Mr_Husband পর্ব ১৯+২০

#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_18

রুশা এখন আঁধারদের সাথেই বেশি সময় থাকে। এর’ই মধ্যে রুশা বুঝতে পারে আঁধার আরুশ কে কত টা ভালোবাসে। তাই রুশা বুদ্ধি খাটিয়ে আরুশ কে ব্যবহার করার কথা ভাবলো। কারণ আরুশ যদি আঁধার কে বোঝায় তাহলে আঁধার ঠিকই বুঝবে। একদিন রুশা আরুশের কাছে গিয়ে বলল,

—“আরুশ আপনার কাছে না আমার একটা সাহায্য চাই!”

আরুশ হেসে বলল,

—“বলো আমি কি সাহায্য করতে পারি তোমার?”

রুশা ইতস্তত করে বলল,

—” আসলে আমি না একজন কে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।”

আরুশ সারপ্র্রাইজ্ড হয়ে বলল,

—“কিহ! কাকে?”

রুশা জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল,

—“আপনার বন্ধুকে।”

আরুশ কনফিউস্ড হয়ে বলল,

—“আমার বন্ধু তো চারজন, তার মধ্যে কোন জন?”

“আধার রেজওয়ান।”

“ও আচ্ছা”

আরুশ রুশার কথায় খেয়াল না করে বলল। কিন্তু যখন বুঝতে পারলো তখন এক প্রকার চিৎকার করে বলল,

“কিহ!”

রুশা ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,

“হুম, প্লিজ হেল্প করুন না।”

আরুশ কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

“ওকে! দেখছি কি করা যায়।”

রুশা খুশি হয়ে বলল,

“থ্যাঙ্ক ইউ”

আরুশ আঁধার কে এসে রুশার কথা বলল। ও আঁধারকে মানানোর অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু আঁধার মানতে নারাজ। আরুশ শেষে ইমোশনাল ব্লাকমেইল ও করলো। কিন্তু আঁধার কিছুতেই রাজি হলো না। পরের দিন রুশা পুরো কলেজের সামনে আঁধারকে প্রোপজ করে। সবাই উৎসুক হয়ে ওদের দেখছে। ইসী তো আগে থেকেই নিষেধ করছে। কারণ ওর শুরু থেকেই রুশাকে একদম পছন্দ না। আঁধার একবার রুশার দিকে আরেকবার আরুশের দিকে তাকাচ্ছে। আরুশ ইশারায় বলছে এ্যাকসেপ্ট করতে। আঁধার আরুশকে নিরাশ করতে চায় না। তাই শুধু আরুশের জন্যই ও রুশাকে এ্যাকসেপ্ট করে। রুশা তো ওর চ্যালেন্জ জিতে যাওয়ায় হেব্বি খুশি। দিন যেতে থাকে রুশার সাথে থাকতে থাকতে আঁধারও রুশাকে ভালোবেসে ফেলে। ওদের সম্পর্কটা খুব ভালোই চলছিল। এভাবে চলতে চলতে ওদের রিলেশনের সাতমাস কেটে যায়। একদিন হঠাৎ করে রুশা আঁধারকে কল করে। আঁধার রুশার নাম স্ক্রিনে দেখে হাসি মুখে কল রিসিভ করে বলল,

“হ্যালো!”

ওপাল থেকে রুশার কন্ঠস্বর শোনা গেল,

“হ্যালো আঁধার! তুমি আমার সাথে এক্ষুণি দেখা করো প্লিজ।”

আঁধার চিন্তিত হয়ে বলল,

“কি হয়েছে বলো আমাকে?”

“ফোনে বলতে পারব না। প্লিজ দেখা করো। আমি এ্যাড্রেস ম্যাসেজ করে দিচ্ছি।”

“ওকে! আমি আসছি।”

“হুম! তোমার হাতে মাত্র দেড় ঘন্টা আছে। যদি সময় মতো না আসো তাহলে আমাকে আর কখনো দেখতে পাবে না।”

বলেই রুশা ফোন কেটে দিলো। আঁধারকে কিছু বলার সুযোগ ও দিলো না। আঁধার চিন্তায় পরে যায়। ওর পরে কালো রঙের ট্রাউজার আর ছাই রঙের পোলো টিশার্ট ছিল। সেই অবস্থাতেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো।

.

15 মিনিট ধরে ট্রাফিক জ্যামে আটকে বসে আছে আঁধার। আর বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। ওর এখন খুব রাগ লাগছে। আঁধার কিছু না ভেবেই গাড়ি থেকে নেমে দৌড়াতে লাগলো। ওর হাতে আর মাত্র ত্রিশ মিনিট সময় আছে। আঁধার এতোটাই বেখেয়ালি ভাবে দৌড়াচ্ছিল যে ওর সাথে কেউ ধাক্কা লেগে নিচে পরে যায়। আঁধার দেখে একটা পিচ্চি মেয়ে। ক্লাস সিক্সে পড়ে হয় তো। মেয়েটির পরনে স্কুল ইউনিফর্ম। চুল দু বেনী করা তার দুপাশে ডল ক্লিপ দেওয়া। কাধে স্কুল ব্যাগ ঝুলছে। গায়ের রঙ হলুদ ফর্সা হবে হয় তো। হরিণী গহীন চুখ দুটোয় জল টলমল করছে। রোদের আলোয় তা মুক্তো মনে হচ্ছে। মেয়েটি হয় তো খুব বেশিই ব্যথা পেয়েছে। আঁধার মেয়েটিকে ধরে তুলে। হঠাৎ মেয়েটি সর্বশক্তি দিয়ে আঁধার কে ধাক্কা মারে। আঁধার অপ্রস্তুত থাকায় কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। আঁধার অবাক চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির কান্না ভেজা মুখটা মুহূর্তেই রঙ পালটে রাগে অগ্নি মূর্তি ধারণ করে। মেয়েটি চিকন বাচ্চা বাচ্চা গলায় এক প্রকার চেচিয়ে ঝাঝালো স্বরে বলতে শুরু করে,

“দেখে চলতে পারেন না? চোখ কি পকেটে নিয়ে হাটেন। ওহ সরি আপনি তো দৌড়াচ্ছিলেন। হাতির মতো শরীর নিয়ে রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছেন ভালো কথা। তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমার মতো মশার গায়ের উপর দিয়ে গেলে আমি কি আর আস্তো থাকি? স্টুপিড লোক একটা।”

আঁধার অবাক হয়ে পিচ্চি মেয়েটাকে দেখছে। এইটুকু একটা মেয়ে ওকে ঝাড়ছে ভাবা যায়! আঁধার এখন মেয়েটির সাথে তর্ক করতে চায় না। কারণ ওর হাতে সময় খুব কম। তাই গলার স্বর নরম করে বলল,

“আমাকে এক জায়গায় যেতে হবে। আমার হাতে সময় খুব কম তাই বেখেয়ালি ভাবে ধাক্কা লেগে গেছে। আমি ইচ্ছে করে ধাক্কা দেই নি।”

বলে আঁধার যেতে নেয় কিন্তু মেয়েটি আঁধারের হাত পেচিয়ে ধরে বলল,

“পাচ্ছেন কোথায়? আমার হাত থেকে পালানো এতো সহজ নয়। ইচ্ছে করে দেন আর ভুল করে দেন ধাক্কা তো দিয়েছেন। তাই শাস্তি তো পেতেই হবে। এবার সরি বলুন আর 50 বার কান ধরে উঠবস করুন। তারপর ছাড়া পাবেন।”

আঁধার রেগে বলল,

“হোয়াট? ফাজলামো হচ্ছে?”

মেয়েটি মেকি হেসে বলল,

“নো, পানিশমেন্ট হচ্ছে।”

আঁধার ধমক দিয়ে বলল,

“হাত ছাড়ো।”

মেয়েটি ঠোঁট বাকিয়ে বলল,

“এ্যাহ! আপনার এই ধমকে আমি ভয় পাই না।”

মেয়েটি চুপিসারে একটা চিকন দড়ি দিয়ে আঁধার হাত বেধে দিলো। তারপর দড়ির আরেক মাথা হাতে পেচিয়ে বলল,

“যদি ছাড়া পেতে চান তো ফটাফট সরি বলে কান ধরুন।”

আঁধারের রাগে মাথার রগ ফুলে উঠেছে। এখন রাস্তার মাঝে এই মেয়েটির জন্য ওকে কান ধরতে হবে আবার সরি ও বলতে হবে? আঁধার দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“আই এম সরি!”

“ইটস্ ওকে! এবার কানে ধরুন আর উঠবস করুন।”

আঁধার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। আজ ওর হাতে বেশি সময় নেই নাহলে যে এই মেয়েকে যে ও কি করত তা ও নিজেও জানে না। আঁধার ধীরে ধীরে হাতটা কানের কাছে নেয়। মেয়েটি ঠোঁট চেপে হেসে বলল,

“বসুন”

আঁধার ইতস্তত করে বসল। মেয়েটি আবারো বলল,

“এবার উঠুন”

রাস্তায় চলাচল করা সবাই আঁধারকে দেখে হাসছে। মেয়েটি নিজেও হাসছে। আঁধারের ইচ্ছে করছে চড় ভেরে মেয়েটির সব দাঁত ফেলে দিতে। আঁধার 40 বার উঠবস করার পর মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল,

“এবার থামুন। অনেক হয়েছে আর দরকার নেই। যান মাফ করলাম। আমি আবার দয়ালু মানুষ।”

“দ্বিতীয় বার ভুলেও আমার সামনে পরবে না। কারণ তুমি আমাকে ছেড়ে দিলেও আমি তোমাকে কখোনা ছাড়বো না।”

বলেই আঁধার দৌড়ে চলে গেল। আঁধারের রুশার দেওয়া ঠিকানায় পৌছাতে ১ ঘন্টা ৪৭ মিনিট লেগে যায়। আঁধার সেখানে গিয়ে রুশা দেখতে পায় না। আঁধার পুরো জায়গাটা হন্ন হয়ে খোজে কিন্তু রুশা সেখানে নেই। আঁধার পাগলের মতো রুশার ফ্লাটে যায়। সেখানেও লরুশা নেই। আঁধার রুশার ফ্রেন্ডদের ও জিজ্ঞেস করে কিন্তু কেউই জানে না রুশা কোথায়। আঁধার সব জায়গা রুশাকে খুজে কিন্তু কোথাও ওকে পায় না। সেদিনের পর থেকে রুশাকে একে আরে গায়েব হয়ে যায়। আর আঁধার একা হয়ে যায়। কিন্তু ওর বন্ধুরা ওকে ছাড়ে না। ওর সবসম যে কোনো সিচুয়েশনে আঁধারের পাশে থাকে।

.

আঁধার কিছুটা অন্যমনষ্ক হয়ে বসে আছে। মুন মুখটা ছোট করে খুব করুন স্বরে বলল,

“এখন তো উনি আবার আপনার লাইফে ফির এসেছেন। তাহলে এখন কি আপনি আমাকে ছেড়ে দিবেন?”

কথা গুলো বলার সময় মুনের গলা কাপছিল। আবারো মেঘেরা এসে মুনের চোখ ভরিয়ে দেয়। যেন এক্ষুনি বৃষ্টি শুরু হবে। আঁধার রাগি স্বরে বলল,

“এক ফোঁটা জল ও যেন গড়িয়ে নিচে না পরে। আমার জিনিসের অপচয় আমি মোটেও পছন্দ করি না।”

আঁধার মুনের দুগালে হাত রেখে নরম গলায় আবারো বলল,

“আগেই বলে ছিলাম দ্বিতীয় বার দেখলে আর কখনো ছাড়বোনা।”

মুন আঁধারের কথার মানে কিছুই বুঝে না। তাই জিজ্ঞেস করে,

“মানে?”

“কিছু না।”

কিছুক্ষণ ওদের মাঝে নিরবতা বিরাজ করে। হঠাৎ মুন আঁধার কে প্রশ্ন করে,

“আচ্ছা আপনি কি জানেন রিত্তিক রওশানের প্রথম মুভি কোনটা?”

হঠাৎ মুনের এই ধরনের প্রশ্নে আঁধার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় আর বলে,

-“কেন?”

“উফ! প্রশ্নের উপর আবার প্রশ্ন! এতো প্রশ্ন করেন কেন আপনি? চুপচাপ যা জিজ্ঞেস করেছি তার উওর দেন?”

আঁধার কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

“কাহোনা পেয়ার হ্যা”

মুন লাজুক হেসে বলল,

“হা আপসে পেয়ার হ্যা”

বলেই টুপ করে আঁধারের গালে একটা চুমু দিয়ে ভো দৌড়। মুন কে আর পায় কে। আঁধার কয়েক সেকেন্ড শক্ট খেয়ে বেসে ছিল। ওর মস্তিষ্ক এখনো বুঝঝে উঠতে পারেনি একটু আগে কি হলো। আঁধার যখন বুঝতে পারে তখন গালে হাত দিয়ে হেসে দেয়। এদিকে মুন দরজা লক করে বেডের উপর শুয়ে পিলোতে মুখ গুজে আছে। একটু আগে কি করেছে ভাবতেই লজ্জায় মরে যাচ্ছে ও। কি থেকে কি করে বসেছে নিজেও জানে না। মুন এখন কি করে আঁধারের সামনে যাবে? ইসসস! কি লজ্জা! কি লজ্জা!
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_২০

শাওয়ার অন করতেই এক পলশা বৃষ্টির মতো ঝন্নার পানি আঁধারের সুঠাম দেহকে ভিজিয়ে দেয়। উপরে উঠানো রেশমি চুল ও পানির ছিটায় ছিটায় নেতিয়ে কপালে এসে পরেছে। আর সেই চুল বেয়ে চোখে এসে পরছে। আঁধারের খুব রাগ লাগছে নিজের প্রতি! ও কি করে পারলো এমনটা করতে? কি করে? আঁধার স্বজোরে দেয়ালে ঘুষি মারলো। সাথে সাথে হাত ফেটে গড়গড় করে রক্ত বেরি পানির সাথে মিশে যেতে লাগলো। আঁধার বুঝতে পারছে না যে কাল রাতে ও এতোটা আউট অফ কন্ট্রোল কি করে হয়ে গেল। রাগে মুখ দিয়ে ‘চ’ এর মতো উচ্চারণ করলো। তারপর নিজের চুল গুলো শক্ত করে টেনে ধরে নিচে বসে পরলো। ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না যে, কি থেকে কি হয়ে গেল। মুন এখনো এ্যাডাল্ট হয়নি। আর আঁধার একজন ডক্টর হয়েও……. ভাবতেই আঁধারের মাথার রগ ফুলে উঠছে। রাগে শরীর রি রি করে কাঁপছে। পুরো পৃথিবী ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে আঁধারের। আঁধার এই প্রথম নিজের ওয়াদা ভঙ্গ করলো। আঁধার হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে থাকে। তারপর কিছুক্ষণ পর মুখ থেকে হাত সরিয়ে শীতল দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকায়। শাওয়ার থেকে ঝপঝপ করে পানি এসে টাইল্সের উপর পরে বারি খেয়ে ছিটকে ওর শরীরে লাগছে। আঁধার ঠান্ডা মাথায় ভাবলো! যা হওয়ার হয়ে গেছে। কিন্তু এই ভুল আর দ্বিতীয় বার করা যাবে না। মুনের থেকে এখন দূরত্ব বারাতে হবে। এতে হয়তো মুন কষ্ট পাবে। কিন্তু এটাই ওর জন্য সঠিক ডিসিশন।

মুন বসে আছে শাওয়ার নেওয়ার জন্য। এক ঘন্টারও বেশি সময় হয়ে গেছে কিন্তু আঁধার এখনো দবের হচ্ছে না। মুন গলা উুচু করে বলল,

—“এই যে Mr.Husband আপনার কি হয়েছে? বের হবেন নাকি আজ সারা দিন ওয়াশ রুমেই কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছন?”

মুন পকপক করতে করতেই আঁধার বেরিয়ে আসে। আঁধারকে দেখেই মুনের কথা বন্ধ হয়ে যায়। উপরের ঠোঁট নিচের ঠোঁটের থেকে আলাদা হয়ে যায়। মুন এই প্রথম আঁধারকে টিশার্ট ছাড়া দেখছে। আঁধারের পরনে হাটু অব্ধি শুধু একটা টাওয়াল আর কিছু নেই। চওড়া সুঠাম লোম হীন ফর্সা বুকে বিন্দু বিন্দু পানির ফোটাগুলো মুক্তোর ন্যায় চিকচিক করছে। রেশমি চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পরছে। সচ্ছ নীল চোখ দুটো শাওয়ার নেওয়ার পর আরো ভাশা ভাশা আর সচ্ছ মনে হচ্ছে। মুনকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আঁধার ভ্রু বাকিয়ে তাকালো। সাথে সাথে মুন নিজের মুখ বন্ধ করে চোরের মতো চোখ সরিয়ে নিলো। তারপর উঠে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। আঁধার কিছুক্ষণ মুনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে কাবার্ড থেকে নিজের জামা কাপড় বের করলো। মুন শাওয়ার শেষ করে জামা চেন্জ করার সময় মনে পরে ও তো জামাই আনে নি। মুন চিন্তায় পরে যায়। এখন কি করবে ভেবে পায় না। একবার ভাবলো আঁধারকে বলবে। কিন্তু লজ্জাও করছে। মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে মুন ঠিক করলো আঁধারের কাছেই সাহায্য চাইবে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। মুন আস্তে আস্তে হালকা দরজা খুলে বাহিরে উুকি দেয়। মুন দেখতে পায় আঁধার ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে জেল দিয়ে চুল উপর তুলছে। মুন নিচু গলায় আঁধারকে ডাকলো,

—“এই যে শুনছেন?”

আঁধার ঘাড় ঘুরিয়ে ভ্রু উচু করে তাকালো। মুন মিনমিনে গলায় বলল,

—“আমি কাপড় নিয়ে আসতে ভুলে গেছি। প্লিজ একটু কষ্ট করে কাবার্ড থেকে আমার কাপড়গুলো দিবেন?”

আঁধার কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। তারপর কাবার্ড থেকে নেবী ব্লু কালারের লং স্কার্ট আর অফ হোয়াইট কালার টপ বের করে মুনকে দিলো। মুন ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বলল,

—“থ্যাঙ্ক ইউ Mr.Husband!”

.

আরমান রেজওয়ান, আরিফা রেজওয়ান, আঁধার, মুন, আলিয়া সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে যে যার মতো নাস্তা করছে। আরমান রেজওয়ান হঠাৎ গম্ভীর স্বরে আঁধারের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,

—“মেয়েটা এ বাড়িতে আর কতদিন আছে?”

আঁধার ব্রডে কামড় দিতে গিয়েও দিলো না। ব্রডেটাকে দেখতে দখতে স্বাভাবিক গলায় জবাব দিলো,

—“ওর যত দিন ইচ্ছে।”

আরমন রেজওয়ান এবার ক্ষিপ্ত গলায় বললেন,

—“মানে কি? চেনা নেই জানা নেই অচেনা একটা মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে এসেছো। মেয়েটা বিপদে পরে ছিল অসুস্থ ছিল। তাই সাহায্য করেছো। কিন্তু এখন মেয়েটা পুরোপুরি সুস্থ। তাই বিকেলে মেয়েটাকে ওর বাড়িতে দিয়ে আসবে। আমি আর কিছু শুনতে চাই না।”

—“ড্যাড রুশা অপরিচিত কেউ না। ও আমার ফ্রেন্ড। তাই ওর যতদিন ইচ্ছে ততোদিন ও এই বাড়িতে থাকবে।”

বলেই আঁধার খাবার রেখে উঠে গেল। আঁধার উঠে যেতেই মুন ও উঠে গেল। আরমান রেজওয়ান রেগে কিছু বলতে নিচ্ছিলেন কিন্তু আরিফা রেজওয়ান বাধা দেন। আলিয়া বলল,

—“ভাই খাবারটা তো শেষ করো!”

—“আমার খাওয়া শেষ।”

—“মিষ্ট তোমার কি হলো? তুমি উঠলে কেন?”

মুন আঁধারের দিকে তাকিয়ে বলল।

—“আমার পেট ভোরে গেছে আলিয়া।”

আঁধার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। আর যাওয়ার আগে মুনকে রুশার খেয়াল রাখতে বলে যায়। মুন শুধু মাথা নাড়ে।

.

বিকেলের দিকে মুন রুমে বসে চুপচাপ নিজের আর আঁধারের জামা-কাপড় ভাজ করছিল। সেই সময়ই রুশার আগমন ঘটে। রুশা দরজায় নক করে বলল,

—“আসতে পারি?”

মুন দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে রুশা দাঁড়িয়ে আছে। সৌজন্যতার হাসি দিয়ে মুন বলল,

—“জ্বী আসতে পারেন।”

রুশা রুমটা ভালো করে দেখতে দেখতে ভিতরে ঢুকলো। আঁধারের রুমটা অন্যান্য সব রুমের থেকে অনেক বড়। রুমের মাঝ বরাবর গোল বড় একটা বেড আর তার দুপাশে দুটো ল্যাম্পটেবিল। বেডের সোজাসুজি একটা বড় সোফা। সোফার থেকে এক হাত দূরুত্বে দাঁড়ানো কালো রঙের কাবার্ডটি। জানালার ঠিক পাশে মুনের জন্য আনা পিংক কালারের স্টাডি টেবিল। সাইডে কালো রঙের বিশাল এক বুক শেল্ফ। বেডে ওপর সাইডে কালো রঙের ড্রেসিং টেবিল। আর রুমের সাথে এ্যাটাচ আঁধারের পার্সোনাল স্টাডি রুম। যেটা সবসময় আঁধার লক করে রাখে।

—“দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন!”

রুশা বেডের উপর বসলো। মুন নিজের কাজে মন দিলো। রুশা প্রশ্ন করলো,

—“তোমাদের বিয়ের কয় বছর চলছে?”

মুন কাজ করতে করতে জবাব দিলো,

—“ছয় মাস চলছে।”

—“ওহ!”

রশা আঁধারের একটা টিশার্ট হাতে নিয়ে সেটাকে দেখতে দেখতে বলল,

—“তুমি কি জানো ও এক সময় আমাকে ভালোবাসতো?”

মুন থেমে গেল। কথাটা ওকে ছুরির মতো আঘাত করছে। ভিতর থেকে দুর্বল হয়ে পরলেও উপর থেকে নিজেকে শক্ত করে সেই ক্ষতটা হাসি দিয়ে ঢেকে বলল,

—“একসময় বাসতো। কিন্তু এখন সময় পাল্টে গেছে।”

মুনের জবাবে রুশার মুখ ছোট হয়ে গেল। কিন্তু রুশা এতো সহজে দমলো না। ও আবারো মুনকে কটাক্ষ করে বলল,

—“তোমার কি মনে হচ্ছে না যে তুমি আমাদের দুজনের মাঝে এসে পরেছো?”

মুন ত্যাচ্ছিল্যে হেসে বলল,

—“মোটেও না। কিছু মনে করবেন না। আপনি তো অনেক বছর আগেই ওনাকে ফেলে চলে গেছিলেন। মানুষটা একদম রোবটের মতো বাচছিল, তার জীবন রঙ বিহীন হয়ে গেছিল, হাসতে ভুলে গেছিল, বাচতে ভুলে গেছিল। তখন আমি তার জীবনে রঙধনু হয়ে আসি। সেই রোবটটাকে অনেক কষ্টে আবারো মানুষে রুপান্তর করেছি। মন খুলে হাসতে শিখিয়েছি। সুন্দর করে বাচতে শিখিয়েছি। এখন আপনিই বলুন সত্যি কি আমি আপনাদের দুজনের মাঝে এসেছি?”

এরপর আর রুশা কিছু বলতে পারলো না। এই কথার উপর আর কোনো কথাও খুজেই পেল না। রুশা না পেরে রেগে উঠে চলে গেল। মুন জোড়ে নিশ্বাস ফেলল। এত যুক্তিযুক্ত কথা ‘ও’ বলতে পারে তা ওর আগে জানা ছিল না। মুন এটুকু বুঝতে পেরেছে যে আঁধারকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে দেখে সহ্য করা অন্তত ওর পক্ষে সম্ভব না। আঁধারের জন্য যদি ওকে কারো সাথে লড়তে হয় মুন তাও পারবে। কারণ খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছে যে ওই রাক্ষসটাকে।

#চলবে,

[ঠান্ডা, জ্বর আমার সাথে ট্রু লাভ করিয়াছে তাই কিছুতেই ছাড়িতেই চাচ্ছে না। এই কারণেই এতো দিন গল্প দিতে পারিনি। আর জ্বরের ঘোরে ১৯ পার্টে কি লিখেছি নিজেও জানি না। আমার সাজানো প্লট পুরো পাল্টে গেছে। কিন্তু চিন্তার কিছু নেই আমি আবার নতুন পল্ট সাজিয়ে নিবো। ভুল ক্রটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।]
#চলবে,

[নিন পাস্টের কাহিনি শেষ। এই পাস্টের জন্য যে কত কি শুনতে হয়েছে! যা’ই হোক যারা মুনকে মিস করছিলেন, মুন আর আঁধারের খুনসুটি মিস করছিলেন তাদের জন্য আজকের পার্টটা। হ্যাপি রিডিং। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here