#ক্রাশ
#পর্ব_৫
#নিহিন_ইলিয়ানা
আর ওই দিকে অর্পন বার বার ওদের পরিবারে জানায়,কাবিন আজ না হলে অর্পনের লাশ যাবে দেশে।
অবশেষে আম্মু এসে আমাকে বলেন,
-তোর আব্বু বলছে কাবিন টা করে নিতে।
-কিন্তু আম্মু এই ছেলেতো..
-দেখ মা,এলাকার সব মানুষ এক জোট হয়ে আছে।আমাদের তো এখানেই থাকা লাগবে।
সবাই জানে তোদের এংগেইজমেন্ট হয়ে গেছে।
তাছাড়া তোর বোনের কথা চিন্তা করবিনা?
ওরা যদি ক্ষতি করে ওর?আর ওই ছেলে যদি কিছু করে ফেলে তাহলে আমাদের পুরো পরিবারের সাফার করা লাগবে।
তুই কি এটা চাস?
তাছাড়া ছেলেতো পড়ালেখাও জানে।
হয়তো বাজে রেকর্ড ছিলো কিন্তু এখনতো বাইরে চলে গেছে।
ভালো জায়গায় থাকে।
দেশে যখন ফিরবে তখন আর এমন থাকবেনা ও।
রাগ ঝাল সব চলে যাবে ওর।
তাছাড়া তোকে ভালও বাসে।
তাইতো পাগলামি করেছে এতো।
-তোমরা এইভাবে আমার জীবন টা নষ্ট করে দিবা?
শুধু মাত্র তোমরা এলাকায় সেইফ থাকার জন্য?
-এগুলো আমার কথা নারে মা,তোর বাবার কথা।
সে চায়না কোন কারণে তার মান সম্মান নষ্ট হোক।
বেচারার অবস্থা খুব খারাপ।উনিও এই ছেলেকে অতটা পছন্দ করেনা।
আম্মু আমি এই এলাকা ছেড়েই চলে যাবো।অন্য জেলায় চলে যাবো।
প্লিজ এই ছেলেকে বিয়ে করতে বলোনা আমায়।
আমার জীবন টা এভাবে শেষ করে দিওনা।
-মারে,আমার কিছুই করার নাই।দেখছিসই তো ওদের কত বড় গ্যাং।তুই যদি অন্য কাউকে বিয়েও করিস,ওই ছেলের ক্ষতি করতে তাদের হাত কাঁপবেনা।
আর তুই চলে গেলেও তো আমাদের এখানে থাকতে হবে।
যদি তারা আমাদের ক্ষতি করে।
আম্মু কাঁদছে।আমি জানি,এই ছেলেকে আম্মুর মোটেও পছন্দ না।ছেলে দেখতে সুন্দর।পরে জানা গেলো শিক্ষিতও।কিন্তু এই ছেলের নামে মারামারির রেকর্ড আছে।আর আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার,সাধারণ পরিবার।আর তারা ক্ষমতাবান পরিবার।তাদের অনেক পাওয়ার।
আম্মু তাই রাজি না এখানে।
কিন্তু বাধ্য হয়ে রাজি হতে হচ্ছে তাদের।
-আমি আব্বুর সাথে কথা বলতে চাই,আব্বুকে ডাকো।
আম্মু আব্বুকে ডাকে।
আব্বু এসে আমার হাত ধরে কান্না করে দেন।
কাবিন টা করে নাও মামণি।
আমার মান সম্মানের বিষয়।আমি এই বয়সে আমার সম্মান হারালে মরণ ছাড়া আর পথ থাকবেনা।
অন্তত আমাদের ভালোর জন্য রাজি হয়ে যাও।
আমি আব্বুকে শুধু বললাম,তাই বলে আমার পছন্দ অপছন্দের কোন দাম নেই?
সারাটা জীবন আপনাদের কথা মত চলেছি আব্বু।
আর এখন এমন একটা ছেলের সাথে কাবিন করতে বলছেন,যাকে আমি না কোন দিন মানতে পারবো,না ভালবাসতে পারবো।আব্বু আমি অন্য কাউকে পছন্দ করি।
আমার আব্বু অসুস্থ হয়ে পড়েন।
আর সবাই আরো বেশি করে প্রেশার দিতে থাকেন।
অবশেষে বাধ্য হয়ে ফোনে কাবিন টা করেই নিতে হয় আমার।
সবার ভালোর জন্য আমার অর্পনকে গ্রহণ করতে হয়।
কিন্তু আমার আত্মা জানে নিনিত আমার সব টুকু জুড়ে।
যদি নিনিত সেদিন দেশে থাকতো,তাহলে আমি ওকে সব কিছু বলে একটা ডিসিশন নিতে পারতাম।কিন্তু আমার সেই পথও ছিলোনা।
সব কিছু শেষ হয়ে গেলো সেদিনই।
আর কথা হলো,অর্পন কার্ড পেলেই দেশে আসবে।
এতে যে কয় বছরই লাগুক।
অর্পন এখন চিন্তামুক্ত।এখন আর কেউ চাইলেও আমাকে বিয়ে করতে পারবেনা।
সেদিন আমি ৬ ঘন্টা অনলাইনে যেতে পারিনি।আমার একটা বদ অভ্যাস আছে,সেটা হলো আমি অতি কষ্ট পেলে,আর অতি রাগে মোবাইল ছুড়ে মারি।আর সেদিনও তাই করি।আমার মোবাইল টা সেদিন হ্যাংক করে বার বার।
সব ঝামেলা কাটিয়ে
৬ ঘন্টা পর আমি অনলাইনে যাই।
গিয়েই দেখি নিনিতের মেসেজ।
সারাদিন কই ছিলাম জানতে চেয়ে মেসেজ দিয়েছে অনেক।
আমি শুধু ওকে ফোন দিয়ে কান্না করে বলেছিলাম,সব শেষ নিনিত সব শেষ হয়ে গেছে।
সেদিন ওপাশ থেকে নিনিত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
এরপর লাইন কেটে দিয়ে আমি পাগলের মত চিৎকার করে কাঁদতে থাকি।
জীবন টা আমার ওখানেই থমকে যায়।
এরমাঝে অর্পনের সাথে আমার তেমন কথা হয়না বললেই চলে,
আমি তার সামনে ভিডিও কলেও যাইনি কখনো।
সে বুঝতো,আমি তাকে মানতে পারিনি এখনো।
সে কাজে বিজি থাকতো,আর আমি আমার লেখাপড়া নিয়ে।এর মাঝে আমার একটা অসুখ ধরা পড়ে।যার কারণে আমি অসুস্থই থাকতাম ১২ মাস।
বাসায় বন্দিই থাকতাম সবসময়।
কারো সাথে তেমন কথাও বলতাম না।
নিনিতের সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো তখনো।
ও আমাকে সাপোর্ট দিতো।বলতো,আমি সুস্থ হয়ে যাবো।
সব সময় ছায়ার মত থেকেছে ও আমার।
দেখতে দেখতে প্রায় দেড়/পৌনে দুই বছর।
কিছু দিন আগে শুনি,অর্পন দেশে আসবে।
নিনিত এত দিনেও দেশে আসেনি।ওর সাথেও আমার দেখা হয়নি এখনো।
নিনিতকে আমি মেসেজে জানালাম অর্পনের কথা,
ও আমাকে বল্লো,আমি যেন কোন দিন অর্পনকে কষ্ট না দেই।
ওর মাঝে যেন সুখ খুঁজে নেই।
আমিও বললাম,ও যেন দেশে এসে কাউকে বিয়ে করে নেয়।
দোয়া করলাম সুখী যেন হয়।
বিদায় নিলাম ওর কাছ থেকে।
কিন্তু মিথ্যে বলবোনা,আমি এত দিনেও নিনিতকে ভুলতে পারিনি।সব সময় মনে মনে ভেবেছি,ও যদি এর মধ্যে দেশে আসতো তাহলে ওকে আমি সব কিছু বুঝিয়ে বলতাম।আমার জীবনটা কত বড় এক ঝামেলার সাথে জড়িয়ে গেছে সব বলতাম।নয়তো পালিয়ে যেতাম।জীবন তো একটাই।আমারো তো ভালো ভাবে বাঁচার অধিকার আছে।কিন্তু আবার ভয়ও পেতাম,যদি কেউ নিনিতের ক্ষতি করে,বা আমার পরিবারের ক্ষতি করে আমি চলে গেলে।
কিন্তু কখনো নিনিতকে আমি কোন রকম আশা দেইনি।
বরং ওকে বলেছি,ভাগ্য টাকে মেনে নাও।
তবে আমার কপালে যে নিনিত নেই।তাইতো আজো সামনে থেকে দেখতেও পারিনি ওকে।আর সব কিছু বুঝিয়ে বলাতো দূরের কথা।
অর্পনের আসার কথা শুনে আমি নিনিতের সাথে টোটালি যোগাযোগ বন্ধ করে দেই।
যদিও ওর সাথে আমার তেমন কথা হতোনা শেষের দিকে।
আমিই ওর কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতাম যাতে ও আমাকে খুব সহজে ভুলে যেতে পারে।
শুনেছি চোখের আড়াল নাকি মনের আড়াল।
এরপর অর্পনের আগমন ঘটলো,
জানিনা আমি ওকে মানতে পারবো কিনা,
বা আমার জীবনে কি ঘটতে চলেছে।
সে কি আগের মতই আমাকে ভালবাসে,
নাকি আমাকে এখন আর ভালবাসেনা।
তা জানতে অবশ্যই পরবর্তী পর্ব পড়তে হবে।
চলবে…