Love warning পর্ব ২৮

# Love_warning
# your_love_is_my_drug_addiction
# Part_28 (ভ্রমণ কাহিনী)
# ফারজানা
পরের দিন সকালে……..
পাহাড়ের বুকে সূর্যালোক, ভরা পূর্ণিমা রাতে হ্রদের পানিতে মৃদু ঢেউয়ের উপর জোছনার ঝলকানি আর গিরি নির্ঝর ঝর্ণার রূপমাধূরী দেখেনি যে, সে যেন অপরূপ পাহাড়ি অরণ্যের জনপদ রাঙামাটি দেখেনি। এলোমেলো সারিতে সাজানো উঁচু-নিচু ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ের সমাবেশ। যে দিকে চোখ যায় স্বচ্ছ পানি আর বিস্তীর্ণ সবুজের হাতছানি। সে যে এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি।
তিতি অর্ণব শিশির প্রবণ শুভ্র সামু আনিস আর আবির সকালে গ্রাম ঘুরতে এসেছে। অর্ণব গ্রাম দেখে দেখে আর গ্রামের সৌন্দর্যের কথা বলেছে। তখন আনিস বললো…..
“তিতি তোর মনে আছে একবার কাপ্তাই ঘুরবো বলে তোকে বলছিলাম কিন্তু আর ঘুরা হলো না”
“হুম মনে আছে। কি-যে কষ্ট হয়ে ছিলো তখন কি বলবো”
তিতি মন খারাপ করে বললো তখন শিশির বললো…..
“ভাগ্যিস তুই ঘুরতে পারলি না। তাহলে তো আমাদের আগেই তুই এত সুন্দর সুন্দর জায়গা দেখে ফেলতি”
প্রবণ তখন বললো……
“তোমার সব কিছুতেই হিংসা করা তাই না”
“মোটেও না। আচ্ছা আনিস ভাইয়া এইবার বলোতো কাপ্তাই কেমন জায়গা একটু বর্ণনা দাও”
আনিস তখন হেসে বললো…..
“সবুজ বৃক্ষ আচ্ছাদিত উঁচু-নিচু পাহাড়। গভীর মমতা আর ভালোবাসায় গড়া উপজাতীয়দের বর্ণিল জীবনধারা, অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিলিত আহ্বান। এমন সব সৌন্দর্য এক জায়গায় মিলিত হয়েছে দেশের যে স্থানটিতে তার নাম কাপ্তাই। প্রকৃতির প্রায় সব রূপ-রং যেন এখানে এসে মিশেছে একই সমান্তরালে। রাঙামাটির সব অঞ্চলেই সুন্দর কিন্তু আমার মতে কাপ্তাই লেক একটু বেশি সুন্দর”
শুভ্র খুশি হয়ে বললো…..
“তাহলে চলো ভাইয়া ওইখানে ঘুরে আসা যাক আমার তো তর সইছে না”
“ভাইয়া তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে না-কি? এইগুলো জায়গার থেকে আরো কত সুন্দর সুন্দর জায়গায় গিয়েছিস আর এখন হেবলার মতো এইসব মিডিল ক্লাস জায়গা দেখার জন্য পাগল হয়ে গেছিস”
তিতি সামুর কথা শুনে বললো…..
“আপু তোমরা যেই গুলোই গিয়েছ তাহলো কৃত্তিম আর এখন যা দেখছো সব রিয়েল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের মন করে পরিষ্কার তার মধ্যে কাপ্তাই লেকে কায়াকিং অথবা নৌকা ভ্রমণ তোমাকে দিবে অন্যরকম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। স্বর্গীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রায় সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে সমতল ভূমি আর পাহাড়ি বনে ঘেরা মানবসৃষ্ট কাপ্তাই লেকে। সব সময় তো বিদেশিদের অনুসরণ করেছো এইবার না হয় জলপথে ভ্রমণের মাধ্যমে ঘুরে দেখো কাপ্তাই বাধ, রাঙামাটি শহর, রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, নৌবাহিনী অ্যাকাডেমি, শুভলং ঝর্ণা, কর্ণফুলী নদী, শেখ ইকোপার্কসহ মনোরম সব পর্যটন কেন্দ্র ট্রাস্ট মী খারাপ লাগবে না তোমার।”
সামু আর কিছু বললো না। তখন অর্ণব বললো…..
“আচ্ছা শুনেছি এইখানে নাকি শুভলং ঝর্ণা আছে? কই এই ঝর্না?”
আনিস বললো…..
“আসো যেতে যেতে তোমাদের সব কিছু খুলে বলি”
সবাই আনিসকে অনুসরণ করে যাচ্ছে। তখন আনিস বললো…..
“রাঙামাটি শহর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে শুভলং বাজারের পাশেই শুভলং ঝর্ণার অবস্থান। তাই আমরা এত হেঁটে ওইখানে যেতে পারবো না। আগে চলো গাড়ি নিয়ে যাই”
আনিস গাড়ি ঠিক করে সবাই গাড়িতে উঠে।
“জানো,শুক্নো মৌসুমে পানি কম থাকলেও, বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু শুভলং ঝর্ণা থেকে বিপুল জলধারা আছড়ে পড়ে কাপ্তাই লেকে। এছাড়া শুভলং ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার পথে এর আশপাশের সৌন্দর্য্যও বিমোহিত করে পর্যটকদের।
শুভলং ঝর্ণার কাছেই রয়েছে সুউচ্চ শুভলং পাহাড়।
স্পিড বোটের মাধ্যমে কাপ্তাই লেক ভ্রমণের মধ্য দিয়ে অনেকে জায়গাটা ঘুরে ঘুরে দেখে। এই জন্যই তোমাদের এত সকালে ঘুরতে নিয়ে এসেছি যেনো তোমরাও ঘুরতে পারো।
রাঙামাটিতে পা রাখার সাথেসাথেই এখানকার প্রকৃতির পবিত্রতা অনুভব করে সবাই। যা মনের সকল উদ্বেগ উৎকন্ঠা দূর করতে সাহায্য করে মন করে তুলে ফ্রেশ সজীব। তাছাড়া রাঙামাটি শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো ঝুলন্ত সেতু। শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই লেকের একাংশে ৩৩৫ ফুট লম্বা এই ব্রীজটি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এই সেতুকে ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ বলা হয়ে থাকে। দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি দুটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের মধ্যে গড়ে দিয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। এই ঝুলন্ত সেতুর ওপর থেকেই অবলোকন করা যায় কাপ্তাই লেকের অপরূপ সৌন্দর্য্য।
আরো রয়েছে সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট জাদুঘর যেখানে আছে আদিবাসীদের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক তথ্য।১৯৭৮ সালে স্থাপিত এই জাদুঘরটি রাঙ্গামাটি শহরের প্রবেশ মুখের কাছেই অবস্থিত। শহর থেকে রিকশায় করেই যাওয়া যায় এখানে। ”
“আব্বু আব্বু ঐযে কতগুলো দ্বীপ আছে না ওই গুলোর কথা বলো ফুফিদের”
“বলছি বাবা একে একে তো বলতে হবে। হুম শোনো এইখানে সুবিশাল কাপ্তাই লেক আর পাহাড়ের কোল ঘেষে রয়েছে অসংখ্য ছোট দ্বীপ। এরই একটি দ্বীপে অবস্থিত পেদা টিং টিং রেস্টুরেন্ট। রসনা বিলাসী ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য চমৎকার এক রেস্টুরেন্ট এটি। আসো একবার যেহেতু এসেই পড়েছি তাহলে খাবার না খেয়ে যাবো না কারণ এখানকার আদিবাসীদের রান্না করা খাবারগুলোর স্বাদ অতুলনীয়। কাপ্তাই লেক ভ্রমণে গেলে পেদা টিং টিং এর খাবারের স্বাদ না নিলে পর্যটকদের ভ্রমণ থেকে যাবে অসম্পূর্ণ। রেস্টুরেন্টটি দেশীয় খাবার বাম্বু চিকেনের (বাঁশে সরবরাহ করা) জন্য বিখ্যাত। তোমাদের হয়তো নাম শুনেই কেমন লাগছে তাই না কিন্তু একবার খেয়ে দেখো পরে বার বার মন চাইবে”
শুভ্র বললো……
“আমি তো মনে হচ্ছে স্বপ্নের রাজ্য চলে আসছি। আগে জানলে সবার আগে বাংলাদেশ ঘুরে দেখতাম পরে অন্য দেশ”
অর্ণব তখন বললো……
“রাঙামাটি খাগড়াছড়ি এই অঞ্চলের সাথেও আরেকটি জায়গা রয়েছে সাজেক। আমরা যখন পরের বার আসবো তখন সাজেক ভ্যালিতে যাবো নে”
শুভ্র বললো
“ওইটাও কি এমন সুন্দর জায়গা?”
প্রবণ বললো…..
“হুম।সাজেক ভ্যালি মানেই তো হলো মেঘের রাজ্যে। জানিস পাহাড়ে উঠলেই মনে হয় মেঘের রাজ্য চলে এসেছি”
শিশির হুট করে বলে উঠলো……
“আপনি তো আমায় মেঘ পরী বলে ডাকেন তার মানে সাজেক আমার আসল বাড়ী”
“হুম মেঘ পরী আমাদের হানিমুনে তোমায় তোমার নিয়ের বাড়ি নিয়ে যাবো এইবার লক্ষী মেয়ের মতো চুপ থাকো”
প্রবণের কথায় মেতে উঠলো সবাই হাসির মেলায়……
সবাই অনেক ঘুরাঘুরি করার পর সন্ধ্যা সন্ধ্যা বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলো…….
রাতের খাবার খেয়েই সবাই ঘুমিয়ে পড়লো সারাদিন অনেক ঘুরাঘুরির কারণে সবাই খুব ক্লান্ত ছিলো……..
পরের দিন সকালে তিতির ঘুম ভেংগে যায়। তাই তিতি ওর দাদু বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে এসে দাড়ায়। তিতির দাদুর বাড়ি পাহাড়ের উপরে । উপর থেকে সকালটা তিতির খুব অন্য রকম ভালো লাগলো…….
“রাঙামাটি মানেই অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রাজ্য। পাহাড়ি কন্যা রাঙামাটির সৌন্দর্য্য পাখির ডানার মতই পেখম মেলে সব মৌসুমে। প্রকৃতির নিবিড় আলিঙ্গনে বাঁধা রূপের রাণী রাঙামাটির পরতে পরতে রয়েছে নানা বৈচিত্র্যতা। রাঙামাটির গহীন অরণ্য, পাহাড়ি প্রকৃতির অমোঘ রূপের আকর্ষণ তাই রাঙামাটির সৌন্দর্য সবার কাছে অফুরন্ত।”
“কিন্তু তিতি আমার কাছে যে অর্ণবের ভালোবাসা সব থেকে বেশি অফুরন্ত”
তিতি পিছন তাকিয়ে দেখে সামু দাড়িয়ে আছে…..
“ওহহ আপু তুমি? আর আবারো মজা করছো। হিহিহিহি আজ কিন্তু ধরে ফেলেছি”
তিতির কথা শুনে সামু হাসলো……
“তিতি তুমি সত্যিই খুব বোকা গো কিন্ত অভিনয় আর কোনটা রিয়েল এখনও বুঝতে পারছো না। জানো তিতি তোমার এই বোকা স্বভাবের কারণেই আমার প্ল্যান গুলো খুব সহজে কাজে দেয় কিন্তু তোমার ওই বকবক ফ্রেন্ড শিশির সব সময় ভেজাল করে তাই আজ তাকে একটা ডোজ দিয়ে আসলাম”
“মম মানে কি বলছো আর কি করেছো শিশিরের সাথে?”
“তেমন কিছু না। আমি আসার সময় কিছু নেশা জাতীয় ওষুধ আনি। যা তোমার ফ্রেন্ড কে প্রতিদিন দিয়ে আসছি। দাড়াও দেখাচ্ছি তোমাকে লাইভ দেখার মজাই আলাদা হাহাহা”
সামু আড়াল থেকে শিশির কে নিয়ে আসে। শিশির কেমন যেনো দুলছে…..
“শিশির এই শিশির কি হয়েছে তোর শিশির?”
“ওর কোনো হুস নাই তিতি। ও এখন অন্য জগতে আছে”
“তুমি ওর সাথে এমন করেছো কেনো বলো জবাব দাও”
“আমি অর্ণবকে ভালোবাসি ছোট থেকেই কিন্তু তুমি উরে এসে আমার ভালোবাসায় ভাগ বসিয়েছো তাই এর শাস্তি তোমার বান্ধবী আর তোমাকে তো পেতেই হবে”
“তুমি এতটা খারাপ ছিঃ আমি এক্ষুনি অর্ণবকে বলে দিবে”
“তুমি পারবে না। এখন তোমাকে এইখান থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো। পরে সব দোষ দিবো শিশিরের। শিশিরের জেল হবে। আর আমি এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করবো হাহাহা”
“দেখো আপু তুমি এমন কিছু করতে পারবে না”
“কিন্তু তিতি আমি তো এমন কিছু করবই”
তিতি আগে থেকেই একদম কর্নারে ছিলো। সামু তাই সুযোগ বুঝেই তিতি কে ধাক্কা মারতে গেলো……
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here