#তুমিময়_প্রেম🥀♥
#পার্ট_দুই🍁
#Fabiyah_Momo
“মুগ্ধ!!!!” বলে চিৎকার দিয়ে দলবলে দৌড়ে এলো। তরল বেগে রক্ত পড়ছে। আঘাত পেয়েই মুগ্ধ সেন্সলেস!!!
মম হকিস্টিক ফেলে মুগ্ধের আহত নিরুপায় দৃশ্যপট সিচুয়েশনটা একবার অবলোকন করলো, অতঃপর হাটা দিলো ক্যাম্পাসের বাইরে, মেইন গেটের ওখানে। সবাই ড্যাবড্যাবিয়ে মমকে দেখে যাচ্ছে…মম বলিষ্ঠ বিশ্বাসে গলায় ওড়না ঠিক করে চলে যেতে নিলে মেইন দরজায় পাহারা দেওয়া পন্ঞ্চার্শোধ্ব বুড়ো দাড়োয়ান বলে উঠল-
–শুনেন,
মম বৃদ্ধ লোকের সন্নিকটে গেল। নরম গলায় মুখের তেজী ভঙ্গিমা পরিবর্তন করে বলল-
–জ্বী চাচা বলুন, কিছু বলবেন?
বৃদ্ধ মাথার খাদি টুপিটা ঠিক করে গলা ভিজিয়ে বলে উঠলো-
–আপনার নাম কি জানা যাইবো? মনে কিছু না করলে?
–অবশ্যই। আমার নাম মম। নতুন বর্ষের স্টুডেন্ট। ডিপার্টমেন্ট অফ কেমিস্ট্রি।
–ও আইচ্ছা আইচ্ছা। একটা কথা কই মা? বাপের বয়সী ভাইবা পরোখ করিও।
মম মুখে লম্বা হাসি টেনে প্রসারিত নরম সুরে হ্যা বোধক জানালো।
–মা একটু সামলায়া থাইকো। জমানা ভালো না, পোলাপাইন মেলা খারাপ। যারে তুমি মাথা ফাটায়া দিছো…হেয় কইলাম বড় সাবের ছেলে। টিসি দিবার পারে তোমারে। মাফ টাফ চাইয়ি নিও।
মম বৃদ্ধের উপদেশবাচক কথায় হালকা হেসে দিলো, হাসির অর্থ বৃদ্ধ না বুঝলেও মম পরিস্থিতিটা পরিস্কার বুঝতে সক্ষম। সে বৃদ্ধের বার্তায় অভয় দিয়ে বলে উঠলো-
–চাচা আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি আপনি আমাকে উপদেশ দিয়েছেন। ধন্য আমি। শুকরিয়া আপনাকে, তবে টেনশন নিবেন না। আমি ক্যাম্পাসে পড়তে এসেছি কারোর পা ধরে মাফ চাইতে নতুবা গোলামি করতে আসিনি। সামনের সিচুয়েশন দুর্গতি বয়ে আনতে পারে পুরোপুরি নিশ্চিত, আমার এসবে ভয় নেই চাচা। আসি। আসসালামুয়ালাইকুম।
বৃদ্ধ দারোয়ান সালামের উত্তর নিচু থেকে নিচুস্তরে নামিয়ে বলল, যেটা মমর কানে কি পিপড়ার কানেও আসবেনা। মম তৎপর ভাবে প্রস্থান করেছে তারা স্বীয় বাসা নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে, যা ঢাকা থেকে এক ঘন্টার দূরে অবস্থিত। মমর শেষ চিহ্ন টুকুতে একপানে চেয়ে বৃদ্ধ মাথা চুলকিয়ে বলে উঠলো-
–মাইয়া বড়ই টাউড!! একলাই একশো।
কলিংবেল বাজিয়ে অপেক্ষা করছি কখন আমার আম্মাজান দরজা খুলে স্বাগতম জানাবেন। নিশ্চিত জামার হাল দেখে ঝাড়ুর বারি বখশিশ মেরে ননস্টপ ভ্যা ভ্যা স্টার্ট করে দিবেন…কমন ব্যাপার! উফ আই উইল বি গন! ফাজিল বজ্জাত বড়লোকের চ্যাংড়া শয়তান!আরো দিতাম কয়টা ঘাড় ধরে! ছেড়ে দিলাম। ফাস্টদিনেই ইজ্জতের কাবাব ফালুদা বানিয়ে প্লাস্টিক মেরে লাটে উঠানোর মানেই হয়না। সময় যাক! ঠেলা বোঝাবো!আম্মু দরজা খুললেন, এক তীক্ষ্ম ধারালো শিং গজানো ডায়নির মতো চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছেন, তারপর সুরর…
–দামরি ধিংড়ি মেয়ে! আবার কার গলায় মাদুড় পেচিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছিস! গতবার মাফ করেছিলাম এবার ছাড় দিবো না। বল কি করেছিস! জামার অবস্থা নোংরা কেন!
জুতা খুলে ভেতরে ঢুকলাম আমি, আম্মুর হর্ণ বাজানো বিদঘুটে চিল্লানোর ঘ্যানঘ্যাননি শব্দে কানে তব্দা লাগিয়ে দিচ্ছে, জুতার আলমারিতে জুতাজোড়া রেখে গেলাম আমি কাপড় চেন্জ করতে। ততক্ষণে বাড়ি মাতিয়ে শেষ আম্মু! কার সাথে পাঙ্গা মেরে জামার দশা ছুটিয়ে এসেছি। কার গালের চামড়া ঠাটিয়ে পুরো লালে বানিয়ে এসেছি…ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।এর আগে কলেজের র্যাগ ডে’র দিন রাস্তার এক হারামজাদাকে ধরে পিটিয়েছিলাম জুতা ছিড়ে…এরপর বাসায় এসে আম্মুর কাছে জুতা ছিড়ার বকুনি।। রুমের দরজা চেপে পর্দা টেনে ওয়ারড্রব খুলতেই কর্কশকণ্ঠ ভেসে আসলো, আচ্ছা বকাঝকা করছেন আমাকে। প্রতিবারের মতো এবারও এক কানে ঢুকাচ্ছি অন্যকানের ছিদ্রপথে ফুরফুর করে বের করে দিচ্ছি।
ময়লা পোশাকে গোসল ছাড়া থাকা আর গোবরে হাত ডুবিয়ে ভু ভু শব্দ করা এক বিষয়। এই দাড়ান! গোবরে হাত ডুবিয়ে কেউ মুখ দিয়ে ভু ভু শব্দ করে? হাতের সাথে মুখের ভু ভু শব্দের কি কানেকশন? গোবরের যা গন্ধ না! ছি!! খাচ্চর মাইয়া কথা বলবি… বেক্কলের মতো কথা বলতেছিস কেন? ফোন বাজলো, ফুল ভলিউমে ডিসগাস্টিং উপায়ে। চরম বিরক্তিকর ! ভেজা চুলে তোয়ালে ঘষে বিছানার উপর ফোনের দিকে হাত বাড়ালাম। ‘আননোন’ উঠে আছে, অর্থাৎ অজ্ঞাত পরিচয়ধারী কোনো ব্যক্তি মানুষের কল। করলাম রিসিভ-
ওপাশ থেকে,
–হ্যালো, আমি কি স্নিগ্ধা মমর সাথে কথা বলছি?
পুরুষ মোটা ঘ্যারঘ্যার কন্ঠ, কলের বিপরীতে আমাকে চাচ্ছে,
–ইয়েস আমি মম বলছি। কে আপনি? কোথা থেকে কল করেছেন?
–আমি প্রফেসর আসাদ জামান বলছি, সামার ফিল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে। আই হোপ, চিনে গেছো কে এবং কোথা হতে বলছি।
–হেড স্যার? আসসালামুয়ালাইকুম স্যার।
–ওলাইকুমসালাম। নিউ স্টুডেন্ট অলসো এ্যা নিউকামার অফ দ্যা ডিপার্টমেন্ট। ডু ইউ নো, ইউ আর রাস্টিগেটেড?
–হোয়াট! রাস্টিগেটেড? স্যার মানে কি এসবের? হোয়াটস মাই ফল্ট?
–নো রিজন। আমার কাজ ছিলো তোমায় ইনফর্ম করা এন্ড গেট রেডি ফর রাস্টিগেট নোটিশ।
–স্যার প্লিজ…স্যার…
টুট টুট আওয়াজে স্যার কেটে দিলেন কল। তোয়ালে ছুড়ে ইসরাতকে কল করলাম। নাম্বার বিজি, নট এভেইএবেল অবস্থা। তোয়ালে দিয়ে চুল না মুছার পরিনতি আম্মুর আরেকদফা ধমক সেটা কলের তালে ভুলে বসেছি। একনাগাড়ে কলের পর কল ‘ইসরাত’ নামক বেস্টফ্রেন্ড জন্তুকে। সে রিসিভ করছেনা। আমার কাছে আরেকটা কল আসলো, যাকে আমি আগের মতোই ‘আননোন’ ভ্যালিডে দেখছি, তাকেও চিনি না।
–হ্যালো কে বলছেন?
–কাল ক্যাম্পাসে আসো হাইপার! ওয়েট এন্ড ওয়াচ!
.
.
হসপিটালে স্পেশাল কেবিনে দাড়িয়ে আছে সবাই। মাথায় ব্যান্ডেজ লাগিয়ে আধশোয়া হয়ে ইনজেকশন নিচ্ছে রাদিফ মুগ্ধ। জেনি কেবিনের মধ্যে পায়চারি করছে, ছটফটে অবস্থা কখন সে হকিস্টিক দিয়ে মাথা ফাটানো কালনাগিনীকে গলা চেপে শ্বাসরুদ্ধ করবে। রিমি ফোনের কলে হুংকার বাজিয়ে ব্যস্ত। তন্ময় নতুন আসা স্টুডেন্টের ব্যাপারে নানা দিক নিয়ে আলোচনা করছে। তৎক্ষণাৎ কেবিনের দরজা খুলে হুরমুড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো রামিম। হাটুধরে কুনো হয়ে হাফাচ্ছে সে…মুগ্ধ ডক্টরকে শক্ত চোখে ইশারা করলো, ডক্টর মুগ্ধের ভাবার্থ বুঝে চলে গেল কেবিন ছেড়ে। রামিমের হাপানোতে ইরিটেট ফিল করছে জেনি, পায়চারি থামিয়ে হাতভাজ করে রামিমের সামনে দাড়ালো।
–রামিম টাস্ক করেছিস? অর নট?
রামিম পকেট থেকে টিস্যু নিয়ে মুখটা মুছে মুগ্ধের বেডের ওখানে বসলো-
–বস! সব ডিটেইলস নিয়ে আসছি!!
মুগ্ধ একটা হাসি দিল! রামিমের সাথে হাই ফাইভ করে বলল,
–নাও দ্যা গার্ল ইউল বি গন ডুড!
-চলবে