নিশির সংসার পর্ব ২

#নিশির_সংসার
#২য়_পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy

মনে মনে ভাবলাম, বাবা কি না শেষ পর্যন্ত আমাকে এমন একজনের সাথে বিয়ে দিলো।যে কিনা একজন মাদক ব্যবসায়ী আর মাদক সেবী।
সেদিন আমার স্বামী মদ বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা খেয়েছে।
তাই থানায় নিয়ে তাকে মারধোর করা হয়েছিল।সকালে পুলিশ আমার স্বামী কে ধরেছিল কিন্তু বিকেলে আমার শ্বাশুরি পুলিশকে টাকা দিয়ে আমার স্বামী কে ছাড়িয়ে আনে।
বিয়ের দ্বিতীয় দিন যদি কেও জানতে পারে যে, তার স্বামী একজন অবৈধ ব্যবসায়ী, একজন মাদক বিক্রেতা, একজন পেশাদার মাদক সেবী, এগুলা জানার পর একজন মেয়ের মনের কি অবস্থা হতে পারে?তার উত্তর হয়তো সবার জানা নেই,,কিন্তু আমার সবটাই জানা আছে।আমার স্বামীর বেপারে এসব জানার পরই তার প্রতি আমার ঘৃনা বেরে যায়।

রাতে খাওয়ার টেবিলে খাওয়ার সময় আমার গলা দিয়ে কোনো খাবার নামলো না।কি করে নামবে এসব হারাম টাকার উপার্যনের কেনা খাবার।যেগুলা আমি ছোট থেকেই ঘৃনা আর বর্জন করে এসেছি আজ আমি সেই নদীতেই নৌকা চালাচ্ছি।এসব ভাবতেই খাবারের প্রতি কেনো জানি একটা অনিহা সৃষ্টি হয়ে যায়।যার ফলে সেদিন রাতে না খেয়েই রুমে চলে আসি।রুমে আসার পর অনেক পানি পিপাসা পায়।যার ফলে রুমে থাকা পানি থেকে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নেই।যখন পানির গ্লাস হাতে নেই তখন কেনো জানি পানিটাও খেতে ইচ্ছে করছিল না,,তবুও জীবন বাঁচাতে পানিটুকু খেতে হলো।

আমার স্বামী রুমে এসে কোনো কথা না বলেই আমাকে ব্যবহার করে সে তার চাহিদা পূরন করে ঘুমিয়ে পরে।কিন্তু তখন আমার চোখে কোনো ঘুম নেই।তখন শুধু আমার চোখ পানিতে ঝলমল করছিল।
আমি না খেয়ে চলে আসলাম কেনো,, আমার খুদা আছে কিনা সে কথা জিজ্ঞেস না করেই সে আমাকে ব্যবহার করে তার চাহিদা পূরন করল।
আচ্ছা বিয়ে মানেই কি শুধু একে অপর কে ব্যবহার করে নিজের জৈবিক চাহিদা পূরন করা? নাকি বিয়ে মানে দুটি মানুষের সকল প্রকার শারীরিক মানুষিক চাহিদা পূরন করা,,বিয়ে মানে কি দুটি মানুষের হাজারো কল্পনা কে একে অপরের হাত ধরে বাস্তবে রুপান্তর করা!দুটি মানুষের সকল সুখ দুঃখের ভাগিদার হওয়া!কিন্তু আমার সেসময় মনে হয়েছিল আমার স্বামীর কাছে বিয়ে মানে হলো শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা পূরন করা।আমি তো শুধু মাত্র তার জন্যই ছিলাম কিন্তু সে আমার সাথে কখনওই ভালোভাবে কথা বলতো না।কখনওই ভালোবাসার কথা তো দূরে থাক আমি বললেও আমাকে ধমক দিয়ে বলতো — এসব ন্যাকামো ভালোবাসা দিয়ে জীবন চলে না!

সেদিন আমি তাকে বলেছিলাম — ভালোবাসা দিয়ে জীবন না চললে আমাকে বিয়ে করেছেন কেনো?

— বিয়ে করেছি আমার চাহিদা পূরনের জন্য।এসব ভালোবাসার রঙ ঢং করার জন্য না।পৃথিবী তে ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই,দুবেলা দুমোটো ভাত আর নিজের চাহিদা পূরনই আমার কাছে সব।এসব ভালোবাসা নিয়ে থাকার সময় আমার কাছে নেই।

— এগুলাই যদি আপনার কাছে সব হয় তাহলে মদ খান কেনো?মাদক ব্যবসা করেন কেনো?..
এসব তো হারাম!

— এই শোনো আমি তোমাকে এসবের জবাব দিতে বাধ্য নই।

আমার স্বামী আমাকে কখনওই কোন কিছুর জবাব দিত না।আমি কোন কিছু জিজ্ঞেস করলেই তিনি আমাকে ধমক দিতেন,মাঝে মাঝে অশ্লীল ভাষায় গালাগালিও করতেন।

সে সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে গেতো আর রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরত।বাসায় ফিরে তার চাহিদা মিটিয়েই সে ঘুমিয়ে পরত।কখনওই আমার সাথে ভালভাবে কথা বলতো না।কখনওই সে আমার অনুভূতি বুঝার চেষ্টা করত।তার কাছে আমি ছিলাম শুধুমাত্র তার চাহিদা মেটানোর বস্তু।

বিয়ের একমাস পর আমার স্বামী আমার কাছে মোটা অংকের যৌতুক দাবি করে।আমাকে বলে বাবার কাছে থেকে টাকা এনে দিতে।
কিন্তু এতে আমি কিছুতেই রাজি ছিলাম না।
তাই আমার স্বামী সেদিন রাতে আমাকে অনেক মারধর করে।আমার স্বামীর মার খেয়ে আমি যতটা না কষ্ট পেয়েছি তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি আমার শ্বাশুরির ব্যবহার দেখে।
আমার স্বামী যখন আমাকে মারধর করছিল তখন আমার শ্বাশুরি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখছিল আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছিল — বলি বাপের বাড়ি থেকে কয়েক হাজার টাকা এনে দিলে কি হয় শুনি?আমার ছেলে একটা ভালো ব্যবসা শুরু করবে তাই কিছু টাকার দরকার। সবাই তো বিয়ের আগেই আর বিয়ের সময়ই যৌতুক নেয় আমার ছেলে না হয় বিয়ের পরেই নিবে তাতে সমস্যা কি শুনি?আমার ছেলে ব্যবসা করে যে টাকা কামাই করবে তা তো তোমাদেরই থাকবে।তা বলছি ভালোই ভালোই টাকায় এনে দেও,তা না হলে মার খেয়ে মর গিয়ে,বলেই তিনি ঘামটি মেরে চলে যান।

আমার স্বামী আমাকে মেরে সে রাতেই আমার বাড়ির সামনে রেখে আসে।আমি শুধু অসহায় দৃষ্টিতে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছিলাম আর অঝোরে আমার দুচোখ বেয়ে পানি পরছিল।

যখন বাড়িতে ডুকলাম তখন পরিবারের সবাই আমার দিকে শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।কারন আমার শাড়ির আচল ছেড়া ছিল,ঠোট ফেটে রক্ত বের হচ্ছিল,পিঠে কালো দাগ লেগে ছিল।
মা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলে — কি হইছে তোর।এত রাতে এই অবস্থায় তুই এখানে কেনো?

আমি তখন কিছুই বলতে পারিনি শুধু মাকে জরিয়ে ধরে কান্না করছিলাম।
সবাই যখন আমাকে নিয়ে ব্যস্ত বাবা তখন সোফায় বসে পেপার পরছিল।আমাকে দেখে কোন প্রতিক্রিয়াই করেনি বাবা।

বড় ভাবি এসে আমাকে রুমে নিয়ে যায়।
সেদিন রাতে কিছুই খাওয়া হয়নি।আমার এখানে আসার কারন,আমার স্বামীর অপকর্মের কথা সবাইকে বলি।এসব বলার পর মা তো কান্না শুরু করে দেয়।বড় ভাইয়া তো তখনি আমার স্বামী কে মারার জন্য ভাইয়ার বন্ধুদের ফোন দেয়। আমি অনেকবার নিষেধ করার পর ভাইয়া শান্ত হয়।

রাতটা নির্ঘুমে কাটলো।সারারাত মা আমার পাশে ছিল।আমি আর মা এক রুমে ছিলাম।
কিন্তু বাবার কারনে সেদিনের সকালটা অভিশপ্ত হয়ে উঠে………………………………….

চলবে………………………………???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here