোবাসাকে গ্রহণ করেই দেখ।প্রমিস করছি নিজের সবটা দিয়ে তোকে আগলে রাখব।এইযে এই হাতটা ধরেছি না তোর?এই হাত কখনই ছেড়ে দিবো না।আজীবন তোকে আমার বক্ষপিঞ্জারায় অতি যত্নে রেখে দিবো।তুই শুধু একবার আমার বাড়িয়ে দেওয়া ভালোবাসার হাতটা আঁকড়ে ধরে দেখ পিহু।’

পিহু কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।ওর শরীর থরথর করে কাঁপছে।ও কখনও কল্পনাও করেনি প্রিয়ান ওকে ভালোবাসবে।এটা ওর মাথাতেও আসেনি।পিহু শব্দ হারিয়ে ফেলেছে। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো প্রিয়ানের দিকে।প্রিয়ান ব্যাকুল নয়কে উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে পিহুর দিকে। এদিকে পিহু ভাবছে প্রিয়ান যেহেতু ওকে বলছে প্রিয়ান ওকে অনেক ভালোবাসে।তাহলে পিহু কি একবার সেই ভালোবাসাটা গ্রহণ করে দেখবে?প্রিয়ান বন্ধু হিসেবে বেস্ট এতে কোনো সন্দেহ নেই।লোকে বলে প্রেমিক অথবা স্বামী হওয়ার আগে ভালো বন্ধু হওয়া উত্তম।ওদের মাঝে বন্ধুত্ব তো আছেই।আর প্রিয়ানও ওকে ভালোবাসে।আর পিহুও প্রিয়ানকে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো রিজন দেখছে না।যেহেতু পিহুর কাউকে ভালোও লাগে না।আর ও কাউকে ভালোও বাসে না।তাই প্রিয়ানের ওই হাতটা একবার ভড়সা করে ধরেই দেখুক না।প্রিয়ান তো বলছে এই হাত কখনও ও ছাড়বে না।ওকে সারাজীবন আগলে রাখবে।পিহু লম্বা শ্বাস ফেলল।ধীর আওয়াজে বলে উঠল,’ দেখ প্রিয়ান আমি বুঝতে পেরেছি তুই আমায় অনেক ভালোবাসিস।আমাকে সারাজীবন আগলে রাখবি।কিন্তু আমি তোকে ভালোবাসি না।আর ভবিষ্যতে ভালোবাসবো কি না তাও জানি না।হয়তোবা ভালোবেসেও ফেলতে পারি।যদি এই সত্যিটা মেনে নিতে পারিস।আমি তোর এই ভালোবেসে বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা আগলে ধরতে পারি ভড়সা সহকারে।’

প্রিয়ান কি বলবে? ও তো আনন্দে বাক্যহারা।সে জানে পিহু ওকে ভালোবাসে না।তবে মেয়েটা যে ওর ভালোবাসা গ্রহণ করে নিয়েছে এই অনেক।প্রিয়ান একঝটকায় পিহুকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো।পিহু শরীরে অন্যরকম শীহরণ বয়ে গেলো।প্রিয়ান প্রফুল্লচিত্তে বলে,’ তুই আমার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিসনি এটাই অনেক।আর হ্যা তোকে ভালোবাসতে হবে না।আমার একার ভালোবাসাই যথেষ্ট।তবে আমি জানি আমার এই তীব্র ভালোবাসার প্রকপে পরে তুই নিজেও আমায় একসময় ভালোবেসে ফেলবি।আমি এখন শুধু এই দিনটারই অপেক্ষা করবো।’

পিহু মুচঁকি হাসলো।ওর ভালোলাগছে কেন যেন প্রিয়ানের বুকে মাথা রাখতে।এইযে প্রিয়ান ওকে এইভাবে জড়িয়ে ধরে আছে।এতে যেন মনের মাঝে আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করছে ওর মধ্যে।পিহুও দুহাতে জড়িয়ে ধরল প্রিয়ানকে।মনে মনে বলল,’ আমিও চাই প্রিয়ান আমি যেন তোকে ভালোবেসে ফেলি।আর ভালোবাসা যেন আমাকে বাধ্য করে তোকে ভালোবাসতে।আমি এটাই চাই।’

##মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৪
সবাই হাপাচ্ছে।এতোগুলো সিড়ি।তার উপর আবার বৃষ্টি নেমেছে।ফলে সিড়িগুলো বেশ পিচ্ছিল হয়ে আছে।সবাই বেশ সাবধানে পা ফেলছে।রুদ্রিক শক্ত করে অথৈয়ের হাত ধরে আছে।ওর মনটা বেশ ছটফট করছে।কিন্তু অথৈয়ের হাসি মুখখানা দেখে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।অথৈ চারপাশ দেখছে।আবার হাত দিয়ে রুদ্রিককে এটা সেটা দেখাচ্ছে।সেখানে কিছুদূর পর পর কয়েকটা বাড়ি ঘর দেখা যাচ্ছে।বাড়িঘর গুলো বেশ সুন্দর।এই গ্রামটা অনেক নিরিবিলি।আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।সবারই বেশ ভালো লাগছে।প্রাকৃতির মাঝ দিয়ে হাটবে তাও আবার প্রিয় মানুষগুলোর সাথে।আবার এর মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে।অবশ্য সবাই জানতো বৃষ্টি হবে।এইজন্যে সবাই নিজেদের জন্যে রেইনকোট ক্যারি করে এনেছিলো।বৃষ্টি শুরু হবার সাথে সাথেই তা গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে।রুদ্রিক ওর ভাড়া করা লোকটাকে জিজ্ঞেস করল আর কতোক্ষন লাগবে?লোকটা জানালো এইতো বেশি না আর শখানেক সিড়ি আছে।সব শুনে মারিয়া স্তব্ধ হয়ে হা করে রইলো।ওকে এমন থেমে যেতে দেখে নীল বলে,’ কি হলো?থামলে কেন?’

মারিয়া অবাক হওয়া অবস্থাতেই বলে,’ এই লোক বলে কিনা আরও শ’খানেক সিড়ি আছে।মানে সিরিয়াসলি?নামার সময়েই এতোটা কষ্ট হচ্ছে।তাহলে আবার উপরে উঠার সময় তো মনে হয় জীবন বের হয়ে যাবে।তার উপর আবার বৃষ্টি।সিড়িগুলো যেই পিচ্ছিল হয়ে আছে।’

নীল মারিয়ার হাত ধরে বলে,’ টেন্সন করছ কেন জান?আমি আছি না?তুমি ক্লান্ত হয়ে গেলে আমি তোমাকে কোলে তুলে নিবো ঠিক আছে?’

মারিয়া ঝটকা মেরে নীলের হাত সরিয়ে বলে,’ ফাউ কথা আমার সাথে একদম বলবে না।তুমি আমাকে কোলে তুলবে।মানে কতো সহজ তাই নাহ?এই বৃষ্টির মধ্যে, পিচ্ছিল সিড়িগুলো বেয়ে তুমি আমাকে কোলে নিয়ে উপরে উঠবে কিভাবে?’

নীল আবারও মারিয়ার হাত ধরল,’ আরে চলো তো তুমি।আমি পারব।ওতো টেন্সন করো না।’

এই বলে যেই না নীল এককদম সিড়িতে দিলো।ওমনি স্লিপ কেটে পরে যেতে নিলো।মারিয়া সাথে সাথে দুহাতে নীলকে আঁকড়ে ধরে।সাফাতও হ্যাল্প করে ওকে।নাহলে নীলের মতো ওমন হৃষ্টপুষ্ট ছেলেকে কি মারিয়া একা সামলাতে পারতো।সবাই বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।সাফাত ধরে নীলকে সোজা করে দাঁড় করালো।নীল সবার দিকে তাকিয়ে বোকার মতো হাসি দিলো।বলে,’ আরে চিন্তা করার কিছু নেই।আমি ঠিক আছি।’

মারিয়া রাগে চিরবিরিয়ে বলে,’ নিজেই নিজেকে সামলাতে পারছে না।আবার বলে কিনা আমাকে কোলে নিয়ে এই সিড়ি পার হবে।ধান্ধাবাজ কোথাকার।’

মারিয়া একাই হনহন করে সিড়ি দিয়ে নেমে যেতে লাগল।নীল নিজেকে সামলে নিয়ে মারিয়ার পিছন পিছন যেতে লাগল।এদিকে এই দুটোর কান্ড দেখে সবাই হেসে কুটিকুটি।রুদ্রিক অথৈয়ের হাত ধরে আছে।ইহান রিধির হাত ধরে আছে।নীল গিয়ে মারিয়ার হাত আগলে নিয়েছে।প্রিয়ান পিহুর হাত ধরে রেখেছে।একা আছে শুধু আহি,সাফাত,সিয়া আর অনিক।আহিদ তো কষ্টে শেষ।আজ যদি মাইশা এখানে থাকতো।তাহলে ও-ওতো এইভাবে মাইশার হাত ধরে এই দূর্গম রাস্তা পারি দিতো।ইশ,মেয়েটাকে বড্ড মিস করছে।ওই মায়া মায়া মুখটা,সুন্দর কোমড় অব্দি কোকড়ানো চুলগুলো।ওই ডাগর ডাগর আঁখিজোড়া।স্নিগ্ধ হাসি ছড়ানো গোলাপি ঠোঁটজোড়া।সব সবকিছু আহিদ বড্ড মিস করছে।মেয়েটার সাথে দু তিনদিন যাবত কথা হচ্ছে না।আচ্ছা? ও যেভাবে মাইশাকে মিস করছে।মাইশাও কি সেভাবে ওকে মিস করছে?নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হলো আহিদ।ও তো মাইশাকে ভালোবাসে।তাই মাইশাকে মিস করছে।কিন্তু মাইশা তো আর ওকে ভালোবাসে।তাহলে মিস করবে কিভাবে?কিন্তু ও তো মেয়েটার সাথে বন্ধুত্ব করেছিলো।তবে কেন একটাবারও খোঁজ নিলো না ওর?হঠাৎ আহিদের খেয়াল হলো।আরে মাইশার ফোন নাম্বার তো নিয়েছিলো।কিন্তু ওর ফোন নাম্বার মাইশাকে দেয়নি।তাহলে মেয়েটা ওকে ফোন দিবে কিভাবে?নিজের মাথায় নিজেই চাপড় মারল আহিদ।না এখান থেকে কটেজে ফিরতেই মাইশাকে একবার ফোন দিবে।মেয়েটার সাথে কথা না বলে আর থাকা যাবে না।মেয়েটার ওই মিষ্টি কণ্ঠটা শুনতে পেলে তবেই না এই অস্থির হৃদয়টা শান্ত হবে।আহিদ নিজের মনে এসব ভেবে মুচঁকি হাসল।

সিয়া একা একাই এই সিড়িগুলো অতিক্রম করছে।একটু সমস্যা হচ্ছে।কিন্তু ওতোটাও খারাপ না।অনিক মন চাইছে গিয়ে সিয়ার হাতটা শক্ত করে ধরতে।ওকে আঁকড়ে ধরে নিজের মাঝে আগলে নিয়ে এই সিড়িগুলো অতিক্রম করতে।কিন্তু ও চেয়েও তা পারছে না।পারছে না গিয়ে মেয়েটাকে বলতে,’ এই সিয়া নেহ।আমার হাতটা শক্ত করে ধর তো।’

ওর কারনেই তো আজ ওদের মাঝে এতো দুরূত্ব।আর পাঁচটা ভালোবাসার মানুষদের মতো ওরা এই প্রকৃতিকে অনুভব করতে পারছে না।অনিকের বুকে তীব্র দহন হচ্ছে।অসহনীয় দহন।এই দহনের জ্বালা যে ও আর সহ্য কর‍তে পারছে না।কবে মিটবে ওদের এই দুরূত্ব।কবে আবার আগের মতো… এখানে ভাবতেই থেমে যায় অনিক।অনিক বিরবির করল,’ আগের মতো?নাহ নাহ,আগের মতো আর কিছুই হবে না।আমাদের ভালোবাসা হবে।কিন্তু আগের মতো না।আগে তো ভালোবাসতো না।ওটা তো শুধু অভিনয় ছিলো।কিন্তু এখন! এখন আমি সিয়াকে অনেক ভালোবাসি।আমাদের মাঝে সবকিছু নতুনভাবে শুরু করব আমি।নতুন নতুন ভালোবাসাময় স্মৃতি তৈরি করবো।সেই স্মৃতিগুলো এতোটাই মধুর হবে যে। তুই আমার দেওয়া পুরনো কষ্টগুলো সব ভুলে যাবি।’

কিন্তু মন তো বলছে অন্যকিছু।আদৌ কি ওদের সম্পর্কটা ঠিক হবে?কোনোদিন কি অনিক পাবে সিয়ার মন জয় করতে?সিয়া কি পারবে সব ভুলে গিয়ে আবার অনিকের হয়ে যেতে?উত্তর আসল,অনিক আর হবে না এসব।সব শেষ।তুই নিজ হাতে সব শেষ করেছিস।আর কিছু ঠিক হবে না।কিছুই ঠিক হবে না।অনিকের চোখ জ্বালা করছে।কান্না পাচ্ছে প্রচুর।কিন্তু ছেলে মানুষ যে চাইলেও কাঁদতে পারে নাহ।

এদিকে সিয়া আনমনা হয়ে হাটছে।সবাই কি সুন্দর একে-অপরের হাত ধরে হাটছে।কিন্তু ওর হাতটা আঁকড়ে ধরার মতো কেউ নেই।কেউ-ই নেই।দীর্ঘশ্বাস ফেলল সিয়া।দরকার নেই ওর কারো।চায়না সে কারো হাতের ভড়সা।যেই হাত ওকে আগলে রাখার ভড়সা দিয়েও মাঝ পথে ছেড়ে চলে যায়।ও একাই পারবে ওর জীবনের সকল দূর্গম পথ পারি দিতে।দেখিয়ে দিবে যে জীবনের চলার পথে ওর কাউকে প্রয়োজন নেই।এসব এসব ভাবনায় এতোটাই বিভোর ছিলো সিয়া।সে অসাবধানতা বশত সিড়িতে এমনভাবে পা ফেলে যে ও পিছলে পরে যেতে নেয়। সিয়া ভয়ে মৃদ্যু চিৎকার করে উঠে।অনিকও আঁতকে উঠে।সিয়াকে যে ও গিয়ে ধরবে সেই সময়টুকুও নেই।এদিকে সিয়া ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।হঠাৎ একটা শক্তপোক্ত হাত এসে ওর নরম হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।ওকে পরে যাওয়া থেকে বাচিয়ে নেয়।সিয়া পিটপিট নজরে তাকায় চোখ মেলে তাকায়।মূলত ব্যক্তিটি ওর পিছনে।আর সিয়া ছিলো ওর সামনে।সিয়া পরে যেতে নিতেই ওই ব্যক্তিটি সেইভাবেই ওর হাত ধরে ফেলে।সিয়া সামনের দিকেই উবু হয়ে আছে।চোখ মেলতেই শুকনো ঢোক গিললো সিয়া।আজ এখান থেকে স্লিপ কেটে পরলে নির্ঘাত হাড্ডি-গুড্ডি আস্ত থাকতো নাহ।আকস্মিক সিয়া হাতে টান অনুভব করে।এক ঝটকায় টান দিয়ে সিয়াকে সেই ব্যক্তিটি ওকে দাঁড় করিয়ে দেয়।সিয়া এতে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলো।যখন অনুভব করল সব ঠিক আছে।তখন চোখ মেলে সামনে তাকায়।তাকাতেই দেখতে পায় ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে।গায়ে লম্বা কালো রেইন কোট জড়ানো,চোখে সানগ্লাস পরা,সেই সাথে মুখে মাস্ক লাগানো।এই বৃষ্টির মধ্যে চোখে সানগ্লাস লাগায় কে?আজব ব্যাপার-স্যাপার।এমন অদ্ভূত লোক সিয়া ওর লাইফে দেখেনি।এদিকে লোকটা সিয়ার হাত ছেড়ে দিলো।গলা খাকারি দিয়ে কথা বলল।কণ্ঠে তার স্পষ্ট বিরক্তি,’ মেয়ে মানুষ মানেই ঝামেলা।এমন দূর্গম পথে হাটতে পারবে না জেনেও সেখানে নেচে-কুঁদে চলে আসে।জাস্ট ডিসগাস্টিং।’

সিয়া হা হয়ে গেলো কথাটা শুনে।লোকটা মাস্ক পরে আছে।আর সিয়া লোকটার অনেকটাই কাছে।তাই কথাটা সিয়াই শুনতে পেয়েছে।আর কেউ শোনেনি।লোকটা ওকে ডিসগাস্টিং বলল? এদিকে হা করে থাকা সিয়াকে রেখে লোকটা গমগম করতে করতে চলে গেলো।অনিক দ্রুত পায়ে এসে দাঁড়িয়েছে সিয়ার কাছে।অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,’ আর ইউ ওকে সিয়া?ব্যথা পেয়েছিস কোথাও?’

অনিক সিয়াকে ধরার জন্যে হাত বাড়াতে নিতেই সিয়া পিছিয়ে যায়।অনিকের এমন ব্যবহার সিয়ার সহ্য হয় না।একদম হয় না।এতো আদিক্ষেতা ওর ভালো লাগে না।এদিকে সিয়ার এমন পিছানো দেখে অনিকের মনটা যেন ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেলো।মেয়েটা এখন ওকে এতোটাই ঘৃনা করে যে।এখন ওর ছোঁয়াটুকুও সহ্য কর‍তে পারছে নাহ?অনিকের চোখে থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরল।আর তা বৃষ্টির পানির ফোঁটার সাথেই মিশে গেলো।অনিকও সামনের দিকে পা বাড়ালো।বুকের এই তীব্র যন্ত্রণা সে এখন কিভাবে সইবে? এদিকে সবাই এসে সিয়াকে জিজ্ঞেস করল সিয়া ঠিক আছে কিনা।সিয়া জানালো সে ঠিক আছে।সাফাত বলে উঠল,’ সিয়া তুই আমার হাত ধর।আবার যদি কোনো কিছু হয়ে যায়।ভাগ্য ভালো লোকটা তোকে ধরে ফেলেছে।নাহলে আজ কি যে হতো।’

সাফাত হাত এগিয়ে দিতেই সিয়া সাফাতের হাত ধরে।এদিকে সিয়া মনে মনে ভাবছে।আসলেই তো সেই লোকটা যদি ওর হাত না ধরতো।আজ ওর সাথে অনেক বড়ো একটা দূর্ঘটনা ঘটে যেতো।লোকটা ওর এতো বড়ো উপকার করল।আর ও কিনা অকৃতজ্ঞ মানুষদের মতো একটা ধন্যবাদও দিলো না।না লোকটাকে খুঁজে বের করতে হবে।একটা ধন্যবাদ তো সে প্রাপ্য।

এদিকে আরহা দূর থেকে সিয়া আর সাফাতের দিকে তাকিয়ে আছে।তার কেন যেন অনেক খারাপ লাগছে।সাফাতের হাতে সিয়ার হাত দেখে।সাফাত কেনো ওর হাতটা ধরলো না।কষ্টে আরহার বুক ভাড় হয়ে আসল।মনকে বার বার বোঝালো।তারা বন্ধু।আর বন্ধু বন্ধুর হাত ধরতেই পারে।এতে এমন কষ্ট পাবার কি আছে?এটা তো সাধারণ একটা বিষয়।কিন্তু বলে না ভালোবাসার ক্ষেত্রে মন বড়ো বেহায়া হয়ে যায়।সিয়ার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে

#চলবে__________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here