ক্রাশ পর্ব ৪

#ক্রাশ
#নিহিন_ইলিয়ানা
#পর্ব_৪

চলছিলো আমাদের অদেখা বন্ধুত্ব।
আর সাথে ওই চ্যালেঞ্জ।
দেখা যাক বাজিতে কে জিতে,
নিহিন,
নাকি নিনিত।
পরের দিন আমি নিনিত কে বলি,চ্যালেঞ্জ ট্যালেঞ্জ বাদ।
ও বলে,নাকি হেরে যাবার ভয়?
আমি বললাম,নিহিন হারার মেয়ে না।

কিন্তু এর মাঝে অর্পন আবার ঝামেলা শুরু করে।কিন্তু এইসব ঝামেলার মাঝেও নিনিত ছিলো আমার ভরসা।
ওর সাথে কথা বললে আমি এসব ঝামেলা সব ভুলে যেতাম।যদিও তখন ও আমার বন্ধু।

হঠাৎ একদিন অর্পনদের বাসার মানুষ জন,আমাদের বাসায় এসে হাজির।
আমি বসে বসে টিভি দেখছিলাম।আর তারা বাসায় ঢুকে যায়।

যেহেতু এলাকায় তাদের অনেক নাম ডাক।
আর এসেছেও প্রায় অনেক জন।
আম্মুও ভয় পেয়ে যায়।
তারপর হঠাৎ মানুষ গুলো রুমের ভেতর ঢুকে আম্মুকে বলে তোমার মেয়েকে আমাদের অর্পন ভালবাসে।
আর ওকে বিয়ে করতে চায়।তুমি ওর বাবাকে জানাও আর বিয়ের ব্যবস্থা করো।

এইদিকেতো আমাদের হাত পা কাঁপুনি শুরু।

আম্মু বলে,ওর আব্বুর সাথে কথা বলে জানাবো।

উনারা বলেন,কোন জানাজানির দরকার নাই।
এই কথা বলেই অর্পনের কাকা আমার আঙুলে একটা আংটি পরিয়ে দেন।
আর বলেন,বিয়ে পাকা।
মেয়ের বাবার সাথে কথা বলে ডেট ফাইনাল করো।

আমিতো সেদিন কাঁদতে কাঁদতে শেষ।

আম্মু বলে,একি করলেন?আমাদের মেয়ে শিক্ষিত।
আর ওই ছেলে তো পড়াশোনাও জানেনা।
তখন ওই বাড়ীর মানুষ জন রেগে যান,আর বলেন কে বলেছে ও শিক্ষিত না?
ও তো এখনো পড়াশোনা করছে।
কলেজে যায়না।ঢাকায় গিয়ে শুধু পরীক্ষা দেয়।
পরে অবশ্য জানা যায়,আসলে নিজেদের এলাকার কলেজে পড়েনা বলে অনেকেই জানেনা ও যে পড়াশোনা করে।

আম্মু বলে,কিন্তু ও তো মারামারি করে,সবাই বলে।
তারা বলেন,আমাদের নাম ডাক আছে তাই ওই সব একটু আকটু হয়।আর মানুষ এমনিতেও আমাদের নামে খারাপ কথা ছড়ায়।

আম্মু আর কথা বাড়ায় না।

এদিকে আম্মু আব্বুকে সব জানায়।
আব্বু বলেন,আমি আমার বন্ধুর ছেলের সাথেই নিহিনের বিয়ে দিবো।
তুমি কোন চিন্তা করোনা।

এরপর আমি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ি অসুস্থ হয়ে পড়ি।
অনেক দিন অনলাইনে যাইনা।ফেসবুকে আসা হয়না।

আম্মু বলে,তুই এসব নিয়ে ভাবিস না।
তোর আব্বু একটা ব্যবস্থা করবেন।আম্মু অনেক বুঝায় আমাকে।

তারপর ডিপ্রেশন কাটিয়ে আমি কয়েক দিন পর অনলাইনে যাই।

আর গিয়ে আবার নিনিতকে বলি,
তুমি কিন্তু আমার প্রেমে পড়োনা কখনো।
আমি এংগেইজড।
ও আমাকে বলে,তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।
ও আর আমাকে জিজ্ঞেস করেনা কিছু আর আমিও বলিনা।

এদিকে আমাদের বন্ধুর মতই কথা চলতে থাকে।

কিন্তু হঠাৎ আমি একসময় ফীল করি আমি নিজেই নিনিতকে ভালবেসে ফেলেছি।
ওর জন্য অদ্ভুত একটা টান কাজ করে।
যেহেতু অর্পনের জন্য বাসা থেকে কোন সাপোর্ট নেই।
আর আমিও ওকে পছন্দ করিনা সেহেতু ভালবাসাটা নিনিতের জন্যই জন্ম নেয়।
আর ভাবতে থাকি,নিনিতও যদি আমাকে ভালবাসে আর দেশে আসে তাহলে আব্বু আম্মুকে আমি নিনিতের কথাই জানাবো।

আর একদিন নিজেই নিনিত আমাকে বলে দেয়,”ভালবাসি”
আর সাথে সাথে আমিও বলে ফেলি ভালবাসি“

এরপর একদিন ও ওর প্রোফাইলে একটা ছবি আপলোড করে।
যেই ছবিটা দেখে আমার বাকরুদ্ধ হবার অবস্থা।
সব সময় আমার বান্ধবীরা বলতো আজ ওর উপর ক্রাশ খেয়েছি,কাল ওর উপর ক্রাশ খেয়েছি।
কিন্তু আমার লাইফে আমি কোন দিন ক্রাশ শব্দ টাই ইউজ করিনি।

কিন্তু সেদিন প্রথম আমার মনে হলো,আমি ক্রাশিত হলাম,
আমার নিনিতের হাসিতে।
আমার লাইফের প্রথম এবং শেষ ক্রাশ আমার নিনিত।

দেখতে দেখতে চলছিলো আমাদের ভালবাসা।
স্বপ্ন দেখা।
ভালবাসা কি,সেটা আমি ওর থেকেই প্রথম জেনেছি।
সত্যিকারের ভালবাসার অনুভব আমি ওর থেকেই পেয়েছি।

এর মাঝে হঠাৎ শুনি অর্পনের বাইরে যাবার সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে।অর্পন ওদের বাসায় জানায় ও আমাকে বিয়ে করে রেখে যেতে চায়।
কিন্তু আম্মু কোন ভাবে তাদের রাজি করান যে ও দেশে আসলেই বিয়ে হবে।
আর এদিকে আমিও পড়াশোনা শেষ করি।

আর এমন ভাবে বোঝান যে সত্যি সত্যিই আম্মু খুশি মনে বলেছেন।
তাই তারাও এটাই মেনে নেন।
অর্পন বাইরে চলে যায়।
কিন্তু ও যাওয়ার আগে সারা এলাকা যে জানিয়ে যায় আমি ওর হবু বউ এটা আমরা কেউ বুঝতে পারিনি।
কিন্তু বুঝি তখন,যখন রাস্তায় বের হলে সবাই বলতো,কিরে তোর বর কেমন আছে।
মাথা আমার খারাপ হয়ে যেতো এসব কথা শুনে।

আমি না পারতাম এগুলো সইতে।না পারতাম কাউকে বলতে।
বাসায় এসে আম্মুকে বলতাম,সবাই দেখি জানে আমি অর্পনের হবু বউ।
আম্মু বলে,আর বলিস না।আমাকেও সবাই একই কথা বলে।জানিনা কি হবে।
এমন মানুষের নজরে পড়েছিস।
ও কি তোকে সহজে ছাড়বে?

ওই দিকে আমি এসব ঝামেলার কথা বার বার নিনিতকে বলতে চাইতাম।
কিন্তু বলতে পারতাম না।
ভাবতাম,ও তো দূরে।যদি এসব চিন্তা করে ও কাজের জায়গায় গিয়ে এক্সিডেন্ট করে ফেলে।বা যদি আমাকে ছেড়ে যায় এসব শুনে।যেহেতু আমাদের সামনাসামনি দেখা হয়নি,ও যদি আমার কথা বিশ্বাস না করে।

আর এই ভয় টা থাকার কারণও ছিলো বটে।
নিনিত আমাকে খুব সন্দেহ করতো।
যেকোন বিষয় নিয়ে অবিশ্বাস করতো,যেমন যার তার আইডির নাম বলে বলতো এগুলো তোমার আইডি।
ওই আইডি থেকে কাউকে কমেন্ট করলে বলতো,ওইসব কমেন্ট নাকি আমি করেছি।
অথচ ওর অগোচরে তখন আমার কোন আইডিই ছিলোনা।

আমি কসম খেয়েও ওকে বিশ্বাস করাতে পারতাম না যে ওগুলো আমার আইডি না।
এই সামান্য ব্যাপার গুলো ও বিশ্বাস করেনা।
আর এত বড় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আমার জীবনে।
আমি বললে বিশ্বাস করবে?
এই ভেবে লুকিয়ে যেতাম ওর কাছে।আর
ভাবতাম,সময় আছে যেহেতু আমার হাতে,সেহেতু ও আসলেই সব বুঝিয়ে বলবো।
তারপর যা ডিসিশন হয়,হবে।ও যদি চায় আমাকে ওর লাইফে জড়াতে তাহলে জড়াবে।

ওকে বার বার জিজ্ঞেস করতাম,আচ্ছা কবে দেশে আসবে তুমি?
ও বলতো,আমি এখন আসতে পারবোনা।
পারলে তোমার কাছে কবেই চলে আসতাম।

এরমাঝে আব্বু আসেন।
আসার পর আব্বু ছেলে দেখা শুরু করেন,
আর ওই দিকে এলাকায় এটা জানাজানি হয়।
আর সেটা অর্পনের কানেও পৌছে যায়।
অর্পন ওর বাসায় জানায় ও এই মুহূর্তে আমাকে বিয়ে করবে।
আজই বিয়ে করবে।যদি ওর পরিবার ওকে না করায় বিয়ে তাহলে ও সুইসাইড করবে।

তাই ওর পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় যেভাবেই হোক ফোনে কাবিন করাবে আমাদের।
আর যেহেতু অর্পন এক রোখা বদমেজাজি,তাই ও যেকোন কিছু করে বসতে পারে।

আর তাই ওর পরিবারের মানুষ জন এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারদের বুঝিয়ে আমাদের বাসায় নিয়ে চলে আসেন।আর ওর কাকাই একজন চেয়ারম্যান।
আর সাথে করে নিয়ে আসেন আমাদের এলাকার কয়েকজন মুরুব্বিদেরও।

আমরা কেউ জানি ও না কিছু।

আব্বুকে এসে সোজাসুজি বলেন আজ আপনার মেয়ের সাথে অর্পনের বিয়ে দিতে হবে ফোনে।
আব্বু বলে,এসব কিভাবে সম্ভব?
কিন্তু সবাই মিলে আব্বু আম্মুকে অনেক প্রেশার দিতে থাকেন।

এদিকে এত মানুষ আর আমাদের সাপোর্টে কেউ নেই।
সবাই বলছে,করে ফেলো মেয়ের কাবিন।এই ছেলে তোমার মেয়েকে ছাড়বেনা।আর গোপনে যদি অন্য কোথাও বিয়ে দাও,তাহলে তোমার অন্য মেয়ের সমস্যা হতে পারে।
আম্মু কান্নাকাটি করছে,এদিকে আমিও কাঁদছি।
আব্বুও কোন দিশা পাচ্ছেনা কি করবে।

আর আমি যে নিনিতকে কিছু জানাবো,নিনিত তো বাইরে।
ও না পারবে আসতে,না পারবে কিছু করতে।
ওর নাকি ভিসা নেই।

আর ওই দিকে অর্পন বার বার ওদের পরিবারে জানায়,কাবিন আজ না হলে অর্পনের লাশ যাবে দেশে।

অবশেষে আম্মু এসে আমাকে বলেন,

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here