অদ্ভুত মুগ্ধতা -২
পর্ব ১১
মিশু মনি
.
মৈত্রী মিশুকে কোলে নিয়েই পুরো ঘরময় হেঁটে বেড়াতে লাগলো।
আর বললো, কই তোমার বড়গিরি দেখাও?
মিশু ওর গলাটা জরিয়ে ধরে বলল,উম দেখাবো তো। ভাবছি আগে কোনটা দেখানো যায়?
মৈত্রী হেসে উঠলো ওর কথায়। হাসতে হাসতেই বলল,আমিতো জানি তুমি কোনো কথা পেটে রাখতে পারোনা। সকালে যদি খুজিন্তা জিজ্ঞেস করে, রাতে কি কি হলো? নিশ্চয়ই সব বলে দিবা?
মিশু বেশ জোর গলায় বলল, না না। আর ওই ভূল করবো না। তুমি তো শিখিয়েই দিলা এসব কথা বড়দের সামনে বলতে হয়না।
– তাহলে তুমি বড় হওনি?
– হয়েছি তো। দাড়াও দেখাচ্ছি।
কথাটা বলেই মিশু আচমকা মৈত্রীর ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিলো। তারপর আলতো করে ঠোট দিয়ে ছুঁইয়ে দিলো ওর ঘাড়ে। শিউড়ে উঠলো মৈত্রী। ওর শরীরে এটাই প্রথম মিশুর ঠোটের স্পর্শ! আর সেটা এতটা গভীর আবেগের হবে, ও ভাবতেও পারেনি। মিশু দুহাতে মৈত্রীর মাথাটা চেপে ধরে ওর গলায় আর কাঁধে পরপর কয়েকটা চুমু দিলো। মৈত্রীর পুরো শরীর যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে। ও আর দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে বিছানায় এসে বসলো। মিশুকে বসালো ওর কোলের উপর। মিশু মুখ তুললো না। মৈত্রীর কাঁধে আর ঘাড়ে কতবার যে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো তার হিসেব নেই। এরপর ওর কানের নিচে একটা চুমু দিয়ে দুই ঠোঁট দিয়েই মৈত্রীর কান কামড়ে ধরলো।
মৈত্রী আবেশে চোখ বুজে ফেলেছে। মিশু আস্তে করে মুখটা তুলে খিলখিল করে হেসে উঠল। মিশুর হাসির শব্দে মৈত্রী চোখ মেলে তাকালো। স্বাভাবিক হওয়ার অনেক চেষ্টা করেও পারলো না। মিশু ওর বুকে মাথা রেখে বলল,আমি এভাবে চলে আসায় তুমি কি রাগ করেছো?
মৈত্রী বলল, তুমিতো আসোনি। আমার আব্বু তোমাকে নিয়ে এসেছে।
– ওভাবে কান্নাকাটি করেছি বলেই তো নিয়ে এসেছে। আমাদের বিয়েটা এরকম ভাবে হওয়ায় তুমি কষ্ট পেয়েছো?
মৈত্রী মৃদু হেসে বলল, আরে না। বরং আমার বেশ এক্সাইটেড লাগছিলো। ঘুম থেকে উঠেই দেখি পাশে তুমি বসে আছো, আর বিছানা থেকে উঠেই শুনি এইমুহুর্তে আমার বিয়ে! অনেক বড় সারপ্রাইজ ছিলো এটা। আর আমি তো একদম ভ্যাবাগঙ্গারাম হয়ে গিয়েছিলাম।
মিশু হেসে বলল,রাগ করোনি তো?
– উহু,একদম না। আমার বউটা যে এত জলদি জলদি এত পাক্না হয়ে গেছে,সেটা দেখেই অবাক হচ্ছি বেশি।
মিশু মুখ তুলে বলল, ইস! আমি বুঝি ইচ্ছে করে পাক্না হয়েছি?
– তাহলে? কে পাক্না বানালো শুনি?
– তোমার ভাবি আর তোমার আম্মু।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মৈত্রী অবাক হয়ে বলল,আম্মুও! এসব কি শুনছি!
– হ্যা, তোমার আম্মুই তো আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে বরের সাথে…
বলেই মিশু চুপ করলো। মৈত্রী উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল,কি? বরের সাথে কি?
মিশু দুষ্টু হেসে বলল,কিছুনা।
মৈত্রীও হেসে ফেললো। তারপর মিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,আয় তো আমার হার্টবিট শুনে দ্যাখ একটু। জানিস, তুই যতবার আমাকে জড়িয়ে ধরেছিস, ততবার ই আমি কেমন অন্যরকম এক প্রশান্তি পেয়েছিলাম। শুধু অপেক্ষায় ছিলাম আজকের দিনটির জন্য।
মিশু ওর বুকে কান পেতে ঢিপঢিপ শব্দ শোনার চেষ্টা করে বলল,একদিন তোমার আব্বুর সামনে ই আমাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলে। মনে আছে? ওই যে আমি রাতে উঠে এসে কান্নাকাটি করছিলাম। আমার অসুখের কারণ টা যেদিন বলেছিলাম তোমাকে।
মৈত্রী বলল,হুম।
মিশু কথা বলতে বলতেই মৈত্রীকে শক্ত করে চেপে ধরে বলল, জানো আমি হঠাৎ এভাবে চলে এলাম কেন? তুমি বিকেলে চলে আসার পর আমি দরজা জানালা বন্ধ করে ঘুমাচ্ছিলাম একটু। হঠাৎ প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় আমার। মনে হচ্ছিলো কেউ একজন আমার মুখের উপর বিদঘুটে হাসি দিচ্ছে আর একহাতে আমার মুখ চেপে ধরে আছে। আরেক হাতে আমার…
বলতে বলতেই মিশু ফুঁপিয়ে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমার খুব ভয় হচ্ছিলো। অনেক দিন থেকে এভাবে ভয় পাইনা আমি। কেবল ই মনে হচ্ছিলো বাঁচতে চাইলে আমাকে সবসময় তোমার সাথে থাকতে হবে। কেবল তোমার সাথে থাকলেই ওই অসুখটা আমি ভুলে থাকতে পারি।
মৈত্রী মিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,পাগলি মেয়ে। আমি আছি তো। আর ভয় নেই।
মিশুর চোখের জলে মৈত্রীর বুক ভিজে যাচ্ছে। মৈত্রী মিশুর মুখটা তুলে ধরে বলল, কাঁদছো কেন পাগলি মেয়ে?
মিশু বলল,পৃথিবীর সবাই কেন তোমার মত ভালো হয়না? কেন হয়না? কেন মেয়ে মানুষ পেলেই ওদের হিংস্র রূপটা বেড়িয়ে আসে? কেন? এই অসুখ টা একদম ই আমার পিছু ছাড়েনা।
মৈত্রী বলল,মিশু। ওসব ব্যাপার ভূলে যাও প্লিজ।আজ থেকে জীবন টাকে একটু অন্যরকম ভাবে সাজাও। তোমার কোথায় বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করে বলো? আমি কালই সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
মিশু চোখ পিটপিট করে তাকালো মৈত্রীর দিকে। মৈত্রী মিশুর ভেজা চোখের উপর চুমু দিয়ে বলল, পাগলী টাকে কাঁদলে একটুও ভালো দেখায় না।
মিশু মৈত্রীকে টেনে নিয়ে বিছানায় শুয়ে ওর বুকের উপর মাথা রেখে বলল,আর কাঁদবো না। এখন একটু বড়গিরি দেখাবো।
– তাই! কিভাবে শুনি?
– শোনানো যাবেনা, সব কথা বলতে নেই। ওসব ফিল করার ব্যাপার স্যাপার।
মৈত্রী শব্দ করে হাসতে যাচ্ছিলো কিন্তু হাসতে পারলো না।তার আগেই মিশু ওর মুখ বন্ধ করে দিলো।
★
সকালবেলা মর্ম ঘুম থেকে উঠেই এসে দরজা খুললো। কিন্তু দরজা খোলামাত্রই মুগ্ধতা ঢলে পড়লো মেঝেতে। মর্ম অবাক হয়ে দেখলো মেয়েটা ঘুমাচ্ছে। বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো ওর। এই মেয়েটা সারারাত এখানে এভাবে ঘুমিয়েছে? কিন্তু কেন?
মর্ম নিচু হয়ে মুগ্ধতাকে কোলে তুলে নিলো। সেইমুহুর্তে মুগ্ধতা’র ঘুম ভেঙে গেলো। মর্ম ওকে কোলে নিয়েছে বুঝতে পেরে ও চোখ বুজেই রইলো। মর্ম ওকে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বেড়িয়ে এলো ঘর থেকে। মেয়েটা এভাবে কেন এখানে বসে ঘুমাচ্ছিলো সেটাই মাথায় ঢুকছে না ওর!
মুগ্ধতা চুপ করে শুয়ে রইলো বিছানায়।
কিছুক্ষণ হাটাহাটি করার পর মর্ম ঘরে এসে দেখলো মুগ্ধতা বিছানায় গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে। ও একবার সেদিকে চেয়েই নিজের কাজে মন দিলো।
মুগ্ধতা’র ঘুম ভেঙে গেলো খানিক বাদেই। ও উঠে বিছানার উপর বসে মর্ম’কে বলল,আমি এ ঘরে এলাম কি করে?
মর্ম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। এই প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে ও?
মুগ্ধতা বললো, আমি এ ঘরে এলাম কিভাবে বলুন?
– আমি কোলে করে নিয়ে এসেছি।
– মানে!
– বাংলাতেই তো বললাম। আমি কোলে করে নিয়ে এসেছি।
মুগ্ধতা একটু অবাক হওয়ার ভান করে বলল, কেন এনেছেন? কি কি করেছেন আমার সাথে বলুন?
মর্ম অবাক হয়ে বলল, কি আজব! কি করবো আবার?
– তাহলে মিছেমিছি নিশ্চয়ই আমাকে তুলে আনেন নি। কি উদ্দেশ্যে এনেছেন বলুন?
মর্ম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, তুমি দরজার বাইরে ঘুমাচ্ছিলা। তাই তুলে এনে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছি।
– বললেই হলো? আমি দরজার বাইরে কেন ঘুমাবো?
– সেই প্রশ্ন তো আমার ও।কিভাবে এলেন?
মুগ্ধতা উঠে এসে মর্ম’র চোখে চোখ রেখে বললো, সবই বোঝেন আর এটুকু বুঝেন না? একজন ফিল্ম মেকারের খুব সহজেই এটা বোঝার কথা।
মর্ম একটু ধাক্কা খেলো। তারপর অবাক হয়ে বলল,মাত্র দুইদিনেই এই অবস্থা!
– ভালোবাসা দুইদিনেও হতে পারে, দুই বছরেও হতে পারে,আবার দুই সেকেন্ড এও হতে পারে।
মর্ম থতমত খেয়ে মুগ্ধতা’র দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর বলল,তুমি আমাকে ভালোবাসো?
মুগ্ধতা জোর গলায় বলল,বাসতে চাই। যদি সুযোগ দেন।
মর্ম মাথাটা ঝাঁকিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো। একটা মেয়ে এভাবে নিঃসংকোচে ভালোবাসার কথা বলতে পারে এটা ওর জানা ছিলোনা। কিন্তু এই মুহুর্তে কাউকে কিভাবে ভালোবাসবে ও?
ও মেয়েটাকে যেমন মনেহয়, ভালোবাসা না হওয়া অব্দি পিছনে লেগেই থাকবে।
ভাবতে ভাবতে বাইরে এসে দাঁড়ালো মর্ম। সামনে ই দেখতে পেলো ইফতি ও তানিন দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে। তানিন ইফতি’র কাঁধে মাথা রেখে দিব্যি হাসছে। ওদের দেখেই মনেহচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা জুটি! ওদের দেখেই কেন যেন মর্ম’র ও ইচ্ছে করছে এভাবে সেরা জুটি হয়ে যেতে। কিন্তু মিশু তো নেই,তবে কি মুগ্ধতা কেই…..
মর্ম আরেকবার ইফতি ও তানিনের দিকে তাকিয়ে বারান্দা থেকে নেমে সোজা হাঁটতে শুরু করলো।
চলবে..