#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ১৭
,
,
অপুর অসস্থি লাগছে নাকি ভয় লাগছে সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছেনা সে।
কেমন যেনো অদ্ভুত ফিলিং হচ্ছে তার।
আরমান খানকে ডক্টরের চেকাপ করানোর পর ডক্টর কিছু টেস্ট করতে বলেছেন।
নার্সদের সাথে আরমান খান গেছেন সব টেস্ট করতে।
চেম্বারের বাইরে অপু আর নোমান বসে আছে।
অপু কিছুটা শঙ্কিত হয়ে আছে।
কিছুক্ষণ উশখুশ করতে করতে সে এদিক ওদিক হেটে এসেছে।
আবার চেয়ারে এসে বসেছে।
মুলত সে নোমানের পাশে বসতে চাইছে না।
নোমানকে নিয়ে যে ভয় অপুর মনে দানা বেঁধেছে তা সহজে বের হবার নয়।
নোমান বেশকিছু সময় ধরে অপুর গতিবিধি লক্ষ করছে।
মেয়েটা যেন কেমন ছটফট করছে।
নোমানের পাশে বসতেই চাইছেনা।
বসলেও মাথা নিচু করে গুটিয়ে বসছে।
নোমানের ভাল লাগছেনা।
মেয়েটার সাথে তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে।
একটু আধটু না, অনেক কথা!
নোমান ইদানীং নিজের কাজে নিজেই অবাক হচ্ছে, দফায় দফায় অবাক হচ্ছে।
সে তো কখনো বাঁচাল ছিলোনা,খুব গম্ভীর মানুষ সে।দরকার ছাড়া একটা টু শব্দ ও করেনা।
মেপে মেপে কথা বলা যার অভ্যাস সে কিনা আজ কথা বলার জন্য মরিয়া হয়ে পরেছে?
ভাবতেই আরো একদফা অবাক হয় নোমান।
অপুর দিকে তাকিয়ে দেখে অপু খুব মনোযোগ দিয়ে মেঝেতে পা দিয়ে নখ খুটছে।মনে হচ্ছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। আশেপাশে কোন কিছুতেই তার কোন নজর নেই।
নোমান এবার অপুর ওপর বেশ বিরক্ত হলো।
মেয়েটা কেনো দেখছে না নোমানকে?কেন কিছু বলছেনা তাকে?
এতোদিন পর দেখা হয়েছে তবু তার কি কিছুই বলার নেই?যতো যাই হোক নোমান তো তার স্বামী নাকি?
নিজের ভাবনার মাঝেই নোমান চমকায়।
সে স্বামী? পাশে বসা মেয়েটা তার বউ?
সত্যি?
উশখুশ করতে করতে নোমান সতর্কতামূলক কাশি দেয়।
অপু চমকে নোমানের দিকে তাকায়।
নোমান বলে,
—আ,,মানে বলছিলাম যে,
কেমন আছো?
অপু কয়েকশো ভোল্টেজের ঝটকা খায়।
নোমান খান তাকে কেমন আছে জিজ্ঞেস করছে?নোমান খান?
কেন যেন অপুর বিশ্বাস হতে চায়না।মনে হয় সে স্বপ্ন দেখছে।
ডান হাতটা এগিয়ে জোরে এক চিমটি কাটে অপু।
বোঝার চেষ্টা করে এটা স্বপ্ন না সত্যি।
কিন্তু অপুর হাতে ব্যাথা লাগেনা।একটুও না।
নোমান আর্তনাদ করে ওঠে।
অপু হকচকিয়ে সেদিকে তাকায়।
নোমান নিজের বাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
—পাগল হয়ে গেছো নাকি?চিমটি কাটছো কেনো আমায়?
একটু লাই দিয়েছি আর ওমনি মাথায় চড়ে বসেছো না?ইডিয়ট!
কথাটা বলেই অন্য দিকে হাটা দেয় নোমান।
তার মাথা গরম হয়ে গেছে।
মাথা ঠান্ডা করতে হবে।
অপু নোমানের যাওয়ার পথে ছলছল নয়নে তাকিয়ে থাকে।
এরই মাঝে ফোন বেজে ওঠে অপুর।
অপু ছোখ মুছে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে।
অচেনা নাম্বার দেখে কল কেটে দেয়।
আবারও বেজে ওঠে ফোন।
অপু রিসিভ করে সালাম দেয়।
ওপাশ থেকে সালামের উত্তর দিয়ে পিহু বলে ওঠে,
—-অপুর বাচ্চা, আমার ফোন কাটলি কেন?
—আমি কি জানতাম নাকি এটা তোর কল,আমি তো ভেবেছি কে না কে।
এটা তোর নতুন নাম্বার?
—না।
—তাহলে কার নাম্বার?
—রাহুলের নতুন নাম্বার।
অপু উত্তেজিত হয়ে বলে,
—রাহুলের নাম্বার তোর কাছে কেনো?রাহুল ঠিক আছে তো?
পিহু অপুকে আস্বস্থ করে বলে,
—আরে কারও কিছু হয়নি।
—তাহলে?
—আমি আর রাহুল ডেটে এসেছি।
অপু চিৎকার করে বলে ওঠে,
—কিহহহ!
আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অনেকেই অপুর দিকে তাকিয়ে আছে।অপু তাদের দিকে তাকিয়ে ভ্যাবলা মার্কা হাসি দেয়।
ফোন কানের কাছে এনে বলে,
—কিভাবে কি হলো?কখন হলো?কিকরে সম্ভব এটা?তোরা তো দুজন দজনার জাত শত্রু।
—এতো প্রশ্নের উত্তর কেমন করে দেবো বলতো?ভার্সিটি আসিস কাল জানাবো।আর হ্যা একটা কথা,আমি হ্যা বলার সাথে সাথেই কিন্তু তোকে জানিয়েছি বুঝলি?
অপু হেসে ফেললো।
একটু আগের খারাপ লাগা মনটা তার এক নিমিষে ভাল হয়ে গেলো।
বললো,
—তো উনি কোথায় এখন?ওটার কাছে ফোন দে,কথা টথা বলি।
পিহু হাসতে হাসতে বললো,
—ও কাল কথা বলবে তোর সাথে, ওর নাকি এখন লজ্জা লাগছে।
অপু শব্দ করে হাসলো।
নোমান ততক্ষণে আবার আগের জায়গা ফিরে এসেছে।
অপুর হাসি মুখের দিকে কিছুক্ষণ মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
রিনিঝিনি হাসির শব্দগুলো বারংবার কানে বাজতে লাগলো।
অপু ফোনে বললো,
—আচ্ছা রাখি এখন।কাল দেখা হবে।
নোমান ভ্রু কুঁচকালো। কার সাথে কাল দেখা হবে বললো অপু?
কার সাথে কথা বলার সময় এভাবে হেসে কুটিকুটি হলো?
কার জন্য মুখের কোনে এমন হাসি লেগে আছে?
নোমানের বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠলো।
কেমন যেনো একটা জেলাসি জেলাসি ফিল হচ্ছে তার।
কিন্তু কেনো?
নোমান জানে না,জানতে চায়ও না।
শুধু জানে বুকের এই চিনচিন ব্যথাটার উপশম দরকার।
,
,
চলবে…..