#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পর্ব২৪
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
” মা বাবুকে দেখবে না?”
জুঁইয়ের আকষ্মিক প্রশ্নে আনানের মুখ কালো হয়ে যায়।ধরা গলায় বলে,,,
” দেখানোটা কি খুব জরুরি?”
” কেন নয়?তিনি তার নাতনিকে দেখবেন না?ভিডিও কল দাও তুমি।”
অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মিসেস লাকীকে ভিডিও কল দেয় আনান।বহু বছর পর ছেলের নাম্বার থেকে কল আসায় মিসেস লাকী কিছুটা অবাক হন।রিসিভ করে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দেয়।আনান কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে,,
” আমাদের মেয়ে হয়েছে।দেখাই তোমায় দাঁড়াও।”
” আমাদের আমাদের করছিস কেন?ঐ বাচ্চা তোর নাকি?পরের বাচ্চাকে নিয়ে এত আলগা দরদ দেখাতে হবে কেন?”
মিসেস লাকী বলেন।আনান আগে থেকেই আন্দাজ করে রেখেছিলো।তাই ফোন ব্লুটুথ ইয়ারফোনের সাথে সংযুক্ত করে রেখেছিলো। তাই জুঁই কিছু শুনতে পায় নি।আনান ফোনটা নিয়ে বাইরে যায়।
” তুমি কি কখনো মানুষ হবে না?”
” তুই আমায় পেটে ধরেছিস না আমি তোকে পেটে ধরেছি?”
” গর্ভে ধারণ করেছো বলে যে তোমার ভুল দোষ অপরাধ থাকবে না এমন না!আমার সমস্যা নেই তোমার সমস্যা হচ্ছে কেন?তুমিও তো আহানের বাবাকে বিয়ে করেছিলে। আহানের বাবাকে আমি বাবা হিসেবে না মানলেও তিনি আমায় যথেষ্ট স্নেহ করেন।জুঁইও তোমার মতো পরিস্থিতির শিকার। একটা মেয়ে হয়ে কেন আরেকটা মেয়ের অবস্থান বুঝতে চাইছো না?”
মিসেস লাকী কিছু বলেন না।কল কেটে দেন।
____★
” কয়েকদিন আগে বিল গেটসের বউ তাকে ডিভোর্স দিলো এখন জাস্টিন ট্রুডোর বউ।এত টাকা পয়সা ক্ষমতা দিয়ে কী লাভ যদি বউ ইই না থাকে।অবশ্য বেডি মানুষ নিজেও জানে না তারা কিসে আটকায়।”
নিউজফিড স্ক্রোল করতে করতে তাচ্ছিল্যের সুরে কথাটা বলে আহান।শালিক তখন রাতের খাবার রান্না করছে।রান্নাঘর থেকে আহানের সব কথা শুনে ফেলে শালিক।
” তুমি নিজে মাথা খাটায় ডাক্তারি পড়েছো তো?”
” অবশ্যই। তাই চুল পেকে গেছে।”
” আমার মনে হয় না।”
” কেন?”
উঠে গিয়ে শালিকের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় আহান।শালিক তরকারির ঝোল হাতের তালুতে নিয়ে চেখে বলে,,,
” না হলে ওই কথা বললে কেন যে বেডি মানুষ কিসে আটকায় তারা নিজেও জানে না।বেডা মানুষের খুলির ভিতর শুধুই হাওয়া।”
” তুমি জানো বেডি মানুষ কিসে আটকায়?”
” হু জানি তো।নারী টাকায়ও আটকায় না,নারী ক্ষমতায়ও আটকায় না।
নারী আটকায় মায়া,ভালোবাসা,বিশ্বাস,যত্নে।
ব্যাক্তিগত নারীকে সময় দিন,দেখবেন নারী আটকে গেছে।”
” তারমানে আমি তোমায় সময় দিই না?”
” দাও।তবে অল্প।বিয়ের আগে অনেক সময় দিতে কেয়ার নিতে।”
” আচ্ছা!”
আহান শালিককে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।কাঁধে আলতো করে থুতনী ঠেকায় আহান।শালিক মোচড় দিয়ে হেসে ওঠে।
” কাতুকুতু লাগছে।”
” লাগুক আজকে আর ছাড়বো না।আমায় নিয়ে এত অভিযোগ।”
” অভিযোগ করেছি ভাগ্য ভালো।অভিমান করে দূরে সরে যাই নি।”
” যা না করেছে কে?”
” আটকে রাখলে যাবো কিভাবে?”
” আমি আবার তোকে কিভাবে আটকে রাখলাম?”
” এইযে বিয়ের পরে বাইরে দাওয়াত ছাড়া কখনো আমায় নিজ হাতে খেতে দাও নি।সব সময় খাইয়ে দাও।পিরিয়ডের দিন গুলোতে হট ওয়াটার ব্যাগে পানি ভরে দাও,চকলেট এনে দাও।চুলে তেল দিয়ে দাও।রাতে ঘুম না আসলে মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।এগুলোর জন্যই তো আটকে গেছি।”
______★
আনশি এখন বড় হয়েছে।বসা শিখেছে।মাঝে মাঝে আবু আবু বলে আনানকে ডাক দেয়।বদলি হয়ে সিরাজগঞ্জ আসার কয়েকদিন পরেই জুঁইকে আনান নিয়ে আসে।থানার ইই কোয়ার্টারে থাকছে দু’জন।পুতুলের সংসার পেতেছে।আনানের অবসর কাটে জুঁই আনশিকে নিয়ে।যতটুকু সময় পায় পুরোটুকুই জুঁই আনশিকে দেওয়ার চেষ্টা করে সে।
কোয়ার্টারের বাসাটাকে জুঁই নিজের মতো করে সাজিয়েছে।বারান্দা,বাড়ির সম্মুখমুখে,ছাদে সবুজের সমারোহ হয়েছে জুঁইয়ের বদৌলতেই।পুরাতন জীর্ণশীর্ণ দেয়ালগুলো রঙ তুলির ছোয়ায় পেয়েছে নতুন রূপ। দিব্যি চলছে জীবন তবে আকাশের কথা মনে পরলে মনটা হোঁচট খেয়ে থেমে যায়।আনশিকে দেখতে পারলো না আকাশ।আকাশ চলে যাবার পর জুঁই ভেবেছিলো তার অনাগত সন্তান হয়তো তার মতোই কপাল পোড়া।বাবার আদর পাবে না।আনশির জন্যই হয়তো বিধাতা আনানকে এনেছে।যেভাবে আনান আনশিকে সময় দেয়!
সকালে আনান ইউনিফর্ম পরে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলো।আয়নার প্রতিবিম্বে আনান খেয়াল করে জুঁই তার দিকে তাকিয়ে আছে।মুগ্ধ চাহনি নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।আনান মৃদু হাসে।
” কী দেখছো?”
” আমার বুড়ো বরকে।”
আনান আবারও হাসে।জুঁই আর আনশির কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে যায়।
_____★
পূর্ণিমা রাত। লোডশেডিং চলছে।তীব্র গরমে প্রিয়তমাকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে আহান।শালিক আহানের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।আর নিজেদের অনাগত সন্তানকে নিয়ে না পরিকল্পনা করছে।
” মেয়ে হলে তো আনশির নামের সাথে মিলিয়ে ওর বোনের নাম রাখবো আনশিরা। আর যদি ছেলে হয় তাহলে নাম কি রাখবো?”
” আগে বাচ্চাটাকে সুস্থ ভাবে আনো তারপর দেখা যাবে নি।যে লাফালাফি করো এই শরীর নিয়ে!”
” করি যাতে আমার বাচ্চা আমার মতো এক্টিভ হয়।”
” তুই এক্টিভ?আলসের ডিব্বা।আলসেমির জন্য তো তুই টয়লেটেও যেতি না একসময়।পরে পেট ব্যাথা পেট ব্যাথা বলে কি কান্না কাটি!”
” আউ।”
উঠে বসে শালিক।আহান আতঙ্কিত হয়ে যায়।
” কি হলো?”
” পেট ব্যথা!”
” কই ব্যাথা?”
” লাথি মা র লো।ব্যাথা লাগছে আবার ভালোও লাগছে।”
মৃদু হাসে শালিক।এই বুঝি মাতৃত্বের স্বাদ।গর্ভস্থ সন্তান লাথি দি লে, হাত পা লম্বা করলে পেটের ভিতর অনুভুত ব্যথার মধ্যেও মা সুখ খুঁজে পায়।এই ভেবে যে তার গর্ভস্থ সন্তান সুস্থ আছে।ভালো আছে।
” আমার বাচ্চা এখনই মায়ের মতো হতে শুরু করেছে।”
” মায়ের মতো ভালো না দুষ্টু?”
আহান প্রশ্ন করে।শালিক বড় বড় চোখ নিয়ে আহানের দিকে তাকায়।অবাক কন্ঠে বলে,,,
” ভালো?”
” হু।ওর মা ভালো না?”
” না একদম ইই না।আমি টাকা উড়াই,সারাদিন শুয়ে বসে থাকি,ফোন চালাই প্রচুর,পড়াশোনায় ফাঁকি মারি, PNPC করি,খাওয়াদাওয়া নিয়ে ঝামেলা করি,মানুষের সাথে মিশি না।মিশলেও বলে অহংকার দেখাই,কথা বলার সময় ম্যাচিউরিটি দেখাই,রাগ করি,নিজের ওপর নিজেই রাগ জিদ খাটাই।”
আহান হাসে।হাসতে হাসতে বলে,,,
” এতগুলো দোষ তোর?কই আমি তো পেলাম না।আমি শুধু পড়াশোনায় ফাঁকিবাজি,ফোন চালানো আর PNPC টাই দেখি।তাও আমার কাছেই করিস মানুষের PNPC। ”
” টাকা যে উড়াই সেটা তো বললে না।”
” হাত খরচের টাকা থেকে সেভিং করে নিজের শখ পূরণ করাটাকে সেল্ফলাভ বলে টাকা উড়ানো না।এইটা একটা ভালো গুণ যেটা সবার মধ্যে থাকে না।”
” আমি হচ্ছি পর্যায় সারণির দ্বিতীয় চৌদ্দ নাম্বার গ্রুপের মৌল।কারও কাছে কয়লা কারও কাছে হীরা।”
” মাঝে মাঝে বড্ড শক্ত কথা বলিস।এগুলো তোকে মানায় না।তোর সরলতা শিশুসুলভ আচরণই আমায় শান্তি দেয়।”
” সেই কখন কারেন্ট এসেছে।এখনো ঘুমাচ্ছো না।সকালে হসপিটালে যেতে হবে না?”
” তুই ঘুমাবি না?”
” মন মতো শু তেই পাই না আর ঘুম।তুমি ঘুমাও।আমি একটু হাঁটাহাঁটি করি।”
” কত কষ্ট করছিস!”
” কষ্ট ছাড়া জীবন অর্থহীন।আর মা হতে গেলে কষ্ট করতেই হবে।না হলে পুর্ণাঙ্গ ভাবে মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া যায় না।এখন আমি করছি।বাবু আসলে তুমিও করবে কষ্ট।”
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পর্ব২৫
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
আজ জুঁইয়ের জন্মদিন।বিষয়টা জুঁইয়ের নিজের খেয়াল না থাকলেও আনানের ঠিক ইই মনে আছে।প্রত্যেকবারের মতো এবারও আনান এতিম শিশুদের জুঁইয়ের জন্মদিনে খাওয়ায়।জুঁই নিজের হাতে রান্না করে খাবার।কিন্তু কখনো তার মাথায় এলো না আনান কেন আজকে এভাবে এতিম শিশুদের খাওয়াচ্ছে।
রান্না শেষ করে ড্রয়িং রুমে গিয়া সোফায় বসে জুঁই।আনান তখন আনশির সাথে খেয়াল ব্যস্ত।জুঁই প্রাণ ভরে দু’জনকে দেখে।জুঁইকে দেখে আনান উঠে দাঁড়ায়।গিয়ে জুঁইকে হ্যাঁচকা টানে সোফা থেকে উঠায়।অত:পর জুঁইয়ের কোমড় ধরে জুঁইকে একেবারে নিজের বক্ষের সাথে মিশিয়ে নেয় আনান।জুঁই লাজুক কন্ঠে বলে,,,
” ছাড়ো।এই ঘামা শরীরে কেউ এভাবে ধরলে অসস্থি লাগে।”
” আজ কোনো ছাড়াছাড়ি নাই।”
” মেয়ে দেখছে।”
” দেখুক।আমার বউকেই তো ধরেছি।অন্য মানুষের বউকে না।”
জুঁই লাজুক হাসে।আনান জুঁইয়ের কপালে চুম্বন করে।জুঁই অবাক হয়ে যায়।অবাক নয়নে চেয়ে বলে,,
” হঠাৎ?”
” শুভ জন্মদিন আমার প্রিয়তমা।”
জুঁই আনানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে তারপর ফিক করে বাচ্চাদের মতো কেঁদে নেয়।আনান ওকে জড়িয়ে ধরে।জুঁই কাঁদতে কাঁদতে বলে,,
” তুমি মনে রেখেছো?”
” ভুলে যাওয়ার মানুষ তুমি?তোমার সাথে জড়িত প্রতিটি প্রসঙ্গ আমার রক্তে মিশে সারা শরীরে বয়ে বেড়ায়।ভুলে যেতে হলে দেহের সমস্ত রক্ত বের করে দিতে হবে। এবার বল জন্মদিনে কি গিফট চাও?”
” তোমার সাথে বৃদ্ধ হতে চাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো চাহিদা নেই।”
____★
সন্ধার পরে শালিকের প্রসব বেদনা শুরু হয়।আহান ডাক্তার হওয়ায় মোটামুটি নরমাল ডেলিভারি সম্পর্কে ধারণা ছিলো।সে শালিককে হসপিটালে না নিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করায়।এদিকে হসপিটালে না নিয়ে যাওয়ায় ব্যাথা নিয়ে শালিকের রাগ হয়।সে বেশ কয়েকবার আহানকে ঝাড়ি দেয়।আহান কিছু বলে না।হাসে।আর শালিককে ধরে ধরে হাঁটায়।বসতে গেলে শালিক আরও ব্যাথা অনুভব করে।আহান তাও শালিককে জোর করে কিছু খাইয়ে দেয়। হসপিটালে না নিয়ে যাওয়ায় তো শালিকের বেজায় রাগ।সে বেদনাকাতর ক্ষিপ্ত কন্ঠে আহানকে বলে,,,
” তুই কি আমায় মা ই রা আবার আরেকটা বিয়ের ধান্দায় আছিস?”
” পাগল নাকি?একটা বেডির জ্বালায় ইই বাঁচি না।”
” তাহলে হসপিটালে নে!আর পারতেছি না।”
” চিন চিন ব্যাথা করতেছে তো!বেবি কালকে হবে। আপাতত প্রচুর হাঁটাহাঁটি কর।”
” হাঁটাহাঁটি কর!এইখানে আমি মুডে আছি?তুই হসপিটালে নিয়ে যা।”
ভেংচি কেটে বলে শালিক।আহান ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলে,,,
” সকালে নিবো।মামি রওনা দিয়েছে।”
” আম্মুরে জানাইলা কখন?”
” একটু আগেই।”
শালিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে।ঢোক ঢোক করে সে এক বোতল পানি খেয়ে ফেলে।
” ক্লান্ত লাগলে বসতে পারো।”
” একবার বলিস হাঁটতে একবার বলিস বসতে!মানুষ তো আমি নাকি?বুঝতেছোস না আমার জান যায়!”
” তুমিই বলেছিলে কষ্ট ছাড়া পরিপূর্ণভাবে মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া যায় না।আর একটু কিছুক্ষণ কষ্ট করো।সকাল হলেই নিয়ে যাবো।ব্যাথা কি বেড়েছে?”
” না সুড়সুড়ি লাগছে আমার!”
ঝাড়ি দিয়ে বলে শালিক।আহান হাসে। ফজরের নামাজ পড়েই আহান সিএনজির খোঁজে বেড়িয়ে যায়।মিনিট দশেক পরে আসে সিএনজি নিয়ে।ব্যাগ বন্দি যাবতোয় দরকারি জিনিস সিএনজিতে তুলে শালিককে নিয়ে আসে আহান।মুখ দেখে বুঝতে বাকি রইলো না আহানের শালিকের ব্যাথা বেড়েছে।কান্না করায় নাক লাল টুকটুকে হয়ে আছে।
পুরো রাস্তায় শালিক টু শব্দ পর্যন্ত করলো না।আহানের কাঁধে মাথা রেখে ওর শার্ট খামচে বসে ছিলো।আহান একটু পর পর শালিককে দেখছিলো।চোখ বন্ধ করে বসে ছিলো শালিক।নীরবে অশ্রু গড়িয়ে পরছিলো গাল বেয়ে।
আহান হাসপাতালে গিয়েই আগে শালিককে এডমিট করে পরে ডাঃকামনাকে কল দেয়।ডাঃকামনা আপাতত শালিককে বিভিন্ন ধরণের ব্যায়াম আর হাঁটাহাঁটি করার নির্দেশ দেন।আহান গিয়ে তা বললে শালিক ক্ষেপাটে গরুর মতো তেড়ে আসে।তার ধারণা আহান মিথ্যা বলছে।বাধ্য হয়েই আহান আবার কামনাকে কল দেয়।তারমুখে নিজ কানে নির্দেশগুলো শোনার পর শালিক তা করে।আহান ফোন দিয়ে বলে দিছিলো মিসেস শান্তাকে সরাসরি হাসপাতালে আসতে।আটটার দিকে তিনি হসপিটালে পৌঁছান।আহান ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে আনে।
মিসেস শান্তা কিছুতেই মেয়েকে খাওয়াতে পারেন না।ব্যাথার যন্ত্রণায় শালিক আহানকে উল্টাপাল্টা কথা বলছে।আহান টিটকারি দিয়ে বলে,,,
” হু,আমি বলছিলাম না আমার আব্বা ডাকার মানুষ লাগবে?”
” আম্মু তোমার বাপকে চুপ করতে বলো।”
” ও চুপ করবে নি।তুই আগে খা।”
” আমি ম রি আর তোমরা খা খা শুরু করছো!”
আহান আর মিসেস শান্তা হাসবেন নাকি কাঁদবেন বুঝতে পারেন না।দুইজন মুখ লুকিয়ে হাসতে লাগে।দশটার দিকে ডাঃকামনা আসেন।এসেই শালিককে স্যালাইন দেন।ক্রমেই শালিকের ব্যাথা বাড়তে লাগে।আমাদের দেশে সাধারণে স্ত্রীর নর্মাল ডেলিভারির সময় স্বামীকে স্ত্রীর পাশে রাখা তো দূরে থাক আশেপাশেই আসতে দেওয়া হয় না।সময় এগোলেও মানুষ এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পারে নি।একটা মেয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটা প্রাণকে পৃথিবীতে আনে।এইসময় প্রত্যেকটা মেয়ের পাশে তার স্বামীকে থাকতে দেওয়া উচিত।এতে যেমন একটা মেয়ে ভরসা পায় যে আমার অনুপস্থিতিতে আর যাই করুক প্রিয়মানুষটা অন্য নারীকে জীবনে আনবে না।আমার সন্তানের খেয়াল রাখবে।
ডাক্তার হওয়ায় আহান সুযোগ পায় শালিকের পাশে থাকার।শালিক আহানের পরিহিত কাপড় খামচে ধরে যা তা বকছে।ডাঃকামনা ও তার সহকর্মীরা শালিকের এ হেন আচরণে বেশ মজা পায়।শালিক নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করছে একটা প্রাণকে সুস্থ ভাবে পৃথিবীতে আনার।
” শালিক।আর একটু প্রেসার দাও।”
ডাঃকামনা বলে।শালিক ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।আহান শালিকের ঘাম মুছে দেয়।
” আগলা পিরিত লাগবে না।”
শালিক ঝাড়ি দিয়ে বলে।আহান হাসে। ডাঃকামনা আহানকে ইশারা দেন শালিককে প্রেসার দাওয়ার জন্য।
” পুশ শালিক।আমার ওপর যত রাগ ক্ষোপ আছে সব নিয়ে পুশ দাও।”
” তোর রাগ আমি আমার ওপর কেন মিটাবো।একবার ভালো হয়ে নেই না!তোর এক দিন কি আমার একদিন।আর মা রা গেলে তো গেলাম ইই।খবরদার অন্য বেডিরে যদি বিয়ে করছিস!ব্যাডা মানুষ খালি বেডি চায়।”
আহান কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পরে শালিকের কথায়।তাকিয়ে দেখে ডাঃকামনা ও তার সহকর্মীরা মুখ টিপে হাসছেন।
বেলা আড়াইটার দিকে শালিক এক ফুটফুটে পুত্রসন্তানের মা হয়।আহান প্রথমেই এই সুসংবাদ দেয় আনানকে।আহান ছেলের নাম রাখে ইরহাম।
দুপুরের খাবার খেয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে শালিক ঘুম দেয়।মিসেস শান্তা নাতিকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পরে।খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলো নবজাতক ইরহাম।হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে যায়।মিসেস শান্তা ওকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করেন।শালিকের ছেলে কি এত সহজেই মানে?চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে।শালিক কান্নার আওয়াজ পেয়ে ঘুমের ঘোরে বলে,,
” কোন বেডি তার বাচ্চাকে এভাবে অন্যের কাছে দিছে আম্মু?যাও তো আম্মু ওকে ওর আম্মুর কাছে দিয়ে আসো।”
” ওর আম্মু কে?”
” বাবুর আম্মুই ওর আম্মু।”
” বাবুর আম্মুই তো ঘুমের ঘোরে বলতেছে বাবুকে ওর আম্মুর কাছে দিয়ে এসো।”
আহানের কথা শুনে শালিক লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে।ইরহামকে খেতে খেতে শালিকের পাশেই ঘুমিয়ে পরে।শালিক বিছানায় হেলান দিয়ে ছিলো।আর আহান ওকে বেদানা ছিলে খাওয়াচ্ছিলো।
” এখন আম্মা ডাকার মানুষ আসছে।পাগলামি কমায় করবি।”
” কই পাগলামি করলাম?”
” ডেলিভারির সময় কি কি বলছিস তা যদি রেকর্ড করে রাখতাম ভালো হতো।”
” ঐ ব্যাথা তুমি পাইলে ম রে ই যেতে!”
” সহ্য করার ক্ষমতা আছে বলেই তো তুই একজন মেয়ে,একজন স্ত্রী,একজন মা।”
____★
ইরহামের জন্মের মাসখানেকের মতো গেছে।আনানের এখনো তার ভাইপো কে দেখা হয় নি।ছুটি পাইনি।আজ ছুটি পেতেই বাসায় ফিরে জুঁইকে কাপড় চোপ্পড় গোছাতে বলে আনান।ঢাকা থেকে ঘুরে আসবে।ইরহামকে দেখে আসবে।জুঁইয়ের ব্যাগ গোছানো হলেই আনান জুঁই আনশিকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যে হয়ে যায়।ধানমন্ডি আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজের পাশে সাত নং রোডে এসে জুঁই আর আনান ডাব খাওয়ার জন্য নামে।আনানের সাথে বেবি কেরিয়ার ব্যাগে ছিলো আনশি।ছয় মাস প্লাস বয়স হওয়ায় নিজেদের সাথে আনশিকেও টুকিটাকি জিনিস খাওয়ানোর চেষ্টা করে জুঁই।ডাব খাওয়া শেষে যখন রাস্তা পার হয়ে গাড়িতে উঠতে যাবে।ঠিক সেই সময় বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল এসে জুঁইকে ধাক্কা দেয়।অল্পের জন্য বেঁচে যায় আনান আর ওর সাথে থাকা আনশি।জুঁই ছিটকে রাস্তায় পরে।মুহুর্তেই ওর চারিপাশ রক্তে ভরে যায়।আনান দৌড়ে আসে।জুঁই ঝাপসা চোখে আনান আর আনশিকে দেখছে।আনানের চোখে মুখে আতঙ্ক ভয় ভেসে উঠেছে।অবুঝ আনশি নিষ্পাপ চাহনিতে মায়ের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।জুঁইয়ের দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে আসছে।আস্তে আস্তে জুঁইয়ের দৃষ্টিসীমা অন্ধকার হয়ে আসে।জুঁই চোখ বুজে ক্ষণিকের জন্য বা চিরকালের জন্য……
সমাপ্ত