চাঁদ হয়ে রবো পর্ব ১০

” চাঁদ হয়ে রবো”
~খাদিজা বিনতে হক
পর্ব-১০
তুষারের পুরো শরীর ঘেমেনেয়ে গেছে।
পারনের টি-শার্ট।ঘামে চুপ চুপে ভিজে গেছে।
পৌষী জানালা খুলে দিলো।বাহির থেকে ঠাণ্ডা বাতাস এসে ঘর ঠাণ্ডা করে দিচ্ছে
,
ছোটো খাটো একটা ঝগরা হয়েছে।ওদের
বিরল কোনো কারণ তুষার মনে করে না।
তবে কারণটা ও ছোটো করে দেখলেও কারনটা অবস্য ছোটো না।
পৌষীকে মারলেও ও তুষারের থেকে আলাদা ঘুমায় না।আজ মেজেতে চাদর বিছিয়ে শুয়েছে।
সারা দিনে ক্লান্ততায়।আর মন খারাপ মিলে।
শরীরটা তেনিয়ে আসছিলো।মেজেতে।ঠাণ্ডাও ভালো।
তাই চট করে চোখ কান্নায় ফোলা ফোলা পাতায় ঘুম চলে এলো।
আয়েস করে ঘুমচ্ছে পৌষী।উপরে বড় ফাকা বিছানা টায়।একা শুয়ে তুষার।
বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছে।
শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে গেছে।
হঠাৎ যে কেউ দেখলে ভাববে।ওর
শ্বাসকষ্টে সমস্যা আছে।
কন্ঠধার কেউ টিপে ধরেছে এমন অনুভুতি হচ্ছে।
গলা থেকে কণ্ঠস্বর বের হচ্ছে না।গুঙিয়ে একবার পৌষী বলে ডাক দিতেই।চোখ খুলে গেলো ওর।
বরা বরের পাতলা ঘুমের জন্য ও উঠতে পারে।আগেও যখন আল্প সল্প শব্দ পেতো চট করে উঠতো।
,
ঘামে ভেজা টি-শার্টটা খুলে রাখলো পাশে রাখলো।
তুষার পৌষীকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলল।
ফ্যনের স্পিড টা বারিয়ে দিতে।
পৌষী বারিয়ে দিলো।এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো তুষারের মুখের সামনে।পানি খেতেও যেনো ওর গলাতে আটকে যাচ্ছে।
হাত থেকে গ্লাসটা পরে ভেঙে গেলো।
পৌষী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
কিছু বলতে চায় না আনেক কিছু বলতে চায়।
তবে যার মনে সন্দেহ তাকে কোনো কিছু বলে লাভ হবে বলে মনে করে না ও।
,
পৌষী শান্ত গলায়।তুষারকে বলল।
“কতোবার বলেছি ভালো একটা ডাক্তার দেখান।দেখালেন।পরিক্ষা করলো।কতো কি।কি হলো তাতে।আপনার সমস্যাটা তো রয়েই গেলো”
তুষার প্রসঙ্গ পালটাতে বলল।
“আমার খুব মাথা ব্যথা করছে।মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবে।”
পৌষী যে কিছু একটা বলবে বলে মুখ খুলতে ওর মুখ থেকে বেরনোর আগে তুষার নিজে কথা বলে ওর মুখে আসা কথাটা কেরে নিলো।
“আমার পাশে একটু শুবে”
বেস ঠাট দেখিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে ওর।
এখন পাশে শুলে আমার নোংরা আপনার শরীরে লাগবে না।তখন তো ফরজ গোসল করতে হবে আপনার।কিন্তু কিছু বলল না।কারণ লাভ নেই।
,
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পৌষী বড়ো সরো করে অবাক হলো।
তুষার দু কাপ চা নিয়ে ঘরে এসেছে।
মসজিদ থেকে নামাজ পরে এসে মনে হয় বানিয়েছে।পৌষীর মুখ হা হয়ে গেলো।
যে কোনো দিনও এক গ্লাস পানি ঢেলে খেলে তার পুরুষত্ব হরন হবে সে ওর জন্য চা নিয়ে এসেছে।
সামনে যে ওর জন্য আরও অবাক হওয়া বাকি।
চাদর পেঁচিয়ে ধরফর করে উঠতেই তুষার ওকে জরিয়ে কপালে উষ্ণ চুমু দিয়ে বলল
“আমি নিজের হাতে বানিয়েছি।তোমার জন্য।নাও খাবে।সাথে বিস্কুট এনেছি।তোমার ফেবারেট বাদাম বিস্কুট”
পৌষী অবাক হয়ে মুখ হা করে খুলে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।
চায়ের দিকে তাকিয়ে অবাক হলো না।
তুষারের অভ্যাসের চা।করা লিকার লেবু পাতা।
পৌষীর অবস্য খেতে অসুবিধা হবে।কিন্তু তুষার প্রথমবার ওর জন্য কিছু করেছে খুসির বেগে ওগে সব করতে পারে।
,
চা শেষ করে তুষার ওকে জানালো।
আজ অফিস জাবে না।ফোন করে ছুটি নিয়ে নিবে।
এটা সব থেকে বড় অবাক হওয়ার বিষয়।
যে শুক্র বারও বাড়ীতে থাকে না এই কাজ

সেই কাজ দেখিয়ে বাড়ির বাহিরে থাকে।
ফোন করে ছুটি নিতে যাবে তার আগে পৌষী গলায় ওর ঠোটের একটা শীতল পরস দিয়ে গেলো।এটাও ওর জীবনে হবে কোনো দিনও ভাবে নি মেয়েটা।অবাক করার খাতায় অবাকের পরিমান বাড়াতে লোকটা যেনো আজ উঠে পরে লেগেছে।
পৌষীও পালা করে করে বিভিন্ন রুপে অবাক হচ্ছে।
,
বিথী এ বাড়ী থেকে চলে যাবে বলছে।
লিজা বেগম ওকে যেতে দিবে না এই নিয়ে কয়েক দফা ওকে গাল মন্দ করেছে।
তবুও ও জেদ ধরে বসে সে আর থাকবে না।
কারণ তুষার তাকে নানান প্রেত আত্নার কথা বলেছে।তেনারা নাকি খুব শক্তি শালি হয়।
তেনারা নাকি সুন্দরি মেয়েদের প্রতি আক্রিষ্ঠো।
ও আহামরি সুন্দরি না হলেও দেখতে বেস মাতাল করা ওর চেহারার গড়োন।যেকোনো ছেলে একবার দেখলে পাগল না হয়ে পারবেই না।
,
পুরো তৈরি হয়ে।লাগেজ গুছিয়ে ড্রইং রুমের সোফাতে বসে খালামনিকে আকুতি মিনতি করেছে।লিজা বেগম কপট দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওকে ধমকাচ্ছে।তার ধমকানোর শব্দে বিথী বারবার কেপে কেপে উঠছে।
,
তনয় মোবাইল টিপতে টিপতে বিথীর পাশে এসে বসে ওর সুন্দর পরিপাটি করে সেট করা চুলটাকে এলো মেলো করে দিলো।
আড় চোখে একবার তাকালো।তনয়ের।মুখের দিকে।ওর লম্বা লম্বা চুল গুলো বাতাসে আচরে পরছে ওর কপালে।সে দিকে ধ্যানমগ্ন হয়ে তাকিয়ে বিথী।কি জানি কবে মরে যায়।
,
“এই অসভ্য।ফাজিল।তুই আমার চুলটা নষ্ট করলি কেন”
“কি কাকের বাসার মতো চুল তা আবার নষ্ট।ওগুলো তো নষ্টই থাকে।।শোন।ফ্রিতে একটা উপদেশ দি।শোন।।মাথায় ওড়না দিয়ে হাটবি”
বিথী উঁচু নিচু ভ্রু করে বলল
“কেন”
“তোর যা হেয়ার স্টাইল।কাক অথবা পাখি ভাববে ওদের নেস্ট।নেস্ট অর্থ বুজিস।পাখির বাসা।।ক্লাস ওয়ানে পরে ছিলি।দেখলি তোর।মানে ওদের পাখির বাসায় ডিম পেরে তা দিতে বসে গেলো।তোর পাত্তাই নেই”
বিথীর দু চোখে জল ছল ছল করছে।
ওর চোখের পানি চিৎকার দিয়ে বলছে।
জানিস তোর থেকে তুষার ভাই হাজার গুনে ভলো।
পৌষী কে কতো ভালবাসে।
অন্য কারো হাতে ধরা না পরলেও।তুষার যে পৌষীকে ভালোবাসে বিথীর চোখে ধরা পরেছে।
তাই তো সে জোর দিয়ে বলছে একথা।
বিথী বলল।
“তুই একটা আসলেই অসভ্য”
“এখানে অসভ্যর কি দেখলি।আমি কি তোর গা থেকে ওড়না টেনে খুলেছি।না তোর সাথে লেইম ইউজ করেছি”
“ছিঃ তুই এতোটা নির্লজ্জ”
“এবার থাম বলছি”
“থামবো কেনো।তুই নির্লজ্জ।।অসভ্য”
“আগের বার ইগনোর করেছি।এবার কিন্তু করবো না।হ্যা আমার মাঝে তো রাজ্যের নির্লজ্জতায় টইটুম্বুর।আমি অসভ্যতার শেষ ধাপে।দেখবি আমার নির্লজ্জতা।অসভ্যতা”
“খালা মনিকে ডাকবো কিন্তু”
“ইশ ফিটিং বতলে দুধ পিতা বাচ্চা।”
তনয় ভেঙিয়ে বলল
“ইশশ।তোর দেখছি।লজ্জা সরম কিচ্ছু নাই।মেয়েদের সাথে কিভাবে ,,,,”
তনয় ওকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে বলল।
“লজ্জা সরম দুটোই তো এক।তাই মিনারেল ওয়াটার দিয়ে খেয়ে ফেলেছি।অবস্য এখন আরও একটা জিনিস খেতে ইচ্ছে করছে”
“কিহহ”
তনয় স্মিত হাসলো
“হাসছিস কেন”
“তুই আমার কে হে সব বলতে হবে”
বিথী তনয়ের চুল টেনে দিলো এক দৌড়।
দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।
তনয় যা খেপে আছে ওকে হাতের কাছে পেলে।
কুচি কুচি করে কেটে বোস্তা ভরে নদীতে ফেলে।
রাবনের মতো হুহু হাহা করে হাসবে মনের তৃপ্তি নিয়ে।
তনয় দরজার বাহিরে দাড়িয়ে ঠক ঠক করে।
টোকা দিয়ে ।চিৎকারের স্বরে বলল।
“কুত্তী দরজা খোল।তোর একদিন কি আমার যে কয় মাস লাগে”
বিথী দরজার কাছে কাচুমাচু মুখ করে দাড়িয়ে।
সায়েস্তা কয়তে গিয়ে মনে হয় একটু বেসিই করে ফেলেছে।ভিতু কন্ঠে বলল
“না আমি খুলবো না”
তনয় রাগে দরজায় দুটো জোরে লাথি দিয়ে চলে গেলো।দরজায় লাথি শব্দে বিথী কেপে উঠলো বার বার।
তনয় বিড়বিড় করে বলল।
“তোর মাথার চুলের যদি চৌদ্দটা না বানাই তাহলে আমিও মুশফিকুর রহমান তনয় না”
,
তুষারের পৌষীক অবাক করার মনে হয় এটা শেষ ধাপ।পিছন থেকে আলতো করে জরিয়ে বলল।
আমরা আজ ঘুরতে যাবো।
পৌষী আহ্লাদী মুখ করে তাকালো।
ভেজা হাত ওড়নার কোনাতে মুছে জানতে চাইলো “কখন”
তুষার বিরক্ত হলো অথবা রাগ করলো।
এমন ভঙ্গিতে চোখ কুঁচকেছে।কিন্তু মুখে প্রকাস করলো না।বিরক্ত হওয়ার কারন অবস্য।
ও ওড়নায় হাত মুছেছে।
ও নিজেকে চিন্তা মুক্ত থাকতে চায় পৌষীকেও রাখতে চায়।এজন্য ওকে কিছুই বলল না।
অনেক চিন্তা করে ঘুরতে যাওয়ার প্লান করলো।
বাহিরের খোলা হাওয়ায় মনটা ভালো হয়ে যাবে। কিছুদিন ওদের উপর দিয়ে যা যাচ্ছে।
পোষী হাসলো।তুষার ওর হাসির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চওরা হাসি দিলো।হাসির মাঝে ওদের অনেক না বলা কথা।
,
,
চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here