#মন_দিয়েছে_ধরা
#পর্বঃ১০
লেখনীতে#পুষ্পিতা_প্রিমা
সকাল সকাল আরেক বিপদ ঘটে গেল নীরার সাথে। জগ থেকে পানি ঢালার সময় রিপের হাত থেকে গ্লাসটা ফ্লোরে পড়ার সাথে সাথেই বিকট শব্দে ভেঙে খানখান হয়ে গেল। রিপ ফ্লোর পরিষ্কার করার জন্য ঝাড়ু খুঁজছিল।
এমন উচ্চরব শুনে নীরাও বসে থাকার মেয়ে নয়। মানুষটার কিছু হলো না তো? হন্তদন্ত হয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করতেই তার পায়ের তলায় কাঁচ বিঁধে গেল। ওমাগো বলে উঠতেই রিপ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখতে পেল। কন্ঠে তীব্র উদ্বেগ জড়িয়ে ডাকলো
নীরা, আরেহ দেখে চলবে তো। গ্লাসটা ভেঙে গিয়েছে হাত থেকে পড়ে।
নীরার পা চেপে বসে পড়লো ফ্লোরে। পায়ের তলা থেকে বিচ্ছুরিত রক্তের ঢেউয়ে ভেসে গেল তার দুহাত। যেন মেহেদী এঁকেছে দু’হাতে। রিপ মুনা আর মাকে ডাক দিল। তারা ছুটতে ছুটতে এসে নীরাকে অমন অবস্থায় দেখে হায়হায় করে উঠলো। পায়ের ব্যগ্র যন্ত্রণায় নীরা দুচোখ বুঁজে আছে। মুনা রক্ত থামানোর চেষ্টা করলো। তালহা বেগম নীরাকে ধরলো। নীরার রক্তফোবিয়া আছে তাই তার মাথাটা ঘুরছে প্রচন্ড ভাবে। রিপ অন্য গ্লাসে পানি ঢেলে নীরার মুখের কাছে দিয়ে বলল
নাও পানি খাও আগে।
নীরা ঢকঢক করে পানি খেল। তারপর মাথাটা এলিয়ে দিল তালহা বেগমের কাঁধে। উনি চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললেন
বউ জামাই দুটো আমাদের পাগল বানানোর ধান্ধা করছিস নাকি রে? একজন হাত ভেঙে বসে আছিস অন্যজন পা কেটে বসে আছিস।
রিপ অপরাধীর মতো অপরাধ স্বীকারোক্তি দিয়ে বলল
ওর পা আমার জন্য কেটেছে। গ্লাসটা আমি ভেঙেছি।
বড়ই ভালো কাজ করেছিস। এবার দুজনেই ঘরের ভেতর বসে থাক।
রিপ নীরার মুখের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। মেয়েটা তার জন্যই কষ্ট পেয়েছে।
******
রেহানকে নিয়ে ইশা এল খান বাড়িতে। সকাল সকাল তার আগমনে সবাই বেশ খুশি হলো কিন্তু পরীকে না দেখে মুনার মনের মধ্যে ভয় বাসা বাঁধলো। পরী কি আসবে না?
ইশা রিপ আর নীরা দু’জনের অবস্থা দেখে বিচলিত কন্ঠে বলল
দুজনের অবস্থায় তো মারাত্মক।
রিপ বলল
আমি অনেক ঠিক আছি। নীরা তো হাঁটতেই পারছে না।
নীরা মুখ গম্ভীর করে বিছানায় পা টেনে বসে রইলো। পায়ে ব্যান্ডেজ। সে কোনো কথা বলছে না।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে ইশা বাড়ি ফিরে গেল। পরী রাইনাকে জ্বালিয়ে মারবে। ডক্টরও বাসায় নেই। তাই তাকে চলে যেতে হয়েছে। যাওয়ার সময় মুনা জিজ্ঞেস করেছে পরী কি আর আসবে না? ইশা কিছুই বলতে পারেনি সঠিকভাবে শুধু বলেছে সামনেই তো ওর তিনবছর পূর্ণ হবে। ওর জন্মদিনটা ডক্টর ওখানেই পালন করতে চায়। তোমরাও যাবে। মুনা হেসে বলল আচ্ছা তোর বড়দাকে বলব।
___________
ডান হাতটা ভাঙায় রিপের অফিসের কাজ স্থগিত আছে। আপাতত সে হাতটা নাড়াতে পারছে না তেমন। টেলিফোনে দু-তিনজন ক্লায়েন্টের সাথে কাজের কথা শেষ করে ঘরে আসতেই দেখলো নীরা বিছানায় বসে কাচুরমাচুর শব্দ করে চিপস খাচ্ছে। শব্দটা বিরক্ত লাগলো রিপের। বিছানায় বসতে বসতে বলল
নীরা এসব কি খাচ্ছ? তোমাকে এসব কে দিয়েছে?
নীরার সহজসরল জবাব।
বড়দা?
বড়দা? বড়দা তোমার জন্য এসব এনেছে?
পরীর জন্য এনেছিল। পরী নেই তাই আমি খাচ্ছি।
রিপের দিকে চিপসের প্যাকেট বাড়িয়ে দিল নীরা।
খাবেন?
রিপ মুখ ঘুরিয়ে বলল
এসব বাজে জিনিস আমি খাই না।
পরী খায়।
হোয়াট?
মানে পরী আর আমি বাজে জিনিস খাই।
পরীকে কেন টানছো?
একশবার টানবো।
রিপ পিঠের নীচে বালিশ রেখে চোখের উপর বাম হাতটা রেখে শুয়ে পড়লো। বলল
কাল রাতের মতো আজ যদি করো তাহলে আমি অফিসের ঘরে চলে যাব। কাল ভাঙা হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমাতে যাচ্ছিলে। আবার পা তুলে দিচ্ছিলে। দিনদিন তুমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছ নীরা।
নীরা কুপিত চোখে তাকিয়ে বলল
কি বললেন?
রিপ চোখ থেকে হাত সরিয়ে শোয়া থেকে একটু উঠে বলল,
ভুল কিছু বলেছি? তুমি কাল আমার পায়ের উপর পা তুলে দাওনি?
না দিইনি। বরং আপনি আমার গায়ের উপর হাত দিয়েছেন। পেটটা গলে গেল একদম। আমার তো সুড়সুড়ি লাগছিলো। ঘুমের মাঝে আপনি যে অসভ্যতামি করেন সেসব মনে থাকেনা? শুধু আমার দোষ দেন।
রিপ মহাঅপমানিত হলো যেন। অক্ষিকোটর থেকে বিস্ময় গলে পড়ছে। নীরা এমনটা বলতে পারলো? সে অসভ্যতামি করে? সে?
রিপকে বিছানা থেকে নামতে দেখে নীরা বলল
এই এই কোথায় যাচ্ছেন?
আমি অফিসের ঘরে থাকবো নীরা। তুমি আমাকে আজব আজব উপাধি দিচ্ছ। আমি কি এমন নাকি? কেউ বলতে পারবে আমি এমন?
কেউ বলবে কি করে? কেউ কি আপনার সাথে ঘুমিয়েছে নাকি? ঘুমাই তো আমি। সো আমি সব বলতে পারব। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সবটা। ইন ডিটেইলসে। হুমম।
বলেই নীরা চোখ টিপলো।
রিপের কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। নীরার দিকে চোখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। সে ঘর থেকে বেরুতেই নীরা ফিক করে হেসে উঠলো ধপাস করে শুয়ে গড়াগড়ি খেয়ে চিপস খেতে খেতে বলল “শালার জামাই”।
চলবে……