অদ্ভুত মুগ্ধতা -২ পর্ব ৯

অদ্ভুত মুগ্ধতা -২
পর্ব ৯
মিশু মনি
.
পুলিশ টি মৈত্রীর দিকে চেয়ে বলল, আরে কাজী মৈত্রী না?
মৈত্রী অবাক হয়ে তাকালো। এই লোকটি ওকে কিভাবে চেনে! সে যাই হোক, এখন যদি জংলী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তাহলে কি বলবে ও?
এটা ভাবতেই পুলিশ টি এগিয়েছে এসে বলল, মৈত্রী সাহেব কেমন আছেন?
– জি ভালো আছি, আপনি?
– ভালো। আচ্ছা এই মেয়েটি কে?
মৈত্রী মিশুর দিকে তাকালো। লোকজন এখন প্রায় সবাই মৈত্রীর দিকে চেয়ে আছে। আর অনেকেই মিশুর সাথে ছবি তুলছে। মিশুও হেসেহেসে ছবি তুলছে সবার সাথে।
মৈত্রী বললো, আসলে ওই মেয়েটা আমার ওয়াইফ।
পুলিশ অবাক হয়ে বললো, ওয়াইফ!
– জি হ্যা। আমার স্ত্রী।
– কিন্তু ওনাকে দেখে তো জংলী মনেহয়।আর কথাবার্তাও জংলী দের মতই।
– আসলে ওর একটু মেন্টাল ডিসঅর্ডার আছে তো। মাঝেমাঝে উদ্ভট সব কর্মকাণ্ড করে ফেলে।
পুলিশটি এবার বিস্ময় লুকাতে পারছে না। মৈত্রীর মত এতবড় একজন সাইকিয়াট্রিস্ট কিনা একটা ডিসঅর্ডারের পেশেন্টকে বিয়ে করেছে! জ্ঞানী লোকদের কাজকর্ম বোঝা বড়ই দায়। উনি অবাক হয়ে বললেন, আচ্ছা আচ্ছা। উনি তাহলে জংলী নন?
– জ্বি না, ও আমার বাসাতেই থাকে।কিন্তু জংগলপ্রিয় ব্যক্তি।
পুলিশটি বিস্ময়ের ঘোরেই বলল, আচ্ছা। ঠিক আছে আপনারা তাহলে যান।
মৈত্রী হা করে চেয়ে থাকা পুলিশটির সামনে দিয়েই মিশুর কাছে এসে দাঁড়ালো। তারপর মিশুর হাত ধরে মিশুকে নিয়ে মার্কেটের ভিতরে চলে গেলো। রাস্তার লোকজন ভিড় করে দাঁড়িয়ে দেখতেই লাগলো ওদের।
মার্কেটের ভিতরেও লোকজন অবাক হয়ে দেখছে মিশুকে। মিশু বেশ উৎফুল্ল হয়ে কেনাকাটা করতে লাগলো। ওর সত্যিই ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। সবাই কত উৎসুক চোখে দেখছে ওকে!
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



মর্ম মুগ্ধতাকে নিয়ে সিনেমা দেখার জন্য বেড়িয়ে পড়লো। পুরোটা রাস্তা মুগ্ধতা হা করে চেয়েছিলো মর্ম’র দিকে। মর্ম ওর দিকে সেভাবে তাকায়নি। তাকালেই বুঝতে পারতো মেয়েটির দৃষ্টি কত ভয়ংকর! কিন্তু ওর সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ ই নেই। মর্ম’র মনে এখন সিনেমা ছাড়া আর কোনোকিছুরই জায়গা নেই।
সিনেমা হলে বসেও খুব মনোযোগ দিয়ে মর্ম পর্দার দিকে চেয়েছিলো। আর মুগ্ধতা চেয়েছিলো মর্ম’র দিকে। মুগ্ধতা নিজেও বুঝতে পারছে এভাবে মর্ম’র প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ার ফল বোধহয় ভালো হবেনা। কিন্তু কোনোভাবেই নিজের মনকে ফিরিয়ে নিতেও পারছে না। বারবার মর্ম’কে দেখতে ইচ্ছে করে।
সিনেমা দেখা শেষ হওয়ার আগেই মর্ম ওকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো। তানিন ও ইফতি চলে এসেছে। তানিনের সাথে মুগ্ধতার পরিচয় করিয়ে দিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে গিয়ে বসলো।
খাবার অর্ডার করলো তানিন। এরপর খাবার চলে আসতেই ওরা খেতে আরম্ভ করলো। কিন্তু তানিন কয়েক মুহুর্ত পরেই বুঝতে পারলো মুগ্ধতা কিভাবে ভালোবাসার দৃষ্টিতে মর্ম’র দিকে তাকাচ্ছে। তানিন শুধু মুখ টিপে হাসতে লাগলো কিন্তু কাউকে কিছু বুঝতে দিলো না।
খাওয়াদাওয়া শেষ করেই ওরা মনিরামপুরের উদ্দেশ্যে বের হলো। মুগ্ধতা এবার পিছনের সিটে তানিনের পাশে বসেছে। তবুও বারবার ওর চোখ চলে যাচ্ছে মর্ম’র দিকে। এই জিনিস টাও তানিনের চোখ এড়ালো না। মেয়েটাকে বেশ ভালোই দেখতে, মর্ম ভাইয়ার সাথে প্রেম হয়ে গেলে বেশ হয়। উত্তেজনায় চোখ বন্ধ করে ফেললো তানিন।
চোখ মেলে দেখলো গাড়ি একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। মুগ্ধতা ওকে আপু আপু বলে ডাকছে। চোখ কচলে উঠে পড়লো তানিন। রাত নেমেছে অনেক্ষণ হলো। ক্লান্তিতে ঘুম এসে গিয়েছিলো। আসলে ঢাকা থেকে যশোর অব্দি পুরোটা রাস্তা ইফতি এত এত গল্প শুনিয়েছে যে, কথা শুনতে শুনতে ই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ও। মিষ্টি হেসে গাড়ি থেকে নামলো তানিন।
বিকেলে মিশুকে বাসায় পৌছে দিয়ে চলে আসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো মৈত্রী। কিন্তু মিশুর আম্মু কিছুতেই ওকে না খেয়ে যেতে দিলো না। পেশেন্ট দের অজুহাত দেখিয়ে মৈত্রী সেখান থেকে ছুটি নিয়ে এলো। কারণ এখন কোনোভাবেই মিশুর সামনে বসে থাকতে পারবে না ও। মিশুকে দেখলেই কেমন কেমন যেন লাগছে। এই অবস্থায় ওর সামনে না থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
রাত আট টা
রোগী দেখে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলো মৈত্রী। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুতেই ঘুম চলে আসলো। না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো ও।
কিন্তু মাঝরাতে হঠাৎ কারো আলতো হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেলো ওর। মৈত্রী চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো শিয়রের কাছে মিশু বসে আছে। এটা নিছক স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়। কারণ বিকেলেই মিশুকে বাসায় রেখে এসেছে মৈত্রী। তাছাড়া এতরাতে মিশুর আসার কোনো কারণ ই নেই। মৈত্রী স্বপ্ন ভেবেই আবারো পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
গালের উপর মিশুর কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে ও হাতটা নিয়ে বুকের উপর জড়িয়ে ধরে বলল, একটু শান্তিমত ঘুমাতেও দিবেনা নাকি?
– আমি আবার কখন অশান্তি দিলাম?
– সবসময় ই তো দিচ্ছো। তোমার জ্বালায় বাথরুমে গিয়েও একটু শান্তি পাইনা।
মিশুর হাসির শব্দ শোনা গেলো। ও খিলখিল করে হেসে বলল, এত কঠিন অবস্থা তাহলে! ওঠো বিয়ে করবো।
– ধুর, যাও তো। ঘুমাতে দাও।
– যাবো না, তোমার পাশে ঘুমোবো।
– স্বপ্নে কাছে এসোনা দয়া করে।
– কাছে এসেই পড়েছি যখন আর দূরে যেতে পারবো না।
মিশুর কথাগুলো ঠিক যেন কানের উপর ই বাজছিলো।মৈত্রী লাফ দিয়ে উঠে পড়লো। পাশেই বসে আছে মিশু! ও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চোখ মিটমিট করতে লাগলো। মিশু এখানে কিভাবে এলো! এটা কিভাবে সম্ভব?
মিশু হেসে বলল, তোমার ঘুম জড়ানো কণ্ঠটা কিন্তু দারুণ।
– এই মেয়ে, তুমি এখানে কিভাবে এলে!
– আমি বুঝি পথ চিনিনা?
– এত রাতে! কয়টা বাজে?
– ১২ টা।
– সর্বনাশ! এত রাতে তুমি আমার রুমে কেন?
– রুমটা আমার ও নয় কি?
মৈত্রীর গলা শুকিয়ে গেলো। ও নিজের হাতে চিমটি কেটে দেখলো এটা তো বাস্তবেই ঘটছে। স্বপ্ন টপ্ন কিচ্ছু নয়। কিন্তু মিশু হঠাৎ কেন চলে আসলো! মিশুর তো এখন বাড়িতে শুয়ে ঘুমানোর কথা।
মৈত্রী উঠে নেমে এলো বিছানা থেকে। তারপর দুহাতে পেট চেপে ধরে বলল, খুব খিদা লাগছে গো।
মিশু মুচকি হেসে বলল, বুঝেছি। আমার সাথে ঘরে থাকতে বুঝি ভয় করছে? যাও আমি চলে যাচ্ছি। আর আসবো ই না।
কথাটা বলে মিশু একটুও দাঁড়ালো না। সোজা বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। মৈত্রী এখনো বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে এসব! মিশু কিভাবে আসলো সেটা কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না ওর।
চিন্তা করতে করতে বাবার রুমের দরজায় এসে ডাকলো, আব্বু কি জেগে আছো?
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব বললেন, হ্যা মৈত্রী আয়।
মৈত্রী ভিতরে ঢুকে চেয়ারে বসতে বসতে বলল,আম্মু কোথায়?
– রান্নাঘরে। রান্না করছে।
– এত রাতে রান্না করছে! আব্বু আমার ক্যান জানি সবকিছু ঘোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপার টা কি বলোতো?
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব হেসে বললেন, সে অনেক কাহিনী।
– মানে! এই তিন চার ঘন্টার মধ্যে কি এমন ঘটে গেলো? আমিতো আট টায় এসে ঘুমিয়ে পড়েছি। তখনো সব ঠিকই ছিলো।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব মুচকি হেসে বললেন, তুই মিশুকে বাসায় রেখে আসার পর মেয়েটা আমাকে কল দিয়ে খুব কান্নাকাটি করছিলো। তাই গিয়ে ওকে নিয়ে আসলাম।
এতক্ষণে ব্যাপার টা বিশ্বাসযোগ্য লাগছে মৈত্রীর কাছে। কিন্তু মেয়েটা এই পাগলামি গুলো কেন করছে? এভাবে কান্নাকাটি করে চলে আসাটা কি ঠিক হলো?
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব বললেন, ফ্রেশ হয়ে নে। তারপর বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত হ।
মৈত্রী অবাক হয়ে বলল,মানে! কার বিয়ে?
– তোকে প্রস্তত হতে বললাম কি আমার বিয়ের জন্য? তোর বিয়ে হবে। আজই,এই মুহুর্তে।
মৈত্রী অবাক হয়ে আবারো নিজের হাতে চিমটি কাটলো। এবারও ঠিক ব্যাথা লাগলো। কিন্তু ব্যাপার টা কেমন অদ্ভুত হয়ে গেলো না! মনেহচ্ছে স্বপ্নের ঘোরে হচ্ছে সবকিছু।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব এসে মৈত্রীর হাতে একটা চিমটি দিতেই মৈত্রী লাফিয়ে উঠলো।উনি হেসে বললেন, এটা যে স্বপ্ন নয় সেটা বিশ্বাস হচ্ছে তো?
– হ্যা হচ্ছে। কিন্তু বিয়ের ব্যাপার টা মাথায় ঢুকছে না।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব হেসে বললেন, মিশুর কান্নাকাটি দেখে আমি ছুটে গেলাম ওর কাছে। ও হাত পা ছুড়াছুঁড়ি করে কাঁদছিল আর বলছিল, আমি আজই বিয়ে করবো, এক্ষুনি বিয়ে করবো। সেকি কান্নাকাটি রে বাবাহ! একজন বাবা হয়ে মেয়ের কান্না সহ্য হয় বল? তাই বললাম ঠিকাছে আজই বিয়ে দিবো চল আমার সাথে।
মৈত্রী অবাক হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলল,আল্লাহ! এরকম ও হয় দুনিয়ায়!
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব বললেন, মিশুর মত মেয়ে আর আমার মত বাপ থাকলে হয়।
– আব্বু,তুমি সত্যিই অন্যরকম। একদম অদ্ভুত একটা মানুষ। আর ওই মিশমিশ ও।কিভাবে মুরুব্বীদের সামনে বিয়ের জন্য কান্নাকাটি করতে পারে? আমিতো লজ্জায় মরে যাচ্ছি। ওর কি একটুও লজ্জা নেই?
– আসলে মিশু তো বাচ্চা স্বভাবের মেয়ে। আর একটু পাগলী আছে। ও কি এতকিছু বোঝে বল?
– সবই বুঝে। ও খুবই বিচ্ছু একটা মেয়ে আব্বু।
– হয়ত বা। তাহলে রেডি হ, তোর মুন্সী চাচা বসে আছে নীচতলায়।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব কথাটা বলেই চলে গেলেন। মৈত্রী ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো। এরকম কান্ড একমাত্র মিশুর দ্বারাই সম্ভব। দুনিয়ার কোনো মেয়েই কখনো বিয়ে করার জন্য হাত পা ছুড়ে কাঁদেনা। আর কোনো বাপও এভাবে কান্না দেখেই তাৎক্ষণিক বিয়ের আয়োজন করে ফেলেনা! সবকিছুই কেমন অদ্ভুত আর ঘোরলাগা লাগছে মৈত্রীর কাছে! মিশু সত্যিই এরকম ছেলেমানুষি করেছে! অবশ্য ও যেরকম মেয়ে,করাটা অস্বাভাবিক না। কিন্তু আজই বিয়ে! এটা কিভাবে সম্ভব!
মৈত্রী এক ছুটে রান্নাঘরে চলে আসলো। ওর আম্মু খুব খুশিমনে রান্না করছে। আম্মুকে এভাবে হাসিখুশি ভাবে রান্না করতে দেখে মৈত্রী অবাক হয়ে বলল,ভেবেছিলাম এটা শুধুমাত্র স্বপ্নেই সম্ভব! কিন্তু ভূল আমি।
মা বললেন, কিরে! এখানে কেন? যা গোসল করে পাঞ্জাবী পড়ে নে।
– আম্মু,আজ কি সত্যিই আমার বিয়ে?
– ড্রয়িংরুমে মুন্সী বসে আছে দেখিস নি?
– এখনো যাইনি ওদিকে। কিন্তু এরকম করে কারো বিয়ে হয় আম্মু? তুমিই বলো। বিয়ের একটা প্রস্তুতি লাগেনা?
মা হেসে বললেন, তোর যেমন পাগলী বউ তেমন আমার পাগল স্বামী। মিশু কান্নাকাটি করেছে বলে ও মিশুকে সাথে করে নিয়ে এসেছে। আর কাজীকেও ফোন দিয়ে ডেকে এনেছে। আমিও ঘুমাচ্ছিলাম বুঝলি। সাফায়েত এসেই আমাকে ডেকে তুলে বলল,তিন্নি উঠে একটু বিরিয়ানি রান্না করো তো। আজ মৈত্রীর বিয়ে। শুনে আমার ছোটখাটো হার্ট এটাকের মত হয়েছিলো। এভাবে ঘুম ভাঙিয়ে ছেলের বিয়ে কথা শুনলে কেমন লাগে?
মৈত্রী মায়ের কাঁধে হাত রেখে বলল,এভাবে ঘুম ভাঙিয়ে নিজের বিয়ের কথা শুনলে কেমন লাগে? সবকিছু কেমন দ্রুত হয়ে গেলো না? ঠিক সিনেমার মতন।একবারেই ঘটনা এগিয়ে গেলো তিনমাসের পরের গল্পে।
মা হেসে বললেন, ঠিক বলেছিস। আমার তো এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা। তোর আব্বুটা এমন ই বুঝলি। প্রায় তিনমাস আমার সাথে টানা ঝগড়া করেছিলো।ভার্সিটিতেও আমাকে এভোয়েড করে চলছিলো। তারপর একদিন হঠাৎ আমাকে বাইকে তুলে নিয়ে মোহাম্মদপুর কাজী অফিসে নিয়ে এসে বলল,বলো কবুল। আমিতো থ! এভাবে কারো বিয়ে হয় বল?
মৈত্রী উত্তেজিত হয়ে বলল,সত্যি! কিন্তু তুমি তো বলেছো তোমাদের বাসায় প্রস্তাব দেয়ার মাধ্যমে বিয়ে হয়েছিলো?
মা মুচকি হেসে বললেন, হ্যা। আসলে সেদিন দুম করে বিয়ে করে ফেলার পর বাসায় ফিরে আমি তোর আব্বুর কথা জানাই যে,একটা ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক আছে। ব্যস,তারপর আবারো ফ্যামিলিতে কথা বলার পর আমাদের বিয়ে হলো।
মৈত্রী মায়ের মুখের দিকে অনেক্ষণ চেয়ে থেকে বলল,সবকিছুই গল্পের মত। আসলে আম্মু,আব্বুর মত অদ্ভুত মানুষ খুব কমই আছে। আর সেজন্যই এরকম অবাক লাগে আমাদের।
– হ্যা,এখন তুই যা গোসল করে নে।
– আম্মু, মিশুর আব্বু আম্মু আসেনি?
– এসেছেন। তোর আব্বু ওনাদের ও ধরে নিয়ে এসেছে। তবে এখন তোদের বিয়ে পড়িয়ে বাইরের কাউকে জানাবো না। আগামী সপ্তাহে প্রোগ্রাম করে আবারো বিয়ে দিবো।
মৈত্রী হাসতে হাসতে বলল,পাগল ফ্যামিলি আমার। মাত্রাও দুইবার বিয়ে করলো, আমিও দুইবার বিয়ে করবো আর আমার বাপেও দুইবার বিয়ে করেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে,সবাই নিজের বিয়ে করা বউকেই দুইবার করে বিয়ে করেছে।
বলেই আবারো অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। ওর হাসির শব্দ শুনে মিশু দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। মিশুর মুখেও হাসি। ও এরই মধ্যে শাড়ি পড়ে ফেলেছে। শুধু একটা লাল রঙের শাড়ি, আর হাতে দুটো বালা। সাজ বলতে এটুকুই। মাথায় ঘোমটা ও টেনে দিয়েছে।
মৈত্রী একবার মাথা তুলে মিশুর দিকে তাকাল। তাকানো মাত্রই হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো ওর। মিশুকে অপূর্ব দেখাচ্ছে লাল শাড়িতে। একদম বউ বউ! কে বলবে সকালবেলায় এই মেয়েটা জংলী সেজে ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়িয়েছে?
মিশু লজ্জা পেয়ে ছুটে খুজিন্তার ঘরে চলে গেলো। মৈত্রী হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে আসলো। সবকিছু এখনো স্বপ্নের মত লাগছে! এইতো রাত আট টায় ক্লান্ত হয়ে ফিরেই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলো ও। এখন হঠাৎ ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে বলা হলো, এইমুহুর্তে ওর বিয়ে! পাত্রীও এসে হাজির! কি অদ্ভুত ব্যাপার। একদিকে অদ্ভুত অন্যদিকে মুগ্ধতা! সবদিকে অদ্ভুত মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছে!
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here