#অদ্ভুত_সম্মোহনী♥
#PART_08
#FABIYAH_MOMO🍁
— কেছা লাগা মেরা মাজাক!
বাম ভ্রু উচু তুলে বাকা হাসিতে তাকিয়ে আছেন সাদ ভাইয়া। কি সুন্দর এক্টিং উনার! কেমন নিখুঁত অভিনয়! আমি ভিজা গলায় ঢোক গিলে জোরপূর্বক হাসি দিতেই উনি হাত ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালেন। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুলের মধ্যে হাত ডুবিয়ে ব্যাকব্রাশ করছেন উনি। অপলক চাহনিতে দেখছি সেগুলো। উনার চেহারাটার একপাশ দেখা যাচ্ছে। অদ্ভুত সৌন্দর্য আছে উনার মধ্যে, কথাটা বারবার জানান দিচ্ছে। উনি হাত বুলিয়ে কপালের চুলগুলো সরিয়ে পেছনে ঠেলে দিতেই বলে উঠলেন,
— আমাকে তাকিয়ে দেখা বন্ধ করো রাহা। উঠে দাড়াও! এবং সামনে এসে একবার আয়নায় নিজেকে দেখো!
আমি থতমত খেয়ে ঠিকঠাক মতো উঠে দাড়ালাম। উনি আয়নার সামনে থেকে সরে এসে পান্জাবীর কলার ঠিক করতেই হুট করে আমার কবজি টেনে আয়নার সামনে দাড় করালেন। উনি আমার ঠিক পেছনে কিছুটা দূরত্ব রেখে দাড়ালেন। আয়নার মাঝে দুটো অবয়বের প্রতিচ্ছবি উঠেছে। একজন তার কাধের কাছে উচ্চতা নিয়ে কাচুমাচু করছে। অপরজন হাত ভাজ করে পেছনে দাড়িয়ে আছে। সাদ ভাইয়ার হাসিখুশি চেহারাটা বিলিন হয়ে গেছে। মুখে এখন এক বস্তাভর্তি গাম্ভীর্য! উনি সেই গাম্ভীর্য মুখেই বলে উঠলেন,
— তুমি কালো রাইট? আচ্ছা কালো কাকে বলে? লিসেন, আফ্রিকান বাসীরা কালো।কালো এক্ট্রেস দেখোনি? একটা এ্যাকজেম্প্যাল দেই শোনো। মিস ইউনিভার্স ২০১৯ কে ছিলো ইউ নো? জোজিবিনি তুনজি। সে একজন কৃষ্ণবর্ণের মেয়ে। বাট দেখো সে একজন মিস ইউনিভার্স ক্রাউন উইনার! ভাবতে পারো কতো বড় এচিভম্যান্ট? তোমাকে আমি বারবার বলছি তুমি কালো নও। তুমি শ্যামবতী। শ্যামবতী মেয়েরা সবচেয়ে সুন্দর হয়। সাদা বকের মতো দেখতে হয়না। আবার কালো বলেও কয়লাখনি হয়না। “শ্যাম মানে শেম” — এসব ভাবা অফ করো প্লিজ! আই রিকুয়েস্ট ইউ!
আমি স্থির হয়ে দাড়িয়ে উনার কথাগুলো আমলে নেওয়ার চেষ্টা করছি। উনি কিছুক্ষণ চুপটি থেকে জোরে নিশ্বাস ছেড়ে আবার বলে উঠলেন,
— মিস আফসানাকে আপু ডাকলাম না। সে আমার ছোট। আফসানার পোশাকআশাক দেখছো? মেহেদি অনুষ্ঠানে কেউ হাতাকাটা ড্রেস পড়ে? বাদ দাও! চলো বাইরে!
— কোথায় যাবেন?
_______________________________
পুরো অনুষ্ঠান জাকজমকপূর্ন হয়ে উঠেছে।। সবাই হৈচৈ করে প্যান্ডেলের সামনে নাচের ধুম তুলেছে। একপাশে খাবারের টেবিল বসানো। অপরপাশে প্যান্ডেল সাজানো। মেয়েরা সবাই নেচেদুলে ঘেমে উঠলে ক’জন মেয়ে নাচ ছেড়ে চলে আসে পুনরায় মেকআপ করতে। তারা চেয়ার সাজিয়ে গোল করে বসে। এরা সবাই নাইমার চাচাতো বোন। বড় চাচার মেয়ে মিথিলা বলে উঠে,
— মাহি নীল পান্জাবীর ছেলেটা জোশ না? দেখ্ শাকিল ভাইয়ার পাশে নাচছে যে!!
— ওইটার চেয়ে খয়েরী পান্জাবীর ছেলেটা কিউট! এই ছেলে দেখতে পুরা সাদা বিদেশীদের মতো! সাদা চামড়া সুন্দর না! ওই ছেলেটা পুরা সেক্সি!
— কোনটা? ‘সাদ সাদ’ বলে ডাকছিলো যে?
— হ্যাঁ হ্যাঁ ওটাই!!
— আস্তে বল আস্তে বল!! রূপকে চিনিস না, নাইমার মামাতো বোন? ওর চয়েজ! মনের ভুলেও সাদের দিকে নজর দিস না। ওই মেয়ে আস্তা একটা রাক্ষসী! জানতে পারলে খবর আছে!
মেয়েরা নিজেদের মাঝে সাদকে নিয়ে রূপের পাগলামি শেয়ার করতে থাকলে পিছন থেকে রূপ এসে হাত ভাজ করে দাড়ায়। গলা খাকাড়ি দিতেই মাহি কানে একটা তীব্র শব্দ শুনে মাথা ঘুরে পেছনে তাকায়, ওমনেই ফ্রিজ্ড হয়ে যায়। রূপ সবার দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকালে সবার গলা শুকিয়ে যায়। মিথিলা ও নাইমা মনেমনে নিজেদের একশোটা গালি দিলো। কেন্ যে রূপের পেচাল উঠাতে গিয়েছিলো!! পস্তাতে লাগলো তারা!! রূপ কঠিন দৃষ্টিতে মিথিলার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
— আমার পাগলামি শুনাতে খুব এক্সাইটেড তাইনা? এমন এক থাপ্পর মারবো নিজের নামের অক্ষর ভুলে যাবি ফালতু মেয়ে! আমার ব্যাপারে বেশি নাক গলাতে আসবি না! বলে দিচ্ছি!!
মিথিলা ভয়ে ঢোক গিলে ভিজেবিড়ালের মতো বলে উঠলো,
— সসরি আপপু… আআর হববে না..
— গুডলাক সুইটহার্ট! পরেরবার সরিতে লাক ফেভার করবেনা! থাপ্পর বসিয়ে ছাড়বো। বায়!
রূপ ওদের শায়েস্তা করে পা ঘুরিয়ে আসতে নিলে সামনে থেকে আসা সাদকে দেখে থমকে যায়। সাদ ফোন হাতে চ্যাটিং করতে করতে সামনে আসছে। সাদকে হার্টবিট ফাস্ট হতে থাকে রূপের। মনের মধ্যে ঝড়ের ঝাপটা আরো ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে প্রতিসেকেন্ডে! বুকের বামদিকটা ধপাস ধপাস করে লাফাচ্ছে রূপের!! ওড়নার দুহাত মুচড়ে ঠোটে দাত বসিয়ে চলছে রীতিমতো। সাদ দেখতে এতো সুন্দর কেনো? ওকে দেখলে প্রতিটা মেয়ে দ্বিতীয়বার দেখতে বাধ্য হবে! তাকিয়ে থাকলে মনটা আনচান করবে! রক্ত সন্ঞ্চালন আন্দোলন করবে! কেনো সাদ ইগনোর করো! আমার কষ্ট হয় তোমার ইগনোর দেখে!আমি তোমার জন্য সব করতে পারি! সব! একটাবার তাকাও! আমার মনের কথা বুঝো প্লিজ! আমি মরে যাচ্ছি!! সাদ রূপের ভেতরকার আহাজারি শুনতে পেলো না। মাথা উঠিয়ে রূপকে দেখে সিরিয়াস মুডে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো সে। রূপের হুশ ফিরলো। ওড়নায় মোচড়ানো দুহাত শান্ত হলো। কিন্তু বুকের ভেতর কম্পনরত যন্ত্রটা অশান্ত গতিতে চলছে। রূপ বুকের বা পাশে হাত রেখে নিশ্বাস ছাড়লো। চোখ বন্ধ করে ঠোট গোল করে মুখ দিয়ে নিশ্বাস ছাড়ছে।
তোমায় আমি প্রচণ্ডরূপে পছন্দ করি সাদমান আরাফ! প্রচণ্ডরূপে পছন্দ করি!এই পছন্দ কখন ভালোবাসাতে রূপ নেয় জানি না। আমি তোমায় কখন পাগলের মতো ভালোবেসে ফেলেছি জানি না। নিজেকে কখন তোমাতে করার জন্য আক্রান্ত করেছি জানি না। আমি শুধু জানি রাইফা রূপ সাদকে ভালো বাসে। অনেক! অনেক! অনেক বেশি! তোমায় দেখলে বুকটা কেমন কেপে উঠে! তুমি জানো না! তোমার জন্য মনের পিন্জরে জায়গা গড়ে রেখেছি তুমি জানো না সাদ। তোমায়নিয়ে দিনে, রাতে স্বপ্ন বুনি! জাগ্রত, ঘুমন্ত অবস্থায় আমি স্বপ্ন দেখি! তোমার ওই দুটো ঠোঁটে কেবল আমার অধিকার চাই! আমি তোমায় নিয়ে উন্মাদনার সাগরে ডুব দিতে চাই! যেই সাগরে ডুবে গেলে মরে যাওয়ার ভয় নেই। একবিন্দু সংকোচ নেই। এক ফোটা কষ্ট নেই। আক্ষেপ নেই! ভালোবাসি তোমায়! ভালোবাসি!
রূপ চোখ খুলে দেখলো বুকটা শান্ত হয়ে গেছে। ধকধক কাপুনি কমে গিয়েছে। সে বুকের বাপাশ থেকে হাত সরিয়ে মুখে একটা হাসির চিলতেখানি ফুটাতেই কালো শাড়িতে মাথা নিচু করে আসা রাহাকে দেখতে পেলো। মিনিটেই হাসিটা উবে গেলো রূপের। রাহাকে শাড়িতে অপ্সরী লাগছে কেনো? অপ্সরী খ্যাতনামা তো রূপের জন্য, রাহার জন্য না। রাহা ঈর্ষার আগুনে দাউদাউ করে জ্বলতে লাগলো। রাহার সামনে গিয়ে রাহাকে ধমকের সুরে বলে উঠলো,
— তুই এই শাড়ি পড়েছিস কেন্! এক্ষুনি খুলে আগের জামা পড়ে আয়! ছেলেদের শরীর দেখাতে এই শাড়ি পড়েছিস গাধা!
রাহা বিষ্ময়সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিজের কান দুটোকে বিশ্বাস করতে পারছেনা নিজের মায়ের পেটের বোন এভাবে কটু কথা শোনাতে পারে।
— কিরে বোকা! কি বলছি শুনছিস না!
রূপের ধমকে কেপে উঠে রাহা। আচলে খুট পাকিয়ে চোখ নিচু করে আছে। রূপের রাগ গগনচুম্বী উচ্চশিখায় পৌছলে রাহার হাত চিবিয়ে ধরে! রাহা ব্যথায় অস্ফুট শব্দে কুকড়ে কেপে উঠে! রূপ রাহার হাত বেকিয়ে ধরতে নিলে হঠাৎ একটি হাত এসে রূপের হাত হাড়গোড় সহ একত্রে চেপে ধরে! আকস্মিক হাতে চাপ অনুভব করাতে রূপ রাহার হাত ছেড়ে নিজের হাতে ফু দিতে থাকে। কে তার হাত ধরলো! রূপ ব্যথায় চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে সাদ! রূপ সাদের দিকে তাকাতে দেরি! ঠাস করে এক থাপ্পর মারলো সাদ!
-চলবে
Fabiyah Momo