#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৭
আজ শিশিরকে রিলিজ দেয়া হবে।অনেকদিনই তো কাটলো এই হাসপাতালের বেডে। শিশির এবার বাড়ি ফিরতে চায়।শিশিরের হাতের প্লাস্টার খোলা হচ্ছে আপাতত। রাত সায়ানকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ডাক্তার শিশিরের হাতটা নাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-“নাউ ফিল বেটার?”
শিশির চোখটা একবার বন্ধ করে ভ্রু কুঁচকালো।রাত ভয় নিয়ে তাকিয়ে আছে।শিশির চোখটা খুলে মুচকি হেসে বললো,
-“ঠিক আছে।বাট হাতটা নাড়াতে একটু কষ্ট হচ্ছে।”
ডাক্তার শিশিরের হাতটা সুন্দর করে শিশিরের কোলে রেখে বললেন,
-“কিছুদিন তো এমন হবেই।হাতটাকে রেস্টে রাখতে হবে।ভারী কাজ একদমই না। আর হাত নাড়াতে পারবেন। তবে কম। নাড়িয়ে নাড়িয়ে প্রেকটিস তো করতে হবে।”
-“জ্বী।”(মুচকি হেসে)
ডাক্তার এবার রাতকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-” ভাবী,শিশিরের সাথে কিন্তু পরিচয় আছে আগেরও। ঘরেরই মানুষ।”
রাত হেসে সায় দিয়ে বললো,
-“বাসায় আসবেন অবশ্যই ভাইয়া।”
-“হ্যা অবশ্যই ভাবী।এখন আপনার কাছে অনুরোধ হলো শিশিরের ভালো করে খেয়াল রাখবেন। ও কিন্তু একদমই বেখেয়ালে চলাফেরা করে। হাতটা আপাতত নাড়াবে কম।পা টা ঠিক হতে আরো ১৫-২০ দিনের মত লাগবে। সেদিকে একটু খেয়াল রাখবেন।বেশি যেন আবার না হাঁটতে চায়।আর কপালের ঘা তো শুকিয়েই গেছে।”
এভাবেই আরো বিভিন্ন কথা ডাক্তার রাতকে বলতে লাগলেন। রাত মনোযোগ সহকারে শুনে মাথা নাড়াচ্ছে।শিশির সেদিক পানে তাকিয়ে আছে। ইদানিং রাতের প্রতি বড্ড মায়া জন্মেছে তার।রাতের চোখগুলো বেশ মায়া লাগায় তাকে। রাতের কথা বলার স্টাইল, মজা করা সবকিছুতে কেমন অভ্যস্থ হচ্ছে শিশির।রাতের আচমকা কথা বলায় ধ্যান ভাঙে শিশিরের। রাত শিয়িরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলছে,
-“রেডি তো?”
-“কেন?”(অবাক হয়ে)
-“বাসায় যাওয়ার জন্য সাহেব।”
শিশিরকে খুব সাবধানে গাড়িতে তুলে দেয়া হয়।রাত সায়ানকে কোলে নিয়ে শিশিরের পাশে বসলো। সায়ান বাবাকে দূর থেকে দেখে হাসছে আর আদো আদো বুলি ছড়াচ্ছে।শিশির মুচকি হেসে সায়ানের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
-” বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট করে সবার আগে সায়ানকে কোলে নিবো। কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে। কতদিন ওকে কোলে নিই না।”
রাত মুচকি হেসে বললো,
-“আমি সাহায্য করব নে। ওকে কোলে নিতে।”
শিশির রাতের গাল টেনে দিয়ে বাহিরের দিকে তাকালো। গাড়ি চলছে। রাত সায়ানের সাথে বিভিন্ন মুখের ভঙ্গিমা করে সায়ানকে হাসাচ্ছে।শিশির সেদিকপানে তাকিয়ে রাতের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।চমকে উঠলো রাত। শিশিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
-” স্যাররর!”
শিশির চুপ করে আছে।বোঝানোর চেষ্টা করছে যে ও ঘুমাচ্ছে। রাত আবার ডাকলো,
-“ও স্যার।”
এবারো শিশির চুপ। রাত আর ডাকলো না। সায়ানকে নিয়ে মেতে উঠলো। এদিকে রাতের কাঁধে মাথা রেখে পরম নিশ্চিন্তে শায়িত হয়ে আছে।শিশির। বড্ড বেশি ভালো লাগছে তার। মন্দ হত না যদি সময়টা এখানেই থেমে যেত।
___
বাসায় আসতেই চৈতী বেগমের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেলো। ছেলে এতদিন পর বাড়িতে পা রাখলো। ওনার তো তোড়জোড় হবেই।শিশিরকে সুন্দর করে বেডে শুইয়ে দিতেই চৈতী বেগম রুমে ঢুকলেন। রাত তখন ঘুমন্ত সায়ানকে শিশিরের পাশে শোয়াচ্ছিল। চৈতী বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-“এখন কেমন লাগছে আব্বু?”
-“ভালো।”
-“যাক। তোর জন্যে ভালো কিছু রান্না করি।ডায়েট চার্ট দেখেই করব। চিন্তা করিস না।”
রাত হঠাৎ বলে উঠলো,
-“আন্টি আমি ওনার জন্যে পানির জগটা ভরে আনছি। আপনি এদিকেই থাকুন।”
চৈতী বেগম সম্মতি দিলেন। রাত চলে গেলো। চৈতী বেগম শিশিরের মাথার কাছে বসে বললেন,
-“এই ১ মাসে কি বুঝলি? ”
-“কিসের আম্মু?”
-“এইযে তোদের বিয়ের তো ১ মাস হতে চলল।”
-“ওহ হুম।”
-“রাত নিতান্তই ভালো একটা মেয়ে।”
-“আমি জানি সেটা মা।”
-“পারলে ওই পারবে সংসারটাকে আগলাতে।একটু ভেবে দেখিস।”
বলেই থামলেন চৈতী বেগম। শিশির মায়ের হাত ধরে বলতে লাগলো,
-“এক্সিডেন্ট করা গাড়িতে ঝুমকা আর চুড়ি পাইছিলা?”
চৈতী বেগম কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপর মাথা নাড়িয়ে বললেন,
-“হ্যা হ্যা। ওগুলো তো আমার কাছেই।রাতকে দিতে হবে।”
শিশির যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সে তো ভেবেছিলো এগুলো হয়ত রাতই পেয়েছে। যাক! রাত পায়নি। শিশির তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,
-” মা ওগুলো তোমার ওয়াড্রবে একটু লুকিয়ে রাখবে?”
-“লুকিয়ে কেন?”(ভ্রু কুচকে)
-“এমনি।তুমি রাখো তো। আর রাতকে ভুলেও বলো না।”
চৈতী বেগম হেসে বললেন,
-“সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছিস?”
-“সুস্থ হই।”(মুচকি হেসে)
-“বেশ!”
বলেই চৈতী বেগম নিজের রুমের দিকে চললেন। রাতও ফিরে এলো।চৈতী বেগমকে বের হতে দেখে বলে উঠলো,
-“আন্টি রান্নাটা কি আপনি করবেন?”
চৈতী বেগম রাতের গালে হাত রেখে বললো,
-“বিয়ের এতদিন পরেও আন্টি? ”
রাত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর মুচকি হেসে বললো,
-“যেদিন পুরোপুরি শিশির চৌধুরীর বউ হতে পারব,যেদিন উনি আমায় পূর্ণ স্বীকৃতি দিবেন সেদিন আর এই মিষ্টি করে আন্টি ডাকব না। সোহাগ করে আম্মু ডাকব।”
চৈতী বেগম হেসে উঠলেন। কথাগুলো কানে যায় শিশিরের।বিরবির করে বলে উঠে,
-“পিচ্চি মেয়ে এতকিছু বুঝে কিভাবে?”
চৈতী বেগম রাতের গাল টেনে দিয়ে চলে গেলেন। রাত এসে পানির জগটা শিশিরের বেডসাইড টেবিলে রাখলো। তারপর শিশিরের পাশে বসে ওর মাথায় হাত দিয়ে বললো,
-“জ্বর আছে নাকি দেখতে হবে।”
-“জ্বর নাই পিচ্চি।”
বলেই শিশির রাতের গাল টেনে দিলো। এবার রাত ফুঁসে উঠলো। দাঁড়িয়ে পায়চারী করতে করতে বললো,
-“আমার গালগুলো কি আটার রুটি পাইছেন হু? ”
-“কেন?”(চোখ বড় বড় করে)
-” যখন যে যেমন মন চায় শুধু গালই টানবেন হুহ!”
বলেই রাত আবারো ফুঁসতে লাগলো।শিশির হাসতে হাসতে বললো,
-“পিচ্চিদের গাল বেশি নরম হয়।”
-“এই আমি পিচ্চি না।কত কষ্ট করে ডাভ সাবান লাগিয়ে লাগিয়ে গালগুলোকে সফট করেছি।”
শিশির হাসছে রাতের কাহিনী দেখে। রাত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গাল দেখছে আর বলছে,
-“আহারে বেচারা গালগুলো লাল টকটকে হয়ে গেছে। ”
বলেই সে আবারো শিশিরের দিকে তেড়ে এসে বললো,
-“ফার্দার আমার গালে হাত দিবেন তো…”
বলতে বলতে শিশির আবার রাতের গাল টেনে দিলো। রাতের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।শিশির তখনো হাসছে। আর বলছে,
-“তোমার এই কুটুসকুটুস গালগুলো না ধরে থাকতেই পারব না আমি।”
রাত চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বিছানায় বসে পড়লো।শিশির রাতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আপনি কি আর কলেজ যাবেন না জনাবা?”
রাত শিশিরের দিকে এমনভাবে তাকালো যেন ও কিছু বুঝেই না।পৃথিবীর সব ওর অচেনা।শিশির রাতের এমন তাকানো দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
-“এভাবে তাকাচ্ছো যে? পড়াশোনা কি করবে না? সামনে এইচএসসির টেস্ট।”
রাত মুখ ভেংচি কেটে বললো,
-“হুহ। আমি এসব পড়াশোনার মধ্যে নাই।”
-” কি বললে তুমি?”
-” তো!আমার বিয়ে হয়ে গেছে স্যার।এখন আবার কিসের পড়াশোনা। ”
-“দেখো!একদম এসব বাজে কথা বলবা না। আমি কি বউকে অশিক্ষিত রাখব নাকি?”
-“এই আমি কি অশিক্ষিত নাকি?”
-“হ্যা। পুরো পড়াশোনা শেষ না করে চাকরী না করা অবধি আপনি অশিক্ষিত। ”
শিশির ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথাগুলো বললো।।রাত নাক ফুলিয়ে বললো,
-“এত পড়াশোনা করে কি হবে? আর সায়ান তো আমাকে ছাড়া থাকতেই পারবে না।”
শিশির ঠান্ডা গলায় বললো,
-“যতদিন আমি আছি ততদিন অন্তত কলেজের ক্লাসগুলো এটেন্ড করো।আমি সায়ানকে দেখে রাখতে পারব।”
-” এহ একদম না। নিজেই অসুস্থ। আপনাকে কে দেখে রাখবে হুম?”
-“মা আছে তো।”
-“হয়েছে পরেরটা পরে দেখা যাবে।”
বলেই রাত উঠে দাঁড়ালো।শিশির রাতকে উদ্দেশ্য করে রাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তুমি না গেলে কিন্তু আমি তোমায় ঠেলে পাঠাব। চিনো না আমায়!”
-“উফ যাবোনে। নিন এবার রেডি হোন।গোসলের জন্যে। ”
-“মানেহ।”(অবাক হয়ে)
-“আরে গোসল করবেন না নাকি?”
-“আমি করব।বাট তুমি কেন কাপড় নিয়ে ঢুকছো।”
রাত বিরক্ত হয়ে বললো,
-“অসহ্যকর লোক তো।চলুন। আমি না গেলে পড়ে টড়ে আরেক কাহিনী করবেন।”
-“একদম না।”
বলেই শিশির দাঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে লাগলো। রাত শিশিরকে এক পাশ থেকে ধরে বললো,
-“আমিই গোসল করাব। চলুন।”
শিশির ইতস্ততভাবে বললো,
-“ধূর।আমি করতে পারব তো।”
-“আপনি মেয়েদের মত সরম পাইয়েন না তো।”
বলেই রাত শিশিরকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। শিশির আর কি বলবে?তার তো কিছু বলারই নাই।রাত যা শুরু করলো!
______
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মিতালি।হাতে কফির কাপ।দৃষ্টি বাহিরে।কিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় মত্ত সে।হঠাৎই পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো,
-“কি ভাবছো মিতালি?”
মিতালি পিছনে না ফিরেই গম্ভীর গলায় বললো,
-“রাত কিভাবে আমার সংসার ভাঙলো সেটা।”
নুশান মিতালির সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর ভ্রু কুঁচকে বললো,
-” মানে?”
মিতালি চাপা রাগ নিয়ে বললো,
-“মানে বুঝতে পারছো না তুমি? রাত আমার সংসার ভেঙেছে।”
-“এনাফ মিতালি। কিসের তোমার সংসার। তোমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। তুমি এখন আমার ওয়াইফ। আর আমাদের মধ্যে কেউ নাই।”
মিতালি নুশানকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
-” না না না। শিশির শুধু মাত্র আমার। শুধু আমার।”
নুশান এবার রেগেই গেল। তেতে উঠে বললো,
-“এই কি হয়েছে তোর!১৩ দিনের বাচ্চাটা রেখে আমার কাছে আসার সময় তোর এসব মনে ছিল না তাই না?”
-“এসেছি তো। আমি এখন ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি আবার ফিরে যেতে চাই।কিন্তু রাতের জন্যে!! ”
বলতে দেরী নুশানের চড় মারতে দেরী হলো না। নুশান মিতালিকে চড় দিয়ে বললো,
-“সবটা এত সহজ না বুঝছিস!আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। আর কিসের ভুল বুঝতে পেরেছিস তুই? নাকি শরীরের খি*দে মিটে গেছে! ”
মিতালি গালে হাত দিয়ে বললো,
-“শিশির আমাকে কখনো মারেনি নুশান।কিন্তু তুমি!”
নুশান আরেকটা চড় মেরে বললো,
-“শিশির এখন পরপুরুষ। ওর নাম মুখে আনতে লজ্জা করে না?”
-” না করে না। আমি ফিরবো আবার ওর কাছে। আর ও রাতের জন্যে এমন করছে।নয়ত আমি যত ভুলই করি না কেন শিশির ঠিকই আমাকে মেনে নিবে।”
বলেই মিতালি খিলখিল করে হাসতে লাগলো। নুশান ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর মিতালিকে জোর করে বুকে নিয়ে বললো,
-“পাগলামি করো না মিতালি। কি সমস্যা কি তোমার!তুমি চলে এসেছো।এখন ওদেরকে ওদের মত থাকতে দাও।”
মিতালি নুশানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন বললো,
-“কখনো না। শিশির এত সহজে আমাকে ভুলে গেল? ওকে আমি কিছুতেই সুখে থাকতে দিবো না।”(শয়তানী হেসে)
#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৮
শিশিরের সামনে বসে শিশিরের মাথা মুছিয়ে দিচ্ছে রাত। শিশিরের দৃষ্টি রাতের ব্যস্ত চোহারায়। বাঁধন ছাড়া চুলগুলো কপালে,গালে এসে পড়েছে। রাত আধভেজা শরীর নিয়ে শিশিরের চুল মুছে দিয়ে বললো,
-“আমি আপনার জন্যে খাবার আনছি। আপনি এখানেই থাকুন।পেছন পেছন সিড়ি বেয়ে নামতে আসিয়েন না।”
বলতে বলতে রাত চলে যাচ্ছিলো।পেছন থেকে শাড়ির আঁচলে টান পড়ায় থেমে যায় রাত। পিছনে ফিরতেই দেখে শিশির অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু রাতের আচলটা তার হাতের মুঠোয়। রাত অবাক হয়ে সুধালো,
-“কি হলো?”
শিশির আচলটা ছেড়ে দিলো। হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে কপালটা চুলকে ঢোক গিলে বললো,
-“আগে গোসল করে এসো।”
শিশিরের এমন বিহেভিয়ার এর মানে বুঝতে পারছে না রাত। সে ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“আরে আগে আপনাকে খাওয়াতে হবে।”
-“না পরে। আগে আধভেজা শাড়িটা পাল্টাও।”
-“ধূর। আপনার খাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে। আমি গেলাম।”
বলেই রাত যেতে নিলো। শিশির আবার কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো,
-“এভাবে নিচে যেয়ো না রাত।লজ্জা পাবে।”
রাতের আবারো ভ্রু কুঁচকে গেলো। নিজের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো শাড়ির আঁচল অনেকটাই সরে গেছে।চোখ বড় বড় হয়ে যায় তার।কোনোমতে শাড়িটা টেনে আলমারি থেকে থ্রি-পিছ বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। শিশির কিছুক্ষণ বসে রইলো। তারপর হেসে উঠে বিরবির করলো,
-“মেয়েটা আসলেই বাচ্চা।”
প্রায় ১০ মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে বের হয় রাত।শিশির তখন আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে। সায়ান জেগে উঠেছে।তার মুখে ফিডার ধরে আছে।রাত শিশিরের সামনে লজ্জায় যেতে পারছে না। তবুও আমতা আমতা করে বললো,
-“আমি নতুন করে ফিডার বানিয়ে দিচ্ছি। এটা বাসি।”
শিশির রাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
-“তোমার ছেলে বাসি খেতে পারে না এটা আমি জানি। তাই নতুন বানিয়ে নিয়েছি।”
রাত আর কিছু বললো না। শিশিরের জন্যে খাবার আনতে নিচে চলে গেলো।এদিকে শিশির বেশ রাতের লজ্জা পাওয়াটাকে এনজয় করছে। রাত খাবার এনে শিশিরের সামনে বসতেই শিশির বলতে লাগলো,
-“এসব কি এনেছো?”
-“কেন!খাবার!”
-“আমি এসব খাবো না।খিচুড়ি খাবো।”
রাত মুখ ভেঙিয়ে বললো,
-“ওরে আমার খিচুড়ি পাগল রে!এখন সব হেলদী খাবার খেতে হবে।”
-“খিচুড়িও হেলদী।”
-“বাট আপনার ডায়েট চার্টে নাই।”
-“তাই বলে এসব কি ভাজি টাজি।”(নাক ছিটকে)
-“ঢেঁড়স ভাজি। খান তো।”
বলেই রাত শিশিরকে খাওয়াতে লাগলো। রাত আচমকা নিজের হাতে শিশিরকে খাওয়াবে শিশির কখনো ভাবতেও পারেনি। রাত খাওয়ায়নি এমন না। খাইয়েছে তবে চামচ দিয়ে। এই প্রথম শিশির রাতের হাত দিয়ে খাচ্ছে। শিশির মুচকি মুচকি হাসছে। তা দেখে রাত ভ্রু নাচিয়ে বললো,
-“কি সাহেব!হাসছেন কেন?”
শিশির হালকা হেসে বললো,
-“এইযে একটা পিচ্চির কান্ড দেখে।”
রাত চোখ ছোট ছোট করে ফেললো। সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললো,
-“কোন পিচ্চির? আর কি কান্ড হুম?”
-“এইযে একটা পিচ্চি মেয়ে যে কিনা আমার সামনে বসে।নিজেই হাত দিয়ে খেতে পারে না আবার আমাকে হাত দিয়ে খাওয়াচ্ছে। বড় সাজা হচ্ছে!”
রাত ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
-“কে বললো আমি নিজের হাতে খেতে পারি না?আর বার বার খালি পিচ্চি পিচ্চি কি হুম? নিজে মনে হয় কত্ত বড়।”
শিশির পানি খেয়ে নিলো। তারপর বলে উঠলো,
-“এই!ঝগড়া ছাড়া কিছু পারো না। তাই না?”
-“কিহহ! আমি ঝগড়া করি!”(রেগে)
-“হ্যা। এত ঝগড়াটে তুমি।”
-“দেখুন, বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু।”
শিশির দাঁত কেলিয়ে হাসলো। রাত উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“এত হাসছেন কেন হুহ? গফের কথা ভেবে নাকি?”
-” হ্যা।”
-“কিহ!গার্লফ্রেন্ড ও আছে?”(চোখ বড় বড় করে)
শিশির মুখ টিপে হাসলো।তবে সেটা রাতকে বুঝতে না দিয়ে বললো,
-“হ্যা আছেই তো।”
রাতের চেহারাটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো।নাকিকান্না কেঁদে বললো,
-“ধূর। আপনার সাথে কথাই নাই আমার।”
বলেই সে খেতে চলে গেলো। শিশির মাথা দুলিয়ে হাসলো।মেয়েটা আসলে পারেও!
কিছুক্ষণ পরেই রাত আবার ধুপধাপ শব্দ করে রুমে ঢুকলো।সায়ানের পাশে শুতেই শিশির ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“এরমধ্যে খাওয়া শেষ?”
রাত সায়ানের হাত নিয়ে খেলতে খেলতে বললো,
-“হু শেষ।”
-“সাত-আট মিনিট হলো গেলে।”
-” হ্যা তো।”
-“গোসল করলে দশ মিনিটে।খেলেসাত-আট মিনিটে।এত তাড়াহুড়ো করছো কেন রাত?”
-“কারণ এখানে একটা ধামড়া রোগী আছে।”
-“হোয়াট ধামড়া!”(রেগে)
-“আমাকে যখন পিচ্চি বলেন?”(ঠোঁট উল্টে)
শিশির কিছু না বলে অন্যদিকে তাকালো।রাতও মুখ ভেংচি কাটলো।কিছুক্ষণ পর রাত নিজেই বলতে লাগলো,
-“সে কি আমার থেকেও সুন্দর? ”
শিশির আড়চোখে তাকিয়ে বললো,
-“কে?”
-“আপনার গার্লফ্রেন্ড। ”
শিশির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-” হ্যা।”
-“ভালো।”
বলেই রাত উল্টোদিকে ফিরে গেলো।শিশির রাতের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসলো।সায়ান রাতের পিঠে মুখ রেখে লালা দিয়ে ভরাচ্ছে। শিশির সায়ানকে কোলে নিতে নিতে বললো,
-“মাকে জ্বালায় না বাবা।”
আচমকা রাত এদিকে ফিরে সায়ানকে বুকে জড়িয়ে বললো,
-“একদম আমার ছেলেকে আমার থেকে সরাবেন না।”
শিশির অবাক হয়ে রাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। রাতের চোখে পানি দেখে মাথায় হাত তার।
-“রাত তুমি কাঁদছো! ”
-“আপনাকে দেখতে বলেছি?”
রাতের গর্জনে শিশিরের শরীর কেঁপে উঠলো।শিশির এবার ধমক দিয়ে বললো,
-“বড়দের সাথে এভাবে কথা বলে?”
রাত আর কিছু বললো না।চোখের মধ্যে অভিমানের অশ্রুধারা জমছে।শিশির রাতের মাথায় হাত দিতেই রাত সেটাকে ছুড়ে ফেলে দিলো।।শিশির হেসে বললো,
-“আমি তো মজা করছিলাম রাত।”
-“আমার কি?”
-“তোমারি তো সব। তুমি না আমার একমাত্র বউ।”
-“এহ!গার্লফ্রেন্ডের কথা বলে আমাকে বলে কিনা আমি বউ।”
বলেই রাত গাল ফুলালো। তা দেখে শিশির রাতের গাল টেনে বললো,
-“মেয়ে মানুষ বেশিই বুঝে।”
রাত ভেঙালো।তবে তার অভিমান কমে গেছে অনেকটাই।শিশির মজা করছিলো। শিশির রাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“হইছে এত ভাব না করে বইটা নিয়ে তো বসতে পারেন।”
-“রাতে।”
-“এখুনি।”
-” না না না।”
-” কি বললাম?”(চোখ রাঙিয়ে)
রাত মন খারাপ করে উঠে বই নিয়ে শিশিরের সামনে বসে পড়লো।সায়ান তো ততক্ষণে মায়ের কোলে ঘুমিয়েই গেছে।
_____
আজ অনেকদিন পর কলেজে পা রাখলো রাত। শিশিরের জোরাজোরিতে অবশেষে তাকে আসতেই হলো।শিশিরও আসবে। তবে তাকে নেওয়ার জন্য! গাড়ি করে।কারণ শিশিরের পায়ে এখনো ব্যাথা রয়েছে। পুরোটা ঠিক হয়নি।অবশ্য শিশির ক্লাস করাবে।এমনিতে তো চাকরী ফেলে বসে থাকা যায় না। নেহাতই হেড স্যার শিশিরকে পছন্দ করেন। নয়ত এই চাকরী কি থাকত?শিশির মাঝে মাঝে এসে কয়েকটা ক্লাস করাবে।
কলেজে আসার পর রাতের মনটা কেমন যেন খুশি খুশি লাগছে।কতদিন পর সবার সাথে দেখা!ক্লাসে যেতেই ধাক্কা লাগলো রিসাবের সাথে। রাত পড়তে পড়তে বেঁচে গেলো।রিসাব কান ধরে বললো,
-“সরি সরি সরি দোস্ত।”
রাত ততক্ষণে ক্ষেপে রণচণ্ডীর রূপ ধারণ করেছে। রিসাবের পিছনে থাকা নিপার হাতে নিজের ব্যাগটা ছুঁড়ে দিয়ে কোমড়ে হাত রেখে বললো,
-“চোখদুটো কি গার্লফ্রেন্ডের কাছে দিয়ে এসেছিস?”
রিসাব ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“এই আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নাই।”
রাত মুখ ভেংচি দিয়ে রিসাবের বাহুতে ধাক্কা দিয়ে বললো,
-“হইছে আর মিথ্যা বলতে হবে না।”
রিসাব রাতের পিছনে পিছনে আসতে আসতে বললো,
-“আরে সত্যি ইয়ার।আমার কেউ নাই।আমি শুধু তোর।”,
রাত ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“এই আমার মানে?”
রিসাব আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
-“মানে তোদের। আমার বন্ধুদের গ্রুপ ছাড়া আর কেউ আছে নাকি আমার।”
-“ওহ তাই বল।”
বলেই রাত বন্ধুদের সাথে গিয়ে বসে পড়লো।রিসাবও রাতের পাশে বসে রাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।কিন্তু রাতের তো খেয়াল নাই।সে নিজের মত কথা বলতে ব্যস্ত। সবার খোঁজ খবর নিচ্ছে। নিপা বলেই ফেললো,
-“এতদিন পর কলেজে কেন রে?আর শুনেছিলাম তোর এক্সিডেন্ট হইছে।আমরা গিয়েছিলাম বাট আংকেল-আন্টিকে পাইনি।”
রাত সম্মতি জানিয়ে বললো,
-“হ্যা। ছোটখাটো এক্সিডেন্ট। বাট আমার ক্ষতি কম হয়েছে। ওনার তো একদম অবস্থা টাইট।”
রাতের বন্ধু শিহাব এবার মুখ টিপে হেসে বললো,
-“এই ওনার টা আবার কে রে?”
বলেই সে নিপাকে ইশারা করে হাসতে লাগলো। রাতের কেমন যেন লজ্জা লাগলো।আসলে তারা তো জানে না যে রাতের বিয়ে হয়েছে তাও শিশিরের সাথে। শিশিরের কথাটা বলতে যাবে এমন সময় রিসাব বলে উঠলো,
-“আরে কিসের ওনার ওনার শুরু করছিস!কোনো ওনার ফোনার নাই। রাত মজা করছে।”
রাত রিসাবের মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
-“তোরে বলছে না?”
রিসাব অবাক হয়ে বললো,
-“মানে?”
রাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই ক্লাসে স্যার প্রবেশ করলেন।তাই রাতেরও আর কিছু বলার থাকলো না। সে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে লাগলো।এদিকে রিসাব ভাবছে,
-“রাত কিসের কথা বলতে চাইছিলো?আচ্ছা রাতের কি আসলেই কেউ আছে?”
আবার কিছুক্ষণ রাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।চোখ এড়ায় না শিহাব আর নিপার।তারা একে-অপরের চোখাচোখি করলো।রিসাব হেসে ভাবলো,
-“ধূর রাতের এসব কখনোই ছিলো না।”
তারপর সে পকেট থেকে আড়ালে একটা রিং বের করে মুচকি মুচকি হেসে ভাবলো,
-“খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে মনের কথা বলবো রাত।”
চলবে…..
(