#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ১৫
,
,
অপু ধীরেসুস্থে বৃদ্ধাকে যত্ন সহকারে খাওয়ায়।
একটা রিকশা ডেকে বৃদ্ধাকে তার বাড়িতে পৌছে দিতে বলে।
রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে বৃদ্ধার হাতেও কিছু টাকা গুঁজে দেয় অপু।
তার হাতে এখন বেশি টাকা নেই।
আরমানের খানের টাকায় সে পড়াশোনা করছে,খাচ্ছে, ঘুরছে।অপু নিতে চায়না,আরমান খান জোর করে অপুকে দেয়।
সেই টাকা অপু বাড়তি খরচ করেনা।সাথে করে বেশি নিয়ে ও ঘোরেনা।
এই মুহুর্তে হাতে যা টাকা ছিলো সবটুকুই অপু বৃদ্ধাকে তুলে দেয়।বৃদ্ধা যাওয়ার সময় অপুর মাথায় হাত বুলায়।
—-
অপু বাড়তে ঢুকতে না ঢুকতে রুজি বেগম দৌড়ে আসে।
তার পেছন পেছন আসে নয়না।
এসে অপুর সামনে দাড়িয়ে হাপায়।
যত যাই হোক,দুজনেরই তো বয়স হয়েছে।
এভাবে দৌড়াদৌড়ি ছুটাছুটি তারা কি করতে পারে?
অপু দরজার সামনে দাড়িয়েই দুজনকে দেখে।
বলে,
—কি হয়েছে খালা?
রুজি আর নয়না একে অপরের দিকে তাকায়।
দুজনার মুখ ভয়ার্ত দেখায়।
অপু কিছুটা শঙ্কিত হয়।
তার মুখের আদলও পরিবর্তন হতে শুরু করে।অজানা আশঙ্কায় তার বুক কাপে।
কিছুটা জোর দিয়ে আবার বলে,
—কথা বলছোনা কেনো তোমরা?কি হয়েছে?
রুজি আমতাআমতা করে বলে,
—না মানে বড় সাহেব….
অপু কথা শেষ হতে দেয়না,তার আগেই বলে,
—কি হয়েছে বাবার?বাবা ঠিক আছে তো?শরীর বেশি খারাপ হয়েছে?কোথায় এখন?কতোটা অসুস্থ?
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে রুজি বেগমের উত্তরের অপেক্ষা করেনা অপু।
ঝড়ের গতিতে আরমান খানের ঘরের দিকে এগোয়।
রুমের সামনে গিয়ে অপু থমকে দাড়ায়।
আরমান খানের পাশে নোমান বসে আছে।
এক হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে নোমানও তাকায় দরজার দিকে।
দুজনার চোখাচোখি হয়।
অপু যেমন ঝড়ের গতিতে এসেছিলো তেমনি আবার বেরিয়ে যায়।
নিজের রুমে ঢুকে বিছানায় ধপাস করে বসে অপু।
অতিরিক্ত উত্তেজনায় তার হাত পা কাপে।
নোমানকে দেখে তার মনে ভয় কাজ করে।
মনে মনে ভাবে,
কেন এসেছেন উনি এখানে?অপুকে মেনে নিতে যে নয় সেটা অপু জানে।তবে?
অপুকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে?নাকি এই সম্পর্কটা থেকে মুক্তি নিতে?
নাকি আরমান খানকে দেখতে?
হ্যা,হ্যা এটাই হতে পারে।
হয়তো তার বাবাকে দেখতেই এসেছে।
অপু হাফ ছাড়ে।
ওয়াড্রব থেকে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে।
গোসল সেরে বের হবে সে।
অপু ভাবে আজ আর ঘরের বাইরে সে বের হবেনা।
বলা তো যায়না নোমানের সামনে পরলে যদি অপুকে কিছু বলে বসে?যদি রাগারাগি করে?অপু এখনো এই বাড়িতে আছে বলে যদি বের করে দেয়?
অপু আর ভাবতে পারেনা।শাওয়ার অন করে দাড়িয়ে পরে।
মাথা ঠান্ডা করা দরকার তার।এতো এতো চিন্তা করলে কবে না সে পাগল হয়ে যায়।
গোসল সেরে মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় অপু।
রুজি আর নয়না খালাকে বলে রুমে খাবার পাঠানোর কথা ভাবে।বাইরের সব কাজ আজ ঘরে বসেই সারবে অপু।
রুমে ঢুকে সোজা চলে যায় বেলকনিতে।
টাওয়াল খুলে কিছুক্ষণ চুল ঝেরে রুমে ঢোকে অপু।
বিছানার ওপর চোখ পরতেই আতকে ওঠে। মাথা ঝিমঝিমিয়ে ওঠে তার।
নিশ্বাস আটকে আসে।
বিছানায় নোমান আধশোয়া হয়ে আছে।
অপুকে দেখে নোমান সোজা হয়ে বসে।
কি বলে কথা বলা শুরু করবে বুঝতে পারেনা।
কিছুক্ষণ চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা চুলকায়।
অপুর দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কড়া নজর দেয়।
সাধারন সাদা সুতির সেলোয়ার-কামিজেও যে কাউকে এতোটা স্নিগ্ধ দেখাতে পারে সেটা নোমান ভাবতেও পারেনা।
চুল থেকে টপটপ পানি পরার দৃশ্য দেখে নোমান আরও বিমোহিত হয়।
হার্টবিট দ্রত গতিতে বাড়ে,বুকের ভেতর তোলপাড় হয়।
নোমান হাত নিয়ে বুকের বামপাশে রাখে।
নিজের উপর নিজেই অবাক হয়।
হাজার হাজার সুন্দরী ললনাদের দেখেছে নোমান,খুব কাছ থেকে দেখেছে।
কিন্তু কই এমন তো হয়নি কোনদিন?
তবে আজ কেনো হচ্ছে?
এমন অনুভূতির সাথে নোমান পরিচিত নয়।
উঠে দাড়িয়ে অপুর দিকে তাকায় সে।
কাছে এগিয়ে আসে হেঁটে।
একেবারে সামনাসামনি এসে দাড়ায়।
অপু ততক্ষণে জমে গেছে ভয়ে।
নোমানের সম্পর্কে এখন তার মনে শুধু ভয় কাজ করে।
নোমানের চোখের দিকে তাকানোর সাহস হয়না অপুর।
মনে মনে কঠিন কিছু পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার কথা ভেবে চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে থাকে।
ভাবে এই বুঝি খাবে থাপ্পড়।
নোমান অপুর ভীতি চাহনি দেখে হাসে।
আবার অবাক হয়।সে হাসলো?এই মেয়েটার জন্য?
পরক্ষনেই অপুর মুখের দিকে তাকায়।
কেমন বাচ্চাদের মতো ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে সে।
ভালো মতো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে নোমান।
ঘন পাপড়িযুগল,গোলাপী কম্পিত ঠোঁট, বা গালে কিউট একটা তিল।
সবকিছু নোমানের কাছে অসাধারণ লাগে।
মনে হয় আগে কেন খেয়াল করেনি নোমান?আগে কেন বোঝেনি?তার ঘরে একটা পরীর বসবাস আছে।আগে তো দেখেনি?
আগে কেনো উপলব্ধি করেনি এ অনুভূতি? নাকি উপলব্ধি করতে চায়নি?
—-
অপু কিছুসময় থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।
নড়ার শক্তি পায়না।
কিন্তু সামনে নিরবতা দেখে চোখ পিটপিট করে তাকায়।
নোমানকে তার দিকে তীক্ষ্ণভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অপুর গলা শুকিয়ে আসে।
শুকনো ঢোক গেলে সে ভয়ে।
দোয়া কালমা পরে বুকে ফু দেয়।
হঠাৎ করেই একটা সাহসী কাজ করে ফেলে অপু।
নোমানে পাশ কাটিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যা সে।
নোমান হতভম্ব হয়।
কি ঘটেছে তা বোঝার চেষ্টা করে।
বুঝতেই রেগে ফেটে পরে।
কপালের রগ ফুলে ওঠে।
হাত মুষ্টিবদ্ধ করে।
নোমান খানকে ইগনোর করলো এই মেয়ে?নোমান খানকে?
একটু কি গুরুত্ব দিয়েছে কি দেয়নি তাতেই এতো তেজ দেখালো মেয়েটা?
নোমানের রাগী সত্বা আবার ফেরত আসে।
রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সে।
,
,
চলবে…..