“এখনো_ভালোবাসি”
|ইয়াসমিন তানিয়া|
|পর্ব-৭|
আমি তোমার সাথে থাকতে চাই না আয়নদা।কেনো আমাকে সম্পর্ক নামক এই মিথ্যা বেড়াজালে আটকে রেখেছো।কি আর চাই তোমার। এবার তো অন্তত আমাকে মুক্তি দেও।তোমার ছায়াও এখন অসহ্য লাগে আমার।এটা কি তুমি বুঝো না।
–প্রিয়ুওওওওও।আয়ন চিৎকার করে।
“চিৎকার করে লাভ নেই আয়নদা।আমি সত্য বলছি।জোড় করে তুমি আমাকে কতোদিন এভাবে আটকে রাখবে।হাজার চেস্টা করলেও আমার মনটা পাবে না।কারন মনটাতো অন্য কারো হয়ে গিয়েছে কতো আগে। আর তুমি সেটা খুব ভালো করেই জানো।আমি এই জীবনে শুধু একজনকেই ভালোবেসেছি,আর তাকেই ভালোবেসে যাবো।তুমি আমাকে কখনোই পাবে না আয়নদা।
কখনো না!”
–এবার আর আয়ন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না,কষে একটা থাপ্পড় মারলো প্রিয়ুকে।
“আর প্রিয়ু গিয়ে ছিটকে পড়লো বিছানায়।আয়নের রাগ এখনো কমে নি।তাই প্রিয়ুর চুলের মুঠো ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে-
-দাঁতেদাঁত চেপে কথাগুলো বলে, তুই চাস বা না চাস, থাকতে তোকে আমার সাথেই হবে।আমার থেকে মুক্তি চাইলে আগে আমাকে মেরে তার পর চলে যেতে পারবি।যেদিন নিজ হাতে আমাকে মারতে পারবি সেদিন আমি তোকে মুক্ত করে দিবো চিরতরে।
এই কথা বলেই আয়ন প্রিয়ুকে ছেড়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।
“আর প্রিয়ু ব্যাচারী মাটিতে বসে পড়লো,নিজের দুহাটু ভাজ করে মাথাটা রেখে হাউ মাউ করে কান্না করতে লাগলো।কেনো?
কেনো এমন করলে আমার সাথে রোহান।
কেনো আমাকে ছেড়ে গেলে।আমিতো তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম।তাও আবার মন থেকে, তাহলে কেনো চলে গেলে।তুমিতো আমাকে ছাড়া ভালোই আছো।আমি কেনো পারছি না ভালো থাকতে।তোমার স্মৃতি গুলো আমাকে ভালো থাকতে দেয়না রোহান।আমাকে ভীষন ভাবে পুড়ায়।আমার কি দোষ ছিলো।আমি যে আর পারছি না।
না পারছি তোমাকে ভুলতে, না পারছি আয়নদাকে আপন করে নিতে।আমি কি করবো।
কথাগুলো বলে প্রিয়ু আবার কান্নায় ভেঙ্গে পরে।”
_____________
কিছুক্ষন আগের কথা_
“প্রিয়ুকে তার শ্বাশুরী ডেকে আজকের রান্নার দায়িত্ব দিয়ে দিলো।
প্রিয়ু জানতো এমনি হবে।শ্বাশুরী বলে কথা,প্রিয়ুকে জব্দ করার জন্য যে ভালো মানুষের মুখশটা পরে আছে এখন, তা খুব ভালো করেই জানা প্রিয়ুর।
-তাই ও কিছু না বলে চুপচাপ রান্না ঘরে চলে গেলো।কারণ শুধু শুধু শ্বাশুরীর সাথে ভেজাল করে লাভ নেই।এই মহিলা এমনেই ডেন্জেরেস।
রান্না জানে বলে প্রিয়ুর রান্না করতে তেমন অসুবিধে হলো না।সাথে নাদিয়া খালাও অবশ্য সাহায্য করেছে।”
–প্রিয়ুর রান্না ঘরের সব কাজ শেষ করে, শ্বাশুরীকে বলার জন্য যেই না ড্রয়িংরুম এর দিকে পা বাড়ালো।টিভিতে কাউকে দেখে চমকে গেলো।
এতো রোহান!
“জনপ্রিয় গায়ক রোহান।যে খুব অল্প সময় নিজের গানের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করেছে।তাকেই টিভিতে দেখতে পেলো প্রিয়ু।
-নতুন গায়কদের মধ্যে জনপ্রিয়তার তালিকায়
রোহান এর নামটিও আছে।তাই আজ টিভিতে রোহানের একটা ইনটারভিউ চলছে।আর সেখানে রোহান তার অনুপ্রেরণার জন্য একজন মেয়েকে ধন্যবাদ দিয়েছে।মেয়েটি আর কেউ না ওরি ফ্রিউন্সে নোরিন।
প্রিয়ুর চোখদিয়ে কেনো জানি জল পড়ছে।কিন্তু কেনো।এতোদিন পর চেনা মুখটি দেখার কারনে নাকি প্রিয় মানুষটির মুখে অন্যকারো নাম শুনার কারনে।প্রিয়ুর জানা নেই।
তবে প্রিয়ুতো কাঁদছে না।তাহলে!
“যে মানুষটিকে প্রিয়ু এই দুটো বছর হন্ন হয়ে খুঁজেছে,সে মানুষটি এখন অন্য কারো।”
–প্রিয়ু কিছু না বলেই উপরে নিজের রুমে চলে গেলো।ক্লান্ত লাগছে শরীররটা কেনো জানি।তাই চুপচাপ বিছানায় শুয়ে মনে করতে লাগলো,
রোহানের সাথে প্রথম দেখা যেদিন হয়েছিলো প্রিয়ুর।
“ঐ সময় আয়নকে বিজনেস এর কাজে কয়েক মাসের জন্য ইতালিতে যেতে হয়েছিলো।তাই প্রিয়ুও নিজের স্বাধীন মতো চলতে থাকে।আয়ন না থাকলে প্রিয়ুকে আটকে রাখার সাহস আছে কার।
কলেজ,ফ্রেন্ডসদের সাথে আড্ডা এসবে প্রিয়ুর ভালোই দিন যাচ্ছিলো।”
–হঠাৎ একদিন রাতের বেলা প্রিয়ু মাত্র ডিনার শেষ করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো আর তখনি কারো গিটারের টুনটুন শব্দের সাথে গানও ভেসে আসলো কানে।
কৌতুহল বসত প্রিয়ু শব্দের উৎস খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে যায়।কিন্তু ছাদে কাউকে দেখতে না পেয়ে চলে আসতে নিলে আবার কানে সেই সুর ভেসে আসে।
কোনও ছেলের গলা।তবে খুব ধারুন আর ভালো রেন্জ্ঞ এবং লাউড আছে ভয়েজে। কিন্তু কে?
প্রিয়ু চারপাশে খু্ঁজতে গিয়ে পাশের ছাদে,একজনকে দেখতে পেলো।অন্ধকারে চাঁদের আবছা আলোয় প্রিয়ু ছেলেটির মুখ দেখতে পেলো না সেদিন।
“আর ছেলেটিও প্রিয়ুকে দেখতে পায়নি।কারন ছেলেটি প্রিয়ুর দিকে পিঠ করে বসে ছিলো।”
–সেদিন ছেলেটির গানে প্রিয়ু হারিয়ে গিয়েছিলো কোথাও।এতো মিস্টি কন্ঠ মনে হয় না এর আগে প্রিয়ু কোথায় শুনেছে।কেমন ঘোড় লাগা কন্ঠ তার।
“কিন্তু ছেলেটির গান থেমে গেলো তার মোবাইল বেজে উঠায়।”
–আর প্রিয়ুও সম্বিত ফিরে পেলো।প্রিয়ু কিছু বুঝে উঠার আগেই ছেলেটি গিটার হাতে নিয়ে ছাদ থেকে চলে গেলো।
“প্রিয়ুও সেদিনের মতো নিজের রুমে এসে ভাবতে লাগলো,কে এই ছেলে।আগে কখনও এই এলাকায় দেখেছি বলে মনে হয়না।আর কি মিস্টি তার গানের গলা।শুনলেই কেমন হারিয়ে যেতে মন চায়।
সেদিনের পর থেকে প্রতিদিন ছেলেটির গান শুনতে প্রিয়ু চুপিচুপি ছাদে যেতো।আর আড়ালে দাঁড়িয়ে গান শুনে মুগ্ধ হয়ে চোখ বন্ধ করে গানের প্রতিটি কলি অনুভোব করতো।এভাবে বেশ চলছিলো।”
–তবে একদিন ছাদে এসে প্রিয়ু কিছুটা অবাক হলো।কারন আজ ছেলেটি আসেনি গান গাইতে।নিরাশ হয়ে প্রিয়ু চলে যেতে নিলে,কারো ডাকে প্রিয়ু থমকে দাঁড়ায়।
পিছনে ঘুড়েই প্রিয়ু কিছুটা চমকে যায়।
কারন ওর সামনে,এমনকি ওর বাসার ছাদেই দাঁড়িয়ে আছে ওই ছেলেটি।
“ছেলেটির মাঝে ক্রাশ খাওয়ার মতো তেমন কিছু না থাকলেও প্রিয়ু ক্রাশ না খেয়ে পারলো না।ছিমছাম বডি,কিন্তু ঠোঁটে কোনে লেগে থাকা হাসিটা তার সুরের মতোই মিস্টি।শ্যামলা মুখখানিতে হালকা ছাপ দাঁড়িতে ছেলেটিকে বেশ মানিয়েছে।প্রিয়ুর কাছে ছেলেটিকে কেনো জানি চকলেট বয় মনে হলো।কিউট টাইপের।”
–প্রিয়ুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে,ছেলেটি প্রিয়ুর মুখের কাছে এসে তুড়ি বাজালে প্রিয়ু সম্বিত ফিরে পায়।আর নিজের এমন বেকুবের মতো কাজ কর্মের জন্য নিজেই লজ্জিত হয়।
উফ! প্রিয়ু এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে,ছেলেটি মনে মনে কি ভাববে তোর সম্পর্কে।প্রিয়ু নিজেকেই প্রশ্ন করতে থাকে।
আর তখনি ছেলেটির প্রশ্নে আবার প্রিয়ু সামনে তাকালো।
“আজ গান শুনবে না।”(ছেলেটি)
–আপনি জানেন কি করে আমি আপনার গান শুনতে আসি।
“ছেলেটি চোখের সামনে আসা চুলগুলো আঙ্গুল দিয়ে আঁচড়িয়ে সরিয়ে দিলো।এর পর মুচকি হেসে,তুমি চুপি চুপি আসলে কি হবে।তোমার হাতের ওই চুড়ি দুটির শব্দ কিন্তু আমাকে প্রতিনিয়ত জানান দিতো তোমার আসার কথা।”
–প্রিয়ুও আবারও নিজের বোকামির জন্য লজ্জা পেলো।আসলেই তো,এটা তো কখনো খেয়ালি করিনি আমি।
” ছেলেটিই ঠোঁটের কোনে একটু দুষ্ট হাসি এনে আবার বলা শুরু করলো-এতো লজ্জা পেলে গলে যাবেতো,তখন আবার তোমাকে কঠিন করতে বরফ লাগবে।আমি কিন্তু বরফ না,তাই তোমাকে জমাতেও পারবো না।
–প্রিয়ুর এখন একটু রাগ হলো,একতো একজন অপরিচিত মেয়েকে প্রথম দেখায় তুমি বলে সমন্ধ করছে। তার উপর ইচ্ছে করে আজগুবি কথা বলে লজ্জায় ফেলার চেস্টা করছে।এটা কেমন আচরণ।
“কি হলো কি চিন্তা করছো।নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে।বাই দা ওয়ে, আমি রোহান।”
–প্রিয়ু একটু রেগে, আমি কি জানতে চেয়েছি আপনি কে।আর আমার কি কোনও কাজ নেই আপনাকে নিয়ে চিন্তা করবো। যত্তোসব!
প্রিয়ু চলে যেতে নিলে,রোহান প্রিয়ুর নাম ধরে ডাক দেয়।
“প্রিয়ু তখনি থমকে দাঁড়ায়,কি হলো এটা।এই ব্যাটা আমার নাম জানলো কি করে।প্রিয়ু তড়িৎগতিতে রোহানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,আপনি আমার নাম জানলেন কি করে।তার মানে আমাকে ফোলও করছিলেন আপনি।
কি হলো এখন চুপ কেনো,জবাব দিন।”
–রোহান এবার যা বললো,প্রিয়ু মনে হয় ৪২০ ভোল্টেজ ঝটকা খেলো।
“ওকে তোমার সব কথার জবাব পাবে,তার আগে আমাকে তুমি -আই লাভ ইউ বলো।”(রোহান)
–কিইই?
“কি না,আই লাভ ইউ বলো।”(রোহান)
–প্রিয়ু একদম উত্তেজিত হয়,এই আপনার মাথা ঠিক আছে তো।কোন পাগলাগারদ থেকে উঠে এসেছেন।ঠিকানাটা বলেন,আমি আপনার টিকিট কেটে দিই সেখানকার এখনি।
“এই মেয়ে আমাকে দেখে কি তোমার পাগল মনে হচ্ছে।”
–পাগলি তো!পাগল না হলে একটা অচেনা মেয়েকে প্রথম দেখাই কেউ আই লাভ ইউ বলতে বলে।
“চুপ!রোহান একটু রেগে।তুমি হয়তো আমাকে প্রথম দেখছো কিন্তু আমিতো তোমাকে অনেক আগ থেকেই চিনিই।আর তোমার সম্পর্কে অনেক কিছু জানিও।”
–ম মমানে।(প্রিয়ু)
“এতো মানের উত্তর দিতে পারবো না,আর তোমার যদি খুব বেশি জানার ইচ্ছা হয় তাহলে আগে আই লাভ ইউ বলতে হবে।
এছাড়া তুমি আমার গানের প্রেমে পড়ে গিয়েছো।তা আমি জানি।তাহলে আমার সাথে প্রেম করতে দোষ কি।”
–প্রিয়ুর একটু কাছে এসে রোহান,আমার সাথে প্রেম করো,তাহলে দুজনে জ্যোৎস্না রাতে খোলা আকাশের নিচে বসে গান গাইবো আর জ্যোৎস্না বিলাস করবো।কি বলো।
“প্রিয়ু এতোক্ষন ধরে রোহানের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে ছিলো।অনেকগুলো কথা শুনিয়ে দিতে মন চাইলেও কেনো জানি পারলো না।এক অদ্ভুত ফিলিং কাজ করতে লাগলো প্রিয়ুর মনে রোহান কাছে আসায়।এই ফিলিংসটার সাথে কোনও পূর্ব পরিচয় নেই প্রিয়ুর। একদম অচেনা,ঠিক এই ছেলেটার মতো।
হঠাৎপ্রিয়ুর মনে হলে নিচে দাঁড়িয়ে কেউ প্রিয়ুকে ডাকছে।প্রিয়ু আরভিনের গলা শুনে দ্রুতো ছাদ থেকে নেমে গেলো।
আর রোহানও একটু মুচকি হেসে লাফ দিয়ে পাশের ছাদে চলে গেলো।পাশাপাশি ছাদ বলে সমস্যা হয়নি।”
–তারপর থেকে রোহানের সাথে প্রিয়ুর প্রায়ই দেখা হতো,ঝগড়াও হতো দুজনের মাঝে।
__________
অতিত থেকে ফিরে এলো প্রিয়ু আবার।আর ফিরেই আয়নকে সামনে দেখে একদম ভরকে গেলো।কারন রোহানের এমন হঠাৎ করে চলে যাওয়ার পিছে আয়নের নিশ্চয়ই কোনও হাত আছে প্রিয়ু এটাই মনে করে।আর রাগের মাথাই প্রিয়ু আয়নকে যা মুখে আসে বলে ফেলে।
আয়নও প্রিয়ুর মুখে অন্যকারো নাম শুনে প্রচণ্ড রেগে যায়,আর রাগের মাথাই প্রিয়ুকে থাপ্পড় মারে।
–আজ প্রিয় এই বাড়ীতে প্রথম রান্না করায়,মায়া আয়নকে ফোন করে দুপুরে লাঞ্চ বাসায় করতে বললো।আয়ন বাসায় এসেই প্রিয়ুকে খুঁজতে লাগলো।কোথাও না পেয়ে রুমে আসে চেক করতে।আর এসে দেখে প্রিয়ু শুয়ে রয়েছে,কিন্তু ওর দুচোখের কোনা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।
হঠাৎ আবার প্রিয়ুর কি হয়েছে তা জানতে প্রিয়ুর কাছে গেলেই প্রিয়ু এমন আচরণ করে ফেলে।
চলবে…..।