কোন আলো লাগলো চোখে পর্ব ৩

#কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্ব ৩
লেখা: রোজ
.
বাসায় ফিরে সোজা নিজের রুমে চলে গেল রাহাত। জেনেশুনে একটা অন্যায় করতে যাচ্ছে সে।অনেক খোঁজার পর পেয়ে গেলো!
– এইতো পেয়েছি!
রাহাতের ঠোঁটেরকোণে একটা হাসি ফুটে উঠলো।
যদিও কারো অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ডায়েরি পড়া চরম অন্যায় ও অভদ্রতা, তবুও এটা সে করবে। কথায় আছে – Everything is fair in love and war!

মিনুর ডায়েরিটা হাতে নিয়ে বসলো।
ডায়েরিটা প্রথম পাতাটা সরাতেই চোখে পড়লো কয়েকটি শুকনো বকুল!
অদ্ভুত মেয়ে!
ডায়েরিটা পড়তে পড়তে মিনুর জীবনের অনেক অজানা হাসিকান্না,ভালোলাগা-­ মন্দ লাগা জানতে পারলো। এক পাতা চোখ আটকে গেল,
” অসভ্য ”
পরের পাতায় -‘ খারাপ লোক। ‘
কয়েকটি ছোট ছোট লেখা পড়েই রাহাত বুঝতে পারলো এগুলো তাকে নিয়ে লেখা।

এইতো সেইদিনের কথা! বছর দুয়েক হবে।
রাহাত মায়ের সাথে গ্রামে গিয়েছিলো একবার। অবশ্য রেহানা বেগমই তাকে জোর করে গ্রামে নিয়ে গেছে। একদিন রাহাতের নানু বাড়ি থেকে তারা রেহানা বেগমের বাল্য বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে যান। আফরোজা বেগম আর রেহানা বেগম খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলেন। এক সাথে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত ছিলেন। তারপর আফরোজা বেগমের বিয়ে হয়ে যায় আর রেহানা বেগম চলে আসেন শহরে। বাকি পড়াশোনা, বিয়ে,সংসার নিয়ে যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
ঘটনাচক্রে দুই বান্ধবীর দেখা হয়ে যায়। যার ফলস্বরূপ রেহানা বেগম আফরোজা বেগমের বাড়িতে বেড়াতে যান।
আফরোজা বেগম পড়াশোনা করলেও সংসারেই পুরোটা সময় দিয়েছেন। চাকরি-বাকরি করার সুযোগ হয়নি।উনার স্বামী মোশাররফ সাহেব স্থানীয় স্কুল শিক্ষক ছিলেন। রিটায়ার্ড করে এখন চাষবাসের দিকে মনোযোগী হয়েছেন।

গাড়ি আফরোজা বেগমের বাড়ির যাবার বেশ খানিকটা আগেই থেমে গেলো। এ রাস্তা গাড়ি যাবে না। বাকি একটু যায়গা হেঁটেই যেতে হলো। রাহাত গাড়ি থেকে নেমেই প্রাকৃতিক দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করতে লাগলো।
ছোট বেলায় মায়ের সাথে কয়েকবার গ্রামে এসেছে। কিন্তু একটু বড় হবার পর মা মাঝেমধ্যে আসলেও রাহাতের আর আসা হয়নি গ্রামে।
– কিরে, চল।
– তুমি যাও মা।আমি একটু ঘুরে দেখে আসছি।
– আচ্ছা, দেরি করিস না।
– ওকে।

সামনে চোখ জুড়ানো সবুজ। খুব শান্ত পরিবেশ।
সেটা উপভোগ করার সুযোগ পেল না।
‘ অই ভাই, অই!
…সইরা যান.. আহারে…
খাঁড়া বাপ,যাইস না.,যাইস না…
আরে খারাস না!.”
এসব কথা কানে আসতেই রাহাত ফিরে তাকালো।
তাকাতেই চোখ কপালে!
একটা গরু তার দিকে তেড়ে আসছে। পেছনে একটা লোক লাঠি নিয়ে দৌড়ে আসছে।
কি করবে বুঝতে না পেরে রাহাত পাশের খেতে নেমে গেলো। লোকটা দৌড়ে এসে গরুর দড়ি ধরে টেনে আটকে রাখলো।
– যাক বাবা! বাঁচা গেল!
– ভাইজান আফনের পিন্দনে লাল কাফর দেইখ্যা খেইপা গেছে।
বজ্জাত গরু,লাল পছন্দ করে না।

– সামলে রাখতে পারো না!?
– ভাইজান কি গেরামে নতুন? আগে তো দেহি নাই।
– হুম!
– কার বাড়িত আইছেন?
রাহাত হাত দিয়ে সামনের বাড়িটা দেখিয়ে দিলো।
– মাস্টার সাবের বাড়িত।
রাহাতের বিরক্তি দেখে লোকটা আর কথা না বাড়িয়ে “উইঠ্যা পড়েন ভাইজান ” বলে চলে গেল।

উঠতে গিয়ে মহা বেকায়দায় পড়লো। এক পা কোনো রকমে টেনে বের করে তো অন্য পা আর কাদার ভেতরে ঢুকে যায়। যায়গা থেকে নড়লেও উঠতে আর পারছে না!
‘ হিহিহিহি ‘ হাসির শব্দ খুব কাছে আসছে। কিন্তু কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
‘ কে হাসে! ‘ রাহাতের মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।
এমনিতেই উঠতে পারছেন না আর উপর গা পিত্তি জ্বালানো হাসি!

পাশের বড় বড় গাছের পাশ থেকে একটা মেয়ে বের হয়ে আসলো। হাতে আধ খাওয়া পেয়ারা।
মেয়ে হেসেই যাচ্ছে। পারে তো মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে হাসবে।
-‘এই মেয়ে, হাসছো কেন?!’
– হিহি, কহই হাসঅলামহিহিহি…
– চুপ,হাসি বন্ধ করো বলছি।

-আচ্ছা.. হাহ…হাসি বন্ধ! হিহ….হুমহিহি।আপনি উঠে আসুন।
– উঠবো কিভাবে?
– হাত বাড়ান।
মেয়েটির হাতে ধরে উঠে আসলো রাহাত।
পায়ের অবস্থা দেখে রাহাতের কান্না চলে আসছে। এক পা – দুপা পিছিয়ে গেলো।
– আরে..আরে….সাব..
মেয়েটি ‘ সাবধানে’ .. কথাটা শেষ করার আগেই রাহাত ধ..পা…স!
আগে তো পায়ে কাদা লেগেছিল এখনো পুরো শরীরে কাদা।
এই অবস্থায় ছেলেকে দেখে রেহানা বেগম তো হাসতে হাসতে শেষ!

আফরোজা বেগম আর মোশাররফ সাহেবের দুই মেয়ে। বড় মিনু আর ছোট মেয়ে মিতু।মিতু ক্লাস টেনে পড়ে।
আর মিনু পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে জয়েন করার পর এই প্রথম ছুটিতে বাড়ি এসেছে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here