#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_10 থেকে 12
[ বর্ধিতাংশ ]
– এই কথা যে মিস ভূতনি!
নিহা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে! ছেলেটি নিহা’র সামনে এসে বাইক থামিয়ে হেলমেটটা খুলল। নিহা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ছেলেটি দেখতে খুব সুন্দর, হুট করেই ছেলেটা হেসে বলল..
– ভূতনি এমন ভাবে কি দেখছেন ঘাড় মটকাবেন নাকি!
ছেলেটার কথায় নিহা’র হুশ ফিরে। অতঃপর রেগে বলে..
– আপনি আমাকে ভূতনি বললেন!
ছেলেটি নিহা’র গাল ধরে একবার এদিক ঘুরায় আবার ওদিক ঘুরায়। নিহা অবাক হয়ে যায়। অতঃপর ছেলেটা বলে উঠে..
– আপনার আশেপাশে কেউ তো নেই মনে হচ্ছে তাহলে নিশ্চয়ই আপনাকে ডেকেছি আমি।
নিহা রেগে ছেলেটার হাত গাল থেকে সরিয়ে বলে..
– সাহস কিভাবে হয় আমার গালে হাত রাখার!
গার্ড আসতে গেলে নিহা হাতের ইশারায় তাদের থামিয়ে দেয়!
– যেভাবে সাহস করে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
– আপনি জানেন আমি কে?
– সবাই জানে আমি কেন জানবো না। Whatever আমি আহিয়ান চৌধুরী! nam toh Sona hoga!
– জ্বি না। প্রথম বার শুনলাম!
আহিয়ান হেসে বলল…
– সমস্যা নেই এখন রোজ শুনবেন আমি শুনবো, ভূতনি!
– এই ভূতনি ডাকা বন্ধ করুন তো! আমার নাম আছে নিহারিকা নিহা খান বুঝলেন।
– কই আমি তো এতোবার ডাকালাম সারা দেও নি কেন?
– কেন দেবো! চিনি আপনাকে আমি?
– চেনার জন্য’ই ডাকলাম আপনাকে!
– কিন্তু আপনাকে চেনার কোনো ইচ্ছা নেই আমার।
– কিন্তু আমার অনেক ইচ্ছে আছে আপনাকে জানার,চেনার!
– সামনে থেকে সরুন যেতে দিন!
– আচ্ছা একটু কথা বলি না!
– না আমার অনেক কাজ আছে।
– তাহলে ফোন নম্বর টা দিন, ফ্রি হলে আমি কল করবো!
নিহা তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল..
– ফ্লাট করছেন!
– আরে না ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছি! হও নি!
– না পারলেন না!
আহিয়ান চোখ টিপে বলল…
– সমস্যা নেই কবি বলেছেন একবার না পারিলে দেখো শতবার তবে আমি হাজার বার চেষ্টা করতে রাজী আছি!
– আশা করি আজকের পর আপনার সাথে আর দেখা হবে না।
– কি বলা যায় বলো, যদি আমার ভাগ্য তোমার সাথে থাকে তো…
– তো টা তো.. ‘ই হয়ে থাকবে। এর পর আর কোনো কিছু হবে না।
– আমার মনে হচ্ছে হবে, কারন..
– কারন?
– আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এতোক্ষণে তোমার গার্ড এসে তাকে বেধোরে মারত কিন্তু তুমি তো তোমার গার্ড’দের আমার কাছে আসার আগেই থামিয়ে দিলে!
নিহা বাঁকা হেসে বলে..
– প্রথমবার তো সবাই ভুল করে, আপনার থেকেও আমি সেটাই ভেবেছিলাম। তাই! দেখা যাক সামনে কি হয়!
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেলো নিহা। আহিয়ান তার চলার পানে তাকিয়ে কিঞ্চিত হাসল!
.
রাতে খাবার টেবিলে…
মেহেরিন বলে উঠে..
– দা প্রতিদিন অফিস থেকে আমার জন্য রান্না করতে তোমার খুব কষ্ট হয় নাহ!
অভ্র মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে আছে। কারন নিশ্চিত কোনো মতলব আছে নাহলে এরকম কথা। তবুও অভ্র শান্ত গলায় বলে..
– না হয় না!
– তুমি বরং একটা কাজ করো নিহা দি আর নিশি আপু কে রান্না করা শিখিয়ে দাও!
মেহেরিন কথায় নিহা আর নিশি’র বিষম লেগে যায়। কাশতে শুরু করে, অভ্র উঠে দুজনকে পানি খাওয়ায়। নিহা বলে উঠে…
– তোর মতলব টা কি বল তো!
– আমি বিয়ের দাওয়াত খেতে চাই!
অভ্র জানতো মেহেরিন এটাই বলবে। তাই কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগল। সবাই চুপ কেউই কিছু বলছে না। মেহেরিন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ডাকতে লাগল…
– ডেভিল ডেভিল!
ডেভিল দৌড়ে এসে হাজির হলো। বলল…
– জ্বি ম্যাম!
– তোমার বিয়ে হয়েছে?
ডেভিল ভড়কে গেলো কথাটা শুনে। অবাক হয়ে বলল..
– জ্বি ম্যাম!
মেহেরিন বলে উঠে..
– তো কি? আবার বিয়ে করবে। পারবে না! তোমার বিয়েতে আমি অনেক নাচবো জানো!
এবার অভ্র কাশতে শুরু করে। মেহেরিন উঠে তাকে পানি দেয়। ডেভিল শুকনো ঢোক গিলে। মেহেরিন মনে হচ্ছে এবার তার সংসার ভেঙে’ই ছাড়বে! অভ্র বলে উঠে..
– ডেভিল তুমি যাও তো এখান থেকে, আদুরীর কথা শুনতে হবে না
মেহেরিন বলে উঠে..
– কিন্তু…
এর আগেই অভ্র তাকে চুপ করিয়ে পাঠিয়ে দেয়। ডেভিল আবার ফিরে আসে বলে..
– স্যার ফোন করেছে!
মেহেরিন হেসে বলে উঠে..
– বাপি! দাও দাও আমাকে দাও!
– হেলো বাপি, কেমন আছো?
– এইতো ভালো প্রিন্সেস তুমি!
– ভালো না
– কেন?
– জানে বাপি আমি একটা বিয়ে খেতে চাইছি কিন্তু দা আমাকে খেতে দিচ্ছে না!
– কার বিয়ে খাবে?
– ভেবেছিলাম ডেভিলের!
মেহেরিন’র কথা শুনে ডেভিল কথা শুনে ঘামতে শুরু করে। শুভ্র বলে উঠে…
– কিন্তু ডেভিল তো বিবাহিত!
– তো কি আবার বিয়ে করবে!
শুভ্র হেসে বলে..
– আসল কাহিনী কি মামনি!
মেহেরিন অভ্র’র দিকে তাকিয়ে আড়চোখে বলে..
– আমার একটা ভাবী চাই!
– ওহ আচ্ছা এই কথা!
– কিন্তু কেউ তো রাজী’ই হচ্ছে না।
– তুমি আগে মেয়ে ঠিক করো। আমি রাজী করছি।
মেহেরিন মুখ কোমল করে বলে উঠে..
– মেয়ে তো নেই বাপি!
অভ্র মেহেরিন’র কথা শুনে বুঝে সে আনহা’র কথাটা জানে। অতঃপর মেহেরিন’র কাছে বসে বলে..
– দেখলে তোমার কপালে ভাবী নেই!
মেহেরিন রেগে অভ্র’র দিকে তাকায়। শুভ্র হেসে বলে..
– আচ্ছা আমি তোমার ভাবী খোঁজার দায়িত্ব নিহা কে দিচ্ছি! নিহা খুঁজে বের করবে।
নিহা বলে উঠে..
– আমি পছন্দ করলেই কি তোমার ছেলে রাজী হবে।
অভ্র উঠে বলে..
– তোরা যে মেয়েকে পছন্দ করবি আমি তাকেই বিয়ে করবো।
বলেই সে ঘরে চলে যায়। এদিকে মেহেরিন আর নিহা একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে!
.
পরদিন অফিসে..
আনহা এসে ছুটি নিয়ে যায় কিছুদিনের জন্য। বিয়ের প্রস্তুতি নেবে বলে। অভ্র হেসে বলে..
– তা বিয়ের পরে কি জব টা করবে!
– হুম করবো।
– তোমার হাসবেন্ড এলাও করবে!
– অবশ্যই করবে। এটা নিয়ে আগেই কথা হয়ে গেছে।
– ওহ আচ্ছা। ভালো!
– হুম আমার বর খুব ভালো, খুব মিষ্টি, খুব কিউট, খুব সুইট!
– ওরে বাবা এটাতো দেখি মিষ্টির দোকান!
– হ্যাঁ বলতে পারেন।
– যাক আবারও শুভকামনা রইল তোমার আর তোমার মিষ্টির দোকান বরের জন্য!
– ধন্যবাদ! তা আপনি বিয়ে করবেন না।
– জানি না!
– ওহ হ্যাঁ আপনি তো বিয়ে করতেই পারবেন না।
অভ্র হেসে বলে..
– তোমার কাজ শেষ হলে যেতে পারো।
– চলেই তো যাচ্ছি একবারের জন্য!
বলেই বের হয়ে আনহা। খুব কষ্ট হচ্ছে তার, কিভাবে করবে সে বিয়ে। ভালো তো বাসে অভ্র কে। কিন্তু সেদিন অভ্র না বলার কারনে এই সিদ্ধান্ত নেয় সে। ছেলেকে দেখা তো দূর তার নামও জানে না সে। রাগে সেদিন বাড়িতে গিয়ে জানে বাবা তার জন্য এক ছেলেকে পছন্দ করেছে। তারাও তার ছবি দেখে তাকে পছন্দ করেছে বিয়ে করতে চায়। আনহা রেগে তখনই হ্যাঁ বলে দেয়। তার কিছুদিন পরই বিয়ের ডেট ঠিক হয়ে যায়। সে ভেবেছিল একবার না করবে কিন্তু সেদিন বিয়ের কার্ড নেওয়ার পরও অভ্র যখন কিছু না বলে তখন আনহা আর মত পাল্টায় না। রাগের কারনে বিয়ের কার্ড’টাও দেখে না সে। তবে এই বিয়ে সে করবে না ব্যস!
কিন্তু সে ভেবেছিল হয়তো অভ্র তার বিয়ের কথা শোনার পর রিয়েক্ট করবে, বিয়ে করতে না বলবে তবে অভ্র কিছুই বলে নি। বরং তাকে শুভকামনা জানালো! যা তার মন কে ভেঙে ফেলেছে। চোখ থেকে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পরল। ভাবতেও অবাক লাগে এতো কম সময়ে তাকে ভালোবেসে ফেলল সে। তবু সে বুঝলো না।এতো ভালো কি করে বাসলো সে। আরো একবার আসবে অভ্র’র কাছে। শেষবারের মতো বলবে “তাকে সে ভালোবাসে”!
“আমি আপনাকে ভালোবাসি অভ্র” বলবে!
#চলবে….
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১১
সন্ধ্যায় অভ্র বাড়িতে ঢুকে দেখে সবাই বসার রুমে বসে আছে শুধু মেহেরিন রোদ্দুর’র কোলে ঘুমাচ্ছে। এই ভোর সন্ধ্যায় ঘুমানোর কারনে অভ্র খানিকটা চিন্তিত হয় অতঃপর নিহা বলে উঠে..
– আজকে ওর জন্য ভাবী দেখতে গেছিলাম,জানো কি হয়েছে?
রোদ্দুর বলে উঠে..
– আমার মনে হয় না মামনি থাকলেও মেয়েকে এতো প্রশ্ন করতো যতটা ও জিজ্ঞেস করেছে!
অভ্র বলে উঠে..
– একটা মেয়েকে’ই দেখেয়ে এই..
নিশি বলে উঠে..
– কিসের একজন! গুনে গুনে আজ ৫ জন মেয়ে দেখলাম।
– কিহহহ ৫ জন, তবুও কাউকে পছন্দ হলো না!
ইহান হেসে বলে..
– জান এক একটা মেয়ের যেই লেভেলের ও খুঁদ বের করল এরপর আবার বিয়ে…
নীল বলে উঠে..
– ভাইয়া তোমার বিয়ে করা আর হলো।আদুরীর তোমার
জন্য যেমন মেয়ে খুঁজছে তেমন মেয়ে সে পাবে না!
সবাই একসাথে হেসে উঠে, তবুও এই হাসির আওয়াজে ঘুম ভাঙে না তার। অভ্র হেসে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। কাব্য বলে উঠে…
– আজ সারাদিন অনেকক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করেছে , তাই এখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে!
অভ্র কিঞ্চিত হেসে মেহেরিন’র ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, তার এই স্নিগ্ধ ঘুমন্ত মুখ তার মনের সব কষ্ট দূর করে দেয়। অতঃপর রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
কয়েকদিন পর অবশেষে মেহেরিন’র একটা মেয়ে পছন্দ হয়। অবশ্য মেহেরিন’র না সবার’ই পছন্দ হয়। তবে অভ্র মেয়েটিকে দেখে না এমনকি মেয়েটির নাম অবদি জিজ্ঞেস করে না। এদিকে শুভ্রও মেয়েটাকে দেখে অনেক খুশি। কিন্তু অভ্র’র মনে শুধু একটা কথাই বাজছে ৭ দিন পর আনহা’র বিয়ে!
মেহেরিন মেয়েটার ছবি নিয়ে অভ্র’র সামনে রাখল কিন্তু অভ্র ফিরেও তাকাল না। শুধু মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলল…
– তোমার পছন্দ হয়েছে এই’ই বেশি! আমি তাকেই বিয়ে করবো দেখা লাগবে না তাকে!
– কিন্তু দা একবার দেখে তো আমার ভাবী অনেক সুন্দরী!
– কিন্তু আমার বোন আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দরী!
– হি হি হি আমি জানি! আচ্ছা দা বিয়ের তারিখ ঠিক করবে না!
– হুম তোমরা করো!
নিহা বলে উঠে..
– তুমি বলো একটা!
কাব্য বলে উঠে..
– তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়াটা ভালো!
নিশি বলে উঠে..
– আমার পরিক্ষার আগে হলে ভালো হবে।
অভ্র আনমনে বলে..
– ৭ দিন পর!
নীল বলে উঠে..
– কি! ৭ দিন পর। এতো কম দিনে কিভাবে কি?
মেহেরিন বলে উঠে..
– আমার দা যখন একবার বলেছে তখন ৭ দিন পর’ই বিয়ে হবে এটাই ফাইনাল। গাইস কাজ শুরু করো! আর ডেভিল কোথায়?
– এই যে ম্যাম!
– গেস্ট দের ইনভাইট দেওয়া শুরু করো। ৭ দিন পর বিয়ে!
রোদ্দুর বলে উঠে..
– অনেক কাজ আছে! শপিং করতে হবে এটা করতে হবে ওটা করতে হবে!
– আপনার জি এফ কেও ইনভাইট করতে হবে, ভাইয়া তোমার ওইই বান্ধবীকেও করো একটু দেখি আমি!
– পাকনা মেয়ে দেবো একটা!
সবাই হেসে উঠে। অভ্র’র কাজের কথা বলে সেখান থেকে উঠে চলে আসে। খুব অস্থির লাগছে তার কিন্তু এটার কারন কি? আনহা’র বিয়ে হবে বলে। আনহা’র জন্য! কিন্তু কারো প্রতি এমন আবেগের আশা সে করে না আর না চায় এমন কিছু হোক! কারন তার দায়িত্ব অপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই তার কাছে। কিন্তু তবুও এখানে তার বিয়ের কথা চলছে, আর এটা মেহেরিন’র কারনেই তাই নাও করতে পারছে না। হয়তো তখন আনহা কেও হ্যাঁ বলতে পারতো তবে তখন কেন সেই মানসিকতা ছিলো না তার। কেন তখন বুঝেনি আনহা’র প্রতি তার মনে একটা সূক্ষ্ম ভালোবাসা ছিলো। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই কারন মেহেরিন’র পছন্দ! মেহেরিন যাকে পছন্দ করেছে তাকেই বিয়ে করবে নাহলে মেহেরিন’র খারাপ লাগবে। আর অভ্র’র কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে তার বোনের মুখের হাসি। আর কিছু না!
পরদিন সকালে…
মেহেরিন রেগে অস্থির! কারন শুভ্র এসে হাজির। মেহেরিন’র এতো মানা করার পরও শুভ্র এখানে। ভয় একটাই যদি শুভ্র’র কিছু হয়ে যায় কারন এটাই তার একমাত্র দুর্বলতা। আর শত্রুরা তার এই দুর্বলতা’র সুযোগ নিবেই নিবে। শুভ্র মেহেরিন কোলে বসিয়ে বুঝিয়ে যাচ্ছে কিন্তু মেহেরিন কথা শোনার জন্য প্রস্তুত না। নিহা বলে উঠে..
– তুমি এখন হঠাৎ করে..
– হঠাৎ করে মানে! আমার বড় ছেলের বিয়ে আর আমি আসবো না!
মেহেরিন দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে..
– ছেলের বিয়ে আর সে এসে হাজির, যদি কিছু হয়ে গেলে যেত তখন! আর হবে না তার গ্যারান্টি কি?
– গার্ড আছে মামনি!
– কথা বলবা না তুমি আমার সাথে!
কাব্য বলে উঠে..
– আচ্ছা জান যা হবার হয়ে গেছে। এখন থাক!
– কেন থাকবে! সোজা কথা বিয়ের দিন’ই বাপি আবার ব্যাক করবে!
শুভ্র বলে উঠে…
– বিয়ের দিন!
– তো! তুমি ৬ দিন আগেই চলে এসেছো, আবার কি?
– আচ্ছা বিয়ের পরদিন যাবো, সত্যি!
– কি শখ ছেলের বিয়ে দেখার!
নিহা মেহেরিন’র কান মুলে দিয়ে বলে..
– তোমার শখ ভাইয়ের বিয়ে খাওয়ার তাহলে বাবার শখ থাকবে না ছেলের বিয়ে দেখার!
– দি লাগছে আমার!
শুভ্র বলে উঠে..
– নিহা ছেড়ে দাও ব্যাথা পাচ্ছে!
– বাবা আর মেয়ের কতো নাটক!
– কেন তোমার হিংসে হয় নাকি!
– হুহ!
অতঃপর সবাই হেসে উঠে। ৬ দিন বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হয়। আজ গায়ে হলুদ! সবাই সুন্দর করে সেজে উপস্থিত হয় অনুষ্ঠানে। একদিকে আনহা’র গায়ে হলুদ তো অপরদিকে আজ অভ্র’র গায়ে হলুদ। তবে অভ্র’র বিয়ের কথাটা আনহা’র কানে যেতে বেশি দিন লাগে নি। গায়ে হলুদের দিন কেঁদে কেঁদে অস্থির আনহা। এদিকে অভ্র ও মনমরা তবুও সবার খুশি দেখে আজ সেও খুশি। সারারাত আনন্দ করে কেটে যায় তাদের।
এদিকে আনহা বিয়ের দিন সকালে উঠে ঠিক করে নেয় আজ অভ্র’র মুখোমুখি হবে সে। তাকে শেষবারের মতো ভালোবাসি বলবে।
বিয়ের দিন সকাল থেকেই তোড়জোড় সব শুরু হয়ে গেছে। মেহেরিন তো যেন বেশি অস্থির হয়ে গেছে। এই করছে তো ওই করছে। এভাবে তাদের কারো মুখেই কোনো সাজ নেই। শুধু লেহেঙ্গা পড়ে লম্বা চুল গুলো ছেড়ে রেখেছে। এতেই যেন তাদের সৌন্দর্য ধরছে না। অভ্র আজও ল্যাপটব নিয়ে বসে আছে। শুভ্র এসে অভ্র’র পাশে বসল। অতঃপর জিজ্ঞেস করল…
– বিয়েতে খুশি তো তুমি!
– হুম অনেক খুশি। আর বেশি খুশি কারন আদুরী খুশি!
– জানি! আদুরীর খুশির জন্য’ই বিয়েতে রাজী হয়েছে তুমি!
– আমার কাছে ওর খুশি টাই আগে বাবা।
শুভ্র কিঞ্চিত হেসে অভ্র’র ঘাড়ে হাত রেখে বলল..
– তৈরি হয়ে নাও! কিছুক্ষণ বাদেই যেতে হবে আমাদের!
– হুম!
অতঃপর শুভ্র চলে গেলো। অভ্রও উঠে তৈরি হতে যাবে এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। হয়তো মেসেজ এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ হতে পারে বলে অভ্র চেক করল। মেসেজটা ছিল আনহা! আনহা পাঠিয়েছে মেসেজ, লিখেছে…
– “আপনার সাথে আমার কথা আছে, জলদি এসে দেখা করুন। আমি অপেক্ষা করছি! ঠিকানা দেওয়া জায়গায় চলে আসুন।”
অভ্র খানিকটা অবাক হলো। আজ তো আনহা’র বিয়ে তবে সে তাকে কেন ডাকছো। অভ্র ভাবলো যাবে না। এর মধ্যে আবার মেসেজ আসল…
– “আপনি না আসলে কিন্তু অনেক খারাপ হবে। আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি।”
অভ্র এবার চরম অবাক হয়ে গেল। বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে মানে। অভ্র আর দাঁড়ালো না বেরিয়ে পড়ল। তবে সামনের না পিছনের গেট দিয়ে কারন সামনের দরজা দিয়ে গেলেই এখন সবার মুখোমুখি হতে হবে।
আনহা’র দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে গেল অভ্র! দেখল একটা কালো রঙের থ্রি পিস একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র পেছন থেকে মেয়েটাকে ডাক দিলো!
– আনহা!
সাথে সাথেই ঘুড়ে গেল আনহা! আনহা দেখে অভ্র বিষ্ময় চোখে তাকিয়ে আছে। না ঘুমাতে ঘুমাতে চোখের নিচ কালো হয়ে গেছে। মুখ চোখ লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে কান্না করেছে। হুট করেই অভ্র কে জরিয়ে ধরল আনহা। আর বলতে লাগল..
– আমি এই বিয়ে করবো না! প্লিজ আমাকে আপনার সাথে নিয়ে চলুন। খুব ভালোবাসি আপনাকে। পারবো না আপনাকে ছাড়া থাকতে! বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি আমি! প্লিজ ছেড়ে যাবেন না আমায়!
#চলবে….
[ প্রথমেই দুঃখিত আজ গল্প দিতে দেরি করেছি বলে।কাল আমার পরিক্ষা শুরু তাই আজ দিতে দেরি হলো তার সাথে পর্বও ছোট হয়েছে। পরীক্ষার এই কয়েকদিন গল্প এমন ছোট’ই দেবো। এজন্য সবার কাছে দুঃখিত! ]
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১২
আনহা’র কথা শুনে অভ্র থমকে দাঁড়িয়ে আছে। কখনো ভাবিনি এরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়বে সে। এদিকে আনহা’র চোখের পানিতে অভ্র’র পাঞ্জাবি ভিজে একাকার! শক্ত করে জরিয়ে আছে সে অভ্র কে কিন্তু চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। খানিকক্ষণ পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আনহা কে ডাকে সে..
– আনহা!
– …..
– আনহা! কি হচ্ছে টা কি ছাড়ো আমায়!
অভ্র’র থমকানিতে আনহা ছেড়ে দেয় অভ্র’কে। অতঃপর দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ হয়ে কাঁদতে থাকে। অভ্র আবার বলে..
– কান্না থামাও!
– …
– ধমক না খেতে চাইলে কান্না থামাও। রাগিও না আমায়!
আনহা অনেক কষ্টে কান্না থামায়। অতঃপর অভ্র বলে উঠে..
– আজ তোমার বিয়ে আর তুমি অন্য একটা ছেলেকে এভাবে জরিয়ে ধরে আছো কেন? মানুষ কি বলবে দেখে!
আনহা অশ্রু ভরা চোখে তাকিয়ে আছে অভ্র’র দিকে। অভ্র আবার বলে উঠে..
– এটা নিয়ে তো তোমার সাথে আমার আগেই কথা হয়েছিল। আমি তোমাকে আগেই না বলে দিয়েছি!
আনহা ভারী গলায় বলে..
– তো আজ আপনি বিয়ে করছেন কেন? আপনি তো বলেছিলেন বিয়ে করবেন না!
– আমি বিয়ে করতে চায়নি আর এখনো চাইনা কিন্তু আমার বোনের কথায় আমি না করতে পারি না। ওর জন্য’ই বিয়ে করছি আমি! আর ওর পছন্দের!
– কেন? আপনার পছন্দ নেই নাকি!
– কিন্তু আমি তোমার মতো স্বার্থপর না আনহা! নিজের স্বার্থ’র চেয়ে বেশি আমার বোনের খুশি আমার কাছে বেশি।
– আমি স্বার্থপর!
– হুম তাই তো! একবার ভেবেছো তুমি নিজের খুশির জন্য আমার কাছে এসেছো কিন্তু যখন বিয়েতে তোমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না তখন কার অপমান হবে! তোমার মা- বাবা! এটা কি সত্যি ঠিক! বিয়েতে কি তারা জোর করেছিলো তোমায়! তুমি স্বেচ্ছায় বিয়েতে রাজি হয়েছে আর এখন না বলছো।
আনহা কাঁদতে কাঁদতে বলে..
– সেটাতো রাগে বলেছি!
– এইজন্য’ই বলে রেগে করা কোনো কাজ কখনো সঠিক হয় না। যাই হোক বাসায় যাও তোমার বর এতোক্ষণে এসে পড়েছে।
– ….. ( নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে )
– আচ্ছা গাড়িতে উঠো আমি ছেড়ে দিয়ে আসছি!
আনহা এবার রেগে বলে..
– একাই যখন এসেছি তখন একাই যেতে পারবো!
অভ্র একটু সাইড হয়ে হাত দিয়ে চলে যেতে বলে। আনহা রেগে সেখান থেকে চলে যেতে নেয়। তখন পিছন থেকে অভ্র বলে…
– তুমি হয়তো ভাবছো আমি তোমার সাথে যা করেছি তা ঠিক করেনি, তুমি হয়তো আরো রেগে যাবে কিন্তু একটা কথা মনে রেখো, একজন কে দুঃখ দিয়ে অন্যজন কখনো সুখী হতে পারে না। আর সে যদি আপনজন হয় তখন তো কথাই নেই। আপনজন হারানোর কষ্ট আমি বুঝি। নিজের মা’কে হারিয়েছি। কিন্তু তোমার সব আছে সেটার অবহেলা করো না। শেষে কিছুই পাবে না।
আনহা অভ্র’র মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সব কিছু শোনে। অতঃপর আবারও এসে অভ্র’র সামনে দাঁড়ায়। বলে উঠে…
– আমি সত্যি আপনাকে অনেক ভালোবাসি! তবে… হয়তো আমার ভাগ্যে আপনি ছিলেন না। ভালো থাকবেন আপনি! আবারও বলছি আমি আপনাকে ভালোবাসি!
অতঃপর আনহা চলে যায় সেখান থেকে। অভ্র একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যার চলে যাওয়ার পানে!
.
মেহেরিন পুরো বাড়ি খুঁজে যাচ্ছে অভ্র কে। লেহেঙ্গা পড়েছিল তবে এখন হাঁপিয়ে সব খুলে একটা হুডি আর জিন্স পরে আছে।পুরোটাই রাগে,আর এই রাগের কারন অভ্র। সবাই অভ্র কে না খুঁজে মেহেরিন কে খুঁজছে! এদিকে অভ্র’র ফোন ও বাসায় যার কারনে কেউ তাকে পাচ্ছে না। মেহেরিন সোফায় বসে চকলেট খাচ্ছে আর সদর দরজা’র দিকে তাকিয়ে আছে। কখন অভ্র আসবে?
অভ্র আনমনে বাড়িতে ঢুকে দেখে মেহেরিন সোফায় বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সবার মুখ গম্ভীর। অভ্র মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠে..
– আসলে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল! তাই…
মেহেরিন অভ্র’র থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। অভ্র ধীরে ধীরে মেহেরিন’র পাশে এসে বসে। অতঃপর বলে..
– কি হয়েছে?
মেহেরিন চোখ ঘুরিয়ে একবার অভ্র’র দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। অভ্র মুচকি হেসে বলে..
– আরে তোমার অন্য ভাবী তো আনতে যায় নি। একটু কাছে গিয়েছি আর চলেও এসেছি।
মেহেরিন মুখ ফুলিয়ে বলে..
– তোমাকে না বলেছিলাম আজকের দিনে কোনো কাজ করবে না।
– আচ্ছা বাবা সরি! সত্যি অনেক লেট হয়ে গেছে। এখন চলো নাহলে তোমার দা কে তারা বউ দিবে না। শেষে আর ভাবী পাবে না।
অভ্র’র কথায় সবাই হেসে। মেহেরিন খিল খিল করে হেসে উঠে। অতঃপর সে অভ্র কে তৈরি হতে যেতে বলে তবে মেহেরিন আর তৈরি হয় না। যা পড়ে আছে সেইভাবেই চলে যায় বিয়েতে। কারন ওইসব পড়ে সে দৌড়াদৌড়ি করতে পারবে না আর কেউ তাকে জোর ও করেনি।কারন জোর করে লাভ নেই! এসব পড়ে থাকা’র মতো ধৈর্য্য তার নেই!
খানিকবাদেই অভ্র তৈরি হয়ে এলে সবাই রওনা দেয় মেয়েদের বাড়ির জন্য। অভ্র এখন অনেকটা স্বাভাবিক! বাস্তব মেনে নিয়েছে সে! সবাই হইহুল্লোড় করছে আর বেশি করছে তো মেহেরিন। তবে সবাই খুশি! শুভ্র খানের সাথে অতিরিক্ত গার্ড দেওয়া হয়েছে কারন তার জীবনের রিস্ক আছে। কাল বিকালেই ব্যাক করবেন তিনি। অভ্র খানের বিয়ে উপলক্ষে মিডিয়া আগে থেকেই এসে উপস্থিত! বিয়ের জন্য একটা পাঁচ তারকা হোটেলে সব ব্যবস্থা করা হয়। মেয়ের পক্ষ থেকে সবাই এসে এখানেই উপস্থিত হবে। মেহেরিন ওরা সবাই সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়।
মেহেরিন দৌড়ে আগে আগে চলে যায়। কাব্য, নিশি আর নীল ওদের পিছনে যায় বাকিরা অভ্র’র সাথে আসে। অভ্র ভেতরে এসে দেখে খুব ভালোভাবেই ডেকোরেট করা। সব লোকজন সেখানে তবে কনে কে দেখা যাচ্ছে না! সবাই তার এসে কথা বলছে, হুট করেই আলো নিভে গেল আর একটা মাত্র আলো জ্বলে উঠলো। সেই আলোর নিচে মেহেরিন কে দেখা যাচ্ছে! একটা কালো কারুকাজের লেহেঙ্গা পড়া। অভ্র একটু অবাক হলো তবুও ভাবল মেহেরিন’র মুড সবসময় চেঞ্জ হয়। এটাই স্বাভাবিক। ভারী মিষ্টি লাগছে মেহেরিন কে। একদম ফ্রেশ মুখ কোনো সাজ নেই তাতে, শুধু মুখে একগাল হাসি। অভ্র ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে মেহেরিন বলতে শুরু করে…
– আসসালামুয়ালাইকুম সবাইকে, আবার ধন্যবাদ ও। কারন আজ আমাদের এই খুশির একটা মুহুর্তে আমাদের সঙ্গ দেবার জন্য। তো সবার আগ্রহ এখন একজন সে হলো খান পরিবারের বড় বউ মানে আমার মিষ্টি ভাবী। তো আর কাউকে অপেক্ষা করাবো না আমার মিষ্টি ভাবী এখন’ই চলে আসবে।
অতঃপর সেই আলোও নিভে গেল।
অভ্র মিষ্টি ভাবী ডাকটা শুনে খানিকটা অবাক হলো! অতঃপর সদর দরজা খুলে গেল। একটা আলো এসে পড়লো সদর দরজার মুখে। অভ্র নিচ থেকে উপর অবদি তাকে দেখছে। গাঢ় লাল রঙের ভারী কারুকাজের একটা লেহেঙ্গা, দু’হাত ভর্তি লাল চুড়ি, সেই হাতেএকটা গোলাপ ফুল, অভ্র আস্তে আস্তে তার মুখ দেখছে। মুখটা নিচু করা! অভ্র ভ্রু কুঁচকে ভালো ভাবে দেখার চেষ্টা করছে। মেয়েটা মুখ উপর করলে অভ্র প্রায় চমকে গেল। এতো আনহা! অভ্র চোখ বড় বড় করে তাকে দেখছে! হ্যাঁ এটা আনহা’ই ! কোনো সন্দেহ নেই। সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে আনহা। সব আলো একসাথে জ্বলে উঠল। মিউজিক বাজতে শুরু করলো। তবে আনহা’র মুখে হাসি নেই, সে এতোক্ষণ নিচের দিকেই তাকিয়ে ছিল। সবে সামনে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে অভ্র তার সামনে দাঁড়ানো। সে অবাক চোখে তাকে দেখেই যাচ্ছে। বোঝার চেষ্টা করছে এটা তার কল্পনা না তো!
#চলবে….