#কোন_আলো_লাগলো_চোখে
লেখা: রোজ
#পর্ব -৬
.
বিয়েটা হলো ঠিকই, কিন্তু মিনু তার কথায় অনড় আছে। রাহাত জানে একদিন মিনু ধরা দেবে। তাই সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। হাতের ডায়েরিটা খেয়াল হলো রাহাতের।শেষ করতে হবে। ‘ডায়েরিতে এতো লেখা! মেয়েটা পারেও বটে! শেষের দিকে পড়া দরকার। রাতে কি লিখলো সেটাই দেখি আগে।’ ‘ অনেক বছর পরে ইভানের সাথে দেখা। কত সময় পেরিয়ে গেছে! সেইসব দিন – ছেলেমানুষী ঝগড়া! ক্লাস ফাঁকি দেয়া! …… বন্ধুরা এভাবেই হারিয়ে যায়? কোথায় হারিয়ে গেল? ‘ পরের পাতায় লেখা – ‘আজ ইভানের সাথে দেখে খুব রিয়েক্ট করেছে…. আমি বলবো কেন? জ্বলছে জ্বলুক। কোনো দিন কি আমায় বলেছে যে…..আমি বলবো কেন? – ‘ আচ্ছা! কাহিনী তাহলে এই!’ রাহাতের মুখে স্বস্তির হাসি। মেয়েটা তাকেই ভালবাসে। অথচ মুখে কোনো দিনও স্বীকার করবে না। রাহাত ডায়েরিটা আগের যায়গায় রেখে অফিসে চলে গেল। দুপুরের পর থেকেই আকাশে একটা গুমোট ভাব।বিকেলের দিকে ঘন কালো মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ। যেকোনো সময় বৃষ্টি শুরু হবে। রাহাত ফেরার সময় মিনুকে নিয়ে ফিরেছে ।। সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। মিনু বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। “চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে। অন্তরে আজ দেখব, যখন আলোক নাহি রে॥ ধরায় যখন দাও না ধরা হৃদয় তখন তোমায় ভরা, এখন তোমার আপন আলোয় তোমায় চাহি রে॥ তোমায় নিয়ে খেলেছিলেম খেলার ঘরেতে। খেলার পুতুল ভেঙে গেছে প্রলয় ঝড়েতে। থাক্ তবে সেই কেবল খেলা, হোক-না এখন প্রাণের মেলা তারের বীণা ভাঙল, হৃদয়-বীণায় গাহি রে॥” রবীন্দ্রসংগীত বাজছে! বেশ অবাক হলো মিনু।মা তো বাসায় নেই। মা আর মিনু ছাড়া এ বাসায় রবীন্দ্রসংগীত শোনার কেউ নেই! তাও আবার তার রুমেই! এগিয়ে যাবে মিনু দেখার জন্য, ঠিক তখনই রাহাত এলো বেলকনিতে,দুটো চা হাতে। মিনুকে চা টা এগিয়ে দিলো।মিনু হা করে তাকিয়ে দেখছে। – কি দেখছো?ধরো। – ব্যাপার কি বলুন তো? আপনি আর রবীন্দ্র সংগীত! আবার চা ও করে নিয়ে এলেন! এতো কিছু!! নিতে পারছিনা।। – ওওওও… রবীন্দ্রনাথ গানগুলো শুধু তোমার জন্য লিখেছিলেন বুঝি? মিনু চোখ পাকিয়ে তাকালো,তবে কিছু বললো না। ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না। পরিবেশটা খুব সুন্দর। বেলকনিতে হালকা আলোয় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখা আর মাঝেমধ্যে হালকা বৃষ্টির ঝাপটা চোখেমুখে লাগা- সে এক অন্য অনুভূতি। এমন সময় কারো সাথে ঝগড়া করতে নেই। চুপচাপ শুধু দেখতে হয়। রাহাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মিনুর পাশে। – সরি মিনু। – কিসের জন্য? ভ্রুকুঁচকে জিজ্ঞেস করলো মিনু। – আসলে আমার ওভাবে রিয়েক্ট করা উচিত হয়নি।তুমি আমাকে বিয়ে করেছ কেন সেটা তুমিও জানো আমিও জানি।তোমার লাইফে কেউ থাকতেই পারে। সেখানে আমার কিছু বলা ঠিক হয়নি। তাই এ নিয়ে আর কিছু বলবো না। তোমার মনে যার বসত,সে সেখানেই থাকুক। আমাদের দুজনের ভুবন আলাদা, আমরা যে যার মতোই থাকি।’ শান্ত গলায় বলে চললো রাহাত। মিনু শুনছে। চুপচাপ শুনছে। অনেক দিন বৃষ্টিতে ভেজা হয়না।খুব ভিজতে ইচ্ছে করছে। রাহাত হয়তো আরও কিছু বলেছে, সেসব শুনেনি মিনু।শুনতে ইচ্ছে করছে না। তার বৃষ্টি চাই। কেবলই বৃষ্টি। রাহাতের ফোন বেজে উঠলো। – হেই,লিজা! আরে নাহ।বৃষ্টিতে আটকে গেছি।এক্ষুনি আসছি।’ রাহাত চলে গেছে। কিছুক্ষণ পর গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল।মিনু এখানেই দাঁড়িয়ে আছে,দেখছে। তারপর ধীরে ধীরে ছাদে গেল। আজ প্রাণ ভরে বৃষ্টিতে ভিজবে। ভিজলে আজ কেউ বাধা দেবে না।এখানে বাবা নেই – মা নেই… বকুনি দেবার কেউ নেই। কতক্ষণ ভিজে ছিলো জানে না। যখন চোখ খুললো দেখলো সে তার বিছানায়। উঠতে গিয়ে উঠতে পারলো না।মাথাটা ভীষণ ভার হয়ে আছে। – যাক! অবশেষে চোখ খুলেছেন! এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি? এইযে ভিজে জ্বর বাধালে এখন মায়ের বকা তো আমাকেই শুনতে হবে। ‘.একটানা বলে যাচ্ছে রাহাত। মিনু কিছু না বলে উঠার চেষ্টা করছে। তখন রাহাত নিজেই ধরে বসিয়ে দিয়ে খাবার নিয়ে এলো। মিনু কিছু খেতে চাইছে না। জোর করে সামান্য খাবার খায়িয়ে ঔষধ খাওয়ালো। বেশ বেলা হয়েছে। কুসুম এসেছে তার রুমে। কুসুমকে দেখে রাহাত বললো – তোর ভাবির কাছে একটু বস,আমি বের হবো। রাহাত বেরিয়ে গেল। মিনু কুসুমকে জিজ্ঞেস করলো সে এখানে আসলো কিভাবে? সে তো ছাদে ছিল। কুসুম তখন বললো, রাহাত এগারোটার পরে ফিরেছে। কুসুম ঘুমে ছিল।রাহাত তাকে ঢেকে তুলে। মিনুকে খুঁজে পাচ্ছে না।সব শেষে ছাদে গিয়ে দেখে মিনু পড়ে আছে। অনেক ডাকার পরেও সাড়া দেয়নি।অজ্ঞান হয়ে ছিলো। রাহাত তখন তাকে নিয়ে আসে।জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। সারারাত রাহাত বসে থেকে জলপট্টি দিয়েছে, হাত মুখ মুছে দিয়েছে। – ‘ ভাবি,আপনে একটু বসেন,আমি ভেজা কাপড় গুলা দিয়া অক্ষনি আসতাছি।’ মিনু চোখ বুঝে চুপচাপ ছিল,কিন্তু কুসুমের কথা শোনার পরে মিনু লাফিয়ে উঠলো – – ভেজা কাপড়? তখন খেয়াল হলো রাতে যে শাড়ি পড়া ছিল,এখন সেটা নেই! – আমার শাড়ি কে চেইঞ্জ করলো!? – ভাইজান, হিহি করে কুসুম মুখে হাত চাপা দিয়ে চলে গেল। মিনুর চোখমুখ লাল হয়ে উঠলো। শেষ পর্যন্ত….. খুব রাগ হচ্ছে নিজের উপর। কি দরকার ছিল বৃষ্টিতে… চলবে…..