#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ২৮
,
,
—আপনার কফি।
লজ্জামাখা নতোমুখে রুমে ঢুকে নোমানের সামনে কফির কাপ এগিয়ে ধরে অপু।
হাত তার ঈষৎ কাপে।
লজ্জায় মুখ আরও নতো হয়।
নোমানের চোখে চোখ রাখার মতো দুঃসাহস হয়না তার।
অপু জানে,এমন দুঃসাহস দেখাতে গেলে লজ্জায় তার জিবন সমাপ্তি ঘটবে।
নোমান কাপ হাতে নেয়না।অনেকক্ষণ কাপ ধরে রাখার পরও ওপাশ নিরব দেখে অপু চোখ তোলে।দেখে নোমান গম্ভীর মুখে একধ্যানে তাকিয়ে আছে।
নোমানের কঠোর দৃষ্টি দেখে মনে ভয় ঢোকে অপুর।
অজানা ভয়ে তার শরীর হিম হয়।
কাল রাতের ঘটনায় নোমান রেগে যায়নি তো?সে কি সজ্ঞ্যানে ছিলোনা?
অপু বিরবির করে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে।
নোমান গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
—আমাকে মিথ্যা কেনো বলেছো অপরুপা?
অপু অবাক হয়।সে মিথ্যা বলেছে?কবে?
—মিথ্যা বলেছি?
নোমান হাসে।
তাচ্ছিল্য মাখা হাসি হাসে।
—বলোনি?
অপু মাথা নাড়ে।
–কই নাতো।তাছাড়া আমি কখনো মিথ্যা বলিনা।
—এখন কি অভিনয় করছো?
অপু অবাকের ওপর অবাক হয়।
নোমান কি বলছে সব তার মাথার উপর দিয়ে যায়।ফ্যালফ্যাল নয়নে নোমানের কথার অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে।
নোমান দাঁতে দাঁত লাগিয়ে বলে,
—কথা বলো,চুপ করে থাকবে না একদম।
নোমানের কথা বলার ভঙ্গিমায় অপুর ভয় লাগে।
আবার আগের রুপের নোমান যেন তার সামনে আবির্ভূত হয়।
কিছুদিন ধরে নোমানের যে রুপ দেখছে তা হুট করে যেন অচেনা লাগে অপুর কাছে।
অপু নোমানের কাছে এগিয়ে বিছানার পাশে বসে।
কফির কাপ সেন্টার টেবিলে রেখে নোমানের কাধে হাত দেয়।বলে,
—এমন করছেন কেনো আপনি?কি হয়েছে খুলে বলুন আমায়।
নোমান হাত ঝটকা দিয়ে ফেলে দেয়।
সেন্টার টেবিলে সজোরে লাথি মারে।
টেবিলের ওপরে থাকা কফির কাপ,ওানির জগ সব ঝনঝন করে নিচে পরে ভেঙে যায়।
অপু সরে দাড়ায়।
নোমায় অপুর দুকাধে হাত রেখে চিৎকার করে,
—কেনো মিথ্যা বলেছিলি আমায় বল?কেনো বলেছিলি?
কেনো বলেছিলি রায়হানকে তুই পছন্দ করিস না।
অপুর পুরো বিষয়টা বোধগম্য হয়।
নোমানকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
—আপনি শান্ত হোন প্লিজ। শান্ত হয়ে বসুন, আমি সবটা বলছি আপনাকে।
নোমান শান্ত হয়না।আরও ক্ষীপ্ত হয়।
—কি বলবি আমাকে? কি বলার আছে?
আরও মিথ্যা বলবি?গুছিয়ে মিথ্যা বলে আমাকে ফাঁসাবি?
—-আমি ফাঁসাবো আপনাকে?
–ফাঁসাবি বলছি কেনো,ফাঁসিয়েছিস ই তো।
আমার বাবাকে পটিয়ে আমার ঘারে ঝুলেছিস,আবার রুপ দেখিয়ে এখন আমাকে ফাঁসিয়েছিস।
তাহলে আবার রায়হানকে কেনো পটাচ্ছিস বল?
অপু থমকে যায়।
কথাগুলোর উত্তর তার জানা থাকলেও দিতে পারেনা।
গলা থেকে কথা বেরোয়না।
কেমন যেনো শুন্য শুন্য লাগে।
নোমান অপুকে ভালবাসাছে ভেবে যে ধারনা অপুর ছিলো তা এক নিমিষে ঝনঝনিয়ে ভাঙে।ভাবে নোমানের জিবনে সে কি শুধুই এক মোহ ছিলো?
তবুও আরেকবার নোমানের ভুল ভাঙাতে চায়।রায়হানকে নিয়ে নোমানের মনে যে মিথ্যা সন্দেহ দানা বেঁধেছে তা দুর করতে চায়।
বলে,
—আমার কথাটা একবার শুনবেন প্লিজ।
নোমান অপুর কথার গুরুত্ব দেয়না।
রাগী দৃষ্টি ফেলে হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়।
অপু ধপ করে বসে পরে।
পুরো পৃথিবীটা তার ঘুরে ওঠে।
সকালের সর্নালী সপ্নগুলোর কথা ভেবে তার হাউমাউ করে কান্না পায়।
জিবনটাকে বিষাক্ত মনে হয়।
,
,
চলবে…….