বসন্ত এসে গেছে পর্ব ১৬

#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ১৬
,

,
অপু দৌড়ে আরমান খানের রুমে ঢোকে।
রুমে ঢুকে জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়।
হাঁপিয়ে গেছে সে।
আরমান খান বিছানায় শুয়ে ছিলেন।
অপুকে দেখে উঠে বসার চেষ্টা করেন।
অপু তা দেখে আরমান খানের কাছে এগিয়ে যায়।
উঠতে বাধা দিয়ে বলে,

—উঠছো কেনো বাবা?

আরমান খান সেকথার উত্তর দেন না।
অপুকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দেন,বলেন,

—নোমানের সাথে তোর দেখা হয়েছিলো মা?

অপু মাথা নিচু করে বলে,

—হ্যা বাবা।

—ও কি তোকে কিছু বলেছে?

অপু ভয়মাখা দৃষ্টি নিয়ে তাকায়।
মনের ভয়গুলো একসাথে উঁকি দিতে লাগে।
বলে,
—কি বলবে বাবা?কিছু বলার কথা?

—না না,সেরকম কিছুনা।মানে তোর সাথে কি খারাপ ব্যবহার করেছে?

অপু মাথা নাড়ায়।
সত্যি তার সাথে আজ খারাপ ব্যবহার করেনি নোমান।কিন্তু কেনো?তবে কি ভাল কিছু হবে?
অপু আবার নিজের মনকে বুঝ দেয় হয়তো নোমান কিছু বলে ওঠার সময় পায়নি।অপু তখন দৌড়ে চলে এলো নয়তো তখনই হয়তো রেগে বোম হয়ে চিৎকার করতো।

পাশের টেবিলে খাবার ঢাকা দেখে অপু শাসনের সুরে বলে,
—খাবার খাওনি কেনো বাবা?এতো অনিয়ম করলে হয়?
আমি কলেজে থাকলে রুজি খালারা তো দেখি তোমার যত্নই নেয়না।শুধু খাবার রেখে গেলেই হলো? খাবার খেয়েছে কিনা দেখবে না?আর তুমিও হয়েছো খুব, কেনো?নিজের যত্ন করতে এতো কার্পণ্য কেনো?
খাবার না খেলে তো আরও অসুস্থ হয়ে পরবে সেকথা বোঝোনা?আর কোনদিন ও যেনো এমন না হয়।

আরমান খান নিঃশব্দে হাসেন।মেয়েটা কেমন মায়েদের মতো শাসন করছে।মায়েরা যেমন ছোট বাচ্চাদের খাবার না খাওয়ার জন্য বকে ঠিক তেমনটি মনে হচ্ছে তার কাছে।

নোমান ততক্ষণে আরমান খানের রুমের দরজার সামনে এসে দাড়িয়েছে।
বাবার সাথে এমন ভাবে কথা বলা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নোমান।তারউপর বাবাও মেয়েটার কথা শুনে হাসছে?কিছু বলছে না?

আরমান খান নোমানকে খেয়াল করে।
বলে ওঠেন,

—ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো নোমান?এদিকে এসো।

অপু নোমানকে দেখে বসা থেকে উঠে দাড়ায়।রুম থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়,আরমান খান আটকান।বলেন,

—আজ আমাকে খাইয়ে দে মা।

অপু আরমান খানের কথা শুনে একবার নোমানের দিকে তাকায়।মুখের আদল দেখে বোঝার চেষ্টা করে,নোমান রেগে আছে নাকি?
আচ্ছা অপুর মতো মেয়ে যদি নোমান খানের বাবাকে নিজের হাতে খাওয়ায় তাহলে কি নোমান রেগে যাবে?তার কি প্রস্টিজে লাগবে?
যদিও এর আগে অনেকবার অপু আরমান খানকে খাইয়ে দিয়েছে কিন্তু নোমানের সামনে তো নয়।

অপু ইতস্তত করে।
ভয়ে ভয়ে একটু পর পর আড়চোখে নোমানের দিকে তাকায়।কিন্তু মুখের এক্সপ্রেশন দেখে কিছু বুঝতে পারেনা।
নোমান নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে,অপু আর আরমান খানের কর্মকান্ড দেখছে।

আরমান খান তাড়া দেন।

—কিরে মা আয়।

অপু আবার আরমান খানের পাশে বসে।টেবিল থেকে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে ধীরে সুস্থে আরমান খানের মুখের সামনে খাবার ধরে।
আরমান খানও তৃপ্তি করে খায়।
ভাবে,মেয়েটার হাতে জাদু আছে।
পরশপাথরের মতো।ছুয়ে দিলেই সোনা হয়ে যায়।
আরমান খান খেতে খেতে নোমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

—দাড়িয়ে আছো কেনো নোমান?এই যে এই চেয়ারটায় বসো।

নোমান এগিয়ে আসে।
অপুর পাশে চেয়ার টেনে বসে পরে।
কিছুটা কাছাকাছি বসায় অপুর শরীর থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রান নোমানের নাকে এসে লাগে।
নোমান বিমোহিত হয়।
ভাবে,
এটা কোন পারফিউম হতে পারে?এতোটা মিষ্টি ঘ্রান কোন পারফিউমে আছে?

অপু তাকে ইগনোর করেছিলো বলে যে রাগ মনে পুষে ঘুরছিলো নোমান তা হুট করেই গায়েব হয়ে যায়।
চেয়ার টেনে আরেকটু কাছ ঘেঁষে বসে সে।

অপু নোমানকে তার পাশে বসতে দেখে জড়োসড়ো হয়ে বসে।
ভিতরটা খুব জোরে জোরে ঢিপঢিপ করে।
অপুর মনে হয় এতো জোরে ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছে হয়তো সবাই শুনে ফেলবে।
হয়তো হার্টটা বুক চিঁড়ে বেরিয়ে আসবে।

,

,
—–

,

অপু রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়।
আজ সে ক্লাস করবেনা।পিহুর কাছ থেকে কিছু ইম্পরট্যান্ট নোটস নেবে।সেইজন্যই ভার্সিটি যাওয়া।
নয়তো অপু আজ ভার্সিটি যেতোনা।
কেননা আজ আরমান খানকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।
নোমান কাল বলে গেছে সে আজ তার বাবাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবে।
আর আরমান খানতো অপুকে ছাড়া যাবেনা তাই অপুকেও সাথে যেতে হবে।

,

অপু তাড়াহুড়ো করে হাঁটে।ভার্সিটির সামনে পিহুকে দাঁড়াতে বলেছে সে।ওখান থেকেই নোটস নিয়ে আবার বাড়ির পথে রওনা দেবে।
অপু হাটতে হাটতে চারিদিকে একবার ভাল মতো দেখে।
রিকশার র ও দেখা যাচ্ছে না আজ।
এই হচ্ছে মহা ঝামেলা!দরকারের সময় একটা রিকশাও পাওয়া যায়না আর যখন দরকার থাকে না তখন শতো শতো রিকশা লাইন দিয়ে যায়।

বিরক্তিতে অপুর মুখ তেঁতো হয়ে আসে।
পেছোনে হর্ন শুনে অপু পেছন ঘোরে।
একটা বাইক পেছন থেকে বিশ্রীভাবে জোরে জোরে হড়ন বাজাচ্ছে।
চালকের মাথায় হেলমেট থাকার কারনে অপু তার মুখটা দেখতে পাচ্ছে না।
অপু সেদিকে একবার দেখে আবার হাঁটা শুরু করে।
কিন্তু আবার হর্ন বাজে।
অপু তেড়ে আসে।
বলে,

—কি সমস্যা কি আপনার?অসভ্যের মতো হর্ন বাজাচ্ছেন কেনো?
মেয়ে দেখলেই ফাজলামো করতে মনে চায়।
পাবলিক ডেকে এমন ধোলাই দেবোনা।

বাইকে বসা লোকটা তাড়াতাড়ি হেলমেট খুলে ভয় পাওয়া ভঙ্গিতে বলে,

—ওরে বাবা,রুপা তো দেখি রনচন্ডি রুপ নিলে?আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম।

অপু রায়হানকে দেখে অবাক চোখে বলে,

—আপনি?

—হু আমি।

—আপনি কেনো পেছন থেকে এভাবে হর্ন বাজাচ্ছিলেন?

রায়হান বাইক থেকে নেমে দাড়ায়।হেলমেট খুলে বাইকের ওপর রেখে হাত দিয়ে চুল ঠিক করে।
বলে,

—দেখতে চেয়েছিলাম এভাবে বিরক্ত করলে তোমার কি প্রতিক্রিয়া হয়।

—তো কি দেখলেন?

রায়হান ফাজলামো করে ভয় পাওয়ার অভিনয় করে বলে,

—ও কথা আর বলোনা রুপা,ওতো ভয়ংকর কথা ভাবলেও ভয় পাই।আমি বাচ্চা মানুষ,ভয়ে যদি হিসু করে দেই তখন?

অপু শব্দ করে হেসে ফেলে।
রায়হানও হাসে।
বলে,

—ভার্সিটি যাচ্ছো রুপা?রিকশা তো নেই রাস্তায়।
কিছু মনে না করলে আমার বাইকে ওঠো না পৌঁছে দেই?

অপু ইতস্তত করে।
এভাবে একজনের বাইকে উঠতে তার মন সায় দেয়না।ভয় কাজ করে মনে।
কিন্তু রায়হানের মুখের দিকে তাকালেই ভয় দূরীভূত হয়।
এতো হাসি খুশি প্রানবন্ত মানুষকে এইটুকু বিশ্বাস করাই যায়।
অপু সাতপাঁচ না ভেবে বাইকে উঠে বসে।
দুরত্ব রেখে বসে।
রায়হানের চোখেমুখে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো খুশি ঝিলিক দেয়।
,

,

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here