পরিণীতা পর্ব -০৫

#পরিণীতা
#পর্ব_৫
#লেখনীতে_সাবরিনা_সিদ্দিকা_তাবাচ্ছুম

ভারী গহনা নিয়ে লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছি। আশে পাশে চোখ বুলাচ্ছি। বড় খুব সুন্দর করে সাজানো রুমটা। মনে হয় আদিবের রুম। আমাকে অন্য রুমে বসানোর কথাও নয়। আদিব আসছে না দেখে ঘোমটা হালকা উঠিয়ে দিলাম। মাথার উপর সাদা রঙের ফ্যান ফুল স্পিডে ঘুরছে। কিন্তু আমার তখনো গরম লাগছে।

রুমের দক্ষিণে একটা লম্বা গ্লাসের দরজা। এটা মনে হয় বেলকণি। রাত হওয়ায় দরজা বন্ধ রেখেছে মনে হয়। আবছা আবছা চাঁদের আলোয় দেখতে পারছি কিছু গাছের মতো। লোকটা মনে হচ্ছে খুব শৌখিন। রুমের সাজগোজ দেখে তো তেমনই মনে হচ্ছে। তার সাথে বিয়ের আউটফিটটা ও অসাধারণ হয়েছে। মিতালি ভাবি বলল আমার লেহেঙ্গা, তার শেরওয়ানি তার নিজস্ব করা ডিজাইন! আমি আজকে সারাটা দিন চমকে চমকে যাচ্ছি। কিন্তু এখনো বুঝতে পারছি না আদিবের আমার সাথে কথা না বলার কারণ। নাকি সাদাফের সাথে এসবের সাথে লিঙ্কড রয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে দরজা লাগানো শব্দ পেলাম। তাকাতেই দেখলাম আদিব এসে গেছে।

“ইসসস! ঘোমটা খুলে বসে ছিলাম কখন আসলো বুঝতেই পারলাম না। কী মনে করলো? নতুন বউয়ের কান্ড দেখো। জামাই আসার আগে ঘোমটা তুলে নেচে নেচে এদিক সেদিক নজর দিচ্ছে। কী লজ্জা!” (মনে মনে)

“ঘোমটা টানতে হবে না। আমি কিছু ভাবিনি। এতো কিছু না ভেবে ফ্রেশ হয়ে এসো।”

আদিব খাটের সামনে এসে এটা বলল। সে বুঝল কী করে?!

“আমি বুঝলাম কী করে সেটা পরে জানলেও হবে আগে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি পাশের রুমে ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।” বলতে বলতে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ থেমে বলল,

“টেবিলের পাশে যে আলমারিতে রয়েছে সেটার ডান সাইডে তোমার শাড়ি, কামিজ সব আছে যেটা কমফর্ট মনে হবে সেটাই পড়ে নিও।” বলে চলে গেল।

“বাব্বাহ! এতো কিছু! কেয়ার বলবো নাকি দায়িত্ব?”

দরজা দিয়ে আদিব উঁকি দিয়ে বলল,

“সেটা তোমার ভাবতে হবে না”

আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে লজ্জা পেলাম। তার মানে উনি দরজার পাশেই ছিল! ইসস! আমি কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ট্রেন হয়ে আসতেই দেখি আদিব বিছানায় বসে ফোন টিপছে। আমার প্রচুর আনইজি ফিল হচ্ছে রুমে বসবো? নাকি শুয়ে পড়বো? নাকি অন্য কোথাও চলে যাবো? না না অন্য কোথাও কেন যাবো!

“বিছানায় এসে বসো”

আদিবের আদেশ শুনে আমি বাধ্য মেয়ের মতো বিছানার অন্য পাশে গিয়ে বসলাম।

“এদিকে ঘুরো”

“কেন?”(হুট করে প্রশ্ন করে বসলাম)

“ঘুরতে বলছি ঘুরো”

আমিও ঘুরে বসলাম। উনি মোবাইল টিপতে টিপতে কথা বলছিল এতোক্ষণ। মোবাইলে চোখ রেখেই বলল,

“তোমার মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে তাই না যে আমি কেন এতোদিন কথা বলিনি?”

“হ্যাঁ আপনি কীভাবে জানলেন?”(উৎসুক হয়ে)

উনি হালকা মাথা নেড়ে হাসছে। তখনো চোখ মোবাইলে। আমি এবার বিরক্তি অনুভব করলাম। একটা মানুষের সাথে কথা বলতে বলতে মোবাইল কেন টিপতে হয়। আদিব চোখ সরিয়ে মোবাইল বেড সাইড টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ালো। বিছানার এই পাশে এসে আমার হাত ধরে টেনে বলল,

“চলো?”

“কোথায়?”(থতমত খেয়ে)

“বেলকনিতে”

” সেটা তো এমনি বললেই হয় এভাবে টানার কী আছে”
বলে গেলাম বেলকনিতে। বাহ খুব সুন্দর করে সাজানো তো! গাছে ভরপুর। আর মাঝে একটা গোল টেবিল আর দুপাশে দুটো চেয়ার। আদিব আমাকে বসতে বলে নিজে অপর পাশে বসলো,

“এবার বলেন ম্যাডাম আপনার কী কী কোয়েশ্চন আছে?”

আদিবের এমন কথা শুনে কেমন যেন লাগলো। চুপ হয়ে রইলাম।

“বলো বলো!”

“আপনি আমাকে আগে থেকে ফলো করতেন?”

“হুম”

“তাহলে আগে বলেননি কেন?”

“তোমাকে বলতে বলতে সাদাফ এর সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তোমার”

“ওহ”

“কেন আগে বললে খুশি হতে নাকি?”

“তেমন কিছু না। আমি তো আপনাকে চিনতামই না!”

“হুম”

দুজনেই নিরব হয়ে গেলাম। হঠাৎ আদিব বলে উঠলো,

“তোমার মনে একটা কোয়েশ্চন ঘুরপাক খাচ্ছে না? আমি তোমার সাথে কেন কথা বলিনি?”

“হুমম”(মাথা নেড়ে)

“আমার মনে হয়েছিল তুমি কথা বললে হয়তো বিয়ে ভেঙে দিবে আর তাছাড়া সব কথা জমাচ্ছিলাম। সম্পর্ক হালাল কর একসাথে আড্ডা দিবো, ঘুরবো-ফিরবো, খাবো ইত্যাদি। তখন সম্পর্কে থাকবে না কোনো তৃতীয় ব্যক্তি থাকবে না কোনো গুণাহ। তখন একসাথে কথা কাজগুলো জন্য সওয়াব যুক্ত হবে”

মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলাম। কত সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলো।

“কী হলো ম্যাডাম? ঘুমোবেন না?”

আমার ধ্যান ভাঙলো। ওনি সবসময় ম্যাডাম ম্যাডাম করে কেন? কেমন যেন।

“আচ্ছা আপনি ম্যাডাম ম্যাডাম করেন কেন?”

তিনি আরেকটু কাছে এসে বলল,

“কারণ নারী তার শখের পুরুষের কাছে “ম্যাডাম” সম্বোধন খুব পছন্দ করে”

আমি হাসলাম।

“আপনি আমার শখের পুরুষ?”

“এখন না হলেও আগামীতে হবো! আর এখন কিন্তু অনেকটাই হয়ে গেছি”

“কী করে?”

“এই যে কথা বলে। সত্যি করে বলো তো আমার কথা একটাও তোমার খারাপ লেগেছে? বরং ভালো লেগেছে!”

আসলেই তো সুন্দর সুন্দর যুক্তিসঙ্গত কথাগুলো আমার খুব ভালো লেগেছে।(মনে মনে)

“হুমমম”(আমি)

“আচ্ছা চলো ঘুমাতে যাই। অনেক রাত হয়ে গেছে”

আমরা রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। হয়তো পরিবেশ পরিবর্তনের ফলে ঘুম আসছে না। এক জায়গায় থাকার অভ্যাস অন্য কোথাও গিয়ে বদলাতে সময় লাগে। তবুও এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতেই পারিনি।

সকালে….

আমি ফ্রেশ হয়ে কামিজ পড়বো নাকি শাড়ি পড়বো তা নিয়ে চিন্তা করছি। শুনেছি আদিবের ফ্যামিলি পরহেজগার। যার ফলস্বরূপ সে আমার সাথে সরাসরি বিয়ের বাঁধনে আবদ্ধ হয়েছে। কোনো ধরণের হারাম সম্পর্কে জড়াতে চাইনি। অবশ্য আমার খুব ভালো লেগেছে বিষয়টা। তারা খুবই পর্দাশীল। সে হিসেবে কোনো পুরুষের সামনে হয়তো আমাকে যেতে হবে না এটা ভেবেই শান্তি লাগছে। এমনিতেই এতো মানুষের মাঝে অস্বস্তি লাগে। আমি কামিজ পড়ে নিচে নেমে এলাম। দেখি আমার শাশুড়ি আম্মু রান্নাঘরে। ওনার সাথে তেমন একটা কথা হয়নি তাই রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম।

“ঘুম থেকে উঠে পড়েছো?”

“হ্যাঁ আম্মু”

“ঠিক আছি বসো আমি নাস্তা দিয়ে দিচ্ছি”

“সবাই খাবে না?”

“হ্যাঁ আমরা সবাই একসাথেই খাবো।”

একটু পর দেখি আমার ননদ আর তার বাবা কথা বলতে বলতে আসছে।

“ওই তো ওরা চলে এসেছে। বিহি তুমিও বসে পড়ো যাও”

“উমম…উনি?”

“আদিবের কথা বলছো? ও এখন খাবে না। ওর ঘুম থেকে উঠতে দেরি আছে। এই ছেলে কাজে ছুটি পেলেই ঘুমিয়ে থাকে। দেরিতে উঠে। আর এখন তো ব্যবসার ভার অন্যজনকে দিয়েছে। বিয়ের জন্য ছুটি তাই এখন এতো তাড়াতাড়ি উঠবে।” হেসে কথাটা বলল।

আমিও আচ্ছা বলে এদিকে চলে আসলাম। বাবাহ! এতো আরাম আয়েশ। অবশ্য আমি বাড়িতে কলেজ না থাকলে দেরিতে উঠলাম। আমি সবার সাথে খেতে বসে গেলাম। এই বাড়ির সবার ব্যবহার খুব মনোরম। আমার ননদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আজকে চলে যাবে। আমি থাকতে বলায় বলল, দুইদিন পর আবার আসবে। এই একজন মাত্র আমার সমবয়সী। অনেক গল্প করলাম ওনার সাথে। ওনাকে বিদায় দিয়ে রুমে এসে দেখি আদিব এখনো ঘুমোচ্ছে। টেবিলে রাখা ঘড়িতে দেখলাম ১১:৪৯ বাজে। কিন্তু আমি ডাকলাম না। আমার মন চাইলো বেলকনিতে গিয়ে বসি। এখানে অনেক বাতাস আর ফুলগাছ ফুলসহ খুব ভালো লাগছে। রাতে অন্ধকার থাকায় ভালোমতো দেখতে পাই নি। এখন বসে আছি।

রাতে,
আম্মু ফোন দিলো। অনেকক্ষণ কথা বললাম। আম্মু শুধু জিজ্ঞাসা করছে যে আমার এখানে ভালো লাগছে কিনা। আমার তো ভালো লাগছে আর ভালো না লাগলেও এখানেই তো থাকতে হবে। কথায় কথায় জানতে পারলাম। লিজা বাপের বাড়ি চলে গেছে কিন্তু সাদাফ ভাইয়াকে শাসিয়ে গেছে। বাড়ি থেকে বের হতে বলায় সে ওখানে গেল কিন্তু সাদাফ ভাইয়া কে নিলো না!

কল কেটে দেখলাম আদিব আসছে রুমে। রুমে এসেই হেসে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর কাজ শেষে দুইজন অনেক কথা বললাম। ভালোই কাটছে দিনগুলো। রাত প্রায় বারোটায় আমরা ঘুমোতে চলে গেলাম।

চলবে….?

(1087 শব্দের)

[আপনাদের নেক্সট নেক্সট কমেন্ট দেখতে দেখতে আমি টোটালি টায়ার্ড। নেক্সট না বললেও তো আমি দিবো যেহেতু গল্প শুরু করেছি সেহেতু শেষ ও করবো। কিছু গঠনমূলক কমেন্ট করুন! গল্প সম্পর্কে, গল্পের চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলুন। সব কিছু কিন্তু ক্লিয়ার করে দিয়েছি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here