#নিশির_সংসার
#৪র্থ_পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy
— কি সুসংবাদ ভাবী?
ভাবী হেঁসে বললো — আরে আগে বসো এখানে তারপর বলছি!
নিশিতা জানার নিয়ে চেয়ারে বসে পরলো।
ভাবী নিশিতার হাত ধরে বললো — আজকে তোমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে!
নিশিতা কিছুক্ষণ ভাবীর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো — এই পাত্র আবার কে জোগাড় করলো?
— কে আবার করবে তোমার ভাইয়াই জোগার করেছে।
— ভাইয়া তো এর আগেও কয়েকটা পাত্র জোগার করেছিল।কিন্তু একটাও তো বিয়ের উপযোগী ছিলো না।
— আরে আগে উপযোগী ছিল না তাতে কি?তোমার ভাইয়া বলেছে এইটা তোমার উপযুক্ত হবে!
— কেমনে?
— কারন ছেলেটা ধার্মিক,দ্বীনদার। আর সেও তোমার মতই একজন মেয়ে খুজছে তাই।
নিশিতা হেঁসে বললো — এর আগেও এমন ছেলে এসেছিল কিন্তু তারা সবাই আমার ডিভোর্স এর কথা শুনে আর সামনে এগোয় নি।আবার কয়েকজন তো মোটা অংকের যৌতুকও দাবি করেছিল।
ভাবী এবার নিশিতার দুহাত ধরে বললো — না এটা মে বি তেমন হবে না?
— কি করে বুঝলে?
— কারন ছেলেটাকে তোমার ভাইয়া চিনে।সে তোমার ভাইয়ের সাথে একই কোম্পানিতে ভালো বেতনের চাকরি করে।তাই তোমার ভাইয়া সব দিকে জেনেশুনে, ভেবে এই পাত্র ঠিক করেছে।
— কিন্তু আমিতো ডিভোর্স এই কথা শুনে সেও পিছিয়ে যাবে!
— আরে না,সেও এর আগে বিয়ে করেছিল কিন্তু বেচারার বউ তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে!
— যার বউ তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়,,সে আবার ভালো আর দ্বীনদার হয় কেমনে?
— আরে সে অন্য কারনও তো থাকতে পারে!হয়তো সেও তোমার মতন পরিস্থিতিতে পরে ডিভোর্সে রাজি হয়েছে।
যাই হোক দেখলেই তো আর বিয়ে হয়ে যায়না।আর তোমার ভাইয়া কখনওই তোমার সুখ ব্যতীত দুঃখ চায়না।
আমি এখন যাই অনেক কাজ পরে আছে,,তোমাকে কথাটা জানাতেই এখানে আসা,বলেই ভাবী চলে গেলেন।
আসরের পর পাত্র পক্ষ নিশিতাকে দেখতে এলো।
নিশিতাকে দেখে সবাই পছন্দ করল।নিশিতার পরিবারেও পাত্রকে পছন্দ হলো।
পাত্র পাত্রিকে কথা বলার জন্য আলাদা রুমে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলো।সাথে নিশিতার দাদিও গেলেন।
পাত্রের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে নিশিতা।
পাত্র হালকা কাশি দিয়ে সালাম দিলো।
নিশিতাও সালামের জবাব দিলো।
— তা কেমন আছেন?
— জি,আলহামদুলিল্লাহ ভালো,, আপনি কেমন আছেন?
— আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো,, এবার আমার পরিচয়টা দেই?
— নিশিতা মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলো।
— আমার নাম নিলয়।আমি আপনার ভাইয়ের সাথেই একই কোম্পানিতে চাকুরি করি।আপনাদের পাশের এলাকায়ই আমার বাড়ি!
— জি এগুলা আমি জানি,,আপনারা আসার আগেই ভাইয়া আমাকে এগুলা বলেছে।
— তাহলে তো ভালোই,,এখন আপনার মতামত কি?
— আমার আবার কিসের মতামত?
— আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে কিনা,,আমাকে বিয়ে করবেন কিনা,,এইটাই জানতে চাইছি!
— সবাই তো পছন্দ করেছে আপনাকে,তাহলে আমার সম্মতিও তাই!
— সবারটা আর আপনারটা আলাদা মতামত,, বিয়েটা দু একদিনের জন্য না,,বিয়ের পর সারাজীবন আমার সাথে আপনিই ঘর সংসার করবেন,,তাই আপনার মতামতটাই বেশি জরুরি,, আপনার যদি আমাকে পছন্দ না হয় তাহলে বলতে পারেন,,আমি চাইনা কেও তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে বিয়ে করে পরে সংসার জীবনে অশান্তি ঘটায়।
নিশিতা কিছুক্ষনের জন্য চুপ থেকে জানালো – নিলয়কে বিয়ে করতে তার কোন আপত্তি নেই!
— আলহামদুলিল্লাহ!.
— আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে!
— পছন্দ হবে না কেনো।পছন্দ না হওয়ার তো কোন কারন নেই!
— একটা কারন তো আছে!
— মানে!
— মানে আমি ডিভোর্স,, যার কারনে অনেকেই বিয়ের কথা বলতে এসে ফিরে গেছে।
— আমি জানি এসব,,আপনার ভাই আমাকে সব বলেছে।
— সব জেনে শুনেও আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?আপনি চাইলে তো আমার থেকে ভালো আর কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারবেন।
— হ্যা আমি আপনাকে বিয়ে করব।আপনার ডিভোর্স এর কারন আমি জানি,,এই ডিভোর্স করার ফলে তো কোন অন্যায় আপনি করেন নি,,একজন অসৎ লোকের সাথে কেই বা সংসার করবে!একটা ডিভোর্স এর জন্য মেয়েদের অনেকভাবে দোষী করা হয়,,কিন্তু কেও এটা বুঝে না যে কেও ইচ্ছাকৃত ভাবে ডিভোর্স নিতে চায়না,পরিস্থিতির চাপে পরেই ডিভোর্স হয়,, আর আমারও স্ত্রী ছিল তার সাথে আমারও ডিভোর্স হয়েছে,,তাই আমি চাই আমার লেভেলের দ্বীনদার কাওকে বিয়ে করতে,,আর সেটা আপনি।
নিলয়ের কথা শুনে নিশিতা মনে মনে খুশি হলো।নিশিতা ভাবল এই ছেলেটা আগে দেখা ছেলেদের চেয়ে অন্যরকম,, মেয়েদের প্রতি সম্মানটুকু আছে।
শুক্রবার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো। কারন দুপরিবারেই পাত্র পাত্রিকে পছন্দ হয়েছে।
কিন্তু বিয়ের মাঝে ঝামেলা পাকালো নিলয়ের বড় চাচা।
নিশিতা এবার ভেবে নিলো আর এই বিয়েটাও হবে না…………………………………
চলবে……………………………………???