#তোমারই_আছি_আমি
পর্ব-০৭
#SaraMehjabin
আকাশদের বাড়ি খান প্যালেসের সবাই টানটান উত্তেজনা নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছে। সবার মধ্যে চূড়ান্ত টেনশন কাজ করছে। কারণ আকাশের বাবা ঠিক এই সময়েই বাড়ির সবাইকে ড্রয়িংরুমে থাকতে বলেছিলেন। বিশেষ করে বলেছেন আকাশ যেন থাকে। তিনি আকাশের বিষয়ে একটা জরুরি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সবাইকে সেটা জানাবেন।
এবার আকাশদের পরিবারের সবার পরিচয় সম্পর্কে আসি। আকাশের বাবা খান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ-এর একমাত্র ওনার বেবিন খান; দেশের অন্যতম টপ বিজনেস পারসন। সফল ব্যবসায়ীর পাশাপাশি একজন সফল রাজনীতিবিদ-ও। শহরের বর্তমান এম. পি। উনার স্ত্রী মনীরা খান। উনার ছোট ভাই সাঈদ খান। তিনি আলাদাভাবে কিছু করেন না। বড়ভাইকে ব্যবসা আর রাজনীতি দুই কাজে সাহায্য করেন। এককথায় বড়ভাইয়ের ডানহাত-বামহাত সব-ই সাঈদ খান। সাঈদের স্ত্রী কাবেরী। বেবিন খানের দূই ছেলেমেয়ে আকাশ মাইশা। সাঈদ খানের একটাই মেয়ে; অদ্বিতী। বোন দুইটা আকাশের দুই চোখের মনি। অদ্বিতী আর মাইশা দুইজনেই আকাশের কাছে সমান আদরের। এছাড়া এই বাড়ির হেড অব দ্য ফ্যামিলি হচ্ছেন নূরুন্নাহার খান; আকাশের দাদু। বর্তমানে তিনি বাড়িতে নেই। তার শরীর খারাপ বলে ছেলেরা চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক পাঠিয়েছেন। আগামীকাল তাকে আনতে ব্যাংকক যাবেন সাঈদ।
আকাশ: উফ! ড্যাডের জন্য আর কতক্ষন ওয়েট করব?? দুইদিন পর ভার্সিটিতে ভি.পি ইলেকশন। আমি অনেক বিজি। আম্মু আমি আসছি।
“দাঁড়াও আকাশ। আমার কথাটা তোমার ইলেকশনের চেয়ে হাজারগুনে বেশি জরুরি। সো যতক্ষণ আমি বলব ততক্ষন-ই তুমি ওয়েট করবে। অনেক বোঝাপড়া তোমার সঙ্গে আমার। সেগুলো মেটানো জরুরি। নাউ দিস মোমেন্ট”
গম্ভীর কন্ঠে উক্ত বাক্যগুলো উচ্চারণ করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসতে থাকেন বেবিন খান। তাকে দেখেই বাড়ির সবাই ভয়ে কুকড়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়। এই বাড়ির সবাই বেবিন খানকে বাঘের মতো ভয় করে। তিনি সবসময় নিজের সিদ্ধান্ত সবার ওপর চাপিয়ে দেন তাও কারো প্রতিবাদ করার সাহস নেই।
বেবিন খান যেই মুহূর্তে তার নির্দিষ্ট বসার জায়গায় বসবেন তখনই মেধা হাজির হয়।
মেধা: হ্যালো এভরিওয়ান!
মনীরা: উফ,,,এই মেয়েটা কোন কারনে এইখানে এসেছে? আমাদের ফ্যামিলির আলোচনায় ও আসবে কেন? গা’টা জ্বলে যায় ওকে দেখলে!
অদ্বিতী: আমারো।
একজন বয়স্ক কাজের মহিলা টেবিলে ব্রেকফাস্ট সার্ভ করছিল। মেধা তাকে ডাকল,,হেই ইউ,, আসো এইদিকে।
মহিলাটির দিকে মেধা দুই পা এগিয়ে দিল,,, জুতাটা খুলে দাও।
আকাশ: মেধা,,হাউ ডেয়ার ইউ! তোমার এত সাহস কিভাবে হয় আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের বাড়ির মেম্বারকে অসম্মান করার। উনি তোমার মায়ের বয়সী। তাকে তুমি পায়ের জুতা খুলতে বলছ! লজ্জা করে না তোমার?
অদ্বিতী: করবে কিভাবে? লজ্জা থাকলে না লজ্জা করবে। ওর তো লজ্জাই নাই। খালা তুমি সরে আসো। ওর মতো মেয়ের জুতা খোলা তোমার কাজ না।
মেধা: ডিসগাস্টিং। একটা সামান্য সার্ভেন্টের জন্য আমাকে কথা শোনাল আকাশ!!
মেধার এ্যসিস্টেন্ট: ডোন্ট ওরি ম্যাম। আপনার জুতা খুলে দিচ্ছি।
মেধা নিজের কোন কাজ-ই করতে পারে না। এজন্য ওর সঙ্গে চব্বিশ ঘন্টা একজন এ্যসিস্টেন্ট থাকে। সে ওর সব কাজ করে দেয়।
মেধা কাউকে কেয়ার না করে সোজা আকাশের পাশে বসল। আকাশ কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ করে সরে যায়,,,মেধা ওর জামা টেনে ধরে।
মনীরা: দুনিয়াতে বেশরম দেখছি এই মেয়ার মতো বেশরম একটাও দেখি নাই। আমার-ই চোখের সামনে আমার-ই ছেলের সাথে ঢলাঢলি করে। মনডায় কয় একটা লাথি দিয়া নেটওয়ার্কের বাইরে ট্রান্সফার কইরা দেই।
অদ্বিতী: ওয়াও বড়মা তোমার ডায়লগটা জোশ ছিল!
কাভেরী মেধাকে দেখে আহ্লাদে গদগদ হয়ে গেলেন।
কাভেরী(মেধার গাল ধরে): ও মা ম্যাধা তোমারে যে কি সুন্দর লাগছে কি সুন্দর লাগছে কি বলব। আকাশ কি পারবে আমিই তো চোখ ফেরাতে পারছি না। একেবারে রাজকুমারীর মতো লাগছে তোমাকে। ও ম্যাধা, আমাকে তোমার জামাগুলার মতো কয়টা ছোট ছোট জামা কিনে দিবা? আমার মেয়েটা পুরাই ক্ষ্যাত। নিজেও ছোট ড্রেস পড়ে না, আমাকেও পড়তে দেয় না।
মেধা: ওকে আন্টি আমি কিনে দিব। দাঁড়াও তোমার জন্য গিফ্ট আছে। জেসমিন, আন্টিকে গিফ্টটা দাও।
দেখা গেল মেধা কাবেরীকে ম্যাকের একসেট মেকাপ কিটস গিফট করেছে। কাবেরী তো গিফট পেয়ে পুরো পাগল-ই হয়েছে। মেধাকে জড়িয়ে ধরে যে চুমু শুরু করেছে থামছেই না।
এই দৃশ্য দেখে অদ্বিতী আর মনীরা হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। যা দেখে কাবেরীর মাথা গরম হয়ে গেল।
কাবেরী: হাসছ কেন তোমরা?
অদ্বিতী: আম্মা তোমার মাথায় বুদ্ধিজ্ঞান কবে হবে একটু বলবা? এইসব মেকাপ কিটস ইনটেক থাকে। ও তোমাকে ওর ইউস করা পুরাতন প্রোডাক্ট গিফট দিয়েছে। হা হা হা।
কাবেরী: চুপ শয়তান ছেরি,,,ম্যাধা তো দিয়েছে। তোর বাপে তাও দেয় না। এই যে দেশে-বিদেশে কত জায়গায় যায় বৌটার জন্য কোনদিন এক টুকরা লিপস্টিক-ও আনে না।
সাঈদ: তোমার এই বুড়া বয়সে এত মেকাপ দেওয়ার শখ কেন?
কাবেরী: কিইইই আমি বুড়ি! তোমার এত বড় সাহস তুমি আমাকে বুড়ি বলো?? অদ্বিতী দ্যাখ তোর বাপ আমাকে বুড়ি বলল।
বেবিন: ওফ জাস্ট সাট আপ। আমি একটা জরুরি কথার জন্য ডেকেছি আর তোমাদের কোন সিরিয়াসনেস নেই!! সব সার্কাস চালু করে দিয়েছে! আকাশ শোনো,,,তোমার সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে। কথাটা বাড়ির সবার সামনে বলতে চাই।
আকাশ: হ্যা ড্যাড। দ্রুত বলো। আমার টাইম কম।
বেবিন: আমি আর মেধার বাবা এবার তোমার আর মেধার বিয়েটা সেরে ফেলতে চাচ্ছি। মা ব্যাংকক থেকে ফিরলে সেদিনই তোমার আর মেধার এ্যানগেজমেন্ট হবে। বিয়েটা হলেই আমার কোম্পানির সাথে আশরাফের কোম্পানির বিজনেস ডিলটা ফাইনাল করা হবে।
আকাশ: বাট ড্যাড..
বেবিন: গত দুইবছর ধরে তুমি এই অজুহাত সেই অজুহাত দিয়ে বিয়েটা পিছিয়ে আসছ। আর তোমার কোন কথাই শুনব না। মেধার সঙ্গে তোমার বিয়ে হচ্ছে-ইট’স ফাইনাল।
আকাশ: স্যরি ড্যাড। মেধাকে আমি বিয়ে করতে পারব না।
মনীরা(মনে মনে): আমি জানতাম আমার সোনার টুকরা ছেলে জীবনেও ঐ কুটনি মেয়েকে বিয়ে করবে না।
বাড়ির সবাই আকাশের কথার কোন মানে না বুঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। প্রত্যেকের চোখেমুখে কৌতুহল।
আর মেধা, সে তো রেগেমেগে একাকার।
আকাশ: আরে তোমরা সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছ কেন? ঠিকই তো বলেছি। আমি নিজেই বেকার,,, ড্যাডের পয়সায় চলি। বিয়ে করে বৌকে খাওয়াব কি! ড্যাড এইজন্যই আমি বিয়েটা পিছাচ্ছি। আমি আগে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। যাতে মেধার দায়িত্ব নিতে পারি। আমি চাই না মেধা তোমার ওপর নির্ভর করে আমার বৌ হোক। বিয়ে করে বৌয়ের দায়িত্ব না নেওয়া মানে বৌকে অসম্মান করা। আমি মেধার সম্মান নষ্ট করতে চাই না। সেজন্য আমার দুই বছর সময় চাই ড্যাড।
বেবিন: তোমার কথাগুলো শুনে মনটা ভরে গেল আকাশ। আই অ্যাম প্রাউড অফ মাই সান। (আকাশকে জড়িয়ে ধরে)
বেবিন: বাট বিজনেস ডিলটা…
আকাশ: ওটা ফাইনাল করে ফেলো। আমরা তো দুইবছর পর বিয়েটা করছি-ই।
মনীরা(মনে মনে): যাক,, দুই বছর অনেক সময় পাওয়া গেল। এরমধ্যে সারার সঙ্গে আকাশের বিয়েটা দিতে হবে। বিয়ে দিয়ে ওদের কাছাকাছি আনতে হবে যাতে ওদের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝি সব মিটে যায়। আম্মা আসলে প্ল্যান বের করতে হবে।
সেদিন ভার্সিটিতে চূড়ান্ত অসম্মানিত হলো আকাশ। সারা পুরো ক্যাম্পাস গ্রাউন্ডে সবার সামনে আকাশকে থাপ্পড় মারল।
চলবে