নিশির সংসার পর্ব ৩

#নিশির_সংসার
#৩য়_পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy

বাবার কারনে সেদিনের রাতটা অভিশপ্ত হয়ে উঠে।কারন,বাবা সকাল হতে না হতেই আমাকে নিয়ে আমার স্বামীর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।মা অনেক করে বাবাকে বলেছিল – মেয়েটাকে কিছু খেয়ে যেতে দাও,কতদিন হলো মেয়েটা আমার হাতের রান্না খায়না,অন্তত আজ খেয়ে যেতে দাও!

বাবা রাগি কন্ঠে বলেছিলেন — খাওয়া লাগবে না।শ্বশুর বাড়িতে গিয়েই খাবে।ও বাড়িতে কি খাবারের অভাব নাকি?

সেদিন আমার কোন কথা না শুনেই বাবা আমাকে আমার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে আসে।আমি অনেক করে বাবাকে বলেছিলাম যে – আমি ওই খারাপ লোকটার সাথে থাকতে পারব না।তার সাথে আমি আর সংসার করতে পারব না।

— কেনো ওই লোকটার সাথে সংসার করলে সমস্যা কি তোমার?

— কারন সে একজন মাদক ব্যবসায়ী,, খারাপ পথে অর্থ উপার্জন করে আবার সে নিজেও মাদক সেবন করে।আমাকেও মাঝে মাঝে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে,,আবার যৌতুক চেয়েছে আমার কাছে,,

— যৌতুক চেয়েছে যোতুক দিবো তাতে সমস্যা কি?আমার কি টাকা পয়সার অভাব আছে নাকি?

— বাবা সেটা কথা না।আমাকে কি বাজারের পন্য বানিয়ে তাদের কাছে বিক্রি করবে?আমি কি পন্য নাকি আল্লাহর সৃষ্ট সেরা জীব?

— এত জ্ঞান দিতে এসো না,,আমি তোমাকে জন্ম দিয়েছে। তাই তোমার থেকে আমার জ্ঞানট বেশি।আর জামাইকে যা দিবো তা তো পরে তোমারই থাকবে।

সেদিন অনেক করেও বাবাকে বলেও বুঝাতে পারিনি।

বাবা আমাকে নিয়ে সেদিন স্বামীর বাসায় গিয়েছিল।আমার স্বামীর এক হাতে আমার হাত দিয়ে অন্য হাতে যৌতুকের ৫০০০০ টাকা দিয়ে সেদিন বাবা চলে এসেছিল।

বাবা যেতে না যেতেই আমার স্বামী আমার হাত ঝামটি মেরে ছেড়ে দিয়ে বলেছিল– কি রে এখন না সেই টাকা দিলিই, তাহলে গতকাল তো আর মারগুলা খেতে হতো না।যা গিয়ে রেস্ট নে আমি কাজে যাব।

আমার স্বামী বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই আমার শ্বাশুরি আর ননদ এসে আমার নানান কটু কথা শুনায়।
আমাকে কিছু বলার আগে আমার শ্বাশুরি ভাবল না যে,তারও একটা মেয়ে আছে,,তারও একদিন বিয়ে হবে।সেও অন্যের বাড়িতে বউ হয়ে যাবে।তখন যদি তার মেয়ের সাথে এমন হয় তখন তিনি মা হয়ে কি করবেন?।
আমার ননদ একটি বারের জন্যও ভাবল না যে আমার বিয়ের পর যদি আমার সাথে এমন ঘটনা ঘটে তখন আমি কি করব?

দিনে দিনে সবকিছু কেমন জানি এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল।
আমার যৌতুকে টাকা দিয়ে আমার স্বামী মদের ব্যবসা আর জোয়া খেলে সব টাকা মাত্র কয়েকদিনের মাঝেই শেষ করে দেয়।

যার ফলে পুনরায় আমাকে টাকা আনার জন্য চাপ দেয় কিন্তু আমি সেদিনও রাজি হইনি।
সেদিনও আমাকে মারধর করে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যান।আর যাওয়ার আগে বলে যায় – শোন এক সপ্তাহের মধ্যে আমার এক লক্ষ টাকার দরকার, তাই যে করেই হোক তুই টাকা এনে দিবে।আর আমি তোর বাবাকে যতটুকু চিনি।তাতে তুই তাকে বললেই তিনি টাকা দিয়ে দিবে,,

আমি তখন রুমের এক কোনে বসে কান্না করছিলাম।এমন সময় কারও কল শুনে চোখ মুখ মুছে ফোন রিসিভ করি।তড়িঘড়ি করে রিসিভ করতে গিয়ে নাম্বার টাও ভালোভাবে দেখিনি সেদিন।।
রিসিভ করে সালাম দিতেই অপর পাশ থেকে সালামের উত্তর দিয়ে বলল — কি রে কেমন আছিস?

ভাইয়ার কন্ঠ শুনে মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি সত্তিই এটা ভাইয়ার নাম্বার।।বিয়ের পরে মা আর ভাইয়ার কয়েকদিন পর পর ফোন দিয়ে আমার খুজখবর নিতো!কিন্তু সেদিন কেনো জানি ভাইয়ার ফোন পেয়ে আবেগপরায়ণ হয়ে গিয়েছিলাম।তবুও নিজেকে যথাসাধ্য কন্ট্রোল রেখে বলেছিলাম….
— হ্যা, ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?.

— আমিও ভালো আছি?

একহাতে চোখ মুছে আবার জিজ্ঞেস করলাম — বাবা মা, ভাবি কেমন আছে?

— সবাই ভাল আছে।কিন্তু তোর কন্ঠ এমন লাগছে কেনো? কি হয়েছে তোর?

— কই ভাইয়া কিছুই তো হয়নি।

— না না,কিছুতো একটা হয়েছে তোর।সত্যি করে বল কি হয়েছে তোর।কোন কিছু লুকাবিনা আমার কাছে,মনে রাখিস ছোটবেলা থেকেই আমি তোর সাথে বন্ধুর সাথে মিশে এসেছি।তাই সত্য কথাই বলবি।

সেদিন কান্না করতে করতে স ভাইয়াকে সব কিছু বলে দিয়েছিলাম।কারন ভাইয়া সবসময় বিপদে আপদে আমাকে বন্ধুর মতন সাহায্যে করে এসেছে।বাবা মায়ের থেকেও ভাইয়া আমাকে বেশি বুঝে।

আমার সব কথা শুনে ভাইয়া বলেছিল — তুই কোন চিন্তা করিস না,, আমি আগামীকাল সকাল আসব।

সেদিন রাতে আমার স্বামী বাসায় আসেনি।

পরদিন সকালেই ভাইয়া আমার স্বামীর বাসায় চলে আসে।কিন্তু আমার স্বামী তখনো বাসায় আসেনি।
আমার শ্বাশুরি আর ননদ ভাইয়ার আসায় খানিকটা অবাক হয়ে যায়।

ভাইয়া যখন জানল আমার স্বামী বাসায় নেই তখন ভাইয়া আমার স্বামী কে ফোন দিলো। কিন্তু আমার স্বামী ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দিয়ে বাসায় আসতে অসম্মতি জানাল।কিন্তু ভাইয়া যখন পুনরায় ফোন দিয়ে বলল যে,টাকা দেওয়ার জন্যই ভাইয়া এখানে এসেছে।তখন আমার স্বামী মিষ্টি কন্ঠে বলছিল — ভাইয়া আপনি একটু বসুন আমি তাড়াতাড়ি আসতেছি।
তখন লক্ষ্য করলাম আমার শ্বাশুরি আর ননদের মুখে বিজয়ী হাসি।

কিছুক্ষনের মধ্যেই আমার স্বামী বাসায় আসে।
বাসায় আসতে না আসতেই ভাইয়া বলল — কাল রাতে কই ছিলে?

আমার স্বামী হেসে বলেছিল — ইয়ে ভাইয়া বন্ধুর বাসায় ছিলাম।

— বন্ধুর বাসায় ছিলা নাকি পতিতালয়ে বান্ধুবির কাছে ছিলা।
একথা বলার সাথে সাথেই আমার স্বামীর মুখের হাসি এক্ নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।

— কি হল,আমি কি ঠিক বলছি?

আমার স্বামী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল — আপনি জানলেন কি করে আমি পতিতালয়ে ছিলাম?আপনিও কি পতিতাবৃত্তি করেন নাকি?

ভাইয়া তখন রেগে গিয়ে বলেছিল — আমি কি তোর মতন জানোয়ার নাকি যে ঘরে বউ রেখে পতিতালয়ে যাব।আমি কাল রাতে অফিস থেকে ফেরার পথেই তোকে পতিতালয়ে ডুকতে দেখেছি।
যৌতুকে টাকা দিয়ে মদ খেয়ে পতিতালয়ে ফুর্তি করতে খুব মজা লাগে তাই না।

ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল — তুই রুমে গিয়ে তোর কাপড়চোপড় গুছিয়ে নে!

আমি অবাক হয়ে বলেছিলাম– কেনো ভাইয়া?

— যা বলছি তাই কর!এই দুৎ চরিত্র লোকের সাথে তুই সারাজীবন ও সুখের সংসার করতে পারবি না।তাই যা বলছি তাই কর,এই নরকের সংসারে আর এক মুহুর্তও নয়।

আমিও সেদিন ভাইয়া কথায় সম্মতি দিয়ে কাপড়চোপড় গুছিয়ে ভাইয়ার সাথে আমার বাসায় চলে এসেছিলাম।আমি রুমে যাওয়ার পর আমার স্বামী আর ভাইয়ার সাথে কি কথা হয়েছিল তা আজও জানি না।

বিয়ের এক বছর হতে না হতেই আমার ডিভোর্স হয়ে যায়।বাবা এনিয়ে ভাইয়াকে অনেক কথা শুনায়,, আমার কথা ভেবে ভাইয়া সব কিছু মেনে নিয়েছিল।

ডায়রিতে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া এমন দুর্ঘটনাময় সংসারের কথা লিখতেছিল নিশিতা।
এমনসময় বাইরে থেকে কেও চিৎকার করতে করতে বলে আসছে — নিশিতা নিশিতা তোমার জন্য একটা সুসংবাদ আছে।

নিশিতা পিছনে তাকিয়ে দেখল ভাবি নিশিতার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।নিশিতা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল — কি সুসংবাদ ভাবি?

ভাবি হেসে বলল — আরে আগে শান্ত হয়ে বসো তারপর বলছি………………………………………

চলবে………………………………………???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here