নিশির সংসার পর্ব ১

বাসর রাতে যখন আমার স্বামী মদের বোতল হাতে নিয়ে মাতলামি করতে করতে রুমে ডুকে তখন আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই।সে এক হাতে মদের বোতল নিয়ে আরেক হাতে খপ করে দরজা লাগিয়ে দেয়।রুমের সোফায় বসে বোতলের সম্পূর্ণ মদ শেষ করে যখন খাটের উপর আমার সামনে বসলো তখন ভয়ে আমার হাত পা কাপুনি ধরে যায়,বুকের ভেতরে হার্টবিট ক্রমশ বেড়েই যায়।সে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কোনো কথা না বলে আমাকে কিছু বুঝতে না দিয়েই হঠাৎ করেই আমার উপর ঝাপিয়ে পরে,,আমি কোনো কিছু বলতে যেয়েও কিছুই বলতে পারিনি।কারন,আমি যে বিবাহিত, এখন আমাকে স্বামীর কথা শুনতে হবে তা না হলে যে আমার সংসার টিকবে না।।
আমার স্বামী যখন তার চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত তখন আমার চোখ দিয়ে টপটপ পানি পরছে।ব্যাথ্যায় আমি সহ্য করতে না পেরে তাকে বলেছিলাম আমাকে ছেরে দিতে, কিন্তু সে আমার কথা শেষ না হতেই সে আমাকে বিশ্রী ভাষায় গালি দেয়।তখনি বুঝেছিলাম যে বাবা আর যাই হোক কোন ভালো ছেলের সাথে আমার বিয়ে দেননি।যে ছেলে কিনা বাসর রাতে মদের বোতল নিয়ে বাসরঘরে ডুকে সদ্য বিবাহিত নতুন বউয়ের সম্মুখে বসে মদ পান করে সে আর কি করে ভালো আর সৎ মানুষ হয়।সে যখন তার শারীরিক চাহিদা মেটাতে আমাকে ব্যবহার করছে তখন আমি শুধু চাপা কান্নায় মগ্ন ছিলাম। কত স্বপ্ন ছিল স্বামী সংসার আর বাসর রাত নিয়ে কিন্তু সেদিন আমার স্বামী কে দেখে তার আচার ব্যবহার দেখে বুঝেছিলাম আর তিলে তিলে বুনা স্বপ্নগুলা সব মাটি চাপা পরে গেছে।আমি তখন আর কিছুই করতে পারছিলাম না,,শুধু আমার চোখ বেয়ে টপটপ পানি গড়িয়ে পরছিল। আমার চোখে পানি দেখে তিনি বলেছিলেন– এই শোনো একদম নেকা কান্না কান্না কাঁদবে না,,প্রথমবার সবারই প্রায় এমন হয়,, আর এটা তোমার নিজের বাড়ি নয় যে যখন তখন কান্না করবে।এখানে কান্না করতে গেলেও আমার হুকুম নিয়ে কান্না করতে হবে।তখন আমি নিরুপায় হয়ে কান্না বন্ধ করে দিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু তার মুখ থেকে এক ধরনের বিশ্রী গন্ধ বের হচ্ছিল।সম্ভবত ওটা মদের গন্ধই ছিলো।সেটা আমি তখন সহ্য করতে না পেরে তাকে ধাক্কা দিয়েছিলাম কিন্তু তেমন কোনো কাজ হয়নি।তার পুরুষত্ব আর শক্তির কাছে আমি পেরে উঠতে পারিনি।
সে আবারও তার চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত কিন্তু আমি যে এখন এতে সন্তুষ্ট নই,সেটা সে বুঝেও না বুঝার ভান করে ছিল।
তখন আমি কান্না করছিলাম ঠিকই কিন্তু আমার চোখ দিয়ে কেনো জানি পানি বের হচ্ছিল না।
এভাবেই শেষ হয়েছিল আমার বাসর রাত।

সকালে রুম থেকে বেরুতেই শ্বাশুরি আম্মা বললেন — বলি এত বেলা পর্যন্ত কেও ঘুমায়?সকালের রান্নাটা কে করবে শুনি?
আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে আমার শ্বাশুরি আমার হাত টানতে টানতে রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে রান্নার কাজ বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসলেন।

আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম,বাবা এ কোথায় আমার বিয়ে দিল।যেখানে কিনা বিয়ের পরদিনই শ্বাশুরির এমন ব্যবহার না জানি পরে কি করে।একটু ভালো করে বুঝিয়ে বললে কি হত শুনি?
এতসব না ভেবে রান্নার কাজে মন দিতে না দিতেই শ্বাশুরি এসে চাপা গলায় বললেন — বলি আক্কেল জ্ঞান কি আছে কিছু?

আমি কিছু না বলে শুধু আমার শ্বাশুরির দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
তিনি আবার বললেন — এই মেয়ে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?এত বড় হইছ কিন্তু মাথায় তো দেখি জ্ঞান বুদ্ধি কিছুই নাই।বলি বিছানার চাদরে যে রক্ত লেগে আছে তা পরিষ্কার করবে কে শুনি? যাও গিয়ে বিছানার চাদর ধুয়ে রক্ত পরিষ্কার করো।আমি রান্নার দিকটা সামলাচ্ছি।

আমি সেদিন কিছু না বলে দৌড়ে রুমে চলে আসি। আর ভাবতে লাগি এরকম একটা কথা সরাসরি কি করে বলতে পারলো আমার শ্বাশুরি? রুমে এসে চাদরখান নিয়ে ধুয়ে শুকাতে দিয়ে আসি।

রাতের খাবারের পর আমার শ্বাশুরি বললেন — আজকে রাতে নাহিল (আমার স্বামী) বাসায় আসবে না।জরুরি কাজে চট্টগ্রাম বন্ধরে যাবে। আমি আর আমার শ্বাশুরি খাবার খাচ্ছিলাম, এমন সময় আমার ননদ এসে আমার শ্বাশুরি কে উদ্দেশ্য করে বলে — মা আমি একটা বাইরে যাচ্ছি।আজকে রাতে নাও ফিরতে পারি।

— বাইরে কোথায় যাবি এত রাতে?

— আমার বান্ধুবির জন্মদিনের পার্টিতে!

— সেখানে কে কে যাবি?

— আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই যাব।তুমি চিন্তা করো না, ওখানে আমার কোনো অসুবিধা হবে না,,বলেই আমার ননদ চলে গেল।

খাওয়ার পর আমি আমার শাশুড়ি কে বললাম — আম্মা ছোট আপুকে এভাবে একা রাতে বাইরে যেতে দেওয়া ঠিক হলো।পার্টিতে কত ছেলে থাকবে আর সেখানে কি ছোট আপু নিরাপদ থাকবে?

— আমার মেয়ে কখন কোথায় নিরাপদ তা তুমি আমার চেয়ে বেশি জানো না।ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন পারি দিতে পারবে না।যুগের সাথে তাল মিলিয়েই চলতে হবে”!

সেদিন বুঝেছিলাম যে মা যেমন মেয়েও ঠিক তেমনি হয়েছে।

বিয়ের ২য় দিন যখন আমার শ্বাশুরি ব্যাংক চেইক নিয়ে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে গেল তখন আমার কিছুটা সন্দেহ হয়েছিল।।
রাতে যখন আমার স্বামী আর শ্বাশুরি বাড়িতে ফিরল তখন আমার স্বামী ব্যাথ্যায় কুকরিয়ে উঠছিল।
পরে যা শুনলাম,তা শুনে আমি নিজেই নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
মনে মনে ভাবলাম বাবা কিনা শেষ পর্যন্ত এমন একটা লোকের সাথে আমার বিয়ে দিলো………………………………………!

চলবে………………………………………???

#নিশির_সংসার
#১ম_পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here